ওহাবী কারা?
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ মঙ্গলবার, জানুয়ারি ১৫, ২০১৩ (৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
ওহাবী কারা? সঠিক তথ্য জানতে চাই। কেন, কারা বা কদের ওহাবী বলা হয়?
উত্তর:
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্র জন্য।
যারা ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল ওহ্হাবকে মানে তাদেরকে ইহুদীরা ওহাবী নাম দেয়। ওয়হাবীরা আল্লাহ্র তৌহীদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সকল বাধাকে অতিক্রাম করে থাকে। তারা সর্বদা জিহাদের জন্য প্রস্তুত। মূলত ওহাবীরা সৌদিতে বাস করে এবং অন্যান্য দেশেও বাস করে।
ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল ওহ্হাব – তার জীবনী এবং ধর্ম প্রচার
বর্ণনায় – শাইখ আব্দুল আযিজ ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন বায (রহ:)
ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল ওহ্হাব একজন অসাধারন মানুষ, বিশিষ্ট সংশোধক এবং উদ্দিপনাময় ধর্ম প্রচারক ছিলেন, যার আবির্ভাব হয় আরবে ১২০০ হিজরিতে। তার পিতা তাকে নিজ গ্রাম থেকেই শিক্ষা দেয়, ওয়াইনা, একটি গ্রাম যা ইয়ামামার নায্দ এর মধ্যে অবস্থিত, রিয়াদ শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। তিনি অল্প বয়সে কুরআন পড়া শিখেন এবং পড়াশুনায় এগিয়ে যায়, পিতার হাত দ্বারাই উচ্চ শিক্ষা লাভ করে, শেইখ আব্দুল ওহ্হাব ইব্ন সুলাইমান, যিনি বিশিষ্ট আইন বিজ্ঞ এবং ওয়াইনার বিচারক ছিলেন।
সাবালক হলে শেইখ শিক্ষার জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে ভ্রমন করেন এবং তার পর মদিনাতে যান এবং মদিনার আলেম থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন। তারপর তিনি ইরাকে (বাসরা) যান শিক্ষা গ্রহন করতে। ইরাকই হল সেই স্থান যেখান থেকে তিনি প্রথম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। সেখানকার লোকদেরকে তিনি এক আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস এবং নবী (সা:) এর সুন্নতের দিকে আহব্বান করেন। তিনি বর্ণনা করেন যে প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য তার ধর্মকে (ইসলাম) শক্ত ভাবে মানা কুরআন এবং হাদীস অনুসারে। তিনি বিতর্কে এবং আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন বিভিন্ন ইমামের সাথে এবং এর মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন। যদিও কিছু ভণ্ড ইমাম তাকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তিনি কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হন এবং কষ্টও পান। তাই তিনি বাসরাহ থেকে আয-যুবাইর চলে যান, তারপর আল-আহসা এবং অবশেষে হুরাইমেলা, সেখানেও তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হন খারাপ লোকদের দ্বারা কারন তিনি ভালকে গ্রহন করেছেন এবং খারাপকে নিষেধ করেছেন এবং শাসন কর্তাদের উপদেশ দিতেন অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে। তাই কিছু লোক তাকে মারার চেষ্টা করে কিন্তু আল্লাহ্ তাকে বাঁচিয়েছেন। তারপর তিনি ওয়াইনা চলে আসেন, যা রাজা উথমান ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন মুয়া’মারের অধীনে ছিল, রাজা শেইখকে স্বাগতম জানালেন এবং ইসলামের জন্য সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করার অঙ্গিকার করলেন।
নাযদ এর মুসলমান মানুষদের এমন অবস্থা ছিল যে কোন মুমিন বেক্তি তা সমর্থন করবে না। বস্তু পূজা শুরু হয়েছিল ব্যাপক ভাবে, মানুষেরা কবর পূজা শুরু করেছিল, গাছ পূজা, পাথর পূজা, গুহায় পূজা অথবা পীরদের পূজা করত। জাদু এবং গণকদেরও অনেক বিস্তার লাভ করেছিল। যখন শেইখ দেখলেন যে মানুষদের মাঝে পুজাতন্ত্র ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে এবং কেউ এগুলোকে নিষেধ করছিল না, কেউ মানুষকে আল্লাহ্র পথে ডাকছিলও না, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন একার শ্রম দেওয়ার জন্য ধৈযের সাথে। তিনি জানতেন কোন কিছুই করা সম্ভব নয়, জিহাদ, ধৈয এবং কষ্ট ছারা।
শেইখ মানুষকে আল্লাহ্র পথে ডাকার কাজ করে গেলেন এবং তাদেরকে পথ দেখালেন আল্লাহ্র জন্য ধার্মিক হওয়ার, নীতিবান হওয়ার এবং ভালবাসার। ক্রমান্বয়ে শেইখ খ্যাতি লাভ করা শুরু করলেন ওয়াইনাতে। প্রতিবেশী অঞ্চল এবং গ্রাম থেকে মানুষ তার সাথে সাক্ষাৎ কারার জন্য ওয়াইনা আসতো। তিনিও অনেক আলেমের কাছে চিঠি লিখতেন তাদের সাহায্য চেয়ে এবং তাদের স্মরণ করিয়ে দিতেন আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য পুজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার। নাযদ, মক্কাহ্ এবং মদিনা থেকে অনেক আলেম তার আহ্বানে সারা দিয়েছিলেন আবার অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, নিন্দা করেছে তার কাজকে, দোষারোপ করেছে এবং তার থেকে দুরে থেকেছে।
শেইখ এবং তার অনুসারীরা দুই ধরনের মানুষের মধ্যে ছিলেন, এক দল ছিল অজ্ঞ, যারা ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানত না এবং যারা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের অনুস্মরণ করেছে, বেদআত দলকে অনুস্মরণ করেছে, কুসংস্কারের দলকে অনুস্মরণ করেছে ইত্যাদি। যা তাদের পূর্ব পুরুষেরা করে আসছিল।
কুরআন তাদের ক্ষেত্রে বলেছে: “বরং তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে পথপ্রাপ্ত।”…[সূরা আয-যুখ’রুফ, আয়াত-২২]
অন্য দিকে দ্বিতীয় দলের জ্ঞান ছিল কিন্তু শেইখের সাথে বিরোধিতা করেছে হিংসার কারণে, লজ্জিত হওয়ার কারণে, ভয় পাওয়ার কারণে যে তাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, “কেন তারা এতো দিন চুপ ছিল এই-এই পথভ্রষ্টতার ব্যাপারে আব্দুল ওহ্হাব না আসা পর্যন্ত”?
