সাহরীতে মাইকে ডাকাডাকি , গজল গাওয়া , সাইরেন বন্ধ করুন : সুন্নতী আযান চালু করুন
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ শনিবার, জুলাই ২১, ২০১২ (৯:২৭ পূর্বাহ্ণ)
আমি বিদআতের অর্থ এবং তার কুপ্রভাব লেখায় বলেছিলাম বিদ’আত সহীহ সুন্নাহকে বিতাড়িত করে তার স্থলাভিষিক্ত হয় । আজ তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ নিয়ে কথা বলব । আর সেটি এই রামাদ্বান সংক্রান্ত ।
আমরা আমাদের মসজিদ গুলোতে দেখি রামাদ্বান মাসে সাহরী খাওয়ার জন্য মসজিদের মাইকে ডাকাডাকি করা হয় । কোথাও বা মুওয়াজ্জিন সাহেবরা সুন্দর সুরে গজল পরিবেশন করেন যেন ঘুমন্ত ব্যক্তিরা উঠে সাহরী খেতে পারে । এ প্রয়োজনীয়তা শুধু আজকের নয় । নাবী (সাঃ) এর সময়ও ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করার জন্য , সালাতরত ব্যক্তিকে সালাত শেষ করে সাহরী খাওয়ার জন্য সতর্ক করা হত । এবং সেটা আযানের মাধ্যমে । অন্য কোন ভাবে নয় । তাই আসুন আমরা এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো দেখি এবং একটি হারানো সুন্নাতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করি ।
সাহরীর আযান : একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত (হারানো সুন্নাত)
সহীহুল বুখারী
১২০০ . পরিচ্ছেদ নাবী (সাঃ) এর বাণী : বিলালের আযান যেন তোমাদের সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে ।
হাদীস নং : ১৭৯৭ : আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন , বিলাল (রাঃ) রাতে আযান দিতেন । তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন : ইবনে উম্মে মাকতুম আযান না দেয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার কর । কেননা ফজর না হওয়া পর্যন্ত সে আযান দেয় না । কাসিম (রঃ) বলেন , এদের উভয়ের আযানের মাঝে এতটুকু ব্যবধান ছিল যে , একজন নামতেন এবং অন্যজন উঠতেন । – সহীহ বুখারী , ই.ফা. ৩য় খন্ড ।
এখানে কাসিম (রঃ) এর উক্তির ব্যাখ্যা কি তা পরিস্কার নয় । কারণ আমরা সহীহ মুসলিমের হাদীসে দেখব বিলাল (রাঃ) এর আযানের উদ্দেশ্য ছিল ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগানো এবং সালাতরত ব্যক্তিকে সাহরী খাওয়ার জন্য সতর্ক করা ।
সহীহ মুসলিম
হাদীস নং : ২৪০৩ : আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসূলু্ল্লাহ (সাঃ) বলেন , বিলাল রাত থাকতে আযান দেয় । তাই তোমরা ইবনে উম্মে মাকতুমের আযান শুনতে না পাওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে থাকো ।
হাদীস নং : ২৪০৪ : আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন , আমি রাসূলু্ল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি , বিলাল রাত থাকতে আযান দেয় । তাই তোমরা ইবনে উম্মে মাকতুমের আযান শুনতে না পাওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে থাকো ।
হাদীস নং : ২৪০৫ : ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেছেন , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দুজন মুওয়াজ্জিন ছিল যথা , বিলাল ও অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাকতুম । এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , বিলাল রাত থাকতে আযান দেয় তাই তোমরা ইবনে উম্মে মাকতুমের আযান না শুনা পর্যন্ত পানাহার করতে থাকো (অর্থাৎ পানাহার করতে পারো) । রাবী বলেছেন , তাদের উভয়ের আযানের মধ্যে মাত্র এতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল যে , একজন (আযান দিয়ে মিনার থেকে সিড়ি বেয়ে) নামতেন ও অপর জন (সিড়ি বেয়ে) উঠতেন ।
