জামিয়াতুল আসাদের তারাবীহ সংক্রান্ত পোষ্টের পোস্টমর্টেম
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ রবিবার, জুলাই ২০, ২০১৪ (৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
সমস্ত প্রশংসা ঐ মহান সত্তার জন্য যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং যার হাতে আমাদের প্রাণ। অসংখ্য দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নাবী মুহাম্মাদ সা: এর উপর।
অতঃপর আমরা জানি যে, আয়াতুল কুরসীর ফজিলত বর্ণনাকারী হচ্ছে শয়তান। সেই শয়তান থেকে যদি আমরা ভালো কিছু পেতে পারি তবে মাযহাবীদের থেকে কেন পাব না। তবে শর্ত হচ্ছে, শয়তানের কথা যেমন যাচাই করা প্রয়োজন, ঠিক একইভাবে মাযহাবীদের কথাও যাচাই করা প্রয়োজন।
“তারাবীর সলাত বিশ রাকআত নাকি আট রাকআত” এ বিষয়টা নিয়ে আমি/আমরা খোজ খবর নিচ্ছি। ৮ রাকআতের হাদিসগুলো সূর্যের মতোই ষ্পষ্ট। তারপরও আমাদের ২০ রাকআতের হাদিসগুলোও ভালোভাবে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সেই চিন্তা থেকেই দেখার দরকার মনে করলাম যে, মাযহাবীরা এর স্বপক্ষে কি দলিল দেয়।
আমাদের জামিয়াতুল আসাদ (লোকে বলে জামিয়াতুল ফাসাদ :P) এর দুজন মুফতী রয়েছেন। একজন সহকারী মুফতী এবং আরেকজন প্রধান মুফতী। একজন লুতফুর রহমান ফরাজী (লোকে বলে লুতু :P) এবং অন্যজন মুফতী হাফিজুদ্দিন।
তো এনারা দুজন মিলে মিশে তারাবীহর সলাত ২০ রাকআত প্রমাণ করার জন্য সংকলন, সংযোজন, বিয়োজন, কাটিং-ছাটিং করে ৬টি হাদিস তাদের ওয়েবসাইটে উপস্থাপন করেছেন। আমি ভালো কিছু পাওয়ার আশায় তাদের সাইটে গিয়ে তো হতবাক হয়ে গেছি। যাইহোক পোষ্টে তাদের নিকট কিছু প্রশ্ন থাকবে, যার সুন্দর উত্তর আমি তাদের নিকট আশা করব। আমার ভুলও হতে পারে, তাই মুফতীদ্বয়ের নিকট আমি নিজে সংশোধিত হওয়ার জন্য সুন্দর উত্তর চাচ্ছি।
==> আমার বক্তব্যঃ উপরে ১ নং দালিল হিসেবে হুজুরদ্বয় যে হাদিসটি দিয়েছেন, সেটির লিংক নিচে দেওয়া হলো
http://library.islamweb.net/hadith/display_hbook.php?bk_no=616&hid=436&pid=489197
নেট থেকে সার্চ দিয়ে যা দেখা গেল তা হচ্ছে হাদিসটি ৩টি কারণে যঈফ।
১. সানাদে আবুল হাসানা আছেন যিনি মাজহুল (অজ্ঞাত)।
প্রমাণ: http://library.islamweb.net/hadith/RawyDetails.php?RawyID=58585
২. সনদে مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ الرَّازِيُّ যিনি মাতরুক ( তথা হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য)
প্রমাণ: http://library.islamweb.net/hadith/RawyDetails.php?RawyID=6930
৩. সনদে مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ الرَّازِيُّ রয়েছেন যিনি হাদিসের হাফিজ কিন্তু মাতরুক (পরিত্যাজ্য)
প্রমাণ: http://library.islamweb.net/hadith/RawyDetails.php?RawyID=6018
মুফতীদ্বয় ও তাদের ছাত্রদের নিকট থেকে এর সদুত্তর জানতে চাচ্ছি যে,
১. হাদিসটা কিভাবে সহীহ?
২. এটা কি মাযহাবী মতামতের পক্ষে যাওয়াতেই সহীহ হয়ে গেল?
৩. যদি না হয় তবে একটা যঈফ হাদিসকে কেন তাহক্বীক না করেই কেন অজ্ঞ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করছেন?
৪. আর যদি তাহক্বীক করে থাকেন, তবে জেনে শুনে দুজন মুফতী সাহেব কেন এই যঈফ হাদিস কে সহীহ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে নবী সা: এর নামে মিথ্যাচার করছেন?
৫. নাকি মাযহাবের পক্ষে গেলে হাদিসের সহীহ যঈফ যাচাই করার প্রয়োজন নেই?
