ফাজায়েলে আমাল : স্টাডি-১
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ বুধবার, মার্চ ৭, ২০১২ (৬:১২ পূর্বাহ্ণ)
আজ লিখবো এমন একটি গ্রন্থের ভুল সম্পর্কে যেটা মুসলিম বিশ্বে পবিত্র কুরআনের পরে সর্বাধিক পঠিত অবশ্য আরবদেশগুলোতে তা পড়া হয় না । সেটা হলো ফাজায়েলে আমাল । আমাদের দেশে মসজিদ আছে অথচ ফাজায়েলে আমাল নেই , এমন মসজিদ হয়তো খুব বেশী পাওয়া যাবে না । সুতরাং পড়ুন , বুঝুন এবং ভাবুন – আমরা কোন পথে ?
“আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) হুজুরেপাক (সাঃ) এর এরশাদ বর্ণনা করিয়াছেন যে , জিকিরে খফি যাহা ফেরেস্তারাও শুনিতে পায় না , তাহা সত্তর গুণ বর্ধিত হইয়া যায় । কেয়ামতের দিবস সমস্ত হিসাব নিকাশ যখন শেষ হইয়া যাইবে তখন আল্লাহ পাক বলিবেন , অমুক বান্দার কোন আমল বাঁকী রহিয়াছে কি ? তখন কেরামান কাতেবীন বলিবেন , আমাদের লিখিত সমস্ত আমলই আমরা পেশ করিয়াছি । তখন আল্লাহ তায়ালা বলিবেন , আমার নিকট তাহার এমন আমল রহিয়াছে যাহা তোমাদের জানা নাই । উহা হইল “জিকিরে খফি” অন্য রেওয়ায়েতে আছে , যেই জিকির ফেরেস্তাগণ শুনিতে পায় না উহা জিকিরে জলির উপর সত্তর গুণ বেশী ফজীলত রাখে” ।
কবি বলিলেন , অর্থাৎ “প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে এমন সব রহস্য রহিয়াছে যাহা ফেরেস্তাগণও জানিতে পারে না” (ফাজায়েলে আমাল , ফাজায়েলে জিকির অধ্যায় , ৩০৫পৃঃ)
লক্ষ্য করুন কবিতায় যে প্রেমিক-প্রেমিকার কথা বলা হয়েছে , তা আল্লাহর শানে ব্যবহৃত হইতে পারে না , কারন আল্লাহ পুরুষ নন এবং স্ত্রীও নন । তিনি প্রেমিক /প্রেমিকা হবেন কিভাবে ? আল্লাহর শানে স্ত্রী বা পুংলিঙ্গ সূচক শব্দ ব্যবহার কি অজ্ঞতা ও বাতিল আক্বীদার বহিঃপ্রকাশ নয় ? আল্লাহর সঙ্গে বান্দার মুহাব্বাত হতে পারে , কিন্তু ইশক হতে পারে না । কারন ইশকের মধ্যে পাগলামী আছে যা সৃষ্টি বা মাখলুকের সঙ্গে চলে । খালিক অর্থাৎ স্রষ্টার সাথে ইশক চলে না ।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা কিরামান কাতিবীন (সম্মানিত লেখকদ্বয়) সম্পর্কে কুরআন কারীমে বলেছেন :
“আর অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত রয়েছে । কিরামান কাতিবীন (সম্মানিত লেখকদ্বয়) ।‘তারা সব জানেন তোমরা যা করছো” । – সূরা ইনফিতার : ১০-১২ ।
আয়াতটি ভাল করে পড়ুন এবং বুঝুন । এখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে , বান্দা যে সব ‘আমল করে কিরামান কাতিবীন ফেরেস্তাদ্বয় তা সবই জানেন । আর লিখক সনদবিহীন হাদীস আর কবিতা বর্ণনার ভিত্তিতে বলেছেন ‘জিকিরে খফি’ নাকি ফেরেস্তারা জানে না ।
সূরা কাহাফ আয়াত ৪৯-এ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
“আর তারা বলবে , আফসোস (আমাদের জন্য দুর্ভগ্য) এটা কেমন আমলনামা এতে ছোট (খফি) বড় কোন গুনাহই লিপিবদ্ধ করা ব্যতীত ছেড়ে দেয়া হয়নি ? যা কিছু তারা করেছে , তার সব কিছুই তারা লিখিত আকারে উপস্থিত পাবে । আপনার রব , কারো উপর যুলুম করেন না (করবেন না )”
পড়ুন এবং বুঝুন – বান্দাগণ স্বীকার করবে যে , তাদের আমলনামা ছোট-বড় কিছুই বাদ পড়েনি , সবই তাতে আছে ।
আরও একটি আয়াত দেখুন । সূরা বনী-ইসরাঈল : ১৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন : পড় তোমার কিতাব (আমলনামা) । আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট ।
এই আয়াতের বর্ণনামতে যদি একজন ব্যক্তি তার আমলনামার ভিত্তিতেই নিজের হিসাব করতে পারে যে সে জান্নাতী নাকি জাহান্নামী । তাহলে বলুন একজনের কিছু নেক আমল যদি আমলনামার বাহিরে থেকে যায় তাহলে সে কি তার হিসাব গ্রহণের জন্য যথেষ্ট হবে ?
