সালাফিজম, পিস টিভি ও আহলে হাদীস প্রসংঙ্গ (৩)
লিখেছেন: ' আল মাহমুদ' @ শুক্রবার, এপ্রিল ৪, ২০১৪ (৪:২৪ অপরাহ্ণ)
অপ্রিয় সত্য:
আমি জানি আজকের পোষ্টের কারনে অনেক প্রিয় ব্যক্তিও আমাকে অপ্রিয় ভাবতে শুরু করবেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দেয়া সময়ের দাবী। তা এজন্য যে, ভার্চুয়াল জগত, মিডিয়ার পিসটিভি, ডা: জাকির নায়েক আর মতিউর রহমান সালাফি নিয়ে যে ঝড় দেখতে পাই তাতে সাধারণ মানুষ নাস্তনাবুদ.. প্রায়প্রতিদিনই কোন না কোন সালাফি ভাই মতি সাহেব বা জাকির সাহেবের ভিডিওর লিংক দিয়ে তাতে ট্যাগিং করেন। আর সেই ভিডিওতে দেখা যাবে দেওবন্দীদের শিরক-বিদাত. তাবলিগীদের ফিতনা, আর ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে মহা হেদায়াত।
বিষয়টি হলো বর্তমান সালাফিজম ও সৌদি শাষণ ও শিক্ষা ব্যাবস্থা । সৌদি শাষণ ব্যাবস্থার গোড়াপত্তনের সময় থেকে এখানে যেসব ওলামাদের মৌলিক ভূমিকা ছিল তারা কেবল হেজাযি কিংবা আরবী ছিলেন না, ধারাযাক মুহাম্মদ বিন আব্দলু ওয়াহহাব রহ: এর কথাই যিনি ইরাক থেকে সৌদির গোড়াপত্তনের যূগে হেজাযে আশ্রয় নিয়েছিলেন, শুরুর দিকটার ইতিহাস সকল পক্ষের এক নয়, গোড়া বেদাতির অপবাদ যেমন আমি বিশ্বাস করি না তেমনি একচেটিয়া কারো কথাও শোনা নিরাপেক্ষতা নয়।
আল্লামা ইকবাল ও মুহাম্মদ আসাদের সাফাই না পেলে কেবল সৌদি সিলেবাস ও রেফান্সের ভিত্তিতে আমরা কখনোই নজদী সাহেবের সাফাই বিশ্বাস করতাম না। সমসাময়িক হাদিস গবেষকদের মধ্যে আলবানী সাহেবকে আমরা দেখিনি উপমহাদেশে হাদিস আন্জামে তার সিলসিলা নেই এখানে শেখ জাকারিয়া রহ এর যতটা সম্পৃক্ততা আমাদের সাথে আছে তার কিয়দাংশ আলবানী রহ: এর সাথে নেই. সেটা হাদীস গবেষণার বিষয় সেদিকেও এখন যাব না । আজ কেবল রাজনৈতিক বিষয়ের কথা বলবো। বর্তমান সৌদি আরববের নীতিনির্ধারক যারা রাস্ট্রক্ষমাতা চালান, তারাই কিন্তু ওদেশের আইন,শিক্ষা ইত্যাদি নিয়ে নীতি প্রনয়ন করেন. এ জন্য তাদের মজলিসে শুরা আছে, যার আদল অনেকটা আমাদের সংসদের মতোই। যার একটা নীতি নির্ধারক পরিষদ থাকে। যারা প্রত্যেকেই রাজ পরিবারের। এর বাইরে এই রাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থাকে কূটনৈতিক সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক থাকেন যাদের কেউ না কেউ ঐসব মজলিজে শুরার কার্যবিধী খোদ ঐ শুরার গ্যালারী থেকে পর্যবেক্ষন করেন। এবং তা সৌদি জাতিয় চ্যানেল আলকনাহ ১. ২ এগুলোতে প্রচার হয়। সেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা হলেন রাজতন্ত্রের মিত্র দেশ লন্ডনের রাজনীতিবিদ, এমেরিকার অমুক সমুক।
আমি সাধারন বিচার-আচার ইত্যকার বিষয়ের দিকে বিস্তারিত যাবো না, একটা সাধারন বিষয় নিয়ে বলবো তা হলো সেদেশের আদলত যখন তাদের নাগরিকদের অন্যদেশে জিহাদে শরিক হলে শাস্তি দেয়, জিহাদকে সন্ত্রাসবাদ ঘোষণা দিয়ে আইন করে. তাদের শত শত আলেমকে সত্য বলার কারনে জেলে পুরে রাখেন। জুমার খোতবায় সুনির্দিস্ট কোট বেধে দেন। অপরদিকে এমেরিকা-ইজরায়েলের পক্ষ হয়ে সবকিছুই করেন। মুরসির পতনের জন্য শতশত মিলিয়ন ডলার খরচ করেন। ইখওয়ানকে তারা সন্ত্রাসবাদি সংগঠণ বলেন, এটা কি মুহাম্শমদ স: এর আনিত শরীয়া না রাজতন্ত্রের শরীয়া?
