দ্বীন ক্বায়েমের জন্য সশস্ত্র জিহাদের অনুমোদন ইসলামে আছে কী ? (৪)
লিখেছেন: ' বাগেরহাট' @ বুধবার, জানুয়ারি ১২, ২০১১ (৯:৫০ অপরাহ্ণ)
‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ”
ইক্বামতে দ্বীনের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ ইসলামে অবৈধঃ
দ্বীন ক্বায়েম হওয়ার পূর্বে সে জন্য যে কোন ধরনের জঙ্গী তৎপরতা প্রদর্শন করার বৈধতা যে ইসলামে নেই, এর প্রমান রয়েছে স্বয়ং রসুল (সঃ) এর জীবনে । মাক্কায় যখন মুসলমানরা কাফির ও মুশরিকদের অবর্ণনীয় জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন, তখন তাদের কেউ কেউ এসে রসুল (সঃ) এর নিকট শত্রুদের মুকাবেলা করার জন্য যুদ্ধের অনুমতি চেয়েছিলেন । কিন্তু তিনি তাঁদেরকে এর কোন অনুমতি না দিয়ে এর বদলে মুশরিকদের ক্ষমা করে দিয়ে দ্বীন ক্বায়েম হ্ওয়ার জন্যে কিছুকাল ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । আবেগের বশবর্তী হয়ে যুদ্ধের কথা মুখে বলা যত সহজ, বাস্তবে তা প্রয়োগ করে দেখানো তত সহজ নয় । সে জন্যে দেখা যায় , মাক্কায় থাকাকালে যাঁরা যুদ্ধের অনুমতি চেয়েছিলেন , মাদীনায় যেয়ে সেখানে বিনা যুদ্ধে দ্বীন ক্বায়েম হওয়ার পর যখন তা রক্ষার প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে নেওয়ার অনুমতি আসলো, এমন কি বাস্তবে যখন যুদ্ধ করার প্রয়োজন দেখা দিল, তখন সেই সব লোকদের মধ্যে থেকে কিছু লোকেরা এ কথা বলতে আরম্ভ করেছিলেন ; আল্লাহ তুমি তা যদি আরো বিলম্বে ফরয করতে , তা হলে কতই না ভালো হত । পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে সেসব মুসলমানদের এ জাতীয় কথার সমালোচনায় আল্লাহ বলেন ,
” তুমি কি সে-সব লোকদের দেখনি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, নামায ক্বায়েম কর এবং যাকাত দিতে থাক ,অতঃপর যখন তাদের প্রতি জিহাদের নির্দেশ দেয়া হলো ,তৎক্ষনাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল , যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে । এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয় । আর বলতে লাগল : হায় পালন কর্তা ! কেন আমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করলেন? আমাদেরকে কেন আরো কিছুকাল অবকাশ দান করলেন না ? ” সূরা নিসা ৭৭ ।
এ আয়াতের শানে নুযুলে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মাক্কায় থাকাকালে আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফ ও তাঁর কয়েক সাথী রসূল (সঃ) এর নিকট যেয়ে বলেন: হে আল্লাহর নাবী ! আমরা মুশরিক থাকাকালে সন্মানিত ছিলাম,অতঃপর যখন ঈমান আনয়ন করলাম, তখন অসন্মানিত হয়ে গেলাম । তিনি বললেন :
” আমি ক্ষমার ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছি, কাজেই তাদের সাথে তোমরা যুদ্ধ করো না “। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নাবীকে মাদীনায় নিয়ে যাওয়ার পর যুদ্ধের জন্য নির্দেশ কললেন, তখন তারা যুদ্ধ করা থেকে বিরত হয়ে গেল । তখন আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত অবতীর্ন করেন ।
