আলকোরানের আলোক বর্তিকা (৪)। মুজিযা হিসেবে কোরানের অবস্থান।
লিখেছেন: ' আল মাহমুদ' @ মঙ্গলবার, নভেম্বর ৩০, ২০১০ (৯:৪১ অপরাহ্ণ)
(কলাম ১)
(কলাম ২)
(কলাম ৩)
এতে সন্দেহের অবকাশ নেই যে পৃথীবিতে যে সকল কিতাবের ব্যাপারে সবচাইতে বেশী গবেষণা, প্রচেষ্টা, বিশ্লেষণ, অধ্যাবসায় ও অনুশীলণ চলেছে তার সর্বশীর্ষ স্থানেই আল-কোরানের অবস্থান । যেহেতু এই কিতাব মানবজাতির প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করে যেমন বর্নিত হয়েছে: وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَذَا الْقُرْآنِ لِلنَّاسِ
مِن كُلِّ مَثَلٍ وَكَانَ الْإِنسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا নিশ্চয় আমি এ কোরআনে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বুঝিয়েছি। মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়। সূরা কাহফ, ৫৪।
তদুপরি মানুষ জাতিকে কোরান উন্নতীর চরম সোপানে পৌছে দিতে শ্রেষ্ঠতম পথের সন্ধান দেয়। বর্নিত হয়েছে :
إِنَّ هَـذَا الْقُرْآنَ يِهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا
এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে। সূরা বনী ইস্রাইল, ৯।
সুতরাং বলাচলে যে, মানুষ ও তার পারিপারর্শ্বিক এমন কোন বিষয় নেই যার ব্যাপারে আলকোরান আলোকপাত করেনি। আর এ কারনেই অতীত ও বর্তমানের পন্ডিতগন এই কিতাবের আলোকে মানবজাতির উন্নয়নের লক্ষ্যে অবিরত গবেষণা মুলক রচনা ও অনুশীলন চালিয়ে আসছেন। কোরানা নির্ভর গবেষণা কত বিস্তৃত তা এখানে ক্ষুদ্র পরিসরে বলে শেষ করার সুযোগ নেই। কোন ব্যক্তির পক্ষে সারাটি জীবন ব্যয় করলেও কোরান নির্ভর গবেষণাকৃত লিপিবদ্ধ তাফসীরগুলো পড়ে শেষ করার সামর্থ্যও হবে না ।
মহান আল্লাহ খুব সংক্ষেপে বিষয়টি এভাবেই ইংঙ্গিত করেছেন:
وَلَوْ أَنَّمَا فِي الْأَرْضِ مِن شَجَرَةٍ أَقْلَامٌ وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِن بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ 27পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
সুতারং এত বিস্তর রচনাবলী আলকোরানের ব্যাখার ও চাহিদার ও তার উল্লেখ্য বিষয়াবলির বর্ননার বিন্দুমাত্রই বলা চলে। হাসান বসরী রহ: বলতেন যদি আল্লাহর হুকুবালী লিখতে পৃথীবের সকল গাছকে কলম বানানো হয় আর সাগরের পানি কালি হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবুও কালি শেষ হয়ে যাবে আর কলম ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা অবিশিষ্ট রয়ে যাবে ( সূত্র ইবনে কাসীর- সূরা লোকমান ২৭নং আয়াতে )
