লগইন রেজিস্ট্রেশন

তাবলীগ জামাতঃ একটি পর্যালোচনা

লিখেছেন: ' Anonymous' @ সোমবার, মে ২০, ২০১৩ (১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ)

প্রায় পাঁচ হাজার শব্দের আর্টিকেল। পাঠকদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ধৈর্য সহকারে প্রতিটি লাইন পড়ে দেখার অনুরোধ করছি।

দুনিয়ার সকল কিছু একমাত্র সৃষ্টিকর্তা যেমন মহান আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়া তায়া’লা, তেমনি সকল কিছুর পালন কর্তা ও নিয়ন্ত্রণ কর্তাও তিনিই। সমস্ত কিছুকে পালন করার ব্যপারে তিনি যেমনই নজীর বিহীন তেমনই অমুখাপেক্ষী। একই ভাবে সকল কিছুর সূক্ষাতিসূক্ষ নিয়ন্ত্রণও তিনি একাই করেন, কারও বিন্দু মাত্র সাহায্যও তাঁর দরকার হয় না। এবং তিনি এই সকল কিছুর ব্যপারে তিনি পরিপূর্ণ ও নিরঙ্কুষ সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তাঁকে প্রশ্নকারী যেমন কেউ নেই, তেমনি তিনি সকল ধরণের জবাবদিহিতারও উর্ধ্বে। তিনি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে দিয়েছেন আকল ও বিবেক। এবং নিজেদের মত করে চলার স্বাধীনতা, যা তিনি আর কাউকে দেন নি। এমনকি ফেরেশতাদেরও নয়। মানুষের স্বাধীন ভাবে চলার জন্য সকল ধরণের পথ তিনিই বানিয়েছেন। এই সব পথের পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার জন্য তিনি যুগে যুগে নবী রসুলদের পাঠিয়েছেন। তাদের দায়িত্ব ছিল মানুষদের সফলতার দিকে আহবান করা। এই আহবানে সাড়া দেয়ার জন্য আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়া তায়া’লা মানুষকে বাধ্য করেন নি। এটাই তাঁর মহিমা। কেননা মানুষের ইবাদাত বা উপাসনার মুখাপেক্ষী তিনি নন। তিনি সকল ধরণের মুখাপেক্ষিতা, প্রয়োজন ও সীমাবদ্ধতা থেকে বহু উর্ধ্বে।

মহান আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়া তায়া’লা নবীদের দিয়েছিলেন পর্যাপ্ত জ্ঞান। হযরত আদম আ’লাইহিস সালামকে সরাসরি জান্নাতে রেখেছেন এবং নিজে সরাসরি আপন কুদরতের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন। মুহা’ম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকেও জান্নাত জাহান্নাম দেখিয়েছেন। মুসা আ’লাইহিস সালামের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। সকল নবীদের ফিরিশতাদের মাধ্যমে ওহী প্রেরণ করে শিখিয়েছেন। সকল নবীই জান্নাত, জাহান্নাম এবং আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়া তায়া’লার কুদরত, শক্তি ও বড়ত্ব ইত্যাদি সকল ব্যপারে পুরোপুরি ওয়াকেফহাল ছিলেন। আল্লহ প্রদত্ত এই জ্ঞান দিয়ে তাঁরা মানুষদের কল্যাণের দিকে ডাকতেন। শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়া তায়া’লা মুহা’ম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উপরে দ্বীনকে পরিপুর্ণ করেছেন এবং নবুওয়াতের ধারা সমাপ্ত করেছেন।

কিন্তু আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়া তায়া’লা মানুষের আগমনের ধারাকে চালু রেখেছেন এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত বজায় রাখবেন। অন্য দিকে মুহা’ম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে স্থান কাল পাত্র নির্বিশেষে কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের সকল মানুষের নবী হিসেবে সাব্যস্থ করেছেন। আর এই নবুয়তের ধারাকে বজায় রাখার দায়িত্ব এই উম্মতে মুহা’ম্মাদীর সকলের উপরে ন্যস্ত করেছেন। আল্লাহ সুবহা’নাহু ওয়া তায়া’লা বলেন –
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সুরা আল ইমরানঃ ১১০)

উলামা কেরাম বলেন, এই আয়াতের দ্বারাই উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে দাওয়াতের কাজের দায়িত্ব বর্তিয়েছে। বস্তুতঃ মানুষকে জান্নাত তথা কল্যাণের দিকে ডাকার জন্য দায়িত্বেরও প্রয়োজন পড়ে না। মানুষের বিবেকই যথেষ্ট। একজন বিবেকবান মানুষ তার সামর্থ থাকলে তার সামনে কোন কুকুর বা বিড়ালকেও কষ্টে পতিত হওয়াকে পছন্দ করবেন না। আর জাহান্নাম হলো সবচেয়ে কষ্টের জায়গা। মানুষ যত কষ্ট কল্পনা করতে পারে জাহান্নাম তার চেয়ে অনেক অনেক গুন জঘন্য কষ্টের জায়গা। মানুষ যদি জানত জাহান্নাম কত কষ্টের জায়গা তাহলে তার সবচেয়ে খারাপ শত্রুর জন্যও জাহান্নাম চাইত না। দাওয়াতের কাজ ঈমানের অঙ্গ, এ কথা বললেও ভুল বলা হবে না। জাহান্নামের শাস্তির ব্যাপারে যার ইয়াক্বীন যত বেশি সে তত বেশি মানুষকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করবে। নিঃসন্দেহে সকল কিছুর ব্যপারে নবীদের ইয়াক্বীনই সবচেয়ে বেশি ছিল। এজন্যই দেখা যায় নবীরা উম্মতকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের বিপরীতে মক্কাবাসী তাঁর উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার করলেও তিনি দাওয়াত দেয়া ছাড়েন নি। বরং যারা অত্যাচার করেছে তাদের একেক জনের কাছেই বার বার গেছেন। একই ভাবে সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের ক্ষেত্রেও তাই দেখা গেছে। তাঁদের বলতে হয় নি যে, আমার যে কাজ তোমাদেরও তাই কাজ। বরং তারা নিজ গরজেই অন্যদের দাওয়াত দিয়েছেন। হযরত আবুবকর রদিয়াল্লহু আ’নহু থেকে শুরু করে বহু সাহাবীর দাওয়াত দেয়ার ঘটনা বিভিন্ন সীরাত ও ইতিহাসের কিতাবে পাওয়া যায়। আসল ব্যপার হল যে জানে যে জাহান্নাম কত ভয়ঙ্কর জায়গা সে দাওয়াত না দিয়ে পারবে না। আর যে দাওয়াত দেয় না বুঝা যায় যে জাহান্নামের ভয়াবহতার সম্পর্কে সে জানে না, অথবা জানলেও যতটুকু জানে তার উপর তার পর্যাপ্ত আস্থা নেই। দাওয়াত তাই মানুষের ঈমান ও ঈমানের দৃঢ়তার দাবী।

