ইজতিহাদ, তাক্বলীদ এবং সাধারণ মানুষের করণীয়
লিখেছেন: ' Abu Ibrahim' @ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৭, ২০১০ (৩:৫৬ অপরাহ্ণ)
بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان
আসসালামু আলাইকুম
আলোচনার শুরুতে বলে নেয়া ভাল যে নিছক বিতর্কের উদ্দেশ্যে বা কাউকে খাটো করতে লিখছি না। “পিস ইন ইসলামে” নতুন এসে লক্ষ্য করেছি যে এখানে ইজতিহাদ, তাক্বলীদ প্রভৃতি বিষয়ে বেশ কিছু ভাল আলোচনা হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে অপরের কথা বা উদ্দেশ্য বুঝতে আমাদের ভুল হওয়ার কারণে এমন বিষয়ে বিতর্ক চলে আসে যার ব্যাপারে মূলে কোন দ্বিমত ছিল না। এধরনের বিতর্কের স্তুপে চাপা পড়ে অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় হারিয়ে যায়। এধরনের কয়েকটি বিষয়ের প্রতি মনযোগ আকর্ষণ করার জন্যই এই লেখা, নতুবা এই ব্লগের নিয়মিত লেখকদের সাথে উল্লেখযোগ্য কিছু যোগ করার মত জ্ঞানী আমি নই।
“মাযহাব” বিষয়ে সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় হাফিজ ভাইয়ের বিস্তারিত আলোচনায় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উঠে এসেছে যার ব্যাপারে বোধহয় কারোই মতভেদ করার সুযোগ নেই যেমন:
- ইজতিহাদের জন্য ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞান প্রয়োজন।
- সকলেই ইজতিহাদ করার যোগ্য নন।
- যিনি ইজতিহাদ করার যোগ্য নন, তাঁর কর্তব্য “জ্ঞানী”দেরকে প্রশ্ন করা।
- সকল মাসআলার দলীল জানতে একজন সাধারণ মানুষ বাধ্য নন, আর এটা আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ, নতুবা দ্বীন পালন করা আমাদের জন্য অতি কষ্টকর হয়ে পড়ত।
- যে কেউ কুরআন হাদীস খুলেই নিজে থেকে মাসআলা “ইসতিমবাত” করার যোগ্যতা রাখেন না।
- কেউ কোন মাসআলায় একটি মতের অনুসারী হলেই অপর মুজতাহিদগণের মতকে “ভুল” বলার যোগ্যতা সে রাখে না।
এ সমস্ত পয়েন্টে আমি ব্যক্তিগতভাবে ১০০ ভাগ একমত এবং আমি মনে করি যে এগুলোতে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। তবে আমার মনে হয়েছে, পরিপূর্ণ মুকাল্লিদ ও পরিপূর্ণ মুজতাহিদের মাঝামাঝি স্তরগুলো সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা তৈরী হতে পারে, আর এক্ষেত্রে আমি মনে করি না যে শ্রদ্ধেয় হাফিজ ভাই বা অন্যরা যা বলতে চাচ্ছেন, তার চেয়ে খুব ভিন্ন কিছু আমি বলছি। তবে হয়তো বা এর উপস্থাপনা কিছুটা ভিন্ন রকম হলে আমার মত অনেক সাধারণ পাঠকের বুঝতে সুবিধা হবে।
প্রথমত, প্রশ্ন হতে পারে যে পরিপূর্ণ মুকাল্লিদ ও পরিপূর্ণ মুজতাহিদগণের মধ্যবর্তী পর্যায়ে স্তরের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বা সংজ্ঞা আছে কিনা: এর জবাবে বলা যায় যে এক্ষেত্রে যদিও আলেমগণ কিছু মধ্যবর্তী পর্যায়ের নামকরণ করেছেন, তথাপি তা সুনির্দিষ্ট নয়, বরং প্রত্যেক ব্যক্তিই তাঁর জ্ঞানানুযায়ী ফিকহের মাসআলা গ্রহণ বা বর্জনের ক্ষেত্রে একেকটি অবস্থানে রয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, এক্ষেত্রে একজন সাধারণ দ্বীন শিক্ষার্থীও দলীলের ভিত্তিতে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতার অধিকারী হতে পারেন। বিষয়বস্তু জটিল হওয়ার পূর্বেই একটি উদাহরণ দেয়া যাক:
ধরা যাক একজন ইঞ্জিনিয়ার, যিনি কিছু ইসলামী বইপত্র পড়েছেন, বিশ্বখ্যাত কিছু আলেমগণের কাছ থেকে দ্বীন সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছেন, মোটামুটি আরবী ভাষার কিছু জ্ঞান রাখেন তিনি যে এলাকায় থাকেন সেখানকার আলেমগণ হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। এক্ষেত্রে তিনি হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণকে বলতে শুনলেন যে সূর্য কিংব চন্দ্রের দিকে মুখ করে প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদন করা নিষেধ। কেননা ইবনু কুদামা আল মাক্বদিসী(রহ.) তার একটি কিতাবে লিখেছেন যে:
ولا يستقبل شمسا ولا قمرا
“[প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদনকারী] সূর্য কিংবা চন্দ্রের দিকে মুখ করবে না”
তিনি এক্ষেত্রে দলীল জানতে চাইলে তাকে দুটি কারণ দেখানো হল:
১. যেহেতু সূর্য-চন্দ্র আল্লাহ পাকের নিদর্শন তাই এদের সম্মানার্থে এদের দিকে মুখ করে বসা ঠিক নয়।
২. এ সম্পর্কে একটি হাদীস পাওয়া যায় যাকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বল বলেছেন।
তিনি হাদীসগ্রন্থ এবং আলেমগণের বক্তব্য থেকে জানতে পারলেন যে নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِذَا أَتَيْتُمْ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا
“তোমরা প্রাকৃতিক কাজ সম্পাদন করার সময় কিবলার দিকে মুখ অথবা পিঠ দিও না, বরং পূবে বা পশ্চিমে মুখ কর।”[বুখারী ও মুসলিম]
এক্ষেত্রে এই সাধারণ ব্যক্তিটির করণীয় সম্ভাব্য কাজগুলি হল:
ক. তিনি যেহেতু হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী আলেমগণের মাঝে বসবাস করছেন, ফলে হাম্বলী মাযহাবের অনুসরণ করতে থাকা।
খ. মাযহাবের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করা, কেননা অন্যান্য মাযহাবে কিংবা অন্যান্য আলেমগণ দ্বিতীয় হাদীস অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে শৌচকার্যের সময় সূর্য কিংবা চন্দ্রের দিকে চেহারা কিংবা পিঠ করে বসলে কোন সমস্যা নেই।
এক্ষেত্রে দ্বিতীয় (খ) পথটি অনুসরণ করা তার জন্য নিরাপদ কেননা:
- এতে করে তিনি জ্ঞানের ভিত্তিতে আমল করলেন।
- এক্ষেত্রে তিনি সহীহ হাদীসের তথা নবীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতের অনুসরণ করলেন, এতে করে মাযহাবের কিংবা এলাকার কোন নির্দিষ্ট আলেমের বিরোধিতা হলেও ক্ষতি নেই কেননা আল্লাহ পাক কোন নির্দিষ্ট আলেমের অনুসরণকে বাধ্যতামূলক করেননি, বরং তিনি বাধ্যতামূলক করেছেন নবীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনুগত্যকে।
- বাস্তবিকপক্ষে তিনি সহীহ হাদীসের অনুসারী হওয়ায় এক অর্থে মাযহাবের ইমামেরই অনুসরণ করলেন, কেননা সকল ইমামই তাঁদের অনুসারীদেরকে সহীহ হাদীসের অনুসরণের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন, যদিও বা তা তাঁদের মতের বিপরীতও হয়।
লক্ষ্যণীয় যে এই ক্ষেত্রে এই ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোককে পরিপূর্ণ মুকাল্লিদ, পরিপূর্ণ মুজতাহিদ কিংবা এর মধ্যবর্তী যে স্তরগুলো উসূলের আলেমগণ চিহ্নিত করেছেন তার কোনটিতেই হয়ত পুরোপুরি ফেলা যাবে না, তা সত্ত্বেও এই মাসআলায় তিনি কোন মতটি অনুসরণ করবেন, সে ব্যাপারে তাকে বাধা দেয়ার কোন যুক্তি নেই, কুরআন-সুন্নাতেও নেই, বিবেকের কাছেও নেই।
এক্ষেত্রে তাঁর এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছু আপত্তি আসতে পারে:
১. তিনি মাযহাবকে ভুল বলার যোগ্যতা রাখেন?
