বিশুদ্ধ আক্বীদা : গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ শনিবার, মার্চ ৩, ২০১২ (৮:১০ পূর্বাহ্ণ)
বিশ্বাস বা দর্শন মানবজীবনের এমন একটি বিষয় যা তার জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। এটা এমন এক ভিত্তি যাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার সমগ্র জীবনধারা পরিচালনা করে। এই যে মৌলিক জীবনদর্শনকে কেন্দ্র করে দুনিয়ার বুকে মানুষ আবর্তিত হচ্ছে, যে আদর্শ ও বিশ্বাসকে লালন করে তার সমগ্র জীবন পরিচালিত হচ্ছে তাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘আক্বীদা’ শব্দ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। কোন অবকাঠামো যেমন ভিত্তি ছাড়া অকল্পনীয়, তেমনভাবে একজন মুসলিমের জীবনে আক্বীদা ও বিশ্বাসের দর্শন এমনই একটি অপরিহার্য বিষয় যা ব্যতীত সে নিজেকে মুসলিম হিসাবে সম্বোধিত হওয়ার অধিকার ও দাবী হারিয়ে ফেলে। এটা এমন এক অতুলনীয় শক্তির অাঁধার যা একজন মুসলমানকে তার আদর্শের প্রতি শতভাগ আস্থাবান করে তুলে এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে বিরামহীনভাবে সচেষ্ট রাখে। অপরপক্ষে মানবজগতের যাবতীয় পথভ্রষ্টতার মূলে রয়েছে এই মৌলিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুত হওয়া। এজন্য একজন মুসলমানের জন্য আক্বীদা-বিশ্বাসের ব্যাপারে সুস্পষ্ট জ্ঞান রাখা এবং সে বিশ্বাসের যথার্থতা নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা ব্যতীত কোন ব্যক্তি প্রকৃত অর্থে মুসলিম হতে পারে না। প্রতিটি কথা ও কর্ম যদি বিশুদ্ধ আক্বীদা ও বিশ্বাস থেকে নির্গত না হয় তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয়ে অবিশ্বাস রাখে তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে’ (মায়েদা ৫)। তিনি আরো বলেন, ‘(হে নবী!) তোমাকে এবং এবং তোমার পূর্বসূরিদের আমি প্রত্যাদেশ করেছি যে, যদি তুমি আমার শরীক স্থাপন কর তবে তোমার যাবতীয় শ্রম বিফলে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৬৫)। মানুষ যুগে যুগে পথভ্রষ্ট হয়েছে মূলতঃ আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ঘটার কারণে। এজন্য বিষয়টি সূক্ষ্মতা ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে জানা অপরিহার্য। নিম্নে ইসলামী আক্বীদার পরিচিতি ও মানব জীবনে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণের গুরুত্ব আলোচনা করা হল।
আক্বীদার সংজ্ঞা :
শাব্দিক অর্থ : আক্বীদা শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল সম্পর্ক স্থাপন করা বা শক্তভাবে অাঁকড়ে ধরা, অথবা কোন কিছুকে সাব্যস্ত করা বা শক্তিশালী হওয়া। অতএব মানুষ যার সাথে নিজের অন্তরের সুদৃঢ় যোগাযোগ স্থাপন করে তাকেই আক্বীদা বলা যায়। পারিভাষিক অর্থ : সাধারণভাবে সেই সুদৃঢ় বিশ্বাস ও অকাট্য কর্মধারাকে আক্বীদা বলা হয় যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তির মনে সামান্যতম সন্দেহের অবকাশ থাকে না। আর ইসলামী আক্বীদা বলতে বুঝায়- আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর যিনি সৃষ্টিকর্তা সেই মহান প্রভুর প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করা, তাঁর উলূহিয়্যাত, রুবূবিয়্যাত ও গুণবাচক নামসমূহকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। তাঁর ফেরেশতামন্ডলী, নবী-রাসূলগণ, তাঁদের উপর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ, তাক্বদীরের ভাল-মন্দ এবং বিশুদ্ধ দলীল দ্বারা প্রমাণিত দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহ ও অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কিত সংবাদসমূহ ইত্যাদি যে সব বিষয়াদির উপর সালাফে ছালেহীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন তার প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখা। আল্লাহর নাযিলকৃত যাবতীয় আহকাম-নির্দেশনার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রদর্শন এবং রাসূল (ছা:)-এর প্রচারিত শরী‘আতের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণ নিশ্চিত করা ইসলামী আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত (ড. নাছের বিন আব্দুল করীম আল-আক্বল, মাবাহিসুন ফি আক্বীদায়ে আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, পৃঃ ৩)। আক্বীদা এবং শরী‘আত দু’টি পৃথক বিষয়। কেননা শরী‘আত হল দ্বীনের কর্মগত রূপ এবং আক্বীদা হলো দ্বীনের জ্ঞানগত রূপ যার প্রতি একজন মুসলমানের আন্তরিক বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য।
আক্বীদা শব্দটির বিভিন্ন ব্যবহার :
আক্বীদা শব্দটি ইসলামী পরিভাষায় আরো কয়েকটি শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। যেমন- তাওহীদ, সুন্নাত, উছূলুদ্দীন, ফিকহুল আকবার, শরী‘আত, ঈমান ইত্যাদি। যদিও আক্বীদা শব্দটি এগুলোর তুলনায় সামগ্রিক একটি শব্দ। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ব্যতীত অন্যান্য ফেরকা এক্ষেত্রে আরো কয়েকটি পরিভাষা ব্যবহার করে। যেমন-
যুক্তিবিদ্যা (ইলমুল কালাম) :
মু‘তাযিলা, আশ‘আরিয়া এবং তাদের অনুসারীগণ এই পরিভাষাটি ব্যবহার করে। এটা সালাফে ছালেহীনের নীতি বিরোধী অনর্থক কর্ম, যার সাথে শরী‘আতের সম্পর্ক নেই।
দর্শন :
দার্শনিকগণ এই পরিভাষা ব্যবহার করে। তবে আক্বীদাকে দর্শন শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা চলে না। কেননা দর্শনের ভিত্তি হল অনুমান, বুদ্ধিবৃত্তিক কল্পনা ও অজ্ঞাত বিষয়াদি সম্পর্কে কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টি, যার সাথে ইসলামী আক্বীদার সম্পর্ক নেই।
তাসাওউফ :
কোন কোন দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ ও ছূফীবাদীরা আক্বীদাকে ছুফিতত্ত্ব হিসাবে ব্যাখ্যা দেয়। এটাও অগ্রহণযোগ্য। কেননা সুফিতত্ত্বও নিরর্থক কল্পনা ও কুসংস্কারের উপর নির্ভরশীল। এর অতীন্দ্রিয় ও কাল্পনিক ভাবমালার সাথে শরী‘আতের কোন সম্পর্ক নেই।
ধর্মতত্ত্ব (Theology):
