জুমআর খুতবাকালে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া সম্পর্কে একটি বিভ্রান্তি ও তার জবাব
লিখেছেন: ' আবদুস সবুর' @ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ৫, ২০১২ (১২:৫৩ অপরাহ্ণ)
প্রশ্ন :
কিছুদিন আগে আমাকে মাযহাবে বিপক্ষে একটি প্রশ্ন করল এক ভাই। আমার প্রশ্নের জবাবটি খুব শিগ্রই প্রয়োজন।
প্রশ্নটি হল
আমি একটি দলীল দিলাম দেখুন কিভাবে সহীহ হাদীসকে লাল বাতি জ্বালিয়ে দুরে ঠেলে দেয়া হয়েছে :
হাদীস:১- আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন ,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ,যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে ,তখন সে যেন দু’রাকাত সালাত আদায় করা ব্যতীত না বসে ।
( বুখারী হা/৪৪৪ , ১১৬৭ ; মুসলিম হা/ ৭১৪ ; তিরমিযী হা/ ৩১৬ ; নাসাঈ হা/ ৭৩০ ; আবু দাউদ হা/ ৪৬৭ ; ইবনু মাজাহ হা/ ১১২৩ ; আহমাদ হা/ ২২০১৭ , ২২০৭২ , ২২০৮৮ , ২২১৪৬ ;দারেমী হা/ ১৩৯৩ ; রিয়াদুস সালেহীন হা/ ১১৫১)
হাদীস:২: জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন ,নবী করীম (সাঃ) এর খুৎবা দানকালে সেখানে এক ব্যক্তি আগমন করেন । তিনি তাকে বলেন , হে অমুক ! তুমি কি ( তাহিয়াতুল মাসজিদ ) সালাত পড়েছ ? ঐ ব্যক্তি বলেন , না । নবী ( সাঃ ) বলেন , তুমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর । অন্য হাদীসে বলা হয়েছে তুমি সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই রাকাআত ( তাহিয়াতুল মাসজিদ ) সালাত আদায় কর ।
( বুখারী হা/৮৮৩ , ৮৮৪ ; মুসলিম হা/১৮৯৫ , ১৮৯৬ , ১৮৯৭ , ১৮৯৮ , ১৮৯৯ , ১৯০০ ; তিরমিযী ; ইবনে মাজাহ ; নাসাঈ হা/১৪০৩ ; আবু দাউদ হা/১১১৫ , ১১১৬ , ১১১৭)
প্রথম হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাহিয়াতুল মাসজিদ সালাতের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন এবং এই সালাত না আদায় করে বসতে নিষেধ করেছেন ।
দ্বিতীয় হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে খুৎবা চলাকালীন অবস্থায় আগত ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে দুই রাকাত তাহিয়াতুল মাসজিদ সালাত আদায় করিয়ে এই সালাতের গুরুত্বের প্রমাণ দিয়েছেন ।
আর আমাদের মসজিদ গুলিতে লাল বাতি জ্বালিয়ে নিষেধ করা হয় যে লাল বাতি জ্বলা কালীন কোন নামায পড়া নিষেধ। কারণ আপনাদের মাযহাবে তাহিয়াতুল মসজিদ নফল । আার খুৎবা ওয়াজিব । যে ওয়াজিব খুৎবা থামিয়ে তাহিয়াতুল মসজিদ নামায পড়ানো হল সেটা নফল হয় কি করে ?
একটু ভেবে দেখুন অন্ধ অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা সহীহ হাদীসের সাথে যে আচরণ করছি তার পরে নবী (সাঃ) এর সামনে দাঁড়াতে পারবো তো ?