এখন আপনারাই বলুন , আমরা প্রমাণবিহীন লেখকের কথা বিশ্বাস করবো নাকি , আল্লাহর বাণী কুরআনের কথা বিশ্বাস করবো ?
এসব কথা লেখার আগে উল্লিখিত আয়াত গুলোর কথা একবারও কি লেখকের মন পড়েনি ?
কিতাবখানি প্রকাশের পর তাবলীগী জামায়াতের কোন আমীরের নজরে কি তা পড়েনি ?
তাহলে একমাত্র এই কিতাব তারা কেমন পড়া পড়েন ?
নাকি গোঁড়ামীর কারণে তা সংশোধন করতে পারেননি ।
আমি তাদের অনেকের সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি । আমার কাছাকাছি থাকা তাবলীগের আমীর – চিল্লা লাগানো আলেমদের সাথেও । তারা সত্যের কাছে হার মানলেও কেউ সংশোধনে আসেনি । একজন তো বলে ফেললেন আমি হাদীস অস্বীকার কারী । আমি বললাম , আচ্ছা বুঝলাম আমি হাদীস অস্বীকারকারী । তাহলে আপনি কি ? পরস্পর বিপরীত দুটি জিনিসের প্রতি একসাথে বিশ্বাস রাখা যায় না । যেখানে কুরআন এবং হাদীস পরস্পর বিপরীত কথা বলছে সেখানে দুটিই একসাথে সত্য হতে পারে না । আর এক্ষেত্রে কোরআনকে কোন মুমিন-মুসলিম বাদ দিতে পারে না । আর যে হাদীস কুরআনের বিপরীত কথা বলে সেটা অবশ্যই অবশ্যই নবীর হাদীস নয় । যে কারণে লেখক নিজেও এর কোন রেফারেন্স দিতে পারেন নি । আল্লাহপাক আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন এবং সত্যকে গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন । আমীন!
লেখকের মতে শুধু জিকিরে খফিই আমলনামা থেকে বাদ পড়ে না বরং আরো বড় নেকীও বাদ পড়ে যায় । যেমন ফাজায়েলে দরুদ অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন – “কেয়ামতের দিবস কোন মুমিন বান্দার নেকী যখন কম হইয়া যাইবে তখন হুজুরে পাক (সাঃ) আঙ্গুলের মাথা বরাবর একটা কাগজের টুকরা মীজানের পাল্লায় রাখিয়া দিবেন যার দরুন তাহার নেকীর পাল্লা ভারী হইয়া যাইবে । সেই মুমিন বান্দা বলিয়া উঠিবে আপনি কে ? আপনার সুরত কতই না সুন্দর । তিনি বলিবেন আমি হইলাম তোমার নবী এবং ইহা হইল আমার উপর পড়া তোমার দরুদ শরীফ । তোমার প্রয়োজনের সময় আমি উহা আদায় করিয়া দিলাম । – ফাজায়েলে দরুদ : ৩৪পৃঃ ।
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল আল্লাহর সাথে , আর এ ঘটনা ঘটেছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ।
আমরাতো জানি দরুদ সহ সকল ইবাদাতের সওয়াব আমলনামায় সংরক্ষিত থাকে । কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পঠিত দরুদ আমলনামায় পাওয়া গেল না তা পাওয়া গেল রাসূল (সাঃ) এর হাতে । এটা রাসূল (সাঃ) এর হাতে পৌঁছল কি করে ? আমলনামা তো ফেরেস্তা সংরক্ষন করেন , নবী-রাসূলরা নয় । লেখক এবং এর তালিমকারীরা (পাঠকারীরা) কি বলবেন ? এটাও কি জিকিরে খফি যা ফেরেস্তাদের কিতাব থেকে লিপিবদ্ধ হওয়া থেকে বাদ পড়ে গেল ? আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মুমিন হওয়ার পরও সে নবীকে চিনতে পারেনি । অথচ হাদীস থেকে জানা যায় মুমিনরা কবরেই সওয়াল-জওয়াবের সময় নবীকে চিনে ফেলবেন ।
অতএব আপনারাই বলুন , তাবলীগের তালিমী বৈঠকে বসে কুরআন এবং সহীহ হাদীস বিরোধী এই সমস্ত বর্ণনা শুনলে আমাদের ঈমান ভেজাল মুক্ত হবে নাকি ভেজাল যুক্ত ?
