এক তাবলীগি ভাই এর আত্মপোলব্ধি – ৩
লিখেছেন: ' abdullah al Mamun' @ শনিবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১০ (৯:৫০ অপরাহ্ণ)
২য় উসুল – নামায
নামযের নবীওয়ালা তরীকা:
জানতে পারলাম রাসুল (সা) বলেছেন: “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখো, সেভাবে সালাত আদায় করো।” – বুখারী, আযান অধ্যায় ১/৮৮; মুসনাদে আহমদ ও মিশকাত ৬৮৩।
“বান্দাহ সালাত পড়ে। কিন্তু সেই সালাতের সওয়াব লেখা হয় দশ ভাগের একভাগ, নয় ভাগের একভাগ, আট ভাগের একভাগ, ছয় ভাগের একভাগ, পাঁচ ভাগের একভাগ, চার ভাগের একভাগ, তিন ভাগের একভাগ, দুই ভাগের একভাগ।” – আবু দাউদ ও নাসাই।
দুই নম্বর উসুল নামায নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম, সেটা আল্লাহর হুকুম তাই আমাকে পালন করতেই হবে, এবং সেটা নবী (সা) এর তরীকায় পালন করতে হবে। নামাযে যত বেশী সম্ভব নবীর তরীকা ওনুযায়ী আমল করবো তত বেশী সওয়াব পাবো। আলেমদের থেকে জানলাম, নবীর তরীকার সঠিক বিবরণ পাওয়া যাবে হাদিসের সবচেয়ে সহীহ কিতাব বুখারী ও মুসলিম এ।
চিন্তা – ১১। তাই চিন্তা করেছি, এখন থেকে সহীহ বুখারী, মুসলিমসহ ওন্যান্য হাদীসের বর্ণনা নুযায়ী নামায পড়বো।
নামায না পড়ার শাস্তি:
খেয়াল করে দেখলাম, আমি শুধু মানুষকে নামাজের ফজীলত বলি, নামায না পড়ার শাস্তি জানাই না। ওথচ আল্লাহ ও তার রাসুল (সা) নামাজের ফজীলত এর সাথে সাথে না পড়ার শাস্তিও বলে দিয়েছেন।
রাসুল (সা) বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষ ও আল-শিরক ও আল-কুফরের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ত্যাগ করা।” – সহীহ মুসলিম।
“আমাদের আর তাদের (কাফিরদের) মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের, ওতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো সে কুফরী করলো। – মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী।
আলেমদের কাছ থেকে জানতে পারলাম, বে-নামাযীকে তিনদিন সময় দিয়ে তওবার নির্দেশ দেয়ার পরও যদি নামায শুরু না করে, তবে ইমাম আবু হানিফা (র) এর মত হচ্ছে তাকে হত্যা করা। বাকী ইমামরাও ওনুরুপ মত পোষণ করেন। ইমাম আহমদ (র) নাকি তাদেরকে কাফির মনে করতেন। সাহাবীরাও নাকি বে-নামাযীকে কাফির মনে করতেন।
চিন্তা – ১২। এখন থেকে ২য় উসুল নামাযের দাওয়াত দেয়ার সময় ফজীলতের পাশাপাশি নামায না পড়ার পরিনামের কথাও মানুষকে জানাবো। সে ভয় পাবে কিনা তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। আল্লাহ ও তার রাসুলতো এসব ব্যাপার খুলাখুলি বর্ণনা করেছেন আগে শুধু আমি নিজে জানতাম না।
৩য় উসুল – ইলম ও জিকির
ইলম হতে হবে আল-কোরআন ও সহীহ হাদিস এর ভিত্তিতে:
আল্লাহ বলেছেন: “যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবেনা, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” – সূরা জ্বীনঃ ২৩। এখন আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করতে হলে, তাদের নির্দেশ আগে জানতে হবে।
“এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আসো, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসুলের দিকে, আপনি দেখবেন মুনাফিকরা আপনার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ” – সূরা আন্ নিসাঃ ৬১।
অর্থাৎ কোরআন-হাদিসের অনুসরণ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়া মুনাফিকদের নীতি।
“যখন ঈমানদারদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে ডাকা হয়, তখন তাদের জবাব শুধু এটাই হয় যে, ‘আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম’। তারাই হলো কল্যাণপ্রাপ্ত। ” – সূরা আন্ নুরঃ ৫১।
তাই কল্যাণপ্রাপ্ত হতে হলে আল্লাহ ও তার রাসুল(সা)কে বাদ দিয়ে বা তাদের বিরোধিতা করে ওন্য কারো ওনুসরণ করা যাবে না।
চিন্তা – ১৩। এখন থেকে আল-কোর আন ও সহীহ হাদিস নিয়মিত ওধ্যয়ন করবো। কোন আয়াত বা হাদীস না বুঝলে আলেমদেরকে থেকে জেনে নিবো কিন্তু শুধু ফাজায়েলে আমলের মাঝে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবো না। আর কোরআন- সহীহ হাদিসের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন উস্তাদ, পীর, বুগুর্গের ওনুসরণ বা ওনুকরণ করবো না।
আল কোর আন সবার জন্য নয় বা সাধারণ লোক তা বুঝবে না!!
