“৪ মাযহাব”- দ্বীনে ইসলামের প্রতি এক নির্মম পরিহাস
লিখেছেন: ' Alam Khan' @ সোমবার, এপ্রিল ২৭, ২০১৫ (১০:৩৪ অপরাহ্ণ)
“৪ মাযহাব”- দ্বীনে ইসলামের প্রতি এক নির্মম পরিহাস
আলম খান,
বটতলী, চট্টগ্রাম।
মাযহাব বলতে আমি মোটা দাগে এতটুকু বুঝি যে, রাসুল (সঃ) এর মৃত্যূর ৩০০ মতান্তরে ৪০০ বছর পর মুসলমানদের মধ্যে ৪ জন ইমামের নামানুসারে হানাফী, মালেকী, শাফেই, ও হাম্বলী নামক যে ৪টি গোত্র বা দল সৃষ্টি করা হয়েছে তাদেরকেই ৪ মাযহাব বলা হয়। এই ৪ মাযহাবের প্রত্যেকেই মনে করে এবং বলে; তার মাযহাবই সঠিক এবং শ্রেষ্ঠ, অন্য মাযহাব সঠিক না। যেমন হানাফিরা মনে করে নামাজে আযানের মতো ইকামত দেয়া, নাভীর নিচে হাত বাঁধা, ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা না পড়া, বড় করে আমিন না বলা, দাঁড়ানো-রুকু-বসা- অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন যায়গায় দৃষ্টি আবদ্ধ রাখা, তাশাহুদে আশহাদু আন-লা-ইলাহা…বলার সময় ডান হাতের তর্জনী উপরে তুলে ছেড়ে দেওয়া, ছেজদায় যাওয়ার সময় জমিনে আগে হাঁটু রাখা, মাগরিবের নামাজের মতো বিতির পড়া, ৬ তাকবীরে দুই ঈদের নামাজ পড়া, জানাজার নামাজে সুরা ফাতিহা নাপড়া, মহিলাদের ভিন্ন আঙ্গিকে নামাজ পড়া সহ শুধুমাত্র নামাজেই আরো কয়েক ডজন আমল আছে যা তাদের মতে সঠিক তথা সুন্নত সম্মত। অপরদিকে শফেই ও হাম্বলীদের দৃষ্টিতে হানাফিদের এ সব আমল ভত্তিহীন আদৌ সুন্নত সম্মত নয়। এমনকি এসবের কারণে তাদের নামাজই হয় না। আবার শাফেই ও হাম্বলীদের, একবার করে ইকামতের বাক্য বলা, বুকে হাত বাঁধা, রাফউল ইয়াদাইন করা, শব্দ করে আমিন বলা, মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা পড়া, সব সময় সেজদার জায়গায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা, তাশাহুদে ডান হাতের আঙ্গুলকে তিপ্পান্ন বানিয়ে তর্জনী নাড়াতে থাকা, সেজদার সময় হাঁটুর পুর্বে জমিনে হাত রাখা, ১ রাকাত বা মাঝখানে তাশাহুদ বিহীন ৩ বা ৫ বা ৭ রাকাত বিতিরের নামাজ পড়া, ১২ তাকবিরে ২ ঈদের নামাজ পড়া, জানাজার নামাজে বাদধ্যতামূলক সুরা ফাতিহা পড়া, মহিলা-পুরুষ প্রায় একইভাবে নামাজ পড়া সহ শুধুমাত্র নামাজেই আরো কয়েক ডজন আমল আছে যা তাদের মতে সঠিক তথা সুন্নত সম্মত। অপরদিকে হানাফিদের দৃষ্টিতে ওদের এ সব আমল ভত্তিহীন আদৌ সুন্নত সম্মত নয়। এমনকি এসবের কারণে তাদের নামাজই হয় না।এ’বিরোধ শুধু নামাজের বেলায়। অনান্য ক্ষেত্রের বিরোধ একত্রিত করলে রীতিমতো কয়েক খণ্ডের একটি কিতাব রচিত হবে। আমি আলেম নই অর্থাৎ মাদ্রাসা শিক্ষিত কোরআন-হাদিসের জ্ঞানে জ্ঞানি নই। একজন সাধারণ, সচেতন মুসলিম। সেই দর্ষ্টিভঙ্গি দিয়েই আমার পর্যবেক্ষন।
