আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি……পর্ব – ১
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ মঙ্গলবার, মার্চ ১৩, ২০১২ (৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
আমাদের সমাজে বহু লোক আছে যারা এমন কিছু কর্ম বা আমল সওয়াবের উদ্দেশ্যে এবাদাত মনে করে উপকারে আসবে ভেবে করে থাকেন যেগুলোর সমর্থনে কোন সহীহ দলীল পাওয়া যায় না । কিন্তু তাদেরকে যখন এ সম্পর্কে বলা হয় , অবহিত করা হয় তখন তারা নিম্নোক্ত কথাগুলো বলে থাকেন । অতএব আমরা সহীহ হাদীস এবং সহীহ দলীলের অনুসরণ না করে বানোয়াট , খুবই দুর্বল ও দুর্বল হাদীস এবং দলীলহীন মতের অনুসরণ করার পেছনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে কারণ হিসাবে উল্লেখ করতে পারি :
(১) দলীল নাই তাতে কী হয়েছে নিষেধ তো করা হয়নি ।
(২) আরেক শ্রেনীর লোক আছেন যারা মনে করেন যে , হাদীস দুর্বল বা বানোয়াট হলে কি হবে হাদীস তো ।
(৩) আবার অনেকে আছেন যারা বলে থাকেন যে , আপনারা সব কিছুতেই বিদআত বিদআত করেন । আপনারা জানেন না যে , এগুলো বিদআতে হাসানাহ (ভালো বিদআত) ।
(৪) আরেক শ্রেনীর লোক আছেন যারা বলেন যে , তাহলে কি সব বড় বড় আলেমরা ভুল করে আসছেন ? বড় বড় সমজিদে এরুপ এরুপ কর্ম করা হচ্ছে , তারা কি ভুল করছেন ? তারা কি বুঝেন না ?
(৫) আবার এক শ্রেনীর আলেম আছেন যারা কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে ফতোয়া দেয়ার সময় বলে থাকেন যে , শরী’আতের মধ্যে এর সমর্থনে কিছু নেই । তবে সামাজিকতার খাতিরে অনেক এলাকায় করা হয়ে থাকে । ফলে সামাজিকতা রক্ষার্থে করা হলে করা যেতে পারে ! কিন্তু তিনি ভেবে দেখলেন না যে , সামাজিকতা রক্ষার্থে কোন আমল সওয়াবের উদ্দেশ্যে করা অথবা নিজে বা মৃত ব্যক্তি এর দ্বারা উপকৃত হবে এ বিশ্বাসে কিছু করাকেই শরী’আতের পরিভাষায় বিদ’আত বলা হয়েছে । যার পরিণতি জাহান্নাম ।
(৬) আবার এক শ্রেনীর লোক আছেন যারা দলীল ভিত্তিক সমাধান প্রদানকারী আলেমদের সম্পর্কে অন্যদেরকে বলেন : আরে উনি বা উনারা তো ওয়াহাবী , লা-মাযহাবী (মাযহাব মানে না) । তাদের অনুসরণ করা যাবে না । মানুষকে বিভ্রান্ত করার এবং সত্যকে গ্রহণ করা থেকে বিমুখ করার এটিও একটি হাতিয়ার । কোন সন্দেহ নেই ওয়াহাবী বলাটা এক ধরনের গালি । যা দ্বারা বুঝানো হয় যে , এরা নিকৃষ্ট আর খুবই খারাপ প্রকৃতির মানুষ আর এ কারণেই এদের অনুসরণ করা যাবে না ।
(৭) আরেক শ্রেনীর লোক এমনকি কিছু আলেমও আছেন যারা কোন প্রকারের দলীল প্রমাণের তোয়াক্বা না করে বলে থাকেন বা অযুহাত দাঁড় করিয়ে থাকেন যে , আপনি যা বলছেন সেটা তো আমাদের মাযহাব নয় । আমাদের মাযহাবে এরুপ নেই । অথচ এ শ্রেনীর লোকও একটু ভেবে দেখেন না যে , আমরা যার অন্ধ অনুসরণ করছি তিনি (ইমাম) নিজেও এরুপ অন্ধ অনুসরণ করেননি । বরং তিনি সহীহ দলীলের অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন ।
এ কথা যারা বলেন তাদের উদ্দেশ্যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হচ্ছে , তাহলে আপনারা মাযহাবের অনুসরণ করতে গিয়ে নবী (সাঃ) এর সহীহ হাদীস বা সুন্নাহ বিরোধী আমল করাকে জায়েয মনে করছেন ? আপনাদের নিকট মাযহাব হচ্ছে রাসূল (সাঃ) এর সহীহ হাদীসের চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ন ও বড় ! যার ফলে হাদীস ত্যাগ করা যাবে কিন্তু মাযহাব ত্যাগ করা যাবে না ! অর্থাৎ যে কোন নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসরণ করা যাবে যদিও সে মাযহাবের সিদ্ধান্ত সহীহ হাদীস বিরোধী হয় ! সবারই আল্লাহকে ভয় করা উচিত ।
