আমরা হক্ব পাবো কিভাবে ?
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ রবিবার, মার্চ ১১, ২০১২ (৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
সমস্ত প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের জন্য যিনি আমাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দিয়ে শেষ নবীর উম্মাত ও একমাত্র তাঁরই অনুসারী হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন । অতঃপর সালাত ও সালাম পাঠ করছি নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) , তাঁর পরিবারবর্গ , তাঁর সাথীগণ ও কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তাঁর সকল অনুসারীগণের প্রতি ।
অতঃপর আমি ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যারা ইন্টারনেটের বাহারি চাকচিক্য ছেড়ে তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে ইসলামকে জানার ও বঝার লক্ষ্যে এখানে সমবেত হয়েছেন ।
আলোচনা শুরুর প্রথমেই আমি আপনাদেরকে অবহিত করছি যে আমাদের জ্ঞান হচ্ছে সীমিত আর আল্লাহর জ্ঞান হচ্ছে অসীম । অতএব আমাদেরকে আমাদের এ সীমিত জ্ঞান দিয়েই নির্ভেজাল ইসলামকে জানা ও বাঝুর চেষ্টা চালিয়ে সঠিক আমল ও আখলাক সম্পর্কে অবগত হতে হবে এবং সে মাফিক আমল করারও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে ।
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের এটিই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় কর্তব্য । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজে এমন সব রীতিনীতির প্রচলন ঘটেছে ও ঘটছে যেগুলো আমাদের পরস্পরকে এক কাতারে শামিল হতে বাধা প্রদান করছে । আমাদের সকলেই নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে দাবী করার পরেও কেন এই বিভিন্নতা ও বিচ্ছিন্নতা ? অথচ ইসলামই হচ্ছে আমাদের একমাত্র ধর্ম , সঠিক পথের দিক নির্দেশক হিসেবে আমাদের নাবীও একজন , আমরা একই কালিমা পাঠ করি এবং আমাদের কিবলা এক । অতএব কোন পথ অবলম্বন করলে আমরা এক পথে চলতে পারবো আমাদেরকে তা ভেবে দেখা দরকার ।
কোন মাসআলা নিয়ে কথা উঠলে আমরা কেউ বলছি : আমাদের মালেকি মাযহাবে এরুপ নেই , কেউ বলছি আমাদের হাম্বলি মাযহাবে এরুপ বলা হয়নি , আমাদের হানাফি মাযহাবে এরুপ আছে বলে কখনও শুনিনি ইত্যাদি ইত্যাদি । আসলে কি ইসলামের দাবী ছিল এটিই । একজন মুসলিমের দাবী কি এরুপ হওয়া উচিত ? তাহলে কি প্রশ্ন আসেনা যে , চার ইমাম বা অন্যান্য ইমামগণের আগমনের পূর্বের লোকেরা কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ? রসূল (সাঃ) এর অফাত হলো এগারো হিজরীতে আর প্রথম ইমাম – আবু হানীফা (রহঃ) – এর জন্ম হলো ৮০ হিজরীতে অতঃপর অন্যান্য ইমামগণ জন্ম গ্রহণ করেন । এ মধ্যবর্তি সময়ের লোকেরাও কি কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ? কোন মাযহাবের অনুসারী থাকলে সে মাযহাবটির নাম কি ছিল ? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি উত্তর দিবেন নিশ্চয় আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) – এর একমাত্র অনুসরণই ছিল তাদের মাযহাব , তাহলে সেই সময় অতীত হয়ে যাওয়ার পরে কিভাবে আমরা নিজেদেরকে রসূল (সাঃ) এর অনুসারী না বলে , আমি অমুক ইমামের অনুসারী আর সে অমুক ইমামের অনুসারী এরুপ কথা বলছি ? অথচ যারা সরাসরি রসূল (সাঃ) এর অনুসারী ছিলেন তাদের সম্পর্কেই তিনি বলে গেলেন : “আমার যুগের লোকেরা সর্বোত্তম , অতঃপর এর পরের যুগের লোকেরা , অতঃপর এর পরের যুগের লোকেরা” – সহীহ তিরমিযী হা/৩৮৫৯ । অতএব বিষয়টি কি ভেবে দেখার নয় ? অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত । তবে আমার এ কথার দ্বারা পরের যুগের আলেম ওলামা এবং ইমামদেরকে খাটো করে দেখা হচ্ছে এরুপ ভাববার কোনই সুযোগ নেই । যা এই আলোচনার শেষে স্পষ্ট হবে ইনশা-আল্লাহ ।