দাওয়াত তাই একটি আ’মল। বরং অতি গুরুত্বপূর্ণ আ’মাল। বলা চলে দাওয়াত সকল আ’মালের মা। কেননা দাওয়াতের দ্বারা সকল আ’মাল জিন্দা হয়। নবীদের শুধু এই কাজের জন্যই পাঠানো হত। সকল নবীদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্বই ছিল দাওয়াত। দাওয়াত ও তাবলীগ পরস্পর পরিপূরক শব্দ। কখনও কখনও সমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। দাওয়াত শব্দের অর্থ হল আমন্ত্রণ বা আহবান করা। আর তাবলীগ শব্দের অর্থ হল জানানো। সহজ কথায় মানুষের ইসলামের দিকে ডাকা হল দাওয়াত আর মানুষের কাছে ইসলামের পরিচয় পেশ করাই হলো তাবলীগ। যে নিজেকে মুসলমান হিসেবে মনে করে তারই এই কাজ, অন্য মানুষদের ইসলামের দিকে আহবান করা। সে অমুসলিম হোক অথবা সাধারণ মুসলমান হোক। এমন কি যদি খুব ভালো মুসলমানও হয় এরপরও দাওয়াত তার জন্য উপকারী। কেননা দাওয়াত মানুষকে আ’মালের কথা মনে করিয়ে দেয়। সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম একে অপরকে আ’মালের কথা মনে করিয়ে দিতেন। এমনকি খুব কঠিন কঠিন পরিস্থিতিতেও। যেমন হযরত উ’মার রদিয়াল্লহু আ’নহু যখন ছুরিকাঘাতে বেহুঁশ হন তখনও তাঁর শুভাকাঙ্খীরা তাঁকে নামাযের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভুলে যান নি। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে উ’মার রদিয়াল্লহু আ’নহু নিজেও নামাযের কথা ভুলে যান নি। তাঁকে নামাযের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই তাঁর হুঁশ ফিরে। তিনি বলেন, হ্যাঁ নামায, আমি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নামায পরে না ইসলামে তাঁর কোন অংশ নেই।

আসল ব্যপার হল সকল মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। মানুষ তাঁর ভাইয়ের ব্যপারেই সবচেয়ে বেশি শুভাকাঙ্খী হয়। মানুষ যখন দেখে তার ভাই খুব কষ্ট বা বিপদে আছে, আর সেই কষ্ট যদি হয় জাহান্নামের কষ্ট তাহলে জাহান্নামের ব্যাপারে যার ইয়াক্বীন আছে, সে কি তার ভাইয়ের জন্য বিচলিত না হয়ে পারে? অবশ্য জাহান্নামের কষ্ট যার কাছে দুনিয়াবী ক্ষুধার কষ্টের চেয়ে বেশি কঠিন মনে হয় না তার জন্য ভিন্ন কথা। একারণেই দেখা যায় একজন কাফেরের কুফরী আর মুসলমানের বদ আ’মালের মধ্যে মুসলমানের বদ আ’মালই অন্য একজন মুসলমানকে বেশি পীড়া দেয়। এটা সকল জামানাতেই দেখা গেছে। একারণেই আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানরা যখন ব্যপক ভাবে আ’মাল ছাড়া শুরু করল তখন উলামাকেরামের মধ্যে এ নিয়ে ব্যপক দুঃচিন্তা ও উত্তরণের উপায় নিয়ে ব্যাপক চিন্তা ভাবনা শুরু হয়। একেক আলেম একেকটি বিষয়কে মুসলমানদের অধঃপতনের কারণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এবং এই সব কারণ দূর করার জন্য তাঁরা নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন সমাধান দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়া এখনও অব্যহত আছে। কেউ ইংরেজদের প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধঃপতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেন, এর বিপরীতে মানুষকে ইংরেজদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ফতওয়া এবং ওয়াজ মাহফিলের মধ্যমে জনমত গঠনের উপর জোড় দিলেন, কেউ কেউ ইংরেজ ও হিন্দু সাহিত্যের দৌরাত্ম্য কে অধঃপতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেন। এর বিপরীতে মুসলিম সাহিত্য চর্চার উপর ব্যপক জোড় দিলেন। কেউ পর্যাপ্ত মসজিদ/মাদ্রাসার অভাবের কথা উল্লেখ করলেন। কেউ মুসলমানদের অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কথা, কেউ বা ভালো মুসলমান রাজনৈতিক নেতার অভাবে কথা উল্লেখ করে এর সমাধানের চেষ্টা করেছেন। আজও কেউ কেউ নতুন নতুন কারণের কথা উল্লেখ করেন। যেমন মিডিয়ার প্রভাব, মুসলমানদের মধ্যে পর্যাপ্ত জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা না হওয়া, ইসলামী কার্টুন ও শিশু সাহিত্যের অভাব ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও কুফরী মিডিয়ার বিপরীতে ইসলামী মিডিয়ার সংখ্যা পর্যাপ্ত না হলেও কম নয়। এভাবেই ওয়াজ মাহফিল, মসজিদ মাদ্রাসা ও বিভিন্ন কিতাব বা ম্যাগাজিনের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে দাওয়াত চলতে থাকে। তাই, আমি মুসলমান আমার কাছে কেন দাওয়াত নিয়ে আসে? এই প্রশ্ন অনেক সাধারণ মানুষের মাঝে থাকলেও শিক্ষিত বা নেতৃস্থানীয় উলামা কেরামসহ বোদ্ধা ব্যক্তিগণের প্রচেষ্টা বরাবরই মুসলমানদের জন্যই বেশী ছিল এবং তা এখনও আছে। এটা শুধু আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশেই নয় বরং সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত দাওয়াতী সংগঠন দেখা যায় তার বেশির ভাগই মুসলমানদেরই ফোকাস করছে। উদাহরণ স্বরূপ মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক ইখওয়ানে মুসলেমীন বা মুসলিম ব্রাদারহুডের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সাংগঠনিক ভাবে এঁরাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংগঠন, ধারণা করা হয় এঁদের সদস্য সংখ্যা ১০ কোটির বেশি। এঁদের মূল এজেন্ডা সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা।

তবে সত্যি কথা হলো, এ সবগুলোই আসলে রোগের উপসর্গ, একটাও রোগের কারণ নয়। এ ব্যপারে পস্তিকা ওয়াহেদ এলাজ নামক এক সংক্ষিপ্ত পুস্তকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দাওয়াত আসলে কোন সাংগঠনিক বিষয় ছিল না। বরং এটা মুসলমানদের আ’মালের অংশ। নামায ছাড়া যেমন মুসলমান কল্পনা করা যায় না, তেমনি একজন ঈমানদার মুসলমান দাওয়াত দিবে না এটাও কল্পনা করা যায় না। যিনি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসেন তিনি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কোন উম্মতের মধ্যে থেকে দ্বীন বা দ্বীনী কোন আ’মাল ছুটে যাওয়া কখনও পছন্দ করবেন না। কেননা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের উদ্দেশ্য তো এটাই ছিল যে সারা দুনিয়ার সকল মানুষের জীবনে দ্বীন পুরাপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাক। একথা অভিজ্ঞতা থেকেও বুঝা যায়, যে সকল মুসলমানরা অন্ততঃ নামাযে আসেন তাঁরা যদি দাওয়াতকেও নিজেদের জিম্মাদারী বা কর্তব্যের অংশ মনে করতেন তাহলে নামাযী আরও বাড়ত। এই ভাবে যিনি যেই আ’মাল করতে অভ্যস্থ তিনি যদি ঐ আ’মালের দাওয়াতও দিতেন তাহলে এক দিকে যেমন তার ঐ আ’মালের মধ্যে মজবুতী আসত তেমনি ঐ আ’মালের আ’মালকারীর সংখ্যাও কিছু না কিছু বাড়ত।

রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন প্রত্যেক আ’মাল করে গেছেন, তেমনি হাতে কলমে শিখিয়েও দিয়ে গেছেন। যেমন নামাযের আগে কি কি প্রস্তুতি নিতে হয়, নামাযের মধ্যে কি কি ধাপ আছে, ঐ সকল ধাপে কি কি করতে হয় ইত্যাদি। যাকে পরিভাষায় নামাযের আরকান ও আহকাম বলা হয়। দাওয়াতের এই আ’মালের ব্যপারে এমন সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকায়, দাওয়াতের ক্ষেত্রে নিজেদের কিছু বুদ্ধি বিবেক ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম যে ভাবে দাওয়াত দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে সেটাই সবচেয়ে বেশী উপকারী ও কার্যকরী। ইতিহাস ঘাটলেও তাই দেখা যায়, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের মত পরবর্তীতে আর কেউ সাফল্য পান নি। একারণে এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যাবে, আমরা যদি দাওয়াতের ক্ষেত্রে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের পদ্ধতি (যাকে পরিভাষায় ত্বরীকা বলা হয়) অবলম্বন করি তা হলেই সবচেয়ে বেশি উপকার বা ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে যাবে। এটা জানা কথা যে, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে থেকে কিছুই করেন নি। বরং নবুওয়াতের পর থেকে তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজ আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার সুস্পষ্ট নির্দেশনাতেই সম্পাদিত হয়েছে।

