লগইন রেজিস্ট্রেশন

আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি……পর্ব – ৩

লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ শনিবার, মার্চ ১৭, ২০১২ (৬:২৭ পূর্বাহ্ণ)

যারা ভাল মনে করে কুরআন এবং সহীহ হাদীসে নেই তা সত্ত্বেও কিছু আমল করে থাকেন । তারা এ আমল কেন করে থাকেন ? অবশ্যই এরুপ আমল করার উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু সওয়াব অর্জন করা যার মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে । কারণ এ উদ্দেশ্য না থাকলে সে কর্ম করাটাতো বেকার হয়ে যায় । আর বেকার ও অনর্থক কাজ তো কারো করার কথা নয় ।

কিন্তু এমন কোন কর্ম বা আমল আছে কি যে কর্মটি করলে জান্নাত লাভ করা যাবে অথবা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যাবে অথচ রাসূল (সাঃ) সে সম্পর্কে কিছু বলে জাননি অথবা তাঁর সাহাবীগণকে অবহিত করেননি ?

রাসূল (সাঃ) নিজেই এর উত্তর দিয়ে গেছেন :
তিনি বলেন : “আমি তোমাদেরকে এমন কোন কিছুর নির্দেশ দিতে ছাড়িনি যা তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তি করবে । আর আমি তোমাদেরকে এমন কোন কিছু থেকে নিষেধ করতেও ছাড়িনি যা তোমাদেরকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে এবং জাহান্নামের নিকটবর্তি করবে ।” হাজ্জাতুন নাবী: পৃ-১০৩ , আলবানী ।

অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : “সেই সত্ত্বার কসম যাঁর হাতে আমার প্রান ! আমি তোমাদেরকে এমন কোন কিছুর নির্দেশ দিতে ছাড়িনি যা তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তি করবে আর জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে । আবার আমি তোমাদেরকে এমন কোন কিছু থেকে নিষেধ করতেও ছাড়িনি যা তোমাদেরকে জাহান্নামের নিকটবর্তি করবে আর জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দিবে ।” যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ : ভূমিকা পৃ-১৪ : আলবানী ।

অন্য একটি হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা যা কিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন তার কোন কিছুই আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিতে ছাড়িনি । আর তিনি তোমাদের কে যা কিছু করা থেকে নিষেধ করেছেন তার কোন কিছু থেকেই তোমাদেরকে আমি নিষেধ করতে ছাড়িনি ।” সিলসিলাহ সহীহাহ : ১৮০৩ ।

অতএব কেউ যদি বলেন যে , কিছু ভাল কর্ম ছুটে গেছে যেগুলোকে ভাল কর্ম হিসেবে করতে পারবো , তাহলে মনে করতে হবে যে , রসূল (সাঃ) এর প্রতি তার ঈমান আনার ক্ষেত্রে এখনও ঘাটতি রয়ে গেছে আর না হয় সে ঈমানদারই হতে পারেনি ।

মুসলিম ভাই ও বোন ! যারা বিদআতে হাসানার কথা বলে থাকেন তাদের প্রধান দলীল হচ্ছে উমার (রাঃ) এর একটি উক্তি ।

