অমুসলিমদের সাথে মুসলিমদের কিরুপ আচরণ হওয়া চাই? (১) + (২)
লিখেছেন: ' anamul haq' @ সোমবার, মার্চ ৭, ২০১১ (১১:৪০ পূর্বাহ্ণ)
ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। মানুষের কল্যাণ কামনাই ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে “তোমরা শেষ্ঠ জাতি তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্যই বের করা হয়েছে” রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন জনগণের কল্যাণ কামনাই দ্বীন। ধর্ম-বর্ণ, জাতী-গোষ্টি নির্বিশেষে সকল মানুষের সাথে সদাচারণের প্রতি ইসলামের নির্দেশ রয়েছে।
এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করেনা বড়দের সম্মান করেনা সে আমার উম্মত নয়”
অপর হাদীসে আছে “সে প্রকৃত মুমিন নয় যার অত্যাচার থেকে তার প্রতিবেশি নিরাপদ নয়”।
অন্যত্র বর্ণিত আছে “যে ব্যক্তি পরিতৃপ্ত থাকে অথচ তার প্রতিবেশি ক্ষুধার্ত সে মুমিন নয়”।
বর্ণিত হাদীস সমুহে জাতি, ধর্ম -বর্ণের কোন পার্থক্য নেই। সকল মানুষের সহমর্মিতা, সবার সাথে সৌহার্দ পূর্ণ আচরণ,এটাই প্রিয় নবীজির শিক্ষা।
মুসলমান সমাজে বসবাস রত অমুসলিম সংখ্যানঘুদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ইসলামী রাষ্টের একান্ত নৈতিক দ্বায়িত্ব। তাই রাসূল (সাঃ) এ বিষয়ে তাগিদ করেছেন।
তিনি বলেন যদি কেউ মুসলিম রাষ্টে নিরাপত্তা প্রাপ্ত নাগরিক বা আগন্তুককে হত্যা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবেনা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কোন মানুষকে কষ্ট না দেয়া জান্নাত লাভের উপায়।
রাসূল (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য খেয়ে জীবন যাপন করে, সুন্নত অনুযায়ী আমল করে এবং কোন মানুষ তার দ্বারা কষ্ট না পায় সে জান্নাতী।
তেমনিভাবে মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্য জন্য ইনসাফ ও সুবিচার করা ইসলামের নির্দেশ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে “কোন জাতীর বিদ্বেষ যেন তোমাদের কখনো সুবিচার খেকে বিচ্যুত প্ররোচিত না করে।
আল্লামা জাস্সাস (রহঃ) বলেন কাফেরদের কুফুরী এবং জালেমের জুলুম ও তাদের প্রতি ইনসাফ করতে অন্তরায় নয়।
রাসূল (সাঃ) এর জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যে, বাদী বিবাদির মধ্যে এক পক্ষ মুসলিম আর অপর পক্ষ অমুসলিম। ন্যায়ের ক্ষেত্রে কোন আপোষ না করে সাক্ষি প্রমানের ভিত্তিতে অমুসলিম ব্যক্তির পক্ষে রায় প্রদান করেছেন।
রাসূল (সাঃ) অমুসলিম মেহমানদের সাথেও ভাল ব্যবহার করতেন। তিনি বলতেন বিধর্মী হলেও তারা আল্লাহর বান্দা। তাদের প্রতিও আমার সমান কর্তব্য রয়েছে। একদিন এক বিধর্মী মেহমানকে তৃপ্ত করার জন্য পিয়নবী (সাঃ) একে একে সাতটি ছাগল দোহন করে ঐ ছাগলের দুধ সেই হেমানকে পান করালেন। তাতে তিনি বিন্দু মাত্র ও বিরক্তি বোধ করেননি।
রাসূল (সাঃ) অমুসলমান প্রতিবেশি অসুস্থ হলে সেবা শুশ্রুষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন।
মোট কথা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণ কামনা, সকলের সাথে উত্তম ও মার্জিত আচরণ। সৌহার্দ পূর্ণ ব্যবহার ও উদারতা বিশ্বনবী (সাঃ) এর মৌলিক শিক্ষা এবং ইসলামের বিশেষ বৈশিষ্ট। যা বর্তমান এবং কিয়ামত অবধি অনাগত বিশ্ব মানবতার জন্য আদর্শ।
একটি প্রশ্ন ও তার নিরষণ:
পবিত্র কোরআনে ছুরায়ে মায়েদার ৫১ নং আয়াতে বলা হয়েছে “হে ঈমানদারগণ তোমরা ইয়াহুদী ও নাছারাদের বন্ধু রূপে গ্রহন করোনা”। এ আয়াত থেকে প্রতিয়মান হয় যে, মুসলমানদের ধর্ম গ্রন্থেই অমুসলিমওদর সাথে বন্ধুত্ব সূলভ আচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে ইসলাম কেমন করে মানবতার ধর্ম হতে পারে?