কিন্তু শেইখ ধৈর্যের সাথে সব ক্ষেত্রে আল্লাহ্র সাহায্য চেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন কুরআন এবং অন্যান্য সাহায্যকারী বই পড়ার ক্ষেত্রে। তার একটা আলাদা দক্ষতা ছিল যুক্তি সহকারে কুরআন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। আরও তিনি পরিশ্রম করেছেন রাসূল (সা:) এর জীবন এবং তার সাহাবী (রা:)-দের জীবনী পড়ার ক্ষেত্রে।
শেইখ শুরু করলেন তালীম এবং বক্তৃতা দেওয়া। যখন দেখলেন কিছু লোকের মধ্যে ইসলামের দাওয়াতের কোন প্রভাব পরছে না, ক্রমশ তিনি নিজেকে বাস্তবিক ভাবে প্রয়োগ করা শুরু করলেন পুজাতন্ত্র নির্মূল করার ক্ষেত্রে। একদিন শেইখ আমীরকে বললেন, “চলুন আমরা গুড়িয়ে দেই বাঁধাই করা যাইদ ইব্ন আল-খাত’তাবের কবর (যাইদ ইব্ন আল-খাত’তাব, উমর ইব্ন আল-খাত’তাবের ভাই ছিলেন এবং শহীদ হয়ে ছিলেন ১২ হিজরিতে মুসাই’লিমা খাদ’দাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং পরে তার কবরকে বাঁধাই করা হয়েছিল)। বিভিন্ন দল তৈরি হওয়ার কারনে এটি হয়েছিল এবং রাসূল (সা:) নিষেধ করেছেন কবর বাঁধাই করতে অথবা তার উপর মসজিদ তৈরি করতে। তাছাড়া পুজাতন্ত্রের মাধ্যমে এই বাঁধাই করা কবর মানুষের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই এটাকে অবশ্যই গুড়িয়ে দিতে হবে।
রাজা একমত হন এবং ৬০০ জন যোদ্ধার সৈন দল একত্রিত করেন এবং কবরের দিকে ধাবিত হন শেইখের নেতৃতে। যখনই তারা কবরের কাছে গেলেন তখন মানুষ এগিয়ে আসল কবরকে রক্ষা করার জন্য, কিন্তু যখন তারা রাজা এবং তার সৈনদেরকে দেখল তখন তারা তাদের চিন্তা ধারা পালটিয়ে ফেললো। তারপর শেইখ বাঁধাই করা কবরকে গুড়িয়ে দিলেন। আল্লাহ্ তার হাত দিয়ে এটি করালেন, আলহামদুলিল্লাহ্ এখন আর এর কোন অস্তিত্ব নেই। একই ভাবে আরও বাঁধাই করা কবর, গুহা, গাছ ইত্যাদি ছিল, যা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এই ভাবে শেইখ তার কাজ করে যান কথা এবং কর্মের মাধ্যমে, যার দ্বারা তিনি খুব খ্যাতি অর্জন করেন। একদিন এক মহিলা আসলো তার কাছে এবং বলল যে উনি ব্যভিচারের পাপ করেছে। এটা বুঝতে পেরে যে মহিলাটি মানুষিক ভাবে সুস্থ, বিবাহিত এবং কোন পারিপার্শ্বিক চাপ ছারাই সে স্বীকার করেছে, তাই তার শাস্তি রুপে তাকে সুন্নত অনুসারে পাথর নিক্ষেপ করে মারার নির্দেশ দেন, কারন উনি এখন ওয়াইনার বিচারক।
অপরদিকে, প্রতিবেশী আল-আহ্ছা গ্রামের রাজা ভয় পাচ্ছিল শেইখের অবস্থা সম্পর্কে, কারন তারা খারাপ কাজ করত, যেমন: ডাকাতি, হত্যা ইত্যাদি, যা তাদের জন্য সাধারন ব্যাপার ছিল। এই রাজা, উথমান রাজাকে চিঠি লিখলেন হুমকি দিয়ে এবং দাবি করলেন যেন শেইখকে হত্যা করা হয়। উথমান রাজা শেইখের কাছে এসে বললেন, “নোমাদ রাজা আমাকে বার্তা পাঠিয়েছে এই-এই করার জন্য। আমরা কখনও চাই না আপনাকে হত্যা করার জন্য, কিন্তু আমরা রাজার জন্য ভয় পাচ্ছি এবং আমরা তার সাথে যুদ্ধ করে পারব না। তাই আপনি যদি মনে করেন এখান থেকে চলে যেতে হবে, তাহলে আপনি এখান থেকে চলে যেতে পারেন” । শেইখ বললেন, “আমি শুধু মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকছি। এবং কালেমার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে যে আল্লাহ্ ছারা কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা:) আল্লাহ্র রাসূল। যারা ইসলামকে শক্ত করে আঁকরে ধরেছে এবং একে সত্যরের উপর প্রতিষ্ঠা রাখে, আল্লাহ্ তাকে সাহায্য করবে এবং তাকে তার শত্রুদের দেশের শাসনকর্তা বানিয়ে দিবেন। এবং তুমি যদি সহ্য করে সত্যবাদী থাক এবং এই ধর্ম গ্রহণ কর তাহলে খুশি থাক যে আল্লাহ্ তোমাকে রক্ষা করবেন নোমাদ রাজা থেকে এবং অন্যদের থেকে। আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমতা দিবেন তার দেশ এবং জাতির উপর” । কিন্তু উথমান বলল, “ও শেইখ! কিন্তু আমরা তার সাথে না পারব যুদ্ধ করতে, না পারব তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাড়াতে” । তাই, শেইখকে ওয়াইনা ছেরে চলে যেতে হল দারিয়াতে পায়ে হেঁটে কারণ উথমান তাকে যানবাহন হিসেবে কিছুই দেয় নি।