যদি কেউ বলেন : অবশ্যই আমাদের একটি নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসরণ করা জরুরী , তাহলে যিনি এ কথা বলবেন তাকে বলব : এখানে আজকে যারা সমবেত হয়েছি আমাদের মধ্য থেকে চারজন চার মাযহাবের অনুসারী হিসেবে যদি দাবী করি আর প্রত্যেকেই যদি বলি আমার মাযহাব সঠিক আমার মাযহাব সঠিক , আমার মাযহাবই হক্বের উপর আর আমার মাযহাবই হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত , তাহলে কি প্রত্যেকের দাবী অনুযায়ী হক্ব চারটি হয়ে যায় না ? এভাবে একটি মাসআলার ক্ষেত্রে চার মাযহাবের চারজন চার ধরণের সিদ্ধান্ত দিলে চারটি মতই কি হক্ব হিসেবে গণ্য হবে ? এভাবে ইসলাম কি চারটি হয়ে যাচ্ছে না ? আমরা ইসলামকে ভাগ করে ফেলছি না ? না ভাই তা হতে পারে না , বরং তার মতটিই হক্ব হিসেবে ধরা যাবে যার মতটি বিশুদ্ধ ও সহীহ দলীল নির্ভরশীল । প্রত্যেককেই প্রমাণ উপস্থিত করতে হবে । আর দলীলের ভিত্তিতে এক জনের মতই সঠিক হবে , আর অন্যদের সঠিক দলীলের মতকে মেনে নিতে হবে । আপনি যদি আপনার মাযহাবকে হক্ব মনে করেন , তাহলে আপনাকে আপনার মাযহাবের স্বপক্ষে দলীল উপস্থাপন করতে হবে । অন্যথায় আপনি কারো মুখে শুনে দলীল ছাড়া কথা বলবেন – তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না ।
হক্বপন্থি দল হবে একটিই । তাইতো রসূল (সাঃ) বলে গেছেন : “আমার উম্মাতের মধ্য থেকে একটি দলই হক্বের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে… ।” সহীহ মুসলিম হা/১৯২০ ; তিরমিযী হা/২২২৯ । তিনি আরো বলেছেন : “আমি আমার উম্মাতের পথভ্রষ্টকারী (বিদআত ও ফিসক-ফুযুরের দিকে আহ্বানকারী) ইমামদের (আলেমদের) ব্যাপারে ভয় করছি ।” আবু দাউদ হা/৪২৫২ ; জামেউস সাগীর হা/২৩১৬ । অতএব এ শ্রেনীর আলেম যে বর্তমান যুগে নেই তা বলা যাবে না , বরং আছে এটিই সত্য । এ কারণেই হক্বকে খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সর্বত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে ।
লক্ষ্য করুন ! আমাদের দুনিয়ার কোন কিছুর ক্ষেত্রে দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে , দলীল বা সাক্ষী ছাড়া কাউকে আমরা সত্যবাদী হিসেবে মানিনা , শুধু তাই নয় , দলীল যাচাই – বাছাইও করা হয় এবং সাক্ষীকে জেরা করার দ্বারা সত্য উদঘাটন করার চেষ্টা করা হয় । অতঃপর যার দলীল এবং সাক্ষী বেশী শক্তিশালী হিসেবে প্রমাণিত হয় তার পক্ষেই রায় প্রদাণ করা হয় । দুনিয়ার বিষয়ের ক্ষেত্রে যদি এরুপ অবস্থা হয় তাহলে ইসলামের ক্ষেত্রে কেন এবং কিভাবে দলীল ছাড়া কারো কথা গ্রহণযোগ্য হবে ? দুনিয়ার ব্যাপারে যদি পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সময় দলীল ও সাক্ষীর প্রয়োজন হয় – যার কারণে সাধারণত জান্নাতী এবং জাহান্নামী হওয়ার প্রসংগ আসে না , তাহলে কোন ইসলামী বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে তো দলীলের প্রয়োজন আরও বেশী হওয়ার কথা । কারণ সঠিক ইসলামের জ্ঞান লাভ করে তার উপর আমল করা আর না করার উপরেই জান্নাতী ও জাহান্নামী হওয়াটা নির্ভর করে , যা অত্যন্ত জটিল বিষয় । অতএব আমরা যদি কোন আমল করি তাহলে সে আমলের স্বপক্ষে সহীহ বিশুদ্ধ হাদীসের দলীল আছে কিনা তা আমদেরকে অবশ্যই জানতে হবে ।