এ ব্যপারে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবন থেকেই একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যিনি নবী হন, তাঁর নবুওয়াতের মর্যাদা বা কার্যক্রম যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে নবুওয়াত পাওয়ার পরেই শুরু হয়, যেমন রসুলুল্লহ মুহা’ম্মাদ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আনুষ্ঠানিক ভাবে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন চল্লিশ বছর বয়স থেকে। কিন্তু প্রত্যেক নবীর মধ্যেই নবুওয়াতের বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী জন্ম থেকেই প্রকাশিত হয়। কেননা যিনি নবী হন আল্লহ সুবহানহু ওয়া তায়া’লা তাঁকে ছোট বেলা থেকেই সকল ধরণের প্রশ্নবিদ্ধ গুণ তথা খারাপ গুণ থেকে মুক্ত রাখেন, যেন পরিপূর্ণ পরিছন্ন ভাবমুর্তি নিয়েই নবীরা বড় হন। এক সময়ে খুব খারাপ মানুষ বা ডাকাত ছিলেন এমন কেউ কেউ তওবা করে পরবর্তীতে আল্লহ ওয়ালা বা বড় আলেম হলেও নবীদের ক্ষেত্রে এমন দেখা যায় না। কেননা এ ক্ষেত্রে মানুষের পক্ষে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকে যে, ব্যাটা নতুন কোন স্বার্থের খাতিরে নিজেকে নবী দাবী করছে। বাস্তবেও তাই দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত যত ভন্ড নবী দেখা গেছে তারা সকলেই পূর্ব জীবনে বড় মাপের অপরাধী ছিল। এখন পর্যন্ত কোন পরিছন্ন ভাবমূর্তির মানুষ নিজেকে মিথ্যা ভাবে নবী দাবী করে নি।

আলোচনা করছিলাম, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যদিও চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন কিন্তু তাঁর মধ্যে নবুওয়াতের সিফাত বা গুণাবলী কিন্তু জন্ম থেকেই প্রকাশ পেয়েছে। কিশোর বয়সে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তৎকালীন আরবের সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট, পারস্পরিক হানাহনি, যুদ্ধ বিগ্রহ ইত্যাদি দেখে খুব মনোঃবেদনায় ভুগতেন। শেষ পর্যন্ত ১৭ বছর বয়সে সমবয়সী কিছু যুবক এবং কিছু শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে হিলফুল ফুযুল নামে এক সংগঠন করেন। এই সংগঠনের অধীনে পরিনত বয়স পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন মানুষের কল্যাণ পৌঁছানোর জন্য। এভাবে চল্লিশ বছর পর্যন্ত সকল বিবেক, বুদ্ধি, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ব্যয় করেও কোন উন্নতি করতে পারেন নি বরং মানুষের অবস্থা দিনে দিনে অবনতিই হচ্ছিল। বলা বাহুল্য, এসকল অবস্থা দিনে দিনে তাঁর মনোঃকষ্টই বাড়িয়ে চলছিল। এই ভাবে ২৩ বছর প্রচেষ্টা/পরিশ্রমের পরে শেষ পর্যন্ত রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের মানসিক শান্তির জন্য নির্জন বাস বা ধ্যানের জন্য লোকালয় থেকে প্রায় পাঁচ মাইল দূরে হেরা গুহায় চলে যান। সেখানে আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা তাঁকে নবুওয়াতের মর্যাদা দান করলেন এবং বিশ্ব মানবতার কল্যাণের দায়িত্ব দিয়ে আবার লোকালয়ে পাঠিয়ে দিলেন। আমার এখানে পুরা ইতিহাস বর্ণনা বা বিশ্লেষণ করা উদ্দেশ্য নয়। আমরা জানি এরপর রহ’মাতাল্লিল আ’লামিন খ্যাত রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ২৩ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার নির্দেশনা মোতাবেক মানুষের মাঝে মেহনত করলেন। আলহা’মদুলিল্লাহ এই ২৩ বছরের প্রচেষ্টায় সারা দুনিয়ার মাঝে এল এক নতুন বার্তা। হক বিজয়ী হল, বাতিল পরাভূত হল। আর মানুষের মাঝে শত শত বছরের হানাহানি বিদ্বেষ দূর হয়ে পাস্পরিক এমন ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হল যার নমুনা বা নজির পেশ করতে সাড়া দুনিয়া আজও অক্ষম। মোট কথা সারা দুনিয়াতে বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধনার এক ধারা সৃষ্টি করার পর রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। লক্ষ্য করুন নবুওয়াতের আগে পরে দুইটিই ২৩ বছরের সময়কাল ছিল। প্রথমটি ছিল নিজের জ্ঞান বুদ্ধি অভিজ্ঞতা প্রসূত, আর পরেরটি ছিল আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার নির্দেশনা মোতাবেক। ফলাফলের পার্থক্য তো আগেই উল্লেখ করলাম।

একথা বলা তাই অত্যুক্তি হবে না যে, মানব মস্তিষ্ক প্রসূত যে কোন পদ্ধতির চেয়ে বরং রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াতের পদ্ধতি হুবহু অনুসরণ করাই সর্বোচ্চ বেশী ইতিবাচক নিয়ে আসবে। কেননা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা সকল যুগের সকল মানুষের জন্যই আদর্শ বানিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন। সাম্প্রতিক ইতিহাসে মাওলানা ইলিয়াস রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহি এই মত প্রকাশ করেন এবং এই অনুসারে কর্মপদ্ধতি প্রনয়ন করে তার প্রয়োগ শুরু করেন। তবে তিনিই প্রথম ব্যক্তি নন যিনি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের তরীকা/পদ্ধতি হুবহু অনুসরণের উপর জোড় দিয়েছেন। সবার প্রথম যে ব্যক্তির কথা পাওয়া যায় তিনি সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের একেবারেই নিকটবর্তী জামানার মানুষ ছিলেন। তিনি ইমাম মালেক রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহি। অনেক ইতিহাসবিদ তাঁকে তাবেয়ী’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন –
এই উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার শেষের দিকে যে সমস্ত লোক আসিবে তাহাদের সংশোধন ঐ পর্যন্ত হইতে পারে না যে পর্যন্ত তাহারা প্রথম যুগের সংশোধনের পন্থা গ্রহণ না করিবে।

মাওলানা ইলিয়াস রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহির এই কর্মপদ্ধতির বর্ণনা পস্তিকা ওয়াহেদ এলাজ থেকে দেখে নেয়া যেতে পারে। বলাবাহুল্য এসব পদ্ধতি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের জীবন থেকেই নেয়া। এখনও যেসব উলামা কেরাম দাওয়াতের কাজের রাহবারী তথা দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন তাঁরা এই নীতির উপরেই দিচ্ছেন। অর্থ্যাৎ দাওয়াতের কর্মপদ্ধতির মধ্যে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের পুরোপুরি অনুসরণ। সাম্প্রতিক ইতিহাসে আমরা এটাই দেখি দাওয়াতের নামে বা মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনি আগ্রহ ও স্পৃহা বাড়ানোর যত প্রচেষ্টা হয়েছে তার মধ্যে দাওয়াতে তাবলীগ বা তাবলীগ জামাত নামে যে মেহনত বা প্রচেষ্টা চলছে এটাই সব থেকে ফলপ্রসূ এবং দীর্ঘস্থায়ী।