দারিয়াতে পৌছে, শেইখ এমন একজনের ঘরে ছিলেন যিনি দারিয়ার একজন অন্যতম ভাল চরিত্রের বেক্তি ছিলেন, কিন্তু সে ভয় পাচ্ছিল দারিয়ার রাজা মুহাম্মাদ ইবেন সাউদের জন্য। শেইখ তাকে বললেন, ‘খুশি থাক এবং আশা কর ভালোর জন্য। আমি শুধু মাত্র মানুষকে ডাকছি আল্লাহ্র ধর্মের দিকে এবং তিনি নিঃসন্দেহ ভাবে এটাকে জয়ী করবেন, ।
শেইখের দারিয়াতে অবস্থানের খবর মুহাম্মাদ ইবেন সাউদের কাছে পৌঁছে গেল। এটা বলা হয়ে থাকে যে তার স্ত্রী প্রথম তাকে শেইখের সংবাদ দেয়। তিনি একজন দয়ালু এবং ধার্মিক মহিলা ছিলেন এবং তার স্বামীকে এই ভাবে বললেন যে, ‘এটি আল্লাহ্র প্রেরিত অনুগ্রহ। একজন বেক্তি যিনি মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকছে, কুরআন এবং রাসূল (সা:) এর সুন্নতের দিকে ডাকছে। কতই না অনুগ্রহ! তারাতারি তার কাছে যাও এবং তাকে সাহায্য কর। কখনও তাকে তা থেকে বাঁধা বা থামিয়ে দিয়ো না। মুহাম্মাদ ইবেন সাউদ তার কথা শুনলেন এবং শেইখের কাছে গিয়ে বায়াত (শপথ) করলেন, এই শর্তে যে উনি কোন দিন এ ভূখণ্ড ছেরে যাবেন না।
শেইখ দারিয়ায় স্থায়ী ভাবে থাকলেন। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ তার কাছে আসল শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য, ওয়াইনা থেকে, ইরাক থেকে, মানফুহা থেকে, রিয়াদ থেকে এবং অন্যান্য প্রতিবেশী স্থান থেকে। মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করল, ভালবাসল, সহযোগিতা করল। শেইখ বিষয় ভিত্তিক শিক্ষা দিতেন: যেমন, ধর্মীয় মতবাদ, কুরআন, কুরআনের ব্যাখ্যা, ইসলামিক দর্শন এবং এর নিয়ম নীতি, হাদীস এবং এর ব্যাখ্যা, এবং অন্যান্য। তিনি এই ধরনের শিক্ষা সাধারণ জনগণের জন্য এবং নির্দিষ্ট বেক্তিদের জন্যেও করে থাকতেন। এই ভাবে তিনি তার দ্বীনের কাজ করে গেলেন দারিয়াতে। তার যুক্তি দেখিয়ে উনি বিভিন্ন আলেমের কাছে চিঠি লিখলেন পুজাতন্ত্র এবং বিদআতের বিরুদ্ধে। তার আলেমদের এবং শাসকদের সাথে যোগাযোগ এবং আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম তার খ্যাতি বয়ে নিয়ে আসে। তার আদর্শ বিস্তার লাভ করে মুসলিম দেশে এবং অন্যান্য দেশেও।
আমরা কারন বশত জানি যে, প্রত্যেক ভাল কাজকেই হিংসা করা হয়, যেভাবে প্রত্যেক দ্বীন প্রচারকেরই শত্রু আছে। তাই আল্লাহ্ পাক কুরআনে বলছেন:
এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি আপনার পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করত না…[সূরা আল-আনাম, আয়াত-১১২]
শেইখ যখন জনপ্রিয়তা লাভ করতে লাগল তার শিক্ষকতার দ্বারা, বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়া তার লেখার জনপ্তিয়তার দ্বারা, তখন হিংসার ফলে অনেক দল বের হল তার বিরোধিতার জন্য। একদল ভণ্ড আলেম বের হল যারা সত্যকে মিথ্যা মনে করত এবং মিথ্যাকে সত্য মনে করত। তারা কবর বাঁধাই করা এবং কবরের বেক্তিদের কাছ থেকে চাওয়া ইসলামে বৈধ মনে করত। দ্বিতীয় দলের কাছে সঠিক জ্ঞান ছিল কিন্তু তারা শেইখের কাজকে গুরুত্ব দেয় নি। তারা অন্যদের বিশ্বাস করত এবং শেইখ থেকে দূরে থাকত। তৃতীয় দল যারা শেইখের বিরোধিতা করেছিল, তারা ভয় পাচ্ছিল যে তাদেরকে বাদ দেওয়া হবে তাদের অবস্থান এবং পদ থেকে। তারা শেইখের অনুসারীদের সাথে নম্র ব্যাবহার করেছে যেন অনুসারীরা তাদের অবস্থান থেকে উচ্ছেদ না করে এবং তাদের এলাকা দখল না করে।