মাযহাব সম্পর্কে আমরা মৌলভীদের মুখে হর হামেশা দুইটি মজার বাণী শুনি, কিন্তু কখনো মনযোগ দিয়ে শুনিনা বলে মজাটা উপভোগ করতে পারিনা। আর তা হল ১। “প্রত্যেক মুসলমানকে ৪ মাযহাবের যে কোন একটি মাহাবের অনুসারী হতে হবে” ২। “প্রত্যেক মাযহাবই হক্ক”। এখন যদি ঐ মৌলভীদের প্রশ্ন করেন কেন ৪ মাযহাবের ১ টি অনুসরণ করতেই হবে? উত্তর আসবে “মাযহাব মানা ফরয। মাযহাব না মানলে সে পথভ্রষ্ট হবে”। আবার প্রশ্ন করেন; এটা কি কুর’আনের মাধ্যমে নাকি হাদিসের মাধ্যমে আল্লাহ ফরজ করেছেন? উত্তর আসবে, “এটা আল্লাহ বা রাসুল (সঃ) ফরয করেন নি, করেছেন আলেম সমাজের ঐক্যমতের(ইজমা) ভিত্তিতে। প্রশ্ন করুনঃ হুজুর আলেম সমাজের ওই মহা সম্মেলনটি কখন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে এক ইসলামকে ৪ ভাগে ভাগ করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তটি গৃহিত হইয়েছিলো? সেখানে কি ৪ মাযহাবের ৪ ইমামও উপস্থিত ছিলেন? উত্তর পাবেননা, তবে মজা পাবেন।
১। প্রশ্নঃ হুজুর শাফেইরা যে নামাযে বুকে হাত বাঁধে, রাফউল ইয়াদাইন করে, বড় করে আমিন বলে, ১২ তাকবিরে ২ ঈদের নামায পড়ে…..তাদের নামাজ কি হবে? উত্তর আসবে ‘হাঁ হবে’। আর একজন হানাফি যদি সেসব করে ? উত্তরঃ “তার নামাজ হবে না কারণ হানাফি মাযহাবে থেকে শাফেইদের আমল করা যাবে না।” । প্রঃ কেন? উভয়েই তো মুসলমান। আপনিইতো বললেন ৪ মাযহাবই হক্কের মধ্যে আছে”? এ প্রশ্নেরও উত্তর পাবেননা, তবে মজা পাবেন।
২। প্রশ্নঃ হুজুর; আরবরা দেখলাম কচ্ছপ, কাঁকড়া সহ অনেক জলচর ও স্থলচর প্রাণী খায় যা আমরা খাই না। এটা কেন? উঃ কারণ ওদের মাযহাবে সেগুলো হালাল। প্রশ্নঃ হানাফিরাও কি ইচ্ছে করলে সেগুলো খেতে পারবে? হুজুরের উত্তরঃ “কক্ষনো না। কারণ সেগুলো হানাফিদের জন্য মাকরুহ”। প্রশ্নঃ একই জিনিষ কিছু মুসলমানের জন্য হালাল আবার কিছু মুসলমানের জন্য মাকরুহ, তা কি করে হয়? উত্তর পাবেন না, কিন্তু মজা পাবেন।
৩। প্রঃ হুজুর; সৌদি আরবে দেখলাম ১ পরিবারের জন্য ১ টি মাত্র ছাগল, ভেড়া,কিংবা দুব্বা দিয়ে কোরবানী করে। তারা বলে এটাই সুন্নত। তাদের কোরবানি কি হবে? উঃ হবে। প্রঃ হানাফিরাও কি তাদের মতো করলে কোরবানী বৈধ হবে? উঃ না হবেনা। কারণ এটা তাদের জন্য যায়েজ, হানাফিদের জন্য নয়। প্রঃ উভয়েই একই নবীর উম্মত কিন্তু ২ ধরণের নিয়ম কেন? উত্তর পাবেন না, তবে মজা পাবেন।
