রাফউল ইয়াদাঈনের সব হাদীস : পক্ষে বিপক্ষের সবার দলীলই তো দেখলেন, এবার সব হাদীস নিজেই পড়ে সিদ্ধান্ত নিন। দেখুন: মাযহাবের নামে হানাফীরা আপনার সাথে কতবড় ধোঁকাবাজি করছে।
লিখেছেন: ' ABU TASNEEM' @ রবিবার, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬ (৯:২৭ পূর্বাহ্ণ)
রাফউল ইয়াদাঈন অর্থ: দুই হাত উত্তোলন করা । এটি আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণের অন্যতম নিদর্শন। সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) স্বলাতে চার জায়গায় দু’হাত উঠাতেন অর্থাৎ চার জায়গায় রাফউল ইয়াদাঈন করতেন ।
১. তাকবীরে তাহরীমার সময় ২. রুকুতে যাওয়ার সময়
৩. রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় এবং
৪. তৃতীয় রাকায়াতে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধার সময় ।
কিন্তু সহীহ হাদীস থেকে অসংখ্য দলীল থাকা স্বত্বেও আমাদের দেশের হানাফী মাযহাবের ফতোয়া হচ্ছে: নামাযে প্রথম তাকবীর ছাড়া আর কখনো দুই হাত উঠাবে না । (হিদায়াত, ১ম খন্ড, ৮৬ পৃষ্ঠা)
আর বাস্তবেও তারা এর উপরে আমল করে না । যদিও তাদের এই সিদ্ধান্ত সরাসরি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর কথা, কাজ ও বাস্তব আমলের সাথে সাংঘর্ষিক । তাই আমরা এখানে রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে বর্ণিত দলীল সমূহ এবং হানাফী মাযহাবীরা না করার পক্ষে যে সমস্ত কথা বলে থাকে, যে সমস্ত দলীল পেশ করে থাকে তা সংকলন করার চেষ্টা করছে যাতে একজন সত্য সন্ধানী সহজে সেগুলি নিয়ে যাচাই বাছাই করতে পারে, চিন্তা গবেষণা করতে পারে এবং তাদের জন্য সত্য গ্রহণ করা তার জন্য সহজ হয়ে যায় এই লক্ষেই আমাদের এই প্রয়াশ । মহান আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন ।
ক্রমিক নং রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে হাদীস গ্রন্থগুলি থেকে দলীল এবং পর্যালোচনা
1. আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যখন স্বলাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তার কাঁধ বরাবর উঠাতেন । আর যখন রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন তখনও একইভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বলতেন । কিন্তু সিজদাহর সময় এমন করতেন না । সহীহুল বুখারী, পর্ব: আযান, ১০/৮৩ অধ্যায়: স্বলাত শুরু করার সময় প্রথম তাকবীরের সাথে সাথে উভয় হাত উঠানো, হাদীস নং-৭৩৫ ।(তাও:পাব:)
2. আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে দেখেছি, তিনি যখন স্বলাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং যখন তিনি রুকুর জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরকম করতেন । আবার যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন তখনও এরকম করতেন এবং সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন । তবে সিজদাহর সময় এরকম করতেন না । সহীহুল বুখারী, পর্ব: আযান, ১০/৮৪ অধ্যায়: তাকবীরে তাহরীমা, রুকুতে যাওয়া এবং রুকু হতে উঠার সময় উভয় হাত উঠানো । হাদীস নং-৭৩৬ ।(তাও:পাব:)
3. আবু কিলাবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) কে দেখেছেন, তিনি যখন স্বলাত আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তার দুহাত উঠাতেন আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখনও তার উভয় হাত উঠাতেন, আবার যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন তখনও তার উভয় হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রসূল (সাঃ) এরুপ করেছেন। সহীহুল বুখারী, পর্ব: আযান, ১০/৮৪ অধ্যায়: তাকবীরে তাহরীমা, রুকুতে যাওয়া এবং রুকু হতে উঠার সময় উভয় হাত উঠানো । হাদীস নং-৭৩৭ ।(তাও:পাব:)
4. আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ) কে তাকবীর দিয়ে স্বলাত শুরু করতে দেখেছি, তিনি যখন তাকবীর বলতেন তখন তার উভয় হাত উঠাতেন এবং কাঁধ বরাবর করতেন । আর যখন রুকুর তাকবীর বলতেন তখনও এরকম করতেন । আবার যখন সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন, তখনও এরকম করতেন এবং রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বলতেন । কিন্তু সিজদাহয় যেতে এরকম করতেন না । আর সাজদা হতে মাথা উঠাবার সময়ও এমন করতেন না । সহীহুল বুখারী, পর্ব: আযান, ১০/৮৫ অধ্যায়: উভয় হাত কতটুকু উঠাবে । হাদীস নং-৭৩৮ ।(তাও:পাব:)
5. নাফি (রাহঃ) হতে বর্ণিত যে, ইবনু উমার (রাঃ) যখন স্বলাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু’হাত উঠাতেন আর যখন রুকু করতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন । অতঃপর যখন সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন এবং দু’রাকাত আদায়ের পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন । এ সমস্ত আল্লাহর রাসূল (সাঃ) হতে বর্ণিত বলে ইবনু উমার (রাঃ) বলেছেন । এ হাদীসটি হাম্মাদ ইবনু সালাম ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন । ইবনু তাহমান আইয়্যুব ও মুসা ইবনু উকবাহ (রাঃ) হতে এ হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন । সহীহুল বুখারী, পর্ব: আযান, ১০/৮৬ অধ্যায়: দু’রাকাআত আদায় করে দাঁড়াবার সময় দু’হাত উঠানো । হাদীস নং-৭৩৯ ।(তাও:পাব:)
6. সালিম এর পিতা ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছি, তিনি যখন স্বালাত আরম্ভ করতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন। এমনকি তা একেবারে তার উভয় কান বরাবর হয়ে যেত। আর রুকু করার পূর্বে এবং যখন রুকু থেকে উঠতেন (তখনও অনুরুপভাবে হাত উঠাতেন)। কিন্তু উভয় সিজদার মাঝখানে তিনি হাত উঠাতেন না। সহীহ মুসলিম, পরিচ্ছেদ: তাকবীরে তাহরীমা, রুকু এবং রুকু থেকে উঠার পর উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠানো মুস্তাহাব; সিজদা থেকে উঠার পর এরুপ করতে হবে না। হাদীস নং-৭৪৭ ।(ই.ফা.বা)
7. ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন স্বালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন। এমনকি তা তার উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। তারপর তাকবীর বলতেন। পরে যখন রুকু করার ইরাদা করতেন তখনও অনুরুপ করতেন। আবার রুকু থেকে যখন উঠতেন তখনও অনুরুপ করতেন। কিন্তু সিজদা থেকে তখন মাথা তুলতেন তখন এরুপ করতেন না। সহীহ মুসলিম, পরিচ্ছেদ: তাকবীরে তাহরীমা, রুকু এবং রুকু থেকে উঠার পর উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠানো মুস্তাহাব; সিজদা থেকে উঠার পর এরুপ করতে হবে না। হাদীস নং-৭৪৮ ।(ই.ফা.বা)
8. আবু কিলাবা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাদ্বিঃ) কে দেখলেন, যখন স্বালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন, তখন তাকবীর বলে উভয় হাত উঠালেন। আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করলেন তখন উভয় হাত উঠালেন। আর রুকু থেকে যখন মাথা উঠালেন তখন আবার হাত উঠালেন এবং (পরে) বর্ণনা করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরুপ করতেন। সহীহ মুসলিম, পরিচ্ছেদ: তাকবীরে তাহরীমা, রুকু এবং রুকু থেকে উঠার পর উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠানো মুস্তাহাব; সিজদা থেকে উঠার পর এরুপ করতে হবে না। হাদীস নং-৭৫০ ।(ই.ফা.বা)
9. মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকবীর (তাকবীরে তাহরীমা) বলে উভয় হাত কান বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন তখনও কান বরাবর উভয় হাত উঠাতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা তুলে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন তখনও অনুরুপ করতেন। সহীহ মুসলিম, পরিচ্ছেদ: তাকবীরে তাহরীমা, রুকু এবং রুকু থেকে উঠার পর উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠানো মুস্তাহাব; সিজদা থেকে উঠার পর এরুপ করতে হবে না। হাদীস নং-৭৫১ ।(ই.ফা.বা)
10. ওয়াইল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছেন যে, তিনি যখন স্বালাত শুরু করলেন তখন উভয় হাত উঠিয়ে তাকবীর বললেন। রাবী হাম্মাম বলেন, তিনি উভয় হাত কান বরাবর উঠালেন। তারপর কাপড়ে (গায়ের চাদরে) ঢেকে নিলেন। তারপর তার ডানহাত বামহাতের উপর রাখলেন। তারপর রুকু করার সময় তার উভয় হাত কাপড় থেকে বের করলেন। পড়ে উভয় হাত উঠালেন এবং তাকবীর বলে রুকুতে গেলেন। যখন ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বললেন তখন উভয় হাত তুললেন। পরে উভয় হাতের মাঝখানে সিজদা করলেন। সহীহ মুসলিম, পরিচ্ছেদ: তাকবীরে তাহরীমার পর বুকের নিচে নাভির উপরে বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখা এবং সিজদায় উভয় হাত মাটিতে কান বরাবর রাখা। হাদীস নং-৭৮১ ।(ই.ফা.বা)
11. সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে স্বলাত আরম্ভকালে নিজের দু’হাত স্বীয় কাঁধ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি । অনুরুপভাবে রুকুতে গমনকালে এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর পরেও তাকে হাত উঠাতে দেখেছি । তবে তিনি দুই সিজদার মাঝে হাত উঠাতেন না । সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: স্বলাত শুরু করা সম্পর্কে, অনুচ্ছেদ: ১১৬ রাফউল ঈয়াদাইন, হাদীস নং-৭২১, সনদ সহীহ ।(আলবানী একাডেমী)
12. আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বালাতে দাঁড়ানোর সময় স্বীয় দুহাত কান পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি তাকবীর বলে রুকুতে গমনকালেও দুহাত উপরে উঠাতেন। রুকু থেকে উঠার সময়ও দুহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন। তবে তিনি সিজদাহর সময় হাত উঠাতেন না। প্রত্যেক রুকুর জন্য তাকবীর বলার সময়, দুহাত উঠাতেন এবং এভাবেই স্বালাত সম্পন্ন করতেন। সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: স্বলাত শুরু করা সম্পর্কে, অনুচ্ছেদ: ১১৬ রাফউল ঈয়াদাইন, হাদীস নং-৭২২, সনদ সহীহ ।(আলবানী একাডেমী)
13. আবু ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাদ্বিঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে স্বালাত আদায় করেছি। তিনি তাকবীর বলার সময় স্বীয় দুহাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর স্বীয় হাত কাপড়ে ঢুকিয়ে ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি রুকুতে গমনকালে স্বীয় দুহাত বের করে উপরে উঠাতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময়ও দুহাত উপরে উঠাতেন। তারপর সিজদাহতে স্বীয় চেহারা দুহাতের তালু মধ্যবর্তী স্থানে রাখতেন। অতঃপর সাজদাহ থেকে মাথা উত্তোলনের সময়ও দুহাত উত্তোলন করতেন। এরুপে তিনি তার স্বালাত শেষ করতেন। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বলেন, আমি হাসান ইবনু হাসানকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর স্বালাত আদায়ের পদ্ধতি এরুপই ছিল। যে লোক এর অনুসরণ করেছে – সে তো করেছে আর যে তা বর্জন করেছে – সে তো তা বর্জন করেছে। সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: স্বলাত শুরু করা সম্পর্কে, অনুচ্ছেদ: ১১৬ রাফউল ঈয়াদাইন, হাদীস নং-৭২৩, সনদ সহীহ ।(আলবানী একাডেমী)
ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন: এ হাদীস ইবনু জাহাদাহ হতে হাম্মাদ বর্ণনা করেছে কিন্তু তাতে সিজদাহ থেকে মাথা উঠানোর সময় হাত উত্তোলনের কথা উল্লেখ নেই।
14. ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাদ্বিঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর স্বালাত আদায়ের পদ্ধতি দেখাব। তিনি বলেন, (তা হচ্ছে এরুপ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ক্বিবলামূখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে স্বীয় দুহাত কান পর্যন্ত উত্তোলন করেন। তারপর ডান হাত দিয়ে স্বীয় বাম হাত ধরেন। এবং রুকুতে গমণকালে স্বীয় দুহাত তদ্রুপ উত্তোলন করেন। তারপর তিনি তার উভয় হাতকে হাঁটুদ্বয়ের উপর রাখেন। রুকু হতে মাথা উত্তোলনের সময়ও তিনি উভয় হাত ঐভাবে উত্তোলন করেন। এরপর তিনি তার বাম পা বিছিয়ে দিলেন এবং বাম হাত বাম উরুর উপর এবং ডান হাত ডান উরুর উপর আলাদাভাবে রাখেন। অতঃপর তিনি তার ডান হাতের কনিষ্ঠ ও অনামিকা আঙ্গুলিদ্বয় আবদ্ধ করে রাখেন এবং মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি বৃত্তাকার করেন এবং শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেন। (বর্ণনাকারী বলেন), আমি তাকে এভাবে বলতে দেখেছি। আর বিশর নিজের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা বৃত্তাকার করেন এবং শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেন। সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: স্বলাত শুরু করা সম্পর্কে, অনুচ্ছেদ: ১১৬ রাফউল ঈয়াদাইন, হাদীস নং-৭২৬, সনদ সহীহ ।(আলবানী একাডেমী)
15. আসিম হতে এ সূত্রে অনুরুপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজের ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি ও জোড়া আঁকড়ে ধরেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি কয়েকদিন পর সেখানে গিয়ে দেখলাম, সাহাবীগণ প্রচন্ড শীতের দরুন শরীর আবৃত করে রেখেছেন। এ সময় তাদের হাতগুলো নিজ নিজ কাপড়ের নীচে নড়াচড়া করছিল (রাফউল ইয়াদাইরে কারণে)। সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: স্বলাত শুরু করা সম্পর্কে, অনুচ্ছেদ: ১১৬ রাফউল ঈয়াদাইন, হাদীস নং-৭২৬, সনদ সহীহ ।(আলবানী একাডেমী)
16. ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাদ্বিঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শীতের সময় নবী (সাঃ) এর নিকট এসে দেখলাম যে, তার সাহাবীগণ স্বালাতরত অবস্থায় তাদের কাপড়ের ভিতর থেকে নিজ হাত উত্তোলন করছিলেন। সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: স্বলাত শুরু করা সম্পর্কে, অনুচ্ছেদ: ১১৬ রাফউল ঈয়াদাইন, হাদীস নং-৭২৯, সনদ সহীহ ।(আলবানী একাডেমী)
17. মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রাহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু হুমাইদ আস সাঈদী (রাদ্বিঃ) কে দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে – যাদের মধ্যে আবু ক্বাতাদাহ (রাদ্বিঃ) ছিলেন – বলতে শুনেছি: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর স্বালাত সম্পর্কে আমি আপনাদের চেয়ে অধিক অবগত। তারা বললেন, সেটা আবার কিভাবে? আল্লাহর শপথ! আপনি তো তার অনুসরণ ও সাহচর্যের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে বেশি অগ্রহামী নন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তারা বললেন, এখন আপনি আপনার বক্তব্য পেশ করুন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বালাতে দাঁড়ানোর সময় নিজের দুহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে পূর্ণরুপে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এরপর ক্বিরাআত পড়ে তাকবীর বলে রুকুতে গমনকালে স্বীয় দুহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তারপর রুকুতে গিয়ে দুহাতের তালু দ্বারা হাঁটুদ্বয় দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতেন। রুকুতে তাঁর মাথা পিঠের সাথে সমান্তরাল থাকত। এরপর রুকু হতে মাথা উঠিয়ে সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে তিনি স্বীয় দুহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তিনি সাজদাহয় যেতেন, সাজদাহতে বাহুদ্বয় স্বীয় পাঁজরের পাশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। তারপর সাজদাহ হতে মাথা উঠিয়ে বাম পা বিছিয়ে তাতে সোজা হয়ে বলতেন এবং সাজদাহকালে স্বীয় পায়ের আঙ্গুলগুলি ফাঁকা করে রাখতেন। এরপর আবার সাজদাহয় যেতেন এবং আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ হতে মাথা উঠিয়ে বাম পা বিছিয়ে তাতে সোজা হয়ে বসতেন। এমনকি প্রতিটি হাড় স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেত। এরপর পরের রাকআতও অনুরুপভাবে আদায় করতেন। অতঃপর যখন দুরাকআত শেষে (তৃতীয় রাকআতের জন্য) দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলে দুহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন; ঠিক যেমনটি উঠাতেন স্বালাত আরম্ভকালে তাকবীর বলে। অতঃপর এভাবেই তাঁর অবশিষ্ট স্বালাত আদায় করতেন। অতঃপর শেষ রাকআতে স্বীয় বাম পা ডান পাশে বের করে বাম পাশের পাছার উপর ভর করে বসতেন। তখন তারা সকলেই বললেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এভাবেই স্বালাত আদায় করতেন। সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: স্বলাত শুরু করা সম্পর্কে, অনুচ্ছেদ: ১১৬ রাফউল ঈয়াদাইন, হাদীস নং-৭৩০, সনদ সহীহ ।(আলবানী একাডেমী)
18. সালিম (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন, আমি দেখেছি, যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বালাত শুরু করতেন, তখন নিজের কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন এবং যখন রুকুতে যেতেন এবং রুকু হতে উঠতেন (তখনও এরুপ করতেন)। ইবনু আবু উমার তার বর্ণিত হাদীসে আরো বলেছেন, কিন্তু তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুই সিজদাহর মাঝখানে হাত তুলতেন না। সুনান আত-তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: রুকুর সময় উভয় হাত উত্তোলন করা, হাদীস নং-২৫৫, সনদ সহীহ ।(হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী)
আবু ঈসা বলেন, ইবনু উমারের বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ।
19. আবু ঈসা বলেন, ফাযল ইবনু সাবাহ বাগদাদী তিনি সুফইয়ান ইবনু উয়াইনাহ হতে তিনি যুহরী হতে এই সনদ পরম্পরায় ইবনু আবী উমারের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুনান আত-তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: রুকুর সময় উভয় হাত উত্তোলন করা, হাদীস নং-২৫৬, সনদ সহীহ ।(হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী)
এ অনুচ্ছেদে উমার, আলী, ওয়াইল ইবনু হুজর, মালিক ইবনু হুয়াইরিস, আনাস, আবু হুরায়রা, আবু হুমাইদ, আবু উসাইদ, সাহল ইবনু সাদ, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা, আবু কাতাদা, আবু মুসা আশআরী, জাবির ও উমাইর লাইসী (রাদ্বিঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে।
নবী (সাঃ) এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবা যেমন, ইবনু উমার, জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ, আবু হুরায়রা, আনাস, ইবনু আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদ্বিঃ) ও আরো অনেকে; তাবিঈদের মধ্যে হাসান বসরী, আতা, তাউস, মুজাহিদ, নাফি, সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ, সাঈদ ইবনু যুবাইর প্রমূখ রুকুতে যাওয়া এবং রুকু হতে উঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। ইমাম মালিক মামার, আওযায়ী ইবনু উয়াইনাহ, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক (রাহঃ) এই মত গ্রহণ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক বলেন, হাত উত্তোলন সম্পর্কিত হাদীস সু্প্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রমাণিত। ইবনু মাসউদ (রাদ্বিঃ) যে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শুধু একবার রাফউল ইয়াদাইন করেছেন, অতঃপর আর কখনো করেননি এ হাদীসটি প্রমাণিত নয় এবং প্রতিষ্ঠিতও নয়। আমাকে এ কথা আহমাদ ইবনু আবদাহ বলেছেন, তিনি ওয়াহাব ইবনু জামআহ সূত্রে, তিনি সুফিয়ান ইবনু আব্দুল মালিকের সূত্রে এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাকের সূত্রে পেয়েছেন।
জারুদ ইবনু মুআজ বলেন, সুফইয়ান ইবনু উয়াইনা, উমার ইবনু হারুন, নাযর ইবনু শুমাইল প্রমূখ ইমামগণ নামায শুরু করতে, রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় রাফউল ইয়াদাইন করতেন।
20. ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছি যে, তিনি স্বালাত শুরু করতে তার দুই হাত, তার দুই কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন, তিনি রুকুতে যেতে এবং রুকু থেকে মাথা তুলতেও তাই করতেন কিন্তু দুই সিজদাহর মাঝখানে হাত উত্তোলন করতেন না। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৫৮, সনদ সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
21. মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন তাকবীরে তাহরীমা বলতেন, তখন তার দুই হাত তার উভয় কানের কাছাকাছি পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি রুকুতে যেতেও তাই করতেন এবং রুকু থেকে মাথা তুলতেও অনুরুপ করতেন। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৫৯, সনদ সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
22. আবু হুরায়রা (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছি যে, তিনি স্বালাত শুরু করতে, রুকুতে যেতে এবং সাজদায় যেতে তার দুই হাত তার দুই কাঁধ বরাবর উত্তোলন করতেন। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৬০, সনদ সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
23. উমাইর বিন হাবীব (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফরয স্বালাতের প্রতিটি তাকবীরের সাথে তার দুই হাত উপরে উঠাতেন। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৬১, সনদ সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