উমার (রাঃ) কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে বলেন : “এটি কতই না সুন্দর বিদআত” । আসুন তার এ কথার প্রকৃত অর্থ বুঝার চেষ্টা করি । কারণ ভাল কাজ বলে শরীয়াতের মধ্যে সওয়াবের প্রত্যাশায় কিছু নতুনভাবে চালু করা নিন্দনীয় । আর হযরত উমার (রাঃ) নিশ্চয়ই সেই নিন্দনীয় কাজ করেননি । এখানে উল্লেখ্য যে , যে হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে যে , রাসূল (সাঃ) জামাআতের সাথে রমযানের রাতের সালাত করা অব্যাহত রাখেননি সে হাদীসেই বলা হয়েছে যে , তিনি ফরজ হয়ে যাওয়ার আশংকায় তা করা অব্যাহত রাখেননি । কিন্তু তার মৃত্যুর পরে ফরজ হয়ে যাওয়ার কোনই সুযোগ নেই কিম্বা ছিল না , সে কারণেই রাসূল (সাঃ) এর সেই জামাআতবদ্ধভাবে সালাত আদায়কে উমার (রাঃ) কতই না ভাল বিদআত বলে আবার নিয়মিতভাবে চালু করেছিলেন মাত্র । অতএব এ জামাআতবদ্ধতার দৃষ্টান্ত রাসূল (সাঃ) এর যু্গেই ছিল । আর এ কারণেই উমার (রাঃ) এর উক্ত বাণীতে উল্লেখিত বিদআত শব্দ দ্বারা সেই বিদআতকে বুঝানো হয়নি যার পরিণতি জাহান্নাম বলে রাসূল (সাঃ) উল্লেখ করেছেন ।

বিদআত তাই যা শরীআতের মধ্যে ইবাদাত হিসাবে (সওয়াবের উদ্দেশ্যে) করা হয় যার কোন দলীল নবী (সাঃ) থেকে পাওয়া যায় না । দুঃখের বিষয় সমাজের মধ্যে এমন আলেমও রয়েছেন যাদের কাছে বিদআতের কথা বলতে গেলে তারা এমন কথাও বলেন , তাহলে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা , বই ছাপানো ইত্যাদিও বিদআত । তাদের উদ্দেশ্যে বলছি , এগুলো বিদআত নয় এগুলো হচ্ছে কুরআন এবং হাদীস বুঝার মাধ্যম । কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এগুলোর উন্নতি সাধন হতেই থাকবে । যখন আলেম সাহেব খুৎবাহ দিচ্ছেন , তখন সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার আর শিরক-বিদআতকে পরিহার করার জন্য সুমধুর কন্ঠে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন । কিন্তু যখন তাকে বিদআতগুলো চিহ্নিত করে দেখানো হচ্ছে , তখন তিনি বিদআত কি আর কোনটিইবা বিদআত কিম্বা বিদআতের অর্থই বা কি তিনি সে সবের আর কিছুই জানেন না । ফলে তিনি তখন বনে যাচ্ছেন বিদআতের ধারক ও বাহক । আর তার মাঝের বিদআতকে চিহ্নিত করার কারণে যিনি সুন্নাতের অনুসারী তিনি হচ্ছেন তার দুশমন ।

উমার (রাঃ) কি রাসূল (সাঃ) এর এ হাদীসটি জানতেন না ? কিভাবে তিনি তার উক্ত বাক্যটি বললেন ? অবশ্যই এর উত্তরে সকলে একমত হবেন এটি আবার কি করে হয় যে , রাসূল (সাঃ) খুৎবার মধ্যে উক্ত হাদীসটি পাঠ করতেন আর উমার (রাঃ) তা জানতেন না বা তিনি তা শুনেননি ? এরুপ হতে পারে না । অর্থাৎ তিনি হাদীসটি জানতেন । তাহলে তিনি কি জেনে শুনেই তাঁর বিরোধীতা করলেন নাকি তার উক্তির ভিন্ন অর্থ রয়েছে । সে অর্থকে এড়িয়ে গিয়ে তারা বিদআতকে সাব্যস্ত করার জন্য তার উক্তিটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করছেন । উমার (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর কথার বিরোধীতা করবেন এটা অসম্ভব । কারণ তিনি আল্লাহ এবং তাঁর নবীর কথার আনুগত্যের ক্ষেত্রে খুবই কঠোর ছিলেন । যার প্রমাণ মিলে বহু ঘটনা থেকে । অতএব অবশ্যই তিনি তার এ বিদআত দ্বারা এমন অর্থ বুঝাতে চাননি যে অর্থ রাসূল (সাঃ) তাঁর বাণী দ্বারা বুঝিয়েছেন ।