( আল বায়হাকী , আহমদ ইবন হুসাইন ,সুনানুল কুবরা ) ।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবন কাছির বলেন,
” মু’মিনগণ ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে মাক্কায় থাকাকালে নামায ও নেসাব বিহীনভাবে যাকাত দিতে, তাদের মধ্যকার অভাবী লোকদের সাহায্য ও সহযোগিতা করতে আদিষ্ট ছিলেন । এ সময় তাঁরা অন্তরে খুব জালা অনুভব করতেন এবং মনে মনে চাইতেন ; যদি তাঁদেরকে যুদ্ধের জন্য অনুমতি দেয়া হতো তা হলে তাঁরা (যুদ্ধ করে) তাঁদের শত্রুদের থেকে মুক্ত হতেন । অথচ তখন বিভিন্ন কারনবশত যুদ্ধ করা অনুচিত ছিল । তারমধ্যে কয়েকটি কারন হচ্ছেঃ
ক) তখন শত্রুদের মুকাবেলায় তাঁদের সংখ্যা ছিল কম ।
খ) তখন তাঁরা তাঁদের নিজ দেশে অবস্থান করছিলেন, যা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান । সেখানে যুদ্ধ করা ছিল অনুচিত । মাদীনায় যাওয়ার পর যখন তাঁরা বাড়ী, নিরাপদ স্থান ও সাহায্যকারী পেলেন, তখন যুদ্ধের অনুমতি প্রদান করা হয় । এমতবস্থায় যখন তাঁরা যা চাইতো তা করতে তাঁদেরকে নির্দেশ করা হলো, তখন তাদের মধ্যকার কিছু লোকেরা ভীত সন্ত্রষ্ট হয়ে গেল এবং মানুষের মোকাবেলা করতে ভয় পেতে আরম্ভ করলো ।”
ইবন কাসির , ইসমাঈল, তাফসীরুল কুআনিল ‘আজীম ; ১/৫৩৮ ।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমানিত হয় যে, ইক্বামতে দ্বীনের জন্যে সশস্ত্র যুদ্ধের কোন আবশ্যকতা ইসলামে স্বীকার্য নয় । ইসলাম একটি কল্যান ও শান্তির ধর্ম । জনগণ যদি তাদের কল্যান না চায়, তা হলে গায়ে পড়ে জোর করে তাদের কল্যান করার কোন আবশ্যকতা ইসলামে নেই । ইক্বামতে দ্বীনের কর্মীরা যদি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিজ দেশে দ্বীন ক্বায়েম করতে চাওয়ার কারনে নিজ দেশে থাকতে না পারেন, তা হলে প্রয়োজনে তারা দেশ ত্যাগ করতে পারেন, তবুও দ্বীন ক্বায়েমের নামে তারা কোন অস্ত্র হাতে নিতে পারেন না । সে কারনে সুদীর্ঘ তেরটি বছর রসুল (সঃ) মাক্কায় থাকাকালে তাঁকে কোন অস্ত্র হাতে নেয়ার কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি । বরং এর পরিবর্তে প্রারম্ভে নিজের ঈমান বাচাঁতে
হাবশায় এবং পরবর্তীতে দ্বীন ক্বায়েমের জন্যে মাদীনায় হিজরতের আদেশ করা হয়েছিল ।
চলমান ,,, ।
দুখিত আমি আপনার সাথে এক মত নই। হযরত উমর (রা:) কেন ইরান মিসর অভিযান করে ছিল? তিনিতো সেখানে প্রথমে শুধু দাওয়াত দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্টার চেষ্টা করতে পারতেন। হযরত মুহাম্মদ (সা:) মক্কা অভিযান পরিচালনা না করে আবার সাহাবী পাটিয়ে দাওয়াত দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্টা করতে পারতেন।আসলে সব কিছু করতে হবে ন্থান, কাল, পাত্র বুঝে। যেখানে দাওয়াতের প্রয়োজন সেখানে দাওয়াত যেখানে জিহাদের প্রয়োজন সেখানে জিহাদ।
সহমত hamidul@