24. আবু হুমাইদ আস-সাইদী (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবু কাতাদা (রাদ্বিঃ) সহ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) এর সালাত সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে অধিক অবগত। তিনি যখন স্বালাতের জন্য দাঁড়াতেন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এবং তাঁর দুই হাত তার কাঁধ বরাবর উঠাতেন, অতঃপর আল্লাহু আকবার বলতেন। তিনি যখন রুকুতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখনও তার দুই হাত তার দুই কাঁধ বরাবর উঠাতেন। অতঃপর তিনি যখন ‘সামি আল্লাহু লিমাহ হামিদাহ’ বলতেন, তার দুই হাত উত্তোলন করতেন এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। তিনি দ্বিতীয় রাকআতে দুই সিজদাহ থেকে যখন দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তার দুই হাত তার কাঁধ বরাবর উঠাতেন, যেমনটি তিনি স্বালাত শুরু করার সময় করতেন। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৬২, সনদ সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
25. আব্বাস ইবনে সাহল আস-সাইদী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু হুমাইদ, আবু উসাইদ আস-সাইদী, সাহল ইবনে সাদ ও মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ (রাদ্বিঃ) একত্র হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর স্বালাত সম্পর্কে আলোচনা করেন। আবু হুমাইদ (রাদ্বিঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর স্বালাত সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে অধিক অবগত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বালাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন এবং তার উভয় হাত উপরে উঠাতেন। তিনি তাকবীর বলে রুকুতে যাওয়ার সময়ও হাত উপরে উঠাতেন, অতঃপর দাঁড়াতেন এবং তার দুই হাত উপরে উঠাতেন ও সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, যাতে সকল প্রত্যঙ্গ যথাস্থানে এসে স্থির হয়। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৬৩, সনদ সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
26. আলী ইবনে আবু তালিব (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) যখন ফরয স্বালাত পড়তে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তার দুই হাত তার দুই কাঁধ বরাবর উঠাতেন। যখন তিনি রুকুতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখনও অনুরুপ করতেন, যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখনও অনুরুপ করতেন। যখন তিনি দুই রাকআত শেষ করে দাঁড়াতেন তখনও অনুরুপ করতেন। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৬৪, সনদ হাসান সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
27. আনাস (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বালাত শুরু করার সময় এবং রুকুতে যাওয়ার সময় তার দুই হাত (উপরে) উঠাতেন। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৬৬, সনদ সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
28. ওয়াইল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিভাবে স্বালাত পড়েন তা অবশ্যই দেখাব। তিনি দাঁড়িয়ে ক্বিবলামুখী হলেন এবং তার দুই হাত তার দুই কান বরাবর উঠালেন। তিনি রুকুতে যাওয়ার সময়ও তার দুই হাত অনুরুপভাবে উঠালেন। তিনি যখন রুকু থেকে তার মাথা উঠালেন তখনও তার উভয় হাত অনুরুপভাবে উঠালেন। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৬৭, সনদ সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
29. আবু যুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদ্বিঃ) যখন স্বালাত শুরু করতেন, তখন তার উভয় হাত উপরে উঠাতেন। তিনি যখন রুকু করতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখনও অনুরুপ করতেন। তিনি বলতেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে এরুপ করতে দেখেছি। অধস্তন রাবী ইবরাহীম ইবনে তাহমান (রহঃ) তার দুই হাত তার দুই কান পর্যন্ত উঠালেন। সুনান ইবনু মাজাহ, অনুচ্ছেদ: রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় দুহাত উত্তোলন, হাদীস নং-৮৬৮, সনদ সহীহ ।(আত-তাওহীদ প্রকাশনী)
30. ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি, তিনি যখন নামাযে তাকবীর শুরু করতেন তখন তাকবীরের সময় তার দু’হাত উঠাতেন এবং দুই হাতখানাকে উভয় কাঁধ বরাবর করতেন। আর যখন রুকু করবার জন্য তাকবীর বলতেন তখনো এরূপ করতেন। এরপর যখন “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলতেন তখনো এমন করতেন এবং বলতেন- “রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু”। আর যখন তিনি সিজদাহ করতেন তখন এবং যখন সিজদাহ থেকে মাথা উঠাতেন তখন এমন করতেন না।
সুনান আন নাসাঈ, পর্ব : নামায শুরু করা, অধ্যায়: নামাযের প্রারম্ভিক কাজ, হাদীস নং-৮৭৬, সনদ সহীহ ।(হুসাইন মাদানী পাবলিকেশন্স)
31. ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি, যখন তিনি নামাযের জন্য দাঁড়াতেন দুই হাত উঠাতেন। এমনকি তার দুই হাত দুই কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। এর পর তিনি তাকবীর বলতেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এমন করতেন যখন তিনি রুকুর জন্য তাকবীর বলতেন। আঃর যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন তখনো এমন করতেন আর বলতেন – সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ” আর তিনি সিজদায় এমন করতেন না।
সুনান আন নাসাঈ, পর্ব : নামায শুরু করা, অধ্যায়: তাকবীর বলার পূর্বে উভয় হাত উঠানো, হাদীস নং-৮৭৭, সনদ সহীহ ।(হুসাইন মাদানী পাবলিকেশন্স)
32. আমর ইবনু মনসূর (রহঃ) ও আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু মুগীরা (রাহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন তখন দু’কাঁধ পর্যন্ত তার দু হাত তুলতেন। আর যখন রুকু করতেন এবং রুকু থেকে মাথা তুলতেন তখনো দু হাত এভাবে তুলতেন এবং বলতেন- সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদু। আর তিনি সিজদার সময় এমন করতেন না।
সুনান আন নাসাঈ, পর্ব : নামায শুরু করা, অধ্যায়: উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তোলা, হাদীস নং-৮৭৮, সনদ সহীহ ।(হুসাইন মাদানী পাবলিকেশন্স)
33. মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অন্যতম সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতেন তখন তার উভয় হাত কান পর্যন্ত তুলতেন। আর যখন তিনি রুকু করার ইচ্ছা করতেন, আর যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন (তখনও এরুপ করতেন)।
সুনান আন নাসাঈ, পর্ব : নামায শুরু করা, অধ্যায়: উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তোলা, হাদীস নং-৮৮০, সনদ সহীহ ।(হুসাইন মাদানী পাবলিকেশন্স)
34. ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি যে, যখন তিনি সালাত আরম্ভ করতেন তখন তাঁর হাতদ্বয় উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন, এবং রুকু থেকে তাঁর মাথা তুলতেন তখন হাতদ্বয় উভয় কানের নিম্নভাগ (লতি) এর বরাবর হয়ে যেত।
সুনান আন নাসাঈ, পর্ব : নামায শুরু করা, অধ্যায়: উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তোলা, হাদীস নং-৮৮১, সনদ সহীহ ।(হুসাইন মাদানী পাবলিকেশন্স)
35. সুওয়ায়দ ইবনু নাসর (রহঃ) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম: আমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের প্রতি, তিনি কিরুপে সালাত আদায় করেন। আমি তার দিকে তাকালাম। তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন এবং তার হস্তদ্বয় উত্তলোন করলেন। আর হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয়ের বরাবর হল। তারপর তিনি তার ডান হাত রাখলেন বাম হাতের উপর অর্থাৎ এক কব্জি অন্য কব্জির ওপর কিংবা এক হাত অন্য হাতের উপর রাখলেন। যখন তিনি রুকু করার ইচ্ছা করলেন হস্তদ্বয় পূর্বের মত উঠালেন। রাবী বলেন, তিনি হস্তদ্বয় স্হাপন করলেন তাঁর দুঁ’হাঁটুর উপর। এরপর যখন তিনি রুকু থেকে মাথা উঠালেন তখন তদ্রুপ হাত উঠালেন। এরপর তিনি সিজদা করলেন, তিনি তাঁর হাতের তালু-দ্বয় স্হাপন করলেন তাঁর উভয় কান বরাবর। তারপর তিনি বসলেন, তিনি বিছিয়ে দিলেন তাঁর বাম পা। আর তাঁর বাম হাতের তালু রাখলেন তার বাম পায়ের ও রানের উপর। আর ডান কনূইর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ডান রানের উপর রাখলেন। পরে তাঁর দুটি অঙ্গূলী (বৃদ্ধ ও মধ্যমা) টেনে তা দিয়ে বৃত্তাকার বানালেন এবং তারপর একটি অঙ্গুলী (তর্জনী) উঠালেন। আমি দেখলাম, তিনি তা নাড়ছেন (ইশারার জন্য) এবং তা দ্বারা দোয়া করছেন।
সুনান আন নাসাঈ, পর্ব : নামায শুরু করা, অধ্যায়: নামাযে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার স্থান, হাদীস নং-৮৮৯, সনদ সহীহ ।(হুসাইন মাদানী পাবলিকেশন্স)
36. আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ) হইতে বর্ণিত – রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামায আরম্ভ করার সময় উভয় হাত কাঁধ বরাবর তুলিতেন এবং যখন রুকু হইতে মাথা তুলিতেন তখনও দুই হাত অনুরুপভাবে তুলিতেন এবং বলিতেন সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ। অবশ্য সিজদার সময় তিনি হাত উঠাইতেন না। মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, পরিচ্ছেদ: নামায আরম্ভ করা, রেওয়ায়েত নং-১৬। (ই.ফা.বা)
37. সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত – আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ) যখন নিচের দিকে ঝুকিতেন ও মাথা উপরে তুলিতেন তখন তাকবীর বলিতেন।
নাফি (রহঃ) হইতে বর্ণিত – আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ) নামায আরম্ভ করার সময় উভয় হাত কাঁধ বরাবর তুলিতেন। আর যখন রুকু হইতে মাথা তুলিতেন তখন দুই হাত কাঁধের একটু নিচ পর্যন্ত তুলিতেন। মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, পরিচ্ছেদ: নামায আরম্ভ করা, রেওয়ায়েত নং-২০। (ই.ফা.বা)
38. আলী ইবনে আবী তালিব (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) যখন কোন ফরয স্বালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন তিনি আল্লাহু আকবার বলতেন এবং তার উভয় হাতকে কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন এবং ক্বিরাআত শেষ করে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তিনি এরুপ করতেন, আবার রুকু থেকে মাথা উঁচু করেও এরুপ করতেন। বসা অবস্থায় কোন নামাযেই তিনি এরুপ হাত উঁচু করতেন না। উভয় সিজদা শেষে দাঁড়িয়ে তিনি আবার একই প্রক্রিয়ায় উভয় হাত উত্তোলন করতেন এবং তাকবীর বলতেন।
[নফল ও ফরয উভয় নামাযেই রাসূল (সাঃ) এরুপ করতেন। বর্ণনাকারী রাসূল (সাঃ) কে ফরয স্বালাতে এরুপ দেখে হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।]
[আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইমাম তিরমিযী হাদীসখানা সহীহ বলেছেন। ইমাম আহমাদ হাদীসখানা সহীহ বলেছন। তবে এর বিপরীত মতও ইমাম আহমাদ থেকে পাওয়া যায়।]
মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়: নামাযের সুচনা তাকবীর ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উভয় হাত উঠানো বিষয়ক পরিচ্ছেদ, হাদীস নং-৪৮৮। (ই.ফা.বা)
