মিডিয়া ও ইসলাম ।
লিখেছেন: ' আল মাহমুদ' @ শনিবার, মার্চ ২০, ২০১০ (৬:১৩ অপরাহ্ণ)
بسم الله الرحمن الرحيم ـ الحمد لله و الصلوة السلام علي رسول الله ـ (أدعوا ألي سبيل ربك بالحكمة و الموعظة الحسنة و جادلهم باللتي هي أحسن )
ইসলাম প্রচারে মিডিয়ার গুরুত্ব আলোচনার শুরুতেই মিডিয়ার পরিচিতি সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করব এবং ইসলাম প্রচারে মিডিয়ার ভূমিকা ব্যাখা করতে সচেষ্ট হব ওমা তাউফিক্বী ইল্লা বিল্লাহ । মিডিয়া বা প্রচারমাধ্যম-গনমাধ্যম যূগের ভাষা যা সমাজ-রাষ্ট্র ও বিশ্বের চাহিদা উপস্থাপন করে, বিশ্বের সকল মানুষকেই এই মিডিয়া তার প্রভাবে প্রভাবিত করে অত্যন্ত সাবলীল ও সহজভাবে। কোন জাতি বা গোষ্ঠি মিডিয়া অংঙ্গনে পিছিয়ে পড়লে বিশ্বের প্রক্ষাপটে তার আবেদন কমে যাবে, বিশ্ববাসীর কাছে চাহিদা ও আবেদন কোন বিশ্লেষণ ও বিবেচনার মুখ দেখবে না, বিশ্ব দরবারে সে জাতি হবে উপেক্ষিত ও অবাঞ্ছিত, তার বাস্তবতা-চাহিদা উপস্থাপতি হবে না বিশ্ব মঞ্চে, কিংবা তার বিরোধ সমাজ তাকে বিকৃত এবং বিভত্সরুপে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেবার প্রয়াস পাবে।
মিডিয়া বলতে আমরা যদিও পেপার-পত্রিকা, রেডিও, স্যাটেলাইট, ইন্টারনেটকেই বুঝি বস্তুত এগুলো মিডিয়ার সংজ্ঞা নয় বরং Instrument of Media মিডিয়ার উপকরণ বা আসবাব মাত্র। এসব উপকরন মিডিয়া সহায়ক এবং মৌলিক হাতিয়ার হিসিবে ১৮শতকের পরথেকেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে যা বতর্মান একবিংশ শতাব্দিতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ ও পরিবারের সঙ্গে জড়িত হয়েছে নিবিঢ় ভাবে । যূগের ভিন্নতায় মিডিয়ার উপকরনের ভিন্নতাও লক্ষ্য করার মতো, যেমন রসূল স: এর যূগে মিডিয়া বা গনমাধ্যম ছিল শেয়র প্রতিযোগীতা, কাবার দেয়াল আইয়ামে জাহেলিয়্যার বিলবোর্ড ও ব্যানার হিসেবে ব্যবহৃত হতো, আবার বিভিন্ন মেলা ও পর্ব উপলক্ষে আরব গোষ্ঠী- উপগোষ্ঠিরা নছর ও শেয়ার খ্যাত কবিতা রচনা সাহিত্যের মাজমা বসাতো। কোরাইশের বিশেষ সাইরেন ও ঘোষণা কাজে ব্যবহৃত হতো মক্কার ঐতিহাসিক পাহাড়ের টিলাগুলো। মোট কথা হলো মিডিয়া বা গনমাধ্যমে যূগের ভিন্নতায় উপরনের পার্থক্যও লক্ষে করা যায়।
ইসলাম প্রচারে আল্লাহর হুকুম হলো: “বিল হিকমাতি ওয়াল মাওইযাতিল হাছানাহ” প্রজ্ঞাময় – সদুপদেশ- গ্রহনযোগ্য সাবলীল উপস্থাপনা করতে বলা হয়েছে, কেউ কেউ হিকমাতের ব্যাখা এভাবেই করেন যে “যখন যেমন যাহা প্রয়োজন তাহা তখনই অবলম্বন করা”- সোজা কথায় মানুষের কাছে যত সহজ সাবলীলভবে ইসলাম গ্রহনযোগ্য করে তোলা যায় সেই প্রচেষ্টঅই উদ্দেশ্য। আজকের ইলেকট্রিক বিশ্বের দ্রুততম মাধ্যম এবং প্রযুক্তির সহায়তায় সহজলভ্য প্রচারমাধ্যমগুলোর বেশির ভাগই দখল হয়েছে বিধর্মীদের মিশনের দ্বারা, জোরে শোরে কোমর বেধে নেমেছে পাশ্চত্যের উত্কর্ষ ইলেকট্রিক সরঞ্জামে সমৃদ্ধ ইহুদী নাসারা মিশনগুলো। আরেকদিকে যৌবনের সহজ লভ্য পসরা ফেরি হচ্ছে, সাহওয়াত ও কালীমার সস্তা পুজির রমরমা বানিজ্য চলছে, লোভ-লালসার ও সহজাত প্রবৃত্তির নিষিদ্ধ ব্যবসা জমেছে এসব অশ্লীলতার পুজারিদের দ্বারা। মিডিয়া ছেয়ে গেছে নারী-মাদক আর এসব ভোগের প্রতযোগীতায় বিভত্স সব বিপথের এ্যাডভারেস্টিং এ, ধ্বংষ হচ্ছে তরুণ ও যুবসমাজ, নীল সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হচ্ছে বিশ্ব, নিকষ কালো এক অন্ধকারের বিস্তার লাভ হচ্ছে অতি সহজ ও দ্রুততম উপায়ে, উন্নতি এবং উদারতার নামে চরম বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে মানবতা।