আলেমদের অবমাননা একটি জঘন্য ব্যধি
লিখেছেন: ' Abdullah shahid' @ মঙ্গলবার, জুলাই ২৭, ২০১০ (১২:৩৭ অপরাহ্ণ)
তাফসীরে ইবনে কাসীরের দরস চলছিল। শিক্ষক ছিলেন শায়খ আব্দুল হামীদ আস সালমান। সৌদী আরবের নাগরিক। জানেন শুধু আরবী ভাষা। দরসে আমরা ছাত্র ছিলাম ১০-১৫ জন। আমাদের মধ্যে একজন জোড়া তালি দিয়ে আরবীতে একটা প্রশ্ন করল উস্তাদ আব্দুল হামীদকে। আমরা সকলে তার ভাষা ও প্রশ্ন শুনে হো হো করে হেসে উঠলাম। উস্তাদ তাকে বললেন, তোমার প্রশ্ন আমি বুঝিনি, আবার বল। অধিকতর ভাল আরবী জানে এমন একজনের সাহায্য নিয়ে সে প্রশ্নটা উস্তাদকে বুঝিয়ে দিল। তিনি প্রশ্নটা শুনে বললেন, কিন্তু এ প্রশ্ন শুনে তো এত হাসার কথা নয়, যেমন তোমরা হেসেছ। এত হাসার আসল কারণ কী?
উস্তাদের এ প্রশ্নের কি উত্তর দেয়া যায়, তা নিয়ে আমরা বিব্রত হয়ে পড়লাম। যে একটু বেশী ও সক্রিয়ভাব নিয়ে হেসেছে অনেকে তার দিতে তাকাতে থাকল। ভাবটা এমন যে, তুমি যখন বেশী হেসেছ তখন এ প্রশ্নের উত্তরটা তোমারই দেয়া উচিত।
সে প্রশ্নের উত্তর দিল। বলল, উস্তাদ ওর মধ্যে একটু ছেলেমি ভাব আছে, তাই আমরা তাকে নিয়ে মাঝে মধ্যে একটু ঠাট্টা-বিদ্রুপ, হাসি-তামাশা করে থাকি। এ জন্য তার কথায় আমরা বেশী হেসে ফেলেছি।
এ কথা শুনে উস্তাদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। হাস্যোজ্জল চেহারায় ভাব-গাম্ভীর্যতা চলে আসল। তিনি বললেনঃ
ﮌ ﮍ ﮎ ﮏ ﮐ
আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’?
আমরা আরো একটু অপ্রস্তত হয়ে গেলাম। আমাদের আচরণে সম্মানিত মেহমান, আমাদের শিক্ষক মাইন্ড করেছেন বলে।
তিনি বললেন, তোমরা কি জানো এ আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট? এর তাফসীর ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা কিছুই বলতে পারলাম না।
তিনি বললেন, তাহলে শোন, সুরা আত তাওবার সেই আয়াত দুটো হলঃ
ﮃ ﮄ ﮅ ﮆ ﮇ ﮈ ﮉﮊ ﮋ ﮌ ﮍ ﮎ ﮏ ﮐ ﮑ ﮒ ﮓ ﮔ ﮕ ﮖ ﮗﮘ ﮙ ﮚ ﮛ ﮜ ﮝ ﮞ ﮟ ﮠ ﮡ ﮢ ﮣ
“আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল,আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দেই, তবে অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।”
(সূরা আত তাওবা, আয়াত ৬৫-৬৬)
তিনি বললেন, তোমরা পৃষ্ঠা উল্টাও। সূরা তাওবার ৬৫ b¤^i আয়াতে যাও। আমরা তাফসীর ইবনে কাসীরের নির্ধারিত আলোচ্য বিষয়ের পৃষ্ঠা ছেড়ে দিয়ে সেখানে চলে গেলাম। তিনি পড়ে শুনালেন :
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাবুক যুদ্ধের সময় একদিন এক বৈঠকে এক ব্যক্তি মন্তব্য করল, আমাদের এ কারী হাফেজদের মত কাউকে দেখিনি। তারা খাওয়ার সময় বড় পেটওয়ালা, কথায় মিথ্যাবাদী আর যুদ্ধের ময়দানে কাপুরুষ।