এটাও দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ, যুক্তিবাদীদের আবিস্কৃত শব্দ। এর দ্বারাও ইসলামী আক্বীদার ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কেননা এর উদ্দেশ্য কেবল স্রষ্টা সম্পর্কে দার্শনিক, যুক্তিবাদী এবং নাস্তিকদের ধারণাসমূহ ব্যাখ্যা করা।
অধিবিদ্যা :
দার্শনিক ও পশ্চিমা লেখকরা একে Metaphisycs নামে অভিহিত করে। এটি অনেকটা ধর্মতত্ত্বের কাছাকাছি পরিভাষা।
সাধারণভাবে ধর্ম সম্পর্কিত বা ধর্মহীন বিভিন্ন বাতিল চিন্তাধারাকেও আক্বীদা বলা যায়। যেমন – ইহুদীবাদ, বৌদ্ধবাদ, হিন্দুবাদ, খৃষ্টবাদ, নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদি।
বিশুদ্ধ আক্বীদা বনাম ভ্রষ্ট আক্বীদা :
বিশুদ্ধ আক্বীদা বলতে বুঝান হয় ইসলামী আক্বীদা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাকে যা আল্লাহ রাববুল আলামীন নির্দেশিত ও রাসূল (ছা:) কর্তৃক প্রচারিত অর্থাৎ যা পূর্ণাঙ্গভাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা সমর্থিত এবং সালাফে ছালেহীনের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত। এতদ্ভিন্ন পৃথিবীর যাবতীয় আক্বীদা ও বিশ্বাস মিশ্রিত, কাল্পনিক, কুসংস্কারযুক্ত এবং মিথ্যার উপর ভিত্তিশীল। যা নিশ্চিতভাবে মানবজাতির গন্তব্যপথকে ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়।
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত :
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত ছয়টি। যথা:-
1. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস : আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজেকে যেভাবে মানবজগতের কাছে উপস্থাপন করেছেন ঠিক সেভাবে তা সত্তাগতভাবে, গুণগতভাবে এবং কর্মগতভাবে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করা।
2. ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস : তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে যেরূপ বর্ণনা এসেছে ঠিক সেভাবে বিশ্বাস করা।
3. রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস : তাঁদের নবুওয়াত ও তাদের চারিত্রিক পবিত্রতার উপর নির্দ্বিধায় বিশ্বাস স্থাপন করা।
4. আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস : মূল চারটি কিতাব তথা যাবুর, ইঞ্জীল, তাওরাত ও কুরআনসহ নাযিলকৃত অন্যান্য ছোট ছোট কিতাব ও ছহীফাসমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা।
5. শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস : অর্থাৎ মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে যাবতীয় সংবাদসমূহ যা আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর রাসূলের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন, তার প্রতি বিশ্বাস রাখা।
6. তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস : অর্থাৎ যা কিছু দুনিয়ার বুকে ঘটছে তা আল্লাহ রাববুল আলামীনের জ্ঞাতসারেই ঘটছে এবং তিনি সৃষ্টিজগত তৈরীর বহু পূর্বেই ভবিষ্যৎ ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন- এই বিশ্বাস জাগ্রত জ্ঞান সহকারে পোষণ করা।
আলোচিত ছয়টি বিষয়ের প্রতি পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা একজন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বহু দলীল দ্বারা এগুলো প্রমাণিত (বাকারা ১৭৭, ২৮৫; নিসা ১৩৬; ক্বামার ৪৯; ফুরকান ২; মিশকাত হা/২ ‘ঈমান অধ্যায়’)।
আক্বীদা ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য :
আক্বীদা শব্দটি প্রায়ই ঈমান ও তাওহীদের সাথে গুলিয়ে যায়। অস্বচ্ছ ধারণার ফলশ্রুতিতে অনেকেই বলে ফেলেন, আক্বীদা আবার কি? আক্বীদা বিশুদ্ধ করারই বা প্রয়োজন কেন? ঈমান থাকলেই যথেষ্ট। ফলশ্রুতিতে দ্বীন সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে এক বড় ধরনের অপূর্ণতা সৃষ্টি হয়, যা প্রায়ই মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে ঠেলে দেয়। এজন্য ঈমান ও আক্বীদার মধ্যকার সম্পর্ক ও পার্থক্য স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। নিম্নে বিষয়টি উপস্থাপন করা হল:-
প্রথমত : ঈমান সমগ্র দ্বীনকেই অন্তর্ভুক্ত করে। আর আক্বীদা দ্বীনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে।
দ্বিতীয়ত : আক্বীদার তুলনায় ঈমান আরো ব্যাপক পরিভাষা। আক্বীদা হল কতিপয় ভিত্তিমূলক বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের নাম। অন্যদিকে ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয়; বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দু’টি অংশ। একটি হল অন্তরে স্বচ্ছ আক্বীদা পোষণ। আরেকটি হল বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দু’টি পরস্পরের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোন একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয়।
তৃতীয়ত : আক্বীদা হল বিশ্বাসের মাথা এবং ঈমান হল শরীর। অর্থাৎ আক্বীদা হল ঈমানের মূলভিত্তি। আক্বীদা ব্যতীত ঈমানের উপস্থিতি তেমনি অসম্ভব, যেমনভাবে ভিত্তি ব্যতীত কাঠামো কল্পনা করা অসম্ভব। সুতরাং ঈমান হল বাহ্যিক কাঠামো আর আক্বীদা হল ঈমানের আভ্যন্তরীণ ভিত্তি।
চতুর্থত : আক্বীদার দৃঢ়তা যত বৃদ্ধি পায় ঈমানও তত বৃদ্ধি পায় ও মজবুত হয়। আক্বীদায় দুর্বলতা সৃষ্টি হলে ঈমানেরও দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, আমলের ক্ষেত্রেও সে দুর্বলতার প্রকাশ পায়। যেমনভাবে রাসূল (ছা:) বলেন, মানুষের হৃদয়ের মধ্যে একটি গোশতপিন্ড রয়েছে, যদি তা পরিশুদ্ধ হয় তবে সমস্ত শরীর পরিশুদ্ধ থাকে, যদি তা কদর্যপূর্ণ হয় তবে সমস্ত শরীরই কদর্যপূর্ণ হয়ে যায়। (মুত্তাফাক আলাইহে, মিশকাত ‘ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়’ হা/২৭৬০)