আমি সৌদি ইসলামী কারিকুলামের একটা মৌলিক দিক সনাক্ত করেছি সেটা হল উদ্দেশ্য প্রনোদিত গবেষণা. আর উদ্দেশ্য টা হল রাজতন্ত্রের পরিপন্থি আদর্শ যেমন জিহাদ-তাবলিগ-ইসলামী গনঅভ্যুত্থানের সম্ভাবনা তৈরি করে এমন সকল দলকে তাদের মৌলিক বিষয়াবলির থেকে ইসলাম পরিপন্থী প্রমান করার চেষ্টা করা, যা কিনা ইবনে তাইমিয়া ও আলবানীর আদর্শ পরিপন্থি সমসাময়িক সালাফি প্রচেস্টা।
ডাক্তার, কবিরাজকে যেমন ধর্ম বর্ণ বিদ্বেষ ভূলে গিয়ে কবিরাজি ডাক্তারি করতে হয়, আলেমদেরকেও তেমন বর্ণগোষ্ঠির লেজুরবৃত্তি বাদ দিয়ে ধর্মীয় ফতোয়া. গবেষণা করতে হয়। আপনি যদি কারো দোষ ধরার জন্যই তাকে গবেষণা করতে যাবেন তাহলে গবেষণার পূর্ব যে সিদ্ধান্ত নিয় রেখেছেন গবেষণার পরে তাই প্রমানে কিছু জুড়ে দিবেন। এমনটি হচ্ছে আজকের গ্রুপিং গবেষণায়। এ ধরুন আমরা একগ্রুপ আরেকগ্রুপকে আগে থেকেই যেভাবে সাব্যস্ত করে রেখেছি তা প্রমানেই তাদের কিতাব পড়ি্ যদিও ব্যাখা করে তাকে সুন্দর ভাবে দেখার সুযোগ থাকে তা না করে আমরা বরং অসুন্দরটাকেই ব্যাখা করি। এটা একটা চরম ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে. কথায় আছে যার প্রিয় জনের সাতখুন মাফ. ” যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা”।।
আর এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করেই তারা الأخطاء في الدرساسة الأزهرية কিংবা দেওবন্দ ও দামষ্ক ভিত্তিক পড়ালেখাকে তুলোধোনার চেষ্টা করে।
একজন লিখলেন ভাই আপনারা দেওবন্দিরা এতদিন জামাতের সমালোচনা করছেন এখন সালাফিদের সমালোচনা করছেন… আমি বলি ভাই আমরা জামাতের সমালোচনা করিনি বরং মওদুদি সাহেব যখন মোয়াবিয়ার সমালোচনা করেছেন তখন তা নিরসন করেছি. ঠিক এখন যখন সালাফিরা জাহেরিদের ফিতনাকে আবার উষ্কে দিচ্ছে তখন সেই ফিতনার সমালোচনা করছি।
* মুয়াবিয়া রযি: এর সম্মানের চাইতে আমাদের কাছে মওদুদি সাহেবের সম্মান বেশি যেমন নয়, তেমনি আমাদের নামাজ-কালাম ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে আবু হানিফা-মালেক শাফেয়ী রহ: এর মতামতের চাইতে আজকের নব্যযূগের একঘরনা আলেমদের কিংবা জাকির সাহেবদের মতামত বেশি নয়।* হ্যা সহিহ কি যয়িফ, জায়েজ কি মাকরুহ সেটার পরিসর অনেক বড়, সেটার একাডেমিক বিষয়ে একাডেমিক ভাবে চলুক তবে আগেই বলেছি সাধু সাবধান একাডেমির গবেষণা যাতে ঐ তালগাছ আমার মার্কা কিংবা যারে দেখতে নারি তার চলন বাকা”র মত না হয়।
