“সালাতুত্ তাসবীহ” নামায
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১২ (৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
অধিক তাসবীহ পাঠের কারনে এই সালাতকে “সালাতুত্ তাসবীহ” বলা হয়। এটি ঐচছিক সালাত হিসাবে গণ্য। তবে এ বিষয়ে কোন সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি।
“সালাতুত্ তসবীহ” নামায সম্পর্কে একটি হাদীস-এর আলোকে এই নামাযের বিবরণ উপস্থাপন করলামঃ
আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, বায়হাকী ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে এবং তিরমিজি আবু রাফে থেকে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) কর্তৃক তার চাচা আব্বাস(রাঃ)-কে চার রাকাত অদ্ভুত ধরনের নামাযের কথা উল্লেখ করেছেন| এই নামায “সালাতুত্ তাসবীহ” হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে| এই নামায সংক্রান্ত হাদীসটি নিম্নরূপঃ
ইবনে আব্বাস(রাঃ) বলেন, একদিন নবী করিম(সাঃ) আমার পিতা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুততালিবকে বললেনঃ হে আব্বাস! হে আমার চাচা! আমি কী আপনাকে প্রদান করব না? আমি কী আপনাকে দেব না? আমি কী আপনাকে সংবাদ জানাব না? আমি কী আপনাকে শিখিয়ে দেব না দশটি কাজ? আপনি যদি তা করেন, তবে আল্লাহ আপনার অপরাধ মাফ করে দিবেন| আগের, পরের, নতুন-পুরাতন, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত, ছোট বড় এবং গোপন ও প্রকাশ্য সব অপরাধ আল্লাহ মাফ করে দিবেন| সেই কাজ হলঃ আপনি চার রাকাত নামায পড়বেন| যথারীতি প্রথমে নিয়ত করে তাআঊজ, তসমিয়াহ, সানা পাঠ করে প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং আর একটি সূরা পড়বেন| এইভাবে- প্রথম রাকাতের কিরাত শেষ করার পর দাড়ান অবস্থাতেই রুকুতে যাবার আগে পনর বার এই বাক্যটি পড়বেনঃ ‘সুবহনআল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর’| অতঃপর রুকুতে যাবেন| রুকুতে গিয়ে এই বাক্যটি দশবার পড়বেন| রুকু থেকে দাড়িয়ে সোজা হয়ে দশবার এই বাক্যটি পড়বেন| তারপর সিজদহ-তে যাবেন| সিজদাহতে গিয়ে দশবার এই বাক্যটি দশবার পড়বেন| তারপর সিজদাহ থেকে মাঠ উঠিয়ে বসে দশবার এই বাক্যটি পড়বেন এবং দিতিয় সিজদাহতে যাবেন এবং এই সিজদাহতে গিয়েও বাক্যটি দশবার পড়বেন| এইভাবে এক রাকাতে বাক্যটি মোট পচাত্তর বার পাঠ করা হল| এই প্রথম রাকাতের মত একই নিয়মে চার রাকাত নামায পড়বেন| আপনার পক্ষে সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে একবার পড়বেন| তাও সম্ভব না হলে প্রতি মাসে একবার পড়বেন| সেটাও সম্ভব না হলে বছরে একবার পড়বেন| তাও সম্ভব না হলে জীবনে একবার হলেও পড়বেন|
হাকিম ইবনে খুজাইমা ও দারু কুতনি এটিকে সহীহ হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন| তবে ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম আল জাওজী এটাকে ‘মউদু’(মনগড়া) হাদীস বলেছেন|
সহীহ আতা-তিরমিজিঃ অনুচ্ছেদ-১৯; “সালাতুত্ তসবীহ” – থেকে সংগৃহীত হাদীসটি নিম্নরূপঃ আনাস ইবনু মালিক(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, উম্মে সুলাইম(রাঃ) একদিন সকালবেলা রাসূল(সাঃ)এর নিকট আসলেন| তিনি বললেন, আমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দিন যা আমি নামাজে পাঠ করব| তিনি বললেনঃ দশবার আল্লাহু আকবর, দশবার সুবহানআল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ পাঠ কর| অতপর তোমার যা খুশি তাই চাও| তিনি(আল্লাহ’তা’আলা) বলবেনঃ হ্যা হ্যা (কবুল করলাম)| ***সনদ সহীহ|
এই অনুচ্ছেদে ইবনু আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনু আম’র, ফজল ইবনু আব্বাস ও আবু রাফি(রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে| আবু ঈসা বলেন, আনাসের হাদীসটি হাসান গারিব|