====================================================================
==> আমার বক্তব্যঃ উপরে ২ নং দলিল হিসেবে আপনারা যে হাদিসটি দিয়েছেন সেটি যঈফ। কারো কারো মতে এটি জাল। কারণ সানাদে আবী শায়বা ইব্রাহিম বিন উসমান রয়েছেন।
হাদীসটি বর্নিত হয়েছে, ইবনে আবি শায়বা ‘মুসান্নাফ’ ২/৯০/২। আবদ বিন হামিদ মুনাতাখাব মিনাল মুসনাদ, তাবারানী ‘মু’জামুল কাবীর’ ৩/১৪৮/২ ও আওসাত ইবনে আলী ‘কামেল’ ১/২৩, খতীব “মুওয়াজ্জেহ” গ্রন্থ ১/২১৯, বাইহাকী ও অন্যান্যরা । এদের প্রত্যেকেই আবী শায়বার সনদে এটা বর্ননা করেছেন।
ক) ইমাম তাবারানী বলেন, ইবনে আব্বাস(রাঃ) হতে এই সনদ ব্যাতীত অন্য সনদে এটি বর্নিত হয়নি।
খ) ইমাম বায়হাকী বলেন, এটি আবু শায়বার একক বর্ননা, আর সে হল যঈফ রাবী।
গ) হাইসামী(রহঃ) বলেন, এখানে আবু শায়বা হল যয়ীফ।
ঘ) হাফিজ(রহঃ) বলেন, ইবনে আবু শায়বার সম্পৃক্ততার কারনে সনদটি দূর্বল।
ঙ) হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত হাদিস বিশেষজ্ঞ আল্লামা জালালুদ্দীন যায়লায়ী হানাফী(রহঃ)-ও এই সনদকে দূর্বল বলেছেন।তিনি হাদীসের “মতন”কে অস্বীকার করে বলেন, এটি আয়েশা(রাঃ) বর্নিত “১১ রাকাত তারাবীর” বিশুদ্ধ হাদিসের বিপরীত।
চ) অতঃপর দেখুন, নাসবুর রায়া ২/১৫৩, হাফিজ ইবনু হাজার(রহ)-ও একই কথা বলেছেন। ফকীহ আহমদ বিন হাজার(রহঃ) ‘ফাতাওয়া কুবরা’ গ্রন্থ বলেন,-নিশ্চয় ওটি চরম দূর্বল হাদিস।ইরোয়া গালীল-৪৪৫।
ছ) ইমাম নাসাঈ(রহঃ) বলেন, সে পরিত্যক্ত।
চ) ইমাম শুবা(রহঃ) বলেন, সে মিথ্যাবাদী।
ছ) ইমাম দারেমী(রহঃ) বলেন, তার বর্নিত তথ্য দলিল হিসাবে গন্য নয়(মিযানুল ইতিদাল ১ম খন্ড)।
জ) ইমাম যাহাবী তাঁর মীযানুল ই‘তিদাল গ্রন্থে আবু শাইবাকে মুনকার বলেছেন।
ঝ) হাফিয ইবন হাজার আসকালানি যঈফ বলেছেন। আর অন্য কোনো সনদও তিনি পাননি।
ঞ) ইমাম বায়হাকী যা তার কুবরা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, (২/৪৯৬) ইবনুল হুম্মাম ফী শরহে ফাতহুল কাদীর, (১/৩২৩), যাহাবী তার মীযানুল ই‘তিদালে (১/৪৭)।
সুতরাং মুফতীদ্বয়ের নিকট জানতে চাই,
১. এত এত মুহাদ্দিসগণ যেই বর্ণনাকারীকে মিথ্যাবাদী (কাজ্জাব), মাতরুক (পরিত্যাজ্য) বলে যঈফ বলেছেন, সেই সবকিছু উপেক্ষা করে কেন হাদিসটা দিলেন?
২. হাদিসটা সহীহ প্রমাণ করেন? আর যদি বলেন যে, মাযহাবের পক্ষে যাওয়াতেই হাদিস সহীহ, তবে আমাদের কিছু করার নাই।
====================================================================
==> আমার বক্তব্যঃ উপরে ৪ নং দলিলে আপনার দুজন মুফতী দুইটা কারসাজি করেছেন।
১. লাইলাতান এর অনুবাদে রাকআত বসিয়েছেন।
২. হাদিসটি কাটসাট করেছেন অর্থাৎ সম্পূর্ণ হাদিসটি উল্লেখ করেননি।
হাদিসটিতে রয়েছে যে উবাই ইবনে কাব রা. ২০ রাত তাবারীর সলাত পড়িয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর পড়াননি। আর ২০ রাতকে আপনারা ২০ রাকআত বানিয়ে ফেলেছেন। সম্পূর্ণ হাদিসটি নিচে দেখুন।
প্রশ্ন-১: ইসলামিক ফা্উন্ডেশন ও “বিশ রাত” অনুবাদ করেছে। কিন্তু আপনাদের মতো মাযহাবী ২জন সহকারী ও প্রধান মুফতীর নিকট কেন “বিশ রাত” “বিশ রাকআত” হয়ে গেল- তা আমাদের নিকট ব্যাখ্যা করুন।
প্রশ্ন-২: আর কেনই বা হাদিসের অংশটুকু কেটে উপস্থাপন করলেন, সেটাও আমাদের সুন্দরভাবে জানান।
