লগইন রেজিস্ট্রেশন

বিসমিহী তায়ালা নয় আর সংখ্যা দিয়ে বিছমিল্লাহ নয়

লিখেছেন: ' Abdullah shahid' @ বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৯, ২০১০ (১:১৮ অপরাহ্ণ)

অনেকেই লক্ষ্য করে থাকবেন যে, বহু মানুষ বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর পরিবর্তে তার বিকল্প হিসাবে বিসমিহী তায়ালা লিখে থাকে। এটা যে শুধু সাধারণ মানুষেরা লিখে থাকে তা কিন্তু নয়। বড় বড় আলেম, মুফতী, ইসলামি চিন্তাবিদগনও লিখে থাকেন। আমি অনেক বড় বড় দাওরা হাদীস মাদরাসার পোষ্টার, চিঠি-পত্রে দেখেছি, সবার উপরে বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর পরিবর্তে বিসমিহী তায়ালা লেখা থাকে। অথচ এ সকল মাদরাসাগুলো দেশের নির্ভেজাল ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র হিসাবে সকলের কাছে স্বীকৃত।
আসলে এভাবে লেখা কতটা শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য তা আলোচনা করতে ইচ্ছা রাখি। আর এটা আলোচনা করতে বা বুঝতে খুব বেশী গবেষণা করতে হয় তা কিন্তু নয়।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা বুঝেছি সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর পরিবর্তে বিসমিহী তাআলা লেখা একটি বিদআত। এভাবে লেখা বা বলা জায়েয নয়। এটা একটি সুন্নাতের বিকৃতি। এবং সুন্নাহর স্থানে অন্য কিছুর প্রচলন করার প্রয়াস।
যারা এ রকম লেখেন, তাদের দু একজনকে আমি অবশ্য জিজ্ঞেস করেছি, আপনারা এভাবে কেন লেখেন? তারা উত্তরে বলেছেন, বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পুরোটা লেখলে আল্লাহ শব্দটি, রাহমান, রাহীম কে অসম্মান বা বেহুরমতি করার সম্ভাবনা থেকে যায়। এ চিঠি বা পোষ্টার রাস্তায়, ড্রেনে পতিত হতে পারে। মানুষের দ্বারা পদপিষ্ট হতে পারে। তাই আমরা বিসমিহী তাআলা লিখে থাকি।
তাদের এ জওয়াবে আমি পরিতৃপ্ত হতে পারিনি।
কারণ:
এক. বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া বা লেখা একটি ইবাদত। ইবাদতের পদ্ধতি সেটাই অনুসরণ করতে হবে, যা কুরআন ও সহীহ হাদীসে এসেছে। যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আদায় করেছেন ঠিক সে রকমভাবে আদায় করাটাই সুন্নাত। এর মধ্যে বাড়ানো বা কমানো কিংবা তার আকৃতি পরিবর্তন করা নি:সন্দেহে বিদআত। এটাই আমার আকীদা। ভুল হলে আপনারা বলে দেবেন।
দুই. আল কুরআনে সূরা আন নমলে এসেছে যে, নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম ইয়েমেনের সাবা রাজ্যের রাণীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন। সে রাণী ছিল মুশরিক। সূর্যকে সেজদা করত। কিন্তু সুলাইমান আলাইহিস সালাম এটা চিন্তা করলেন না যে, আমি যদি চিঠিতে বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখি, তাহলে হয়ত সে অপবিত্র মানুষগুলো এর অসম্মান বা বেহুরমতি করতে পারে। তাই না লেখাটাই ভাল।
তিন. রাসূলুল্লাহ সা. বড় বড় কাফের রাজা-বাদশাদের কাছে যে সকল চিঠি-পত্র লিখেছেন তার সবগুলোতে তিনি বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখেছিলেন। তিনি এর বেহুরমতির দিকটা বিবেচনা করেননি। তার বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা চিঠিতো ইরানের সম্রাট ছিড়ে টুকরো টুকেরো করেও ফেলেছিল। তারপরও তিনি বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা ত্যাগ করলেন না বা লেখতে নিষেধ করলেন না।
চার. এমনকি কাফেরদের সাথে চুক্তিপত্র লেখার বেলায়ও তিনি বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখায় কোন ছাড় দেননি। হুদায়বিয়ার সন্ধি লেখার সময়তো কাফের প্রতিনিধি দল বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখতে আপত্তি করে বসল। বলল, বিছমিল্লাহ লেখা যেতে পারে কিন্তু রাহমান ও রাহীম আবার কেন? কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন ছাড় দিলেন না। তিনি বললেন না, কাফেররা যখন পছন্দ করে না, তখন যদি আমরা বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লিখে দেই তাহলে ওরা এর বেহুরমতি করতে পারে।
