আল-কুরআনের খুঁত ধরার ধূর্ত খেলা – ২
লিখেছেন: ' সাদাত' @ মঙ্গলবার, এপ্রিল ৬, ২০১০ (২:৩১ অপরাহ্ণ)
মুক্তমনার যুক্তিখন্ডন
[পটভূমি: অভিজিৎ রায়ের কল্যাণে ‘মুক্তমনা’ নামটি এখন নাস্তিকতার সমার্থক হয়ে উঠেছে। স্বভাবতই নাস্তিকদের একটা সাধারণ টার্গেট হলো ইসলাম। কারণ ধর্ম হিসেবে চ্যালেঞ্জ করার মত ধর্ম একটাই, আর তা হচ্ছে ইসলাম। কাজেই ইসলাম নিয়ে কোথাও কোন লেখা দেখলেই মুক্তমনারা হাজির হন একগাদা আয়াতের নম্বরসহ, তুলে ধরেন আল-কুরআনের কোথায় কোন্ ভুল আছে, পরস্পরবিরোধিতা আছে, অবৈজ্ঞানিক তথ্য আছে তার এক সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অভিযোগগুলি হয়ে থাকে খ্রিস্টান মিশনারিদের অপপ্রচারের চর্বিত চর্বন। কাজেই এসব অভিযোগের জবাব দেওয়া প্রয়োজন। শুরু করব মুক্তমনার এমন কিছু অভিযোগ দিয়ে যেগুলোর সারবত্তা পাঠকমাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন।]
পরস্পরবিরোধিতার অভিযোগ:
[আল-কুরআনে] পরস্পরবিরোধী বাণীও আছে ঢের।
কখনো বলা হয়েছে মুহম্মদকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত আছেন একহাজার জন ফেরেস্তা (৮:৯-১০) কখনোবা বলেছেন এই সাহায্যকারী ফেরেস্তাদের সংখ্যা আসলে তিনহাজার (৩:১২৪,১২৬)।
[সূত্র: বিজ্ঞানময় কিতাব – অভিজিৎ রায়]
অভিযোগের উত্তর:
প্রেক্ষাপট ১: বদরের যুদ্ধে প্রাথমিকভাবে মুশরিকদের সৈন্যসংখ্যা ছিল এক হাজার। তখন মুসলমানদের প্রার্থনার প্রেক্ষিতে আয়াত নাযিল হয়:
তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদিগকে সাহায্য করব ধারাবহিকভাবে আগত হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে।[৮:৯]
আর আল্লাহ তো শুধু সুসংবাদ দান করলেন যাতে তোমাদের মন আশ্বস্ত হতে পারে। আর সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হতে পারে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তির অধিকারী হেকমত ওয়ালা।[৮:১০]
প্রেক্ষাপট ২: পরে বদরের যুদ্ধের সময় মুসলমানদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে যে কুরয বিন জাবির মুশরিকদের সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করছে। মুসলমানদের কাছে এ সংবাদ অত্যন্ত কঠিন ঠেকল। এ প্রেক্ষিতে আয়াত নাযিল হয়:
আপনি যখন বলতে লাগলেন মুমিনগণকে-তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের পালনকর্তা আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফেরেশতা পাঠাবেন।[৩:১২৪]
অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং বিরত থাক আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের পালনকর্তা চিহ্ণিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন।[৩:১২৫]
বস্তুতঃ এটা তো আল্লাহ তোমাদের সুসংবাদ দান করলেন, যাতে তোমাদের মনে এতে সান্ত্বনা আসতে পারে। আর সাহায্য শুধুমাত্র পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী আল্লাহরই পক্ষ থেকে,[৩:১২৬]
বিবেচনা:
পাঠক, অভিযোগকারীরা ‘পরস্পরবিরোধিতা’ বলতে কী বুঝেন? তারা কি বুঝেন না, নাকি জেনেবুঝেই মানুষকে বিভ্রান্ত করেন?
অ্যারিস্টোটলের “law of noncontradiction” বলে:
“One cannot say of something that it is and that it is not in the same respect and at the same time.”
কাজেই দুটো ভিন্ন সময় ও প্রেক্ষাপটের আয়াতের মাঝে পরস্পরবিরোধিতা খোঁজা নিতান্তই অযৌক্তিক ও হাস্যকর নয় কি?
অভিযোগের উত্তর শেষ।
অতিরিক্ত অংশ:
নিচের আংশটুকু কৌতূহলী পাঠকের জন্য। এই অংশ অভিযোগকারীদের অভিযোগের জবাব নয়। এটাকে অভিযোগের জবাব হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না]
৮:৯ নম্বর আয়াতেই কিন্তু আল্লাহপাকের একটা ইঙ্গিত ছিল: “আমি তোমাদিগকে সাহায্য করব ধারাবহিকভাবে আগত হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে”
এখানে “ধারাবাহিকভাবে” বলতে আল্লাহপাক বুঝাচ্ছেন, প্রথমে এক হাজার, পরে ধারাবাহিকভাবে হাজার সংখ্যক করে ফেরেস্তা আল্লাহপাক পাঠাবেন । এটা আমার কথা নয়। দেখুন তাফসিরে ইবনে কাসির:
The word “in succession” means they follow each other and thus indicates that thousands more will follow them.
আলহামদুলিল্লাহ, এগুলো জোরেশোরে প্রচার করা দরকার
@মনপবন, সহমত ।
নাস্তিকদের সমস্ত যুক্তিগুলো ও সঠিক উত্তরগুলো সমন্নিত করে একটা আর্রকাইভ সেকশন করা হক। যেটা যে কেও যেকোন সাইটে সহজে স্যেয়ার করতে পারবে।
জাজাকুমুল্লাহ
অনেক ভাল প্রচেষ্ঠা।