কেউ তার বিরোধিতা করেছে ধর্মের দোহাই দিয়ে, কেউ রাজনীতির দোহাই দিয়ে, যদিও তারা দাবি করত তারা শিক্ষিত, ধর্ম বিষয়ে জ্ঞানী, কিন্তু অন্যরা যারা শেইখের সাথে শত্রুতা করেছে তাদের কাছে প্রচার করত যে শেইখ ঐক্য নষ্ট করছে বিভিন্ন ভাগ তৈরির মাধ্যমে। কোন কোন ক্ষেত্রে তার বিরোধীরা বলেছে তিনি খারেজী দলভুক্ত। অনেকে তাদের অজ্ঞতা বশত তার নিন্দা করেছে ইত্যাদি। এভাবেই কথা যুদ্ধ চলতে থাকে তর্ক-বিতর্ক এবং ঝগড়ার মাধ্যমে। তিনি তাদের কাছে চিঠি লিখতেন, তারা আবার উত্তর দিত, এবং তিনি আবার পাল্টা উত্তর দিতেন। এভাবেই একাধিক প্রশ্ন এবং উত্তর জমানো হয় এবং তা বিভিন্ন খণ্ডে সংরক্ষণ করা হয়। আর আলহামদুলিল্লাহ্, অধিকাংশ গুলিই ছাপা হয়েছে। এরপর শেইখ জিহাদের দিকে অগ্রসর হন ১১৫৮ হিজরিতে, তিনি বিভিন্ন লোকের কাছে চিঠি লিখে দাওয়াত দিতেন জিহাদে অংশ গ্রহণ করার জন্য এবং পুজাতন্ত্র দূর করার জন্য যা তাদের অঞ্চলে বিদ্যমান ছিল।
এভাবে তিনি দ্বীন প্রচার এবং যুদ্ধ করে যান ৫০ বছর যাবত, ১১৫৮ হিজরি থেকে তার মৃত্যুর ১২০৬ হিজরির পর্যন্ত। তার প্রচার কাজে সকল পন্থাই অবলম্বন করেছিলেন, জিহাদ, বক্তৃতা, বাঁধা, তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা আনুগত্য করত এবং বাঁধাই করা কবর ধ্বংস না করত এবং কবরের উপর করা মসজিদ ধ্বংস না করত। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পূর্ব পুরুষের ভ্রান্ত ধারনা ত্যাগ করে সঠিক ইসলাম মানত এর নিয়মনীতি অনুসারে। তার মৃত্যুর পর আল্লাহ্র পথে তার আদর্শ অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যান তার, ছেলেরা, নাতীরা এবং অনুসারীরা।
Photo: ওহাবী কারা? সঠিক তথ্য জানতে চাই। কেন, কারা বা কদের ওহাবী বলা হয়? উত্তর: সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্র জন্য। যারা ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল ওহ্হাবকে মানে তাদেরকে ইহুদীরা ওহাবী নাম দেয়। ওয়হাবীরা আল্লাহ্র তৌহীদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সকল বাধাকে অতিক্রাম করে থাকে। তারা সর্বদা জিহাদের জন্য প্রস্তুত। মূলত ওহাবীরা সৌদিতে বাস করে এবং অন্যান্য দেশেও বাস করে। ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল ওহ্হাব – তার জীবনী এবং ধর্ম প্রচার বর্ণনায় – শাইখ আব্দুল আযিজ ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন বায (রহ:) ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন আব্দুল ওহ্হাব একজন অসাধারন মানুষ, বিশিষ্ট সংশোধক এবং উদ্দিপনাময় ধর্ম প্রচারক ছিলেন, যার আবির্ভাব হয় আরবে ১২০০ হিজরিতে। তার পিতা তাকে নিজ গ্রাম থেকেই শিক্ষা দেয়, ওয়াইনা, একটি গ্রাম যা ইয়ামামার নায্দ এর মধ্যে অবস্থিত, রিয়াদ শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। তিনি অল্প বয়সে কুরআন পড়া শিখেন এবং পড়াশুনায় এগিয়ে যায়, পিতার হাত দ্বারাই উচ্চ শিক্ষা লাভ করে, শেইখ আব্দুল ওহ্হাব ইব্ন সুলাইমান, যিনি বিশিষ্ট আইন বিজ্ঞ এবং ওয়াইনার বিচারক ছিলেন। সাবালক হলে শেইখ শিক্ষার জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে ভ্রমন করেন এবং তার পর মদিনাতে যান এবং মদিনার আলেম থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন। তারপর তিনি ইরাকে (বাসরা) যান শিক্ষা গ্রহন করতে। ইরাকই হল সেই স্থান যেখান থেকে তিনি প্রথম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। সেখানকার লোকদেরকে তিনি এক আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস এবং নবী (সা:) এর সুন্নতের দিকে আহব্বান করেন। তিনি বর্ণনা করেন যে প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য তার ধর্মকে (ইসলাম) শক্ত ভাবে মানা কুরআন এবং হাদীস অনুসারে। তিনি বিতর্কে এবং আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন বিভিন্ন ইমামের সাথে এবং এর মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন। যদিও কিছু ভণ্ড ইমাম তাকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তিনি কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হন এবং কষ্টও পান। তাই তিনি বাসরাহ থেকে আয-যুবাইর চলে যান, তারপর আল-আহসা এবং অবশেষে হুরাইমেলা, সেখানেও তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হন খারাপ লোকদের দ্বারা কারন তিনি ভালকে গ্রহন করেছেন এবং খারাপকে নিষেধ করেছেন এবং শাসন কর্তাদের উপদেশ দিতেন অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে। তাই কিছু লোক তাকে মারার চেষ্টা করে কিন্তু আল্লাহ্ তাকে বাঁচিয়েছেন। তারপর তিনি ওয়াইনা চলে আসেন, যা রাজা উথমান ইব্ন মুহাম্মাদ ইব্ন মুয়া’মারের অধীনে ছিল, রাজা শেইখকে স্বাগতম জানালেন এবং ইসলামের জন্য সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করার অঙ্গিকার করলেন। নাযদ এর মুসলমান মানুষদের এমন অবস্থা ছিল যে কোন মুমিন বেক্তি তা সমর্থন করবে না। বস্তু পূজা শুরু হয়েছিল ব্যাপক ভাবে, মানুষেরা কবর পূজা শুরু করেছিল, গাছ পূজা, পাথর পূজা, গুহায় পূজা অথবা পীরদের পূজা করত। জাদু এবং গণকদেরও অনেক বিস্তার লাভ করেছিল। যখন শেইখ দেখলেন যে মানুষদের মাঝে পুজাতন্ত্র ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে এবং কেউ এগুলোকে নিষেধ করছিল না, কেউ মানুষকে আল্লাহ্র পথে ডাকছিলও না, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন একার শ্রম দেওয়ার জন্য ধৈযের সাথে। তিনি জানতেন কোন কিছুই করা সম্ভব নয়, জিহাদ, ধৈয এবং কষ্ট ছারা। শেইখ মানুষকে আল্লাহ্র পথে ডাকার কাজ করে গেলেন এবং তাদেরকে পথ দেখালেন আল্লাহ্র জন্য ধার্মিক হওয়ার, নীতিবান হওয়ার এবং ভালবাসার। ক্রমান্বয়ে শেইখ খ্যাতি লাভ করা শুরু করলেন ওয়াইনাতে। প্রতিবেশী অঞ্চল এবং গ্রাম থেকে মানুষ তার সাথে সাক্ষাৎ কারার জন্য ওয়াইনা আসতো। তিনিও অনেক আলেমের কাছে চিঠি লিখতেন তাদের সাহায্য চেয়ে এবং তাদের স্মরণ করিয়ে দিতেন আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য পুজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার। নাযদ, মক্কাহ্ এবং মদিনা থেকে অনেক আলেম তার আহ্বানে সারা দিয়েছিলেন আবার অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, নিন্দা করেছে তার কাজকে, দোষারোপ করেছে এবং তার থেকে দুরে থেকেছে। শেইখ এবং তার অনুসারীরা দুই ধরনের মানুষের মধ্যে ছিলেন, এক দল ছিল অজ্ঞ, যারা ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানত না এবং যারা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের অনুস্মরণ করেছে, বেদআত দলকে অনুস্মরণ করেছে, কুসংস্কারের দলকে অনুস্মরণ করেছে ইত্যাদি। যা তাদের পূর্ব পুরুষেরা করে আসছিল। কুরআন তাদের ক্ষেত্রে বলেছে: “বরং তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে পথপ্রাপ্ত।”…[সূরা আয-যুখ’রুফ, আয়াত-২২] অন্য দিকে দ্বিতীয় দলের জ্ঞান ছিল কিন্তু শেইখের সাথে বিরোধিতা করেছে হিংসার কারণে, লজ্জিত হওয়ার কারণে, ভয় পাওয়ার কারণে যে তাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, “কেন তারা এতো দিন চুপ ছিল এই-এই পথভ্রষ্টতার ব্যাপারে আব্দুল ওহ্হাব না আসা পর্যন্ত”? কিন্তু শেইখ ধৈর্যের সাথে সব ক্ষেত্রে আল্লাহ্র সাহায্য চেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন কুরআন এবং অন্যান্য সাহায্যকারী বই পড়ার ক্ষেত্রে। তার একটা আলাদা দক্ষতা