এখানেও রাবীর পরবর্তী উক্তির ব্যাখ্যা পরিস্কার নয় । আমরা পরবর্তী হাদীসে প্রথম আযানের উদ্দেশ্য জানতে পারব ।
হাদীস নং : ২৪০৬ : আয়েশা (রাঃ) থেকে এ সূত্রে উপরের হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।
হাদীস নং : ২৪০৭ : এ সূত্রের উপরের হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।
হাদীস নং : ২৪০৮ : ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেছেন , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , “তোমাদের কেউ যেন বিলাল (রাঃ) এর আযান শুনে সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না থাকে , কারণ বিলাল (রাঃ) রাত থাকতে আযান দেয় ; যাতে সালাতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি ফিরে ও নিদ্রারত ব্যক্তি জেগে সাহরী খেতে পারে । এরপর তিনি তার হাত উপরের দিকে তুলে (ইঙ্গিতে) বললেন , আকাশের অবস্থা এরকম হলে তাকে ভোর বলা যায় না , (অর্থাৎ যে আলোক রশ্মি বল্লমের মত উপরের দিকে উঠে তাকে সুবহে সাদিক বা ভোর বলা যায় না) বরং যখন এরুপ হয় তখনই প্রকৃত ভোর , একথা বলে তিনি তার আঙুলগুলো খুলে দিলেন । (অর্থাৎ আলোক রশ্মি চারিদিকে ছড়িয়ে না পড়লে প্রকৃত ভোর বলা যায় না) ।
হাদীস নং : ২৪১০ : সুলাইমানুত তাইমী থেকে এ সনদে উল্লিখিত বর্ণনার অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে এবং মুতামির তার বর্ণনায় নাবী (সাঃ) এর বাণী “তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঘুমন্ত তাদেরকে সজাগ করা এবং যারা তাহাজ্জুদ নামাজে লিপ্ত তাদের বিরত করাই বিলালের আযানের উদ্দেশ্য” এর মাধ্যমে সমাপ্ত করেছেন এবং বর্ণনাকারী ইসহাক বলেন , রাবী জারীর তার হাদীসে বলেছেন , এরুপ অর্থাৎ উপরের দিক থেকে লম্বা আলোক রশ্মির প্রকাশ প্রকৃত ভোর নয় বরং এভাবে হলে অর্থাৎ চওড়া ভাবে আলোক রশ্মি ছড়িয়ে পড়লে তা-ই প্রকৃত ভোর বা সুবলে সাদিক ।
হাদীস নং : ২৪১১ : সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রাঃ) বলেছেন , আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি , তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যেন বিলাল (রাঃ) এর আযান শুনে ভ্রান্তি বশতঃ সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না থাকে । আর এ সাদা রেখা (যা বল্লমের মত লম্বালম্বিভাবে প্রকাশ পায়) প্রকৃত ভোর নয় বরং যে আলোক রেখা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তা-ই প্রকৃত ভোর ।
হাদীস নং : ২৪১৩ : সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : সাহরী খাওয়ার ব্যাপারে বিলালের আযান অথবা দিক চক্রবালের লম্বমান সাদা রেখা যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে । সাদা রেখা এভাবে ছড়িয়ে পড়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার করতে পারো । অধঃস্তন রাবী হাম্মাদ এর বর্ণনা দিতে গিয়ে দুই হাতের ইশারায় দিক চক্রবালে (উদ্ভাসিত আলোক রশ্মির) ব্যাখ্যা দিলেন ।
হাদীস নং : ২৪১৪ : সাওয়াদাহ থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন , আমি সামুরাহ ইবনে জুনদুবকে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলতে শুনেছি , নাবী (সাঃ) বলেন , বিলালের আযান এবং এই শুভ্রতা (সুবহে কাযিব) যেন তোমাদের ধোকায় না ফেলে । ফজর শুরু হওয়ার মুহুর্ত পর্যন্ত (তোমরা পানাহার করতে পার) ।অথবা তিনি বলেছেন , ফজর প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত ।
