নারীর ক্ষমতায়নে বাস্তবতা ও ইসলামী দৃস্টিকোন।
লিখেছেন: ' আল মাহমুদ' @ মঙ্গলবার, মে ১০, ২০১১ (১২:০৯ অপরাহ্ণ)
রাস্ট্রিয় ব্যাবস্থাপনার দায়ভার, কিংবা ঝুকিপূর্ন পেশা, এবং শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সংবেদনশীল দায়ত্বভার মুলক পদে নারীকে পুরুষের মতই দেখতে চাওয়া কতটুকো মানবিক দাবী তা বিশ্লেষণ করার আগে নারীর ক্ষমতায়নের পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সূচনাযূগ,প্রক্ষাপট ও বাস্তব ফলাফল চিত্র আলোচনা করা যাক।
এ দেশে কয়েক যূগ ধরে নারীরা দেশ পরিচালনা করেছেন। দেশের মৌলিক উন্নতির রুপরেখা সর্বজন বিদিত। দূর্নীতি, সন্ত্রাস আর যথেচ্চার করতে একজন দুর্বলকে দেশের প্রধান পদে বসিয়ে অনায়াসে মতলব বাজরা তাদের মতলব হাসিল করতে পারে এটাই সহজ কথা। নারী অধিকার নিয়ে পাশ্চাত্য আমাদের যে চাপ প্রয়োগ করে আসছে তার বাস্তব উদ্দেশ্য হলো যে বিষ তারা খেয়ে হজম কতরে পারে নি তা আমাদেরকে ও খেয়ে মরতে বলা। আর এরই ধারবাহিকতায় তারা মুসলিম প্রধান দেশগুলোর নারী অধিকার নিয়ে খুব মায়া কান্না আরম্ভ করে। আলজেরিয়া- তুর্কিস্থান, মিশরের পর সেই নসিহত এবার পালন করতে উদ্দ্যত বাংলাদেশ । নারীল ক্ষমতায়ণ, শিক্ষা-শিল্প-কর্ম-মতামত প্রকাশ- শাষন ও রাসট্র পরিচলানার ক্ষেত্র নারীকে তারা পিছেয়ে থাকা দেখতে চায়না।
উন্নত বিশ্বে শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই নারীবাদি আন্দোলন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, নারীর ক্ষমতায়ন শুরু হয়েছিল শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই। সেই ১৭শ সাল থেকে, আজ তিনশো বছরের মাথায় এসেও অসংখ্য নারীবাদি সংস্থা এ কথাই স্বীকার করছে যে, এতসব ক্ষমতায়নের পরেও নারীদের সামগ্রিক অধিকার অক্ষুন্ন নয়। বরং প্রাচ্যের ইসলামী দেশগুলোর তুলনায় পাশ্চাত্যের নারীরা অধিকতর অনিশ্চিত জীবন যাপন করে। পশ্চিমা লোকদের মুখেই শোনাযাক তাদের এই অনিশ্চিত দুর্বিসহ জীবনের কথা :
মানব উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশিষ্ট গবেষক, জিওম ফ্রিবরো : ” ইউরোপের অনেক মহিলা রয়েছে যারা পুরুষ সুলভ কাজকর্ম করে থাকে এবং তারা বৈবাহিক সম্পর্ক বিরোধী, এসব মহিলাকে ‘নারী’ না বলে তৃতীয় লিংঙ্গ বলাই ভালো” অতপর তিনি বলেন: প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে এ জাতিয় তৎপরতার মারাত্মক পরিনতি সম্পর্কে সমাজবিদগন সচেতন হতে আরম্ভ করেছেন, কেননা এসব নারী পুরুষকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে সামাজিক বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে সমাজ বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না ।”
প্রখ্যাত নারীবাদি লেখিকা এ্যানি রোর্ড আরো একশো বছর আগের ইউরোপিয়া নারীর জীবন চিত্রায়িত করতে গিয়ে লিখেছিলেন: ” আমাদের নারীদের ঝী ও বুয়া হিসেবে কাজ করা মিল ফ্যাকটরীতে অফিস আদালতে কাজ করার চাইতে ঢেড় নিরাপদ। কলকারখানায় মেয়েরা এতবেশী নোংরা হয়ে যায় যে, কারো কারো জীবনের দীপ্তি ও ঔজ্জল্য চিরদিনের মত বিলুপ্ত হয়ে যায় ( যৌন নির্যাতন ও মানসিক ভাবে ভেংঙ্গে পড়াকে ইংঙ্গিত করছে) হায় আমাদের নারীরা যদি মুসলিম দেশগুরোর মতো হতো! সেসব দেশের নারীদের সতীত্ব আছে, সুনাম আছে, পবিত্রতা আছে, তাদের কাজের ঝিরাও পরম তৃপ্তির জীবন যাপন করে। ইংরেজ শাষনাধীন দেশগুলোর জন্য চরম কলংঙ্কের ব্যপার হলো তারাতাদের নারীদেরকে পুরুষদের সাথে মাত্রাতিরিক্ত ঢলাঢলি, মেলামেশা করতে দিয়ে অসতি ও বেহায়া বানিয়েছে।” ১০ই মে, ১৯০১ সালের ইস্টার্ন মেইল।