তার এ মন্তব্য রাসূলুল্লাহর কাছে তুলে ধরা হল। রাসূলুল্লাহ সা. তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নাকি এ রকম বলেছ? সে বলল, আমি শুধু খেল-তামাশাচ্ছলে এ কথা বলেছিলাম। এরপর সাথে সাথে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।
এ থেকে আমরা জানতে পারলাম, যে সকল সাহাবী কারী, হাফেজ বা আলেম ছিলেন তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করাকে আল্লাহ তাআলা কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন। এটাকে তাঁর সাথে তাঁর রাসূলের সাথে ও তাঁর আয়াতের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ বলে অভিহিত করেছেন। এটাকে ঈমানের পর একটি কুফরী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ধরনের কাজের বৈধতা দানে তাদের ওজর গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন। হতে পারে যারা এটা করেছিল তারা ছিল মুনাফিক। যদি এটা মুনাফিকদের জন্য অবৈধ হয়, তাহলে মুসলিমদের জন্য কি বৈধ হতে পারে?
তারপর তিনি বললেন, আচ্ছা তোমাদের কি মনে হয়, এ আয়াতের হুকুমটি শুধু সে সকল আলেম, কারী, হাফেজ ও দায়ীদের জন্য প্রযোজ্য যারা রাসূলের সাথে ছিলেন। আর তাদের পরবর্তীদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়?
যদি তা-ই হয় তাহলে তোমাদের এ ধারণা ঠিক নয়। কারন, আল্লাহর বাণীর ব্যাপারে সর্বজন ¯^xK…Z মুলনীতি হল:
العبرة بعموم اللفظ لا بخصوص السبب
আল কুরআনের শিক্ষা বা উপদেশ হল বাক্যের ব্যাপকতার সাথে সম্পর্কিত, নির্দিষ্ট কারণের সাথে নয়।’
অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যত আলেম, হাফেজ, কারী, দায়ী আসবে সকলের সম্মান ও মান মর্যাদা রক্ষার জন্য এ আয়াত প্রযোজ্য হবে। যারা এদের বিরুদ্ধে গালি-গালাজ, বিদ্রুপ, অবমাননা, মানহানিকর কথা বার্তা বলবে, সকলেই এ আয়াতে বর্ণিত অপরাধে অপরাধী হবে। তাদের ঈমান চলে যাবার ঝুঁকি থেকেই যাবে। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত নয় সকল ইমাম, শরীয়তবিদ ও মুফাসসির এ মত ব্যক্ত করেছেন। বলতে পার, এর উপর ইজমা বা উম্মাহর ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
উস্তাদের এ দরস শুনে আমরা তাকে বললাম, আসলে অনেক ব্যাপার আছে যা আমরা খুব হালকা ভাবে নিয়ে থাকি কিন্তু তা মারাত্নক।’
উস্তাদ বললেন, ঠিক বলেছো। আল্লাহ তাআলা তাই বলেন:
ﮩ ﮪ ﮫ ﮬ ﮭ ﮮ ﮯ النور: ١٥
“আর তোমরা এটাকে তুচ্ছ করেছ অথচ তা আল্লাহর নিকট খুবই গুরুতর।”
(সূরা আন নূর, আয়াত ১৫)
আসলে এ বিষয়টির প্রতি জাতি হিসাবে আমরা অত্যন্ত উদাসীন। আমাদের সাধারণ শিক্ষিত সমাজ, আলেম সমাজ, দীনি দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ সকলেই এ মারাত্নক ব্যধিতে আক্রান্ত। আমরা আলেমদের সম্মান করতে চাই না। তাদের দোষ চর্চা ও সমাজে তাদের হেয় প্রতিপন্ন করতে চেষ্টা করি। দেখা যায় যারা নাটক, সিনেমা তৈরী করে, তারা সবচেয়ে খারাপ, দুষ্ট চরিত্রটাকে যাকে দেন, তাকে আলেমের পোশাক পরিয়ে দেন। এটা করে তারা কতখানি ঈমানের পরিচয় দেন তা না মেপেও বলা যায়।