তাবলীগ জামাত তাই কোন দল বা সংগঠন নয় বরং রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের কর্ম পদ্ধতির পুরোপুরি অনুরসণ। আসলে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কোন জামাত বা সংগঠন বানিয়ে যান নি। তিনি উম্মত বানিয়ে গেছেন। তিনি মানুষের ময়দানে উম্মত বানানোর মেহনত করে গেছেন এবং এই মেহনত শিখিয়ে গেছেন। একই সাথে আ’মাল শিখিয়ে গেছেন। এবং আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার উপর পরিপূর্ণ আস্থা শিখিয়ে গেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম যেমন নিজেরা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো আ’মাল করে গেছেন তেমনি তাঁর শেখানো সেই মেহনতও করে গেছেন যে মেহনতের দ্বারা উম্মত তৈরি হয়। আজ রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত কত দল মত পথ ও জাতীয়তায় বিভক্ত। নিজেদের রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত এই পরিচয়ের চেয়ে ঐ সব দল মত বা জাতীয়তার পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করে। অথচ রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের জামানায় তাঁর সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুম বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিলেন। সেই বিভক্ত কওম বা জনসাধারণকে তিনি এক উম্মত বানিয়েছেন। যে সুতার দ্বারা রসুলুল্লস সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন গোত্র বর্ণ কে এক মালায় সাজিয়ে ছিলেন সে সুতা ছিল ঈমান। আজ মুসলমানদের পারস্পরিক বিভক্তির প্রধান কারণ ঈমানের দুর্বলতা। এজন্যই মুসলমান পরিচয়ের চেয়ে অন্যান্য পরিচয় আজ বড় মনে হয়। এজন্য আগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাধারনের মানুষের মধ্যে ঈমান বাড়ানোর মেহনতই দাওয়াতে তাবলীগের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য। মাওলানা ইলিয়াস রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহি বলতেন, “আমি এই মেহনতের কোন নাম রাখি নি। মানুষ একে তাবলীগে জামাত হিসেবে চিনে। আমি যদি কোন নাম রাখতাম তাহলে এর নাম রাখতাম ঈমানী আন্দোলন।

রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ

১. রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম প্রধানতঃ ঈমানের দাওয়াত দিতেন। কাফেরদের যেমন ঈমানের দাওয়াত দিতেন তেমনি মুসলমানদেরও ঈমান বাড়ানো ও ঈমান মজবুত করার ব্যপারে প্রচুর উৎসাহ দিতেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস সমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তিনি বিভিন্ন আমালের পদ্ধতি বা আ’মালের উৎসাহ দেয়ার জন্য যত হাদিস বর্ণনা করেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি হাদিস বর্ননা করেছেন ঈমানের উন্নতি ও মজবুতির জন্য। একটা হাদিসে সারমর্ম উল্লেখ করা যাতে পারে। একবার আবু হুরইরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু গাছের চারা রোপন করছিলেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন কি করছ? তিনি উত্তর দিলেন গাছের চারা রোপন করছি। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম গাছের সন্ধান দিব? সুবহানাল্লহি ওয়া বিহা’মদিহী সুবহানাল্লহিল আ’যীম পাঠ করলে জান্নাতে এমন এক গাছ বপন হয়ে যাবে যার ছায়া আরবের একটি তেজী ঘোড়া ৫০০ বছরেও অতিক্রম করতে পারবে না। ঈমানের প্রধান তিনটি শাখা হল তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত। এভাবে অসংখ্য ঘটনা হাদিসের কিতাব সমূহে পাওয়া যায় যেখানে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের (যাঁরা মুসলমান ছিলেন) উপর প্রচুর মেহনত (প্রচেষ্টা) করেছেন ঈমানের ব্যপারে।

২. রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মেহনতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল তিনি নিজে যেচে বেগরজ মানুষের নিকট যেতেন দাওয়াত নিয়ে। আসলে দাওয়াতের মেহনত বা প্রচেষ্টা প্রত্যেক যুগেই কোন না কোন ফর্মে চালু ছিল। কেননা সাধারণ মানুষের দ্বীনদারী নিয়ে নেতৃস্থানীয় বিশেষতঃ উলামাকেরামদের মাথাব্যথা সব যুগেই ছিল। আমাদের উপমহাদেশেও মাদ্রাসা, খানকাহ, ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে, পরবর্তীতে লেখালেখির মাধ্যমে কিছু দাওয়াত চালু ছিল। মূলতঃ এগুলো চালু ছিল বলেই দ্বীন আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। নতুবা আমাদের দেশের অবস্থাও হয়তঃ মধ্য এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের মুসলমানদের মত হত। অনেকেই জানেন ইমাম বুখারী রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহির জন্মস্থান বর্তমান উজবেকিস্তানে। বড় বড় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান ছিল সেখানে। আজ উজবেকিস্তান বেশ কট্টর ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। সে দেশের কেউ দ্বীন শিখতে হলে বাংলাদেশে আসে। কাকরাইল মসজিদের মাদ্রাসায় প্রচুর উজবেকিস্তানের ছাত্র পড়াশুনা করছে। আমাদের ভারতবর্ষে আলহা’মদুলিল্লাহ উলামাকেরামদের উপর ইংরেজদের অবর্ণনীয় অত্যাচার সত্ত্বেও উলামা কেরাম বিভিন্ন সুরতে দ্বীনি শিক্ষা ও দ্বীনি দাওয়াত চালু রেখেছিলেন। মাওলানা ইলিয়াস রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহি লক্ষ্য করলেন বিভিন্ন মাদ্রাসা বা খানকাহ বা ওয়াজ মাহফিলে শুধু সে সকল লোকজনই আসেন যাদের মধ্য দ্ব্বীনের আগ্রহ আছে। বিভিন্ন দ্বীনি কিতাব বা বই পুস্তকও এমন সব লোকেরাই পড়েন। এর বাইরে উম্মতের বিশাল অংশ রয়েছে যারা এই সব জায়গায় আসেন না। আর দ্বীনি আগ্রহওয়ালা লোকের সংখ্যাও ক্রমেই কমছে। এর ভিত্তিতেই তিনি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের এই ত্বরীকার উপরে জোড় দেন যে, যাদের আগ্রহ নেই তদের কাছে নিজে যেচে যাওয়া, তাদের বুঝানোর চেষ্টা করা। এ ব্যপারে মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহি তাঁর ‘মাওলানা ইলিয়াস রহ. ও তাঁর দ্বীনী দাওয়াত’ নামক কিতাবে বিস্তারিত লিখেছেন।

৩. রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মেহনতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল সবার কাছে যাওয়া। যে কথা শুনে বা কথা গ্রহণ করে তাঁর কাছে যেমন যেতেন, তেমনি যে কষ্ট দেয় তাঁর কাছেও যেতেন। ধনীর কাছে যেমন যেতেন, তেমনি গরীবের কাছে যেতেন। সব শ্রেণীর, সব বয়সের, সব পেশার লোকের কাছেই দাওয়াত নিয়ে যেতেন। এবং বারবার যেতেন। বেছে বেছে শুধু কিছু লোকের কাছে যাওয়া অথবা এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা যাতে সবার কাছে দাওয়াত পৌঁছে না। যেমন টিভিতে প্রোগ্রাম করা বা কোন সেমিনার করা ইত্যাদি। আমি কাউকে উদ্দেশ্য করে বলছি না। দ্বীনের নামে যত মেহনত হচ্ছে, সবই পরস্পরের জন্য কোন না কোন ভাবে সহযোগী ও উপকারী। আমার বলার উদ্দেশ্য হল মাওলানা ইলিয়াস রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহি সবার কাছে পৌঁছানো, সবার জন্য ফিকির করা, এই সুন্নতের উপর খুব জোড় দিতেন।