৪। মৌলভী সাহেবকে জিজ্ঞেস করুন, আচ্ছা হুজুর, যারা কোন নির্দিষ্ট মাযহাব মানে না, মৃত্যূর পর কবরে যদি ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করে “তোমার মাযহাব কোনটি”? তখন সে কি উত্তর দেবে? হুজুর আমতা আমতা করে যা বলবেন তা হল, এ ধরনের প্রশ্ন ফেরেশ্তার লিষ্টে আছে বলে উনার জানা নেই। প্রঃ শেষ বিচারের দিন আল্লাহ কি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করবে তুমি কি “হানাফী, নাকি শাফেই …ইত্যাদি? হুজুর বলবেন “অবশ্যই নয়”। প্রঃ তাহলে ঐ মাযহাব মানার দরকারইবা কি? হুজুররে দীর্ঘ উত্তরের সার সংক্ষেপ হল – মাযহাব ছাড়া রাসুলকে মানা সম্ভবই না। এক একজন ইমাম রসুল (সঃ) এর রেসালতের সমস্ত কর্মকাণ্ড ‘কপি-পেষ্ট’ করে নিজেদের মধ্যে নিয়ে ফেলেছেন। ইনাদের আগে বা পরে কোন আল্লার বান্দা এ কাজ করতে সক্ষম হন নাই, হবেনও না। মায-হাব অনেকটা ৪টি টানেলের মত। এই ৪টির যে কোন একটি মধ্য দিয়ে গেলেই আপনি (HUB) রাসুলের সন্ধান পাবেন, নচেৎ নয় (আয়ুজু বিল্লাহে মিনাশ শাইতানির রাজীম) । এতক্ষন পর মাযহাবের থলের বিড়ালটার মেঞাও শব্দে মামলা কিছুটা পরিষ্কার হয়েছ বলে আপনার মনে হবে। প্রশ্ন করুন এই টানেল জাতিয় হাদিসটি কোথায় পেয়েছেন? উত্তর পাবেন না, তবে মজা পাবেন।
এভাবে অজু, ইকামত, নামাজ, রোজা, হজ্ব, বিবাহ, তালাক্ব সহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মাযহাব ভেদে ভিন্নতা দেখবেন এবং প্রশ্ন করলে আজগুবি ধরণের গোলমেলে ও স্ববিরোধী উত্তর পাবেন। আবার চুড়ান্ত প্রশ্নের উত্তরই পাবেন না। তবে হ্যঁ, একটি জিনিষ নিশ্চিত পাবেন। তা হচ্ছে গালি। আপনাকে লা-মাযহাবী, ইয়হুদী-নাছারার দালাল, ইসলামের শত্রু, রাফেজী-খারেজী এমনকি কাফের বলতেও দ্বিদ্ধা করবে না। অতএব আপনার গায়ের চাড়ার thickness যদি গণ্ডারের চামড়ার মতো বা কাছাকাছি হয় তবেই এ ধরনের ঝুঁকি নেবেন, নচেৎ নয়। এ তো গেল মাযহাবের প্রধান দলগুলোর কাহিনী। এবার আসা যাক উপদলের কথা।তাদের ভাষায় “তরিকা”। এই তরিকাওতালারাও আবার প্রধানতঃ ৪ ভাগে বিভক্ত যেমন ১। কাদেরিয়া ২।চিশ্তিয়া ৩।সোহরওয়ারদীয়া ৪। নকশবন্ধীয়া। এর পর আছে মুজাদ্দেদীয়া, দেওবন্ধী, জোউনপুরী, ভাণ্ডারী, কুতুবী, চরমোনাই, আটরশী, দেওয়ানবাগী, এনায়তপুরী, মুনিরী সহ অসংখ্য উপদল বা শাখা প্রশাখা।
