‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই কালিমা মুখে উচ্চারণই করাই কি মুসলিম হওয়ার জন্য যথেষ্ট?
লিখেছেন: ' abdullah al Mamun' @ বুধবার, অক্টোবর ১৯, ২০১১ (১১:০৭ পূর্বাহ্ণ)
[যারা মনে করেন যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখে বলাই মুসলিম হওয়ার জন্য যথেষ্ট, বাস্তবে তার বিপরীত কিছু করলেও ক্ষতি নেই, তাদের মত ও যুক্তির খণ্ডন]
অনেকের মনে একটা সংশয় বদ্ধ-মূল হয়ে আছে। তা হলো এই যে, তারা মনে করেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালিমা পাঠ করা সত্ত্বেও হযরত উসামা (রাঃ) যাকে হত্যা করেছিলেন, নাবী (সাঃ) সেই হত্যাকাণ্ডটাকে সমর্থন করেননি।
একইভাবে তারা রসূলুলস্নাহ (সাঃ) এর এই হাদিছটিও তারা পেশ করে থাকেন যেখানে তিনি বলেছেন: “আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা বলে (মুখে উচ্চারণ করে) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” উচ্চারণকারীদের হত্যা করা নিষিদ্ধ হওয়ার আরও অনেক হাদিছ তারা তাদের মতের সমর্থনে পেশ করে থাকেন।
তাদের এসব প্রমাণ পেশ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, যারা মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ উচ্চারণ করবে তাদেরকে কাফের বলা যাবে না এবং তারা যা ইচ্ছা তাই করুক, তাদেরকে হত্যা করাও চলবে না।
এর জবাব হচ্ছে নিম্নরুপঃ
(১) রসূলুলস্নাহ (সাঃ)-এর সাহাবাগণ বানু হানীফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন যদিও তারা সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রসূল; তারা সালাতও পড়তো এবং ইসলামেরও দাবি করত।
(২) ঐ একই অবস্থা তাদের জন্য প্রযোজ্য যাদেরকে হযরত আলী (রাঃ) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া ঐ সব মূর্খরা ঠিকই মনে করে যে, যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে তারা কাফের হয়ে যায় এবং হত্যারও যোগ্য হয়ে যায়- তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা সত্ত্বেও। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের যে কোন একটিকে অস্বীকার করে, সে কাফের হয়ে যায় এবং সে হত্যার যোগ্য হয় যদিও সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে।
তা হলে ইসলামের যে কোন একটি অঙ্গ অস্বীকার করার কারণে যদি তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর উচ্চারণ তার কোন উপকারে না আসে, তবে রসূলগণের দীন এর মূল ভিত্তি যে তাওহীদ এবং যা হচ্ছে ইসলামের মুখ্য বস্তু, যে ব্যক্তি সেই তাওহীদকেই অস্বীকার করল তাকে ঐ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর উচ্চারণ কেমন করে বাঁচাতে সক্ষম হবে? কিন্তু আল্লাহর দুশমনরা হাদিছ সমূহের তাৎপর্য হৃদয়ংগম করে না।
(৩) হযরত ওসামা (রাঃ) হাদীসের তাৎপর্য হচ্ছে এই যে, তিনি একজন ইসলামের দাবিদারকে হত্যা করেছিলেন এই ধারণায় যে, সে তার জান ও মালের ভয়েই ইসলামের দাবি জানিয়েছিল।
কোন মানুষ যখন ইসলামের দাবি করবে তার থেকে ইসলাম বিরোধী কোন কাজ প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সে তার জানমালের নিরাপত্তা লাভ করবে। এ কারণেই আল- ক্বুরআনের ঘোষণা এই যে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَتَبَيَّنُواْ (النساء : 94)
“হে মু’মিন সমাজ! যখন তোমরা আল্লাহর রাহে বহির্গত হও, তখন (কাহাকেও হত্যা করার পূর্বে) সব বিষয় তদন্ত করে দেখো।” (সুরা নিসাঃ ৯৪)
অর্থাৎ তার ব্যাপারে তথ্যাদি নিয়ে দৃঢ় ভাবে সুনিশ্চিত হও। এই আয়াত পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, এরূপ ব্যাপারে হত্যা থেকে বিরত থেকে তদন্তের পর স্থির নিশ্চিত হওয়া অবশ্য কর্তব্য। তদন্তের পর যদি তার ইসলাম বিরোধিতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় তবে তাকে হত্যা করা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, فَتَبَيَّنُواْ (ফাতাবাইয়ানূ) অর্থাৎ তদন্ত করে দেখ। তদন্ত করার পর দোষী সাব্যস্ত হলে হত্যা করতে হবে। যদি এই অবস্থাতে হত্যা না করা হয় তা হলে: ‘ফাতাবাইয়ানু’- তাসাব্বুত (অর্থ) অর্থাৎ স্থির নিশ্চিত হওয়ার কোন অর্থ হয় না।
(৪) এইভাবে অনুরূপ হাদিছগুলোর অর্থ বুঝে নিতে হবে। ঐগুলোর অর্থ হবে যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। অর্থাৎ যে ব্যক্তির মধ্যে তাওহীদ ও ইসলাম প্রকাশ্যভাবে পাওয়া যাবে তাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে- যে পর্যন্ত বিপরীত কোন কিছু প্রকাশিত না হবে। এ কথার দলিল হচ্ছে যে, রসূলুলস্নাহ (সাঃ) কৈফিয়তের ভাষায় ওসামা (রাঃ)-কে বলেছিলেন: তুমি হত্যা করেছ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরও ?