ছিল যুক্তি সহকারে কুরআন ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। আরও তিনি পরিশ্রম করেছেন রাসূল (সা:) এর জীবন এবং তার সাহাবী (রা:)-দের জীবনী পড়ার ক্ষেত্রে। শেইখ শুরু করলেন তালীম এবং বক্তৃতা দেওয়া। যখন দেখলেন কিছু লোকের মধ্যে ইসলামের দাওয়াতের কোন প্রভাব পরছে না, ক্রমশ তিনি নিজেকে বাস্তবিক ভাবে প্রয়োগ করা শুরু করলেন পুজাতন্ত্র নির্মূল করার ক্ষেত্রে। একদিন শেইখ আমীরকে বললেন, “চলুন আমরা গুড়িয়ে দেই বাঁধাই করা যাইদ ইব্ন আল-খাত’তাবের কবর (যাইদ ইব্ন আল-খাত’তাব, উমর ইব্ন আল-খাত’তাবের ভাই ছিলেন এবং শহীদ হয়ে ছিলেন ১২ হিজরিতে মুসাই’লিমা খাদ’দাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং পরে তার কবরকে বাঁধাই করা হয়েছিল)। বিভিন্ন দল তৈরি হওয়ার কারনে এটি হয়েছিল এবং রাসূল (সা:) নিষেধ করেছেন কবর বাঁধাই করতে অথবা তার উপর মসজিদ তৈরি করতে। তাছাড়া পুজাতন্ত্রের মাধ্যমে এই বাঁধাই করা কবর মানুষের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই এটাকে অবশ্যই গুড়িয়ে দিতে হবে। রাজা একমত হন এবং ৬০০ জন যোদ্ধার সৈন দল একত্রিত করেন এবং কবরের দিকে ধাবিত হন শেইখের নেতৃতে। যখনই তারা কবরের কাছে গেলেন তখন মানুষ এগিয়ে আসল কবরকে রক্ষা করার জন্য, কিন্তু যখন তারা রাজা এবং তার সৈনদেরকে দেখল তখন তারা তাদের চিন্তা ধারা পালটিয়ে ফেললো। তারপর শেইখ বাঁধাই করা কবরকে গুড়িয়ে দিলেন। আল্লাহ্ তার হাত দিয়ে এটি করালেন, আলহামদুলিল্লাহ্ এখন আর এর কোন অস্তিত্ব নেই। একই ভাবে আরও বাঁধাই করা কবর, গুহা, গাছ ইত্যাদি ছিল, যা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এই ভাবে শেইখ তার কাজ করে যান কথা এবং কর্মের মাধ্যমে, যার দ্বারা তিনি খুব খ্যাতি অর্জন করেন। একদিন এক মহিলা আসলো তার কাছে এবং বলল যে উনি ব্যভিচারের পাপ করেছে। এটা বুঝতে পেরে যে মহিলাটি মানুষিক ভাবে সুস্থ, বিবাহিত এবং কোন পারিপার্শ্বিক চাপ ছারাই সে স্বীকার করেছে, তাই তার শাস্তি রুপে তাকে সুন্নত অনুসারে পাথর নিক্ষেপ করে মারার নির্দেশ দেন, কারন উনি এখন ওয়াইনার বিচারক। অপরদিকে, প্রতিবেশী আল-আহ্ছা গ্রামের রাজা ভয় পাচ্ছিল শেইখের অবস্থা সম্পর্কে, কারন তারা খারাপ কাজ করত, যেমন: ডাকাতি, হত্যা ইত্যাদি, যা তাদের জন্য সাধারন ব্যাপার ছিল। এই রাজা, উথমান রাজাকে চিঠি লিখলেন হুমকি দিয়ে এবং দাবি করলেন যেন শেইখকে হত্যা করা হয়। উথমান রাজা শেইখের কাছে এসে বললেন, “নোমাদ রাজা আমাকে বার্তা পাঠিয়েছে এই-এই করার জন্য। আমরা কখনও চাই না আপনাকে হত্যা করার জন্য, কিন্তু আমরা রাজার জন্য ভয় পাচ্ছি এবং আমরা তার সাথে যুদ্ধ করে পারব না। তাই আপনি যদি মনে করেন এখান থেকে চলে যেতে হবে, তাহলে আপনি এখান থেকে চলে যেতে পারেন” । শেইখ বললেন, “আমি শুধু মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকছি। এবং কালেমার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে যে আল্লাহ্ ছারা কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা:) আল্লাহ্র রাসূল। যারা ইসলামকে শক্ত করে আঁকরে ধরেছে এবং একে সত্যরের উপর প্রতিষ্ঠা রাখে, আল্লাহ্ তাকে সাহায্য করবে এবং তাকে তার শত্রুদের দেশের শাসনকর্তা বানিয়ে দিবেন। এবং তুমি যদি সহ্য করে সত্যবাদী থাক এবং এই ধর্ম গ্রহণ কর তাহলে খুশি থাক যে আল্লাহ্ তোমাকে রক্ষা করবেন নোমাদ রাজা থেকে এবং অন্যদের থেকে। আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমতা দিবেন তার দেশ এবং জাতির উপর” । কিন্তু উথমান বলল, “ও শেইখ! কিন্তু আমরা তার সাথে না পারব যুদ্ধ করতে, না পারব তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাড়াতে” । তাই, শেইখকে