জবাব :
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথমেই একটি কথা জেনে রাখা দরকার-সেটা হল-তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া মুস্তাহাব। এটাকে ওয়াজিব বা ফরজ কোন মুহাদ্দিস, কোন মুফাসসির, কোন মুহাক্কিক আলেম বলেন নি। সুতরাং লোকটির দাবি যে, আমরা এটিকে নফল বলে তাহিয়্যাতুল মসজিদকে ছেড়ে দেই একথাটি হাদীস সম্পর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার পরিচায়ক।
হাদীস অনুসরণের নামে হাদীস অস্বিকার করার এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত
عن ابن عمر قال : سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول إذا دخل أحدكم المسجد والإمام يخطب على المنبر فلا صلاة ولا كلام حتى يفرغ الإمام
অনুবাদ-আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে আর ইমাম খুতবা দিচ্ছে মিম্বরের উপর, তাহলে ইমাম ফারিগ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন নামায নেই কোন কথাও নেই। {মাযমাউজ জাওয়ায়েদ, ২/১৮৪, হাদীস নং-২০১৪} ইবনে হিব্বান রহঃ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
তবে হাদীসটি যদিও আইউব বিন নুহাইক এর কারণে দুর্বল। কিন্তু অন্যান্য কারণে এটা শক্তিশালী হয়ে গেছে। সেটা হল ইমাম খুতবাদানকালে নামায পড়া নিষিদ্ধ এটা ইবনে ওমর রাঃ এর মতামত। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/১২৪}
সেই সাথে হযরত ওমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ, হযরত আলী রাঃ সহ অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও পূর্ববর্তীদের মতামত এটাই যে, ইমামের খুতবাদানকালে নামায পড়া নিষিদ্ধ। {শরহে মুসলিম লিন নাবাবী রহঃ-১/২৮৭}
عن ثعلبة بن أبى مالك القرظي : أن جلوس الإمام على المنبر يقطع الصلاة وكلامه يقطع الكلام (شرح معانى الآثار، كتاب الصلاة، باب الرجل يدخل المسجد يوم الجمعة والإمام يخطب هل ينبغي له أن يركع أم لا، رقم الحديث-2014)
অনুবাদ-হযরত সা’লাবা বিন আবি মালিক আল কুরাজী রাঃ বলেন-“নিশ্চয় ইমামের মিম্বরে বসা নামায বন্ধ করে দেয়, আর তার কথা বলা কথাকে বন্ধ করে দেয়”। {তাহাবী শরীফ, ১/৩৭০, হাদীস নং-২০১৪} এই হাদীসটি সহীহ।
আল্লাহ তাআলা যদি মানুষ থেকে আকল ছিনিয়ে নেন তাহলে কি অবস্থায় দাঁড়ায়, এই উদ্ভট প্রশ্নটিই এর প্রোজ্জ্বল প্রমাণ। তাহিয়্যাতুল মসজিদের হাদীস মেনে লোকটি খুতবাদানকালে নামায পড়া ও কথা বলা নিষিদ্ধ সম্বলিত বর্ণিত সহীহ হাদীসকে অস্বিকার করছেন। এটা কি হাদীসের অনুসরন? না হাদীস অস্বিকার করা?
আমরা তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায পড়া মুস্তাহাব বলি। সুতরাং তাহিয়্যাতুল মসজিদের বিধান সম্বলিত হাদীসকে অস্বিকার করি না। মানি।
কিন্তু কথিত আহলে হাদীসের লোকেরা তাহিয়্যাতুল মসজিদের বিধান সম্বলিত হাদীসটিই কেবল মানে, খুতবাদানকালে নামায না পড়ার বিধান সম্বলিত হাদীসটি অস্বিকার করে। তাহলে তারা একটি সহীহ হাদীস মানে, আর একটিকে অস্বিকার করে চরম পর্যায়ের ঔদ্ধত্বতার সাথে। রাসূলের বাণীর সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ের বেয়াদবী করে।
যারা দু’টি সহীহ হাদীসকেই মানে তারা সঠিক অর্থে হাদীসের অনুসারী না, যারা একটি সহীহ হাদীসকে অস্বিকার করে তারা হাদীসের প্রকৃত অনুসারী?
২নং হাদীস এর জবাব
১ নং জবাব
হাদীসটির হুকুম রহিত হয়ে গেছে। হুকুম রহিত হয়েছে আমাদের পূর্ববর্তী বর্ণিত হাদীস দ্বারা। তাছাড়া আরো অনেক হাদীস রয়েছে এর প্রমাণ স্বরূপ। যেমন-
أن أبا هريرة أخبره أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال إذا قلت لصاحبك يوم الجمعة أنصت والإمام يخطب فقد لغوت (صحيح البخارى-كتاب الجمعة، باب الإنصات يوم الجمعة والإمام يخطب، رقم الحديث-892)
অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন তুমি তোমার পাশের জনকে জুমআর দিন বল-চুপ থাক এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব খুতবা দিচ্ছে, তাহলে তুমি অযথা কাজ করলে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৮৯২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২০০৫}
লক্ষ্য করুন-যেখানে কাউকে চুপ করতে বলা নিষিদ্ধ খুতবা শুনতে ডিষ্টার্ব হবে বলে, সেখানে মসজিদের মাঝে সবার সামনে নামায পড়তে শুরু করলে কি খুতবা শুনতে ব্যাঘাত ঘটবে না? কারণ নামায পড়তে শুরু করলে নামাযের জায়গা স্থীর করতে হবে, কখনো সখনো সামনে থেকে কাউকে সরাতে হবে, সামনে দিয়ে যেন কেউ না যায় ইত্যাদী রুখার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সকল কাজ কি করে বৈধ থাকে?