জবাব: যদি তাঁর জ্ঞান বেশী না থাকে তবে তিনি মাযহাবকে জোর দিয়ে ভুল বলবেন না, তবে তিনি মাযহাবের বিপরীতে আমল করার পূর্ণ অধিকার রাখেন, তিনি মাযহাবকে ভুল না বলে আদবের সাথে বলবেন যে এই মাসআলায় মাযহাবের দলীল স্পষ্ট না হওয়ায় আমি অপর মতের অনুসারী, যার দলীল আমার নিকট স্পষ্ট। [আমি স্বীকার করছি যে এক্ষেত্রে কোন কোন ব্যক্তি বাড়াবাড়ির কারণে মাযহাবকে গালিগালাজ করেন, সেটা অব্শ্যই অন্যায় এবং আদব পরিপন্থী, তবে সেটা তার ব্যক্তিগত দোষ, এর কারণে তার মাযহাবের বিপরীত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে দোষ দেয়া যায় না]
২. তিনি কিভাবে জানেন যে মাযহাবের ইমাম কিংবা আলেমগণ এই হাদীস জানেন না? হতে পারে তারা তা জানতেন এবং কোন উপযুক্ত কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জবাব: হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। আর তাই মাযহাবের মত কেন সহীহ হাদীসের বিপরীত হল, তার যথাযথ জবাব না জানা পর্যণ্ত এই হাদীস অনুযায়ী আমল করতে থাকাই তার জন্য নিরাপদ, তাছাড়া তার আমলের পক্ষে অন্য ইমাম ও মুজতাহিদগণের সমর্থন রয়েছে যাঁরা কোন অংশেই মাযহাবের ইমামের তুলনায় জ্ঞান কিংবা তাক্বওয়ায় কম নন।
৩. তিনি কি জানেন যে তিনি যে হাদীসের ওপর আমল করছেন তা মানসূখ(রোহিত) কিংবা মুখাসসাস(সুনির্দিষ্ট) কিংবা মুকাইয়াদ(শর্তযুক্ত) নয়?
