সৌদি ব্লগোস্ফিয়ারে অধিকাংশই মহিলা ব্লগার
লিখেছেন: ' বেদুইন' @ শনিবার, সেপ্টেম্বর ৫, ২০০৯ (২:০২ পূর্বাহ্ণ)
ইন্টারনেটের জগতে ব্লগিং এনে দিয়েছে নতুন এক মাত্রা৷ অচিরেই নিজ মত প্রকাশের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ওয়েব লগ বা ‘ব্লগ’৷ সৌদি আরবেও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ যেখানে পুরুষ তো বটেই, নারীরাও লিখছেন নানা ধরণের ব্লগ৷
বিশ্বে ব্লগিং বিষয়টির উদ্ভাবন খুব বেশি দিন হয়নি৷ ১৯৯৪ সালে প্রথম ব্লগ চালু হয়৷ প্রথমদিকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা হলেও, পরবর্তীতে ব্লগ হয়ে ওঠে প্রথাগত বার্তা মাধ্যমগুলির বিকল্প৷ অনেক সময় আবার পরিপূরক৷ কারণ, দৈনন্দিন জীবনের টুকটাক লেখার পাশাপাশি, সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যু নিয়েও লিখতে শুরু করেন অনেকে৷ যা প’ড়ে, আরো পাঁচটা মানুষও তাদের মত প্রকাশের উৎসাহ পায়৷
আজকে সংবাদমাধ্যমের একমুখী ধারাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে বেশ বড় রকমের ভূমিকা রাখছে ব্লগ এবং অবশ্যই তার লেখক-লেখিকা বা ব্লগাররা৷ আর ব্লগিং-এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন-দিনই৷ বিশেষ করে সে সমস্ত দেশে, যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা অনেকটা হলেও ক্ষুন্ন৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সৌদি আরবে নাকি মোট ব্লগারদের অধিকাংশই নারী৷
সৌদি ব্লগোস্ফিয়ারে নারী
বেশ কয়েক বছর যাবত স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরবে বাস করছেন প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক ক্যারল ফ্লেমিং৷ ২০০৬ সাল থেকে তিনি অ্যামেরিকানবেদু ডট কম নামের একটি ব্লগ চালাচ্ছেন৷ ক্যারলের কথায় : আমার মনে হয়, ব্লগ আলাদা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে৷ এমন একটা জায়গা তৈরি করে, যেখানে চাইলে সকলেই অংশ নিতে পারে, বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে, নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে৷ আর সে কারণেই, দিন-দিন ব্লগিং-এর চাহিদা বাড়ছে৷ আরো বেশি মানুষ ব্লগ ব্যাপারটি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হচ্ছে৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি এটুকু বলতেই পারি যে, যেদিন আমার নিজের ব্লগ সিএনএন-এর আরবি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হলো – সেদিন আমি কতোটা বিস্মিত, কতোটা আনন্দিত হয়েছিলাম৷ তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ব্লগ আসলেই বহু মানুষ পড়ে এবং তাকে সত্যিই গুরুত্ব দেয়৷
১৯৮০ এবং ৯০-এর দশকে সৌদি আরবের মানুষ শুধুমাত্র সরকারি সংবাদ বা প্রচারমাধ্যমগুলি ব্যবহার করতে পারতো৷ কিন্তু, ইন্টারনেট আসার পর থেকে সে অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে৷ সৌদি আরবের মানুষ আজ স্বাধীনভাবেই নিজেদের পছন্দ মতো বিশ্বের খবরাখবর রাখতে পারে৷
তাদের ওপর আজ আর কোন সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই৷ যদিও, সৌদি রাজ-পরিবারের বিষয়গুলি আজও সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রাখা হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে নারীদেরও৷