সুতরাং বিষয় হল-প্রথম প্রথম খুতবাদানকালেও নামায পড়া জায়েজ ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে গেছে। নতুবা বলা হবে-এর হুকুমটি বাকি আছে ইমাম সাহেব খুতবা শুরু করার আগ পর্যন্ত। খুতবা শুরু করে দিলে তা নিষিদ্ধ।
২ নং জবাব
শুধু হাদীসের বাহ্যিক শব্দের অর্থের দিকে খেয়াল করে সিদ্ধান্ত নেয়া বোকামী। হুকুম দিতে হবে অন্তর্নিহিত অর্থের দিকে খেয়াল করে। একটি হাদীসের হুকুম দেখতে হবে এ সম্পর্কীয় সকল হাদীসের উপর নজর বুলিয়ে। যেন একটি হাদীস মানতে গিয়ে অন্য হাদীসকে অস্বিকার করার ধৃষ্টতা দেখাতে না হয়।
প্রশ্নে উল্লেখিত দ্বিতীয় হাদীসটি হযরত সুলাইক গাতফানী রাঃ এর ঘটনা সম্বলিত একটি হাদীস। যা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে ভিন্ন শব্দে এসেছে। আমরা প্রথমে একাধিক কিতাবের বর্ণনার দিকে একটু খেয়াল করি-
جابر بن عبد الله رضي الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم وهو يخطب ( إذا جاء أحدكم والإمام يخطب أو قد خرج فليصل ركعتين (صحيح البخارى-كتاب ابواب التطوع، باب ما جاء في التطوع مثنى مثنى، رقعم الحديث-1113)
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-রাসূল সাঃ খুতবাদানকালে বলেছেন-যখন তোমাদের কেউ আগমণ করে আর ইমাম খুতবা দিতে থাকে, (অথবা বলেছেন) খুতবা দিতে বের হয় তবে সে যেন দুই রাকাত নামায পড়ে নেয়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১১১৩}
عن جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- خَطَبَ فَقَالَ إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَقَدْ خَرَجَ الإِمَامُ فَلْيُصَلِّ رَكْعَتَيْنِ (صحيح مسلم، كتاب الجمعة، باب التَّحِيَّةِ وَالإِمَامُ يَخْطُبُ، رقم الحديث-2059)
হযরত জাবের রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ খুতবাদানকালে বলেন-যখন তোমাদের কেউ জুমআর দিন আসে এমতাবস্থায় যে, ইমাম খুতবার জন্য বের হয়েছে তাহলে সে যেন দুই রাকাত নামায পড়ে নেয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২০৫৯}
আমরা যদি উক্ত হাদীসটির এই অর্থ নেই যে, যা বুখারী মুসলিমে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হয় তখন নামায পড়তে পারবে। খুতবা দিতে শুরু করলে পারবে কি না? সেটা বুখারীর বর্ণনাটিতে নেই, আর মুসলিমের বর্ণনায় বর্ণনাকারী সন্দেহ রয়েছে, আছে কি নাই?