এ শ্রেনীর লোক সাথে সাথে আরেকটি কথা বলে থাকেন : ইমামগণ জ্ঞান-গরীমায় সর্বাপেক্ষা বড় ছিলেন । এ কারণেই আমরা তাদের অনুসরণ করে থাকি । কিন্তু এরুপ কথার মধ্যে অতিভক্তির আলামত সুস্পষ্ট । যা সত্যকে উপেক্ষা করার একটি বুলি মাত্র । কারণ অতিভক্তি যেরুপ নিন্দনীয় , শরী’আতের দৃষ্টিতে সেরুপ দোষণীয়ও বটে ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন , “বল , হে কিতাবধারীগণ ! তোমরা তোমাদের দ্বীন সম্বদ্ধে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করো না , আর সেই সম্প্রদায়ের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করো না যারা ইতোপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে , অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে আর সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে ।” (সুরা মায়েদাঃ৭৭) ।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন , “ওহে কিতাবধারীগণ ! তোমরা তোমদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না , আর আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য ছাড়া কিছু বলো না , … ।” (সুরা নিসাঃ১৭১)
এছাড়া স্বীকার করি আর না করি এরুপ কথা বাতিল ও ভ্রান্ত আক্বীদার সাথে জড়িত হতে উৎসাহিত করে । যেমন , এ ধরনের ইমামের কি ভুল হতে পারে । মানে তিনি যেন নিষ্পাপ ছিলেন । নবীদের ন্যায় । অথচ নবী রাসূলগণ ছাড়া অন্য কেউ ভুলের উর্ধ্বে নন । এছাড়া আমরা কি ভেবে দেখেছি , ইমামদের কথাকে সহীহ হাদীস বিরোধী হলেও কোন দলীলের ভিত্তিতে অনুসরণীয় বলছি ? আর আমরা কি একটু ভেবে দেখেছি আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর ভাবার্থ সম্পর্কেঃ
“ বলে দাও , যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস , তবে আমার অনুসরণ করো , আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুণাহ সকল ক্ষমা করবেন , বস্তুতঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল , পরম দয়ালু ” । (সুরা আলে-ইমরানঃ৩১)।
পাঠকবৃন্দ ! মাযহাবের কোন সিদ্ধান্ত সহীহ হাদীস বা দলীল বিরোধী কিম্বা দলীলহীন হওয়া সত্ত্বেও তার অনুসরণ করলে আল্লাহ ভালবাসবেন এরুপ দলীল কারো নিকট আছে কি ? নিশ্চয় নেই , তাহলে কাকে খুশি করার জন্য আর কার ভালবাসা লাভের জন্য এরুপ অন্ধ ভক্তি !? অথচ এরুপ অন্ধভক্তির কারণেই যুগে যুগে সমাজে শির্ক চালু হয়েছে এবং বর্তমানেও চলছে ।
আবার সমাজের মধ্যে এক শ্রেনীর লোককে বলতে শোনা যায় এবং কিছু কিছু কিতাবের মধ্যে লেখা হয় : মাযহাব মানা হচ্ছে ফরজ । কিন্তু তারা চিন্তা করলেন না যে , রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যুর বহু পরে ইমামগণ জন্মগ্রহন করলেন যেমন ইমাম আবু হানীফা ৮০ হিজরীতে আর অন্যরা আরো পরে আর মাযহাব চালু হলো তাদেরও মৃত্যুর কয়েকশো বছর পরে । অতএব আল্লাহ তায়ালা কার মাধ্যমে মাযহাবকে ফরজ করলেন ?
