মক্কার কাফিররাও আল্লাহকে বিশ্বাস করতো
লিখেছেন: ' abdullah al Mamun' @ বুধবার, অক্টোবর ১৯, ২০১১ (১১:০২ পূর্বাহ্ণ)
[রসূলুলস্নাহ (সাঃ) যে সব মুশরিক্ এর বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তারা তাওহীদে রবুবিয়াত অর্থাৎ আল্লাহ যে মানুষের রব-প্রতিপালক একথা মানতো করত কিন্তু এই স্বীকৃতি ইবাদতে শিরক্ এর পর্যায় থেকে তাদেরকে বের করে আনতে পারে নাই]
যে সব কাফেরের সঙ্গে আল্লাহর রসূল (সাঃ) যুদ্ধ করেছেন তারা তাওহীদে রবুবিয়াতের সাক্ষ্য প্রদান করত- এই কথার প্রমাণ আল্লাহর বাণী :
قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ السَّمْعَ والأَبْصَارَ وَمَن يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيَّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ الأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللّهُ فَقُلْ أَفَلاَ تَتَّقُونَ (يونس : 31)
“(হে রসূল) তুমি জিজ্ঞাসা কর: (হে মুশরিক্গণ) যিনি আসমান ও জমিন থেকে তোমাদেরকে রুজির সংস্থান করে দেন কে সেই (পাক পরওয়ারদেগার), কে তিনি যিনি শ্রবণ ও দর্শনের প্রকৃত অধিকারী ? এবং কে সেই (মহান স্রষ্টা) যিনি জীবন্তকে মৃত হতে আবির্ভূত করেন, আর কেই বা সেই মহান সত্তা যিনি মৃতকে জীবন্ত থেকে বহির্গত করেন? এবং কে সেই (রব পরওয়ারদেগার) যিনি কুদরতের সকল ব্যাপারকে সুনিয়ন্ত্রিত করেন? তাহারা নিশ্চয় তৎক্ষণাৎ জওয়াব দেবে: আল্লাহ, তুমি বল: তোমরা কি ভয় করবে না?” (সুরা ইউনুস : ৩১)
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেছেন :
قُل لِّمَنِ الْأَرْضُ وَمَن فِيهَا إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ – سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ – قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ – سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ – قُلْ مَن بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ – سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ فَأَنَّى تُسْحَرُونَ (المؤمنون : 84-89)
“জিজ্ঞাসা কর: এই যে জমিন এবং ইহাতে অবস্থিত পদার্থগুলি এসব কার? যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে। তারা নিশ্চয় বলবে: আল্লাহর। বল: তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? জিজ্ঞাসা কর: কে এই সাত আসমানের রব পরওয়ারদেগার? কে মহান আরশের অধিপতি? তারা নিশ্চয় বলবে: আল্লাহ। বল: তবুও কি তোমরা সংযত হবে না? জিজ্ঞাসা কর: সৃষ্টির প্রত্যেক বিষয় ও বস্তুর উপর সার্বভৌম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে কার? এবং সকলকে আশ্রয় দান করে থাকেন কে? অথচ কারও আশ্রিত হতে হয় না যাকে, কে তিনি? (বলে দাও) যদি তোমাদের কিছু জ্ঞান থাকে। তারা নিশ্চয় বলবে: তিনি আল্লাহ, বল: তাহলে কোথায় যাচ্ছ তোমরা (সম্মোহিত হয়ে)?” (সুরা মু’মিনুন : ৮৪-৮৯)।
অনুরূপ আরও অনেক আয়াত রয়েছে।
যখন এ সত্য বুঝা গেলো যে, তারা আল্লাহর রুবুবিয়াতের কোন কোন গুণাবলি মেনে নিয়েছিল অথচ আল্লাহর রসূল (সাঃ) তাদেরকে সেই তাওহীদের অন্তর্ভুক্ত করেননি-যার প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। আর তুমি এটাও অবগত হলে যে, যে তাওহীদকে তারা অস্বীকার করেছিল সেটা ছিল তাওহীদে ‘ইবাদাহ্ (ইবাদতে আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত করা)- আমাদের যুগের মুশরিকগণ যাকে ‘ইতেকাদ’ বলে থাকে। তাদের ঐ ‘ইতেকাদের’ নমুনা ছিল এই যে, তারা আল্লাহকে দিবানিশি আহ্বান করত আর তাদের অনেকেই আবার ফেরেশতাদেরকে এজন্য আহ্বান করত যে, ফেরেশতাগণ তাদের সৎ কর্ম ও আল্লাহর নৈকট্যে অবস্থান হেতু তাদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করবে; অথবা তারা কোন পুণ্য-স্মৃতি ব্যক্তি বা নাবীকে ডাকতো যেমন ‘লাত’ বা হযরত ঈসা (আঃ)।
আর এটাও আপনি জানতে পারলেন যে, রসূলুলস্নাহ (সাঃ) তাদের সঙ্গে এই প্রকার শিরক্ এর যুদ্ধ করেছেন এবং তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন যেন তারা একক আল্লাহর জন্যই তাদের ‘ইবাদাহ্কে খালেস (নির্ভেজাল) করে। যেমন আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন:
وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا (الجن :18)
“আরও যে, মসজিদগুলো সমস্তই আল্লাহর (যিকরের) জন্য, অতএব তোমরা আহ্বান করতে থাকবে একমাত্র আল্লাহকে এবং আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকেও ডাকবে না।” (সুরা জিন্নঃ ১৮)
এবং তিনি একথাও বলেছেন:
لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ لاَ يَسْتَجِيبُونَ لَهُم بِشَيْءٍ
“সমস্ত সত্য আহ্বান একমাত্র তাঁরই জন্য, বস্তুত: তাঁকে ছেড়ে অন্য যাদেরকেই তারা আহ্বান করে, তারা তাদের সে আহ্বানে কিছুমাত্রও সাড়া দিতে পারে না।” (সুরা রা’দঃ ১৪)
এটাও বাস্তব সত্য যে, রসূলুলস্নাহ (সাঃ) তাদের সঙ্গে এই জন্যই যুদ্ধ করেছেন যেন তাদের যাবতীয় দোয়া আল্লাহর জন্য হয়ে যায়; যাবতীয় কোরবানিও আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হয়, যাবতীয় নজর নেয়াজও আল্লাহর জন্যই উৎসৃষ্ট হয়; সমস্ত আশ্রয় প্রার্থনা আল্লাহর সমীপেই করা হয় এবং সর্ব প্রকার ‘ইবাদাহ্ আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট হয়।
এবং আপনি এটাও অবগত হলেন যে, তাওহীদে রুবুয়িতের স্বীকৃতি তাদেরকে ইসলামের মধ্যে দাখিল করে দেয়নি এবং ফেরেশতা, নাবী ও ওলীগণের সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমে সুপারিশ লাভের ইচ্ছা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বাসনা এমন মারাত্মক অপরাধ যা তাদের জান মালকে মুসলমানদের জন্য হালাল করে দিয়েছিল।
এখন আপনি অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে, আল্লাহর রসূলগণ কোন তাওহীদের প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন আর মুশরিক্গণ তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।
মক্কার কাফিররা তাই আল্লাহর রসুল (সাঃ) এর দাওয়াতের ব্যাপারে বলতোঃ
“এই লোকটি কি বহু উপাস্যকে এক উপাস্য পরিণত করছে ? এ তো ভারী এক আশ্চর্য ব্যাপার।” (সুরা সা’দঃ ৫)