শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসুলুলস্নাহ(সা:)এর ভূমিকা
লিখেছেন: ' anisurrahman' @ শনিবার, জুন ১১, ২০১১ (১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ)
উপক্রমণিকা:
“তুমি না আসিলে মধুভান্ডার ধরায় কখন হতনা লুট,
তুমিনা আসিলে নার্গিস কভু খুলতোনা তার পত্র পুট,
বিচিত্র আশা-মুখর মাশুক খুলতনা তার রুদ্ধ দিল;
দিনের প্রহরী দিতনা সরায়ে আবছা আধাঁর কালো যা নিখিল।”১
অসাধারণ চেতনায়, অপরিমেয় ভালবাসায়, হৃদয়ের ভক্তিতে, অন্তরের শ্রদ্ধায়, সঠিক সুন্দর পবিত্র এক বাস্তবতায়, অসংখ্য প্রাণের স্পন্দন ও আন্তরিকতায়, স্বপ্ন ও বিশ্বাসের গভীরতায়, উত্তম প্রেম ভালবসার মিলন মোহনায় অসাধারণ হয়ে উঠা মহাব্যক্তিত্ব উদিল আরবে নতুন সূর্য মানব-মুকুট-মণি মুহাম্মদ (সা:) এর আনিত জীবনার্দশ অনুসরণের মাধ্যমেই চলমান বিশ্ব সংকট নিরসন করে সুখী-সমৃদ্ধশীল, শান্তিময় মাননীয় আবাস গড়া সম্ভব।
বিশ্ববিখ্যাত মনীষী জর্জ বার্নাডশ বলেন-If all the world was united under one leader than Mohammad would have been the best fitted man to lead the peoples of various ereeds dog mas and idioms to peace and happiness. . নি:সন্দেহে মহানবীর আদর্শের কাছে আত্মসমর্পন করাই যে শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠার একমাত্র শর্ত ।
রাসুলুলস্নাহর (সা:) মহাজীবন; পরিচয়
Beyond less bound less and bottom less sea..
- মহাকবি মিল্টন
মহানবীর (সা:) জীবন এক বিশাল ও বিস্তৃত ব্যাপার। সুপ্রভাতের ফুটন্ত আলো মহানবী (সা:) ৫৭১ ঈসায়ী সালে মক্কার বনি হাশেমের সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা- আব্দুল্লাহ, মাতা-আমিনা, দাদা-আব্দুল মুত্তালিব। তার ভালবাসার উদ্যান ছিল চির সুবজ ও সতেজ । যে অনত্দহীন ভালবাসা অনেক উচুঁ স্তরের। বসন্ত ও শরৎকাল ছাড়াও যার সজীবতা কমেনি। এক অসাধারণ মানুষটির হৃদয় ছিল অকৃত্রিম ভালবাসায় ভরপুর। মৃতু্যর মুখোমুখি হলেও তার ওষ্টে মৃদু হাসির রেখা দেখা যেত।
তার দরদ মাখা হৃদয়ের মমত্ববোধ আলোতে উন্মুক্ত আয়না থেকে প্রতিফলিত উজ্জ্বল আভার মত । সকল সৌন্দর্যের কেন্দ্রভূমি মহানবীর (সা:) মনে ঐ আলোর অনেক বেশী ধারণ ক্ষমতা আলোকিত করেছিল জীবনকে , যুগকে। সত্যের সাথে শক্তির সমন্বয় তথা বীরত্ব ও পৌরুষব্যঞ্জক দৃঢ়তার ৰেত্রে তিনি কৃতিত্বের স্বাৰর রেখেছেন। অন্যান্য সাধারণ অস্তিত্বেও অধিকারী মহানবী (সা:) ছিলেন সকল প্রশংসার অধিকারী, সকল শোভা এবং সমৃদ্ধির বিস্ময়কর প্রতিনিধি, বিধাতার সকল সৃষ্টির প্রধান, পরিচ্ছন্নতার একট অনাবিল প্রকাশ। মহানবীর (সা:) শারীরিক সৌন্দর্য, মানসিক পূর্ণতা, প্রশংসনীয় চরিত্র, চমৎকার ব্যক্তিত্ব, পরিশীলিত অভ্যাস ও কর্ম তৎপরতা দেখেই তাকে মন উজার করে ভালবাসার ইচ্ছা জাগতো। তার জীবন, কর্ম ও চরিত্রের যে অতলান্তিক গভীরতা, যেন নক্ষত্রচুম্বী মহিমা। পরিবেশ, পরিস্থিতি, পটভূমিকা, প্রাসঙ্গিক লক্ষণসমূহ ও পরিণতি ইত্যাদি বিবেচনায় তিনি ছিলেন অতুলনীয় মেধার অধিকারী। তার বুদ্ধি বিবেচনা ছিল নিভর্ূল, তার বিবেকের জাগ্রতাবস্থা ছিল গভীর তাৎপর্যমন্ডিত। যিনি সর্বপ্রকার ত্রুটি ও ক্ষুদ্রতা থেকে মুক্ত এক সর্বগুণান্বিত, সর্বোৎকৃষ্ট ও ধারণাতীত সৌন্দর্যের অধিকারী সর্বোত্তম সুন্দর মানুষ, দৃঢ় মনোবলের অধিকারী ও উদ্যমী, আলোকিত অন্তরের অধিকারী। তার কথা ও কাজে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্য ছিল।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবীর (সা:) কার্যক্রম
The man of all men excrecised greatest in flunce upon the human race..
-অধ্যাপক ডেপার
ঙ্ নির্যাতিত মানবতার মুক্তির জন্য হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠা করে – দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার, মজলুমের সাহায্য করার, অত্যাচারীকে বাধা প্রদানের, বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সমপ্রীতি স্থাপনের, বিদেশীদের ধন-প্রাণ ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধানের প্রতিজ্ঞা করেন।
ঙ্ ধৈযর্্য ও সংযমের শিক্ষা প্রদানে বলেন, “তোমরা সংযমী ও ধার্মিক হও।”
ঙ্ প্রকৃতিপ্রেম ও মানবপ্রেমের শিক্ষা দানে বলেন, ফলবান বৃক্ষকে কখনও মাটি থেকে উপড়ে ফেলবেনা। যতদূর সম্ভব মানুষের সম্মান করবে। সবচেয়ে উত্তম বিজয়ের চেয়ে মানুষের আত্মা অধিক প্রিয় এবং উত্তম।
ঙ্ জাহেলিয়াত এবং বিশ্বজগতের আকর্ষণ থেকে মানুষের বিবেককে মুক্ত পরিচ্ছন্ন করার অন্যরকম সংগ্রাম শুরু করেন।
ঙ্ সত্য ও ন্যায়ের স্বীকৃতি দিয়ে বৃহত্তর মানবীয় ঐক্য ও সৌভ্রাত্বের প্রতিষ্ঠা করে আত্মঘাতী বিপর্যয়ের মূলোৎপাটন করেন।
ঙ্ চিন্তা-গবেষণা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশের মাধ্যমে যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মীবাহিনী গড়েছিলেন।
ঙ্ মানুষকে পূর্ণ ঈমান গ্রহণে প্রস্তুত করেন। ঈমানই বিকৃতি ও আদর্শ বিচু্যতি থেকে রক্ষা করেছে।
ঙ্ নৈতিক চরিত্রকে দৃঢ় করে তুলতে মন-মানসিকতায় ভাল কাজ করার প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করেছিলেন। সমাজে বসবাসরত মানুষগুলো সৎ ও চরিত্রবান না হলে শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। এ জন্য চরিত্র সংশোধনের ব্যবস্থা সর্বাগ্রে করেছেন।
ঙ্ ইসলামী অর্থব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে দারিদ্র্যতা ও বেকারত্ব দূর করেছিলেন।
ঙ্ সকলকে সৎ ও ন্যায়ের আদেশ দিয়ে সে অনুযায়ী পরিবেশ গড়ে তুলেন। সত্যের পথে চলার জন্য সর্বদা উদ্বুদ্ধ করতেন। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এ দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকর করেছিলেন। অসৎ কাজের নিষেধ করেছেন।
ঙ্ দ্বীনকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করে অপরাধমুক্ত হতে সচেষ্ট করেছিলেন।
ঙ্ বিবেকবোধ হারালে অপরাধে জড়ায় বলে বিবেককে জাগ্রত করার মাধ্যমে ব্যক্তিগঠন করেছেন । বিবেক শাণিত হলে ব্যক্তি অন্যায়ের সাথে সম্পৃক্ত হয় না। সত্যকে হৃদয়াগ্রাহীভাবে তুলে ধরে বিবেকের সুপ্ত চেতনাকে সর্বাগ্রে বিকশিত করেছেন।
উপসংহার:
এক স্ফুলিংগের মতই অন্ধকার হতে আলোর দিশারী মহানবীর (সা:) আবির্ভাব ঘটেছিল। মরুভূমির প্রতিটি বালুকণা স্ফুলিংগে বিষ্ফোরিত হয়েছিল। বিষ্ফোরণের অগি্নকণা ছড়িয়ে পড়েছিল মক্কা থেকে গ্রানাডা পর্যন্ত। যিনি স্বর্গীয় জ্যোতি নিয়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন। আর গোটা মানব জাতি তাঁর পরশে আলোকিত হয়ে ওঠেছিল।
তিনি ছিলেন বেহেশত ও সীমাহীন মরুভূমির নেতা, আলোর পথের যাত্রী, আলোর পর্বতের নিত্যসঙ্গী। ১৭ রমযানের প্রাক্কালে চাঁদের আভা কোমল দীপ্তিময় হিরাকে আবেষ্টন করেছিল। আরবের মানুষ পুরাতন ও নতুন জগতের মাঝে অবস্থিত একটা সংকীর্ণপথ অতিক্রম করে পদার্পন করল প্রথমে এক ব্যক্তিত্বের এবং পরে লক্ষ লক্ষ মানুষের এক মহাজাতির মধ্যে। ১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে Fracois Voltaire এর Les Mouerset lespiriteles Nations পুস্তকে জ্ঞানী ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদরূপে উপস্থাপন, ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে Johann jakob Reiske এর একজন ঐশীপ্রাপ্ত মহামানবরূপে উপস্থাপন, ১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে প্রকাশিত Henri Comtede Boulainvillers বিরচিত Viedo Mohomet তে Age of Reason এর অগ্রপথিক হিসেবে চিহ্নিত করা-এসবই প্রমাণ করে মুহাম্মদ (সা:) এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যাকে না পেলে বিশ্ব অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তিনি নিজেই নিজের তুলনা।২১৭০৮ সালে Simon Ockley বিরচিত History of the Saracens গ্রন্থে বলা হয়, মহানবী (সা:) তরবারীর মাধ্যমে ধর্ম প্রচার করেননি।
সর্বোপরি, মহানবীর (সা:) আবির্ভাবে এই পাপ-পংকিল পৃথিবী ধন্য হইয়াছে। তাঁর প্রেমের অমৃত সেচনে দুঃখ তপ্ত মানবচিত্ত সি্নগ্ধ হইয়াছে। তিনি মানব সমাজের যুগ-যুগান্তরের কুক্ষিগত কালিমা রশ্মির মধ্য হতে সূর্যের মত উত্থিত হয়ে পাপের কুহক ভেংগেছেন। ধর্মের নবীন কিরণ জ্বেলেছেন ও পতিত মানবকে সত্য ও প্রেমের সঞ্জীবনি করে নবীন জীবন পথে টেনে লয়ে গেছেন। মহানবীর (সা:) তিরোধান কিন্তু তার অস্তিত্বের বিলয় নয়। কেননা যে বিশ্বাসকে তিনি রেখে গেলেন সেগুলোর মধ্যে দিয়েই চিরকাল তার অস্তিত্বের সাড়া পাওয়া যাবে। তার মৃতু্যতে শোক বিহ্বল মানুষ হাতাশায় বিপর্যস্ত হয়নি বরঞ্চ তারা তার সত্যকে সমুন্নত রাখবার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছে। নতুন Civilization- এর জন্ম দিয়ে জীবনের বিভিন্ন বিভাগে Equilibrium কায়েম করে স্থাপন করেছে বিরল দৃষ্টান্ত। মানবতা নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছে। মৃত আত্মা ও নির্জীব মন পেয়েছে সজীবতা। দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এসব ক্ষেত্রে মহানবী (সা:) এর আদর্শই অনেক বেশি কার্যকর। তাইতো কবি বলেছেন,
“মানুষের শোকে কাতর হয়ে, করেছেন অশ্রুপাত,
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি যেন নতুন প্রভাত।
তার অতুলনীয় ব্যক্তিত্বে মুক্তির ঠিকানা,
তার জীবনাদর্শেই উড়বে শান্তির নিশানা।”৩
তথ্য নির্দেশ:
১) ফররুখ আহমদ।
২) ঐতিহাসিক যোসেফ হেল,
৩) আনিসুর রহমান
তথ্যসূত্র:
১) মাসিক-মদীনা,আল-কাউছার,রহমত ও আদর্শ নারীর বিভিন্ন্ সংখ্যা
২) বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার কলাম
৩) কয়েকটি সীরাতগ্রন্থ
আপনাকে স্বাগত জানাই পিস ইন ইসলামে। আপনার কাছ থেকে আরো অনেক লেখা প্রত্যাশা করি।