হাদীস নং : ২৪১৪ (ক) : সাওয়াদাহ ইবনে হানযালা বলেন , আমি সামুরাহ ইবনে জুনদুবকে বলতে শুনেছি , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ………উপরের হাদীসের অনুরুপ ।
(সহীহ মুসলিমের হাদীসগুলো নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার প্রকাশিত সহীহ মুসলিম এর ৪র্থ খন্ড থেকে)
সুনান আত-তিরমিযী
হাদীস নং : ৭০৬ : সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে , তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : তোমাদেরকে যেন সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে বিলালের আযান এবং দিগন্তবৃত্তে প্রকাশিত ভোরের আলো (সুবহে কাযিব) , দিগন্তবৃত্তে উদ্ভাশিত বিস্তৃত আলো (সুবহে সাদিক) ব্যতীত ।
- সহীহ ।
- আবু ঈসা (রঃ) এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন ।
(সহীহ আত-তিরমিযী , হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী , ২য় খন্ড)
সুনানে আবু দাউদ
২১০ . অনুচ্ছেদ : সাহরীর সময়
হাদীস নং : ২৩৩৮ : আব্দুল্লাহ ইবনে সাওয়াদা আল কুরাইশী তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন , আমি সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রাঃ) কে খুৎবা দেওয়ার সময় বলতে শুনেছি , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন : বিলালের আযান এবং পূর্ব আকাশের এরুপ শুভ্র আলো যতক্ষণ না তা পূর্ব দিগন্তে প্রসারিত না হয় , যেন তোমাদেরকে সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে ।
হাদীস নং : ২৩৩৮ : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন : বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে সাহরী খাওয়া হতে বিরত না রাখে , কেননা সে আযান দেয় অথবা আহবান করে , যারা তাহাজ্জুদ সালাতে রত থাকে , তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য এবং তোমাদের মধ্যে যারা নিদ্রিত থাকে তাদের জাগাবার জন্য । আর ততক্ষণ ফজর হয় না , যতক্ষণ না এরুপ হয় – এ বলে ইয়াহইয়া তার হাতের তালুকে মুষ্টিবদ্ধ করে প্রসারিত করেন , পরে তার হাতের তালু ও আঙ্গুলি প্রসারিত করে দেন ।
(সুনানে আবু দাউদ , ই.ফা. ৩য় খন্ড)
সুনান ইবনে মাজাহ
হাদীস নং : ১৬৯৬ : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে । কেননা , তা তোমাদের নিদ্রিত ব্যক্তিকে জাগাবার জন্য এবং তোমাদের সালাত আদায় কারীকে সালাতে রত হওয়ার জন্য আযান দিয়ে থাকে । আর এ সময়কে ফজর বলা হয় না ; বরং উর্ধাকাশে আড়াআড়িভাবে সাদা আভা প্রকাশ পাওয়াই ফজর ।
(সুনান ইবনে মাজাহ , ই.ফা. ২য় খন্ড)
উক্ত হাদীস গুলি প্রমাণ করে যে , রামাদ্বান মাসে সাহারী খাবার উদ্দেশ্যে সাধারণ জনগণকে জাগাবার জন্য ফজরের আযানের আগে সাহারীর আযান দেয়া উচিত । সিয়াম পালনকারীদের জাগাবার জন্য ঢোল বাজানো , মাইকে চেঁচানো প্রভৃতি অন্য কোন উপায় অবলম্বন করা এসব মনগড়া কাজ । তাই নাবী (সাঃ) এর সুন্নাত অনুসারে সাহারীর জন্য আযান দেয়া উচিত । আজও তাই পবিত্র কাবাতে এবং মাদীনার মাসজিদে নাবাবীতে বারমাসই তাহাজ্জুদ এবং সাহারীর আযান দেয়া হয় । তাই আসুন আমরা এই লেখার একটি কপি প্রিন্ট করে আমাদের মসজিদ গুলিতে লাগিয়ে দিই । যেন সকলে সচেতন হতে পারে এবং মসজিদের ইমাম , মুওয়াজ্জিন , কমিটিদেরকে বলি যেন তারা এই হারানো সুন্নাতকে পুনঃপ্রতিষ্টার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দোগ গ্রহণ করেন । আল্লাহ পাক আমাদের এই উদ্দোগকে কবুল করুন । আমীন!
ধন্যবাদ।