জবাব: হয়তো জানেন না, তবে তা মানসূখ কিংবা মুখাসসাস কিংবা মুকাইয়াদ হওয়াও দলীলসাপেক্ষ, সেই দলীল না জানা পর্যন্ত তিনি ঐ হাদীসের অনুসরণ করতে বাধা নেই। তবে যদি পরবর্তীতে তিনি তা জানতে পারেন, তবে তাঁর আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নেবেন, সেক্ষেত্রে তিনি একই সাথে সহীহ হাদীসের ওপর আমল এবং সত্য এলে তা মেনে নেয়ার যুগপৎ সওয়াবের অধিকারী হবেন বলে আশা করা যায়। তাছাড়া এই হাদীসের ওপর অন্যান্য আলেমগণের আমল থাকায় ধারণা করা যায় যে তা মানসূখ কিংবা মুখাসসাস কিংবা মুকাইয়াদ নয়, আর যদি হয়ও তবে অন্তত: তিনি কারও তাক্বলীদ তো করেছেন, ফলে তাকে দোষ দেয়ার সুযোগ নেই।
আমি আশা করি আমার সম্পূর্ণ বক্তব্য ভাল করে পড়লে এ বিষয়ে কারো আপত্তি থাকবে না। তবে কারো আশংকা হতে পারে যে আমি ইসলামী জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে খুব বেশী সহজ কিংবা হালকা করে দিচ্ছি – আসলে বিষয়টি তা নয়। আমি সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বড় বড় আলেমগণের বক্তৃতা, লেখনী থেকে দেখেছি যে তাঁরা সাধারণ মানুষকেও সবসময় দলীলসন্ধানী হতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং বড় বড় মুজতাহিদ ইমাম আলেমগণকে অবজ্ঞা করা কিংবা তাঁদের অন্ধ অনুসরণ করার দুই প্রান্তিক অবস্থায় থাকার পরিবর্তে দলীলের ভিত্তিতে তাঁদের মতামত থেকে যেটাকে “সঠিক মনে হয়” তা বেছে নেয়ার তাগিদ দেন, অথচ তাঁরা নিজেরাও শরীয়ত বিশেষজ্ঞ, আর যাদেরকে তারা একথা বলছেন তারাও সাধারণ মানুষ – একথা তাঁরা ভাল করেই জানেন। যাহোক, তাঁদের অনুসরণে আমারও মনে হয়েছে যে মানুষকে জ্ঞান ছাড়া কথা বলার ব্যাপারে সতর্ক করার পাশাপাশি তাদেরকে দলীলসহ মাসলা মাসায়েল জানার উৎসাহ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে, পাছে না ইসলামী জ্ঞান কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়ে, ফলে তারা মানুষকে ধর্মের নামে যা খুশি তাই বোঝাতে পারে। এই অপধারা চালু হয়ে গেলে তা কেবল ফিকহের মাসআলায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আক্বীদার বিষয় পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে মানুষের ঈমানের চাদর ধরে টান দেবে। তাই সাধারণ মানুষকে দলীলের ব্যাপারে সচেতন করার যে প্রচেষ্টা, তা প্রশংসনীয়, নিন্দনীয় নয়। তবে হ্যাঁ এই প্রক্রিয়ায় আমাদেরকে সেই সমস্ত “বিভ্রান্তির” বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যা শ্রদ্ধেয় হাফিজ ভাই উনার সাম্প্রতিক নিবন্ধে সযত্নে তুলে ধরেছেন এবং আমিও এই নিবন্ধের শুরুতেই সমর্থন করেছি।
والله أعلم وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين
“মাযহাব” বিষয়ে সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় হাফিজ ভাইয়ের বিস্তারিত আলোচনায় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উঠে এসেছে যার ব্যাপারে বোধহয় কারোই মতভেদ করার সুযোগ নেই যেমন:
- ইজতিহাদের জন্য ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞান প্রয়োজন।
- সকলেই ইজতিহাদ করার যোগ্য নন।