পঞ্চমত : বিশুদ্ধ আক্বীদা বিশুদ্ধ ঈমানের মাপকাঠি, যা বাহ্যিক আমলকেও বিশুদ্ধ করে দেয়। যখন আক্বীদায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় তখন ঈমানও বিভ্রান্তিপূর্ণ হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের অনুসরণ করা হয় এজন্য যে, তারা যে আক্বীদার অনুসারী ছিলেন তা ছিল বিশুদ্ধ এবং কুরআন ও সুন্নাহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর এজন্যই তারা ছিলেন খালিছ ঈমানের অধিকারী এবং পৃথিবীর বুকে উত্থিত সর্বোত্তম জাতি। অন্যদিকে মুরজিয়া, খারেজী, কাদরিয়াসহ বিভিন্ন উপদলসমূহ আক্বীদার বিভ্রান্তির কারণে তাদের ঈমান যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তেমনি তাদের কর্মকান্ড নীতিবিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এভাবেই আক্বীদার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে ঈমানের অবস্থানও পরিবর্তন হয়ে যায়।
ষষ্ঠত : সকল রাসূলের মূল দা‘ওয়াত ছিল বিশুদ্ধ আক্বীদা তথা তাওহীদের প্রতি আহবান জানানো। এক্ষেত্রে কারো অবস্থান ভিন্ন ছিল না। কিন্তু আমল-আহকাম সমূহ যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি আমলসমূহ পূর্ববর্তী নবীদের যুগে ছিল না অথবা থাকলেও তার বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্নরূপ। সুতরাং ঈমানের দাবীসূচক আমলসমূহ কালের বিবর্তনে পরিবর্তিত হলেও আক্বীদার বিষয়টি সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে অভিন্ন ও অপরিবর্তনীয়।
সঠিক আক্বীদা পোষণের অপরিহার্যতা :
1. সঠিক আক্বীদা পোষণ করা ইসলামের যাবতীয় কর্তব্যসমূহের মাঝে সবচেয়ে বড় কর্তব্য। রাসূল (ছা:) বলেন, ‘আমি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং মুহাম্মাদকে রাসূল হিসাবে স্বীকৃতি দেয়’ (মুত্তাফাক আলাইহে, ‘ঈমান’ অধ্যায়, হা/১২)।
2. ঈমান সাধারণভাবে সমস্ত দ্বীনে ইসলামকেই অন্তর্ভূক্ত করে। আর আক্বীদা দ্বীনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয় তথা অন্তরের অবিমিশ্র স্বীকৃতি ও আমলে তা যথার্থ বাস্তবায়নকে নিশ্চিত করে।
3. আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ তথা শিরক এমন ধ্বংসাত্মক যে পাপী তওবা না করে মারা গেলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না। এ ব্যতীত যে কোন পাপ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিতে পারেন’ (নিসা ১১৬)।
4. আক্বীদা সঠিক থাকলে কোন পাপী ব্যক্তি জাহান্নামে গেলেও চিরস্থায়ীভাবে সেখানে থাকবে না। ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, কোন এক ব্যক্তি জীবনে কোনদিন সৎ আমল না করায় তার পুত্রদের নির্দেশ দেয় তাকে পুড়িয়ে দিয়ে ছাইভস্ম যমীনে ও পানিতে ছড়িয়ে দিতে এই ভয়ে যে, আল্লাহ তাকে শাস্তি দান করবেন। তার ধারণা ছিল এর মাধ্যমে সে আল্লাহর কাছ থেকে পালিয়ে জাহান্নামের আগুন খেকে পরিত্রাণ লাভ করবে। অতঃপর আল্লাহ ছাইভস্মগুলো একত্রিত করে তাতে রূহ প্রদান করলেন এবং তাকে তার এই কাজের হেতু জানতে চাইলেন। অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিলেন, যেহেতু সে আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখে (বুখারী, হা/৩২৯৪ ‘কিতাবুল আম্বিয়া’, বাব ন. ৫২)। অন্য হাদীছে এসেছে, যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট থাকবে তাকেও শেষ পর্যায়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে (মুত্তাফাক আলাইহে, মিশকাত হা/৫৫৭৯,‘কিয়ামতের অবস্থাসমূহ ও সৃষ্টির পুনরুত্থান’ অধ্যায়, ‘হাউযে কাওছার ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ। অর্থাৎ সঠিক আক্বীদার কারণে একজন সর্বোচ্চ পাপী ব্যক্তিও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জাহান্নামে অবস্থানের পর জান্নাতে প্রবেশ করতে সমর্থ হবে।
5. আক্বীদা সঠিক না থাকলে সৎ আমলকারীকেও জাহান্নামে যেতে হবে। যেমন একজন মুনাফিক বাহ্যিকভাবে ঈমান ও সৎ আমল করার পরও অন্তরে কুফরী পোষণের কারণে সে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে (নিসা ১৪৫)। একই কারণে একজন কাফির সারা জীবন ভাল আমল করা সত্ত্বেও কিয়ামতের দিন সে তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে না। কেননা তার বিশ্বাস ছিল ভ্রান্তিপূর্ণ। আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন আমি তাদের কৃতকর্মের দিকে মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলো বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় রুপান্তরিত করব’ (ফুরকান ২৩)।
6. কবরের জীবনে আক্বীদা সম্পর্কেই প্রশ্ন করা হবে। অর্থাৎ তোমার রব কে? তোমার নবী কে? তোমার দ্বীন কি? সেদিন আমল সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হবে না। এখান থেকেই দুনিয়া ও আখিরাতে আক্বীদার গুরুত্ব অনুভব করা যায়।
7. ইসলামের কালেমা অর্থাৎ ‘কালেমা তাওহীদ’ উচ্চারণ করা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে তখনই যখন তা সঠিক বিশ্বাস প্রসূত হয়। নতুবা তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্তসমূহ হল- ক. কালেমা তাওহীদের অর্থ জানা। খ. খুলূছিয়াতের সাথে উচ্চারণ করা। গ. সত্যায়ন করা। ঘ. অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা। ঙ. কালেমা ও কালেমার অনুসারীদের প্রতি মুহাববত পোষণ করা। চ. আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দাবীসমূহ পরিপূর্ণ আনুগত্য ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা। ছ. কালেমার বিপরীত বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করা। এ বিষয়গুলো প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরের বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। যা স্পষ্টতঃই নির্দেশ করে যে, বিশ্বাসের সঠিকতা ইসলামে প্রবেশের মূল শর্ত। অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহীদ যদি সঠিক বিশ্বাসের সাথে উচ্চারিত না হয় তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে সকল আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