39. আবু হুরায়রা (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনটি কাজ রাসূল (সাঃ) পালন করতেন অথচ মানুষ তা ছেড়ে দিয়েছে। সেগুলো হল, তিনি স্বালাতের শুরুতে উভয় হাত প্রসারিত করে উঁচু করতেন, রুকু করার পূর্বেও রুকু থেকে মাথা উঁচু করে ‘আল্লাহু আকবার বলতেন’ এবং ক্বিরাআতের পূর্বে আল্লাহর নিকট দুআ ও অনুগ্রহ কামনার জন্য চুপ থাকতেন।
[আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী ও বায়হাকী। শাওকানী (রাহঃ) বলেন, এ হাদীসের সনদে কোন ত্রুটি অভিযোগ নেই।]
মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়: নামাযের সুচনা তাকবীর ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উভয় হাত উঠানো বিষয়ক পরিচ্ছেদ, হাদীস নং-৪৯০।
40. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় কাঁধ বা তার কাছাকাছি স্থান পর্যন্ত উভয় হাতকে উঁচু করতেন। আবার রুকু করার সময়ও উভয় হাত উঠাতেন। রুকু থেকে মাথা উঁচু করেও উভয় হাত উত্তোলন করতেন। কিন্তু সিজদার সময় এরুপ করতেন না। মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়: নামাযের সুচনা তাকবীর ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উভয় হাত উঠানো বিষয়ক পরিচ্ছেদ, হাদীস নং-৪৯১। (ই.ফা.বা)
41. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের উভয় হাত (কাঁধ পর্যন্ত) উঁচু করা বিদআত। রাসূল (সাঃ) কখনও বক্ষের (বরাবর-এর) বেশী উঁচু করতেন করতেন না।
[অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য সকল তাকবীরে বক্ষ – বরাবর এর বেশী উঁচু করতেন না। তাই বক্ষ বরাবর এবং বেশী উঁচু করা বিদআত। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিঃ) এর মতে, “রাফউল ইয়াদাইন” জায়েয তা বক্ষ পরিমাণ – এর বেশী হলেও। যার দলীল তার বর্ণিত পূর্ববর্তী হাদীসখানি।]
[আহমাদ আব্দুর রহমান আল-বান্না এ হাদীসের বিরোধী নন। হাদীসখানার সনদ মোটামুটি মানসম্মত।]
মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়: নামাযের সুচনা তাকবীর ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উভয় হাত উঠানো বিষয়ক পরিচ্ছেদ, হাদীস নং-৪৯২। (ই.ফা.বা)
42. মালিক ইবনু হুওয়াইরিছ (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (সাঃ) কে রুকু করার প্রাক্কালে, রুকু থেকে মাথা উঁচু করার সময় এবং সিজদা থেকে মাথা উঁচু করার সময় এমনভাবে তার উভয় হাত উঁচু করতে দেখেছেন যাতে হাত দুটো তার উভয় কানের বরাবর পৌঁছে।
[বুখারী, মুসলিম ও আবু দাউদ হাদীসখানা বর্ণনা করেন। তবে সিজদার পরে হাত উত্তোলনের বক্তব্যকে অত্র হাদীসে অতিরিক্ত বলা হয়েছে। কোন কোন মুহাদ্দিসের মতে এর দ্বারা দুই রাকআত এর সিজদার পরে তৃতীয় রাকআতের জন্য উঁচু হওয়াকে বুঝানো হয়েছে।] মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়: নামাযের সুচনা তাকবীর ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উভয় হাত উঠানো বিষয়ক পরিচ্ছেদ, হাদীস নং-৪৯৩। (ই.ফা.বা)
43. মাইমুন আল মাক্কী (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাদ্বিঃ) কে দেখেছেন; তিনি তাদের সাথে স্বালাত আদায় করেছেন এভাবে যে, যখন তিনি দাঁড়াতেন, যখন তিনি রুকু করতেন, যখন তিনি সিজদা করতেন এবং যখন তিনি সিজদা থেকে দাঁড়ানের জন্য উঠতেন, সর্বদা তার উভয় হাত উঁচু করতেন।
মাইমুন আল মাক্কী বলেন, অতঃপর আমি ইবনু আব্বাস (রাদ্বিঃ) এর নিকট হাযির হলাম এবং তাকে বললাম, আমি ইবনু যুবায়ের (রাদ্বিঃ) কে এমন স্বালাত আদায় করতে দেখেছি যা অন্য কাউকে আদায় করতে দেখিনি। একথা বলে তিনি তাকে তার হাত উঁচু করার ইঙ্গিতগুলোর বর্ণনা দিলেন। তখন ইবনু আব্বাস (রাদ্বিঃ) বললেন, তুমি যদি রাসূল (সাঃ) এর স্বালাত আদায়ের দৃশ্য দেখতে আগ্রহী হও, তবে আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাদ্বিঃ) কে অনুসরণ করে স্বালাত আদায় কর।
{আবু দাউদ (রহঃ) হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন। অত্র হাদীসের সনদে ইবনে হুইয়া আছেন যার ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। তাছাড়া মাইমুন আল মাক্কী একজন অখ্যাত ব্যক্তি। মাইমুন এর বক্তব্য আমি ইবনু যুবায়ের (রাদ্বিঃ) কে এমনভাবে স্বালাত আদায় করতে দেখেছি, যা অন্য কাউকে দেখিনি – কথাটি যৌক্তিক নয়। তাই মুহাদ্দিসগণের মতে হাদীসখানা দূর্বল এবং এটিকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না।
মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়: নামাযের সুচনা তাকবীর ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উভয় হাত উঠানো বিষয়ক পরিচ্ছেদ, হাদীস নং-৪৯৪। (ই.ফা.বা)
44. আলী (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) যখন ফরয নামাযে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন এবং তার উভয় হাত তার কাঁধ বরাবর উঠাতেন। তিনি কিরাআত পড়া শেষ করে যখন রুকুতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখনও তাই করতেন (হাত উত্তোলন করতেন) এবং যখন রুকু থেকে উঠতেন তখনও তাই করতেন। তিনি নামাযে বসা অবস্থায় কখনও হাত উঠাতেন না। যখন তিনি দুই সিজদা দিয়ে দাঁড়াতেন তখনও একইভাবে তার দুই হাত হাত উত্তোলন করতেন এবং আল্লাহু আকবার বলতেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৮২(১)। (ই.ফা.বা)
45. সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন তার দুই হাত তার দুই কাঁধ বরাবর উপরে উঠাতেন, অতঃপর তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন। তিনি যখন রুকুতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখনও ঐরুপ করতেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও ঐরুপ করতেন। যখন তিনি (দ্বিতীয়) সিজদা থেকে মাথা তুলে (দাঁড়াতেন) তখন ঐরুপ করতেন না। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৮৩(২)। (ই.ফা.বা)
46. সালেম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্নিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) যখন নামায শুরু করতেন তখন তার দুই হাত উপরে উঠাতেন, এমনকি তা যখন তার উভয় কাঁধ বরাবর উন্নীত হতো তখন তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন। তিনি যখন রুকুতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখনও একইভাবে তার দুই হাত তার উভয় কাঁধ বরাবর উন্নীত করতেন, অতঃপর রুকুতে যেতেন। যখন তিনি (রুকু থেকে) তার পিঠ উঠানোর ইচ্ছা করতেন তখনও তার দুই হাত দুই কাঁধ বরাবর উন্নীত করতেন। তারপর তিনি “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ” (যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তা শুনেন) বলতেন। অতঃপর তিনি সিজদা করতেন এবং সিজদায় তার হাত দুটি উপরে উত্তোলন করতেন না। রুকুর পূর্বে তার প্রতিটি তাকবীর ধ্বনিতে তিনি তার দুই হাত উত্তোলন করতেন, এভাবে তিনি নামায শেষ করতেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৮৪(৩)। (ই.ফা.বা)
47. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে দেখেছি যে, তিনি নামাযের শুরুতে তার দুই হাত দুই কাঁধ বরাবর উত্তোলন করতেন, অতঃপর তাকবীর বলতেন। রুকুতে যাওয়ার তাকবীর বলতেও তিনি ঐরুপ করতেন। রুকু থেকে তার মাথা উঠাতেও অনুরুপ করতেন এবং বলতেন “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ”। তিনি সিজদা থেকে মাথা উঠাতে তা (হাত উত্তোলন) করতেন না। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৮৫(৪)। (ই.ফা.বা)
48. ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) নবী (সাঃ) সূত্রে এই সনদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। তিনি (দুই হাত) উত্তোলন করতেন এবং তাকবীর বলতেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৮৬(৫)। (ই.ফা.বা)
49. আব্দুল্লাহ (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন তার দুই হাত দুই কাঁধ বরাবর উপরে তুলতেন এবং তাকবীর বলতেন . . . . পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৮৭(৬)। (ই.ফা.বা)
50. ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন তখন তার দুই হাত কাঁধ বরাবর অথবা তার কাছাকাছি উত্তোলন করতেন। অতঃপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৮৮(৭)। (ই.ফা.বা)
51. আয-যুহরী (রাহঃ) থেকে এই সূত্রে বর্ণিত। তিনি (সাঃ) যখন তাকবীর দ্বারা নামায শুরু করতেন, তখন তাকবীর বলতে বলতে তার দুই হাত দুই কাঁধ বরাবর উপরে উঠাতেন . . . পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৮৯(৮)। (ই.ফা.বা)
52. আব্দুল্লাহ (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন তার হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন, এমনকি তা তার উভয় কাঁধ বরাবর উন্নীত হতেই তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন, অতঃপর যখন রুকুতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখনও তা তার উভয় কাঁধ পর্যন্ত উন্নীত হতো, অতঃপর এই অবস্থায় তাকবীর বলে রুকুতে যেতেন। অতঃপর যখন তিনি (রুকু থেকে) নিজের পিঠ উঠানোর ইচ্ছা করতেন তখনও তার হস্তদ্বয় তার উভয় কাঁধ বরাবর উন্নীত করতেন, অতঃপর বলতেন: সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ (যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তা শুনেন)। অতঃপর তিনি সিজদা করতেন এবং সিজদার কোন অবস্থায় তিনি তার হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন না। তিনি প্রতি রাকআতে রুকুর পূর্বে তাকবীর বলার সময় তার হস্তদ্বয় উপরে তুলতেন। এই নিয়মে তিনি তার নামায সমাপ্ত করতেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৯০(৯)। (ই.ফা.বা)
53. নাফে (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে উমার (রাদ্বিঃ) কোন ব্যক্তিকে তার নামাযে প্রতিবার উঠতে ও নিচু হতে তার দুই হাত উপরে উঠাতে না দেখলে তার প্রতি কংকর নিক্ষেপ করতেন, যাবত না সে উত্তোলন করে। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৯১(১০)। (ই.ফা.বা)
54. আনাস (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন নামায শুরু করতেন, যখন রুকু করতেন, রুকু থেকে তার মাথা উত্তোলন করতেন এবং যখন সিজদা করতেন তখন তার হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করতেন। এই হাদীস হুমায়েদ (রাহঃ) থেকে আব্দুল ওয়াহহার (রাহঃ) ব্যতীত অপর কেউ মারফুরুপে বর্ণনা করেননি। যথার্থ কথা হলো, এটা ছিল আনাস (রাদ্বিঃ) এর ব্যক্তিগত আমল। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৯২(১১)। (ই.ফা.বা)