পাঠক মন্ডলী লক্ষ্য করুন! উমার (রাঃ) লোকদেরকে এক ইমামের অধীনে তারাবীহ সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । রাসূল (সাঃ) এর যুগেও কিন্তু এ সালাত আদায় করা হয়েছে । শুধু তাই নয় তিনি তিন রাত জামাআতের সাথেও রমযান মাসে কিয়ামুল লাইলের সালাত আদায় করেছেন , চতুর্থ রাতে আর বের হননি । রাসূল (সাঃ) বের না হওয়ার কারণও দর্শিয়েছেন :

“আমি ভয় করছি যে , তা তোমাদের উপর ফরজ করে দেয়া হবে , অতঃপর তোমরা তা আদায় করতে অপারগ হয়ে যাবে ।” তিনি সাহাবাদেরকে নিয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা অব্যাহত না রাখার কারণ বর্ণনা করেছেন , যাতে তোমাদের উপর ফরজ করে দেয়া না হয় এ ভয়ে । অতএব যেহেতু উমার (রাঃ) দেখলেন এখন আর ফরজ হওয়ার কোন সুযোগ নেই । কারণ যার মাধ্যমে ফরজ হবে তিনি তো আর আমাদের মাঝে নেই । ফলে তিনি লোকদেরকে যখন দেখলেন যে , কেউ একাকি , কেউ আরেকজনকে সাথে নিয়ে , কেউ দু’জনকে সাথে নিয়ে কিম্বা কেউ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে সালাত আদায় করছে । তখন তিনি এ বিশৃংখল অবস্থার অবসান কল্পে এক ইমামের পিছনে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন । তিনি রাসূল (সাঃ) এর সেই জামায়াতবদ্ধভাবে রমযানের রাতের সালাত আদায় করাকে পুনরায় চালু করলেন । তিনি নতুন করে কোন ভিত্তিহীন ইবাদাত চালু করেননি । বরং তিনি প্রতিষ্ঠিত ইবাদাতকে সুশৃংখলভাবে আদায় করার ব্যবস্থা করেন । অতএব তার উক্তির উসিলায় ভাল বিদআত বলে শরীআতের মধ্যে কোন নতুন ইবাদাত চালু করার কোনই সুযোগ নেই ।

রমযান মাসের রাতের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করাকে রাসূল (সাঃ) সঙ্গত কারণে ছেড়ে দিয়েছিলেন । সে কারণ অবশিষ্ট না থাকা সত্ত্বেও আবু বকর (রাঃ) পুনরায় চালু করেননি । কিন্তু উমার (রাঃ) জামাআতের সাথে তা আদায় করার নির্দেশ দিয়ে বাহ্যিক অবস্থার দিকে লক্ষ্য করে এটিকে ভাল বিদআত বলে সম্বোধন করেন । দীর্ঘ দিন সম্মিলিত জামাআতের সাথে চালু না থাকাই যেন বাহ্যিকভাবে নযীরহীন কিছু চালু করা হয়েছে । সেই হেতু তিনি বিদআত বলে সম্বোধন করেন । পারিভাষিক অর্থের সাথে এর কোন সামঞ্জস্য নেই । এরুপ ব্যাখ্যা করা ছাড়া কোন অবস্থাতের বিদআত শব্দের মূল আভিধানিক এবং পারিভাষিক অর্থেক সাথে তাঁর থেকে উচ্চারণকৃত বিদআত শব্দের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না । কারণ এ সালাত নযীরহীন নয় , অথচ নতুনভাবে আবিস্কৃত নযীরহীন কিছুকেই আভিধানিক অর্থে বিদআত বলা হয় ।

আবার কোন কোন ব্যক্তি বিদআতে হাসানাহ (ভাল বিদআত) সাব্যস্ত করার জন্য রাসূল (সাঃ) এর এই হাদীস পেশ করে থাকেন : “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে ভাল সুন্নাত চালু করবে , সে তার ও তার উপর যে ব্যক্তি আমল করবে কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত তার সওয়াব পাবে” ।