আর যারা দীনি পরিবেশের সাথে যুক্ত, এমন সাধারণ মানুষেরা যেন এ রোগে আরো বেশী আক্রান্ত। তারা যখন তাদের পরিচালিত মসজিদের ইমামের সাথে কথা বলেন, বা মুয়াজ্জিনকে m‡¤^vab করেন অথবা তাদের মাদ্রাসার কোন শিক্ষককে কিছু বলেন, তখন তারা যে আলেম হিসাবে একটা সম্মান পেতে পারেন, তাদের কোন অবমাননা হলে তা যে মারাত্নক কুফুরীর পর্যায়ে চলে যায়, সে দিকে খেয়ালই করেন না। খোদ আলেম উলামাগণও এ বিষয়য়ে সচেতনতার পরিচয় দেন না। তারা নিজেরা তাদের প্রতিপক্ষ আলেমদের বিরুদ্ধে যখন কথা বলেন বা সমালোচনা করেন তখন তারা এ বিষয়টিকে মোটেই আমলে নিতে চান না। তাদের প্রতি অবমাননা ও অপমানসুচক ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। আল্লাহ পবিত্র কালামে যখন আলেম উলামাদের প্রশংসা করেছেন তখন কিন্তু বলেননি কোন দলের লোক এদের অন্তর্ভূক্ত, আর কে নয়। তাই যে সকল লোক ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন, ধর্মের প্রচার ও শিক্ষার কাজে ব্যাপৃত আছেন তাদের সকলকে সম্মান ও মর্যাদা দেয়া এ আয়াতের দাবী। আল্লাহ তাআলা নিজেও কুরআনের একাধিক স্থানে এদের প্রশংসা করেছেন। তাই তাদের সাথে অবমাননাকর আচরণ করা বা পিছনে অমুলক সমালোচনা করা একটি গুরুতর অন্যায়। যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুফরী তথা ইসলাম প্রত্যাখ্যান বলে অভিহিত করেছেন।
এটা মনে হয় আমাদের একটি সামাজিক ব্যধি। এক প্রবীন ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি ইউরোপ আমেরিকায় থেকেছি। চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া ঘুরেছি। ইহুদী সমাজে দেখেছি, তাদের ধর্মীয় নেতাদের তারা সকলে খুব সম্মান করে। খৃষ্টান সমাজে দেখেছি, তারা তাদের পাদ্রী পুরোহিতদের যথেষ্ট সম্মান করে। হিন্দু ও বৌদ্ধ সমাজে দেখেছি, তারা তাদের সাধু সন্যাসী ও ভিক্ষুদের খুব মর্যাদা দেয় ও সম্মান করে। কিন্তু আমাদের মুসলমানদের কি হল, তারা তাদের ধর্মীয় নেতাদের আলেম উলামাদের, ইসলাম প্রচারে নিবেদিত ব্যক্তিবর্গ, ইমাম-মুয়াজ্জিদের ও ধর্মপ্রাণ মানুষদের সম্মান করে না। বরং তাদের খামাখা গালিগালাজ করে। সুযোগ পেলেই তাদের অপমান করে। খারাপ শব্দাবলী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে। একজন আলেম-কে শুধু আলেম হওয়ার কারণে তার অবমাননা করে।
আমাদের সমাজে এমন অনেক উচ্চু শিক্ষিত মানুষ আছেন, যারা ইসলামী জ্ঞানে পান্ডিত্য অর্জন করে ইসলামের প্রসার ও শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাদের ভূমিকার ¯^xK…wZ ¯^iƒc মানুষ তাদেরকে ¯^Z:ùzZ©fv‡e ইসলামী চিন্তাবিদ উপাধি দিয়েছেন। তাদের কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা ইসলামের প্রসার-কে আরো বেগবান করেছে- কোন সন্দেহ নেই- তাদের অনেকেই আলেম উলামাদের সমালোচনায় পাকাপোক্তভাব জাহির করে থাকেন। তারা মনে করেন, আলেমদের চেয়ে আমরা ইসলামের কম করেছি কী? কম শিখেছি কী? তারা কী করেছে? ইসলাম-কে নিজেদের জীবিকা অর্জনের মাধ্যম বানিয়েছে। তারা ইসলামের সঠিক বিষয়টা বুঝতে পারেনি। আমরাই ভাল কাজ করে যাচ্ছি।
এদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার সাথে বলতে হয়, অবশ্যই আপনাদের কর্ম-তৎপরতা প্রশংসার দাবী রাখে। এটাকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু আলেমদের ও আপনাদের মাঝে কতগুলো পার্থক্য আছে। আছে প্রাধান্য পাওয়ার কিছু বিষয়। আলেমগন ইসলামের জন্য নিজের জীবনের সব কিছুকে ত্যাগ করেছেন। ইসলামের ¯^v‡_© নিজেদের উন্নত জীবনের আশা, জীবিকা অর্জন, সমাজের প্রভাব প্রতিপত্তি লাভের উপায়, ভাল চাকুরী, সবকিছুকে বিসর্জন দিয়ে ইসলাম শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়াকে নিজেদের জীবনের লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করেছেন। ইসলামের জন্য দারিদ্রতা, সংকট, অপমান, অবমাননা, বঞ্চনা, অবমুল্যায়ন ইত্যাদি বেছে নিয়েছেন। আল্লাহ তাআলার বাণী যেন সকল কিছুর উপরে স্থান পায়, সে তৎপরতায় ব্যপৃত থাকেন। ইসলামের জন্য যে কোন ঝুকি নিতে সদা সর্বদা প্রস্তুত থেকেছেন।
কিন্তু আপনারা তা পারেননি। দুনিয়াতে ভালভাবে খেয়ে পড়ে সুখ ¯^v”Q›`gq জীবন যাপনের লক্ষে জীবনকে পরিচালিত করেছেন। এ লক্ষ্যে চলতে যেয়ে কোন কারণে আপনারা ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা করে পান্ডিত্য অর্জন করেছেন। ইসলামী সমাজে ¯^xK…wZ ও মর্যাদা পেয়েছেন। তাই আলেমদের সাথে আপনাতের কোন তুলনা করা চলে না।
আপনি চিন্তা করলে দেখবেন, ইসলামে প্রতি আপনার এ প্রবল আগ্রহ সৃষ্টির পিছনে রয়েছে অবশ্যই একজন আলেমের ভূমিকা।
বিষয়টি শুধু ইসলামের জ্ঞান অর্জনের নয়, ইসলামের জন্য বিসর্জনেরও। আপনারা ইসলামের জন্য অর্জন করতে পেরেছেন ঠিক, কিন্তু বিসর্জন দিতে পারেননি। আলেম-উলামা, হাফেজ-কারী, ইমাম-মুয়াজ্জিনরা ত্যাগ ও বিসর্জন দিতে পেরেছেন। তাই আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা অনেক বেশী বলেই তিনি এ আয়াতে এদের সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।
যারা আমাদের ইসলাম ধর্মের ¯^v‡_© এত কিছু ত্যাগ করলেন। জাতি হিসাবে আমাদের কর্তব্য ছিল, তাদের জীবন যাপনের যাবতীয় উপকরণ যথা প্রয়োজন তাদের জন্য ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমরা কি তা করেছি? বা করার কোন পরিকল্পনা নিয়েছি?