সহীহ গলতের হিসাব কাদের মাধ্যমে? আপনি আমি যে কিতবা গুলো পাই এটার শুদ্ধতাও কিভাবে নিরুপন হয়? ব্যাক্তিবিশেষের লেখা বা ব্যাক্তব্যের মাধ্যমে যদি আপনি এগুলো নির্নয় করেন তাহলে তো আপনি ব্যক্তির … তাকলীদ হয়ে গেল কিনা ভেবে দেখেছেন? রসূল স: ২৪ বছরের রেসালতের জীবনে যত কথা কাজ সমর্থন এসেছে সব কি শুধু বোখারী মুসলমেই সীমাবদ্ধ? সহীহ গলতের কি বুঝেন? কিভাবে বুঝেন ? মতি হুজুরের কথায়? ওনিকি তাহলে সেযূগের মানুষ? তা যদি না হন তবেও ওনিও তো ব্যক্তির কথায় বা লেখায় বিশ্বাস করছেন, যে ব্যাক্তিগুলো রসূলের যূগের নয়।
একটা অতিসত্য তথ্য দিচ্ছি কেয়ামতের দিন খোদ আল্লাহই যার স্বাক্ষী দিবেন. তা হলো যারা এই সালাফীজম আজকে যে আলবানী ইবনে তাইমিয়ার নাম ব্যাবহার করে তারা কেউ সৌদি রাজতন্ত্রের পদলেহী ছিলনা, কদিন আগের ইবনে বায, কিংবা সৌদি ফতোয়া বোর্ডের বিগত প্রধান শেখ উসাইমিন রহ: এমন ছিলেন না, তবে পদলেহি অনেক আলেম সব যুগেই ছিল। মানে ঐযে দরবারি আলেমরা । যারা অতিতেও ছিলেন এখোনে আছেন।
এসব আলেম রাজতন্ত্রের ক্রীড়ানক. এদের গবেষণাই হল রাজতন্ত্রের হুমকী সকল দলকে বাতিল প্রমান করা, তাই মুরসীর ইখওয়ান তাদের আদালতে সন্ত্রাসী সংগঠন, আলকায়দা বা জিহাদ হল তাদের ভাষায় সন্ত্রাসবাদ, গনজাগরণ সৃষ্টি করতে পারে এমন বিশ্বময় দ্রুতবর্ধণশীল তাবলিগিরা হলো মুশরিক ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার বাবা সবসময় একটা প্রবাদ বলেন: ” গরম ভাতে বিড়াল বেজাড়, হক্ব কথায় আহমক বেজাড়” মানে অসন্তুষ্ট । আমরা দেওবন্দিরা অকপটে সত্য বলায় অনেকে আমাদের উপর অসন্তুষ্ট হতে পারেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন এই দেওবন্দের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত এটা কারো পদলেহি প্রতিষ্ঠান না। ইংরেজের চামচামি অন্তত কারর কালো স্পট আমরা বহন করিনি যা ইবনে সৌদের পরিবারের উপর পরেছে। ভারত উপমহাদেশের আহলে হাদিস গোষ্ঠি ইংরেজের আমলে তাদের নিবন্ধীত সংগঠন আর আমরা ছিলাম ফেরারী।
গত দুদিন ধরে এক সালাফী ভাই ওলিপুরি সাহেবের এক বক্তৃতায় জাকির নায়েক সাহেবকে সমালোচনা করায় যাচ্ছে তা পোস্ট কমেন্ট করে গেলেন। কেউ কেউ তো পাগল – ছাগল …. জ্ঞানের দৌড় দেখ ইত্যাদি কমেন্ট..!! ভাই একটা সিম্পল উত্তর দিবেন? এই জাকির সাহেবের পিছে নামাজ আদায় করলে ওলীপুরীর নামাজ শুদ্ধ হবে?