৪. রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল অনানুষ্ঠানিকতা। আসলে দাওয়াত নিজেই একটি বড় আ’মাল। আর আ’মালের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতা মুখ্য নয়। আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা কে রাজি খুশি করাই মুখ্য। যেমন নামায রোজা ইত্যাদি। এগুলো সবই আ’মাল। এগুলো আদায় করার জন্য কোন আনুষ্ঠানিক দল বা সংগঠন নেই। বাস্তবিক প্রতিটি আ’মাল যেমন জরুরী তেমনি প্রতিটি আ’মালের দাওয়াতও জরুরি। আর এই দাওয়াত প্রত্যেকের জন্যই জরুরী। এমন নয় যে কেউ দলীয় বা সাংগঠনিক ভাবে কিছু দাওয়াতের কাজ করবে, বাকিরা শুধু আ’মাল করবে। সবার জন্যই জরুরী মানুষ কে আল্লহর দিকে ডাকা, আল্লহর কথা বলা। যে কাউকে যে কোন সময়েই দ্বীনের কথা বা বিভিন্ন আ’মালের কথা বলা যায়। আসলে দাওয়াতে তাবলীগের মেহনত দ্বারা এটাই চাওয়া হচ্ছে যে উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি দাওয়াত দেয়া শিখুক। এজন্য কোন নির্দিষ্ট কোন প্রোগ্রাম বা আগে থেকে কোন পূর্ব প্রস্তুতি বা বিশাল কোন খরচে আয়োজন বা পৃষ্ঠপোষকতা দরকার নেই। যদি কেউ এভাবে করে তাতেও সমস্যা নেই। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য হল, মুসলমান মাত্রই যেমন নামায পড়াকে জরুরী মনে করে, তেমনি মুসলমান যেন দাওয়াতের কাজকেও জরুরী মনে করে।

৫. রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল দাওয়াতের কাজ দ্বারা তিনি দুনিয়াবী কোন কিছু আশা করতেন না। বরং তাঁর পূর্ণ আস্থা তো এই ছিল, এই কাজের ফলাফল যাই হোক এর অতি উত্তম বদলা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা দিবেন। মূলতঃ শুধু মাত্র এই তাকিদ থেকেই তিনি নিজের শক্তি সামর্থ্য, টাকা পয়সা ও সময় এই কাজেই ব্যয় করতেন। এমনকি তিনি নিজের সমস্ত ইজ্জত সম্মানও এই কাজে লুটিয়ে দিয়েছেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার সবচেয়ে মর্যাদাবান পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁরা কাবা ঘরের মুতাওয়াল্লী ছিলেন, জমজম কুপ থেকে হাজীদের পানি পান করানোর মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বও তাঁদের হাতেই ন্যস্ত ছিল। আর তাঁর স্ত্রী খাদিজা রদিয়াল্লহু আ’নহা মক্কার সবচেয়ে ধনী মহিলা ছিলেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও খুব মেধাবী, পরিশ্রমী এবং শক্তিশালী ছিলেন। মক্কার অলিতে গলিতে উদভ্রান্তে মত ঘোরাফেরা করা আর মানুষের এটা ওটা কথা শোনার কোন দরকার তাঁর ছিল না। কত ভাবে যে তাঁকে কষ্ট দেয়া হয়েছে তা ইসলাম সম্পর্কে যারা সামান্য জ্ঞান রাখেন তারা সকলেই জানেন। দিনের পর দিন ক্ষুধার কষ্ট, মানুষের কটু কথার কষ্ট, নিজ সঙ্গীদের অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হতে দেখার কষ্ট আর তায়েফের পথে পথে পাথরের আঘাত সহ্য করার কষ্ট; এ সব কিছুকে বরদাস্ত করেই রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের কাছে কাছে গিয়ে দাওয়াতের কাজ করেছেন। মাওলানা ইলিয়াস রহমাতুল্লহ আ’লাইহিও এটাই চাইতেন কোন স্বার্থে নয় অথবা নিজের পেশা বাদ দিয়ে পেশাদার দাঈ’ (যিনি দাওয়াত দেন) হিসেবেও নয় বরং এই উম্মতের সকলেই নিজ দায়িত্বে, নিজ খরচে শুধু মাত্র আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার কাছে থেকে পুরষ্কার নেয়ার আশাতেই এই কাজ করবেন।

৬. তা’লীম রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। তা’লীম মানে শিক্ষা দেয়া। যারা মুসলমান হয়ে আসতেন তাদের ঈমান, ঈমানী বিভিন্ন শাখা, ঈমানী আ’মাল শিক্ষা দিতেন রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাহ রদিয়াল্লহু আ’নহুম। যদিও মাদ্রাসা সমূহ আজ এই দায়িত্ব পালন করছে। তবুও সাধারণ মানুষ অধিকাংশই মাদ্রাসা থেকে দূরে। মাওলানা ইলিয়াস রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহি এজন্য জামাতের সাথে চলা কালীন এবং মহল্লায় থাকা কালীন সময়েও মসজিদে তা’লীম করার উপর খুব জোড় দিতেন। এবং অন্যদেরও এই মজলিসে শরীক করার জন্য মসজিদের আশেপাশে দাওয়াত দেয়ার উপরে গুরুত্ব দিতেন।

৭. মদীনাতে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত এবং অন্যান্য সকল কার্যক্রম ছিল মূলতঃ মসজিদ ভিত্তিক। বহুল প্রচলিত একটা প্রবাদ মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। যদিও ব্যঙ্গার্থে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু মুসলমানদের মসজিদমূখী করাই দাওয়াতের কাজের উদ্দেশ্য। কেননা মসজিদ সমূহ আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার ঘর, সমস্ত রহ’মত বরকত ও কল্যাণের কেন্দ্র। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমগন বেশি বেশি সময় মসজিদ অবস্থান করা পছন্দ করতেন এবং অন্যদেরও বেশি বেশি মসজিদে অবস্থান করার জন্য উৎসাহ দিতেন। সে যুগে নামায ছাড়াও বিভিন্ন কাজে যেমন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ, তেলাওয়াত, যিকর, ঈমানী আলোচনা, নতুন মুসলমাদের শেখানো ইত্যাদি সব কাজ মসজিদেই হত। তাছাড়া কাফের বন্দীদের মাসজিদে বেঁধে রাখা হত। তারা মাসজিদের আ’মাল দেখার সুযোগ পেতেন এবং এর প্রভাবে অনেকে মুসলমানও হয়ে যেতেন। দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের মধ্যেও আজ মাসজিদকে শুধু নামায জন্য নয় বরং বেশি বেশি সময় বিভিন্ন আ’মালের মাধ্যমে মসজিদের কাটানোর জন্য উৎসাহ দেয়া হয়। এবং মসজিদের আশেপাশে যারা আছেন তাদেরও দাওয়াতের মাধ্যমে মসজিদে এনে এইসব আ’মালের শরীক করানোর জন্য বলা হয়।

৮. বৈশ্বিক ও সার্বজনীনতা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের আরও একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি নিজে যেমন দাওয়াতের কাজ করতেন তেমনি অন্যদের দিয়েও করাতেন। তিনি নিজের পরিবার, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী, মক্কাবাসীদের যেমন পর্যায়ক্রমে দাওয়াত দিয়েছেন, তেমনি নিজেও দুরবর্তী লোকালয় তায়েফেও গিয়েছেন। আবার হজ্জ ও তাওয়াফের উদ্দেশ্যে মক্কার বাহির থেকে যারা আসতেন তাদের কাছেও দাওয়াত নিয়ে যেতেন। মক্কা জীবনেই মদীনাতে তিনি নিজের প্রতিনিধি হিসেবে মুসআ’ব ইবনে উ’মাইর রদিয়াল্লহু আ’নহুকে পাঠালেন। মদীনার জীবনে যেমন পার্শ্ববর্তী এলাকা বা গোত্রে অসংখ্য জামাত পাঠিয়েছেন তেমনি দূরবর্তী অঞ্চলেও পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু জামাত যেমন জিহাদের জন্য ছিল, তেমনি কিছু জামাত তা’লীম ও তাবলীগের জন্যও ছিল। এমনটি নয় যে, কোন এলাকায় দ্বীন পুরাপুরি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্য এলাকার কোন ফিকির করেন নি। দাওয়াতে তাবলীগের মেহনতেও আজ একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। ঘরের তা’লীম ও ঈমানী আলোচনার দ্বারা নিজের ঘরের ফিকির, মসজিদ ভিত্তিক আ’মালের দ্বারা নিজের মহল্লা ও প্রতিবেশী মহল্লার, তিন দিনের জামাতের দ্বারা নিজে শহরের, চিল্লার সফরের দ্বারা নিজের দেশে এবং বিদেশের জামাতের দ্বারা সারা দুনিয়ার ফিকির করার এক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।

রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের পদ্ধতি এখানে পুরাপুরি বর্ণনা করার সম্ভবও নয়, উদ্দেশ্যও নয়। এভাবে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন ও কর্ম পদ্ধতি গবেষণা করে ঐ কর্ম পদ্ধতি হুবহু অনুসরণ করারই তাবলীগের উদ্দেশ্য। তাই এটা কোন নতুন দল বা গ্রুপ বা ধারা নয়। বরং রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের পদ্ধতির হুবহু নকল। মাওলানা ইলিয়াস রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবাহদের সীরত বা জীবনী পড়ার উপরে খুব গুরুত্ব দিতেন, যেন মানষ তাঁর নুরানী দাওয়াতের ত্বরীকা জানতে পারে ও সেই অনুযায়ী আ’মাল করতে পারে। নিজেও প্রতিদিন এশার পরে সাধারণ মুসুল্লি যারা থাকতেন তাদের নিয়ে খুব আবেগের সাথে সাহাবাহ কেরামদের গল্প শুনাতেন। পরবর্তীতে তাঁর নির্দেশে হেকায়েত সাহাবাহ ও হায়াতুস সাহাবাহ নামক দুইটি কিতাব সংকলিত হয়। হেকায়েতে সাহাবাহ ফাযায়েলে আ’মালের অংশ। হায়াতুস সাহাবাহ এখান থেকে দেখে নেয়া যেতে পারে। ইলিয়াস রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহির যুগ থেকে আজও এই একই মূলনীতির উপরে দাওয়াতের কাজ চলছে। এব্যপারে উলামাকেরাম এটাই বিশ্বাস করেন, যত বেশি সাহাবাহ কেরামদের অনুসরণ হবে, তত বেশি তাঁদের মত ফলাফল পাওয়া যাবে। তাঁদের ফলাফলের মূল কারণ আল্লহ সুবহানহু ওয়া তায়া’লার সাহায্য। শুধু তাঁদের পদ্ধতির অনুসরণ করলেই চলবে না বরং তাঁদের হৃদয়ের আবেগের অনুরসণ করতে হবে। তাঁদের আবেগ ছিল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার সন্তুষ্টি তথা ইখলাস। মাওলানা ইলিয়াস রহ’মাতুল্লহ আ’লাইহি এটাই চাইতেন, যে লোকজন এই কাজকে সাহাবাদের কাজ হিসেবে জানুক। কেউ যেন এই কাজকে তাঁর কাজ মনে না করে। তিনি তো শুধু একজন দাঈ’ ছিলেন। এই কাজের প্রবর্তক বা আবিষ্কারক নন।

মূলতঃ একারণেই দাওয়াতে তাবলীগের ব্যপক সমালোচক থাকলেও যাঁরা এই কাজের প্রথম সারির দাঈ’ তাঁরা এই সব সমালোচনায় কখনও কানও দেন না আর কোন উত্তরও দেন না। কেননা যাঁরা সমালোচক তারা এই কাজের পদ্ধতি বুঝতে না পারার কারণেই সমালোচনা করেন। আর এটা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের ত্বরীকাও বটে। মাক্কার জীবনে তাঁর দাওয়াতের কাজের প্রচুর সমালোচক থাকলেও তিনি কারও কথা জবাব দিয়েছেন বা তর্ক করেছেন এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার উপরে ভরসা করে নিবিড় ভাবে দাওয়াত দিয়ে গেছেন।

যেহেতু দাওয়াতে তাবলীগ কোন সংগঠন নয় বরং একটা আ’মাল, তাই কাজ যাঁরা করেন তাদের সবাইকে একই রকম পাওয়া যাবে না। আসলে কোন আ’মালের ক্ষেত্রেই পাওয়া যাবে না। নামাযের কথাই উল্লেখ করা যাক। বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ নামায আদায় করে থাকেন। কেউ খুব সুন্দর ভাবে আদায় করে থাকেন আবার কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা শুধু নামাযেই আসেন। কোন কিছু ঠিক মত জানেনও না, করেনও না। তাই বলে কেউ নামাযকে দায়ী করেন না, আবার মসজিদের ইমাম সাহেবকেও দায়ী করেন না। বরং সবাই একথাই মনে করেন যার নামায তার কাছে। যে ভালো ভাবে নামায আদায় করেন তিনি ভালো বদলা পাবেন আর যিনি খারাপ ভাবে নামায আদায় করেন তিনিও তার বদলা পাবেন। আর এক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের বেশি কিছু করারও থাকে না। তিনি সর্বোচ্চ এতটুকু করতে পারেন যে মুসুল্লিদের সাথে নামাযের নিয়ম কানুন নিয়ে আলোচনা করবেন। ব্যক্তিগত ভাবে প্রত্যেকের নামায সংশোধন করার তাঁ পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। একই ভাবে দাওয়াতের কাজ যারা করেন, তাদের জন্যও নির্দেশনামূলক ও সংশোধনমূলক বিভিন্ন আলোচনার মজলিস প্রায়ই হয়ে থাকে। এরপরও যারা দাওয়াতের মেহনতে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের ত্বরীকার উপরে নিজেকে নিয়ে আসতে না পারেন, তাদের কারণে যেমন দাওয়াতের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না, তেমনি তেমনি এই কাজের যারা পুরানো বা অভিজ্ঞ তাদেরও দোষারোপ করা যায় না। অন্যান্য সকল আ’মালের মত দাওয়াতের কাজেও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। সবার জন্য উপযোগী করে কিছু কিতাবও নির্বাচন করা হয়েছে। যেমন ফাযায়েলে আ’মাল, ফাযায়েলে সাদাকাত, মুন্তাখাব হাদিস, হায়াতুস সাহাবাহ ইত্যাদি। এই কিতাব গুলো কোন আকীদাহ বা কোন নতুন কোন দল বা ত্বরীকা শেখানোর জন্য নির্বাচন করা হয় নি। বরং সাধারণ ভাবে মানুষদের বিভিন্ন আ’মালের দিকে আগ্রহী করা এবং দাওয়াতের কাজের নববী পদ্ধতি জানানোর জন্যই নির্বাচন করা হয়েছে। একই ভাবে শুধু এই কিতাবই পড়তে বলা হয় তাও নয়। মূলতঃ দাওয়াতের কাজের আগ্রহ বাড়ানো এর নববী তরীকার সাথে পরিচিত করানো এবং সাথে সাথে বিভিন্ন আ’মালের আগ্রহ সৃষ্টি করাই উদ্দেশ্য। এজন্য কোথাও কোথাও ভিন্ন কিতাবও পড়তে বলা হয়। যেমন আরবের লোকেরা তাদের তা’লীমে রিয়াদুস সালেহীন ও হায়াতুস সাহাবাহ পড়ে থাকেন। অন্যদিকে আমাদের দেশে ফাযায়েলে আ’মাল ও মুন্তাখাব হাদিস পড়ানো হয়। আসলে উদ্দেশ্য হাসিল হওয়াই মূখ্য, কোন কিতাব মূখ্য নয়। অনেকে আপত্তি করে থাকেন তাবলীগের মেহনতে শুধু ফাযায়েলের কিতাবই পড়তে বলা হয় অন্য কোন কিতাব পড়তে বলা হয় না। আসলে এই সব কিতাব পড়ার উদ্দেশ্য তো বলাই হলো। আর অন্যান্য কিতাব পড়তে নিষেধ করা হয় না। তবে এখানে এসব পড়ার সুযোগ নেই। বিভিন্ন ধরনের মানুষ এই কাজে সম্পৃক্ত। সবার রুচি ও সুযোগ এক নয়। আমাদের দেশের মানুষ যে সব কিতাব পড়তে অভ্যস্ত আরবের লোকেরা তা নাও পড়তে পারেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যে সব তাফসীর লেখা হয় তা অন্যান্য দেশের প্রেক্ষাপটের সাথে নাও মিলতে পারে। একই সাথে নির্দিষ্ট কোন কিতাব থেকে মাসায়াল বা তাফসীর পড়ানো হলে এটা দল বা সংগঠন বা গোষ্ঠীতে রূপ নিবে। এই কাজের অন্যতম একটা উদ্দেশ্য এটাও ছিল বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত উম্মতকে ঈমানের ভিত্তিতে এক প্লাটফর্মে দাড় করানো। এজন্যই ফাযায়েলের কিতাব পড়ানোর দ্বারা আগ্রহ সৃষ্টি করার পর সবাইকে এই কথা বার বার বলা হয় যে, নিজ নিজ পছন্দ ও সুযোগ মত হক্কানী উলামা কেরাম থেকে আ’মালের মাসায়ালা শেখা এবং তাদের পরামর্শ মত বিভিন্ন বিষয়ে কিতাবাদি পড়া।

অনেক বড় হয়ে গেল। আসলে দাওয়াতের কাজ সংক্ষিপ্ত আলোচনার দ্বারা বুঝানো সম্ভব নয়। অনেক কিছু এরপরও বাদ পড়ে গেছে। কেউ আরও জানতে চাইলে এই লেখায় যেসব কিতাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সে সব পড়ে নেয়ার অনুরোধ থাকল। আর কোনও প্রশ্ন থাকলেও জিজ্ঞেস করতে পারেন, সাধ্যমত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব ইনশা আল্লহ। আর এই লেখায় কেউ কোন ভুল খুঁজে পেলে সংশোধনের নিয়তে জানাবেন।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৮৬৭ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৭ টি মন্তব্য

  1. তাবলীগ একটি আমলের নাম যেটাকে ‘দাওয়াত’ ও বলা যায় । ভালো কথা । এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই এবং জামাআত হিসেবে এটা সঠিক এটাতেও আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো কোনো তবলীগ ভাই যখন এই তবলীগ করাকেই পরিপূর্ন মনে করে তখন সেটা আপত্তিকর। আলেমদের সাথে পরামর্শ না করে নিজেরাই সমস্ত সমাধান দিতে থাকে তখনই সমস্যা তৈরী হয়।

    Anonymous

    @হাফিজ, বুঝতে পারলাম না ঠিক। যদি কেউ জামাত আকারে করে তাতেই আপত্তি নেই। একথা পুরাই ঠিক। কিন্তু জামাতগুলো যেন বিভক্তি বা প্রতিযোগীতায় রূপ না নেয়। বরং সহযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে আ’মাল হিসেবে নেয়া এবং এই আমালের মধ্যে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতকে প্রতিষ্ঠিত করলে পারলে সবচেয়ে বেশী উপকার পাওয়া যাবে ইনশা আল্লহ। এজন্য যারা তাবলীগ করছেন তাদের তাবলীগী ভাই হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং দ্বীনী ভাই হিসেবে দেখা উচিত। যারা নামায পড়েন তাদের নামাযী ভাই হিসেবে কেউ বলেন না। যদি কেউ নামাযে ভুল করেন এবং এই ভুলের উপরেই গোঁ ধরে থাকেন তাহলেও কেউ বলবেন না যে নামাযী ভাইয়েরা ভুলের উপরে গোঁ ধরে বসে থাকেন। ব্যক্তিগত ভাবে ঐ নামাযীর উপরেই মানুষ আফসোস করেন এবং পারত পক্ষে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করেন। তাবলীগী ভাইও যদি কাউকে ভুলের উপরে দেখেন তাহলে নিজে যেচে শুভাকাঙ্খী হয়ে সংশোধনের চেষ্টা করা জরুরী। সংশোধন না হলে দোয়া করা জরুরী। সমালোচনার পাত্র বানানো ঠিক নয়। কেননা এতে বিভক্তি বাড়ে। আলেম এবং অভিজ্ঞদের সাথে জুড়িয়ে দেয়ার জন্যই তাবলীগ। এ জন্যই কোন মাসায়েল বা কোন তাফসীরের কিতাব এখানে রেকোমেন্ড করা হয় না। শুধু ফাযায়েল শুনিয়ে হক্কানী আলেমদের পরামর্শ নেয়ার জন্য বারবার বলা হয়। যারা ছয় নম্বর শুনেছেন তারা জানেন। আসলে সামান্য কিছু লোকতো অল্প কথাতেই বুঝে। কিছু লোক কিছু প্রচেষ্টার পরে বুঝে। বেশির ভাগ লোক অনেক কষ্ট কারার পরেই বুঝে। এই নিয়ম রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকেই চলে আসছে। এবং এটা সব জায়গাতেই আছে। এজন্য কাউকে আপত্তিকর কিছু করতে দেখলে দরদ ও দোয়ার সাথে সংশোধনের চেষ্টা জরুরী।

    হাফিজ

    @Anonymous, আমার কাছে তবলীগকে প্রাইমারী স্কুলের মতো মনে হয়েছে। একটি দেশে প্রাইমারী স্কুলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী থাকে । তবে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়, প্রাইমারী স্কুল অতিক্রম করার পর, এখানে তবলীগের ব্যাপারটা ঠিক সেরকম। শুধু এখানে স্হীর হয়ে থাকলে ডেভেলপমেন্ট খুবই কম হয়। যেটুকু সিলেবাস আছে সেটাও জরূরী, তবে সেটাই শেষ নয়। যেমন ধরুন, আপনি জানতে চান হজ্ব, ফারায়েজ, তাসাওফ, মাসালা-মাসায়েল ইত্যাদি। এগুলোর জন্য অবশ্যই অন্য কারো কাছে কিংবার অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শরনাপন্ন হতে হবে।

    Anonymous

    @হাফিজ,আসলে এমন ধারণা শুধু আপনার নয়। অনেকেই। অনেকেই যারা তাবলীগ করেন তারাও তাবলীগ এক চলতি ফিরতি মাদ্রাসা এমন ধারণা করে থাকেন। তবে দাওয়াত ও তাবলীগ স্কুল কলেজ মাদ্রাসা কিছুই নয় বরং আ’মাল। যেমন নামায এক আ’মাল। তাবলীগের এই আ’মাল নবীরা করতেন। নবীদের পাঠানোই হত দাওয়াতের কাজের জন্য। নবীরা তাঁদের নবুওয়াতি জীবনের শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত দাওয়াতের কাজ করেছেন। নবীরা যে শুধু দাওয়াত দিয়েছেন তাই নয়। অন্যান্য আ’মালও করেছেন। তবে দাওয়াতের আ’মাল সব সময়েই করেছেন। বিভিন্ন আ’মালের জন্য নির্ধারিত সময় ও সীমা থাকলেও দাওয়াতের জন্য তা নেই। অতিরিক্ত নামায পড়ার কারণে আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা তাঁর রসুলকে ধমক দিলেও দাওয়াতের ক্ষেত্রে বলেছেন আপনি মানুষের ময়দানে সাঁতার কাটেন। অর্থ্যাৎ নিরলস করতে থাকেন। পরবর্তী যুগে সাহাবারাও করেছেন। আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা নিজেও মানুষকে দ্বীন ও জান্নাতের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। এখন সকল নবীদের কাজ যা দ্বারা দ্বীন দুনিয়াতে এসেছে, একে আপনি প্রাইমারী স্কুল বলেন বা পি এইচ ডি বলেন এটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যপার।

    দাওয়াত ও তাবলীগ এর কিছুই নয় বরং আ’মাল। যেমন নামায এক আ’মাল। নামাযের জন্য কিছু ফরয, ওয়াজিব সুন্নত মুস্তাহাব আছে। এমনটা দাওয়াতের জন্যও আছে। কেউ যদি নামাযের ফরয ওয়াজিব ছেড়ে দেয় নামায হবে না। সুন্নত মুস্তাহাব ছেড়ে দিলে নামায হয়তঃ হবে কিন্তু অঙ্গহানী হবে। উপকার বা সওয়াব কম হবে। যে নামাযে যত বেশী সুন্নত মুস্তাহাব ও আদাবের প্রতি লক্ষ রাখা হবে সেই নামাযের উপকার তত বেশী হবে। আর যে নামায হুবহু রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাযের সাথে মিলে যাবে সেই নামাযের উপকার সব চেয়ে বেশী হবে। দাওয়াতের ক্ষত্রেও তাই। কিছু ওয়াজিব বা আবশ্যিক বিষয় আছে যেমন শুধু মাত্র হকের দাওয়াত দেয়া কোন বিদআতের দাওয়াত না দেয়া, কাউকে কষ্ট বা আঘাত না দেয়া, দাওয়াত দিতে গিয়ে আল্লহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লার কোন হুকুম লঙ্ঘন না করা বা গুনাহ না করা, মুসলমানের ইজ্জাতের হানী না করা, মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করা ইত্যাদি। আরও বেশ কিছু ওয়াজিব আছে যা উলামাদের সাথে পরামর্শ করে জেনে নেয়া যেতে পারে। এমনি ভাবে কিছু সুন্নত মুস্তাহাব ও আদাবও আছে। যে দাওয়াত বা যার দাওয়াত রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের যত নিকটবর্তী হবে, ঐ দাওয়াতে তত বেশী উপকৃত হওয়া যাবে। আর যে দাওয়াত রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুবহু নকল হবে ঐ দাওয়াতের উপকার সবচেয়ে বেশী হবে। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবাদের গুনাবলী ও দাওয়াতের পদ্ধতি জানার জন্যই কিছু কিতাবের কথা বলা হয়। এটা কোন সিলেবাস নয়। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের একটা বড় বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে তিনি প্রচুর ফাযায়েল বর্ণনা করতেন। জান্নাতের ওয়াদার কথা খুব শুনাতেন। যেমন কুরআনেও আছে। কুরআনের বিভিন্ন হুকুম আহকামের জন্য যত আয়াত আছে তার চেয়ে জান্নাতে জাহান্নামের বর্ণনাই বেশী আছে। এমন কি একই বর্ণনা বারবার এসেছে। ফাযায়েলে আ’মাল বা রিয়াদুস সলেহীন তথা ফাযয়েলের কিতাবগুলো মুলতঃ এই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার জন্যই।

    মুসলমানদের জন্য কোন সিলেবাসের সুযোগ নেই। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সিলেবাস দিয়ে গেছেন সেটাই চুড়ান্ত। তবে সময় ও সুযোগের অভাবে অনেক সময় কেউ কেউ কিছু সিলেবাস দিয়ে থাকেন। তবে এটাকে কেউ চুড়ান্ত বলেন না। যেমন বিভিন্ন মাদ্রাসায় যে সকল কিতাব পড়ানো হয় তা ইসলামের জ্ঞানের তুলনায় খুবই সামান্য। শুধু মাত্র দাওরা পাশ করেছেন এমন আলেমদের মধ্যেও কিছু পড়ুয়া ছাত্র বাদে অনেকেই দেখা যায় সঠিক ভাবে অনেক রেফারেন্স ঠিক মত জানেন না। কেননা উনাদের পর্যাপ্ত কিতাব পড়ানোর সময়ই থাকে না। এমনও পাবেন কিছু আলেম যারা কোন কিতাবে রেফারেন্স পাবো তাও বলতে পারেন না। আমি সে প্রসঙ্গে যাব না।

    দাওয়াত একটি আমল হিসেবে নেয়া জরুরী। সবার জন্য এই আমালে অংশ গ্রহন করারও জরুরী। অনেক দাওয়াতের কর্মীকে দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হন। এটা আসলে ঐ কর্মীর নিজের সমস্যা। আগের মন্তব্যে বলেছিলাম, কিছু মানুষ আছে যাদের বুঝাতে সময় লাগে। এটা রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে শুরু করে এখনও আছে, পরেও থাকবে। সব জায়গাতেই থাকবে। দাওয়াতে তাবলীগের এখন অনেকেই অংশগ্রহন করছেন। এজন্য এমন কর্মীদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশী চোখে পড়ে। এজন্য বেশী প্রাইমারী স্কুল মনে হয় :) আসলে এদের দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়ে সবারই এই কাজে অংশগ্রহন করা দরকার।

    হাফিজ

    @Anonymous, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আপনাকে আমি আগের থেকেই চিনি এবং আপনি এমন একজন যার সাথে আলোচনা করা মানেই কিছু না কিছু উপকৃত হওয়া।

    আমি কখনও কাউকে সম্পূর্ণ বাতিল করিনা বা কাউকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি না। বা বলতে পারেন কাউকে Under Estimate
    বা Over Estimate করি না, চেষ্টা করি Proper Estimate করতে।

    ‘দাওয়াত’ কে আমি প্রাইমারী স্কুলের মতো মনে করিনা। দাওয়াত বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে করে। মাদ্রাসা, ওয়াজ নসীহত, বিভিন্ন ইসলামিক ওরগানাইজেশন এবং এখনকার তবলীগ জামাআত। এখনকার প্রচলিত যে তবলীগ জামাআত তাদেরকে আমি মনে করি ‘প্রাইমারী স্টেজ’ বা প্রাইমারী স্কুলের মতো। কারণটা হোলো একজন তবলীগ দেবার জন্য মিনিমাম এই গুনাবলী গুলো দরকার (বাধ্যতামুলক না হলেও থাকা উচিত)। যেমন
    ১) আরবী জানা
    ২) কোরান তেলাওয়াত শুদ্ধভাবে জানা
    ৩) প্রয়োজনীয় মাসআলা মাসায়েল জানা
    ৪) বক্তব্য রাখার মতো যোগ্যতা
    ৫) যেটা বলা অন্ততপক্ষে সেটা যেনো ভুল না হয়, ইত্যাদি

    উপরের গুনাবলী গুলো সবার থাকতে হবে এমন মানে নেই, তবে যার আছে সে পরিপূর্ণ ভাবে দাওয়াতের কাজের উপযোগী। এগুলো বেশীরভাগ তবলীগের ভাই দের মধ্যে অনুপস্হিত। বেশীরভাগ বলছি, সবাইকে বলছি না।

    আর তবলীগ করা নবীদের জন্য ছিল ফরজে আইন, আমাদের জন্য ফরজে কেফায়া। সুতরাং দুটো মিলবে না। এমন অনেক আমল আছে যেটা সমস্ত নবীরা করে গেছেন, যেমন দাড়ি রাখা, নামাজ, দাওয়াত ইত্যাদি।

    প্রচলিত তবলীগ জামাআতের প্রতি আমার বিদ্বেষ নেই, তবে আমি যথার্থ মুল্যায়ন করতে পছন্দ করি।

    taalibul_ilm2011

    @হাফিজ, সুন্দর বলেছেন।

    তবে আমি এটা যোগ করবো যে, তাবলীগে ঈমানের দাওয়াতটা বড় বেশী সরল – এতটা সরল যে এর মৌলিক কিছু ব্যাপার প্রায় অনুপস্থিত। যেমনঃ তাগুতকে অস্বীকার করা যা ঈমানের একটা রুকন। এযুগের তাগুতগুলোকে চিহ্নিত করা – সাধারণ মানুষের এই যোগ্যতা নেই যে, নিজে নিজে তাগুতকে চিনে নিবে।

    অথচ নবী-রাসুলগণ সবাই সমকালীন তাগুতকে খুব সরাসরি চিহ্নিত করেছেন, এর বিরধিতা করেছেন।

    তাবলীগের সাথে জড়িত আলেম ভাইরা এই ব্যাপারটা একটু চিন্তা করতে পারেন।