বাজারে গেলে কোন ক্রেতাই পচাষড়া মাছ বা অন্য কোন পচা পণ্য খরিদ করেন না , বরং বাজরে ঘুরে ঘুরে দেখে ভাল পণ্যই খরিদ করে থাকেন । তাহলে ইসলামের মধ্যে যখন ভেজাল ঢুকেই গেছে আর ভেজাল ঢুকবে এরুপ ভবিষ্যৎ বাণীও করা হয়েছে তখন বেছে সঠিক আমল আক্বীদার উপর আমল করেই আমাদেরকে চলতে হবে এবং এটা আমাদের জন্য এক বিরাট পরীক্ষাও বটে ।
সহীহ বিশুদ্ধ হাদীস সন্ধনের কথা এ কারণে বলছি যে , আমাদের মুসলিম সমাজের মধ্যে অনৈসলামিক রীতিনীতির প্রবেশ ঘটেছে , ইসলাম বিরোধী চক্র ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান কর্তৃক ইসলাম ধর্মকে ভেজাল মিশ্রিত করার জন্য যুগে যুগে প্রচেষ্টা চলেছে এখনও চলছে , আর এর ফলেই সৃষ্টি হয়েছে জাল ও বানোয়াট হাদীসের । আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল লাভ করা ছাড়া তাঁর রসূল (সাঃ) কোন কথাই বলেননি , কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এ উম্মাতের মাঝে এমন বহু লোক আসবে দুনিয়ার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তাদের অনেকে অনেক কিছু নিজেদের পক্ষ থেকে বানিয়ে বলবে । তাই তিনি সতর্ক করে বলেন :
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করল সে যেন জাহান্নামে তার স্থান বানিয়ে নিল” – বুখারী ; মুসলিম । “যে ব্যক্তি আমার নিকট হতে এমন ধরনের হাদীস বর্ণনা করবে , ধারনা করা যাচ্ছে যে , সেটি মিথ্যা । সে ব্যক্তি মিথ্যুকদের একজন বা দুই মিথ্যুকের একজন” – মুসলিম ।
“আমার উপর মিথ্যারোপ করা তোমাদের পরস্পরের মাঝে মিথ্যারোপের মত নয় । যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করল সে তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল” – মুসলিম ।
“যে ব্যক্তি আমার উদ্ধৃতিতে এমন কথা বলল যা আমি বলিনি , সে তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল” – ইবনু হিব্বান ।
এ হাদীস গুলো প্রমাণ করছে যে , ইচ্ছাকৃতভাবে রসূল (সাঃ) এর উদ্ধৃতিতে কিছু বানিয়ে বলুক আর অনিচ্ছাকৃতভাবে বানিয়ে বলুক উভয় অবস্থায় তাঁর উদ্ধৃতিতে কিছু বানিয়ে বললে সে জাহান্নামী ।কারণ শেষের হাদীসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে এ কথা উল্লেখ করা হয়নি ।
এই হাদীস গুলো আরো প্রমাণ করছে যে , তাঁর উম্মাতের মধ্যে তাঁর উদ্ধৃতিতে জাল-যঈফ হাদীসের প্রসার ঘটবে এবং বাস্তবেও তা ঘটেছে এবং প্রত্যেক মাযহাবের বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ জাল ও যঈফের ব্যাপারে সতর্ক করে গ্রন্থ রচনাও করেছেন । যদি জাল ও যঈফ হাদীসের প্রসার এ উম্মাতের মধ্যে না ঘটতো তাহলে রসূল (সাঃ) এর উপরোক্ত বাণীগুলো অনর্থক বলেছেন বলে গণ্য হতো । অথচ আমরা সকলে জেনেছি তিনি ওহীর মাধ্যম ছাড়া কোন কথা বলেননি । আর ওহীর মাধ্যমে যা পাওয়া যায় তা অর্থহীন হতে পারে না । আর আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) থেকে কোন অর্থহীন বেকার কথা বের হতেও পারে না ।
রসূল (সাঃ) আরো বলেন : “অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করবে বিঘতে বিঘতে ও হাতে হাতে এমনকি তারা যদি দব নামক জন্তুর গর্তে প্রবেশ করে তাহলে সে ক্ষেত্রেও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে । আমরা বললাম : তারা কি ইয়াহুদ ও নাসারা হে আল্লাহর রসূল (সাঃ) ! তিনি বললেন : তারা ছাড়া আর কারা” – বুখারী হা/৭৩২০ ; মুসলিম হা/২৬৬৯ ।
অর্থাৎ তারা যেমন দ্বীনের মধ্যে নবাবিস্কার করে ধর্মীয় রীতিনীতিগুলো নিজেদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী বানিয়ে নিয়েছিল , মুসলিমগণের মাঝেও অনুরুপ কর্মকারীদের আবির্ভাব ঘটবে এবং এরাও এ ক্ষেত্রে তাদের হুবহু অনুসরণ করবে ।
অতএব আমাদেরকে বেছে বেছে , দেখেশুনে সহীহ দলীল নির্ভর আমল করতে হবে , তাহলেই আমরা মুত্তাকী হতে পারবো এবং আখেরাতে মুক্তি পাওয়ার আশা করতে পারবো । আমাদেরকে জানতে হবে আমরা যে আমল করছি , আমরা যে আক্বীদাহ পোষণ করছি সেগুলোর সমর্থনে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) এর বাণী হতে সহীহ দলীল রয়েছে কিনা ? কারণ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর রসূল (সাঃ) এর আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন :
“রসূল (সাঃ) তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর , নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা ।” – সূরা হাশর : ৭ ।
তিনি কোন ইমাম , আলেম , পীর মাশায়েখের আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি । হাঁ উক্ত ব্যক্তিগণ যদি আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) এর সহীহ দলীল-নির্ভর কথার দিকে দাওয়াত দেন , দিক নির্দেশনা দেন , চলার জন্য উৎসাহিত করেন তাহলে অবশ্যই তাদের মাধ্যমে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সাঃ) এর অনুসরণ করতে হবে । তবে সেই আলেম বা হুজুর আমাদেরকে যে কথা বলছেন বা শুনাচ্ছেন বা যা করতে বলছেন সেটি কি সঠিক কিনা তা আমাদেরকে জেনে নিতে হবে , যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে । কারণ আল্লাহ আমাদেরকে বিবেক দিয়েছেন ভাল-মন্দ দেখে ও জেনে-বুঝে নেয়ার জন্যই । উদাহরণ স্বরুপ আমরা মাছের বাজারে গেলে যেরুপ পচা মাছ ক্রয় করি না , বেছে যেটি ভাল মাছ সেটি ক্রয় করি , অনুরুপভাবে আমাদের ধর্মীয় আমলের ক্ষেত্রেও একই নীতি অবলম্বন করে সহীহ দলীল-নির্ভর আমলকেই বেছে নিয়ে সে মাফিক আমল করতে হবে । যাতে আমাদেরকে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হতে না হয় ।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আরো বলেছেন :
“অতএব তোমার পালনকর্তার কসম , তারা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে । অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে মনে কোন রকম সংকীর্ণতা রাখবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে ।” – সূরা নিসা : ৬৫ । এখানে দ্বন্দ্বের সময় রসূল (সাঃ) কতৃক প্রদানকৃত সমাধানকে যারা মেনে নিবে না এবং মেনে নিতে সংকোচবোধ করবে তারা ঈমানদার হতে পারবে না এ সাবধান বানী উচ্চারণ করা হয়েছে ।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আরো বলেছেন :
“তোমরা রসূল (সাঃ) এর আহ্বানকে তোমাদের এক অপরকে আহ্বানের মত গণ্য করো না । আল্লাহ তাদেরকে জানেন তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে কেটে পড়ে । অতএব যারা তাঁর (রসূলের) আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে , তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে , বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে ।” – সূরা নূর : ৬৩ ।
দুনিয়ার কোন আলেম বুজুর্গ এ মর্মে প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারবেন না যে আল্লাহর বাণী ও তাঁর রসূলের (সাঃ) সুন্নাতকে বাদ দিয়ে কোন ইমাম বা আলেমের আনুগত্য করা যায় বা জায়েজ আছে । এ কারণেই আমরা এখানে ইমামগেণের কতিপয় ঐতিহাসিক উক্তি আপনাদের সম্মুখে উপস্থাপন করছি :
ইমাম আবু হানীফা বলেন : “যখনই হাদীস সহীহ্ হিসেবে প্রমাণিত হবে তখনই সেটি আমার মাযহাব ” । (এ কথাটি প্রত্যেক ইমামই বলেছেন) ।
তিনি আরো বলেন : “আমি যখন এমন কোন কথা বলবো যা কিতাবুল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর হাদীস বিরোধী তখন তোমরা আমার কথাকে ত্যাগ করবে” ।
তার ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ সব কিছু লিখে রাখতেন , তাই তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন : “হে ইয়াকুব ( আবু ইউসুফ ) ! তুমি আমার থেকে যা কিছু শ্রবণ করো তার সব কিছুই লিখ না , কারণ কোন বিষয়ে আমি আজকে একটি মত প্রদান করি , আবার কালকে সে মতকে ত্যাগ করি । কালকে একটি মত প্রদান করি আবার কালকের পরের দিন সে মতকে ত্যাগ করি” ।
ইমাম শাফেঈ বলেন : “যে ব্যক্তির নিকট রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত স্পষ্ট হয়ে যাবে সে ব্যক্তির জন্য অন্য কোন ব্যক্তির কথার (মতের) কারণে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাতকে ত্যাগ করা বৈধ (হালাল) নয়” ।
তিনি আরো বলেন : “তোমরা যখন আমার কিতাবে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত বিরোধী কোন কিছু পাবে তখন তোমরা আমি যা বলেছি তা ত্যাগ করে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাতকে প্রচার করবে” ।
অন্য বর্ণনায় এসেছে , “যে কোন বিষয়ে মুহাদ্দেসীনদের নিকট যদি রাসূল (সাঃ) থেকে সহীহ্ হাদীস বর্ণিত হয় যা আমার কথা (মত) বিরোধী তাহলে আমি সে বিষয়ে যে কথা বলেছি সে কথা থেকে আমার জীবদ্দশায় এবং আমার মৃত্যুর পরেও প্রত্যাবর্তন করছি” ।
ইমাম মালেক বলেন : “আমি একজন মানুষ । সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে ভুল করি আবার সঠিকও করি । অতএব তোমরা আমার সিদ্ধান্তের দিকে দৃষ্টি দাও সেগুলোর যেটি কিতাবুল্লাহ ও নাবী (সাঃ) এর সুন্নাতের সাথে মিলে তোমরা সেটি গ্রহণ কর আর যেগুলো কিতাবুল্লাহ ও নাবী (সাঃ) এর সুন্নাতের সাথে না মিলবে সেগুলোকে বর্জন কর” ।
তিনি আরো বলেছেন : “সুন্নাত হচ্ছে নূহ (আঃ) এর কিস্তি , যে ব্যক্তি তাতে আরোহণ করবে সে রেহাই পাবে আর যে তার থেকে পশ্চাদপসরণ করবে সে ডুবে যাবে” ।
তিনি অন্যত্র বলেন : “নাবী (সাঃ) এর পরে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার কথা গ্রহণীয় আবার বর্জনীয় নয় । একমাত্র নাবী (সাঃ) এর কথা (সুন্নাত) বর্জনীয় নয়” ।
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল বলেন : “তুমি আমার অন্ধ অনুসরণ করো না , ইমাম মালেকের অন্ধ অনুসরণ করো না , ইমাম শাফে’ঈ , আওযা’ঈ ও সাওরীর অন্ধ অনুসরণ করো না বরং তুমি সেখান থেকেই গ্রহণ করো যেখান থেকে তারা গ্রহণ করেছে” ।
তিনি আরো বলেন : “ইমাম আওযা’ঈ , ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফা সহ সকলের মতামত গুলো ব্যক্তি সিদ্ধান্ত , সেগুলো আমার নিকট সমান (কারো মতের অন্যের উপর অগ্রাধিকার নেই) , দলীল রয়েছে শুধুমাত্র হাদীসের মধ্যে” ।