ওয়াইনা ছেরে চলে যেতে হল দারিয়াতে পায়ে হেঁটে কারণ উথমান তাকে যানবাহন হিসেবে কিছুই দেয় নি। দারিয়াতে পৌছে, শেইখ এমন একজনের ঘরে ছিলেন যিনি দারিয়ার একজন অন্যতম ভাল চরিত্রের বেক্তি ছিলেন, কিন্তু সে ভয় পাচ্ছিল দারিয়ার রাজা মুহাম্মাদ ইবেন সাউদের জন্য। শেইখ তাকে বললেন, ‘খুশি থাক এবং আশা কর ভালোর জন্য। আমি শুধু মাত্র মানুষকে ডাকছি আল্লাহ্র ধর্মের দিকে এবং তিনি নিঃসন্দেহ ভাবে এটাকে জয়ী করবেন, । শেইখের দারিয়াতে অবস্থানের খবর মুহাম্মাদ ইবেন সাউদের কাছে পৌঁছে গেল। এটা বলা হয়ে থাকে যে তার স্ত্রী প্রথম তাকে শেইখের সংবাদ দেয়। তিনি একজন দয়ালু এবং ধার্মিক মহিলা ছিলেন এবং তার স্বামীকে এই ভাবে বললেন যে, ‘এটি আল্লাহ্র প্রেরিত অনুগ্রহ। একজন বেক্তি যিনি মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকছে, কুরআন এবং রাসূল (সা:) এর সুন্নতের দিকে ডাকছে। কতই না অনুগ্রহ! তারাতারি তার কাছে যাও এবং তাকে সাহায্য কর। কখনও তাকে তা থেকে বাঁধা বা থামিয়ে দিয়ো না। মুহাম্মাদ ইবেন সাউদ তার কথা শুনলেন এবং শেইখের কাছে গিয়ে বায়াত (শপথ) করলেন, এই শর্তে যে উনি কোন দিন এ ভূখণ্ড ছেরে যাবেন না। শেইখ দারিয়ায় স্থায়ী ভাবে থাকলেন। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ তার কাছে আসল শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য, ওয়াইনা থেকে, ইরাক থেকে, মানফুহা থেকে, রিয়াদ থেকে এবং অন্যান্য প্রতিবেশী স্থান থেকে। মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করল, ভালবাসল, সহযোগিতা করল। শেইখ বিষয় ভিত্তিক শিক্ষা দিতেন: যেমন, ধর্মীয় মতবাদ, কুরআন, কুরআনের ব্যাখ্যা, ইসলামিক দর্শন এবং এর নিয়ম নীতি, হাদীস এবং এর ব্যাখ্যা, এবং অন্যান্য। তিনি এই ধরনের শিক্ষা সাধারণ জনগণের জন্য এবং নির্দিষ্ট বেক্তিদের জন্যেও করে থাকতেন। এই ভাবে তিনি তার দ্বীনের কাজ করে গেলেন দারিয়াতে। তার যুক্তি দেখিয়ে উনি বিভিন্ন আলেমের কাছে চিঠি লিখলেন পুজাতন্ত্র এবং বিদআতের বিরুদ্ধে। তার আলেমদের এবং শাসকদের সাথে যোগাযোগ এবং আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম তার খ্যাতি বয়ে নিয়ে আসে। তার আদর্শ বিস্তার লাভ করে মুসলিম দেশে এবং অন্যান্য দেশেও। আমরা কারন বশত জানি যে, প্রত্যেক ভাল কাজকেই হিংসা করা হয়, যেভাবে প্রত্যেক দ্বীন প্রচারকেরই শত্রু আছে। তাই আল্লাহ্ পাক কুরআনে বলছেন: এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি আপনার পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করত না…[সূরা আল-আনাম, আয়াত-১১২] শেইখ যখন জনপ্রিয়তা লাভ করতে লাগল তার শিক্ষকতার দ্বারা, বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়া তার লেখার জনপ্তিয়তার দ্বারা, তখন হিংসার ফলে অনেক দল বের হল তার বিরোধিতার জন্য। একদল ভণ্ড আলেম বের হল যারা সত্যকে মিথ্যা মনে করত এবং মিথ্যাকে সত্য মনে করত। তারা কবর বাঁধাই করা এবং কবরের বেক্তিদের কাছ থেকে চাওয়া ইসলামে বৈধ মনে করত। দ্বিতীয় দলের কাছে সঠিক জ্ঞান ছিল কিন্তু তারা শেইখের কাজকে গুরুত্ব দেয় নি। তারা অন্যদের বিশ্বাস করত এবং শেইখ থেকে দূরে থাকত। তৃতীয় দল যারা শেইখের বিরোধিতা করেছিল, তারা ভয় পাচ্ছিল যে তাদেরকে বাদ দেওয়া হবে তাদের অবস্থান এবং পদ থেকে। তারা শেইখের অনুসারীদের সাথে নম্র ব্যাবহার করেছে যেন অনুসারীরা তাদের অবস্থান থেকে উচ্ছেদ না করে এবং তাদের এলাকা দখল না করে। কেউ তার বিরোধিতা করেছে ধর্মের দোহাই দিয়ে, কেউ রাজনীতির দোহাই দিয়ে, যদিও তারা দাবি করত তারা শিক্ষিত, ধর্ম বিষয়ে জ্ঞানী, কিন্তু অন্যরা যারা শেইখের সাথে শত্রুতা করেছে তাদের কাছে প্রচার করত যে শেইখ ঐক্য