যাকির সাহেবের সেমিনার এওয়ার্ড এ মাত্র দুই সাড়ি পেছন থেকেও আমি দেখছি. এইতো গত রমজানেও উনি দুবাই চেম্বার হলে একটা অনুষ্ঠানে অকপটেই বলছিলেন আমি আরবী জানি না, তবে আমার বাচ্চারা শুদ্ধ আরবী শিখছে। ভাল কথা এত এত আসমানী কিতাবে বর্তমান ইসলামের সত্যতা খুজতে কত গবেষণা প্রয়োজন, তার সাথে সাথে আরবী ভাষা না শেখেন অন্তত সহীহ কোরান পড়তে তো শেখা যেত।
ভাইরে কোরান হাদিস তো আরবীতে এসেছে, অন্তত শুদ্ধ কোরান পড়ার জন্য আপনার খুব বেশি দিন সময়ের তো দরকার নাই, আরবী ভাষা না হয় বুঝতে কয়েক যুগ লাগতে পারে শুদ্ধ করে একজন আন্তর্জাতিক দায়ী এখনো কোরান পড়তে পারেন না এটা মেনে নিতে পারি না।
আপনি সালাফী দাবীদার সাধারন মুসলিম ভাই এই যে দু চারখানা বোখারী মুসলিমের বাংলা তরজমা পড়েই সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন আপনি কি লক্ষ্য করছেন যে, আমি বল্লাম কোরানটা তো বাংলায় নাজিল হয়নি বাংলায় আপনি তেলাওয়াত ও করতে পারবেন না।
আমি বলছি যার সামন্যতম কেরাত শুদ্ধ করার যোগ্যতা হলো না তার উপর আপনাদের এত ভক্তি কেন? তাওরা যাবুর ইন্জিলের বিকৃতি কি শুধু জাকির সাহেবই বের করে আনলেন?!! সালাফি অর্থায়ন ও সৌদিদের ইংরেজি লেজুরবৃত্তির পেট্রুডলার ছাড়া এই পিস টিভি জাকির সাহেবের চৌদ্দগুষ্ঠির ভিটেবাড়ি বিক্রি করে চালাতে পারতেন? যাক এটাকেও আমি মন্দের ভাল বলি দু চার জন তো কালেমা পড়ছেন ঠিকই কিন্তু বাকি আগে থেকেই যারা মুসলমান তাদের সবাইকে যে কাফের বানানোর চেষ্টা সেটা কি?
আরে ভাই যিনি এত তাউরিত যাবুরের ভূল উদঘাটন করলেন আজকে ২০০০ শতকে এসে তাতো সংকলনের যূগ থেকেই বিকৃত। ওনার সেগুলা নিয়া গবেষণা কইরা কয়টা সিম্পোজিয়াম কইরা দুনিয়ায় মুসলমানের বিজয় নিয়া আসলেন!! নাকি হাজারো মুসলমানের রক্তের বিনিময় ইসলাম রক্ষা হইছে. ওনার বক্তিতায় কেউ মুসলমান হলো ভাল কথা কিন্তু যূগযূগ ধরে ইসলামের গবেষক তাবেয়ী সাহাবা যুগতেকে ব্যাক্তিদের গালিগালাজ করা, জিহাদ-তাবলীগ-পীর মাশায়েখ সবাইকে বাতিল প্রমানের চেষ্টাতে কি ইসলামকে উন্নত করলেন না অমুসলিমদের কাছে ছোট করলেন? আরবী হরফ গুলো মানে আলিফ বা এখনো শুদ্ধ করে বলতে পারেন না আসলেন কোরান হাদিস নিয়া ।