অতপর অপর এক লেখক নারীদের ঘরে ফিরে আসার ব্যাপারে লিখছেন ” এখন আর সেই সুযোগ নেই, সময় পার হয়ে গেছে। পাশ্চাত্যে নারী যখন বের হতে শিখেছে, তখন পুনরায় তার ঘরোয়া জীবন অবলম্বন করা অত্যান্ত কঠিন বিষয়, যদিও অনেকেই বিশ্বাষ করে তার ঘরে ফিরে যাওয়াই অধিকতর নিরাপদ”
প্রাচ্যের দেশগুলোতে নারীবাদিরা আজ নারীদের সেই স্বাদই আস্বাদন করতে চান যা ইউরোপের নারীরা এখন উদগীরণ করতে চাইছে।
একাধিক নারিবাদী লেখিকারা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে যাওয়া কিছু সংগঠন ও বিভিন্ন নারীবাদিদের বর্ননায় তাদের আন্দোলনের রুপরেখা ও সফলতার একটি চিত্র তুলে ধরা যাক । যেমন নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিয়ে কাজ করে যাওয়া মানবধিকার সংস্থা এ্যামেনিস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার বিবৃতিতে বলছে:
নারীর ক্ষমতায়ন: ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর হওয়া সত্বেও বিশ্বজুড়ে নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে নারীর অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য প্রদর্শন ও বিনা শাস্তিতে পার পেয়ে যাওয়াকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেক মানবাধিকার কর্মী ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু নারীরা তাদের লিঙ্গ ও কাজের ধরনের কারণে বাড়তি ঝুঁকির মুখোমুখি হয়। বৈষম্যের একটি ফলাফল হলো শিক্ষা, চাকরি, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানে নারীর অসমতাপূর্ণ প্রবেশাধিকার।
সহিংসতা শিক্ষা ও শ্রমের বাজারে নারীর প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে অসমতা আরো বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষায় নারী ও মেয়েশিশুর প্রবেশাধিকার আরো বেশি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। নারীর ক্ষমতায়ন ঘটার মতো সহায়ক পরিবেশ এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ তৈরিতে সরকারের ব্যর্থতা নারী ও মেয়েশিশুর জীবনে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর পরিণাম তৈরি করতে পারে।” অতপর অন্য এক ক্ষেত্রে এ সংস্থাটি স্বীকার করছে যে :নারীর ক্ষমতায়ন ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর হওয়া সত্বেও বিশ্বজুড়ে নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে নারীর অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য প্রদর্শন ও বিনা শাস্তিতে পার পেয়ে যাওয়াকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেক মানবাধিকার কর্মী ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু নারীরা তাদের লিঙ্গ ও কাজের ধরনের কারণে বাড়তি ঝুঁকির মুখোমুখি হয়।”