55. ওয়ায়িল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ) কে দেখেছি যে, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন তার দুই হাত উপরে উত্তোলন করতেন, এমনকি তা তার উভয় কাঁধ বরাবর উন্নীত হতো। তিনি যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখনও এবং রুকু থেকে নিজের মাথা উঠানোর পরও (তাই করতেন)। তিনি (তাশাহহুদে) তার ডান উরুর উপর ডান হাত এবং বাম উরুর উপর বাম হাত রাখেন। তিনি (তাশাহহুদ পড়ার সময় ডান হাতের আঙ্গুল সমূহ দ্বারা) বৃত্ত বানান এবং এভাবে দোয়া করেন। সুফিয়ান (রাহঃ) নিজের তর্জনী দ্বারা ইশারা করেন (বুঝিয়ে দেন)। রাবী বলেন, পরে আমি রাসূল (সাঃ) এর সাহাবীদের নিকট এসে তাদেরকে দেখলাম, তারা শীতকালে তাদের আলখিল্লার মধ্যে তাদের আঙ্গুল উত্তোলন করেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৯৩(১২)। (ই.ফা.বা)
56. আলকামা ইবনে ওয়ায়িল (রাহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূল (সাঃ) কে দেখেছেন যে, তিনি (সাঃ) যখন নামায শুরু করতেন, যখন রুকু করতেন এবং যখন সিজদায় যেতেন তখন তার দুই হাত উপরে উত্তোলন করতেন। ইব্রাহিম (রাহঃ) বলেন, আমার ধারনামতে, আপনার পিতা কেবল ঐ এক দিনই রাসূল (সাঃ) কে দেখেছেন এবং এটা সংরক্ষন করেছেন। আব্দুল্লাহ (রাহঃ) এটা তার থেকে সংরক্ষন করেননি। অতঃপর ইব্রাহিম (রাহঃ) বলেন, তিনি (সাঃ) কেবল নামায শুরু করার সময়ই তার দুই হাত উপরে উত্তোলন করেছেন। মূল পাঠ জাবীর (রাহঃ) এর। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৯৫(১৩)। (ই.ফা.বা)
57. ওয়ায়িল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) যখন নামায শুরু করতেন তখন তার দুই হাত তার দুই কান বরাবর উপরে উত্তোলন করতেন। তিনি যখন রুকু করতেন এবং যখন “সামি আল্লাহু লিমাহ হামিদাহ” বলতেন তখনও তার দুই হাত উপরে উত্তোলন করতেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৯৫(১৪)। (ই.ফা.বা)
58. মালেক ইবনু হুওয়াইরিস (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন নামায শুরু করতেন, যখন রুকুতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন এবং রুকু থেকে নিজের মাথা উঠানোর পর নিজ হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করতেন। ইবনে মুবাশশির (রাহঃ) তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন নামায শুরু করতেন, যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন এবং যখন রুকু থেকে নিজের মাথা উঠাতেন তখন নিজ হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করতেন। আবু আওয়ানা (রাহঃ) তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন, যখন রুকু করতেন এবং যখন “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলে রুকু থেকে উঠতেন তখন তার দুই হাত তার কাঁধ বরাবর উপরে উঠাতেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৯৬(১৫)। (ই.ফা.বা)
59. আবু মুসা আল-আশআরী (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামাযের পদ্ধতি দেখাবো? অতএব তিনি তাকবীর (তাহরীমা) বললেন এবং নিজের হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করলেন, অতঃপর রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বললেন এবং নিজের হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করলেন, অতঃপর “সামি আল্লাহু লিমাহ হামিদাহ” বললেন, অতঃপর নিজের হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করলেন। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা অনুরুপ করো। আর তিনি দুই সিজদার মাঝখানে হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করেননি। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৯৭(১৬)। (ই.ফা.বা)
60. হাম্মাদ ইবনে সালামা (রাহঃ) থেকে তার সনদে নাবী (সাঃ) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। আন-নাদর ইবনে শুমাইল ও যায়েদ ইবনে হুবাব (রাহঃ) এই হাদীস হাম্মাদ (রাহঃ) এর সূত্রে মারফু রুপে বর্ণনা করেছেন এবং অপরাপর রাবী তার থেকে মাওকুফ রুপে বর্ণনা করেছেন। আমি আবু জাফর আহমাদ ইবনে ইসহাক ইবনে বাহলুল (রাহঃ) কে বলতে শুনেছি, এই হাদীস তিনি আমাদেরকে লিখালেন। তিনি বলেন, ইরাকবাসীদের মাযহাবই আমার মাযহাব। আমি স্বপ্নে নাবী (সাঃ) কে নামায পড়তে দেখেছি। আমি তাকে প্রথম তাকবীরে (তাহরীমায়) তার হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করতে দেখেছি। অতঃপর যখন রুকু করলেন এবং যখন রুকু থেকে তার মাথা উঠালেন (তখনও তার হস্তদ্বয় উত্তোলন করেছেন)। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১০৯৮(১৭)। (ই.ফা.বা)
এই হাদীস থেকে প্রমানিত হল যে, ইরাকবাসীদের আমলও ছিল রাফউল ইয়াদাইন করা।
61. আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মতে ইবনু মাসউদ (রাদ্বিঃ) এর নিম্নোক্ত হাদীস প্রমাণিত নয় : “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রথমবার তার দুই হাত উপরে উত্তোলন করতেন, তারপর আর উত্তোলন করতেন না।” আমার নিকট সেই ব্যক্তির হাদীস প্রমাণিত যাতে আছে : “তিনি যখন রুকু করতেন এবং যখন রুকু থেকে তার মাথা উঠাতেন তখনও তার দুই হাত উপরে উত্তোলন করতেন।” ইবনুল মুবারক (রাহঃ) বলতেন, উবায়দুল্লাহ আল উমারী, মালেক, মা’মার, সুফিয়ান, ইউনুস (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনে আবু হাফসা (রাহঃ) এই হাদীস আয যুহরী – সালেম – তার পিতা – নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১১০১(২০)। (ই.ফা.বা)
62. ওয়ায়িল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) কিভাবে নামায পড়েন তা দেখার জন্য আমি তার নিকট এলাম। তিনি ক্বিবলামুখী হলেন এবং তাকবীর (তাহরীমা) বলে নিজ হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করেন, এমনকি তা তার উভয় কান পর্যন্ত উন্নীত করেন। তিনি রুকুতে যেতেও নিজ হস্তদ্বয় কান বরাবর উত্তোলন করেন। অতঃপর তিনি রুকু থেকে নিজের মাথা উঠানোর পরও নিজ হস্তদ্বয় কান বরাবর উত্তোলন করেন। অতঃপর তিনি সিজদায় তার হস্তদ্বয় মাথা বরাবর (মেঝেতে) রাখেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১১০৭(২৬)। (ই.ফা.বা)
63. ওয়ায়িল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ) থেকে নাবী (সাঃ) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। তবে তিনি এই রিওয়ায়াতে সিজদার কথা উল্লেখ করেননি। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১১০৮(২৭)। (ই.ফা.বা)
64. আবু হুরায়রা ও ইবনু উমার (রাদ্বিঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন নামায শুরু করতেন, যখন রুকু করতেন এবং যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখন তার হস্তদ্বয় তার উভয় কাঁধ বরাবর উত্তোলন করতেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১১০৯(২৮)। (ই.ফা.বা)
ক্রমিক নং রাফউল ইয়াদাঈনের বিপক্ষে মাযহাবীদের উপস্থাপিত দলীল এবং পর্যালোচনা
1. হযরত জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন এবং বললেন, কী ব্যাপার, আমি তোমাদের হাত উঠাতে কেন দেখি যেন তা বেয়ারা ঘোড়ার উর্ধে উত্থিত লেজ, তোমরা নামাজে স্থির থাকবে । – রেফারেন্স দিয়েছে : সহীহ মুসলিম (হানাফিদের বহুল প্রচলিত, দলীল ভিত্তিক দাবীকৃত, ডঃ শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল লিখিত কিতাব : নবীজীর নামায, পৃষ্ঠা নং-১৮১)
পর্যালোচনা: সহীহ মুসলিমে রুকুর অধ্যায়ে সবগুলো হাদীসে রাফউল ইয়াদাইন করতে বলা হয়েছে । তবে উক্ত হাদীসটি পাওয়া গেছে সহীহ মুসলিমে সালাম ফেরানো অধ্যায়ে – যা সালাম ফেরানোর সময় সাহাবীদের হাত উত্তোলনের সাথে সম্পর্কিত এবং হাদীসটি অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে সালাম ফেরানো অধ্যায়েই বর্ণনা করা হয়েছে । হাদীসটি দ্বারা রাফউল ইয়াদাইন এর বিপক্ষে দলীল দেয়া একটি ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছু নয় ।
বেয়াড়া ঘোড়ার লেজের মত হাত উত্তোলন সম্পর্কীত হাদীসটির বিস্তারিত পর্যালোচনা:
এই হাদীস থেকে কিছু আলেম বলতে চাচ্ছেন যে, এই হাদীসে রাসূল (সাঃ) রাফউল ইয়াদাইন করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি সালাতে স্থির থাকতে বলেছেন। হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু তাতে সালামের সময় স্থির থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হানাফী মাযহাবী আলিমদের দাবী এই হাদীস এবং পরের হাদীসের মতন এক না এবং দুটি হাদীস দুই প্রেক্ষাপটে বর্ণিত। আসুন আমরা প্রথমে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসগুলি দেখি এবং এই হাদীস সম্পর্কে সালাফগণ কি বলেছেন এবং এই হাদীস আর কোথায় বর্ণিত হয়েছে সেটা যাচাই করলেই আমরা দেখতে পারব আসলে এই হাদীসকি আসলেই রফউল ইয়াদাইন করতে নিষেধ করেছেন কিনা?
দেখুন সহীহ মুসলিমে বর্ণিত পরপর চারটি হাদীস :
হাদীস নং – ৮৫০ : আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করে বললেন , তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজের মত হাত উঠাচ্ছ কেন? সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে নিশ্চল থাকবে (কোন অঙ্গ ভঙ্গি করবে না) একবার তিনি আমাদেরকে দলে দলে বিভক্ত দেখে বললেন , তোমরা পৃথক পৃথক রয়েছ কেন? আরেকবার আমাদের সামনে এসে বললেন , তোমরা এমন ভাবে কাতার বাঁধবে, যেমনিভাবে ফেরেশতাগণ তাদের রবের সামনে কাতার বন্দী হয়ে থাকেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ফেরেশতাগণ তাঁদের রবের সামনে কীভাবে কাতার বন্দী হন? তিনি বললেন , ফেরেশতাগণ সামনের কাতারগুলী আগে পূর্ণ করেন এবং গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ান।
হাদীস নং – ৮৫১ : আবূ সাঈদ আল-আশাজ্জ (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আ’মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
হাদীস নং – ৮৫২ : আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সংগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম, তখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষে ডান-বাম দিকে হাত ইশারা করে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’- বলতাম। তাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজ নাড়ার মত হাত ইশারা করছ কেন? (সালাত (নামায/নামাজ)-এর বৈঠকে) উরুর ওপর হাত রেখে ডানে-বামে অবস্থিত তোমাদের ভাইকে (মুখ ফিরিয়ে) ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতূল্লাহ’ বলাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।
হাদীস নং – ৮৫৩ : জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) পড়েছি। আমরা যখন সালাম ফিরাতাম, হাত দিয়ে ইশারা করে বলতাম, ‘আসসালামু আলাইকুম’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বললেনঃ কি ব্যাপার তোমরা হাত দিয়ে ইশারা করছ- মনে হচ্ছে যেন দুষ্ট ঘোড়ার লেজ। তোমাদের কেউ যখন সালাম করে সে যেন তার সাথের লোকের দিকে ফিরে সালাম করে এবং হাত দিয়ে ইশারা না করে।
পাঠক চারটি হাদীসের মূল বর্ণনাকারী সাহাবী একজন এবং চারটি হাদীস থেকে পরিস্কার যে হাত উত্তোলনের (হাত ইশারা করার) ঘটনাটি সালাম দেয়ার সময়ের সাথে খাস । রুকুর আগে পরের রাফউল ইয়াদাইনের সাথে সম্পর্কিত নয় । তাহলে কি করে এই হাদীস দিয়ে রাফউল ইয়াদাইন না করার দলীল দেয়া যেতে পারে ?