আমাদের সমাজে কেহ ভাল খেলাধুলা করতে পারলে পুরস্কার আছে। বেশী সুদ খেতে পারলে পুরস্কার আছে। ভাল নাচ-গান করতে পারলে পুরস্কার আছে। ভাল ছবি আঁকতে পারলে পুরস্কার আছে। আছে অনেক কিছুর পুরস্কার। কিন্তু শুধু নেই তাদের জন্য কোন পুরস্কার। আছে শুধু বঞ্চনা, গালাগালি অবমানা, নির্যাতন আর তিরস্কার। তাদের গালি দেয়ার জন্য আমাদের সমাজে কত নতুন নতুন শব্দের আবিস্কার হচ্ছে, তা হিসেব করে লিখতে বসলে একটি গবেষণাকর্ম হতে পারে। এটা যে কত বড় জুলুম কখনো আপনি ভেবে দেখেছেন কি?
সমাপ্ত
আলহামদুলিল্লাহ – খুবই সময়োপযোগী লেখা। কিন্তু কিছু অস্পষ্টতা থেকে গেল –
আপনি আলিম বলতে কাদের বুঝাচ্ছেন?
১। যারা আম্মাপারা মুখস্থ করে গ্রামের মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি তাবিয দেয়া মিলাদ পড়ানো সবকিছু করছেন -তারাও কি আলিম?
২। যারা লালসালু উপন্যাসের মজিদের মত মাজার আর পীর ব্যবসা করছে তারাও?
৩। যারা অধুনা উলামা লীগের হয়ে ফতোয়া জারি করছেন – নারী-পুরুষ সমান ভাগ পাবে তারাও?
ইসলামের প্রতীক নিয়ে হাসাহাসি করা অবশ্যি কুফরী। কিন্তু যা ইসলামের প্রতীক না – মাজার-পীর-তাবিয তার বিরুদ্ধে কথা বলা কুফরি নয় বরং কথা না বলা ঈমানের দুর্বলতা।
আরেকটি বিষয়-
যারা আল্লাহর কাছে পুরষ্কার চান তাদের জন্য দুনিয়াতে পুরষ্কার আশা করা ঠিক নয়
@আবু আনাস, আমার একজন মুলিম ভাই হিসেবে আপনার নেক নিয়তকেই আমি প্রাধান্য দিচ্ছি। তবে, আপনার দেয়া ৩ টি প্রশ্ন – এর কোনোটাই একজন মুসলিমের সাথে Significant Amount of Time – না দিয়ে Decision এ পৌছানো সম্ভব নয়। এই ধরনের কাজ শুধু এদেশের SALAFI রা ই করে থাকে। আপনার ৩ নং প্রশ্নটা অবশ্য খুবই Significant. ঐ উলামারা কি জেনে বুঝেই একাজ করছেন? কথায়তো টাই মনে হয়।
@আবু আনাস, হাফেজ, কারী, মুয়াজ্জিন -তারা শিক্ষা-দীক্ষায় ছোট হলেও ইসলামে নিবেদতি থাকার কারণে তারা বড় মর্যাদার অধিকারী। তবে শিরক বিদআতে যারা লিপ্ত, আদর্শিক কারণেই তাদের থেকে দুরে থাকা যাবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে দীনের কারণে আমরা যেন কাউকে অবজ্ঞা না করি।
যারা আল্লাহর কাছে পুরস্কার চান তাদের অন্য কারো কাছে পুরস্কার আশা করা ঠিক নয়।
একদম ঠিক কথা বলেছেন। তবে তারা আশা না হয় না করলেন, কিন্তু অন্যদের দায়িত্বটা কি আশা করা যায় না?