তাই সৌদি নারীদের একটা স্পষ্ট ছবি বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চান দেশের একজন নিয়মিত ব্লগার ইমান আল-নাফজান৷ তিনি বললেন : আমি চাই সৌদি আরবের মহিলাদের সম্পর্কে বিশ্ব জানুক৷ জানুক যে, তারাও মানুষ৷ জানুক, তাদের জীবনের কথা৷ তাদের মননের কথা৷ টেলিভিশনে সৌদি আরবের ওপর অনুষ্ঠানগুলিতে শুধু দেখা যায় বোর্খা পরা মহিলারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ কেউ জানে না, এ আবরণের পিছনে মানুষটা কে, অথবা কি ঘটছে৷ আমি দেখাতে চাই যে, আমরা অন্য সব মহিলাদের মতোই৷ আমরাও মা, আমরাও পড়শোনা করি, আমরাও কাজ করি৷ আমাদের জীবন-যাত্রার ধরণটা হয়ত আলাদা৷ কিন্তু বস্তুত আমরাও শুধু মানুষ৷
আবার এমনও মহিলা ব্লগার আছেন, যাঁরা সৌদি সমাজের পরিবর্তনের জন্য সচেষ্ট৷ এই ধরণের কোন মহিলা ব্লগার তাঁর ব্লগকে ব্যক্তিগত দিনপঞ্জি বলে গণ্য করেন, না সমাজ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যম হিসেবে গণ্য করেন – তা প্রধানত যে ভাষায় সে ব্লগ লিখিত হয়, তা থেকেই বোঝা যায়৷ প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক ক্যারল ফ্লেমিং জানান : যে সব সৌদি মহিলা ইংরেজিতে ব্লগ লেখার সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের লক্ষ্য সমগ্র ইংরেজি ভাষাভাষী বিশ্ব৷ কিন্তু, যে সব সৌদি মহিলা আরবি ভাষায় লেখেন, আমি দেখেছি তাঁরা ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে চলেন৷ ইংরেজি ভাষার ব্লগগুলিতে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়কে কেন্দ্র করে কাঙ্খিত সংস্কারের কথা বলেন৷
যে সব সৌদি মহিলা ব্লগ লেখেন, তাঁরা ঐ ব্লগের মাধ্যমেই পরষ্পরের সঙ্গে পরিচিত হন৷ তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে মত বিনিময় করেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের যৌথ স্বার্থ হলো, বহির্বিশ্বের কাছে সৌদি মহিলাদের একটি বাস্তব চিত্র পরিবেশন করা৷
ব্লগারদের তালিকায় নারী-পুরুষের নাম নিয়ে বিতর্ক
এদিকে, সৌদি আরবে নারী-পুরুষকে যে সর্বক্ষেত্রেই আলাদা করে রাখা হয় – একথা কারুর অজানা নয়৷ কিন্তু, কখনও ভেবে দেখেছেন কি – অনলাইন বা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বিষয়টি কেমন দাঁড়াবে ? এই ধরুন ব্লগিং-এর ক্ষেত্রে ? যেমন, কোনো ব্লগের তালিকায় পুরুষ এবং মহিলা ব্লগারের নাম কি আদৌ একসঙ্গে থাকতে পারে?
সৌদি ব্লগোস্ফিয়ারের বেশ কিছু ব্লগার দাবি করেছে, ব্লগরোল বা ব্লগারদের তালিকায় নারী-পুরুষের নামগুলিকে আলাদা করে রাখার জন্য৷ তারা মনে করে, ইন্টারনেটেও শয়তানের বাসা৷ ফলে কুমারী, অবিবাহিত এমনকি বিবাহিত মহিলাদেরও পুরুষ ব্লগারদের নামের প্রতি নিষিদ্ধ আকর্ষণ জন্মাতে পারে৷ জন্ম দিতে পারে কোন অনভিপ্রেত ঘটনার৷ এর জন্য বেশ কিছু ব্লগার পুরুষ এবং মহিলা ব্লগারদের আলাদা করে দুটি পৃথক ব্লগে রেখেছে যাতে একে অপরের মধ্যে কোনরকম সম্পর্ক না থাকে৷
এরপরও অবশ্য এমন কিছু ব্লগার রয়েছেন, যারা স্বাধীনতার মনত্রে বিশ্বাসী৷ তারা কিন্তু নারী-পুরুষ ভেদে এক তালিকায় ব্লগের নামগুলি রাখার পক্ষপাতী৷ তারা সৌদি সমাজে সৃষ্ট সমস্যাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সৌদি ব্লগোস্ফিয়ারের এই বৈশিষ্ট্যকে কোন আমলে নিচ্ছে না এখনও৷ আর সে কারণেই এখনো বেঁচে আছে সৌদি ব্লগোস্ফিয়ার৷ বেঁচে আছে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছে৷
প্রতিবেদক: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
http://www.dw-world.de/dw/article/0,,4625365,00.html
I-)