8. ইসলামের একটি মৌলিক নীতি হল ‘ওয়ালা’ ও ‘বারা’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর জন্য সম্পর্ক স্থাপন এবং আল্লাহর জন্যই সম্পর্কচ্ছেদ’ যা আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট। একজন কাফির, মুনাফিক, মুশরিকের প্রতি আমরা যে বিমুখতা দেখাই তার কারণ হল তার কুফরী এবং বিভ্রান্ত আক্বীদা। ঠিক যেমনভাবে একজন মুমিনকে আমরা শর্তহীনভাবে ভালবাসি তার ঈমান ও বিশুদ্ধ আক্বীদার কারণে। এ কারণে একজন মুসলমান পাপাচারী হলেও তার আক্বীদার কারণে তার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন এক ব্যক্তিকে মদ্যপানের জন্য রাসূল (ছা:)-এর সামনে বেত্রাঘাত করা হচ্ছিল। তখন একজন ব্যক্তি বলল, আল্লাহ তোমার উপর লা‘নত করুন। রাসূল (ছা:) তাকে বললেন, ‘এই মদ্যপায়ীকে লা‘নত কর না, কেননা সে আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসে’ (মুসনাদে বায্যার হা/২৬৯, ছনদ ছহীহ, দ্রঃ বুখারী হা/৬৭৮০)।
9. সমকালীন মুসলিম সমাজের দিকে তাকালে আক্বীদার গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুভব করা যায়। তাদের মাঝে যেমন বহু লোক কবর পূজায় ব্যস্ত, তেমনি লিপ্ত হরহামেশা তাওহীদ বিরোধী ও শিরকী কার্যকলাপে। কেউবা ব্যস্ত নিত্য-নতুন ‘মাহদী’, ‘মাসীহ’ আবিষ্কারের প্রচেষ্টায়। মূর্তিপূজার স্থলে এখন আবির্ভাব হয়েছে শহীদ মিনার, স্তম্ভ, ভাষ্কর্য, অগ্নিশিখা, প্রতিকৃতি ইত্যাদি শিরকী প্রতিমূর্তি। এগুলো সবই সঠিক আক্বীদা সম্পর্কে অজ্ঞতার দুর্ভাগ্যজনক ফলশ্রুতি। অন্যদিকে আক্বীদায় দুর্বলতা থাকার কারণে মুসলিম পন্ডিতদের চিন্তাধারা ও লেখনীর মাঝে শারঈ‘ সূত্রগুলোর উপর নিজেদের জ্ঞানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রবণতা এবং বুদ্ধির মুক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতার নামে কুফরী বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি যুক্তিবাদী ও শৈথিল্যবাদী ধ্যান-ধারণার জন্মও নিচ্ছে যার স্থায়ী প্রভাব পড়ছে পাঠকদের উপর। এভাবেই আক্বীদা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব আমাদের পথভ্রষ্ট করে ফেলছে প্রতিনিয়ত।
10. বিভ্রান্ত মতাদর্শের অনুসারী মুনাফিক, বিদ‘আতী এবং ভিন্ন ধর্মানুসারী ইহুদী, খৃষ্টান, পৌত্তলিক ও নাস্তিক্যবাদীরা তাদের আক্বীদা প্রচার ও প্রসারে বিভিন্নমুখী যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তা প্রতিরোধ করা ও তা থেকে আত্মরক্ষা করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক কর্তব্য। এজন্য সঠিক আক্বীদা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতেই হবে। অন্যথায় আপাতঃ দর্শনীয় পশ্চিমা বস্ত্তবাদী চিন্তাধারার জোয়ার আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে মোটেও সময় নিবে না।
আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির ভয়াবহ ফলাফল :
আলেম-ওলামাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল মৌলিক আক্বীদাসমূহের বিষয়ে সাধারণ মুসলমানদের সঠিক জ্ঞান দান করা এবং সাধ্যমত সর্বত্র তার প্রসার ঘটান। কেননা যে ব্যক্তি তার জীবনের ব্যষ্টিক, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদার প্রতিফলন ঘটাতে পারে, সে দুনিয়া ও আখিরাত সর্বক্ষেত্রে সফল। অথচ দুঃখজনক হল, আধুনিক যুগে বহু আলেমই আক্বীদাকে খুব সংকীর্ণ অর্থে ধরে নিয়েছেন, যার প্রভাব অবধারিতভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে পড়ছে। ফলে আমলগত ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদার উপস্থিতিকে নিশ্চিত না করে অনেকে কেবল আক্বীদা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা রাখাই যথেষ্ট মনে করেছে যেমনটি করেছিল মু‘তাযিলাসহ আরো কিছু উপদল। অনেকে আবার কেবল অন্যদের সাথে নিজেদের পার্থক্য নিরূপণের ক্ষেত্রে, কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের মত উপলক্ষের সাথে আক্বীদাকে সীমাবদ্ধ রেখেছে যেমন-খারেজীরা। ফলশ্রুতিতে বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রে বিধর্মীগোষ্ঠীর বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের পথ ধরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ইত্যাদি নিত্য-নতুন শিরকী মতবাদ সহজেই মুসলমানদের মাঝে গেড়ে বসতে সক্ষম হয়েছে। সচেতনতার দাবীদার বহু মুসলমান এ ধারণা রাখে যে, ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্মের লোকেরাও জান্নাতে যাবে যদি তারা সৎ হয়। ‘আক্বীদা ও শরী‘আত ভিন্ন জিনিস, আক্বীদা কেবলমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাধারা; ব্যবহারিক জীবনে যার বিশেষ কোন গুরুত্ব নেই, ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়; রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষা ইত্যাদি সার্বজনীন ক্ষেত্রে তার কোন ভূমিকা থাকা উচিৎ নয়’ ইত্যাদি কুফরী চিন্তাধারা লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে অধিকাংশ মুসলমানের মানসজগতকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। বলা বাহুল্য, এ সমস্ত ধোঁয়াশার প্রভাব এতই ক্ষতিকারক যে মানুষের সত্যানুসন্ধিৎসু মনকে একেবারেই পঙ্গু করে রাখে এবং মিথ্যার আধিপত্যকে মেনে নেওয়ার শৈথিল্যবাদী মানসিকতা প্রস্ত্তত করে দেয়। আর এসবই সঠিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুতির অবধারিত ফলশ্রুতি। সংক্ষিপ্ত আলোচনার শেষ প্রান্তে বলা যায় যে, আক্বীদা দ্বীনের প্রাথমিক ও মৌলিক বিষয়। আক্বীদা সঠিক হওয়ার উপরই ঈমান ও আমলের যথার্থতা নির্ভরশীল। তাই সবকিছুর পূর্বে আক্বীদার বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করাই একজন মুসলিমের প্রথম ও অপরিহার্য দায়িত্ব। আজকের পৃথিবীতে যখন সংঘাত হয়ে উঠেছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক তখন একজন মুসলমানের জন্য স্বীয় আক্বীদা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক বেড়েছে। কেননা হাযারো মাযহাব-মতাদর্শের দ্বিধা-সংকটের ধ্বংসাত্মক, দুর্বিষহ জঞ্জালকে সযত্নে পাশ কাটিয়ে সত্যের দিশা পাওয়া এবং সত্য ও স্বচ্ছ দ্বীনের দিকে ফিরে আসা বিশুদ্ধ আক্বীদা অবলম্বন ব্যতীত অসম্ভব। আল্লাহ রাববুল আলামীন সকল মুসলিম ভাই-বোনকে সঠিক আক্বীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত স্বচ্ছ ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফীক দান করুন ও যাবতীয় শিরকী ও জাহেলী চিন্তাধারা থেকে আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন!!