@Abdullah shahid, ইসলামের জন্য নিবেদিত আর আলিম এক জিনিস নয়। যারা মসজিদের মুয়াজ্জিন, খাদিম তাদের আমরা উপহাস করবোনা এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তাদেরকে “আলিম” এর মর্যাদা দিয়ে দিব এটা কাম্য নয়। রসুলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদ ঝাড়ু দেয়া হাবশি মহিলার জানাযা পড়েছেন কিন্তু তাকে আলিমের সার্টিফিকেট দেননি। ইসলামে আলিম মানে অনেক বড় কিছু — অনেক বড় কিছু।
দুঃখজন হলেও সত্য আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের (সেকুলার শয়তান না) মধ্যে যে ইসলামের বিষয় – দাড়ি-টুপি-জোব্বা নিয়ে পরিহাস করার মানসিকতা দেখা যায় তার পিছনে ধর্ম-ব্যবসায়ীদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। ইসলামকে এরা মানুষের দয়ার পাত্র বানিয়ে ছেড়েছে।
তবে এ কথা ঠিক – আমরা ইমাম-আলিমদের সাথে যে ব্যবহার করি তাতে আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব তা ভাবতে পারিনা। আল্লাহ মাফ করুক আমাদেরকে।
কে আলেম সে বিষয়ে তর্ক না করে , আমারা বিষয়টি এভাবে দেখতে পারি । ইসলামিক বিষয়ে যার এলেম আছে এবং সে অনুযায়ী যে আমল করা এবং যার অন্তরে আল্লাহভীতি আছে ।
সে হিসেবে আপনার নীচের বক্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ন একমত।
আসলে এ বিষয়টির প্রতি জাতি হিসাবে আমরা অত্যন্ত উদাসীন। আমাদের সাধারণ শিক্ষিত সমাজ, আলেম সমাজ, দীনি দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ সকলেই এ মারাত্নক ব্যধিতে আক্রান্ত। আমরা আলেমদের সম্মান করতে চাই না। তাদের দোষ চর্চা ও সমাজে তাদের হেয় প্রতিপন্ন করতে চেষ্টা করি। দেখা যায় যারা নাটক, সিনেমা তৈরী করে, তারা সবচেয়ে খারাপ, দুষ্ট চরিত্রটাকে যাকে দেন, তাকে আলেমের পোশাক পরিয়ে দেন। এটা করে তারা কতখানি ঈমানের পরিচয় দেন তা না মেপেও বলা যায়।
@হাফিজ, জাযাকুমুল্লাহ খাইরান
@হাফিজ, ইসলামিক বিষয়ে যার এলেম আছে এবং সে অনুযায়ী যে আমল করা এবং যার অন্তরে আল্লাহভীতি আছে
সহমত।
আসলে এ বিষয়টির প্রতি জাতি হিসাবে আমরা অত্যন্ত উদাসীন। আমাদের সাধারণ শিক্ষিত সমাজ, আলেম সমাজ, দীনি দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ সকলেই এ মারাত্নক ব্যধিতে আক্রান্ত। আমরা আলেমদের সম্মান করতে চাই না। তাদের দোষ চর্চা ও সমাজে তাদের হেয় প্রতিপন্ন করতে চেষ্টা করি। দেখা যায় যারা নাটক, সিনেমা তৈরী করে, তারা সবচেয়ে খারাপ, দুষ্ট চরিত্রটাকে যাকে দেন, তাকে আলেমের পোশাক পরিয়ে দেন। এটা করে তারা কতখানি ঈমানের পরিচয় দেন তা না মেপেও বলা যায়
সত্যই বলেছেন।
আপনারা ইসলামের জন্য অর্জন করতে পেরেছেন ঠিক, কিন্তু বিসর্জন দিতে পারেননি। আলেম-উলামা, হাফেজ-কারী, ইমাম-মুয়াজ্জিনরা ত্যাগ ও বিসর্জন দিতে পেরেছেন। তাই আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা অনেক বেশী বলেই তিনি এ আয়াতে এদের সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।