- যিনি ইজতিহাদ করার যোগ্য নন, তাঁর কর্তব্য “জ্ঞানী”দেরকে প্রশ্ন করা।
- সকল মাসআলার দলীল জানতে একজন সাধারণ মানুষ বাধ্য নন, আর এটা আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ, নতুবা দ্বীন পালন করা আমাদের জন্য অতি কষ্টকর হয়ে পড়ত।
- যে কেউ কুরআন হাদীস খুলেই নিজে থেকে মাসআলা “ইসতিমবাত” করার যোগ্যতা রাখেন না।
- কেউ কোন মাসআলায় একটি মতের অনুসারী হলেই অপর মুজতাহিদগণের মতকে “ভুল” বলার যোগ্যতা সে রাখে না।
এ সমস্ত পয়েন্টে আমি ব্যক্তিগতভাবে ১০০ ভাগ একমত এবং আমি মনে করি যে এগুলোতে দ্বিমত করার সুযোগ নেই।
ধন্যবাদ ব্রাদার । এই পয়েন্টগুলোতে যে একমত আমরা এটাই তো অনেক পাওনা
পরিপূর্ণ মুকাল্লিদ ও পরিপূর্ণ মুজতাহিদের মাঝামাঝি স্তরগুলো সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা তৈরী হতে পারে, আর এক্ষেত্রে আমি মনে করি না যে শ্রদ্ধেয় হাফিজ ভাই বা অন্যরা যা বলতে চাচ্ছেন, তার চেয়ে খুব ভিন্ন কিছু আমি বলছি।
আসলে আমার ঐ পোস্টে এ বিষয়ে আমি আলোচনা করিনি, এ বিষয়ে পরবর্তিতে পোস্ট দেবো ইনশাল্লাহ । ঐ পোস্টের উদ্দেশ্য ছিল শুধু এটাই দেখানো “কোরআন হাদিসের অনুসরন করার পদ্ধতি হোলো , যেসকল ফকীহ মুজতাহিদ কোরআন হাদিস বুঝে গেছেন , নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন তাদের ব্যাখ্যা গ্রহন করা । অর্থ্যাৎ “ফকীহ, মুজতাহিদ”কে শুধুমাত্র কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যাকার মনে করা , অন্য কিছু নয় । তাদেরকে অনুসরন করা বলতে তারা কোরআন হাদিসের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা মেনে চলা । এটাই সুন্নত পদ্ধতি যা আমরা সাহাবীদের জীবন পর্যালোচনা করে দেখতে পেলাম। নিজের মনমতো কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রহন না করা “
ভাই একটি প্রশ্ন যেটা আমার একটু খটকা লাগছে । আপনার লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে “কেউ একজন সহীহ হাদিস দেখে আমল শুরু করতে পারে …. তার হাদিসের নাসেখ, মানসুখ , কোরআনের আয়াতের সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি নেই , সাহাবীদের আমল কি ছিল ? এ বিষয়ে মুজতাহিদ আলেমেদের বক্তব্য কি এ বিষয়ে না জানলেও চলবে” । আপনি কি এটাই বুঝাতে চেয়েছেন নাকি আমি ভুল বুঝলাম ?
@হাফিজ,
না ভাই, আমি তা বোঝাতে চাই নি, আর তাই একই পয়েন্টে বলেছি:
তাছাড়া এই হাদীসের ওপর অন্যান্য আলেমগণের আমল থাকায় ধারণা করা যায় যে তা মানসূখ কিংবা মুখাসসাস কিংবা মুকাইয়াদ নয়
এছাড়া নিবন্ধের শুরুতে আপনার সাথে একমত প্রকাশ করে বলেছি:
যে কেউ কুরআন হাদীস খুলেই নিজে থেকে মাসআলা “ইসতিমবাত” করার যোগ্যতা রাখেন না।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।
@Abu Ibrahim,
এছাড়া নিবন্ধের শুরুতে আপনার সাথে একমত প্রকাশ করে বলেছি:
যে কেউ কুরআন হাদীস খুলেই নিজে থেকে মাসআলা “ইসতিমবাত” করার যোগ্যতা রাখেন না।
ধন্যবাদ ।
অনেক ধন্যবাদ, আপনার অবস্থানকে সুন্দরভাবে সহিষ্ণুতার সাথে প্রকাশ করার জন্য।
আপনার বক্তব্যের সারাংশ আমার যা মনে হয়েছে:
১. সাধারণ মানুষের জন্য মাযহাব মানার বিকল্প নেই। [একমত]
২. যারা আলেম না তাদের ভেতর এলেমের একটা নির্দিষ্ট স্তর (পরিপূর্ণ মুকাল্লিদ ও পরিপূর্ণ মুজতাহিদগণের মধ্যবর্তী পর্যায়ে স্তর )অতিক্রমকারিদের জন্য :
মাযহাব এবং কোন সহিহ হাদিসকে সাংঘর্ষিক মনে হলে, মাযহাবের মত পক্ষে শক্তিশালি দলিল না পাওয়া পর্যন্ত সহিহ হাদিসের ওপর আমল করাই নিরাপদ। [আমার দ্বিমত আছে]
৩. সাধারণ মানুষকেও দলীলসহ মাসলা মাসায়েল জানার উৎসাহ দেয়ার প্রয়োজন।[আমার দ্বিমত আছে]
আশা করি পরে আলোচনা করা যাবে ইনশাআল্লাহ
@সাদাত, সাদাত ভাই এর সাথে আমিও একমত।
@সাদাত, সহমত ।
@সাদাত,
আপনি বলেছেন:
আমি একথা বলতে চাইনি। বরং সাধারণ মানুষের জ্ঞানী ব্যক্তির শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেই জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে মাযহাব অনুযায়ী ফতোয়া দেবেন, এমন কোন কথা নেই।
জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।
@Abu Ibrahim,
সাধারণ মানুষের জ্ঞানী ব্যক্তির শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেই জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে মাযহাব অনুযায়ী ফতোয়া দেবেন, এমন কোন কথা নেই।
ভাই আপনার নিকট একটি প্রশ্ন:
জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে মাজহাব অনুযায়ী ফতোয়া দিক বা না দিক , সেই ফতোয়া দেয়ার পর সাধারন মানুষ কি আমল করা শুরু করবে নাকি দলীল খুজবে ?
@হাফিজ,
জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে মাজহাব অনুযায়ী ফতোয়া দিক বা না দিক , সেই ফতোয়া দেয়ার পর সাধারন মানুষ কি আমল করা শুরু করবে নাকি দলীল খুজবে ?
এক্ষেত্রে আমার মনে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিচার বুদ্ধির উপর নির্ভর করবে। মানে সেই ফতোয়ায় যদি কোন সন্দেহে হয় তাহলে দলিল খুজতে পারে। আর যদি সন্দেহ না হয় এবং আলিম যদি নির্ভরযোগ্য হয় সেক্ষেত্রে তাকে দলিল খোজার ব্যপারে চাপ প্রয়োগ করা কোন মতেই উচিত হবেনা। (এটা আমার মত)
@Abu Ibrahim,
ধন্যবাদ আপনার অবস্থানকে পরিষ্কার করার জন্য।
এবার বলুন:
এক.
সাধারণ মানুষ জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে যাবেন।
জ্ঞানী ব্যক্তি যদি মাযহাব অনুসারেই ফতোয়া দেন – সেটাকে আপনি কী হিসাবে দেখবেন?
দুই.
আপনার বর্ণিত ইঞ্জিরিয়ার সাহেব যদি এক্ষেত্রে নিজের বিচারবুদ্ধি, এলেম এবং তাকওয়াকে মাযহাবের আলেমদের তুলনায় নগণ্য বিবেচনা করে মাযহাবের আলেমদের ফতোয়া অনুয়ায়ী আমল করতে থাকেন- সেটাকে আপনি কী হিসাবে দেখবেন?
তিন.
আপনি নিজেই ১০০% একমত যে
#১.সকল মাসআলার দলীল জানতে একজন সাধারণ মানুষ বাধ্য নন
#২.যে কেউ কুরআন হাদীস খুলেই নিজে থেকে মাসআলা “ইসতিমবাত” করার যোগ্যতা রাখেন না।
আবার এই সাধারণ মানুষকেই আপনি দলিলের ব্যাপারে উৎসাহিত করার পক্ষে।
কারণ:
যাতে ইসলামী জ্ঞান কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে কুক্ষিগত হয়ে না পড়ে, ফলে তারা মানুষকে ধর্মের নামে যা খুশি তাই বোঝাতে পারে।
আপনার এই উদ্দেশ্যে পূরণের জন্য এটাই কি অপরিহার্য এবং যথাযথ পন্থা?
