হজ-প্রস্তুতি
লিখেছেন: ' Anonymous' @ রবিবার, জুন ১৭, ২০১২ (৯:৫৩ অপরাহ্ণ)
একটা সুন্দর লেখা পেলাম হজের উপরে একটা সাইটে। আমার মনে ইতিমধ্যেই অনেক দেরী করে ফেলেছি কেননা সম্ভবতঃ এক সপ্তাহের মধ্যেই হজে টাকা জমা দেয়ার সময় শেষ। এরপরও কারো উপকার হতে পারে এই আশায় দেয়া।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৬ অক্টোবর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হজ এজেন্সির মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১০ হাজার হজযাত্রী হজব্রত পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করতে পারবেন। ভাষার ভিন্নতা, নতুন দেশ, নতুন পরিস্থিতি—বিবিধ কারণে কিছুসংখ্যক হজযাত্রী সমস্যায় পড়ে থাকেন। কয়েকবার হজ করার সুবাদে দেখেছি, কিছুটা ধারণা থাকলে, সচেতন হলে এসব সমস্যা দূর করা যায়। পাঠকের সুবিধার্থে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।
হজে যেতে চাইছেন, নিয়ত করুন, ‘হে আল্লাহ, আমার জন্য হজকে সহজ করো, কবুল করো।’
বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি দুভাবে হজে যাওয়া যায়। আপনার পরিচিত আত্মীয়স্বজন, বন্ধু কেউ আগে হজে গিয়ে থাকলে বা এলাকার কেউ হজে গিয়ে থাকলে তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যেভাবেই হজে যান না কেন, হজ প্যাকেজের সুবিধা কী কী, ভালোভাবে বুঝে যাচাই করুন। কিছু খরচ নির্দিষ্ট আছে, যেমন বিমান ভাড়া ও মোয়াল্লেম ফি। বাকি টাকা মক্কা-মদিনায় বাসস্থানের জন্য। ঘোষিত হজ প্যাকেজ অনুযায়ী, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক হজযাত্রীর এবার খরচ হবে তিন লাখ তিন হাজার ৪৪০ টাকা।
সরকারি বা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যেভাবেই যান না কেন, কোথায়, কীভাবে থাকবেন, আগেই জেনে নিন। যেমন: মক্কার বাসার দূরত্ব নির্ধারিত হয় কাবা শরিফ থেকে। আর মদিনায় মসজিদে নববি থেকে। বাসস্থান কত দূর, তার ওপর নির্ভর করে টাকা। অর্থাৎ কাবা শরিফ থেকে বাসার দূরত্ব কম হলে খরচ বেড়ে যাবে। যত বেশি দূরত্ব হবে, খরচও তত কম হবে। চুক্তিপত্রে প্যাকেজ-সুবিধাগুলো বুঝে নিন। প্রয়োজনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করুন। খাবার, কোরবানি প্যাকেজের বাইরে কি না, জেনে নিন। প্যাকেজে ফিতরা (ফিতরা মানে স্থানান্তর) পদ্ধতি থাকবে কি না, নিশ্চিত হয়ে নিন।
হজে যাবেন। প্রয়োজনীয় বইপুস্তক, হজ গাইড সংগ্রহ করে পড়ুন। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রথম আলো হজযাত্রীদের সহায়ক হজ গাইড প্রকাশ করে, বিনা মূল্যে তা বিতরণ করে। প্রথম আলোর কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
বিমানে ওঠার পর বাথরুম ব্যবহার, হাই কমোড, নামাজ আদায়, অজু, তায়াম্মুম কীভাবে করতে হয়, তা জেনে নিন। জানা থাকলে অন্যদের সহায়তা করুন।
সৌদি আরবে মক্কার কাবা শরিফে বা মদিনার মসজিদে নববিতে প্রতিটি ফরজ নামাজের পর জানাজা হয়ে থাকে। জানাজার নিয়মকানুন জেনে নিন।
আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট তৈরি করে নিন। পাসপোর্ট বা স্ট্যাম্প সাইজের ২০ কপি ছবি সংগ্রহে রাখুন।
ক্রনিক ডিজিজ ডায়াবেটিস, হূদেরাগে যাঁদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, ৪৫ দিনের জন্য ওষুধ নিয়ে যেতে হবে। যাঁরা চশমা ব্যবহার করেন, আরেক সেট চশমা তৈরি করুন। কারণ, ভিড়ে চশমা ভেঙে যেতে পারে। সচেতনভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেনিনজাইটিস টিকাসহ অন্যান্য টিকা দিতে হয়। টিকা নির্দিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে নিয়ে সনদ সংগ্রহ করবেন। কারণ, জেদ্দা বিমানবন্দরে নামার পর ওই সনদ দেখাতে হয়। মাহরাম ছাড়া নারী হজযাত্রী এককভাবে হজে গমনের যোগ্য বিবেচিত হবেন না; নারী হজযাত্রীকে মাহরামের সঙ্গে একত্রে টাকা জমা দিতে হবে।
বিমানে কোনো হজযাত্রী ৩০ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন না।