“কেননা হাযারো মাযহাব-মতাদর্শের দ্বিধা-সংকটের ধ্বংসাত্মক, দুর্বিষহ জঞ্জালকে সযত্নে পাশ কাটিয়ে সত্যের দিশা পাওয়া এবং সত্য ও স্বচ্ছ দ্বীনের দিকে ফিরে আসা বিশুদ্ধ আক্বীদা অবলম্বন ব্যতীত অসম্ভব।” এত লম্বা এক আলোচনার কি উপসংহার টানলেন? এটাই বাতিলের বৈশিষ্ট্য। কিয়ে মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি? কোন আলোচনার কি উপসংহার টানলেন? মাযহাবের ইমামদের হাজার বছরের মেহনতকে এক বাক্যে জঞ্জাল বলে দিলেন? আলবানীরা যে ইলম শিখেছেন তা কারা সংগ্রহ করেছেন? তারা কি জঞ্জাল সংগ্রহ করে গিয়েছেন? তয়হলে আপনি যা শিখেছেন তাও কি জঞ্জাল?
মাযহাব নিয়ে কাউকে দ্বিধা-সংকটে ভুগতে দেখেছেন? বরং ইংরেজ আ’মাল থেকে নফসপূজারীদের মেহনতের কারণে কিছু লোক দ্বিধা-সংকটে পড়ে গেছে।
আল্লহ হেদায়েত দিন
আহলে হদসের অনুসারি। উনি এক নতুন ফিৎনা বাজ।
একটা পুরাতন গল্প স্মরণ করিয়ে দিই। সে যুগে লজিং মাষ্টারের প্রথা ছিল। সব গ্রামে স্কুল কলেজ ছিল না। গ্রামের মেধাবী ছাত্ররা দূরে কোথাও পড়তে গেলে অবস্থা সম্পন্ন কারো বাসায় থাকত, খাওয়া দাওয়া করত। আর গৃহস্থের ছেলে-মেয়েদের পড়াত। কোন এক লজিং মাষ্টারের এক ছাত্র ছিল একটু কম মেধা সম্পন্ন। তাই ঐ মাষ্টার, তাকে একটা কমন কিছু শিখিয়ে দিত যাতে সব ব্যপারে একই উত্তর দিয়ে সারা যায়। এভাবেই কোনক্রমে পাশ করতে করতে শেষ পর্যন্ত মেট্রিক পরীক্ষা এল। সে যুগে এস এস সি পরীক্ষা ছিল না। সমমানের মেট্রিক পরীক্ষা হত। মাষ্টারের সামনে এখন এক নতুন চ্যালেন্জ। এতদিন সীমিত সিলেবাস ছিল, তাই কোনক্রমে পাশ করা গেছে। কিন্তু এখনতো বড় সিলেবাস, কিছু ক্রিয়েটিভিটি প্রয়োজন, যাতে কমন না পড়লেও কিছু না কিছু লিখে আসতে পারে। তো, তাকে বাংলা রচনা লেখা শিখাচ্ছে। ঐ ছেলে এতদিন কুমির রচনা মুখস্থ করেছিল, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাই লিখত। কুমির জলে থাকে, কুমিরের একটি লেজ আছে, চারটি পা আছে …………..। এখন মাষ্টার যাই লিখতে বলে সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কুমির রচনা লিখত। একদিন মাষ্টার তাকে বলল, কুমিরের মত করেই গরু রচনা লেখ। ছাত্র লিখল, গরু ঘাস খায়, গরুর পানির পিপাসা লাগে, তাই নদীতে যায়, নদীতে কুমির বাস করে, কুমিরের একটি লেজ আছে, চারটি পা আছে …………..। মাষ্টার দেখল এতো এক মুসিবত, কুমিরের ভুত কিভাবে ছাড়ানো যায়? অনেক চিন্তা করে এক কুমির মুক্ত এক রচনা লিখতে দিল। একটি বর্ষামুখর দিন। ছাত্র লিখল, সকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি, তাই নদীতে পানি বেড়ে গেছে, নদীতে কুমির বাস করে, কুমিরের একটি লেজ আছে, চারটি পা আছে …………..। মাষ্টার বেশ হতাশ হল। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এবার আরও চিন্তা করে লিখতে দিল পলাশীর প্রান্তর। ছাত্র লিখল,পলাশীর প্রান্তরের পরাজয় সিরাজ নিজেই ডেকে এনেছেন, তিনি মীর জাফর কে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করলেন, কিন্তু যেই তিনি মীর জাফর কে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করলেন অমনি যেন তিনি খাল কেটে কুমির ডেকে নিয়ে আসলেন। কুমিরের একটি লেজ আছে, চারটি পা আছে …………..।
আমাদের দেশের আহলে হদস বা আহলে নফস বা আউলা হাদিসের অবস্থা ঐ গুনধর ছাত্রের মত, যেন কোন ব্যপারের আলোচনার উপসংহার টানে সম্মানিত ইমামদের (রহি’মাহুমুল্লহ) মেহনতকে কোন যুক্তি প্রমাণ ছাড়াই অবজ্ঞা করার মাধ্যমে।
আল্লহ হেদায়েত দিন
যেহেতু ছবি হিসেবে তাবলীগী নেসাবের কথা এনেছেন তাই ওটার কথাই আগে বলছি…………..
আসুন আমরা আরো যারা এই শির্ক-বিদাতকে (আপনাদের ভাষায়) সমর্থন করেছেন তাদের একটি ছোট্ট তালিকা দেখি……….
১. শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন বায
[সৌদী আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার প্রাজ্ঞ পণ্ডিত, বিগত শতাব্দীর বরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব]
‘এই জামাতের মধ্যে অনেক উত্তম কাজ রয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ডে রয়েছে প্রচণ্ড উদ্যম-উদ্দীপনা। তাদের ধৈর্য-সবরও অতুলনীয়। তারা তাদের দাওয়াত ও মজলিসগুলোতে নামায, যিকির, ইলম অর্জন এবং এই পথে বের হওয়ার কথা বলে। এর দ্বারা নামাযে অমনোযোগী, শরাবখোর মুসলমানদের অনেক উপকার হয়, তারা সৎপথে ফিরে আসে। ইসলামের সহীহ আকীদা-বিশ্বাসে সমৃদ্ধ আলেমরা এই পথে এগিয়ে এসে তাদেরকে ইলম শিক্ষা ও হেদায়াতের পথে আনতে চেষ্টা করতে পারেন।’ (জামাআতুত তাবলিগ ৪৩১-৪৩৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত বিন বায রহ. সাক্ষাৎকার অবলম্বনে।
২. মুহাদ্দিসে আসর হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী রহ. (১৯০৮-১৯৭৭)
[বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস। তিরমিযি শরীফের অদ্বিতীয় ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মাআরিফুস সুনান’ -এর লেখক। জামেয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া বিননূরী টাউন করাচীর প্রতিষ্ঠাতা। করাচী থেকে প্রকাশিত মাসিক বাইয়িনাতের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক]
‘আল্লাহর কাছে কোনো বান্দার মাকবুলিয়াতের ধারণা পাওয়া যায় তার কাজের মাধ্যমে। যেমন মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস রহ. এর মাকবুলিয়াত তো তার এই কাজেই সুস্পষ্ট। সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একটি জামাত সবসময় সত্যের ওপর সু-প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’ (তিরমিযি, হাদীস ২১৯২)
আমার কাছে একথা নিশ্চিত প্রমাণিত, এই যুগে তাবলিগ জামাতই হাদীসে বর্ণিত সেই জামাত। পৃথিবীর এমন কোন ভূখণ্ড নেই, যেখানে এই মহৎ জামাতের কদম পড়েনি। মস্কো, ফিনল্যান্ড, স্পেন থেকে শুরু করে চীন ও জাপান পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া এই কাফেলার দাওয়াত আম্বিয়ায়ে কেরামের দাওয়াতের পদ্ধতির সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। লোকজন তাদের কাছে আসবে, দীন শিখবে- তাঁরা সেই অপেক্ষা করে না। বরং অলি-গলিতে গিয়ে, হাট-বাজারে পৌঁছে প্রত্যেককে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়। মুখের কথায়, আদর্শ চরিত্রের কারিশমা ও নিজেদের আমলের সৌন্দর্য দিয়ে তারা মানুষকে আহবান করে। নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ইসলামী আদর্শের একটি জীবন্ত নমুনা পেশ করে তারা দাওয়াত দেয়। তাই এর প্রভাবও হয় সুদূরপ্রসারী।’ (১৯৭৮ ইংরেজীর ‘বাইয়িনাত’ পত্রিকার জানুয়ারী-ফেব্র“য়ারির বিশেষ সংখ্যা ৩৭৮-৩৯১)
৩. শায়খ মুহাম্মদ ইবরাহীম তুয়াইজিরি (দা.বা.)
[সৌদী আরবের বিশিষ্ট আলেম, রাবেতা আলমে ইসলামী’র কিসমুল জালিয়াত’ -এর প্রধান সমন্বয়ক]
আমি ঈমান-ইয়াকিনের এই দাওয়াতের বিভিন্ন ইজতেমা দেখেছি। কাছে থেকে তাদের কার্যক্রম নিরীক্ষা করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ইলমের নূর এবং ঈমানের আলো এখান থেকেই অর্জিত হয়। আমি কুরআন এর আগে শত শত বার পড়েছি। তাফসীর অধ্যয়ন করেছি। কিন্তু দাওয়াতের এই ময়দানে আমি কুরআনের এমন অসংখ্য আয়াতের অর্থ বুঝেছি, যা এর পূর্বে অনুধাবন করতে পারিনি। ঈমান-আকীদা এবং আল্লাহর মুহাব্বত-প্রেম উদ্বুদ্ধকরণে এর চাইতে কার্যকরী কোনো দাওয়াত আমি দেখিনি। আল্লাহর কসম, সত্যের প্রতি এই আমার সরল অভিব্যক্তি।’ (লিসানুদ দাওয়াহ ১০-১১)
৪. আল্লামা সাইয়েদ সুলাইমান নাদভী রহ.
[ভারত উপমহাদেশে জন্ম নেয়া বিশিষ্ট ইসলামী দার্শনিক, ইতিহাসবিদ, ‘সিরাতুন্নবী’ ‘সীরাতে সাইয়েদা আয়েশা রা.’ সহ সীরাত ও ইতিহাস বিষয়ক অসংখ্য মৌলিক গ্রন্থ তাঁর অমর সৃষ্টি।]
‘হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস আওর উনকী দীনী দাওয়াতে’ কিতাবে ভুমিকা লিখতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘এই কিতাবের সামনের পৃষ্ঠাগুলোতে যে দায়ীয়ে হক ও দাওয়াতে হক্বের বর্ণনা আসছে, আমি স্বচক্ষে তার চেহারার প্রতিটি রূপ দেখেছি। সামনে এবং অগোচরের সব কার্যক্রম দেখেছি, শুনেছি। ইসলামে দাওয়াত ও তাবলিগের প্রথম ধারার উসূলের সাথে এই দাওয়াত সর্বাধিক নিকটবর্তী।
হিকমতের সাথে দাওয়াতে ও তাবলিগ আমর বিন মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ইসলামের মেরুদণ্ড। এর ওপরই ইসলামের ভিত্তি ও শক্তি, ইসলামের প্রসার ও সফলতা। আজকের এই যুগে তার প্রয়োজন খুব বেশি। এই সময়ে অমুসলিমকে মুসলমান বানানোর চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, মুসলমানকে মুসলমান বানানো। নামের মুসলিমকে কাজের মুসিলম এবং ‘কাওমী’ মুসলিমকে ‘দীনী’ মুসলিমে রূপান্তর করা। সত্য হলো, বর্তমান যুগের মুসলমানদের অবস্থা দেখে কুরআন পাকের এই আহবান- হে মুসলমানরা! মুসলমান হও।’ -এর আওয়াজ খুব জোরে শোরে বুলন্দ করতে হবে। শহরে-নগরে, পাড়ায়-মহল্লায়, জনে-জনে গিয়ে মুসলমানদেরকে সঠিক অর্থে মুসলমান বানানোর কাজ করতে হবে। আর এ পথে লক্ষ্য অর্জনে জান-মাল ও প্রিয় সম্পদকে কুরবান করে দিতে হবে। প্রত্যেক বাধা অতিক্রম করতে দুর্জেয় শক্তি সাহস অর্জন করতে হবে। জান-মাল দিয়ে, চেষ্টা-সাধনা দিয়ে সম্ভাব্য সকল উপায়ে এই পথে কদম বাড়াতে হবে। নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে সেই ‘জুনুনী কাইফিয়াত’ যা বিনে অতীতে না দুনিয়ার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, না দীনের।’
[ভূমিকা হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস আওর উনকী দীনী দাওয়াত : ২৫-২৬]
৫. ড. শায়খ মুহাম্মদ বকর ইসমাইল দা. বা.