আগে আমি মনে করতাম আল-কোরআন সবার জন্য নয়, সবাই তা বুঝবে না। সেটা পড়া শুধু আলেমদের কাজ। কিন্তু দেখলাম আল্লাহ বলেছেন,
“এটা (আল কোরআন) হচ্ছে মানব জাতির জন্য সুস্পষ্ট দলীল, হেদায়াত ও রহমত ঐসব লোকদের জন্য যাদের দৃঢ় ঈমান আছে।” – আল জাসিয়াহঃ ২০।
“আমি কোরআনকে স হজ করেছি বুঝার জন্য, ওতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?” – আল কামার: ১৭।
চিন্তা – ১৪। এ ধরনের ভুল ধারনা আর নিজের মাঝে রাখবো না এবং এই ভুল কথা বলে মানুষকে আল্লাহর কালাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখবো না। আমার পূর্বের ভুলের জন্য আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিন।
ইলম হাসিলের নবী ও সাহাবীওয়ালা তরীকা:
আলেমদের থেকে জানতে পারলাম, ইবনে আব্বাস (রা) এবং ওন্যান্য সাহাবী(রা)গণ নাকি সূরা বাকারা শিখেছিলেন কয়েক বছরে, তারা এক আয়াত শিখতেন, সেটা সহীহ ভাবে তিলাওয়াত করতেন, মুখস্থ করতেন, তার উপর আমল করতেন, তারপর পরবর্তী আয়াত ধরতেন। অথচ আমরা শুধু না বুঝে কোরআন খতম করি, তার উপর আমল করি না, ওথবা নূন্যতম তার ওর্থও বুঝতে চাই না।
সাহাবীরা নাকি একজনের সাথে আরেকজনের দেখা হলে কোরআনের আয়াত শুনাতেন, নবীর (সা) এর হাদিস শুনাতেন, এভাবে তারা ইলম বাড়িয়ে নিতেন। ওন্য কোন গল্প-কিচ্ছা-কাহিনীর মাধ্যমে তারা ইলম ওর্জন করতেন না।
চিন্তা – ১৫। এখন থেকে ইলম ওর্জনের সময় নবীওয়ালা ও সাহাবীওয়ালা তরীকা ওনুসরণ করবো ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ বলেছেন, “অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” – আল জুমুয়াহ: ১০।
তাই জিকির ওনেকভাবে হতে পারে, শুধু এক জায়গায় বসে মাথা দুলালেই জিকির হয় না। আর আলেমদের থেকে জানতে পারলাম, নবী (সা) নাকি এভাবে মাথা দুলিয়ে জিকির করেন নি। সেটা তাহলে বিদয়াত হয়ে যাবে।
চিন্তা – ১৬। জিকির যেহেতু একটি ইবাদত, তাই সেখানেও নবীওয়ালা তরীকা ওনুসরণ করবো ইনশাআল্লাহ।
৪র্থ উসুল – ইকরামুল মুসলিমীন।
জানতে পারলাম কোন এক ভাই সুদে লিপ্ত থাকলে বা শিরক-কুফরে লিপ্ত থাকলে প্রথমে তাকে দাওয়াত দেয়া, এরপরও যদি তিনি সংশোধন না করেন, তবে তাকে পরিত্যাগ করে তাকে চাপে রাখাও তার পরকালের জন্য ওন্যতম ইকরাম।
কোন মুসলিম ভাইকে বিদয়াত থেকে ফিরিয়ে রাখা তাকে হাজার বার গ্লাস ভরে পানি খাওয়ানো থেকেও বড় ইকরাম হবে কারণ বিদয়াত করলে আমার ঐ ভাই হাশরের দিন রাসুল (সা) এর হাতে হাউসে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না।
কোন মুসলিম ভাই এর সাথে সঠিক ভাবে কোরআন হাদিসের আলোকে ইলম নিয়ে আলোচনা করা আরো বড় ইকরাম কারণ সঠিক জ্ঞান না থাকলে সে ভাই হারাম, বিদয়াত এমন কি শিরক, কুফরে লিপ্ত হয়ে যেতে পারেন।
৫ম উসুল – তাসহীয়ে নিয়্যত
আমাদের সবার নিয়্যত আল্লাহ কবুল করুন। আল্লাহ আমদেরকে আমাদের নিয়্যতে বরকত দান করুন।
——– ইনশাআল্লাহ চলবে ———
ভালো লাগলো।
তবে আপনার উপলব্ধিগুলো আলেমদের থেকে verify করলে ভালো হবে।