তাহলে যেসব বর্ণনায় খুতবা দিতে শুরু করলে নামায পড়তে পারবে বলে বর্ণিত আছে এর অর্থ হল-ইমাম খুতবা দিতে থাকে, মানে খুতবার জন্য বসে থাকে। খুতবা শুরু করে দেয়নি। কারণ খুতবা দিতে শুরু করলে নামায পড়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যা ইতোপূর্বের বর্ণনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে। এটা মেনে নিলে উভয় হাদীসের উপর আমল হয়, কোন হাদীসকে অবজ্ঞাবশতঃ বাদ দেবার ধৃষ্টতা দেখাতে হয় না। উভয় হাদীসের উপর আমল হয়ে যায়। অর্থাৎ খুতবার জন্য বসা পর্যন্ত নামায পড়া যাবে, কিন্তু খুতবা শুরু হয়ে গেলে আর পড়া যাবে না।
৩ নং জবাব
এই হাদীসটি মূলত সুলাইক গাতফানী রাঃ এর সাথে খাস। এই হাদীসের হুকুম আম নয়। কারণ এই ঘটনা সম্বলিত হাদীসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই-সুলাইক গাতফানী রাঃ যখন নামায শুরু করেন তখন রাসূল সাঃ খুতবা থামিয়ে বসে ছিলেন। এটা ব্যতিক্রমি ঘটনা। কেউ যদি খুতবার মাঝখানে এসে যায়, যে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়েনি, তাহলে খতীব সাহেব খুতবা থামিয়ে তাকে নামায পড়তে দিবেন, এটা কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এখানে উদ্দেশ্য হল ভিন্ন। আর সেটা হল-সুলাইক গাতফানী ছিলেন দারিদ্র-গরীব। তিনি যখন সবার সামনে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে শুরু করেন, তখন সবাই তার দারিদ্র হাল দেখে তার প্রতি দয়ার্দ্র হন। আর রাসূল সাঃ ও খুতবার মাঝে গরীবদের দান করার ফযীলতের কথা আলোচনা করেন, ফলে সাহাবায়ে কিরাম অনেক দান করতে থাকেন। রাসূল সাঃ এর মিম্বরের নিকট সদকার মালের স্তুপ হয়ে যায়। রাসূল সাঃ সেখান থেকে এক জোড়া তাকে দান করলেন। আর বাকি কাপড় অন্য গরীবদের জন্য রেখে দিলেন। দেখুন নিচের দারা কুতনীর বর্ণনা, যেখানে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সুলাইক গাতফানী রাঃ নামায পড়তেছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত নবীজী সাঃ খুতবা বন্ধ রাখেন। যা স্পষ্ট প্রমাণবাহী এটি বিশেষ কারণে করা হচ্ছে। নতুবা খুতবা বন্ধ রাখার কোন মানে হয় না।
عن أنس قال : دخل رجل من قيس ورسول الله صلى الله عليه و سلم يخطب فقال النبي صلى الله عليه و سلم قم فاركع ركعتين وأمسك عن الخطبة حتى فرغ من صلاته (سنن الدار قطنى، كتاب أول كتاب الجمعة، باب في الركعتين إذا جاء الرجل والإمام يخطب، رقم الحديث-9)
যদি এই ঘটনায় সুলাইক গাতফানীর প্রতি দান করার বিষয়টি সাহাবাদের মধ্যে জাগ্রত করার উদ্দেশ্যের বদলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার গুরুত্ব রাসূল সাঃ এর উদ্দেশ্য হত, তাহলে এরকম আরো অসংখ্যা ঘটনা আছে যাতে সাহাবারা খুতবার সময় মসজিদে এসেছেন এমতাবস্থায় যে, নবীজী খুতবা দিচ্ছিলেন। তখনও নবীজী সাঃ সেই সাহাবাদের তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়তে নির্দেশ দিতেন। অথচ নবীজী সাঃ এমন নির্দেশ দেন নি। যেমন-
১-একদা ইবনে মাসউদ রাঃ রাসূল সাঃ মিম্বরে বসা অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করলেন। রাসূল সাঃ সবাইকে বসে পড়ার হুকুম করলেন। সে সময় ইবনে মাসউদ রাঃ মসজিদে নববীর দরজায় ছিলেন। তিনি সেখানেই বসে গেলেন। তখন রাসূল সাঃ বললেন-“ইবনে মাসউদ! তুমি আগে চলে আস”! {সুনানে আবু দাউদ-১/১৫৬} আগে এসে বসার কথা বলেছেন কিন্তু তাঁকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার হুকুম দেন নি।