পাঠক একবার ভেবে দেখুন যে রাসুলকে আল্লাহ বলেছেন “খাতেমুন নাবীয়্যিন” অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত উনারই নবুয়ত চলবে, সেখানে মোল্লারা বলছেন “উনাকে খোঁজার দরকারই নেই। ইমাম মানলে রাসুল মানা হয়ে যাবে”। যে রাসুলকে আল্লাহ পবিত্র কোর’আন দিলেন, মেরাজে নিয়ে- বেহেস্ত, দোযক, আর্শ-কুর্সীস্থ আল্লার অলৌকিক্ত্বের নিদর্শন দেখালেন, সরাসরি কথা বললেন, নামজ দিলেন, সর্বপরি পরিপুর্ণ দ্বীন দিলেন, সেই দ্বীনটার নাম তার প্রিয় হাবিবের নামে ‘দ্বীনে মুহাম্মদী’ দিলেন না। আমাদেরকে “ইসায়ী”- দের মতো “মুহাম্মদী” না বানিয়ে বানিয়েছন মুসলিম। অথচ দলবাজরা মুসলিমদেরকে শিয়া মুসলিম, ইসমাইলী মুসলিম এর আদলে শাফেই, হানাফী, হাম্বলী, মালেকী-মুসলিম বানিয়ে দিয়েছে। এটা যে আল্লাহ ও তঁর রাসুলের বিরেদ্ধে বিদ্রোহের সামিল এই সামান্য কথাটি বুঝতে কি দেওবন্দ কিংবা আল-এজাহার গিয়ে, মুফতি কিংবা শায়খ হতে হবে? আল্লাহ প্রদত্ত বিবেকের ঢাকনাটা একটু খুললেই এদের সব তেলেসমাতি আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এদের জন্যেই কি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সর্বজ্ঞ আল্লাহ সুবহানাহু অয়াতাআলা ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কুরআনে সতর্ক করেছেন, “তোমরা সেই সব মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়োনা। তারা নিজেদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করে বহু দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে” (সুরা রূম ৩০, আয়াতঃ৩১-৩২)। ভাবুন, আমাদের দলাদলী কোন কোন ক্ষেত্রে কি মুশরেকদেরকেও ছাড়িয়ে যায় নি? “তারা দ্বীনকে খণ্ড বিখণ্ড করে নিজেরা বহু দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, আল্লার নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই (সুরা আন’আম”-১৫৯) ।
আমাদের রব পবিত্র কুরআনে আরও বলেনঃ “ তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর, কখনো বিভক্ত হয়োনা”…(সুরা আলে ইমরানঃ ১০৩)। অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন ১ থাকো আর মোল্লা বলছেন ৪ ভাগ হয়ে যাও। আল্লাহ বলছেন “রাসুল যা দিয়েছেন তা গ্রহন কর”( সুরা হাসর-৭ ) মোল্লা বলছেন “একমাত্র নিজ ইমামের কথাই চোখ বন্ধ করে মান্য করো এবং মনে কর সেটাই রসুলের দেয়া, তবে অন্য ইমামকে বর্জন করো”। আল্লাহ বলছেন “যে আমার রাসুলকে অনুসরণ করল সে আল্লাকেই অনুসরন করল”(সুরা নিসা-৮০)। মোল্লা বলছেন “৪ ইমামের যে কোন একজনকে মানলেই রাসুলকে মানা হয়ে যাবে”। আল্লাহ বলছেন “রাসুলের আদর্শই হচ্ছে তোমাদের জন্য একমাত্র অনুসরনীয় আদর্শ”(সুরা মাইদা-৩)। মোল্লা বলছেন “এর জন্য ৪ ইমামের ১ ইমামই যথেষ্ট, (!)অর্থাৎ ইনার ইমাম সাহেবের চরিত্রের মধ্যেই রাসুল (সঃ) এর চরিত্রের সবকিছু বিদ্যমান”।মারহাবা-মারহাবা ! মোল্লাদের বক্তব্যের সাথে আমার বক্তব্যের ভাষাগত পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু অর্থগত ও ভাবগত পার্থক্য যে মোটেই নেই সেকথা গ্যারান্টি সকারে বলতে পারি।