নষ্ট করছে বিভিন্ন ভাগ তৈরির মাধ্যমে। কোন কোন ক্ষেত্রে তার বিরোধীরা বলেছে তিনি খারেজী দলভুক্ত। অনেকে তাদের অজ্ঞতা বশত তার নিন্দা করেছে ইত্যাদি। এভাবেই কথা যুদ্ধ চলতে থাকে তর্ক-বিতর্ক এবং ঝগড়ার মাধ্যমে। তিনি তাদের কাছে চিঠি লিখতেন, তারা আবার উত্তর দিত, এবং তিনি আবার পাল্টা উত্তর দিতেন। এভাবেই একাধিক প্রশ্ন এবং উত্তর জমানো হয় এবং তা বিভিন্ন খণ্ডে সংরক্ষণ করা হয়। আর আলহামদুলিল্লাহ্, অধিকাংশ গুলিই ছাপা হয়েছে। এরপর শেইখ জিহাদের দিকে অগ্রসর হন ১১৫৮ হিজরিতে, তিনি বিভিন্ন লোকের কাছে চিঠি লিখে দাওয়াত দিতেন জিহাদে অংশ গ্রহণ করার জন্য এবং পুজাতন্ত্র দূর করার জন্য যা তাদের অঞ্চলে বিদ্যমান ছিল। এভাবে তিনি দ্বীন প্রচার এবং যুদ্ধ করে যান ৫০ বছর যাবত, ১১৫৮ হিজরি থেকে তার মৃত্যুর ১২০৬ হিজরির পর্যন্ত। তার প্রচার কাজে সকল পন্থাই অবলম্বন করেছিলেন, জিহাদ, বক্তৃতা, বাঁধা, তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা আনুগত্য করত এবং বাঁধাই করা কবর ধ্বংস না করত এবং কবরের উপর করা মসজিদ ধ্বংস না করত। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পূর্ব পুরুষের ভ্রান্ত ধারনা ত্যাগ করে সঠিক ইসলাম মানত এর নিয়মনীতি অনুসারে। তার মৃত্যুর পর আল্লাহ্র পথে তার আদর্শ অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যান তার, ছেলেরা, নাতীরা এবং অনুসারীরা।
সৌদি আরব সহ গালফের সকল ক্ষমতাসীন এবং আমাদের এ অঞ্চলের রাজনীতি জীবিরা সকলেই পাশ্চাত্যের গোলাম। ইংরেজ এই গোলামীর ভবিষ্যদ্বানী করে গেছে আরো দুশো বছর আগে। আর সামনেও কত সময় এই গোলামী চলবে তা বলা যায়না। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি সবর ও সর্বাত্মক জিহাদের প্রয়োজন রয়েছে যাতে রাষ্ট্রীয় নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা যায়। আফগান,সোয়াত ও মধ্য আফ্রিকা এবং সম্প্রতি আরব বিশ্বের মিসর- সুদানে এই নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারছে। এবং ইসলামী সঠিক মুল্যবোধের জাগরনে প্রতিটি মুসলিম দেশেই বড় আকারে সম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তির জাগরন উদ্ভাসিত। তবে মধ্যপ্রাচ্যের এবং ভারতীয় উপমহাদেশের এই রাজনৈতিক নির্ভরশীলতার এর অর্থ এই নয় যে, আপনার এই রাজনৈতিক চরিত্রের কারনে বেসিক্যাল ঈমান আক্বীদা সব গেল।
” আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদী” ইরাক থেকে সৌদি আ্শ্রয় নিয়েছিলেন, যেমনি ইবনে তাইমিয়া রহ: এমন অনেক ব্যাক্তিত্ব, নিজ দেশের ফিৎনার সময় হেজাযে আশ্রয় চেয়েছেন। বর্তমান সৌদি আরবের ঐতিহাসিক নাম হেজায, নজদ নয়। নজদ ইরাক অঞ্চল। নজদের ব্যাপারে যেমন উক্ত হাদীস পেশ করছেন, তেমনি আবার বিপরীতমুখী হাদিস ও পাবেন। ইমাম আবু হানিফা ইরাকের। পারস্য অঞ্চলের সালমান ফারসী রযি এর গোষ্ঠীর ব্যাপারে জ্ঞান দ্বীনের ইলমের কথা বহু হাদীসে আছে। সুতরাং এসব আঞ্চলিকতা ইসলাম সমর্থন করে না।
আল্লামা ইকবাল এর লেখায় এবং তার দেখায় আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদী সাহেবের ব্যাপারে ভাল ধারনাই পাওয়া যায়, দি রোড টু মক্কার লেখক ইহুদী থেকে মুসলিম হওয়া মুহাম্মদ আসাদের বক্তব্য ও পড়তে পারেন, এরা সালাফি ঘরনা লেখক নয়, এবং এরা দুজনই নজদীকে দেখেছেন।
তবে এ কথা সত্য যে, কথিত সালাফি গোষ্ঠি ইবনে তাইমিয়া ও নজদীর নাম করে সৌদি আরবের বিশেষ পরজীবি সুবিধা ভোগ করে,, আর সৌদি রাজ পরিবার ও এ গোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে “জিহাদ” কিত্বাল” বিরোধী বিতর্কিত স্বার্থ জড়িত ফতোয়া ও স্টীম চালিয়ে যায়। সম্রাজ্যবাদের বিরোধী কোন জিহাদী জাগরণকেই এরা সহ্য করতে পারেনা।