এ হাদীস রুকূর আগে ও পরের রফউল ইয়াদাইন নিষেধ হওয়া সম্পর্কে ইবারতের মধ্যে তার কোন উল্লেখ নেই। কেও দেখাতে পারবে না যে কোন হাদীসের ইমাম তাদের হাদীস গ্রন্থে এই বিষয়ে বর্ণিত কোন হাদীস রফউল ইয়াদাইন না করা আনুচ্ছেদে নিয়ে এসেছে। এ হাদিসে সালাম ফিরানোর সময় হাত দিয়ে ইশারা করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেটা ২য় বর্ণনা (পরবর্তী হাদিসে ৮৬৪ মুসলিম) থেকে তার ব্যাখ্যা মউযুদ রয়েছে।
জাবের (রাঃ) বলেন আমরা রাসুল (সাঃ) এর সঙ্গে সালাত পড়ছিলাম। যখন আমরা সালাম ফিরাচ্ছিলাম তখন আমরা হাত দিয়ে ইশারা করছিলাম। এটা দেখে রাসুল (সাঃ) আমাদের বললেন, কি ব্যাপার কি ব্যাপার, আমি তোমাদেরকে দুষ্ট ঘোড়ার মত হাত উঠাতে দেখি কেন? নামাযে শান্ত থাক এবং ধীর ভাবে নামায পড়।
এ দুটি হাদীস মুসলিম এর একই আনুচ্ছেদে বর্ণিত। আর এই শব্দ “আমি তোমাদেরকে দুষ্ট ঘোড়ার মত হাত উঠাতে দেখি কেন?” দু জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। যেটা একই ঘটনার জ্বলন্ত প্রমান।
ইমাম নববী (রহঃ) ঐ দুটি হাদিস এভাবে একই আনুচ্ছেদে এনে শুরু করেছেন “সালাতে শান্ত থাকাঃ সালামের সময় হাত উঠিয়ে তা দ্বারা ইশারা করা নিষেধ”।– শরহে মুসলিম
ইমাম নাসাঈ এই হাদিসের উদ্দেশে এভাবে বাব বেঁধেছেন “সালাতে শান্ত থাকাঃ সালামের সময় হাত উঠিয়ে তা দ্বারা ইশারা করা নিষেধ”।– সুনানে নাসাঈ ইঃ ফাঃ
ইমাম আবু দাউদ এ হাদিসের উপর এভাবে বাব বেঁধেছেন “সালাতে শান্ত থাকাঃ সালামের সময় হাত উঠিয়ে তা দ্বারা ইশারা করা নিষেধ”।সুনানে আবু দাউদ, ইঃফাঃ।
তিনি এই বাবে উপরের আলোচিত হাদিসটি এনেছেন। তার মানে সহজেই আমরা বুঝতে পারি ইমাম আবু দাউদের (রহঃ) মতে এই হাদিসে রাসূল (সঃ) রাফউল ইয়াদাইন না করার আদেশ দেন নি।হাদিসটি নিম্নরুপঃ সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নাম্বারঃ১০০০; ইঃফাঃ।
আর ইমাম তাহাবি যিনি হানাফী মাযহাবের একজন বিখ্যাত পন্ডিত তিনিও এ হাদিসের উপর এভাবে বাব বেঁধেছেন “সালাতে শান্ত থাকাঃ সালামের সময় হাত উঠিয়ে তা দ্বারা ইশারা করা নিষেধ।” এবং প্রমান করেছেন এটা সালামের ব্যাপারে। ইমাম তাহাবী এ হাদিস নিয়ে রফউল ইয়াদাইন মানসুখের দলিল নেন নি।
এই হাদিস থেকে আমরা কি রাফউল ইয়াদাইন না করার দলিল নিতে পারবঃ
আমিরুল মু’মিনীন ফিল হাদীস ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ যে মানুষ জ্ঞানের সামান্য ছোঁয়া পেয়েছে সেও এ হাদীস দ্বারা রাফউল ইয়াদাইন বর্জনের দলিল নেবে না। এটা একেবারে পরিষ্কার ও প্রসিদ্ধ বিষয়। এটা হচ্ছে সালামের ব্যাপারে। এতে কোন মতভেদ নেই। – যুযউ রাফউল ইয়াদাইন ১৫ পৃষ্ঠা
হাদিসের সকল ইমাম তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে সালামের আনুচ্ছেদে এনেছেন। সালাতে রফউল ইয়াদাইন না করার আনুচ্ছেদে কেও আনেন নি।
হাফেয ইবনে হাযার (রহঃ) তালখিছের মধ্যে বলেন, “এ হাদিস থেকে রুকূর সময় রফউল ইয়াদাইন নিষিদ্ধ কখনও প্রমানিত হয় নাই। কেননা এ হাদিস সংক্ষিপ্ত, যেটা পরবর্তী হাদিসে এই হাদিসের তাফসির হিসাবে এসেছে। আর সালামের সময় হাত দিয়ে ইশারা করা ঠিক নয়।” (তালখিস ৮২ পৃষ্ঠা)
তারপর হাফেয ইবন (রহঃ) ঐ পৃষ্ঠায় বলেন, “এ হাদিস থেকে রফউল ইয়াদাইন না করার দলিল নেয়া সঠিক হবে না। হ্যাঁ, প্রথম হাদিস অবশ্যই সংক্ষিপ্ত রূপ (ওটা সালামের সময় হাত দিয়ে ইশারা করা নিষেধ করা হয়াছে) যেটার বর্ণনা ২য় হাদিছে এসেছে।” (তালখিস ১ম,২২১ পৃষ্ঠা)
এরপর ইবনে হাজার (রহ) ইবনে হিব্বান(রহঃ) থেকে একি কথা নকল করেছেন।
ইবনে হিব্বান বলেন, “এ হাদিস থেকে রুকূ ওয়ালা রফউল ইয়াদাইন না করা সঠিক নয় যেটা সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণিত। হ্যাঁ, অবশ্যই ওটা সালামের সময় হাত দিয়ে ইশারা করা নিষেধ করা হয়াছে যেটার বর্ণনা মুসলিমের ২য় হাদিছে এসেছে।” (তালখিস ১ম,২২১ পৃষ্ঠা; সহিহ ইবনে হিব্বান, ৩/১৭৮, হাদিস ১৮৭৭)
ইমাম নববী (রহ) বলেন, “যে ব্যক্তি এই হাদিস থেকে রুকুতে যাওয়ার আগে এবং রুকু থেকে উঠার পরে রফউল ইয়াদাইন না করার দলিল গ্রহন করল, সে একটা বড় ধরনের অবাধ্যতা করল। কেননা রুকুর পূর্বে এবং পরে রফউল ইয়াদাইন করা সহীহ এবং ভুল প্রমাণিত করা যাবে না।” (শরহে মুহাযযাব ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৩)
হাফিয ইবন আল-মুলকান (রহ) বলেন, “এই হাদিস থেকে দলিল গ্রহন করা খুব মারাত্বক এবং বড় ধরনের অবাধ্যতা, যে আমল রাসূল(সঃ) এর সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত, কারন এই হাদিস রুকু আগে এবং পরে রফউল ইয়াদাইন করা নিয়ে বর্ণিত হয় নি, আসলে, সাহাবায়েগন সালাম ফিরানোর সময় হাত দ্বারা ইশারা করতেন……আর এই বিষয়ে নিয়ে আহালূল হাদিস (বিদ্বানদের) দের মধ্যে কোন ভিন্ন মত নেই। যার হাদিসের সাথে খুব সামান্য সম্পর্ক রয়েছে, কেবল সেই এই হাদিস গ্রহন করতে পারে। (আল বদর আল-মুনয়ার ,খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৮৫)
অনেক বড় হানাফি লেখকদের বইতে এবং যে সব হানাফি ভাই দাওয়াত এর কাজ করেন তারাও এই হাদিস থেকে রফউল ইয়াদাইন না করার দলিল দেন। আসা করি এর পর তারা আর এরকম মিথ্যাচার করবেন না। আল্লাহ আমাদের এরকম মিথ্যাচার এবং বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন।
2. রাফউল ইয়াদাইনের বিপক্ষে হানাফী মাযহাবের লোকেরা (মসজিদের ইমাম, আলেম এবং সাধারণ লোক) আরেকটি গল্প বলে থাকে যে, প্রথম প্রথম সাহাবীরা বগলের নিচে মুর্তি নিয়ে স্বলাতে দাঁড়িয়ে যেত তাই নবী (সাঃ) রাফউল ইয়াদাইন করেছিলেন যাতে সাহাবীরাও রাফউল ইয়াদাইন করে এবং তাদের বগলের মুর্তি পড়ে যায় ।
বন্ধুরা ভেবে দেখুন, স্বালাতের ভিতরে বগলের ভিতর মুর্তি নিয়ে যাওয়ার অপবাদ দেয়া হচ্ছে !
যারা মুর্তির প্রতি অবিশ্বাসী হয়েই দ্বীন ইসলাম কবুল করেছিল।
এক আল্লাহকে বাদ দিয়ে পুনরায় মুর্তির প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার জন্য কাফেরগোষ্ঠী যাদের উপর দিনের পর দিন অত্যাচার চালানোর পরেও যারা এক আল্লাহকে ত্যাগ করেনি।
সেই সাহাবীরাই কী মুর্তি নিয়ে স্বালাতে দাঁড়াতে পারে?