নিরষণ: অমুসলিমদের সাথে একজন মুসলমানের চার প্রকারের সম্পর্ক থাকতে পারে। যথা (১) মুআলাত বা অন্তরঙ্গ ও ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব। শুধু মাত্র এ সম্পর্কটা মুসলমানদের সাথে থাকতে হবে। অমুসলিমদের সাথে নয়। (আউনুত তিরমিযী) খ:১, পৃ:৩২৭।
আর পবিত্র কোরআনে এ ধরনের বন্ধুত্ব থেকেই নিষেধ করা হয়েছে। কারণ স্বভাবতই প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের মাঝে সর্বদা নিজ ধর্মের বিধি-বিধান ও অনুশাসনের প্রতি আকর্ষণ ও অনুরাগ থাকা বাঞ্ছনিয়। তাই অন্য ধর্মালম্বীদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব স্থাপন করা থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে। যেন নিজ ধর্মের বিশেষ বৈশিষ্ট ও নিদর্শন সমূহ বিলুপ্ত না হয়ে যায়। (মাআরিফুল কোরআন খ:২, পৃ:২০১)
আর এটা চির সত্য যে, প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরাই এই প্রচেষ্টায় সর্বদা সচেষ্ট থাকেন। তাই এ বিষয়ে মুসলমানদের উপর আপত্তি উত্তাপন করার কোন অবকাশ নেই।
ইমাম রাযী (রহ:) বলেন:এখানে তাদের বন্ধু রূপে গ্রহন করোনা এর অর্থ হলো “তাদের মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার উপর নির্ভর করোনা। এবং অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব স্থাপন করোনা। (তাফসীরে কাবীর খ:১২, পৃ:১৪)
এছাড়া এ আয়াতের মর্মার্থ অন্যান্য আয়াত সমুহ দ্বারাও স্পষ্ট বুঝা যায়। তন্মধ্যে নিম্নে ২ টি আয়াত উল্লেখ করা হল।
لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
অর্থাৎ “ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন”।
إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
অর্থাৎ”আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম”।(চলবে)
তেমনিভাবে মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্য জন্য ইনসাফ ও সুবিচার করা ইসলামের নির্দেশ।
@rasel ahmed,
@hafes_alamin,
ধন্যবাদ এনামুল ভাই। আপনার এ লেখা পড়ে অনেক কিছু জানলাম। আশা করি পরের পর্ব অচিরেই পাব।
সুন্দর লেখার জন্য ধণ্যবাদ।
”لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
অর্থাৎ “ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন”।
إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
অর্থাৎ”আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম”।(চলবে)(Y)
@দেশী৪৩২, আপনাকেও ধন্যবাদ।
শুকরিয়া , জাযাকাল্লাহ্
@এম এম নুর হোসেন, জাযাকাল্লাহ।
তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তাঁর সাথীদের মধ্যে একটি উত্তম আদর্শ বর্তমান৷ তিনি তাঁর কওমকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন : আমরা তোমাদের প্রতি এবং আল্লাহকে ছেড়ে যেসব উপাস্যের উপাসনা তোমরা করে থাক তাদের প্রতি সম্পূর্ণরূপে অসন্তুষ্ট৷ আমরা তোমাদের অস্বীকার করেছি৷ আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরদিনের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে- যতদিন তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনবে৷(মুমতাহিনা-৪)
শত্রুতা ও বিদ্বেষ এটা অব্যহত থাকবে। তবে হ্যাঁ তারা যদি আমাদের সত্য প্রচার করতে গিয়ে আমাদের বাধা না দেয় তাহলে তারা আমাদের সদাচারণ পাওয়ার যোগ্য।
মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যেভাবে অমুসলিমদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে তা আমাদের মোটেই কাম্য নয়।
যে নিজেকে মুর্খ প্রমাণিত করেছে সে ছাড়া আর কে মিল্লাতে ইব্রাহিম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। (বাকারাহ-১৩০)
@eagle, আপনাকে ধন্যবাদ।
ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন”। জাযাকাল্লাহ খায়রান।
@fazlulkader, শুকরিয়া, ধন্যবাদ আপনাকে।