[মিসরের বিশিষ্ট আলেম, মুহাক্কিক। জামেয়াতুল আযহারের ‘তাফসীর’ ও ‘শরীয়াহ’ ফ্যাকালিটির অধ্যাপক]
এই জামাতটি তাবলিগ জামাত নামে প্রসিদ্ধ। বাস্তব অর্থে নামের সাথে তাদের কাজের যথার্থ মিল রয়েছে। এই জামাতটিকে আমি কাছ থেকে দেখেছি। তাদের সাথে জামাতেও বের হয়েছি। তাদের মধ্যে আমি এমন কোন কিছুই খুঁজে পাইনি, যা কুরআন ও সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক। বরং আমি তাদের কাছ থেকে এমন অনেক কিছু শিখেছি, পেয়েছি, যা অন্য কোথাও পাইনি।’ (তাহকীকুল মাকাল : পৃ-৩২)
৬. শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ উছাইমিন রহ.
[সৌদী আরবের প্রখ্যাত আলেম। ফিকহ ও ফতোয়ায় পারদর্শী ব্যক্তিত্ব]
আমার মতে, এই জামাতে অনেক উত্তম আমল রয়েছে। এই দাওয়াতের প্রভাবও খুবই সুদূরপ্রসারী। এর চাইতে দ্রুত ও বেশি প্রভাব সৃষ্টিকারী কোনো জামাত নেই। কত কাফের তাদের দাওয়াত দ্বারা ঈমান এনেছে! কত গুনাহগার এর দ্বারা মুত্তাকী ও মুমিন বান্দায় পরিণত হয়েছে। এতো সকলের সামনে সুস্পষ্ট। আর ছয়টি গুণ যার কথা তাবলিগ জামাতের ভাইয়েরা বলে থাকে। নিঃসন্দেহে তা সুন্দর ও উত্তম গুণাবলী। তবে এই জামাতে ইলমের চর্চা আরো বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। (জামাআতুত তাবলিগ : ৪৩৫-৪৩৭)
৭. মাওলানা মানযুর নুমানী রহ.
[ভারতের প্রখ্যাত আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক। উর্দু মাসিক ‘আল-ফুরকান’ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ‘ইসলাম কিয়া হ্যায়’ ‘কুরআন আপছে কিয়া ক্যাহতা হ্যায়’ ইত্যাদি তার অমর রচনা, যেগুলো পৃথিবীর প্রায় পনেরোর অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।]
হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. এই শতাব্দীতে থেকেও প্রথম যুগের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারের একটি দু®প্রাপ্য মুক্তা। আর তার দাওয়াত হলো ইসলামের সেই প্রথম যুগের একটি হীরক খণ্ড। নির্ভেজাল দীনী মুজাহাদার এটি একটি নতুন যুগের সূচনা। যা ছিল দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। যারা হিম্মত করে এই কাজে এগিয়ে আসবে তাদের সৌভাগ্যের কোনো তুলনা নেই। শুধু প্রয়োজন হবে সময় আর আল্লাহর দেয়া ‘তাকতে’র। কিন্তু এই ‘সওদা’ তো এমন, তার কাছে ‘জান’ ও ‘সস্তা’।
(ভূমিকা- হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস আওর উনকী দীনী দাওয়াত)
৮. মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানবী রহ.
[পাকিস্তানের করাচীর জামেয়াতুল উলূম বিন্নুরী টাউনের সাবেক মুহাদ্দিস। বিশিষ্ট লেখক ও গ্রন্থ প্রণেতা]
‘কোনো আন্দোলনের হক-বাতিল বা সত্য-মিথ্যা নিরূপণের দুটি মৌলিক উপায়। ওই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতার নির্ভরযোগ্যতা আর তাঁর দাওয়াতের ফলাফলের বাস্তবতা। কুরআন মজীদে এই দুটি উপায়ের কথা বলা হয়েছে। তাবলিগ জামাতের এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ইলিয়াস সে যুগের অন্যতম আল্লাহর ওলী। আকাবিরদের নিকট তিনি ছিলেন আস্থাভাজন। তাঁর ইলম, আমল ও দৈনন্দিন জীবন-যাপন ছিল আল্লাহর রাসূল সা. সুন্নাহর ধাঁচে গড়া। আর তাঁর মাধ্যমে দাওয়াত ও তাবলিগের সংস্কারের যে কাজ আল্লাহ নিয়েছেন, তা ছিল সকল আকাবিরের নিকট পছন্দনীয়। আর তার সত্যতার ব্যাপারে সকলেই একমত। এগুলো এ কথার সুদৃঢ় আলামত যে, এই আন্দোলন ভালোই ভালো, আল্লাহর কাছেও মাকবুল।
(শাখছিয়াত ২/১০৮-১১০)
৯. হযরত মাওলানা জাস্টিস মুহাম্মাদ তকী উসমানী দা. বা.
[পাকিস্তানের দারুল উলূম করাচী-র শায়খুল হাদীস, পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের শরীয়া আপিল বেঞ্চের সাবেক বিচারপতি। ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে রয়েছে তার সরব পদচারণা। ইংরেজী, আরবী ও উর্দুতে কুরআন-হাদীসসহ সমসাময়িক বিষয়ের ওপর শতাধিক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচয়িতা।]
আজকে পৃথিবীতে এমন কোনো মুসলমান আছে কি যে, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস রহ. সম্পর্কে জানে না। আল্লাহ পাক তাবলিগ ও দীনের দাওয়াতের জযবাকে তার অন্তরে আগুনের মত জ্বালিয়ে দিয়েছেন। যেখানেই বসতেন, শুধু দীনের কথা বলতেন; দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতেন। (ইসলাহী খুতুবাত : ৮/৫২)
১০. হযরত মাওলানা আশেক ইলাহী বুলন্দশহরী রহ.