দলীল জানা থাকলে বলুন কোন কোন সাহাবী এই কাজ করতেন, যদি কারো নাম জানা থাকে দয়া করে উল্লেখ করুন, দলীল প্রমাণ সহ।
আর যদি দলীল প্রমাণ না জানেন তবে আল্লাহর যে বান্দারা মুর্তিকে ঘৃণা করে সত্য ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করলেন, তাদের নামে এ ধরণের অপবাদ আর কখনই দিবেন না, যদি নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করে থাকেন।
3. আলকামা (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদ্বিঃ) বললেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর (নিয়মে) নামায আদায় করে দেখাব না? তিনি (আব্দুল্লাহ) নামায আদায় করলেন, কিন্তু প্রথমবার (তাকবীরে তাহরীমার সময়) ছাড়া আর কোথাও রাফউল ইয়াদাইন করেননি। সুনান আত-তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রথমবার ব্যতীত আর কোথাও রাফউল ইয়াদাইন করেননি। হাদীস নং-২৫৭।
তিরমিযী শরীফের টীকায় শাইখ আহমাদ শাকের বলেছেন, এ হাদীছটিকে ইবনে হাযমসহ অনেক হাফেযে হাদীছ ছহীহ আখ্যা দিয়েছেন। আসলেও এটি ছহীহ হাদীছ। অনেকে এর যেসব ক্রুটির কথা বলেছেন সেগুলি বাস্তবে কোন ক্রুটি নয়। { দলিলসহ নামাজের মাসায়েল, পৃঃ ১০৭}।
এখানে মাওলানা সাহেব আহমাদ শাকেরের অবশিষ্ট কথাগুলি বাদ দিয়েছেন। সেগুলি হল-
কিন্তু এটি অন্যান্য স্থানে রাফউল ইয়াদাইন বর্জনের উপর প্রমাণ বহন করে না। কেননা তা নেতিবাচক। আর রাফউল ইয়াদাইনের উপর প্রমাণ বহনকারী হাদীছগুলি হল হা বাচক। এবং হা বাচক (হাদীছ) অগ্রগণ্য হয়। সুতরাং, রাফউল ইয়াদাইন করাই হল সুন্নাত। আর তিনি কখনো কখনো একবার বা একাধিকবার রাফউল ইয়াদাইন ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং অধিকাংশ ( সময়ে কৃত) কর্মই হল সুন্নাহ। আর তা হল, রুকুর সময় এবং রুকু হতে উঠার সময় হাত উত্তোলন করা। { তিরমিযী,হা/২৫৭, তাহকীক : শাইখ আহমাদ শাকের, ২/৪১, দারুল ফিকার}
আমরা সুনান আদ দারা কুতনীতে বর্ণিত এই হাদীস সম্পর্কিত একটি উক্তি আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি : আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মতে ইবনু মাসউদ (রাদ্বিঃ) এর নিম্নোক্ত হাদীস প্রমাণিত নয় : “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রথমবার তার দুই হাত উপরে উত্তোলন করতেন, তারপর আর উত্তোলন করতেন না।” আমার নিকট সেই ব্যক্তির হাদীস প্রমাণিত যাতে আছে : “তিনি যখন রুকু করতেন এবং যখন রুকু থেকে তার মাথা উঠাতেন তখনও তার দুই হাত উপরে উত্তোলন করতেন।” ইবনুল মুবারক (রাহঃ) বলতেন, উবায়দুল্লাহ আল উমারী, মালেক, মা’মার, সুফিয়ান, ইউনুস (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনে আবু হাফসা (রাহঃ) এই হাদীস আয যুহরী – সালেম – তার পিতা – নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা, হাদীস নং-১১০১(২০)। (ই.ফা.বা)
4. আলকামা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে মাসউদ (রাদ্বিঃ) স্বালাত আদায় করলেন এবং তাতে একবারের বেশী হস্তদ্বয় উত্তোলন করেননি।
[তাকবীরে তাহরীমাতেই উভয় হাত উঁচু করেছিলেন। অত্র হাদীসখানা আবু দাউদ, নাসাঈ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী হাদীসখানাকে হাসান, ইবনে হাযম সহীহ ও ইমাম আহমাদ দূর্বল বলেছেন। মুহাদ্দিসগণের মতে, ইবনে মাসউদ ছিলেন একজন আত্মভোলা মানুষ। এর প্রমাণ শরীয়তের অনেক মাসআলার ক্ষেত্রেই রয়েছে। তাই তার বর্ণিত হাদীস শরীয়তের অকাট্য দলীল হতে পারে না।]
মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়: যারা তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য কোথাও হাত উঁচু করার পক্ষপাতি নন, তাদের দলীল সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ, হাদীস নং-৪৯৫। (ই.ফা.বা)
5. বারা ইবনে আযিব (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) যখন স্বালাত শুরু করতেন তখন তিনি তার উভয় হাতকে এমন ভাবে উঁচু করতেন যাতে তার বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় কর্ণদ্বয়ের সমান্তরাল থাকে।
[আবু দাউদ ও দারাকুতনী তাদের সুনানে এবং তাহাবী তার “শারহু মা’আনিল আছার” গ্রন্থে হাদীসখানা উল্লেখ করেছেন। বায়হাকী (রাহঃ) বলেন, হাদীসের কোন এক স্তরের রাবী ইয়াযিদ ইবনে আবু যিয়াদ দূর্বল প্রকৃতির। ইমাম বুখারী, ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফেয়ী (রাহঃ) প্রমূখ হাদীসখানাকে যঈফ (দূর্বল) মনে করেন।]
মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়: যারা তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য কোথাও হাত উঁচু করার পক্ষপাতি নন, তাদের দলীল সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ, হাদীস নং-৪৯৬। (ই.ফা.বা)
6. আল বারাআ (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (সাঃ) কে দেখেছেন যে, তিনি যখন নামায শুরু করতেন, তখন তার দুই হাত তার দুই কাঁধ বরারব উত্তোলন করতেন। তারপর নামায শেষ করা পর্যন্ত তিনি আর কোথাও হাত উপরে উঠাতেন না। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা।, হাদীস নং-১১০২(২১)। (ই.ফা.বা)
7. আল বারাআ ইবনু আযেব (রাদ্বিঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা।, হাদীস নং-১১০৩(২২)। (ই.ফা.বা)
8. আল বারাআ (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (সাঃ) কে দেখেছেন যে, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তার হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করতেন। অধস্তন রাবী বলেন, আদী ইবনে সাবেত (রাহঃ) আল বারাআ (রাদ্বিঃ) নবী (সাঃ) সূত্রে আমার নিকট পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন এবং এটাই যথার্থ। ইয়াযিদ (রহঃ) তার শেষ বয়সে (তা) তালকীন (শিক্ষা) দিতেন। অতঃপর তিনি এর পুনরাবৃত্তি করেননি। তিনি তা তালকীন শিক্ষা দেন, তখন (বার্ধক্যের কারণে) তিনি তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা।, হাদীস নং-১১০৪(২৩)। (ই.ফা.বা)
9. আল বারাআ ইবনে আযিব (রাদ্বিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছি যে, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন এবং তার দুই হাত উত্তোলন করতেন এমনকি তা নিজের দুই কান বরাবর উন্নীত করতেন। অতঃপর (অন্যত্র) তিনি এর পূণরাবৃত্তি করতেন না। আলী ইবনে আসেম (রহঃ) বলেন, আমি কুফায় আগমন করলে আমাকে বলা হলো, ইয়াযিদ (রহঃ) জীবিত আছেন। অতএব আমি তার নিকট গেলাম এবং তিনি আমাকে এই হাদীস শুনালেন। তিনি বললেন, আব্দুর রহমান ইবনে আবী লাইলা (রহঃ) আল বারাআ (রাদ্বিঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছি, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন এবং নিজের হস্তদ্বয় উপরে উত্তোলন করতেন, এমনকি তা তার উভয় কান বরাবর উন্নীত করতেন। আমি তাকে বললাম, আমাকে ইবনে আবু লায়লা অবহিত করেছেন যে, আপনি বলেছেন, “অতঃপর তিনি (সাঃ) তার পূণরাবৃত্তি করতেন না।” তিনি বলেন, আমি এই কথাটুকু স্মৃতিতে ধারণ করে রাখতে পারিনি। আমি পূনরায় বললে তিনিও বলেন, আমি তা সংরক্ষন করতে পারিনি। সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা।, হাদীস নং-১১০৫(২৪)। (ই.ফা.বা)
10. আব্দুল্লাহ (রাদ্বিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ) এর সাথে এবং আবু বকর (রাদ্বিঃ) ও উমার (রাদ্বিঃ) এর সাথে নামায পড়েছি এবং তারা কেবল নামাযের শুরুতেই প্রথম তাকবীরেই (তাহরীমা) তাদের হস্তদ্বয় উত্তোলন করেছেন। ইসহাক (রহঃ) বলেন, আমরা সমস্ত নামাযে তদনুযায়ী আমল করি।
এই হাদীস কেবল মুহাম্মাদ ইবনে জাবির (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি হাদীসশাস্ত্রে দূর্বল এবং তিনি হাম্মাদ (রহঃ) ইবরাহীম (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন এবং হাম্মাদ (রহঃ) ব্যতীত অন্যরা ইবরাহীম (রহঃ) থেকে এই হাদীস মুরসালরুপে বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ (রাদ্বিঃ) থেকে নিজস্ব কর্মরুপে, নবী (সাঃ) পর্যন্ত উন্নীত (মারফু) করা ব্যতীত, এটাই যথার্থ।
সুনান আদ-দারা কুতনী, অনুচ্ছেদ: তাকবীর (তাহরীমা) বলা এবং নামাযের শুরুতে, রুকুতে যেতে ও রুকু থেকে উঠতে উভয় হাত (উপরে) উঠানো এবং এর পরিমাণ ও এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহের বিভিন্নতা।, হাদীস নং-১১০৬(২৫)। (ই.ফা.বা)
সারসংক্ষেপ – রাফউল ইয়াদাঈন
হাদীস গ্রন্থ এবং বর্ণিত হাদীস সংখ্যা যেসব রাবী থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে হাত উত্তোলনের স্থান
সহীহুল বুখারীতে রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে মোট ৫টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ)
মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাদ্বিঃ)
১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
২. রুকুর আগে
৩. রুকুর পরে এবং
৪. দুই রাকআত (প্রথম বৈঠক) শেষ করে তৃতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়ানোর সময়।
সিজদার আগে-পরে হাত উত্তোলন অস্বীকার করা হয়েছে।
সহীহ মুসলিমে রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে মোট ৫টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ)
মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাদ্বিঃ)
ওয়াইল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ)
১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
২. রুকুর আগে
৩. রুকুর পরে এবং
উভয় সিজদার মাঝখানে এবং সিজদার পরে দাঁড়াবার সময় হাত উত্তোলন অস্বীকার করা হয়েছে।
রাফউল ইয়াদাঈনের বিপক্ষে সহীহ মুসলিমে কোন হাদীস বর্ণিত না হলেও হানাফী-দেওবন্দী আলেমগণ তাদের মাযহাব রক্ষার তাগীদে সহীহ মুসলিমে সালাম অধ্যায়ে বর্ণিত জাবির ইবনে সামুরা (রাদ্বিঃ) বর্ণিত একটি হাদীসের অপব্যাখ্যা করে রাফউল ইয়াদাঈন নিষিদ্ধ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দেখুন একই গ্রন্থে রুকুর অধ্যায়ে রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে ৫টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি এবং একই হাদীস ইমাম আবু দাউদ এবং ইমাম নাসাঈও তাদের গ্রন্থে সালাম অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন কারণ সেই হাদীস সালামের সময় হাত উত্তোলনের সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং এটা যে তাদের মাযহাব রক্ষার জন্য হাদীসের অপব্যাখ্যা-ধোঁকাবাজী তা বুঝার বাঁকী থাকে না । হাদীসটির সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা যথাস্থানে করা হয়েছে।
সুনান আবু দাউদে রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে মোট ৭টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।
সালিম (রাহঃ) তার পিতা
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ) থেকে
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ)
ওয়াইল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ)
আসিম (রাহঃ)
মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রাহঃ) এর নিকট আবু হুমাইদ আস-সাঈদী (রাদ্বিঃ), আবু ক্বাতাদা (রাদ্বিঃ) সহ দশজন সাহাবী
১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
২. রুকুর আগে
৩. রুকুর পরে এবং
৪. দুই রাকআত (প্রথম বৈঠক) শেষ করে তৃতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়ানোর সময়।
সিজদার আগে-পরে হাত উত্তোলন অস্বীকার করা হয়েছে।
সিজদা থেকে মাথা উত্তোলনের সময় – এই সময় রাফউল ইয়াদাঈন প্রমাণিত নয় এবং এটা একই হাদীসের ভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়নি বলে ইমাম আবু দাউদ (রাহিঃ) হাদীস বর্ণনার পরের মন্তব্য থেকে প্রমাণিত।