আমার দৃষ্টিতে এই পন্থা সঠিক নয়, কারণ:
১. এতে মানুষকে এমন কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে , যে কাজের জন্য তিনি বাধ্য নন। [#১]
২. এমন মানুষকে একাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে , যিনি এ কাজের যোগ্যতা রাখেন না। [#২]
৩. এতে সাধারণ মানুষের মনে আলেমদের সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
৪. এই পন্থা তার উদ্দেশ্য(যাতে ইসলামী জ্ঞান কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে কুক্ষিগত হয়ে না পড়ে, ফলে তারা মানুষকে ধর্মের নামে যা খুশি তাই বোঝাতে পারে।)এর বিপরীত
কারণ:
আপনার মতে
সাধারণ মানুষের জ্ঞানী ব্যক্তির শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেই জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে মাযহাব অনুযায়ী ফতোয়া দেবেন, এমন কোন কথা নেই।
এই ফতোয়াদাতা যদি “স্বার্থান্বেষী” হন, তবে
তার উদ্দেশ্যকে সিদ্ধ করে এ ধরণের দলিল সাধারণের নিকট প্রকাশ করতে পারে এবং
তার উদ্দেশ্যের পরিপন্থী দলিল গোপণ করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারে।
আপনার উদ্দেশ্যকে সিদ্ধ করার জন্য যেটা প্রয়োজন,সেটা হলো:
১. জনগণকে যার তার কাছ থেকে ফতোয়া না নিতে উদ্বুদ্ধ করা।
২.ফতোয়ার জন্য কোন সুপ্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার ফতোয়া বোর্ডের দ্বারস্থ হওয়া।[আমার জানা মতে মাদ্রাসার ফতোয়া বিভাগের প্রতিটি ফতোয়াতেই দলিল উল্লেখ করা থাকে।]
[আরো উপায় থাকা সম্ভব, আমি কেবল দু'টি উল্লেখ করলাম]
@সাদাত, আপনার কথাকে বেশ যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে যদি দুটি মাদ্রাসার ফতোয়া বোর্ডের ফাতাওয়াতে ভিন্নতা থাকে, তবে কি সাধারণ জনগণ দুইটির মধ্যে যে কোন একটি গ্রহন করতে পারবে না? যদি না পারে, তবে কেন নয়? আপনার মত জানতে চাচ্ছি।
তাছাড়া কোন একটি মাদ্রাসার ফতোয়া বোর্ডের ফাতাওয়াতে যে ভুল থাকবে না, সে ব্যাপারে কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে?
এক্ষেত্রে তিনি সহীহ হাদীসের তথা নবীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতের অনুসরণ করলেন, এতে করে মাযহাবের কিংবা এলাকার কোন নির্দিষ্ট আলেমের বিরোধিতা হলেও ক্ষতি নেই কেননা আল্লাহ পাক কোন নির্দিষ্ট আলেমের অনুসরণকে বাধ্যতামূলক করেননি, বরং তিনি বাধ্যতামূলক করেছেন নবীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনুগত্যকে।
সহমত!
@দ্য মুসলিম, সহমত!
যাহোক, তাঁদের অনুসরণে আমারও মনে হয়েছে যে মানুষকে জ্ঞান ছাড়া কথা বলার ব্যাপারে সতর্ক করার পাশাপাশি তাদেরকে দলীলসহ মাসলা মাসায়েল জানার উৎসাহ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে, পাছে না ইসলামী জ্ঞান কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়ে, ফলে তারা মানুষকে ধর্মের নামে যা খুশি তাই বোঝাতে পারে। এই অপধারা চালু হয়ে গেলে তা কেবল ফিকহের মাসআলায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আক্বীদার বিষয় পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে মানুষের ঈমানের চাদর ধরে টান দেবে। তাই সাধারণ মানুষকে দলীলের ব্যাপারে সচেতন করার যে প্রচেষ্টা, তা প্রশংসনীয়, নিন্দনীয় নয়।
সহমত।
@দ্য মুসলিম, সহমত।
আসসালামু আলাইকুম ভাই, জাজাকাল্লাহ, চমৎকার একটি শিক্ষণীয় পোস্ট। পড়ে ভাল লাগল।