২-একদা এক ব্যক্তি লোকদের ডিঙ্গিয়ে সামনে আসতে ছিল, তখন রাসূল সাঃ তাঁকে বললেন-“তোমার একাজ লোকদের কষ্ট দিচ্ছে”। (নাসায়ী শরীফ-২০৭} কিন্তু রাসূল সাঃ তাকেও নামায পড়তে আদেশ দেন নি।
৩-ইস্তিস্তাকার হাদীসে এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর কাছে বৃষ্টি না হওয়ার অভিযোগ নিয়ে আসে, তখন সে ফিরে গিয়ে এক সপ্তাহ পর আবার বন্যা হওয়ার সংবাদ নিয়ে আসে। এই সাহাবী উভয় দাবি নিয়ে এসেছিলেন এমন সময় যখন রাসূল সাঃ খুতবা দিচ্ছিলেন, {বুখারী শরীফ, নামাযে ইস্তিস্কা অধ্যায়} তাঁকেও রাসূল সাঃ তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার নির্দেশ দেন নি।
এই সকল বর্ণনা একথাই প্রমাণ করছে যে, খুতবার সময় তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া আবশ্যক কোন বিষয় নয়। যদি তাই হতো রাসূল সাঃ অবশ্যই সবাইকে তা পড়তে নির্দেশ দিতেন, যেমনটি তিনি সুলাইক গাতফানী রাঃ কে দিয়েছিলেন। এসব বর্ণনা একথাই প্রমাণ করছে যে, সুলাইক গাতফানী রাঃ কে বিশেষ কারণে রাসূল সাঃ খুতবা বন্ধ করে সবার সামনে নামায পড়তে আদেশ দিয়েছেন। তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া আবশ্যক এজন্য বলেন নি।
সকল বিশেষ আমলই আবশ্যক নয় উম্মতের উপর
হাদীস সম্পর্কে বিধান বলতে হবে তার পূর্বাপর অবস্থা দেখে। অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝে। শুধু বাহ্যিক শব্দ দেখে হুকুম আরোপিত করা বোকামী ছাড়া কিছু নয়। যদি তাই হয়, তাহলে বলতে হবে
১-রাসূল সাঃ সর্বদা পাগড়ী মাথায় রাখতেন। তাই এটা ফরয আমাদের উপর!?
২-রাসূল সাঃ সর্বদা মাথায় বাবরী রাখতেন। সর্বদা বাবরী রাখা কি ফরজ!?
৩-রাসূল সাঃ সব কাজ ডান দিক থেকে করতেন। এটাও ফরয আমাদের জন্য!?
৪-রাসূল সাঃ দাড়ি বড় করতে বলেছেন। কাটতে কোথাও বলেননি। তাহলে কি দাড়ি কখনোই কাটা যাবে না!?
বিস্তারিত জানতে দেখুন-
১-তুহফাতুল আলমায়ী-২/৩৭৮-৩৮২
২-আদিল্লাতুল হানাফিয়্যাহ মিন আহাদিসিন নাবাবিয়্যাহ-২৫০-২৫১
৩-বাজলুল মাজহুদ ফি হাল্লি আবি দাউদ-খুতবাকালে নামায পড়া অধ্যায়
والله اعلم بالصواب
এখান থেকে নেয়া- http://jamiatulasad.com/?p=981
আসসালামু আলাইকুম। তবুও তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করা উচিত। খোদা হাফেজ।
@antukhan,
ভাই আমি কোথায় বললাম তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করা উচিত নয় !?!?!?!?
আসসালামু আলাইকুম। তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত সম্পর্কে জানানোর জন্য ধন্যবাদ। খোদা হাফেজ।
@antukhan,
ওয়ালাইকুম আসসালাম,
জাযাকাল্লাহ খাইর…
এদের বৈশিষ্ট এই, একটি হাদিস দেখল এবং অন্য সব হাদিসকে অস্বীকার করে সেটার ওপর আমল শুরু করল।
@ম্যালকম এক্স, একমত হতে পারলাম না। বরং এদের কাজ হল এমন সব হাদিস খুঁজে বের করা যা প্রচলিত মজবুত হাদীসের বিপরীত এবং খুঁজে পাওয়া হাদীস ধরে উম্মতের সম্মনিত আলীমদের গালিগালাজ করা। এভাবে এরা সাধারণ মানুষদের ধোঁকা দিয়ে তাদের ঈমান ও আকীদা এবং আ’মাল হরণের এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
Anonymous ভাইর কথার সাথে একমত পোষন করছি।
@ আবদুস সবুর ভাই,
আচ্ছা ভাই আমি বুঝতে পারছিনা যে খুতবার সময় তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত উচিত হবে কিনা?
@ আবদুস সবুর ভাই,
ইমাম সাহেব যখন জুম্মার সময় বিভিন্ন হাদিসের কথা বলে তখন কী তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত উচিত হবে কিনা?