কয়েকটি সহীহ্ হাদীস
লিখেছেন: ' আব্দুল্লাহ আল নোমান' @ বুধবার, জুলাই ১১, ২০১২ (১০:৪০ অপরাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
০১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ কিছু সংখ্যক মানুষ আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, অথচ তাদের জন্য এরূপ করা উচিৎ নয়, কিছু সংখ্যক মানুষ আমাকে গালি দিয়েছে, অথচ তাদের এরূপ করা উচিৎ হয়নি, আমার উপর তাদের মিথ্যা আরোপ করা হল এই যে, তারা বলেঃ আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু পুনরায় তিনি আর জীবিত করবেন না; অথচ তাদেরকে পুনরায় জীবিত করার চেয়ে প্রথমবার সৃষ্টি করা আমার জন্য সহজ ছিলনা। আমাকে তাদের গালি দেয়া হল এই যে, তারা বলেঃ আল্লাহ নিজের জন্য সন্তান নির্ধারণ করে নিয়েছেন। অথচ আমি একক ও সব কিছুই আমার মুখাপেক্ষী, আমি কারো মুখাপেক্ষী নই, আমি কাউকে জন্ম দেইনি, আমাকেও কেহ জন্ম দেয়নি, আর আমার কোন সমকক্ষ শক্তিও নেই। (সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর, সূরা ইখলাস)
০২) আবূ যুরয়া বলেনঃ আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ) এর সাথে মদীনার এক বাড়ীতে প্রবেশ করলাম। তিনি দেখতে পেলেন, এক ব্যক্তি গৃহের উপরিভাগে ছবি অংকন করছে। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ সুবহানাহু বলেছেনঃ আমার সৃষ্টির মত যে লোক কোনো প্রাণী (মূর্তি) সৃষ্টি করতে চায় তার চেয়ে বড় যালিম আর কে আছে? তাহলে তারা একটি শষ্যদানা এবং একটি অনু অথবা যবদানা সৃষ্টি করুক তো দেখি?
এরপর আবূ হুরাইরা (রাঃ) পানির একটি পাত্র আনলেন এবং বগল পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে তাঁর উভয় হাত ধৌত করলেন। আমি জিজ্ঞেসা করলামঃ হে আবূ হুরাইরা! আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে এ ব্যাপারে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেনঃ জান্নাতে অলংকার পরানো হবে অযুতে ধৌত করা স্থান পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল লিবাস। ছবি ভেঙ্গে ফেলা অনুচ্ছেদেও উল্লেখ করেছেন)
০৩) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তোমার উম্মাত সর্বদা এটা কে সৃষ্টি করল, ওটা কে সৃষ্টি করল এ ধরণের প্রশ্ন করতে থাকবে, এমনকি এ প্রশ্নও জিজ্ঞেসা করবে যে, সকল কিছুই তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদ- ঈমানে কু-মন্ত্রনা দেয়া)
০৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, বানী ইসরাঈলের মধ্যে দুই লোক ছিল; একজন পাপকাজ করতো, অন্যজন ইবাদতে ছিলো মুজতাহিদ। মুজতাহিদ ব্যক্তি অন্যজনকে সর্বদা পাপ কাজ করতে দেখলে বলতোঃ পাপ কাজ পরিত্যাগ করো। তখন সে প্রতিউত্তরে বলেঃ আমার ও আমার রবের ব্যাপারটি তুমি পরিত্যাগ করো, তুমি কি আমার উপর রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসাবে প্রেরিত হয়েছো? তখন মুজতাহিদ বলেঃ আল্লাহর শপথ! তিনি তোমাকে ক্ষমা করবেন না অথবা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। এক অবস্থায় আল্লাহ সুবহানাহু তাদের রুহ কবয করেন। তারা দু’জনে রব্বুল ‘আলামীনের নিকট প্রকত্রিত হয়। আল্লাহ সুবহানাহু মুজতাহিদকে বলেনঃ তুমি কি আমার সম্পর্কে অবগত ছিলে, নাকি আমার হাতের সকল কিছুর তুমি মালিক ছিলে? আর পাপিষ্ঠকে বলেনঃ যাও, আমার রাহমাতে জান্নাতে প্রবেশ করো। আর দ্বিতীয়জনকে বলেনঃ একে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করো। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ লোকটি এমন এক কথা বলে, যার ফলে সে তার দুনিয়া ও আখিরাত বিনষ্ট করে দেয়। (সহীহ আবূ দাউদ ৩/৪৯০১, অনুচ্ছেদ- সীমা লংঘন করা হরাম)
০৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ (তাঁর মালায়িকা/ফিরিশতাদেরকে) বলেনঃ আমার বান্দা কোন অসৎ কাজ করার ইচ্ছা করলে, তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোন গুনাহ লিপিবদ্ধ কর না; তবে সে যদি উক্ত গুনাহের কাজটি করে ফেলে তাহলে কাজটি অনুপাতে তার গুনাহ লিখ, আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে তাহলে তার জন্য একটি সাওয়াব লিপিবদ্ধ কর। আর যদি সে কোন সাওয়াবের কাজ করতে ইচ্ছা করে, কিন্তু তা না করে তাহলেও তার জন্য একটি সাওয়াব লিপিবদ্ধ কর, আর যদি তা করে তাহলে কাজটির অনুপাতে তার জন্য দশগুণ থেকে সাতশ’গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লিপিবদ্ধ কর। (সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ, অনুচ্ছেদ-তারা আল্লাহর বিধানের পরিবর্তন করতে চায়)
আল্লাহ আমাদের সৎপথ পরিচালিত করার তৌফিক দান করুন। আমীন।