আমাদের মাঝে একটি দল আছে যারা সচেতনভাবে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতে চায়, যদিওবা উনারা জ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রে অত্যন্ত পণ্ডিত। ইসলামের ব্যাপারে তাদের আর নিরক্ষর মুর্খের বক্তব্যের মধ্যে ভীষণ মিল পাওয়া যায়। আর তা হল “আমরা তা’ই অনুসরণ করবো যা আমাদের বাপ-দাদা আনুসরণ করতো”। ঠিক এই একই কথা বলতো রাসুল(সঃ) এর জামানার জাহিল-মুশরেক আরবরা (সুরা বাক্বারা-১৭০)। জ্ঞানীদের এই অনিহার সুযোগে “আমপারা পড়া হামবড়া” (কবি নজরুলের ভাষায়) কিছু মোল্লা ইসলামকে শতধা বিভক্ত করে বহাল তবিয়তে “শরীফ” ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।“শরীফ” ব্যবসা কি? এটা একটা দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, এ এক বিশাল ধান্ধার জগত। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্থান এ ব্যবসার জন্য উর্বর ক্ষেত্র। এ’খাতে প্রতিদিন কয়েক বিলিয়ন ডলার turnover হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ব্যাবসায়ীরাও প্রধানত ২ দলে বিভক্ত। একদল বলে কোর’আন শরিফ খতম, মিলাদ শরীফ, ১১ শরীফ, কতমে খাঁজাগা শরীফ, ওরশ শরীফ, মাজার শরীফ, ১১ শরীফ সহ সকল “শরীফ” ব্যবসা হালাল, এ থেকে করা আয় হালাল এবং বরকতময়। ২য় দল বলে এসব শিরক-বিদ’আ তথা হারাম। আবার ঐ ২য় দল যখন বোখারী শরীফ, ওয়াজ শরীফ, তাবীজ-তুমার ও মুরিদ ব্যবসার জন্য খানকা শরীফ ইত্যাদি ব্যবসাকে জায়েজ বলে, ১ম দল বলে “তোমাদের টা হারাম নয় কেন? অন্যের বেলায় বিদ’আত শিরক বা হারাম আর নিজের বেলায় জায়েজ। আসলে তোমরা হচ্ছো মুনাফেক বাটপার”।
পাঠক, মনে রাখবেন এই দুই দলের যে কোন একটির পক্ষে থাকাটাই নিরাপদ। আপনি যদি উভয় দলকে সঠিক বলেন তবে বুঝতে হবে, হয় আপনার মাথায় সমস্যা আছে, আপনাকে দ্রুত হেমায়েতপুরের বাস ধরতে হবে, নাহয় আপনি একজন রাজনীতিবিদ, অতি শিগ্রই সাফল্য আপনার পদ চুম্বন করবে। আর যদি আমার মতো বেরসিক হোন তাহলে বলবেন “উভয় দলই ভণ্ড”, তবে ধরে নিতে হবে আপনার কপালে যথেষ্ট দুঃখ আছে। আপনি উভয় দলেরই রোষানলে পরবেন। এই দলাদলী বন্ধ করার শক্তি হয়তো আপনার নাই তবে হক্ক কথাটি বলে মুখে কিংবা লেখনীতে বাঁধা দেয়ার দয়িত্ব পালন না করলে তার জন্য কাল কেয়ামতে আপনার আমার শাস্থি পেতে হবে (মুসলিম ১/৫১, মিশকাত ৪৩৬, ফয়জুল কালাম১৮০)। অতএব সময় থাকতে হক্কানী আলেমদের এগিয়ে আসা ছাড়া গত্যান্তর নেই।