চিন্তা করা প্রয়োজন ছিল রাসূল (সাঃ) কিন্তু বলেননি , যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে ভাল বিদআত চালু করবে… । বলেছেন ভাল সুন্নাত চালু করবে । কারণ বিদআত কখনও ভাল হতে পারে না । আর সুন্নাত সর্বদাই ভাল ।

এছাড়াও এ হাদীসটি যিনি বলেছেন , তিনিই কিন্তু সে হাদীসটিও বলেছেন । যাতে বলা হয়েছে যে ,“প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা” । একই ব্যক্তি আবার আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল (সাঃ) । তিনি কী এমন কথা বলতে পারেন , যা তারই অন্য কথাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে ? অবশ্যই না । আর রাসূল (সাঃ) এর কথায় দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে না ।

আবার এ হাদীসের ব্যাখ্যা এরুপও হতে পারে যে , সুন্নাত চালু করার অর্থ হচ্ছে , সেই সুন্নাতকে জীবিত করা , যেটি এক সময় সমাজে চালু ছিল কিন্তু বর্তমানে সেটির উপর আমল হচ্ছে না ।

এছাড়া আরেকটি উত্তর এই যে , হাদীসটি রাসূল (সাঃ) কেন বলেছিলেন সে দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন । তাতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে যে , বিদআতে হাসানাহ সাব্যস্ত করার জন্য কোন দিনই হাদীসটি দলীল হতে পারে না । রাসূল (সাঃ) এর নিকট মুযার গোত্রের কতিপয় লোক অত্যন্ত ক্ষুধার্থ ও বেহাল অবস্থায় আসলে তিনি সালাত আদায়ের পর খুৎবাহ দিয়ে সাদাকাহ করার দিকে ইঙ্গিত করলে , সাহাবাগণ যে যা পারলেন সামর্থানুযায়ী দিলেন । ইতিমধ্যে এক আনসারী ব্যক্তি তার হাতে রৌপ্যেক একটি ভারী পোটলা নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর সামনে রেখে দিলেন । তাতে রাসূল (সাঃ) আনন্দিত হয়ে বললেন : “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে ভাল সুন্নাত চালু করবে ……….।”

আর সবার জানা বিষয় যে , সাদাকা করতে উৎসাহিত করে এবং সাদাকা করার ফাযীলাত বর্ণনা করে বহু সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে । ফলে রাসূল (সাঃ) সে ব্যক্তির নতুন কিছু করাকে ভালো সুন্নাত আখ্যা দেননি । এমন কিছুকে ভালো সুন্নাত আখ্যা দিয়েছেন যার ভিত্তি (দলীল) রয়েছে ।

অতএব এ হাদীস দ্বারা শারীআতের মধ্যে নতুন কোন ইবাদাত চালু করার কথা বুঝানো হয়নি । কারণ শরীআতের মধ্যে প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা ।

আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিকভাবে কুরআন বুঝার তাওফীক এবং সহীহ হাদীসের জ্ঞান দান করুন এবং সহীহ হাদীসের আলোকে জীবন গড়ার মাধ্যমে পরস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করুন । যে সহীহ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে দলে দলে বিভক্ত মুসলিম উম্মাহ কখনও ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না ।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
১৫৩ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

১ টি মন্তব্য

  1. রাসূল (সাঃ) এর নিকট মুযার গোত্রের কতিপয় লোক অত্যন্ত ক্ষুধার্থ ও বেহাল অবস্থায় আসলে তিনি সালাত আদায়ের পর খুৎবাহ দিয়ে সাদাকাহ করার দিকে ইঙ্গিত করলে , সাহাবাগণ যে যা পারলেন সামর্থানুযায়ী দিলেন । ইতিমধ্যে এক আনসারী ব্যক্তি তার হাতে রৌপ্যেক একটি ভারী পোটলা নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর সামনে রেখে দিলেন । তাতে রাসূল (সাঃ) আনন্দিত হয়ে বললেন : “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে ভাল সুন্নাত চালু করবে ………

    এই হাদীসটির তথ্যসূত্র উল্লেখ করুন………