সহমত ।
@হাফিজ, জাযাকুমুল্লাহ খাইরান
আলহামদুলিল্লাহ। পিতামাতাহারা সন্তানকে যেমন সবাই তুচ্ছ করে, তেমনি আমিরুল মুসলিমিন ছাড়া মুসলিমদের তুচ্ছ করা হচ্ছে।”আপনারা ইসলামের জন্য অর্জন করতে পেরেছেন ঠিক, কিন্তু বিসর্জন দিতে পারেননি।” কথাটা আমাদের সবার বুঝে নেয়া উচিত।
@Fiqriyatu Fiddin, ইসলামের জন্য বিসর্জনের তাওফীক চাই আল্লাহর কাছে।
ঠিক, তবে
বিষয়টি আক্বীদাগত বৃহত্তর কোন মতবিরোধ থেকে হতেই পারে এটাকে আমি খারাপ বলবো না।
আর হ্যা: আমাদের সমাজে কেহ ভাল খেলাধুলা করতে পারলে পুরস্কার আছে। বেশী সুদ খেতে পারলে পুরস্কার আছে। ভাল নাচ-গান করতে পারলে পুরস্কার আছে। ভাল ছবি আঁকতে পারলে পুরস্কার আছে। আছে অনেক কিছুর পুরস্কার। কিন্তু শুধু নেই তাদের জন্য কোন পুরস্কার।
এ প্রসংঙ্গে একটি হাদিস মনে পড়ে গেল ” হে আহলে কোরান তোমরা কোরানের সকল পুরষ্কার নগদ চাইয়ো না কারণ আল্লাহর কাছে এর জন্য একটি পুরুষ্কার আছে” আলেমগন সে পুরষ্কারকে নিশ্চিতরুপে জানেন বলেই সকল গঞ্জনা তাদের জন্য সম্মানের বস্তু।
@বাংলা মৌলভী, জাযাকুমুল্লাহু খাইরান!
হাদীসটির সুত্র জানালে ভাল হত।
@Abdullah shahid,মাজমুনটি আমি সর্বপ্রথম ” إذاعة القرآن الكريم ” এর একটি মুহাযারা থেকে শুনেছিলাম আরো বছর ৭সাতেক আগে। তবে মতনের অর্থটি এরকমই মনে পড়ছে। আপনি সনদ চাওয়ার পরে অনেক সময় নিয়েই তা খোজ করলাম কিন্তু এখনো মিলাতে পারি নি। চেষ্টা করছি… দোয়া করবেন যাতে সহজে পেয়ে যাই। আপনি যদি আমার আগে কোথায়ো আরবী মতনটি পেয়ে যান তবে তা আমাকে জানানোর অনোরোধ থাকবে। শুকরান।
@বাংলা মৌলভী, ভুল ধরিয়ে দেয়া যায় অর্থাৎ তিনি যা প্রচার করছেন তার সমালোচনা করা যায় কিন্তু ব্যক্তিগত সমালোচনা বা গালি দেয়ার প্রয়োজন দেখিনা।
তিনটি কথা।
১। প্রকৃত আলেমকে মানুষ অবশ্যই সম্মান করে। কিন্তু যেসব দরবারী লোক বলে বেড়ায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে ইসলামের কোনই বিরোধ নেই’, যেসব মাজারব্যবসায়ী আর ভণ্ডপীরের দল অর্থ উপার্জনের জন্য ইসলামকে মানুষের চোখে বিকৃত করে ফেলেছে – তাদের জন্য কোন সম্মান নেই, তাদের টাইটেল-উপাধি যতই লম্বা হোক না কেন।
২। মিডিয়া সেকুলারদের নিয়ন্ত্রণে। ওরা আদর্শিক কারণেই আলেমদের হেয় করে, কারন সেকুলারিজমের বিস্তারে প্রধান বাধা আলেম সমাজই।
৩। অনেক সময় আলেমগণ নিজেরাই নিজেদের ওজন বোঝেননা। তারা যখন একে অন্যকে আক্রমণ করেন, তখন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে তারা কতটা নীচে নেমে যান সেটা তারা বোঝেন কি ?
@মুসলিম, মুল্যবান কথা বলেছেন।
দরবারী আলেমদের ব্যাপারে হাদীসে সাবধানবানী এসেছে।
আমাদের অনেকের সমস্যা হল, কোন এক আলেম নামধারী ব্যক্তি কোন অন্যায় করলে আমরা ঢালাওভাবে সকল আলেমকে এজন্য দায়ী করতে বা অসম্মান করতে চাই। এটা ঠিক নয়।