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল এই মিডিয়া আগ্রাসনে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাযুক এবং প্রয়োজনের তুলুনায় নিতান্তাই কম। ভাষা- উপকরণ- সাবলীল উপস্থাপনা, প্রচারণার গন্ডির ব্যাপকতা সব কিছুতেই রয়েছে আমাদের সীমাবদ্ধতা। হাতে গোনা কয়েকট মাত্র Free Access International Satelite Channel পাওয়া যাবে, তাও আবার নির্দিষ্ট কয়েকটি মাত্র ভাষায় যা বস্তুত বিশ্বের সামগ্রিক চাহিদায় বিন্দুর চেয়ে কম । আবার ইন্টারনেট ও মাল্টিমিডিয়া প্রচারণা- বহুল প্রচারিত দৈনিক, আন্তর্জাতিক ধর্মীয় কনফারেন্স, অরগানাইজেশন প্রভৃতির ক্ষেত্রেও আমাদের অংশগ্রহন বলতে গেলে শুন্যের কোঠায়। অথচ এসব হলো এমন একটি সমরাংঙ্গন যেখানে পিছিয়ে পড়ার কারনে বিধর্মীরা ইসলামকে বিশ্বরে কাছে Religion of Terrorisme বা সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এতদ্বসত্বেও ইসলাম ও মুসলিম জাতির অস্তিত্বকে আল্লাহর একান্তা রহমত ও “ও ইয়াবাল্লাহু ইল্লা আই ইয়ুতিম্মা নুরাহ- আর আল্লাহ তার নূরকে প্রজ্জলিত করবেনই ” এর ফলছাড়া আর কিছুই বলার সুযোগ নেই। এর অর্থ এই নয় যে আজকের মুসলিম সমাজ তাদরে দায়বদ্ধাতা থেকে মুক্ত হয়ে এসব ক্ষেত্রে কেবল আল্লাহ উপর তাওয়াক্কুল করতে পারে।
ইসলাম প্রচারে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর মিশন এর প্রতি লক্ষ্য করলে যা প্রতীয়মান হয় তার আলোকে বলা যায় রসূল স: মিডিয়া বা প্রচারমাধ্যমের তদানিন্তন সর্বোচ্চ হাতিয়ারগুলোর প্রয়োগ করেছেন। আর এটা মহান আল্লাহর হুকুমো বটে। যখন রসূলের কাছ জীবরীল এই বানী পৌছে দিলেন যে ” হে কম্বল আবৃতকারী আপনি উঠুন এবং ভয় প্রদর্শন করুন” রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তখন সাফার সুউচ্চ ঐ টিলায় আরোহন করলেন যেটা কোরাইশের কোন বিশেষ কোন ঘোষণার কাজেই ব্যবহৃত হতো, তিনি সেখানে দাড়ালেন এবং ‘ইয়া সাবাহা’ বলে সেই সতর্কীকরণ বাক্য উচ্চ কন্ঠেই হাকালেন যা শুনে কোরাইশের প্রত্যেক ব্যক্তিই সেই পাহাড়ের পাদদেশে উপস্থতি হতো, কিংবা তার অনুপস্থিতিতে তার কোন প্রতিনিধিকে সেখানে পাঠাতো ঐ ঘোষণাবানী শুনে আসতে। তিনি সেখানে কোরাইশের সকল সমবেত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আল্লাহর বড়ত্বের দাওয়াত দিলেন.. আলোচনা সংক্ষিপ্ত করতে সে ঘটনায় বিস্তারিত যাচ্ছি না।
আরবের প্রশিদ্ধ মেলা যা হজ্ব ও বিভিন্ন মৌসুমে অনুষ্ঠিত হতো, দিক-বিদিক হতে যেখানে নানাদেশ ও ধর্মের লোকেরা জড়ো হতো, রসূল সেই মেলার মাজমাগুলোকেও দাওয়াতের মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করেছেন তার বর্নণা আমরা সীরাতুন্নবীতে দেখতে পাই। ঠিক তেমনি রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম যুদ্ধের ময়দানে কাফেরদের কবিতার জবাব দিতে সাহাবীদেরকে কবিতা সদৃশ বাক্য শিখিয়ে দেয়ার বর্ণনাও সহীহ বর্ননাগুলো দ্বারা প্রমানিত, আবার ইমরুল কাইস ও জাহেলী সাহিত্যকে ‘মিন গাইয়েল জাহিম’ ও সেই সাহিত্যরে জনকদের মালিকুদ্দালাল বা ভ্রান্তির দিশারী বলেই সমাপ্ত করেন নি বরং তদানিন্তন মুসলিম সাহাবা কবিদেরকে তিন উত্সাহিত করেছেন সুন্দর সাহিত্য রচনার, তাইতো অনেক সাহাবারা ইসলামের সৌন্দর্য নিয়ে রচনা করতেন অনাবীল সাহিত্যকর্ম যা আজো বিশ্বকে রেখেছে ঋনী করে। আলী রযি নির্দেশে রচিত হয়েছে আরবী শাস্ত্রের মৌলিক গ্রামার, নাবেগা আর কাইসের সাহিত্যকে হার মানিয়েছে হাসসানেরে সাহিত্যকর্ম (রযি) । মসজিদে নববীর নির্মানকালীন সময়ে রসূল নিজেও আবৃতি করেছেন “আল্লাহুম্মা লা আইশা ইল্লা আইশাল আখিরাহ – ফারহামিল আনসারা ওয়াল মুহাজিরা… ” এসবই বস্তুত তদানীন্তন মিডিয়ার ব্যবহার যা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম ব্যবহার করেছেন মানুষের চাহিদা ও গ্রহনযোগ্যতা অনুপাতে। তিনি খুতবা প্রদানের কাজে ব্যবহার করেছেন মিম্বার, আজানের জন্য মিনারা আর এ জাতিয় বহু বিষয় মুলত মানুষের চাহিদা ও সাবলীল উপস্থাপনার জন্যই ব্যবহার হয়েছে।
আজ যদি রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম পৃথীবিতে থাকতেন তবে এই প্রচলিত মিডিয়াকেই ব্যবহার করতেন বা একদল সাহাবাকে অবশ্যই এ কাজের জন্য প্রস্তুত করতেন যারা এই প্রয়োজনীয়তাকে পূরণ করতে নিজ সাধ্য ও আল্লাহর সাহায্যে সচেষ্ট থাকতেন এ মিডিয়ার তাগাদাকে পূরণ করতে। কারণ ইসলাম তার দাবীকে সময়ের উপযোগী করে উপস্থাপন করে, এবং এভাবেই আল্লাহ তার কালিমাকে বুলন্দ করবেন যাতে বাতিলের কালিমা পরাস্থ হয়ে আল্লাহর কালিমা বুলন্দ হয়।
সুন্দর বলেছেন, অপসংস্কৃতি যেভাবে মিডিয়া দখল করে আছে, তার বিপরীতে মুসলিমরা কিভাবে দীনের প্রচার , প্রসারে মিডিয়া ব্যবহার করতে পারে, সেটা আলোচনায় নিয়ে আসুন ।
কিছু কিছু শব্দ অতিরিক্ত এসেছে , প্রুফে আর একটু যত্ন নিলে ভালো হতো ।
@হাফিজ, ধন্যবাদ ঠিক করে দিয়েছি।
আমাদের আলেম সমাজ এবং আমাদের সকলকেই ইসলামী রাজনীতিতে অনেক বেশী ভূমিকা রাখতে হবে এবং একইসাথে কাজ করতে হবে। নতুবা এসকল প্রচেষ্টার সুফল ভালভাবে পাওয়া যাবে না।
@মালেক_০০১, সহমত। কি ফর্মে কাজ করতে হবে সেটা ডিফাইন করা কষ্টকর , তবে সবার যে একসাথে কাজ করা উচিত এ বিষয়ে একমত । আমাদের কিংবা বলতে পারেন যারা ইসলামমনস্ক তাদের বিভেদের জন্য আজ আমরা অনেক দুর্বল হয়ে আছি ।
@মালেক_০০১,
রাজনীতির কথা শুনলেই ভয় লাগে।
রাজনীতির নীতিহীনতায় অনেক শ্রদ্ধাভাজন আলেমের পদস্খলন রাজনীতি সম্পর্কেই ঘৃণাবোধের উদ্রেক করে।
হয়ত আমি একথা বলার যোগ্য ছিলাম না। তবু মনের ভেতর জমে থাকা একটা ক্ষোভ বের করে দিলাম।
@সাদাত, আপনি ঠিক বলেছেন, এগুলোকে সংশোধন করে তারপর শুদ্ধটা নিয়ে আসতে হবে ।
আমাদের এখন দরকার ইন্টেলেকচুয়াল জিহাদ। কারণ ইসলাম নিয়ে নানা অপপ্রচার হচ্ছে চারিদিকে। দুঃখজনক হলো মুসলিমরাও এ ধরণের অপপ্রচার ছড়ায় বা বিশ্বাস করে। আর ইসলামের নানা মতাদর্শ ও মতবিরোধীতার কারণে ইসলামবিরোধীরাও ভাল সুযোগ পেয়ে যায়।