ডচেভেলের একটি প্রতিবেদনে একজন রিপোর্টার বলছেন: “সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশ কিংবা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীর ক্ষমতায়ন আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ কিন্তু তারপরও পারিবারিক, সামাজিক নানা স্তরে আজও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন নেই৷” যেখানে বাস্তবচিত্র হলো নারীরা বৃহত্তর কোন দায়ত্ব নয় বরং ক্ষুদ্র সামাজিক কাজ, কিংবা এনজিও বা ব্যাংকের মত ছোট ছোট কাজের ক্ষেত্রে কিংবা ক্ষেত্রবিশেষ নারীর প্রয়োজন রয়েছে এমন কিছু ক্ষেত্রেও তার সৃস্টিগত কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে সেখানে ঝুকিঁপূর্ন পদ যথা রাস্ট্রপরিচালনা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত রাস্ট্রিয় নিরাপত্তা জনিত বৃহত্তর শ্রমসাধ্য কাজ নারীর দৈহিক দিক থেকেই নিরাপদ নয়।
দৈনিক জনকন্ঠ ৮মার্চ২০১০ নারী আন্দোলনের দেশীয় রুপরেখা তুলে ধরতে এভাবেই লিখে:
“বাংলাদেশে নারী আন্দোলন:ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশে নারী আন্দোলন খুব জোরদার হয়ে উঠতে পারেনি। মূলত আর্থসামাজিক প্রেৰাপট এবং প্রচলিত মূল্যবোধের কারণে বাংলাদেশ কিংবা অবিভক্ত ভারতবর্ষে নারী আন্দোলন যথেষ্ট দুর্বলই বলা চলে। তবে তার মধ্যেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বারে নু্যব্জ সমাজে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন পুরম্নষরাই। নারী অধিকারের পৰে সোচ্চার হন রাজা রামমোহন রায়। ১৮২৯ সালে তারই উদ্যোগে ভারতে সতীদাহ প্রথা বা সহমরণ রদ করা হয়। রাজা রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টায় সতীদাহ রদ হিন্দু সমাজকে খেপিয়ে তুললেও উপমহাদেশে নারী অধিকারের ক্ষেত্রে নতুন দিগনত্মের সূচনা হয়। এর আগে কেউই বিশেষ করে নারীর অধিকার নিয়ে খুব বেশি চিনত্মা-ভাবনা করত না। এরপরই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাল্যবিবাহ বন্ধ করে বিধবাবিবাহ চালু করলে হিন্দু সমাজের মূল্যবোধগত পরিবর্তন আসে। যদিও গোঁড়া হিন্দুরা বহু বছর পর্যনত্ম এই নিয়ম মানেনি। বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে অবিভক্ত ভারতে ৪৩টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি নারীশিৰাকে প্রগতির অন্যতম উপকরণ বলে মনে করতেন।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি কৃষ্ণভামিনী দাসী, কামিনী সুন্দরী, বামাসুন্দরী দেবী, মোৰদাদায়িনী প্রমুখ নারীরা সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করে নারীদের অধিকারের কথা বলতে শুরম্ন করেন। ১৮৮৫ সালে এ অঞ্চলের প্রথম নারীবাদী সংগঠন ‘সখি সমিতি’ গড়ে তোলেন স্বর্ণকুমারী দেবী। এসময় নারীদের লাঠি চালনা এবং অস্ত্র প্রশিৰণের মাধ্যমে তিনি পুরম্নষের পাশাপাশি শক্তিমত্তা ও বিপজ্জনক কাজে নারীদের অংশগ্রহণকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন, সেই সঙ্গে দেশপ্রেম ও সেবার বিষয়টিকে গুরম্নত্বপূর্ণ করে তুলেছেন। সমাজের বিভিন্ন নিষেধের বেড়াজালে থেকেও নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে শুরম্ন হয়। ১৮৮৯ সালে মুম্বাইতে ভারতীয় কংগ্রেসের সম্মেলনে যোগ দেন ৬ জন নারী।