সুনান আত-তিরমিযীতে রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে মোট ২টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে ১টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
সালিম (রাহঃ) তার পিতা
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ) থেকে
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদ্বিঃ)
(আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদ্বিঃ) বর্ণিত রাফউল ইয়াদাঈন না করার হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের মতামত যথাস্থানে উল্লেখ করা হয়েছে।)
১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
২. রুকুর আগে
৩. রুকুর পরে এবং
সিজদার আগে-পরে হাত উত্তোলন অস্বীকার করা হয়েছে।
সুনান ইবনু মাজাহতে রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে মোট ১০টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ)
মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাদ্বিঃ)
আবু হুরায়রা (রাদ্বিঃ)
উমাইর বিন হাবিব (রাহঃ) তার দাদা থেকে
আসিম (রাহঃ)
আবু হুমাইদ আস-সাঈদী (রাদ্বিঃ), আবু ক্বাতাদা (রাদ্বিঃ) সহ দশজন সাহাবী
আব্বাস ইবনু সাহল আস-সাঈদী (রাহঃ)
আবু হুমাইদ, আবু উসাইদ আস-সাঈদী, সাহল ইবনু সাদ, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ (রাদ্বিঃ)
আলী ইবনু আবী তালিব (রাদ্বিঃ)
আনাস (রাদ্বিঃ)
ওয়াইল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ)
আবু যুবাইর (রাহঃ) জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদ্বিঃ) থেকে
১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
২. রুকুর আগে
৩. রুকুর পরে এবং
৪. দুই রাকআত (প্রথম বৈঠক) শেষ করে তৃতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়ানোর সময়।
দুই সিজদার মাঝে হাত উত্তোলন অস্বীকার করা হয়েছে।
৫. সিজদায় যেতে । (প্রকৃতপক্ষে এটি রুকু থেকে উঠার সময়ের হাত উত্তোলন।)
৬. ফরয স্বালাতের প্রতিটি তাকবীরের সাথে। (এটাও অন্যান্য সহীহ হাদীসের বিপরীত এবং প্রমাণিত নয়)
সুনান আন-নাসাঈতে রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে মোট ৬টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ)
মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাদ্বিঃ)
ওয়াইল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ)
১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
২. রুকুর আগে
৩. রুকুর পরে এবং
সিজদার আগে-পরে হাত উত্তোলন অস্বীকার করা হয়েছে।
মুয়াত্তা ইমাম মালিক-এ রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে মোট ২টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে কোন হাদীস বর্ণিত হয়নি।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ)
১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
২. রুকুর আগে
৩. রুকুর পরে এবং
সিজদার আগে-পরে হাত উত্তোলন অস্বীকার করা হয়েছে।
মুসনাদে আহমাদ-এ রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে মোট ৬টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে ২টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। {বিপক্ষে বর্ণিত হাদীস দুটি দলীলযোগ্য নয় বলে হাদীস বর্ণনার পরপরই মন্তব্য করা হয়েছে}
আলী ইবনু আবী তালিব (রাদ্বিঃ)
আবু হুরায়রাহ (রাদ্বিঃ)
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ)
মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাদ্বিঃ)
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদ্বিঃ)
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদ্বিঃ)
না-বোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিঃ)
বারা ইবনে আযিব (রাদ্বিঃ)
১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
২. রুকুর আগে
৩. রুকুর পরে এবং
৪. দুই সিজদা থেকে মাথা উঁচু করার সময় (এটি অতিরিক্ত বর্ণনা বলে হাদীসের শেষে মন্তব্য করা হয়েছে)
(আলী ইবনু আবী তালিব (রাদ্বিঃ) ফরয স্বালাতের কথা উল্লেখ করেছেন)
সিজদার আগে-পরে (বসা অবস্থায়) হাত উত্তোলন অস্বীকার করা হয়েছে।
সুনান আদ-দারা কুতনীতে রাফউল ইয়াদাঈনের পক্ষে মোট ২১টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং বিপক্ষে ৫টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [বিপক্ষে বর্ণিত হাদীস গুলি দলীলযোগ্য নয় তা পরপর বর্ণিত কয়েকটি হাদীস পড়লে সহজেই অনুধাবন করা যায় এবং এ ব্যাপারে একই রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস শেষে মন্তব্যও করা হয়েছে]
আলী ইবনু আবী তালিব (রাদ্বিঃ)
সালেম (রাহঃ) পিতা আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ) থেকে
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিঃ)
আয-যুহরী (রাহঃ)
আনাস (রাদ্বিঃ)
ওয়ায়িল ইবনে হুজর (রাদ্বিঃ)
মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাদ্বিঃ)
আবু মুসা আশআরী (রাদ্বিঃ)
হাম্মাদ ইবনে সালামা (রাহঃ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রাহঃ)
আবু হুরায়রাহ (রাদ্বিঃ)
না-বোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন:
আব্দুল্লাহ (রাদ্বিঃ)
আল বারাআ (রাদ্বিঃ)
১. তাকবীরে তাহরীমার সময়
২. রুকুর আগে
৩. রুকুর পরে এবং
৪. দুই সিজদা থেকে মাথা উঁচু করার সময়
(আলী ইবনু আবী তালিব (রাদ্বিঃ) ফরয স্বালাতের কথা উল্লেখ করেছেন)
সিজদার আগে-পরে (বসা অবস্থায়) হাত উত্তোলন অস্বীকার করা হয়েছে।
বিবেচ্য বিষয় – রাফউল ইয়াদাঈন
1. রাফউল ইয়াদাঈন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সুন্নাতে রাসূল (সাঃ)। কোন হাদীস গ্রন্থই রাফউল ইয়াদাঈনের হাদীস থেকে খালি নয়। বরং এর বিপক্ষে হাদীস গুলি ত্রুটিপূর্ণ এবং অল্প কিছু গ্রন্থে এসেছে আবার কোন কোন গ্রন্থে তার মানও উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং আমাদের রাফউল ইয়াদাঈন বর্জন করে স্বালাত আদায় করা উচিত নয়। করলে অবশ্যই অবশ্যই আমরা স্বালাতের পরিপূর্ণ সওয়াব অর্জন করতে ব্যর্থ হব।
2. যুগশেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন: রাফউল ইয়াদাঈন এর হাদীস আল্লাহর রাসূল (সাঃ) থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে সাব্যস্ত । তাই কোন মুমিন মুমিনার জন্য উচিত হবে না শত শত সহীহ হাদীসকে বাদ দিয়ে স্বলাতে রাফউল ইয়াদাঈন না করে স্বালাত আদায় করা ।
হানাফী মাযহাবের একজন আলেম লুতফর রহমান ফরায়েজীকে একভাই রাফউল ইয়াদাইনের বিষয়ে দাওয়াত দেয়ার সময় তিনি কী রকম ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়েছে দেখুন: (লুতফর রহমান ফরায়েজীর ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)
- আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়াআলাইকুম আসসালামু ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
- ভাই আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
- বলেন।
- রুকুতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইনের কথা সহীহ হাদীসে আছে না?
- হু। তো?
- তাহলে আপনারা মানেন না কেন?
- সেজদাতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইন করার কথা সহীহ হাদীসে আছে, তাহলে আপনারা মানেন না কেন? (সেজদাতে যেতে আসতে রাফউল ইয়াদাইন নেই এটা উপরে সংকলিত হাদীসগুলোতে অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত)
- সেজদাতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইনের কথা আছে নাকি?
- জি, হ্যাঁ, সুনানে নাসায়ীতে মালিক বিন হুয়াইরিছ রাঃ থেকে সহীহ সনদে হাদীস এসেছে সেজদাতে যেতে আসতে রফউল ইয়াদাইনের। যে হাদীসকে শায়েখ আলবানীও সহীহ বলেছেন। আবার ইমাম বুখারী রহঃ তার জুযয়ে রফউল ইয়াদাইন গ্রন্থেও সহীহ বলেছেন। এ সহী হাদীস আপনারা মানেন না কেন? (সেজদাতে যেতে আসতে রাফউল ইয়াদাইন নেই এটা উপরে সংকলিত হাদীসগুলোতে অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, আর একটি হাদীস দ্বারা সিজদাতে রাফউল ইয়াদাইনের কথা আসলেও সেটা রাবীর ভুল হতে পারে)
- আপনারা বলেন রুকুতে যেতে আসতের রফউল ইয়াদাইনের হাদীস নাকি মানসূখ হয়ে গেছে তাই আপনারা রফউল ইয়াদাইন করেন না। একথা কোথায় আছে?
- রুকুর রফউল ইয়াদাইনের মানসূখের দলীল আমি তখন দিতে বাধ্য যখন আপনি সেজদার রফউল ইয়াদাইনের মানসূখের প্রমাণ দিতে পারবেন। আমরাতো বলি, আপনারা যে কারণে সেজদার রফউল ইয়াদাইনের সহী হাদীসের উপর আমল করেন না, আমরাও একই কারণে রুকুর রফউল ইয়াদাইনের উপর আমল করি না। আপনারা কেন ছাড়লেন সেজদার রফউল ইয়াদাইন? যে কারণে আপনারা সেজদারটা ছাড়লেন, একই কারণে আমরা রুকুরটা ছেড়েছি। (সেজদাতে যেতে আসতে রাফউল ইয়াদাইন নেই এটা উপরে সংকলিত হাদীসগুলোতে অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, হানাফী ভাইয়েরা এখন আপনাদের পক্ষ থেকে রুকুর রাফউল ইয়াদাইন মানসুখের দলীল দিন)(সেই ভাই, পুরো বিষয় ভালোভাবে না জানার কারণে তাদের সংলাপ এভাবেই শেষ হয়। আমি এখানে ঘটনাটি এজন্য উল্লেখ করলাম যেন আর কোন মাযহাবী ভাই এই ধরণের ধোঁকাবাজি করলে আপনারা উত্তর দিতে পারেন।)
প্রিয় ভাই, এসব ধোঁকাবাজি দলীল দাতাদের মাযহাব ছেড়ে আপনি সহীহ হাদীসের অনুসরণ করুন । আপনি কী জানেন! আপনি নাবী (সাঃ) এর একটি সুন্নাহ ছেড়ে দিয়ে কত নেকী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন? সেই কঠিন হাশরের ময়দানে যখন আপনি একটি নেকীর আশায় হন্যে হয়ে ছুটতে থাকবেন, তখন কেউ আপনাকে একটি নেকী দিয়েও সাহায্য করবে না । না আপনার মা, না বাবা, না আপনার স্ত্রী-সন্তানেরা । তাহলে আপনি কেন মাযহাবের দোহাই দিয়ে নাবী (সাঃ) এর সুন্নাহ পরিত্যাগ করছেন? আপনার প্রকৃত ইমাম কি আপনার মাযহাবের ইমাম না আপনার নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ।
এবার হিসাবটা দেখে নিন আপনি প্রতিদিন কত নেকী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন:
আল কুরআন এবং সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কোন ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করলে আল্লাহ তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতশত গুন বৃদ্ধি করে দেন। অতএব কেউ যদি একবার রাফউল ইয়াদাইন করেন, তাহলে সে কমপক্ষে দশটি নেকী পাবে। এব্যাপারে উক্কবা বিন আমিরের কথা পেশ করতে পারি। ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবী উক্কবা বিন আমির জুহানী (রাদ্বিঃ) বলেন, রুকুর সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় হাত উত্তোলন (রাফউল ইয়াদাইন) করায় প্রত্যেক ইশারার জন্য দশটি নেকী রয়েছে। (আব্দুল্লাহ বিন আহমাদের মাসায়েলে আহমাদ, ৭০, কানযুল উম্মাল, ৭ম, ৩৩৯-৩৪০)
এখন কেউ যদি একদিন রাফউল ইয়াদাইন ব্যতিত স্বলাত আদায় করে তাহলে সে ৬৯০ টি নেকী থেকে বঞ্চিত। আর যদি এক মাস রাফউল ইয়াদাইন ব্যতিত স্বলাত আদায় করে তাহলে ২০,৭০০ টি নেকী থেকে বঞ্চিত। এক বছরে ২,৪৮,৪০০ নেকী থেকে বঞ্চিত। এভাবে কোন ব্যক্তি যদি ৬০ বছর স্বলাত আদায় করার সুযোগ পায়, আর রাফউল ইয়াদাইন ব্যতীত স্বলাত আদায় করে তাহলে সে ২,৪৮,৪০০x৬০=১,৪৯,০৪,০০০ নেকী হতে বঞ্চিত হয়।
মা শা আল্লাহ্! অনেক কষ্ট করেছেন – লেখাটা দেখে ভালো লাগলো। অ-নে-ক দিন পর এই ব্লগে আসা হলো। বুঝলাম আপনার সাথে আমার এই ব্লগে পরিচয় হয়নি!!
@মুসলিম৫৫, ধন্যবান ভাই জাযাকাল্লাহু খইর। আমি উদ্দোগ নিয়েছি মতভেদপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে হাদীস সংকলন করবো। আমার জন্য দোয়া করবেন।