তিনি অন্যত্র বলেন : “যে ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর (সহীহ্) হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করবে সে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত” ।
উপরোক্ত বাণীগুলো শাইখ নাসিরউদ্দীন আলবানী তার বিখ্যাত গ্রন্থ “সিফাতু সালাতিন নাবী (সাঃ)” গ্রন্থে দলীল সহকারে উপস্থাপন করেছেন ।
মনে রাখতে হবে প্রতিটি মাযহাবের মধ্যেই হক্ব রয়েছে , কিন্তু প্রতিটি মাযহাবের সব কিছুই হক্ব নয় , বরং প্রতিটি মাযহাবের যে মাসআলাটিই সহীহ হাদীস ভিত্তিক সেটিই হক্ব আর আমাদের সেটিকেই গ্রহণ করতে হবে । এ অর্থে যারা ইমামগণের ভাষ্য অনুযায়ী সহীহ হাদীস ভিত্তিক আমল করবে তারা পূর্ণরুপে চার ইমামেরও প্রকৃত অনুসরণকারী এবং চার মাযহাবেরও অনুসারী । আর যারা দূর্বল হাদীসের উপরে ভিত্তি করে বলা মতকে গ্রহণ করবে তারা ইমামগণের প্রকৃত অনুসরণকারী হবেন না এবং তাদের মাযহাবেরও অনুসরণকারী হিসেবে গণ্য হবেন না । ইমামগণ তাদের ইনসাফ ভিত্তিক কথার দ্বারা তাদের থেকে সংঘটিত ভুল ত্রুটিগুলো থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন । কিন্তু আমরা যারা অন্ধভক্তি দেখিয়ে তাদের উদ্ধৃতিতে বর্ণিত দূর্বল কথাগুলোকেও গ্রহণ করে থাকি আমাদের উপায় কি হবে ? আমরা কি একটুখানি ভেবে দেখেছি । তাদের কারো কারো যুগে নবী (সাঃ) এর সব হাদীস সংকলিত হয়নি । ফলে তারা অনেক সময় ইজতিহাদ করে সমাধান দিয়ে যান , কিন্তু পরবর্তিতে দেখা যায় তাদের কিছু কিছু সমাধান সহীহ হাদীস বিরোধী হয়ে গেছে । ফলে তাদের উপরোক্ত বাণীগুলোর কারণে সহীহ হাদীসকে গ্রহণপূর্বক আমল করাই হচ্ছে ঈমানের প্রকৃত দাবী ।
একই বিষয়ে ডা. জাকির নায়েক এর বাংলা লেকচার শুনতে এই লিংকটিতে ক্লিক করুন THE UNITY OF MUSLIM UMMAH
আল্লাহ আমাদের পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীস অনুসরণের তাওফিক দান করুন এবং সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে এক কাতারে আসার তাওফিক দান করুন । আমীন !
বিষয় ভিত্তিক ইসলামিক প্রবন্ধ এবং সহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামিক প্রশ্নোত্তরের জন্য আমার আপনাদের স্বাগতম ।
তালিমুল ইসলাম
মনে রাখতে হবে প্রতিটি মাযহাবের মধ্যেই হক্ব রয়েছে , কিন্তু প্রতিটি মাযহাবের সব কিছুই হক্ব নয়
মাযহাবের কোনটি হক্ব নয়, সেটা বলবেন কি? কিছু উদাহরন দিলে ভালো হতো।
@ম্যালকম এক্স , আমার দেয়া লেকচার ইউনিটি অফ মুসলিম উম্মাহ শুনুন তাহলেই বুঝতে পারবেন ।
আরও একটি লেকচার শুনতে পারেন মাযহাব পরিচিতি
ধন্যবাদ ।
@ABU TASNEEM, আপনার অন্য যায়গায় ভিডিওতে এর উত্তর থাকতে পারে, তবে আপনি যেহেতু এখানে লেখা দিয়েছেন সেটার আলোচনা এখানেই হতে পারে। তাই আবার জানতে চাচ্ছি আপনার দৃষ্টিতে মাজহাবের কোনটি হক নয়?
@ম্যালকম এক্স, যা কিছু সহীহ হাদীসের সাথে মিলে তাই হক্ব আর যা কিছু সহীহ হাদীসের সাথে মিলে না তাই না-হক্ব । ভাই এখানে এর থেকে ভালো করে বলা সম্ভব না । হক্ব এখানে আছে না অন্যখানে আছে এটা বড় কথা নয় । সত্যের সবসময় তাকে খুঁজে বের করে তা সে যেখানেই থাকুক । আর আমি এই বিষয় গুলি নিয়েই টিপস দিয়ে বেড়াই । যেমন উপরে দুটি লিংক দিয়েছি । আপনি যদি সত্য সন্ধানী হন তাহলে সেখান থেকেই উত্তর নিয়ে নিন । অথবা আমার পরবর্তি পোস্টগুলিতে নজর রাখুন অনেক বিষয় আসবে ইনশা-আল্লাহ !