সৌদি আরবে অবস্থানকালে বাসস্থানের বাইরে গেলে পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড ও হোটেলের কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।
কোরবানি করার জন্য ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের কুপন কেনা নিরাপদ।
হজের আবেদন ফরম, চুক্তির ফরমসহ অন্যান্য ফরম হজ অফিস, ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা যাবে। হজের আবেদনপত্র ও প্রয়োজনীয় তথ্য ওয়েবসাইট www.hajj.gov.bd ঠিকানায় পাওয়া যাবে।
হজ করতে আগ্রহী যাত্রীদের ২০ জুনের মধ্যে টাকা জমা দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।
কিছু হজযাত্রী হেঁটে হজের আমলগুলো করে থাকেন। যেমন, মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব কমবেশি (আট কি.মি.)। আরাফাত থেকে মুজদালিফার দূরত্ব কমবেশি (নয় কি.মি.) মুজদালিফা থেকে
মিনার দূরত্ব কমবেশি (৫ দশমিক ৫ কি.মি.) হেঁটে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে।
হজের ব্যয় বাবদ টাকা সোনালী ব্যাংক লি., অগ্রণী ব্যাংক লি., জনতা ব্যাংক লি., রূপালী ব্যাংক লি., পূবালী ব্যাংক লি., বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, রাজশাহী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি., আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের যেকোনো শাখায় জমা দেওয়া যাবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবের ভিসা, বিমানে যাওয়া-আসা, মক্কায় কাবা শরিফ থেকে যথাসম্ভব কাছাকাছি (৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০ মিটার) ও মদিনায় মসজিদে নববি থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ মিটারের মধ্যে তাসরিয়াযুক্ত বাড়িতে আবাসন, মক্কায় চার বর্গমিটার ও মদিনায় চার বর্গমিটার জায়গায় (বাস্তবে কমবেশি হতে পারে) একটি খাট, একটি বেড, একটি বালিশ ও একটি কম্বল (কক্ষ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হবে, কোনো কোনো কক্ষে অতিরিক্ত পাখা থাকতে পারে), চার থেকে সাতজনের জন্য একটি সংযুক্ত সাধারণ গোসলখানা-টয়লেট, মিনায় তাঁবুতে প্রত্যেক হাজির জন্য এক বর্গমিটার জায়গা, জেদ্দা-মক্কা-মদিনা-মিনা-আরাফাতের ময়দানে যাওয়া-আসার জন্য পরিবহন, মক্কা ও মদিনায় সাধারণ চিকিৎসা, ফ্লাইটের আগে ঢাকার আশকোনা হজ ক্যাম্পে থাকার ব্যবস্থা, হজের আহকাম-আরকান সম্পর্কে নিবিড় প্রশিক্ষণ, বইপুস্তক সরবরাহ প্রভৃতি সুবিধা পাবেন হাজিরা। প্রতি ৪৫ জন হাজির জন্য একজন গাইড নিয়োগ করা হবে।
খাওয়া খরচ বাবদ প্রত্যেক হজযাত্রীকে ১৮ হাজার ৩৭৫ টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল ফেরত দেওয়া হবে।
কোরবানি বাবদ ৫০০ রিয়াল (কমবেশি হতে পারে) নিজ দায়িত্বে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনা: হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রীপ্রতি ব্যয় বিমানভাড়া এক লাখ ২০ হাজার ৯৫০, জেদ্দা ডিপারচার ট্যাক্স এক হাজার ৫০, এম্বারকেশন ফি ৩০০, ইনস্যুরেন্স সার চার্জ ৮২০, এক্সাইজ ডিউটি ৫০০, স্থানীয় সার্ভিস চার্জ ৫০০, আপৎকালীন ফান্ড ১০০, জেদ্দা-মক্কা-মদিনা-মিনা-আরাফাতের যাতায়াত ব্যয়, মিনায় তাঁবু ভাড়া ও মোয়াল্লেম ফি ২৪ হাজার ৩৩৯ টাকা। এ ছাড়া মিনা-আরাফাতে মোয়াল্লেমের অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ, মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া ব্যয়, হজযাত্রীদের কোরবানির খরচ (কোরবানি নিশ্চিত করার জন্য সৌদি আরবে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকে অর্থ জমা করা যেতে পারে।) মক্কা, মদিনা ও মিনায় খাওয়ার খরচ, হজ গাইড ও প্রশিক্ষণ চার্জ প্রত্যেক এজেন্সি নিজ নিজ প্যাকেজ অনুযায়ী নির্ধারণ করবে।
আরও তথ্য জানতে হজ অফিসার, হজ অফিস, আশকোনা, উত্তরা, ঢাকা ছাড়াও প্রতিটি জেলায় উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে তথ্য জানা যাবে।