হাদীস নিয়ে মিথ্যাচার……….. (৩)
লিখেছেন: ' আবদুস সবুর' @ রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১১ (১১:২১ পূর্বাহ্ণ)
আমার এক ভাই “সুরা ফাতিহা বলার পর আমীন বলা” সংক্রান্ত একটি পোষ্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন-
জেহরী সালাতে উচ্চঃস্বরে “আমীন”না বলা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবাদের ‘আমলের বিপরীত, বরং ইমাম ও মুক্তাদির সকলেরই শ্বরবে “আমীন” বলতে হবে। কেননা রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জেহরী সালাতে উচ্চঃস্বরে “আমীন” বলতেন এবং ইমাম যখন “আমীন” বলে তখন মুক্তাদীকে “আমীন” বলার নির্দেশ দিতেন যেমন হাদীসে বর্ণিত হযেছেঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইমাম যখন “আমীন” বলে তখন তোমরাও “আমীন” বল। কেননা যার “আমীন” বলা ফেরেশ্তাদের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ‘আতা (রাযিঃ) বলেছেন “আমীন” হলো দু’আ। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাযিঃ) এবং তার পিছনে মুক্তাদিরা “আমীন” বলতেন এমনকি মাসজিদে গুন গুন শব্দ শুনাযেত।
(বুখারী ১ম খণ্ড, আল-মাদানী প্রঃ হাঃ ৭৮০, পৃঃ ২৯৬, আঃ প্রঃ হাঃ ৭৩৬, ইঃ ফাঃ হাঃ ৭৪৪, ১ম খণ্ড তাঃ পাঃ হাঃ ৭৮০, পৃঃ ৩৭৮)
ওয়ায়িল বিন হুজুর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে “গায়রিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালাযযাল্লীন” পড়তে শুনেছি। আতঃপর তিনি নিজের স্বরকে উচ্চ করে “আমীন” বলেছেন।
(অত-তিরমিযী- ৫৭-৫৮ পৃঃ ১ম খন্ড ইঃ ফাঃ হাঃ ২৪৮;
বুখারী- ১ম খন্ড ১০৭-১০৮ পৃঃ, হাঃ ৭৮০-৭৮২ পৃঃ,, ১ম খন্ড আযীযুল হক হাঃ ৪৫৩,, ১ম খন্ড, আঃ প্রঃ হাঃ ৭৩৬-৭৩৮,, ১ম খন্ড, ইঃ ফাঃ অনুচ্ছেদসহ হাঃ ৭৪৪-৭৪৭;
মুসলিম- ১৭৬ পৃঃ, ২য় খন্ড ইঃ ফাঃ হাঃ ৭৯৭-৮০৪;
আবু দাউদ – ১৪৩ পৃঃ, ২য খন্ড ইঃ ফাঃ হাঃ ৯৩২;
নাসাঈ- ১৪০ পৃঃ;
ইবনু মাজাহ্- ৬২ পৃঃ;
মিশকাত- ১ম খন্ড ৭৯-৮০ পৃঃ, ২য খন্ড নূর মুহাম্মদ ‘আযমী ও মাদ্রাসা পাঠ্য হাঃ ৭৬৮-৭৮৭;
মুয়াত্তা মালিক- ১০৮ পৃঃ;
বুলগুল মারম- ৮৫ পৃঃ;
কিমিয়ায়ে সায়াদাত- ১ম খন্ড, ১৯০ পৃঃ;
ইসলামিয়াত বি-এ হাদীস পর্ব ১৫৭ পৃঃ)
লিঙ্ক- http://www.sonarbangladesh.com/blog/abdur_rouf66/46845
এর উত্তর হল-
(এখানে “প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ‘আতা (রাযিঃ) বলেছেন “আমীন” হলো দু’আ।” এই জবাবটি শেষে প্রদান করেছি। আশা করি ব্যপারটি বুঝবেন।)
জবাব- ১ ঃ আপনার দেয়া প্র্র্রথম হাদীসটি কেবলমাত্র আমীন বলা সম্পর্কে। যার ব্যাপারে আমরা সবাই একমত যে, সুরা ফাতিহা শেষে আমীন বলা বহু ফযিলতপূর্ণ। কিন্তু এই হাদীসটিতে নিঃশব্দে বা স্বঃশব্দে কোনটিই স্পষ্টরূপে উল্লেখ নেই।
জবাব- ২ ঃইমাম বুখারী (র) বর্ণিত যা তিনি তার সহীহ বুখারীতে উল্লেখ করেননি। ঝুলন্ত হাদীস রূপে বর্ণনা করেছেন আতা হতে। আর আবদুর রাযযাক যুক্তরূপে বর্ণনা করেছেন ইবন জুবায়ের হতে। তিনি আতা হতে। তিনি বলেন আমি তাকে (আতাকে) জিজ্ঞাসা করলাম ইবন জুবায়ের (রা) কি উম্মুল কুরআনের পর আমীন বলতেন। তিনি বললেন হ্যা আর তার পেছনে যারা থাকত তারাও আমীন বলতো, এমনকি গুঞ্জরন হতো।
কিন্তু এখানে উল্লেখ্য সাহাবাদের মধ্যে ওমর (রা), আলী (রা) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) নিঃশব্দে আমীন বলতেন। আর অনুকরনীয় হিসাবে (যেহেতু তারা অধিক পরিমানে রাসূল (স) এর কাছে ছিলেন এবং তারা ফকীহ ছিলেন যার ফলে সঠিক অনুধাবনে সক্ষম ছিলেন) অধিক উপযুক্ত। তাছাড়া তাবারীর বক্তব্য যে, অধিকাংশ সাহাবী ও তাব্ঈ নিঃশব্দে আমীন বলতেন।