প্রশ্ন-৩: যদি বলেন যে, মাযহাবী আলিম হলে অনুবাদ চ্যাঞ্জ করে মাযহাবের পক্ষে ফাতওয়া আনার জন্য হাদিসকে কাটসাট করা জায়েজ, তবে সেটাও আমাদের নিকট স্বীকার করুন।
প্রশ্ন-৪: এছাড়াও আমার জানা মতে হাদিসের সনদটি যইফ। কারণ হাসান উমর রা. কে পাননি (তাহযিবুত তাহযিব)। সুতরাং আপনি প্রমাণ করুন যে, হাসান উমর রা. কে পেয়েছেন। এবং হাদিসটি মুনকাতী নয়।
====================================================================
==> আমার বক্তব্যঃ আপনাদের প্রদত্ত উপরে ৫ নং হাদিসটি আবুল হাসানার বর্ণনা। আর আবুল হাসানা মাজহুল (অজ্ঞাত) হওয়ার কারণে উক্ত হাদিসটি যঈফ।
১. সানাদে আবুল হাসানা আছেন যিনি মাজহুল (অজ্ঞাত)।
প্রমাণ: http://library.islamweb.net/hadith/RawyDetails.php?RawyID=58585
ক) ইমাম বায়হাকী বলেন, এর সনদে দূর্বলতা রয়েছে।
খ) ইমাম যাহাবী বলেছেন, সে কে, তা জানা যায় নি।
গ) হাফিয(রঃ) বলেন, সে অজ্ঞাত। আবুল হাসানা কর্তৃক বর্নিত হাদীস প্রত্যাখ্যাত। মিযানুল ইতিদাল- ১ম খন্ড, যঈফ সুনানুল কুবরা-২য় খন্ড, বায়হাকী ।
প্রশ্ন-১: যে হাদিসটির সানাদে মাজহুল রাবী আছে, সেটির ত্রুটি গোপন করে কেন সহীহ বলে চালিয়ে দিলেন?
প্রশ্ন-০২. হাদিসটি দিয়ে কি এটাই প্রমাণ করলেন যে, হানাফীদের মতের পক্ষে গেলে জাল হাদিসও সহীহ হয়ে যায়?
প্রশ্ন-০৩. এটাই কি ইমাম আবু হানিফা রহ. এর শিক্ষা?
====================================================================
==> আমার বক্তব্যঃ সর্বশেষ ৬ নং হাদিস হিসেবে উপরে আপনারা যা উল্লেখ করলেন, সেখানে আমার মতে বিশাল বড় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
কারণ:
১. এখানে হাদিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের অনুবাদ করা হয়নি। অর্থাৎ “আমাশ বলেছেন” অংশটা গোপন করা হয়েছে। অনুবাদই করা হয়নি।
২. হাদিসটি মুনকাতি (সনদ বিচ্ছিন্ন) হওয়ার কারণে যঈফ। কেননা, নিশ্চয় আ‘মাশ (রহ.) ইবন মাসউদ কে পাননি। (তাহযিবুত তাহযিব)
আমার ধারণা,
=> যেই অংশটার কারণে হাদিসটি যঈফ, আপনারা মুফতীদ্বয় ইচ্ছাকৃত ভাবে সেই অংশটির অনুবাদই করেননি।
=> আর আমাশ রহ. যে ইবনে মাসঊদ রা. কে পাননি, সেটাও আপনারা উল্লেখ করেননি।
সুতরাং আপনাদের নিকট প্রশ্নঃ
প্রশ্ন-১: আপনারা কেন সম্পূর্ণ হাদিসটির অনুবাদ করলেন না?
প্রশ্ন-২: এর পিছনে রহস্য কি?
প্রশ্ন-৩: হাদিসটি যঈফ হওয়াটাকে কেন গোপন করলেন? আর যদি বলেন যে, হাদিসটাকে আপনি যঈফ মনে করেন না, তবে কারণসহ এটিকে সহীহ প্রমাণ করুন। যদি সহীহ প্রমাণ না করতে পারেন, তবে অজ্ঞ মুসলিমদের যঈফ হাদিস শিক্ষা দিয়ে কি আপনারা অন্যায় করছেন কিনা সেটা স্বীকার করুন।
আশা করি মুফতীদ্বয় আমাদের এই সমস্ত উত্তরগুলো দিয়ে বাধিত করবেন। মুফতীদ্বয় থেকে ভালো কিছু দলিল আশা করেছিলাম। কিন্তু হতাশ হলাম। তাই উনাদের থেকে বা উনাদের অনুসারীদের থেকে উত্তম সদুত্তোর আশা করছি। ধন্যবাদ
মুফতীদ্বয়কে আবারও বলছি যে, আপনারা পরিষ্কার করে বলুনঃ-
=> আপনারা কি অজ্ঞ মুসলিমদের সহীহ হাদিসের নাম করে যঈফ ও জাল হাদিস শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন?
=> আপনারা কি যঈফ ও জাল হাদিস প্রচার করে জান্নাত পেতে চান?
=> আপনারা কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এমনটি করছেন, নাকি শয়তানের সন্তুষ্টির জন্য?
সুন্দর জবাব আশা করছি। আল্লাহ আমাদের সত্য ও সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন।