সাবধান ! ফিতনা ফাসাদের উদ্ভব হবে ঐদিক থেকে…..
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০১২ (৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হ’তে বর্নিত । তিনি বলেন , আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে মিম্বরের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে বলতে শুনেছি , সাবধান ! ফিতনা ফাসাদের উদ্ভব ঐদিক থেকেই হবে এবং ঐদিক থেকেই শয়তানের শিং উদিত হবে । (সহীহুল বুখারী , হাদীস নং-৩৫১১ , ৩১০৪ , ৩২৯৬ , ৭০৯২ , ৭০৯৩ )
এই গুরুত্বপূর্ণ হাদীসটি সহীহুল বুখারীতে মোট পাঁচবার এসেছে । আসুন আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ হাদীসটি নিয়ে আলোচনা করি এবং পূর্ব দিক থেকে বের হওয়া ফিতনাগুলির সাথে পরিচিত হই , যাতে আমরা এই ফিতনা ফাসাদ থেকে দূরে থাকতে পারি ।
এখানে আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে দেখা যায় যে , নাবী (সাঃ) পূর্বদিকে ইশারা করে এক সাবধান বাণী বা ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করেছেন । এখানে নাবী (সাঃ) বলেছেন , পৃথিবীর পূর্বদিক হতেই সমস্ত ফিতনার উদ্ভব হবে । ইসলামের ইতিহাস তথা বিশ্ব ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে , ইসলাম বিনাশী বড় বড় ফিতনা ফাসাদ ও প্রলয়ংকারী বিদআত সমূহ পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত থেকেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ।
সর্বপ্রথম আলী ও মুআবিয়া (রাঃ) এর খিলাফাত সম্পর্কিত গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের মধ্যে খারিজী ও রাফেজী দলের উদ্ভব হয় । যা পূর্বদেশ থেকেই ঘটেছিল । অতঃপর যুগে যুগে মুতাজিলা , ক্বাদারিয়া , জাবারিয়া , জাহমিয়া , চিশতিয়া , মুজাদ্দেদীয়া , সাহরাওয়ার্দিয়া , আজমেরী রেযাখানী ( রেজা আহমদ খান ব্রেলভী যিনি আজমিরের কবর পূজার প্রবর্তক) , বাহাই , কাদিয়ানী , ইলিয়াসী ইত্যাদি যাবতীয় ফিতনার উদ্ভব পূর্বদিক থেকেই ঘটেছে যার কয়েকটির অতি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো । (ইনশা-আল্লাহ পরবর্তীতে প্রত্যেকটি দলের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসবে …)
খারিজী : ইসলামের সর্বপ্রথম ধর্মীয় সম্প্রদায় । খিলাফাত এবং বিশ্বাস বা কর্মের যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে তারা নিজেদেরকে আলাদা করে ফেলে । রাজনীতির ক্ষেত্রে তারা যে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল তা ছিল পুনঃ পুনঃ বিদ্রোহ সংগঠন এবং সাময়িকভাবে কোন অঞ্চল দখল করতঃ গন্ডগল সৃষ্টি করা । আলী (রাঃ) এর খিলাফাতের শেষ দুই বৎসর এবং উমায়্যাহ আমলে তারা মুসলিম সাম্রাজ্যের পূর্বাংশে অশান্তি সৃষ্টি করেছিল এবং পরোক্ষভাবে আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে মুআবিয়াকে এবং উমায়্যাদের বিরুদ্ধে আব্বাসীয়গণকে যুদ্ধে জয়লাভ করতে সাহায্য করেছিল ।
রাফেজী : রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যুর পর আলী (রাঃ) ন্যায়তঃ খালীফাহ হওয়ার দাবীদার ছিলেন । এই মতবাদের ভিত্তিতে রাফেজী দলের উৎপত্তি হয় । তারা নিজেদেরকে শীয়ানে আলী (শী’আ) বা আলীর দল বলে অভিহিত করে থাকে । কিন্তু উলামায়ে উম্মাত তাদেরকে শীআ বলা সঠিক বলে মনে করেন না । তারা তাদেরকে রাফেজী (দলত্যাগী) নামে অভিহিত করেন । কারণ তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সঠিক দল / সঠিক আক্বীদা ত্যাগ করে বিভ্রান্ত হয়েছিল । তারা খিলাফাত বনাম গণসমর্থনের ভিত্তিতে নির্বাচিত খালীফাহ আনুগত্য স্বীকার করতে রাজী নয় – এমনকি কুরাইশ হলেও না । তাদের মত হল , আহলি বায়াত (নাবীর পরিবার) অর্থাৎ আলী ও ফাতিমাহ (রাঃ) এর বংশোদ্ভুতগণই ইমামাত (খিলাফাত নয়) এর অধিকারী । পূর্ববর্তী ইমাম তাঁর উত্তরাধিকারী পরবর্তী ইমামের মনোনয়ন দিবেন । তাদের ধর্মীয় পুস্তকে দেখা যায় যে , যে ব্যক্তি তার সময়ের প্রকৃত ইমাম কে (?) তা না জেনে মারা যায় , সে কাফিররুপে মারা যায় । তারা নিজেদেরকে “শীআতু আলী” বা আলীর দল বলে মনে করে এবং এ থেকেই সংক্ষেপে শীআ নামের প্রচলন হয়েছিল ।
মু‘তাযিলা : যে ধর্মতাত্ত্বিক দল ইসলামী ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপারে যুক্তিমূলক মতবাদকে সর্বপ্রধান সূত্র হিসেবে গ্রহণ করে তার নাম ।
কাদারিয়াহ : তাকদীরের সঠিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে তাত্ত্বিক আলোচনার ফলে বসরাতে এই দলের উদ্ভব হয় । কাদারিয়াহ দলের মত হল মন্দ ইচ্ছা ও কর্মের সম্পর্ক আল্লাহর প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে না । এর সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে ।
জাবারিয়াহ : জাবারিয়্যাহ মতে মানুষের ইচ্ছা বা কর্ম স্বাধীনতা নাই । আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী । তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন ।
জাহমিয়াহ : জাহম ইবনু সাফওয়ান (মৃত্যু ৭৪৬ খ্রীঃ) ধর্মতত্ত্ববিদ হিসেবে কিছুটা স্বাধীন মত পোষণ করতেন । ঈমানকে তিনি অন্তরের ব্যাপার বলে জানতেন , জান্নাত ও জাহান্নামকে চিরস্থায়ী মনে করতেন না । তার অনুসারীরা জাহমিয়্যাহ নামে পরিচিত ।
চিশতিয়্যা : ভারত উপমহাদেশের একটি সূফী তরীকা । খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী দ্বাদশ শতাব্দীতে সূফীবাদের এই সিলসিলাহ ভারত উপমহাদেশে নিয়ে আসেন এবং আজমীরে এর প্রথম কেন্দ্র স্থাপন করেন ।
নাকসবান্দীয়াহ : মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ বাহাউদ্দীন আল বুখারী (৭১৭-৭৯১/১৩১৭-১৩৮৯) নাকসবান্দী প্রতিষ্ঠিত সূফী সম্প্রদায় ।
কাদিরিয়্যাহ : আব্দুল কাদির জীলানী (রহঃ) নামানুসারে একটি সূফী তরীকার নাম কাদিরিয়াহ ।
বাহাঈ : বাহাউল্লাহ ও আব্দুল বাহা কর্তৃক ইরান থেকে প্রচারিত ধর্মমত । (সময়কাল ১৮১৭-১৮৯২ খ্রীঃ) ।
কাদিয়ানী : ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান উপশহরে ১৮৩৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ভন্ড নাবী মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর প্রচারিত ধর্মমত ।
কবরপূজা , দরগাহপূজা , ইসলামের বিকৃত অবস্থা , বিকৃতকরণ , তথা উক্ত প্রক্রিয়ার উৎসস্থল নাবী (সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত বটে । এখান থেকেই শয়তানের শিং গজিয়ে উঠবে এবং উক্ত শিং সঠিক ইসলামকে গূতা দিতে দিতে একেবারে কোণঠাসা করে ফেলবে । যার বাস্তব চিত্র অনেকটা প্রকাশ পেতে চলেছে । যেমন ঈদে মিলাদুন্নাবীর মিছিলকারী বিদ’আতীদের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পদচারণা ও তৎপরতায় মনে হয় এ দেশের ইসলাম ও দ্বীন দরদী একমাত্র তারাই । নাবী (সাঃ) সারা জীবনে পূর্ববর্তী কোন নাবীদের জন্মদিবস পালন করে যাননি । নিজের জন্মদিনও পালন করেন নি । তদ্বীয় সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) তাঁদের প্রাণাধিক প্রিয় নাবী (সাঃ) এর জন্ম দিবস , মৃত্যু দিবস পালন করেন নি । অথচ পূর্ব দেশীয় উক্ত বিভ্রান্ত লোকেদের ধারণা মতে যারা নাবী (সাঃ) এ জন্ম ও ওফাত দিবস পালন না করবে তারা ফাসেক , গোমরাহ ইত্যাদি ইত্যাদি । এখন প্রশ্ন হলো , নাবীর যুগে , সাহাবাদের যুগে , তাবেঈদের যুগে তথা ইসলামের মহামতি ইমাম চতুষ্টয়ের যুগে এভাবে ঘটা করে বিশাল আয়োজনের সাথে নাবী (সাঃ) এর জন্ম দিবস ও ওফাত দিবস পালন না করায় তাদের কি কোন অন্যায় বা ক্ষতি হয়েছে ? নিশ্চয়ই বলবেন , তাঁদের কোন অন্যায় হয়নি । বরং তারা এবম্বিধ কার্যাদি পালন হতে বিরত থেকেই সঠিক কাজ করেছেন । সুতরাং ইত্যাকার কাজে যারা জড়িত তাদের কাজ যে সঠিক নয় তা আর যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই ।
অতঃপর চিল্লাধারী বন্ধুদের চিল্লার পর চিল্লার মাধ্যমে স্বীয় পরিবার-পরিজনের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে অবজ্ঞা প্রদর্শন করা , আল্লাহর নির্দেশ – “তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও) এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না ক’রে দেশ-দেশান্তরে গমন করা , (আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস ছেড়ে গেলাম …. আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নাবীর সুন্নাহ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এ অন্তিম বাণীকে উপেক্ষা করে বানোয়াট , জাল , উদ্ভট ও আজগুবী কথায় পরিপূর্ণ নিজেদের সিলেবাসের কিতাব পড়তে বাধ্য করা , হাজারো অশ্লীলত , বেহায়াপনা , সূদ , ঘুষ , জুয়া ইত্যাদির ব্যাপারে মুখ-চোখ-কান বন্ধ করে রেখে এর ফারয কে দূরে নিক্ষেপ করে মুসলমানদের খাসি করণের অভিযান পরিচালনা করা , দাওয়াত দেয়ার নামে মুমিন মুসল্লিদেরকে মাসজিদের গেটে যখন-তখন বিরক্ত করা ও বিভিন্ন বিদ’আতী তৎপরতা , অন্যায়ের প্রতিবাদী ইসলামের জিহাদী রুপকে ম্লান করতে চলেছে বটে ।
পাক-ভারত উপমহাদেশ তথা ভারত , বাংলাদেশ , পাকিস্থান সহ পূর্বাঞ্চলীয় মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত তাবলীগের মাধ্যমে যে ধর্মনিরপেক্ষ তথাকথিত এক প্রকারের ইসলামী চেতনা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা যদি জুলুম , নির্যাতন , হত্যা , শোষণ , লুন্ঠন , অত্যাচার , অবিচার , অশ্লীলতা , নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী না হয় , শিরক , বিদ’আতের বিরুদ্ধে আপোষহীন না হয় , সর্বশ্রেনীকে ম্যানেজ করে চলার সুবিধাবাদী নীতি পরিহারকারী না হয় , তাহলে রাসূল (সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উক্ত প্রচলিত তাবলীগ জামাআতকেও পূর্বাঞ্চলীয় বিভেদ সৃষ্টিকারী , ফিতনা ও ফাসাদ সৃষ্টিকারী দ্বীন বিকৃতকারী একটি দল বলে নিঃসন্দেহে সনাক্ত করা যাবে । কেননা উক্ত দলটির তথাকথিত নাবীওয়ালা কাজের ফাঁকা বুলি পূর্ববর্তী দ্বীনদার মুসলিমদের কাজের সহিত সামঞ্জস্যশীল নয় বলেই তখন গণ্য হবে ।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের উক্ত হাদীসের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উদ্ভুত সকল দলকে চিনার এবং তাদের থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন । আমীন !
ভাই এ হাদিসের আলোকে আপনাদের আহলে হদস গ্রুফ কি পরে না। এই তো হলো আহলে হদসের কাজ। নিজেদের অপকর্ম গুলোকে নেক মনে করে আর অন্য সব ফিৎনা।
@এম এম নুর হোসেন, “তোমরা সেই সব লোকদের মতো হয়ো না যারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নির্দেশ পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়ে রয়েছে তাদের জন্যে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে । সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১০৫ । এটাই হচ্ছে আহলে হাদীসদের সাথে আপনাদের পার্থক্য । আহলে হাদীসরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের স্পষ্ট দলীল পেলে সেই দলীলের আনুগত্য করে%2
@এম এম নুর হোসেন, “তোমরা সেই সব লোকদের মতো হয়ো না যারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নির্দেশ পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়ে রয়েছে তাদের জন্যে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে । সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১০৫ । এটাই হচ্ছে আহলে হাদীসদের সাথে আপনাদের পার্থক্য । আহলে হাদীসরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের স্পষ্ট দলীল পেলে সেই দলীলের আনুগত্য করে আর আপনারা কুরআন ও সহীহ হাদীসের স্পষ্ট দলীলকে পদদলিত করে মাযহাবের আনুগত্য করেন । সুতরাং আহলে হাদীসদের কে নয় বরং দেওবন্দী , হানাফী , মাযহাবীদের কেই সুস্পষ্টভাবেই উপরের হাদীসের অন্তরভুক্ত করা যায় ।
আহলে হদসের উৎপত্তি হয়েছে আপনাদের কোন নবীর যামানা বা কোন সাহাবা থেকে।মানুষের সমালোচনা করার আগে নিজের চেহারার দিকে তাকান। অপকর্ম গুলোকে নেকি মনে করা আহলে হদস আর মওদুদী বাদি দের কাজ।