জবাব- ৩ ঃ হযরত ওয়াইল ইবন হুজর (রা) এর হাদীস “আমি শুনেছি নবী করীম (স) গাইরিল মাগযুবি আলাইহিম ওয়ালাদদাললীন বলে আমীন বলেছেন এবং আওয়াজকে টেনেছেন। আরেক বর্ণনায় আছে সজোরে আমীন বলেছেন। আরেক বর্ণনায় আছে আমীন বলার সময় তার আওয়াজ উচু হত।” হাদীসের শব্দগুলো সুফিয়ান ছাওরীর বর্ণনা।
এদিকে তারই সঙ্গী ইমাম শোবা এর রিওয়াতকে নিম্নোক্ত শব্দে বর্ণনা করেছেন, “নবী করীম (স) যখন গাইরিল মাগযুবি আলাইহিম ওয়ালদদললীন বলতেন তখন আমীন বলতেন। আমীন বলার সময় তার আওয়াজ নিচু হত।” (মুসনাদে আহমদ খ৪, পৃ- ৩১৬। তায়ালিসী, আবু ইয়ালা মওসিলী, তাবরানী ও হাকেম নাসবুর রায়াহ খ১ পৃ- ৩৬৯)
সুফিয়ান সাওরী ও শোবার মাঝে হাদীসের সনদ নিয়েও মতপার্থক্য বিরাজমান। এ কারনে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে তাদের রিওয়ায়াত ঠাই পায়নি। এবং শোবার রিওয়ায়াতের ব্যাপারে যেসব আপত্তি তোলা হয়েছে তার যথেষ্ট জবাব প্রদান করা হয়েছে।
জবাবটি দেখুন-
আলকামা ইবন ওয়াইল হতে, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) এর সঙ্গে নামায পড়তেন। যখন তিনি গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদদললিন পর্যন্ত পৌছলেন তখন আমীন বললেন এবং উচ্চারনে আওয়াজ নিঃশব্দ রাখলেন। (ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ তায়ালিসী ও আবু ইয়ালা আলমুসিলী তাদের নিজ নিজ মুসনাদে তা সংকলন করেছেন। আর দারা কুতনী তার সুনানে এবং ইমাম হাকিম তার মুসতাদরাকে তা সংকলন করেছেন। হাকিম বলেন এটি সহীহ সনদের হাদীস। কিন্তু বুখারী ও মুসলিম তা সংকলন করেননি। (যায়লাঈ খঃ১, পৃ- ১৯৪)
জবাব- ৪ ঃ “প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ‘আতা (রাযিঃ) বলেছেন “আমীন” হলো দু’আ।”
এটি আমিন নিঃশব্দে বলার দলীল। স্বঃশব্দে বলার দলীল নয়। কারন
আল্লাহ তাআলা বলেন “তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো সকাতরে ও নীরবে।”
এবং সহীহ বুখারীতে উল্লেখ আছে, “হে লোকেরা তোমরা নম্রতা অবলম্বন কর। তোমরা কোন বধির কিংবা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছো না। কেননা তিনি তোমাদের সাথে আছেন্ তিনি সর্বশ্রোতা ও নিকটবর্তী, বড়ই বরকতময় তার নাম, অতি উচ্চে তার মর্যাদা।”
আতা (র) বলেন আমীন হচ্ছে দুআ। আমীন শব্দের অর্থ কবুল কর। এবং আবু শায়খ হযরত আনাস (রা) হতে মারফুরূপে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, “গোপনের একটি দুআ প্রকাশ্যের সত্তরটি দুয়ার সমান।” (আল আযীযী খন্ড-২)
ইনশাআল্লাহ আমীন নিঃশব্দে পড়ার আরো দলীল পরবর্তীতে উল্লেখ করা হবে।
ইনশাআল্লাহ। হাদীস নিয়ে মিথ্যাচার……….. (৩) -এর বাকী অংশ পরবর্তীতে দেয়া হবে।
আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।
হাদীস নিয়ে মিথ্যাচার……….. (১) – http://www.peaceinislam.com/asksumon007/10934/
হাদীস নিয়ে মিথ্যাচার……….. (২) – http://www.peaceinislam.com/asksumon007/10946/
শুকরিয়া। চালিয়ে জান।
ধন্যবাদ।জনাব আমি জানতে চাইছি যে সহীহ বুখারীতে ও সহীহ মুসলিমে যে বর্ননা রয়েছে তা সঠিক কি না ? যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে এক কথা।আর যদি উল্লেখিত সাহাবী এ পদ্ধতি মেনে চলতেন তবে আমি কি তা আমল করতে পারবোনা ? আমি যতটুকু জানি যে সহীহ বুখারীর ও সহীহ মুসলিম এর সবকটি হাদীসই অধিকাংশ আলেমগন সহীহ এবং গ্রহনযোগ্য বলেছেন।আর ও একটি প্রশ্ন আমরা বিতর নামাজে দোয়া হিসেবে যা পড়ি তাতো উচ্চস্বরেই পড়ি।সূরা ফাতিহা কি সর্বোকৃষ্ট দোয়া নয় ?