[মদীনা মুনাওওয়ারা অভিবাসী বিখ্যাত উপমহাদেশীয় আলেমে দীন। বহু গ্রন্থ প্রণেতা। দা‘য়ী ও মুবাল্লিগ]
হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস রহ. এর কবরকে আল্লাহ নূর দিয়ে ভরে দিন, যিনি বস্তি নিজামউদ্দীনে তাবলিগী কাজকে জামাতবদ্ধভাবে চালু করেছেন। এর ফলে কুরআন ও হাদীসে তাবলিগের হুকুমটিও পালিত হচ্ছে, অন্যদিকে এর ফলে সকলের দীনের একটি ‘আমলী নকশা’ও এসে গেছে। এই জামাতের মূল কাজই হলো, কিছু মানুষ একত্রে থাকবে, কেউ শিখবে আর কেউ শিখাবে। আর এভাবে সমাজ ও সামাজিক কর্মকাণ্ড বদদীনী মুক্ত হবে। (ছেহ্ বাতে : ৩)
১১. শায়খ সালেহ বিন আলী সুয়াইমান
[সৌদী সরকারের দাওয়াহ, ইরশাদ ইফতা ও ইসলামী গবেষণা বিভাগের বিশেষ প্রতিনিধি, বিশিষ্ট সৌদী আলেম]
এটি এমন একটি মুবারক জামাত, যারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা হলেও সকলের একই সুরত, একই স্বভাব, একই কথা আর একটিই লক্ষ্য। যেন তারা সকলেই একই বাবার অনেক সন্তান। অথবা আপনি বলতে পারেন, আল্লাহ তাআলা একটি হৃদয় সৃষ্টি করেছেন আর তা তাদের সকলের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। তাদের সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটিই, দীনকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা, মুসলমানদের সংশোধন করা আর অমুসলিমদেরকে আল্লাহর রাস্তা বাতলে দেয়া। এমন মানুষগুলোর ব্যাপারে শায়েখ আব্দুল মজীদ যিনদানী কতই না সুন্দর বলেছেন, তাঁরা তো আসমানের মাখলুক, যারা যমীনে বিচরণ করছে। (তাবলিগী জামাআত, পৃ-২৩)
এছাড়াও শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দুজন মনীষী লেখক তো তাবলিগ জামাতের ওপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। একজন হলেন সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী। তাঁর রচিত বই ‘হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস আওর উনকী দীনী দাওয়াত’। আরেকজন মাওলানা ওয়াহিদউদ্দীন খান। তার বইয়ের নাম ‘তাবলিগী তাহরীক’ উভয়টি উর্দু ভাষায় লেখা। তবে বাংলা অনুবাদও এখন বাজারে। চাইলে তা সংগ্রহ করতে পারেন।
আপনার যদি তাবলীগ জামাত সম্পর্কে কিছু বলার থাকে তবে এই পোষ্টগুলোতে বলুন………..
http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29521027
http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29521382
http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29522415
কেননা হাযারো মাযহাব-মতাদর্শের দ্বিধা-সংকটের ধ্বংসাত্মক, দুর্বিষহ জঞ্জালকে সযত্নে পাশ কাটিয়ে সত্যের দিশা পাওয়া এবং সত্য ও স্বচ্ছ দ্বীনের দিকে ফিরে আসা বিশুদ্ধ আক্বীদা অবলম্বন ব্যতীত অসম্ভব।
আপনার পুরো পোষ্ট এই কথাকে কেন্দ্র করে। তাই এই কথার ব্যাপারে পূর্বের উলামারা কি বলেছেন একটু দেখি …………
”—-কেননা হাযারো মাযহাব-মতাদর্শের —-
হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর পর শুধুমাত্র হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উক্ত চার মাযহাবেই (কুরআন ও হাদীসের বিশ্লেষন) তাক্বলীদ (অনুসরন) সীমাবদ্ধ হয়েছে। কেননা, চার মাযহাব ছাড়া অন্যান্য মুজতাহিদদের মাযহাব তেমন সংরক্ষিত হয়নি। ফলে আস্তে আস্তে সেসব মাযহাব বিলুপ্ত হয়ে পড়ে।
- আহসানুল ফতোয়া ১/৪৪১, তাফসীরে আহমদী- ২৯৭, আল ইনসাফ- ৫২।
মাযহাবের ব্যাপারে মুহাদ্দিসুল শিরোমনি,পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের হযরত শাহ ওলীউল্লাহ দেহলভী (র) বলেনঃ
“আর তার মধ্যে অনেক উপকারিতা বিদ্যমান(অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট মাযহাব মেনে চলার মধ্যে ) যা সুস্পষ্ট ।বিশেষত বর্তমান যুগে ,যখন শক্তি-সামর্থ ( নিজে সরাসরি কুরআন-হাদিস বুঝে অনুসরণ করার ) হ্রাস পেয়ে গেছে।আর প্রত্যেক মতামত সম্পন্ন ব্যক্তি স্বীয় মতামতকেই বড় মনে করে চলেছে।“(হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহঃ ১ম খন্ড-মিশরী ;১৩২ পৃষ্টা)
“মাযাহাব চতুষ্টয়কে গ্রহণ করার মধ্যে অতি আবশ্যই বিরাট ফায়দা রয়েছে ।“(ইক্বদুলজীদঃ৩৬)
তিনি আর বলেন ঃ
“হারামাইন শরীফাইনে অবস্থান কালে প্রিয় নবীজির (সাঃ) কাছ থেকে আমি (ইলহাম বা স্বপ্নের মাধ্যমে) তিনটি জিনিস অর্জন করেছি ; যা আমার ধ্যান-ধারণা বিপরীত ছিল।তম্মেধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল এই যে ,” যাতে আমি মুসলমানদের ওসীয়্যত করে যাই ;মাযহাব-চতুষ্টয়ের যে কোন একটিতে যেন তারা অন্তরভূক্ত হয় এবং আমি ও তা থেকে যেন বের না হই।“(ফুয়ূযুল-হারামাইন ঃ ৬৫ পৃষ্টা)
বিষয়- মিলাদুন্নবী, মাজহাব, লা-মাজহাবী ও ওলামায়ে দেওবন্দ
আল্লামা হাসান সাহেব
ইসলামিক রিচার্স সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা
ype of file: MP3 Format Sound
Size: 20.0 MB
Length: 1:27:30
http://www.mediafire.com/?838uq3093tnew8p
এটা শুনুন আশা করি কিছু ব্যাপার উপলব্ধিতে আসতে পারে।
সাহাবা ও ইমামগণকে গালি দেয়া নিষিদ্ধ
http://www.somewhereinblog.net/blog/asksumon0000/29550078