উপমহাদেশে যতগুলো দ্বীনি জামাআত আছে তন্মধ্যে তাবলীগ জামাতকে দেখা যায় নিষ্ঠার সাথে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করে যাচ্ছে। কোন রকম বিনিময় ছাড়া নিজের বিছানা নিয়ে, নিজের খেয়ে আল্লাহ ভুলা বান্দাদের আল্লাহর দিকে আহবান করে থাকে। মহান রবের ভাষায় এর থেকে উত্তম কথা ও কর্ম আর হতেই পারে না (৪১:৩৩)। তবে কাজটি যতই নিষ্ঠার সাথে হোক আল্লাহ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না যতক্ষণ তা তাওহীদ ও সুন্নাহ অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত পন্থায় না হবে।
তাবলীগী নিসাব তথা ‘ফাযায়েলে আমাল’, গ্রন্থ অধ্যয়ন ও বিশুদ্ধ আক্বীদার মানদণ্ডে যাচাই করে দেখা গেছে নিসাব গ্রন্থে অনেক কথা এমন আছে যা কুর’আন ও সহীহ সুন্নাহর সাথে সরাসরি সংঘর্ষশীল।
আর কুর’আন ও সুন্নাহর কথা কিছু থাকলেও তা অপব্যাখায় ভরপুর।
এছাড়া তাবলীগী নিসাবে অনেক শিরক ও বিদ’আত রয়েছে।
য’ঈফ হাদীস তো আছেই এমনকি মাওযু বা জাল হাদীসও রয়েছে।
আরো আছে বিভ্রান্ত সূফীদের মনগড়া বেদলীল কথা ও স্বপ্নের কিচ্ছা কাহিনী।
এগুলোকে আক্বীদা বিধ্বংসী বোমা বলা যায়, বরং তার থেকেও বিপদসংকুল। কারণ বোমা তো শুধু জীবন শেষ করে, আর তাবলীগী নিসাবের যে সব আক্বীদাহ বিশ্বাস তা জীবন ও আখেরাত, ইহকাল ও পরকাল উভয় বরবাদকারী। এই গ্রন্থে এসকল বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।
তাবলীগী জামাতের সহিত কোন ক্রোধ ও বিদ্বেষ থেকে নয় কিংবা তাদের প্রতি শত্রুতার মনোভাব নিয়েও এই লেখা নয়। বরং বিশ্বব্যাপী প্রচলিত এই জামাআতের সংশোধনই মূল উদ্দেশ্য। কারণ দ্বীন হলো কল্যাণ কামিতার নাম। এক মু’মিন অন্য মু’মিনের জন্য দর্পণস্বরূপ ।
অনেক অনেক শুকরিয়া লেখাটির জন্য।
কারো যদি তাবলীগ জামাত সম্পর্কে কিছু বলার থাকে তবে এই পোষ্টগুলোতে বলুন………..
http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29521027
http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29521382
http://www.somewhereinblog.net/blog/ogropothik/29522415
সময়ের অভাবে লিখতে পারছি না। আপনার এই পোষ্টের ব্যাপারে আরো কথা আছে।
তবে আপনার আগের পোষ্টে যে তাবলীগ জামাতের ব্যাপারে যে সকল মনিষির উক্তি দিয়েছিলাম তাদের ব্যাপারে কিছু বললেন না যে…………….
তারাও কি বিদাত ও শিরককে (আপনাদের ভাষায়) সাপোর্ট করেছেন ???
যতদিন মানুষ আকাবিরদের থেকে ইলম শিখবে ততদিন তারা সত্পথে পরিচালিত হবে আর যখন মানুষ আসাগির থেকে ইলম শিখবে তখন তারা গোমরা হয়ে যাবে ।
হাদিসটি হাফেজ ইবন আব্দুল বার ঈবন মাসউদ ও উমর রা থেকে বর্ণনা করেছেন দেখুন মুখ্তাসারু জামিউ বয়ানুল ইলম পৃ ৮৩ ।
বাহ! মুটকি সাহেব।এবার আহলে হদসের ব্যাপারে কিছু ফতোয়া দেন। দেহী আপনি যে কলস থেকে মুটকি পাস করছেন,তার গ্রহযোগ্যতা হয়নি।