মহান আল্লাহ যা বলেছেন আমরা কি তার বিপরিতটাই করছিনা? মহান আল্লাহর সেই সতর্ক বাণী কি আমদের হৃদইয়কে স্পর্শ করে? কম্পন সৃষ্টি করে ? মনে তো হয় না। আমরা কেউ নিজেকে পরিচয় দিই (হানাফি) মুসলিম হিসেবে, কেউ শফেই, কেউ মালেকী, হামবলি, কাদেরীয়া, চিশ্তিয়া, রেজবীয়া, দেওবন্দী, জামাতী, সালাফি কিংবা আহলে হাদিস ইত্যাদির যে কোন এক দলের ব্রেকেট বন্ধি মুসলিম হিসেবে। অথচ মহান আল্লাহ বলেনঃ “ হে ইমান আনয়নকারী (আমানু) আল্লাহর ব্যাপারে সতর্ক (তাকওয়া) হও, প্রকৃত পক্ষে যতটুকু সতর্ক (তাকওয়া) হওয়া জরুরী এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যূ বরণ করো না”। (সুরা আলে ইমরানঃ১০২) আর আমরা ব্রেকেট বন্ধি তথা সংমিশ্রিত বা শংকর মুসলিম হওয়াটাকেই জরুরী মনে করি, নির্ভেজাল মুসলিম হতে কেউ রাজী নই।
আমাদের চারপাশে এই সব ভণ্ডদের চিৎকার-চেচামেচি তথা হাঙ্গামা দেখে যদি আমার মতো বেরসিক হন তবে দুঃখ পাবেন। হয়তো বলবেন, আল্লাহর রাসুল (সঃ) যে ইসলামের জন্য সীমাহীন কষ্ট- দূর্ভোগ, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা সহ্য করেছিলেন, মাতৃভূমি ছাড়া হয়েছিলান, মৃত্যূর মুখোমুখি হতে হয়েছিল বহুবার, সেই ইসলামকে বানরের পিঠা ভাগের মত খণ্ডবিখণ্ড করতে কি ওই তথকথিত আলেমদের একটুও বুক কাঁপেনি। হাজার হাজার সাহাবার (রাঃ) পেটে পাথর বেঁধে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ যেই ইসলামের জন্য, সে মহান ত্যাগ কি এই মাযহাবীদের কাছে এতই তুচ্ছ? আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সুরায় বলেছেনঃ- আদম, নূহ, ইউছুফ, ইউনুচ, ইব্রাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, সুলাইমান, ইয়াকুব, মুছা, ইছা, মুহাম্মদ,(আঃ ছাঃ) এ্ররা সকলেই মুসলিম। আমি ও এমন একদল শুধু মুসলিম হক্কানী আলেমের উত্থান আশা করছি, যাঁরা এই উপমহাদেশের ৬০ কোটির অধিক মুসলিমকে সেই মুসলিম হওয়ার আহবান করবে যারা মাযহাব নামক “শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করে দ্বীন-ইসলামের মধ্যে পুর্ণাঙ্গভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে” (সুরা বাক্বরা-২০৮)।
হে আল্লাহ আমাদেরকে তোমার রাসুলের প্রদর্শিত রাস্তায় চলার তৌফিক দিন।
আমীন সুম্মা আমীন…..
ভাই মাথাটাকে বিগরাইয়্যা দিলেন!
আশা করি এই ব্যপারে কিছু লেখবেন,
আপনাদের উপর শান্তি বর্শিত হউক আল্ললাহর পক্ষ থেকে।
দাড়ি রাখা ইসলামে কতটা গুরুত্বপুর্ন? কেউ যদি দাড়ি না রাখে, তাহলে ইসলামে তার শাস্তি কি?