এখানে এই বিস্তৃত তাসীরের কিতাবের ব্যাপারে আলোকপাত করার পরিসর ও তার সুযগ নেই। বরংচ মুজিযা হিসেবে আলকোরানের অবস্থান সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করবো। “যদিও “ইজায বা মুজিযা” শব্দটি কোরানের কোথাও শাব্দিক ভাবে উল্লেখ হয়নি, অথবা রসূল সল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়া সাল্লাম বা তার পরবর্তি ইসলামী স্বর্ণযুগ তুল্য ২য় শতক পর্যন্ত ইতিহাসে এই কোরানের মুজিযা তত্ব নিয়ে স্বতন্ত্র কিছু লেখা হয়নি” । (সূত্র: < رقم حديث الترهيبات. في الثاني الباب عشر، السادس المجلد الهندي، للمتقي والأفعال الأقوال سنن العمال كنز انظر 2)> د. مصطفى مسلم ، مباحث في إعجاز القرآن ، ص 46 .) পরবর্তি শতকগুলোতে আরব জাতির সাথে অনারব জাতিগুলোর সংমিশ্রন, ইসলামের ব্যাপক বিস্তৃতি ও ইসলাম বিদ্বেষী অমুসলিম পন্ডিতদের কোরান ও ইসলামের খুতঁ বের করার হীন প্রচেষ্টার ফলে কোরানের বিভিন্ন আয়াত- হুকুমের বৈজ্ঞনিক ও সামাজিক অসামঞ্জস্যতা দেখানোর হীন প্রচেষ্টার জবাবে মুসলিম পন্ডিতদের এসব অবাঞ্চিত বিকৃতি ও সংশয়ের জবাবে আল কোরানকে “মুজিযা” হিসেবে ব্যাখা করার প্রক্ষাপট তৈরি হয়। (مدخل إلى الإعجاز في القرآن الكريم) যদিও এ চ্যালেঞ্জ আল্লাহ কোরনে এভাবেই করে রেখেছেন: “তোমরা যদি আমার অবতীর্ণ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করো তবে ইহা সদৃশ্য কোন (পযায়ক্রমে পুরো কিতাব বা ) সূরা (বা একটি আয়াত ) হলেও নিয়ে এস, আর এ কাজে (তোমাদের সহযোগীতার প্রয়োজনে) আল্লাহ তোমাদের সকল স্বাক্ষীগনকে ডাক” আর আজ অবধি কোন সাহিত্য সংঙ্ঘ-কবি পন্ডিত তা করতে অপারগ হয়েছে । আর এই অপারগতা বা ইজয عجز থেকেই আলকোরানকে মুজিযা বলা যায়। যে অপারগতার কথা আল্লাহ অবশ্যম্ভাবীরুপে জানিয়ে দিচ্ছেন: قُلْ فَأْتُوا بِكِتَابٍ مِّنْ عِندِ اللَّهِ هُوَ أَهْدَى مِنْهُمَا أَتَّبِعْهُ إِن
كُنتُمْ صَادِقِينَ 49 বলুন, তোমরা সত্যবাদী হলে এখন আল্লাহর কাছ থেকে কোন কিতাব আন, যা এতদুভয় থেকে উত্তম পথপ্রদর্শক হয়। আমি সেই কিতাব অনুসরণ করব।
সূরা কসস, আয়াত নং ৪৯।
সামগ্রিক পরিমানের পুরো কোরান সমতুল বিকল্প কিতাবের চ্যালেন্জের পরে দশটি সূরা বা আংশিক পরিমান বিকল্প কিতাবের চ্যলেন্জ করলেন: أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُواْ بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُواْ مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
তারা কি বলে? কোরআন তুমি তৈরী করেছ? তুমি বল, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরী করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে।
সূরা হুদ, আয়াত নঙং ১৩।
অবশেষে কেবল একটি মাত্র সূরার চ্যালেঞ্জ করলেন :
وما كان هذا القرآن أن يفترى من دون الله ولكن تصديق الذي بين يديه وتفصيل الكتاب لا ريب فيه من رب العالمين أم يقولون افتراه قل فأتوا بسورة مثله وادعوا من استطعتم من دون الله إن كنتم صادقين [ يونس : 37 ، 38 ] . আর কোরআন সে জিনিস নয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ তা বানিয়ে নেবে। অবশ্য এটি পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন করে এবং সে সমস্ত বিষয়ের বিশ্লেষণ দান করে যা তোমার প্রতি দেয়া হয়েছে, যাতে কোন সন্দেহ নেই-তোমার বিশ্বপালনকর্তার পক্ষ থেকে। মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম হও আল্লাহ ব্যতীত, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।