“সালাতুত্ তসবীহ” সম্পর্কে রাসূল(সাঃ) হতে আরও কয়েকটি হাদীস বর্ণিত আছে। কিন্তু ঐগুলো খুব একটা সহীহ নয়| ইবনুল মুবারক ও অন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ “সালাতুত্ তসবীহ” ও তার ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন| যথারীতি প্রথমে নিয়ত করে তা’আঊজ, তাসমিয়াহ, সানা পাঠ করে প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং আর একটি সূরা পড়তে হবে| এইভাবে- প্রথম রাকাতের কিরাত শেষ করার পর দাড়ানো অবস্থাতেই রুকুতে যাবার আগে পনর বার এই বাক্যটি পড়তে হবেঃ ‘সুবহনআল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর’| অতঃপর রুকুতে যাবেন| রুকুতে গিয়ে এই বাক্যটি দশবার পড়তে হবে| রুকু থেকে দাড়িয়ে সোজা হয়ে দশবার এই বাক্যটি পড়তে হবে| তারপর সিজদাহ-তে যেতে হবে| সিজদাহতে গিয়ে দশবার এই বাক্যটি দশবার পড়তে হবে| তারপর সিজদহ থেকে মাথা উঠিয়ে বসে দশবার এই বাক্যটি পড়তে হবে এবং দিতিয় সিজদাহতে যাবে এবং এই সিজদাহতে গিয়েও বাক্যটি দশবার পড়তে হবে| এইভাবে এক রাকাতে বাক্যটি(দু’আটি) মোট পচাত্তর(৭৫) বার পাঠ করা হল| এই প্রথম রাকাতের মত একই নিয়মে চার রাকাত নামায পড়তে হবে|
যদি এই নামায রাতের বেলা আদায় করা হয় তবে প্রতি দুই রাকাত পর পর সালাম ফিরান ভাল| আর যদি দিনের বেলায় আদায় করা হয় তবে চাইলে দুই রাকাত পর পর বা চার রাকাত পরও সালাম ফিরাতে পারে|
আবু ওয়াহ’ব বলেনঃ ‘আব্দুল আজিজ আমাকে জানিয়েছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেছেন, রুকু, সিজদাহতে পর্যায়ক্রমে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম ও সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা পাঠ করার পর উল্লিখিত দু’আ পাঠ করবে| আব্দুল আজিজ বলেন, আমি ইবনুল মুবারককে প্রশ্ন করলাম, যদি এই নামাজে ভুল হয়ে যায় তাহলে সিজদাহতে কী উক্ত দু’আ (’সুবহনআল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর’) পাঠ করতে হবে? তিনি বললেন, না, এই দু’আ-তো মোট তিনশত বার পাঠ করতে হবে|
সুত্রঃ সহীহ তালিফুর রাগীব(১/২৩৯)|
টিকাঃ
আবদুললাহ ইবনু আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসটিকে কেউ ‘মুরসাল’ কেউ ‘যঈফ’ কেউ ‘মওযু/মওদু’ বা জাল বলেছেন। সৌদি আরবের ফতোয়া কমিটি ‘লাজনা দায়েমাহ’ এই সালাতকে বিদ’আত বলে ফতোয়া দিয়েছেন। যদিও শায়খ আলবানি(রহঃ) ঐ হাদিসের যঈফ সুএ সমুহ পরষপরকে শকতিশালি মনে করে তাকে ‘সহিহ’ বলেছেন এবং ইবনু হাজার আসকালানি ও ছাহেবে মির’আত একে ‘হাসান’ পযায়ে উননিত বলেছেন।
*** ইবনু হাজার আসকালানি(রহঃ) এর বিসতারিত আলোচনা; আলবানি, মিশকাতঃ ৩ নং হাদিস; ৩/১৭৭৯-৮২ পৃঃ; আবু দাউদ, ইবনু মাযাহ, মিশকাত হা/১৩২৮ হাশিয়া; বায়হাকিঃ ৩/৫২; আবদুললাহ ইবনু আহমাদ, মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, মাসয়ালা নং ৪১৩, ২/২৯৫ পৃঃ; মির’আতঃ ৪/৩৭২-৭৫; রিয়াদ; লাজনা দায়েমাহঃ ফতোয়া নং ২১৪১, ৮/১৬৪ পৃষঠা।
মন্তব্যঃ
এরুপ বিতকিত, সনদেহযুকত ও দুবল ভিততির উপর কোন ইবাদত বিশেষ করে সালাত প্রতিষঠা করা যায় না- বিধায় বিষয়টি থেকে দুরে থাকাই উততম।
লক্ষ কোটি সৌদি আরবের ফতোয়া কমিটি ‘লাজনা দায়েমাহ’ অপেক্ষা একজন আবদুললাহ ইবনু আব্বাস(রাঃ) বা একজন ইমাম তিরমিযী (রহ) বা একজন ইমাম বায়হাক্বী (রহ) বা একজন ইবনুল মুবারক (রহ)……….অধিক অনুসরণযোগ্য।
বিস্তারিত:
http://www.muftisays.com/blog/Seifeddine-M/1464_21-04-2011/status-of-salatul-tasbeeh.html
@আহমাদ, ব্যাপার না ভাই,আপনি যদি হাদিসটি সহিহ মনে করেন তো সেটার উপর আমল করতে পারেন।আল্লাহ এই উম্মাতের ভুল মাফ করে দিবেন। কারন এই মাসয়ালা ধোয়াশাচ্ছান্ন