(৫) তিনি আরও বলেছিলেন:‘আমি লোকদেরকে হত্যা করতে আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা বলবে: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। সেই রসূলই কিন্তু খারেজিদের ব্যাপারে বলেছেন:
اَيْنَمَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاقْتُلُوْهُمْ لَئِنْ اَدْرَكْتُهُمْ لاَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ عَادٍ (متفق عليه)
অর্থাৎ “যেখানেই তোমরা তাদের পাবে, হত্যা করবে”, “আমি যদি তাদের পেয়ে যাই তবে তাদেরকে হত্যা করব ‘আদ জাতির মত সার্বিক হত্যা।” (বুখারী ৪৭৭০ / ৬৫৩১ ও মুসলিম ২৫১১)
যদিও তারা ছিল লোকদের মধ্যে অধিক ‘ইবাদাহ্ গুজার, অধিক মাত্রায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং সুবাহানাল্লাহ উচ্চারণকারী।
খারেজিরা এমন বিনয়-নম্রতার সঙ্গে সালাত আদায় করত যে, সাহাবাগণ পর্যন্ত নিজেদের সালাতকেও তাদের নামাযের তুলনায় তুচ্ছ মনে করতেন। তারা কিন্তু ইলম শিক্ষা করেছিল সাহাবাগণের নিকট হতেই। কিন্তু কোনই উপকারে আসল না তাদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা, তাদের অধিক পরিমাণ ‘ইবাদাহ্ করা এবং তাদের ইসলামের দাবি করা, যখন তাদের থেকে শরী’আতের বিরোধী বিষয় প্রকাশিত হয়ে গেলে।
(৬) ঐ একই পর্যায়ের বিষয় হচ্ছে ইয়াহুদদের হত্যা এবং বানু হানীফার বিরুদ্ধে সাহাবাদের যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ড। ঐ একই কারণে নাবী (সাঃ) বাণী মুস্তালিক গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন যখন তাঁকে একজন লোক এসে খবর দিল যে, তারা যাকাত দেবে না। এই সংবাদ এবং অনুরূপ অবস্থায় তদন্তের পর স্থির নিশ্চিত হওয়ার জন্য আল্লাহ আয়াত নাঝিল করলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا (الحجرات : 6)
“হে মুমিন সমাজ! যখন কোন পাশক ব্যক্তি কোন গুরুতর সংবাদ নিয়ে তোমাদের নিকট আগমন করে, তখন তোমরা তার সত্যতা পরীক্ষা করে দেখো।” (সুরা হুজরাত. ৬)
উপরোক্ত সংবাদদাতা তাদের ব্যাপারে মিথ্যা সংবাদ দিয়েছিল।
এভাবে রসূলুলস্নাহ (সাঃ)-এর যে সমস্ত হাদিছকে তারা প্রমাণ রূপে পেশ করে থাকে তার প্রত্যেকটির তাৎপর্য তাই যা আমরা উল্লেখ করেছি।
সুতরাং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করা মুসলিম থাকার জন্য যথেস্ট নয়।
উল্লেখ্য মুনাফিকরাও মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে থাকে, কিন্তু তারা মুসলিম নয়।