@ABU TASNEEM, তাহলে আপনার দৃষ্টিতে “হাসান” হাদিস গ্রহনযোগ্য নয়?
@ম্যালকম এক্স, হাসান হাদীস অবশ্যই গ্রহণযোগ্য । যখন সাধারণভাবে সহীহ হাদীস বলা হয় তখন এর দ্বারা গ্রহণযোগ্য সকল হাদীসকেই বুঝায় । মুতাওয়াতীর , সহীহ , হাসান , মাসহুর , আযীয , গারীব………। কোনটাই এর থেকে বাদ নয় । কিন্তু যখন একটি হাদীসের হুকুমের ক্ষেত্রে সহীহ বলা হয় তখন বুঝানো হয় এই হাদীসটার সনদ সহীহ ।
@ABU TASNEEM,আপনি যে হাদিসের এই ক্লাসিফিকেশন করলেন সেটা কি “কোরান” , “হাদিস” এর থেকে নেয়া নাকি আলেমদের মতামত?
@ABU TASNEEM, সত্য সন্ধানী, সত্যকে খোজা এই বিষয়গুলো আলোচনা করার জন্য আপনার কাছে প্রশ্ন করি নাই। আপাতত উপদেশ দিয়ে উত্তরগুলোকে দীর্ঘায়িত করবেন না। যে প্রশ্নটি করছি শুধু তার মধ্যে উত্তরকে সীমাবদ্ধ রাখলে খুশী হবো। ধন্যবাদ।
@ABU TASNEEM,আপনি পরিষ্কার বলেছেন “মনে রাখতে হবে প্রতিটি মাযহাবের মধ্যেই হক্ব রয়েছে , কিন্তু প্রতিটি মাযহাবের সব কিছুই হক্ব নয়” তাই তত্ত্ব কথায় না গিয়ে পরিষ্কার বলুন কোনটা না হক্ব? কথা প্যাচাবেন না।
আপনার কাছে আরও একটি প্রশ্ন, যে বইটির উল্লেখ করলেন আপনার দৃষ্টিতে কি এই বইটির সমস্ত বক্তব্য গ্রহনযোগ্য ও দলীলভিত্তিক?
@ম্যালকম এক্স, আমি গ্রহণযোগ্য বললেই আপনি মেনে নেবেন এর গ্যারান্টি আছে কি? তাছাড়া আমি যে বিষয় গুলো উল্লেখ করেছি তা উল্লেখিত বই ছাড়াও আরো অনেক বইতে আছে । আমার দেয়া লেকচার দুটি শুনুন সেখানেও এর উদ্ধৃতি পাবেন । ধন্যবাদ ।
@ABU TASNEEM,
আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। আমার প্রশ্ন হোলো নাসিরুদ্দিন আলবানীর এই বই এর সব লেখাই কি আপনার নিকট গ্রহনযোগ্য নাকি দুই একটি দুর্বল অথবা ভুল বক্তব্যও পেয়েছেন?
এই পোস্ট শুরু হয়েছে আলবানীর এক বইয়ের এ্যড দিয়ে। কিন্তু আলবানী এমন কিছু কাজ করেছেন যা ইমাম বুখারী রহ এর জামানায় কেউ করলে তাকে মিথ্যুক হিসেবে সাব্যস্ত করা হত এবং তার সকল রেওয়ায়েত জাল হিসেবে বাতিল করা হত।
আলবানী পুরুষ মহিলাদের নামাযে ব্যপারে মন্তব্য করতে গিয়ে এক হাদিসের রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন যা ঐ রেয়ায়েতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তিনি একি রাবীকে কখনও গ্রহণযোগ্য কখনও অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। একই ভাবে একই হাদিস কখনও
আপনার লেখা পড়ে খুব কৌতুক অনুভব হচ্ছে।
মাযহাব কাকে বলে ???
মাযহাব সম্পর্কে সলফে-সালেহীনদের কি মত ???
ইমামরা উক্ত উক্তিগুলো কাদের উদ্দেশ্য করে করেছেন ???