পাচ. বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ইসলামের একটি শিআরে পরিণত হয়েছে। তাই আপনি দেখবেন একজন অমুসলিম সে কখনো কখনো আচ্ছালামু আলাইকুম বলে, কিন্তু ভুলেও কখনো বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে না। এমনকি মুসলিম সমাজে যারা ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন, তারাও বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সঠিকভাবে বলতে পারে না।
ছয়. বিসমিহী তাআলা বললে, আল্লাহ শব্দটিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। রাহমান ও রাহীম আল্রাহ তাআলার দুটি সুন্দর নাম তা-ও অনুচ্চারিত থেকে যায়। আর এ ধরনের কাজ তাশাব্বুহ বিল কুফর বা কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যতা গণ্য হতে পারে।
সাত. যদি এ ধরনের বেহুরমতির আশংকা লালন করা হয়, তাহলে তো কোথাও আল্লাহর নামটি লেখা বা তার গুণাবলি লেখার কোন জায়গা পাওয়া যাবে না।
আট. বেহুরমতির এ যুক্তি মেনে নিলে আল কুরআনের কপি ছাপানো, বিতরণ, বাজারজাত করণ ইত্যাদির বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।
নয়. যে ধারনার উপর ভিত্তি করে বিসমিহী তায়ালা লেখা হয়, সে ধারনাটাও বিদআত। কারণ রাসূলুল্লাহ বা তার সাহাবায়ে কেরাম এ রকম ধারণা লালন করেননি। আর এ ধারনার উপর ভিত্তি করে যা করা হয় সেটাও বিদআত। কারণ এ সমর্থনে কোন দলীল নেই। তাই বিসমীহি তাআলা লিখতে যেয়ে দুটো বিদআতের আমল করা হয় একই সাথে।
দশ. বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল কুরআনের একটি আয়াত। এটা লিখলে বা পড়লে প্রতিটি হরফে দশটি করে সওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু এর পরিবর্তে বিসমিহী তাআলা বললে কি পাওয়া যাবে? বিসমিহী তায়ালা বললে কি বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলার সুন্নাত আদায় হবে? যখন কোনটাই হবে না, তখন আমরা কেন এ বিকৃতির দিকে যাবো?
এগার. ৭৮৬ দিয়ে বিসমিল্লাহ লেখা যে বিদআত তাতে কোন ইসলামি স্কলারের ভিন্নমত নেই। এ সংখ্যাটি দ্বারা বিছমিল্লাহ লেখা সম্ভবত হিন্দু সংস্কৃতি থেকে আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে। কারণ, সংখাটি হিন্দুদের নিকট সম্মানের বিষয়।
বারো. অনেকে চিঠি পত্রের শুরুতে এলাহি ভরসা লিখে থাকেন। এটাও পরিহার করতে হবে। বিছমিল্লাহ-কে বাদ দেয়ার জন্য কেহ এটা চালু করে থাকতে পারে। আমার যতদূর মনে পড়ে, সম্রাট আকবরের দীনে ইলাহীতে বিছমিল্লাহর পরিবর্তে এলাহী ভরসা, আর সালামের পরিবর্তে আল্লাহ আকবর বলার প্রচলন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠা।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৩,২৫৮ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ১.০০)

৩ টি মন্তব্য

  1. ১. বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম পড়া বা লেখা একটি ইবাদত।
    একমত।
    তবে বিসমিহী তা’য়ালা বলা বা লেখাকে কেউ ইবাদত হিসাবে নিয়ে থাকে , আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।
    ২. যেগুলো অস্থায়ী, ফেলে দেওয়া হয় এমন পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদিতেই বিসমিহী তা’য়ালা লেখা হয়ে থাকে, তবে লেখার শুরুতে বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম পুরোটাই পড়া হয়।

  2. আলহামদুলিল্লাহ – চমৎকার পোস্ট

  3. জাযাকাল্লাহু খায়ের।
    চমৎকার পোষ্ট।

    @ইবনে হাবীব(মাহমুদ)
    তবে বিসমিহী তা’য়ালা বলা বা লেখাকে কেউ ইবাদত হিসাবে নিয়ে থাকে , আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।

    আমার মনে হয় যে কোন কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হবে লেখক এটা বুঝিয়েছেন।