স্বাধীন বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের পথিকৃত বেগম রোকেয়া। অনন্য মেধার এই নারী তার সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন নারী মুক্তির আন্দোলনে। পশ্চাৎপদ মুসলিম সমাজে নারী শিৰা, নারীকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস, অধিকার সুরৰায় নারীর আত্মসচেতনতা প্রভৃতি ৰেত্রে বেগম রোকেয়া সাহিত্য ও কর্মকা- বাংলায় নারী মুক্তির আন্দোলন শুরম্ন করে। কুসংস্কারগ্রসত্ম এবং পশ্চাৎপদ সমাজে বেগম রোকেয়ার আন্দোলন পশ্চিমা নারী আন্দোলনের তুলনায় কোন অংশে কম নয়, বরং অনেকের জন্যই বিস্ময়ের কারণ। বেগম রোকেয়াকে এজন্য বাংলাদেশে নারীবাদ প্রতিষ্ঠার প্রবাদপুরম্নষ বলে ধরা হয়।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জাতীয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বামপন্থী রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কৃষক আন্দোলনের হেনা দাস, চারম্নলতা ঘোষ, তেভাগা আন্দোলনের ইলা মিত্রসহ অনেকেই শুধু নারী মুক্তি নয় বরং জনগণের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। তবে সামনত্মতান্ত্রিক উৎপাদন কাঠামোর এই দেশে ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক প্রভাব অনেক বেশি থাকার কারণে পাশ্চাত্য ধাঁচের নারী আন্দোলন এখানে গড়ে উঠতে পারেনি। বাংলাদেশে কিংবা ভারতে নারীর অধিকার নিয়ে অনেক কথা চালাচালি হলেও এখনও নারীর প্রকৃত ৰমতায়ন এবং ব্যক্তি অবস্থান সুদৃঢ় হয়নি।” অথচ কথা হলো এ দেশের সংখ্যালঘু শ্রেনীর হতভাগ্যের ছুতায় ইসলাম ধর্মকেও নারীর অধিকার বিপন্ন মনে করে বামরা কথায় কথায় ধর্মকে নারীর স্বাধীনতা ও অধিকারের অন্তরায় বলে আরো দুর্বিষহ জীবনের দিকে ঠেলে দেয়।
ইতিহাস ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পৃথীবির কোন উন্নত দেশের নারীরা কখনোই সে দেশের রাস্ট্রপ্রধান নন, ধরা যাক নারী অধিকার নিয়ে আন্দলোনের অগ্রগামী দেশ এমেরিকার কথা, যেখানে এ রাস্ট্রের জন্ম থেকে এ যাবতকাল পর্যন্ত কোন নারীই তাদের রাস্ট্রপ্রধান ছিল না। পক্ষান্তরে যেমব দেশ নারীর ক্ষমতায়নে বলতে গেলে পিছিয়ে (কথিত রুপ) বিশেষত আমাদের বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে একাধিকবারই নারীরা রাস্ট্রের শীর্ষস্থানে নির্বাচিত হয়েছে এবং দায়ত্ব পালন করেছেন, সুতারং এদিক থেকে তারা কতটুকো দায়ত্বশীল ও সফল তা এবং দীর্ঘ যূগ ধরে এই নারী শাষিত দেশগুলোর উন্নতি ও সফলতার রুপরেখা কি? কিংবা খোদ নারীদের শরয়ী বা সামাজিক অধিকারও এখানে কতটুকো নিশ্চিত তা সর্বমহল স্বীকৃত। অথচ নারী অধিকার নিয়ে নারীবাদিরা সর্বাগ্রে ধর্মকেই দায়ী করে থাকে।
অপরদিকে নারীস্বাধীনতার ধারক বাহক পশ্চিমাদেশগুলোতে নারীর ব্যাপক (কথিত) ক্ষমতায়ন থাকা স্বত্বেও তাদের নারীরা খুব কমই রাস্ট্রপরিচালনা করে থাকে তুলনায় আমাদের দেশের চেয়ে অনেক কমই, আবার কোন কোন পশ্চিমা দেখে একেবারেই নয়। বাস্তবতা হলো আমাদের দেশে এই গুরুদায়ত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের রাস্ট্রিয় উন্নতি যেমন হয়নি তেমনি নারীদের সামাজিক অধিকার ও শরীয়া ও মানবিক অধিকারও নিশ্চিত হয়নি। পক্ষান্তরে ইউরোপের দেশগুলোর মৌলিকদায়ভার রাস্ট্রিয় গুরুদায়ত্বগুলো সবসময় পুরুষদের মাধ্যমে পালিত হওয়ায় তাদের রাস্ট্রিয় সফলতা যেমন এসেছে যদিও সে দেশের ব্যাপক নারী অধিকারের বাস্তবতা ও রুপরেখা পর্যালোচনার দাবী রাখে । সুতারং নারীবাদিদের দীর্ঘ মেয়াদী আন্দোলনের ফলে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয় সমাজের নারীদের সামগ্রিক চিত্রে দৃষ্টি দেয়া যাক। যেখানে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে নারীরা সামগ্রিক ভাবে ঘরের বাহিরে পুরুষের মতই কর্মক্ষেত্রে ব্যাপকরুপে সংস্থাপিত হয়েছে। এর ফলে বাহ্যত নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে, কিন্তু সাম্যক ভাবে তাদের সামাজিক পরিস্থিতি যা দাড়িয়েছে তা নিম্নরুপ:
১।সেখানে নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে আর্থিক সফলতা অর্জন করলেও দৈহিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।
২। পারিবারিক সংহতি ধ্বংষ হয়েছে, নারীরা অফিস ও কর্মস্থলে তাদের বিশ্বস্থতা অর্জনের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের চাইতে কর্মস্থলের প্রতি মনযোগী ও পরিশ্রমী হয়ে তাদের পারিবারিক দায়ত্ব পালন করতে ও অপারগ ও অনিহা প্রকাশ করেছে, ফলত পাশ্চাত্যের পারিবারিক চেইন বলতে কিছুই নেই। গড়ে উঠেছে হোম, ডে কেয়ার ইত্যাদির মত প্রতিষ্ঠান, মানুষ দেহে মাংশে মানুষ থেকেছে ঠিকই মানবিকতা সহমর্মিতা উবে গেছে জীবন থেকে।
৩। বিবাহ ও সামাজিক নীতিবোধের প্রতি অনীহা প্রকাশ পেয়েছে, পারিবারিক দায়বদ্ধতায় তারা উৎসাহী নয়, এর ফলে বৈবাহিক জীবনের চাইতে অন্য উপায়ে তারা প্রজনন ঘটাচ্ছে, ফলত বাধ্য হয়েই ইউরোপে পিতৃপরিচয়ের কোন বাধ্য বাধকতা নেই, মাতৃ পরিচয় তাদের যথেষ্ট।
৪।পারিবারিক ও সামাজিক বলয় ভেঙ্গে যাওয়ায় ইউরোপের শিশু কিশোররা পিতা মাতার আদর সোহাগ ও তাদের পৃষ্টপোষকতায় বড় হয়না, এভাবে তাদের হৃদয়ে পিতামাতার শ্রদ্ধা বলতে কিছু থাকে না, সামাজিক দায়ত্ববোধ ও মানবিকতা বলতে কিছুই থাকে না, শৈশব থেকেই তারা অপরাধ ও ধ্বংষাত্মক মনমানসিকতায় বেড়ে ওঠে। ফলত বড় হয়ে তারা মারমুখী জীবন যাপন করে। এ কারনেই ইউরোপীয় দেশগুলো পৃথীবির সবচাইতে বেশী অমানবিক যুদ্ধে বিগ্রহে তাদের সেনাবাহীনি গঠন করতে পারে।
পক্ষান্তরে আমাদের গনতান্ত্রিক মুসলিম দেশ পাকিস্তান বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে নারী প্রধানমন্ত্রি হয়েছে, এসব দেশে সামজিক ক্ষেত্রে নারীরা পশ্চাদপদ হওয়ার কারণ কখনোই ইউরোপের কথিত নারী অধিকার নিশ্চিত না হওয়া নয়, বরং শরিয়া ও মানবিকভাবে নারীর যেসব অধিকার বাস্তবায়ন হওয়া দরকার তার বাস্তবায়ন না থাকা। অতপর যারাই নারীকে এই অধিকার আদায়ের কথা বলে নারীকে কোথায়ো ঘরের বাইরে অধিক ঝুকিঁপূর্ন কাজ কিংবা স্পর্শকাতর গননেতৃত্বের মত গুরুদায়ত্বের দিকে আগিয়ে দিয়েছে সেখানে বস্তুত তাদের স্বাধীনতা-স্বনির্ভরতা- ও অধিকারের নামে আরো বেশী অনিরাপত্তা-অবাঞ্চিত নির্ভরশীলতা- ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। যেসব বিষয় নিয়ে সর্বাগ্রে কথা বলে তার অন্যতম হলো আমাদের ধর্মীয় অনুশাষণ, পারিবারিক আইন, সোজাকথা ইসলাম ও ইসলামী পারিবারিক নীতিকেই তারা দায়ী করে থাকে।
সকল ইসলামী স্কলারগন এ বিষয়ে একমত যে, বৃহত্তর খেলাফাত বা ‘খেলাফাতুল উজমা’ এর ক্ষেত্রে কোন মহিলা সকল মুসলিমদের প্রতিনিধ্বিত্ব করা জায়েজ নেই। অতপর বিশেষ কোন রাস্ট্র বা এলাকার প্রতিনিধ্বিত্বের ক্ষেত্রে সমসাময়িক কিছু আলেম যথা ড.কারজাভীর মত ব্যাক্তিরা এখতেলাফ করলেও বৃহত্তর আলেম সমাজ এ বিষয়টিকে মেনে নেন নি। অধিকাংশ আলেমগন কোরানের নিম্নোক্ত আয়াতকে নারীদের সাম্যক নেতৃত্বের বিপরীতে পেশ করেন: ( الرِّجالُ قوَّامونَ عَلَى النِّسَاءِ ) (سورة النساء : 34) “পুরুষগন নারীদের উপর কতৃত্বশীল” সূরা নিসা:৩৪নং আয়াত। আল্লাম ইবনে কাছির রহ: তার ঐতিহাসিক তাফসীর গ্রন্থে উক্ত আয়াতের ব্যাখায় লিখেন: ” আর মহিলাদের এ কারনেই নবুয়্যত রেসালাত ও ইমামতের দায়ত্ব দেয়া হয়নি”