আল-কুরান এবং সহিহ হাদিসের আলোকে উত্তর দেবেন বলে আশা রাখি। ধন্যবাদ।
অগাস্ট. ২৩, ২০১০ by fahad
(পিস ইন ইসলাম)
উত্তর: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সকল ইমাম গণের সর্বসম্মতি ক্রমে দাড়ি লম্বা রাখা ওয়াজিব এবং তা কমপক্ষে এক মুষ্টি পরিমান হতে হবে । এ ব্যাপারে চার মাযহাবের সকল ইমাম গণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইসলামে দাড়ির প্রমান
কোরআনের আলোকেঃ-
কোরআন শরীফে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি তবে হারুন আঃ এর ঘটনায় দাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে । যথাঃ আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেনঃ- (হারূন আঃ তাঁর ভাই মূসা আঃ কে বললেন ) আপনি আমার দাড়ি ও মাথা ধরবেন না।
হাদীসের আলোকেঃ-
১/ ইবনে উমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল ( সাঃ ) ইরশাদ করেনঃ- তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর, আর দাড়ি লম্বা রাখো এবং গোঁফ খাটো কর।
(সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৬০২ , সহীহুল বুখারী হাঃ নং ৫৮৯২ )
ইবনে উমর ( রাঃ) সূত্রে অন্য হাদীসে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ-তোমরা গোঁফ ছোট কর এবং দাড়ি লম্বা রাখো। (সহীহুল বুখারীঃ হাঃ নং ৫৮৯৩ , সহীহ মুসলিমঃ হাঃ নং ৬০০)
এছাড়া বিভিন্ন শব্দে হাদীসে দাড়ি লম্বা রাখার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দাড়ি লম্বা করা সম্পর্কে হাদীস সমূহে ছয়টি শব্দ বর্ণিত হয়েছে । সে গুলো হল- আরবী শব্দ [ আমাদের আপাতত আরবী লেখার সুবিধা না থাকার কারণে পরবর্তিতে আরবী শব্দ সংযোজন করা হবে ] উপরোক্ত সব কয়টি বাক্যের মর্মাথ্য একই , অর্থাৎ তোমরা দাড়ি লম্বা কর।
এ বিষয়টি লক্ষ্যণীয় যে, কোন হাদীসেই সরাসরি দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখার কথা উল্লেখ নেই , শুধুমাত্র লম্বা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা প্রামাণিত আছে । দাড়ি সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবু হুরাইরা ইবনে উমর (রাঃ) প্রমুখ গণ দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখতেন । তাই এ ব্যাপারে তাঁদের আমল আমাদের জন্য দলীল । এর কারণ হল – যে বিষয়ে হাদীসে সরাসরি পাওয়া যায় না সে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। কেননা তারা হলেন হাদীসে রাসূলের (সাঃ) আমলী নমুনা।
সুতরাং দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ হওয়া প্রত্যক্ষভাবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত হলেও পরোক্ষভাবে তা রাসূল (সাঃ) থেকেই প্রমাণিত ।
বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে-···ইবনে উমর (রাঃ) যখন হজ্ব অথবা উমরা করতেন,তখন তিনি দাড়ি মুঠ করে ধরে মুঠের বেশী অংশটুকু কেটে ফেলতেন। ( সহীহুল বুখারী হাঃ ৫৮৯২)
এখানে যদিও হজ্ব ও উমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে ,কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন । এ ছাড়াও আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের (রাঃ) হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে।
(ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)
হযরত উমর (রাঃ) তো নিজেই এক ব্যক্তির দাড়ি ধরে এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজেই কেটে দিয়েছিলেন । (প্রাগুক্ত) ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন রাসূলের (সাঃ) আদর্শের পুঙ্খনুভাবে এবং পূর্ণ অনুসারী । তাই তিনি যা করেছেন তা রাসূল (সাঃ) থেকেই জেনে-শুনে করেছেন ।
উপরোক্ত দু’জন মহান সাহাবী ব্যতীত আবু হুরাইরা ,জাবির (রাঃ) পমুখ সাহাবী থেকে ও দাড়ির এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু কেটে ফেলার কথা পাওয়া যায় । এ থেকে দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
দাড়ি না রাখা , মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়েও ছোট করে ফেলে তার আমল নামায় পুনরায় দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গুনাহ লিখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল-দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লিখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাড়ি ছোট করা বা মুন্ডানোর গুনাহ দীর্ঘস্থায়ী ,যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে (এক মুঠের চেয়ে ) সে ফাসিক।
উত্তর দিয়েছেন:
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা – ১২১২
বাংলাদেশ ।
আপনি তো মনে হয় ইমামদের কথা মতো চলেন না? তাহলে আপনার দৈনন্দিন আমলগুলি কি ভাবে করেন?