যে সব আমল আর কর্মের স্বপক্ষে কোন দলীল নেই সেগুলোকে চালু রাখার জন্য এরুপ আরো কত বাহানা আর অযুহাত দাঁড় করানো হয়ে থাকে । আল্লাহ সবাইকে সকল প্রকার গোঁড়ামী হতে হেফাযত করুন ।
আমি বলছি না যে , আলেম ওলামা ও ইমামদের অনুসরণ করা যাবে না । অবশ্যই তাদের অনুসরণ করতে হবে তবে তাদের সে কথাগুলোরই অনুসরণ করতে হবে যেগুলো সহীহ হাদীসের সাথে মিলবে । আর তাদের সে কথাগুলো ত্যাগ করতে হবে যেগুলো সহীহ হাদীসের সাথে মিলবে না । মাযহাবের সে কথাই গ্রহণ করতে হবে যে কথা সহীহ দলীলের সাথে মিলবে আর যে কথা সহীহ দলীলের সাথে মিলবে না সে কথা ত্যাগ করে সহীহ হাদীসের এবং সহীহ দলীলের অনুসরণ করতে হবে । এরুপ করা হলেই ইমাম ও মাযহাবকে সত্যিকারে সম্মান করা হবে । অন্যথায় অতিভক্তির ফলে অজান্তে শিরকে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বেশী । আর তা আল্লাহর বিধান এবং তাঁর নির্দেশকে শর্তহীন ভাবে মেনে নিতে না পারার কারণেই ।
মুসলিম ভাই ও বোন ! উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন লোকের বচনগুলো ভিন্ন ভিন্ন হলেও এগুলোর ভাবার্থ এবং উদ্দেশ্য এক । কারণ ঈমানের দাবী অনুযায়ী এদের কোন দলই নিঃশর্তভাবে নবী (সাঃ) এর নির্ভেজাল সমাধানকে বা সুন্নাতকে মেনে নিতে সক্ষম হয়নি । যার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সুরা নিসার ৬৫ নং আয়াতে দিয়েছেন :
“কিন্তু না তোমার প্রতিপালকের শপথ ! তারা মুমিন হবে না , যে পর্যন্ত তারা তাদের বিবাদ বিসম্বাদের মীমাংসার ভার তোমার উপর ন্যাস্ত না করে , অতঃপর তোমার ফায়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুন্ঠাবোধ না থাকে , আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরুপে সমর্পণ করে ।” (সুরা নিসাঃ৬৫)
এ কারণেই এগুলোর উত্তর মিলে যাবে যদি একটু বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়া যায় তাহলেই । আল্লহ আপনাদের তৌফিক দান করুন । আমীন !
আলহামদুলিল্লাহ।অনেক অনেক শুকরিয়া, সুন্দর লেখাটির জন্য।
আমার কাছে মনে হয় , সবাই বুঝলেও কেউ কেউ আপনার সংগে একমত হবেন না বা মানবেন না।জন্মের পর থেকে যা শেখানো বা গ্রহণ করা হয় তা সহজে ত্যাগ করা অধিকাংশের ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পরে- সেখানে যতই যুক্তি বা সত্য থাক না কেন। তবে আল্লাহ তালা চাইলে সবই সম্ভব।
যাযাকআল্লাহ
@Mujibur Rahman, ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য । আমার জন্য দোয়া করবেন যেন সব সময় সত্যের উপর থাকতে পারি ।
যাই করেন,সীমানার মধ্যে থেকেন।কাদিয়ানীদের বা সৌদী বাদশাহদের পালিত আলেমদের পথে বা আল্লাহর পরিক্ষীত ওলীদের বিরুদ্ধে যেন অবস্হান না হয়। কারন-
আল্লাহর বন্ধুর সাথে শত্রুতায় আল্লাহর যু্দ্ধ ঘোষণা
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ .
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: যে ব্যক্তি আমার অলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। অবশেষে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার নিকট আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগি না কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি। [বুখারী: ৬৫০২]