অতপর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ইরশাদ : “لن يفلح قوم ولوا أمرهم امرأة” ঐ জাতি কখনো সফল হতে পারে না যাদের নেতৃত্বে মহিলারা থাকে” বোখারী ।
অতপর ফোকাহায়ে কেরাম লিখেন ” ঐতিহাসিক ভাবে এই উম্মতের প্রথমযূগে (যাকে হাদীসের ভাষায় অনুকরনীয় স্বর্নযূগ বলা হয়েছে) কোন মহিলাকে নেতৃত্ব প্রদানের নজীর নেই যাতে প্রতীয়মান হয় যে বিষয়টি শরীয়া সম্মত নয়। তবে রাস্ট্রপ্রধানের স্ত্রী তার স্বামীর রাস্ট্রীয় কাজ কিংবা যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি তার পরিবারের মহিলাদের পরামর্শ গ্রহন কে ইসলাম কখনোই নিষেধ করে নি বরং এতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে আর এভাবেই নারীকে ইসলাম রাস্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে তার মতামত প্রদানের অধিকার অক্ষুন্ন রেখেছে।
ইসলামের ইতিহাসে নারীকে কখনো ক্ষমতার কর্নধার বানানো হয়নি ঠিক, কিন্তু বহু গুরুত্বপূর্ন ক্ষেত্রে নারবীকে অবাধে তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১৯ সালে মার্কিন সংবিধানের উনিশতম সংশোধনীর মাধ্যমে নারী আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ের শেষ হয়। সংশোধনীতে নারীদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নারী ও পুরম্নষকে সমান মর্যাদার নাগরিক হিসেবে ধরা হয়। অথচ দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম রাস্ট্রিয় দায়ত্বে নারীকে মতামত পেশ করার সুযোগ দিয়েছে তবে তা বর্তমান পার্লামেন্টে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে মতপ্রকাশের মত নয়, বরং রাস্ট্রের অধিনায়কের কাছে তার জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যা তার নিজ ও জাতির স্বার্থের সাথে ওৎপ্রেত ভাবে জড়িত। কোন ব্যাক্তিকে তার সাধ্যের বাইরে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া কখনোই তার উপর মানবিকতা নয়, বরং এই অমানবিকতাকতাই প্রতিষ্ঠা করতে কথিত নারীবাদের কুটিল পথ বেছে নেয় তাগুতী সমাজ।
একজন নারী সন্তান পেটে ধারণ করে, প্রসব কালীন সময় তার জীবনের অত্যান্ত নাজুক সময়, এর পর তাখে ঐ সন্তানকে দুধ খ্ওয়ানো লালন পালন করা সৃস্টিগত দায়ত্ব যা একজন পুরুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়, অপরদিকে এসব সৃস্টিগত দায়ভার পালন করার সময় একজন নারীর রাস্ট্রীয় দায়ভার, যুদ্ধ বিগ্রহ, কিংবা যে কোন ঝুকিপূর্ন কাজ করা সম্ভব নয়, য একজন পুরুষকেই কেবল শোভা পায়। অতএব নারীর ক্ষমতায়নের নাম করে তাকে এমনসব দায়ত্ব অপর্ন করার বাস্তব অর্থ হলো তার প্রতি অবিচার করা ।
ধন্যবাদ সুন্দর ও সময় উপযোগি লেখা দেয়ার জন্য
সেসব দেশের নারীদের সতীত্ব আছে, সুনাম আছে, পবিত্রতা আছে, তাদের কাজের ঝিরাও পরম তৃপ্তির জীবন যাপন করে। ইংরেজ শাষনাধীন দেশগুলোর জন্য চরম কলংঙ্কের ব্যপার হলো তারা তাদের নারীদেরকে পুরুষদের সাথে মাত্রাতিরিক্ত ঢলাঢলি, মেলামেশা করতে দিয়ে অসতি ও বেহায়া বানিয়েছে।”
সুন্দর ও সময়োপযুগী লেখার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লেখা দেয়ার জন্য।