আল-কুরআনের খুঁত ধরার ধূর্ত খেলা – ১
লিখেছেন: ' সাদাত' @ সোমবার, মার্চ ২২, ২০১০ (২:১৬ অপরাহ্ণ)
আল-কুরআনের খুঁত ধরার ধূর্ত খেলা – ১
['মুক্তমনা'র যুক্তিখন্ডন]
[পটভূমি:অভিজিৎ রায়ের কল্যাণে ‘মুক্তমনা’ নামটি এখন নাস্তিকতার সমার্থক হয়ে উঠেছে। স্বভাবতই নাস্তিকদের একটা সাধারণ টার্গেট হলো ইসলাম। কারণ ধর্ম হিসেবে চ্যালেঞ্জ করার মত ধর্ম একটাই, আর তা হচ্ছে ইসলাম। কাজেই ইসলাম নিয়ে কোথাও কোন লেখা দেখলেই মুক্তমনারা হাজির হন একগাদা আয়াতের নম্বরসহ, তুলে ধরেন আল-কুরআনের কোথায় কোন্ ভুল আছে, পরস্পরবিরোধিতা আছে, অবৈজ্ঞানিক তথ্য আছে তার এক সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অভিযোগগুলি হয়ে থাকে খ্রিস্টান মিশনারিদের অপপ্রচারের চর্বিত চর্বন। কাজেই এসব অভিযোগের জবাব দেওয়া প্রয়োজন। শুরু করব মুক্তমনার এমন কিছু অভিযোগ দিয়ে যেগুলোর সারবত্তা পাঠকমাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন]
পরস্পরবিরোধিতার অভিযোগ:
“সুরা ৭৯:২৭-৩০ অনুযায়ী আল্লাহ ‘হেভেন’ বানিয়েছিলেন আগে, তারপর বানিয়েছিলেন পৃথিবী, কিন্তু অন্য কিছু আয়াতে আল্লাহ বলেছেন একেবারে উল্টোকথা – অর্থাৎ আগে পৃথিবী, পরে হেভেন (২:২৯ এবং ৪১:৯-১২ দ্র: )।”
[সূত্র: বিজ্ঞানময় কিতাব – অভিজিৎ রায়]
বিশ্লেষণ:
এক.
প্রথমে দেখি ২:২৯ এবং ৪১:৯-১২ এ কী বলা আছে:
[আমরা এখানে পরস্পরবিরোধিতা খুঁজছি, বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যতা নয়।কাজেই আকাশ বলে কিছু আছে কিনা এ প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর। ]
তিনিই সে সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।(২:২৯)
বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুদিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। (৪১:৯)
তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে। (৪১:১০)
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। (৪১:১১)
অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দুদিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (৪১:১২)
আমাদের বক্তব্য:
অভিযোগকারীর সাথে আমরাও একমত যে, এ আয়াতগুলোতে আগে পৃথিবী পরে আকাশ “সৃষ্টি“র কথা বলা হয়েছে।
দুই.
এবার দেখি (৭৯:২৭-৩০) এ কী বলা হয়েছে:
তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন?[৭৯:২৭]
তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। [৭৯:২৮]
তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যোলোক প্রকাশ করেছেন।[৭৯:২৯]
পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।[৭৯:৩০]
আমাদের বক্তব্য:
অভিযোগকারি বলেছেন, “সুরা ৭৯:২৭-৩০ অনুযায়ী আল্লাহ ‘হেভেন’ বানিয়েছিলেন আগে, তারপর বানিয়েছিলেন পৃথিবী”, কিন্তু আমরা এই আয়াতগুলোতে এই তথ্য কোথাও পেলাম না।
বিবেচনা:
পাঠক আপনিই বলুন:
৭৯:৩০ এ পৃথিবীকে ‘সৃষ্টি’ করার কথা বলা হয়েছে, নাকি ‘বিস্তৃত’ করার কথা বলা হয়েছে?
সবগুলো আয়াত একসাথে করলে যা দাঁড়ায়:
১. আগে পৃথিবীকে সৃষ্টি করা হয়েছে
২. পরে আকাশ সৃষ্টি করা হয়েছে
৩. তারপর পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে
সুতরাং
পরস্পরবিরোধিতাটা কোথায়?
অভিযোগকারী কি ‘সৃষ্টি’ এবং ‘বিস্তৃতি’র মাঝে কোন পার্থক্য খুঁজে পান না? নাকি যেনতেনভাবে অভিযোগ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করাই মূখ্য উদ্দেশ্য!
সমাপ্ত
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>><<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি আপনার পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করত না।[৬:১১২]
অতএব, আপনি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যাপবাদকে মুক্ত ছেড়ে দিন যাতে কারুকার্যখচিত বাক্যের প্রতি তাদের মন আকৃষ্ট হয় যারা পরকালে বিশ্বাস করে না এবং তারা একেও পছন্দ করে নেয় এবং যাতে ঐসব কাজ করে, যা তারা করছে। [৬:১১৩]
ব্লগাররা বোধহয় জানেন, এই পোস্টটা আমারব্লগেও প্রকাশিত হয়েছিল। এখানে কিছুটা পরিবর্ধন, পরিমার্জন সহকারে প্রকাশ করা হল।
মুক্তমনাতে ফুয়াদের মনে হয় একাউন্ট আছে। চাইলে তিনি এ পোস্ট সেখানে শেয়ার করতে পারে। মুক্তমনাতে আনোয়ারুল কবীরের ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে একটা লেখায় দেখেছিলাম সৌদিআরবের ইসলামকে অর্থডক্স ইসলাম বলছিলো, যেভাবে মন চায় সেভাবেই ব্যাখ্যা করে।
@নাজনীন,
ডাঃ অভিজিত রায়কে একটি হাদিসের ব্যাপারে সরাসরি ধরে ছিলাম, উনি বুখারী শরীফের নাম ভাংগে ঐ হাদিস উল্লেখ করেছিলেন, পরে না দিতে পেরে বহু আগে বুখারী শরীফ নাকি তার কাছে ছিল এখন এসব নিয়ে গবেষনা করেন না, এ সব বলে নিজেকে ডিফেন্ড করতে চেয়েছেন। কিন্তু একই হাদিস ফেইথ ফ্রিডম সাইটে উল্লেখ আছে রেফারেন্স ছাড়া, আর অভিজিত রায়ের দেওয়া হাদিস টি ও একই রকম যতটুকু অভিজিত রায় দিয়েছেন। আমি তখন ই বুঝতে পেরেছি, কপি পেস্ট, এখন কপি পেস্ট দিয়ে তিনি স্বীকার করতে চান না।
সাদাত , সুন্দর পোস্ট । এরা অনেক সময় আমাদের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে কোরআন শরীফের অপব্যাখ্যা করে । অনেকেরই কোরআন শরীফে ঘেটে দেখার সুযোগ নেই । তাই সরলমনে তাদের এই ধোকায় বিভ্রান্ত হয় ।
@হাফিজ,
অনেকেরই কোরআন শরীফে ঘেটে দেখার সুযোগ নেই । তাই সরলমনে তাদের এই ধোকায় বিভ্রান্ত হয় ।
সহমত।
গত কয়েকদিন আগে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় রাজারবাগের পীরের ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে একটা পোষ্টারে দেখলাম। সেখানে লিখা ছিলোঃ হযরত আবু বকর রাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে একটি দিরহামও খরচ করবে সে জান্নাতে যাবে। পাশে আবার পীর সাহেব ও এই ধরণের বানী দিয়েছেলেন।
আলহামদুলিল্লাহ।
আপনার উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার, সাদাত ভাই। ধন্যবাদ।