আল-কুরআনের খুঁত ধরার ধূর্ত খেলা! -৩
লিখেছেন: ' সাদাত' @ শনিবার, এপ্রিল ১০, ২০১০ (১২:৫৪ অপরাহ্ণ)
নাস্তিকের অংক কষা!
[১টা গর্ত খুঁড়তে একজন শ্রমিকের ১ ঘন্টা লাগলে, ৩টা গর্ত খুঁড়তে ৩ জন শ্রমিকের কয় ঘন্টা লাগবে? গণিতে যারা কাঁচা, তারা বলবে ৩ ঘন্টা,। যারা গণিত মোটামুটি বুঝে তারা হয়ত বলবে ১ ঘন্টা। যারা আরেকটু বেশি বুঝে তারা বলবে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রশ্নটার উত্তর সম্ভব না। কারণ:
(যদি ব্যতিক্রমের চিন্তা বাদ দেয়া হয়)
কেস ১:
৩ জন শ্রমিক একসাথে কাজ শুরু করল সেক্ষেত্রে সময় লাগবে ১ ঘন্টা ।
১।।১।।১ = ১
কেস ২:
২ জন শ্রমিক একসাথে কাজ শুরু করল। তাদের কাজ শেষ হল। অত:পর ৩য় শ্রমিক কাজ শুরু করল। এক্ষেত্রে সময় লাগবে ২ ঘন্টা।
(১।।১)+১=১+১=২
কেস ৩:
১ম শ্রমিক কাজ শেষ করল। অত:পর ২য় শ্রমিক কাজ শুরু করল।
২য় শ্রমিক কাজ শেষ করল। অত:পর ৩য় শ্রমিক কাজ শুরু করল।
এক্ষেত্রে সময় লাগবে ৩ ঘন্টা।
১+১+১=৩
এ ধরণের কেস হতে পারে অগণিত। কাজেই এ প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে জানতে হবে কে কখন কাজ শুরু করল। 'মুক্তমনা'র নাস্তিকদের মত তথ্য পাবার সাথেই ১+১+১=৩ হিসাব করা যাবে না। ]
মূল পোস্ট:
‘মুক্তমনা’র যুক্তিখন্ডন
আল-কুরআনে পরস্পরবিরোধিতার অভিযোগ:
কয়েকটি আয়াত থেকে পাওয়া যায়, এই মহাবিশ্ব তৈরি করতে আল্লাহ সময় নিয়েছেন ছয় দিন (৭:৫৪, ১০:৩, ১১:৭, ৫০:৩৮, ৫৭:৪ ইত্যাদি), কিন্তু ৪১:৯-১২ থেকে জানা যায়, তিনি পৃথিবী তৈরি করতে ২ দিন সময় নিয়েছিলেন, এর পর এর মধ্যে পাহাড়-পর্বত বসাতে আর অন্যান্য আনুষঙ্গিক ইমারত তৈরী করতে আরো চার দিন, সবশেষে সাত আসমান বানাতে সময় নিয়েছেন আরো দু-দিন। সব মিলিয়ে সময় লেগেছে মোট আট দিন। কাজেই কোরান অনুযায়ী আল্লাহ মহাবিশ্ব বানিয়েছেন কয় দিনে – ছয় দিনে নাকি আট দিনে?
[সূত্র: বিজ্ঞানময় কিতাব - অভিজিৎ রায়]
অভিযোগের জবাব:
অভিযোগকারীর সাথে আমরাও একমত যে ৭:৫৪, ১০:৩, ১১:৭, ৫০:৩৮, ৫৭:৪ আয়াত অনুযায়ী পৃথিবী, আকাশ এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন ৬ দিনে।
কিন্তু পরবর্তী অংশে অভিযোগকারী কিছু চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন:
কিন্তু ৪১:৯-১২ থেকে জানা যায়, তিনি পৃথিবী তৈরি করতে ২ দিন সময় নিয়েছিলেন,
-মানলাম
এর পর এর মধ্যে পাহাড়-পর্বত বসাতে আর অন্যান্য আনুষঙ্গিক ইমারত তৈরী করতে আরো চার দিন,
-মানলাম না। কারণ, এখানে ‘এর পর’ এবং ‘আরো’ শব্দ দুইটি অভিযোগকারী নিজস্ব আমদানি, যা নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত অথবা উদ্দেশ্যমূলক। আল-কুরআনে উক্ত আয়াতে ‘এর পর’ /’আরো’/'অত:পর’/'তারপর’ এ জাতীয় কোন শব্দ নেই। কাজেই অভিযোগকারীর ২+৪+২=৮ হিসাব করাকে ‘নাস্তিকের অংক কষা’র ওপরের উদাহরণের সাথেই তুলনা করা চলে।
আসুন দেখি ৪১:৯-১২ আয়াতগুলো:
বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুদিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। [৪১:৯]
তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে।[৪১:১০]
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।[৪১:১১]
অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দুদিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।[৪১:১২]
পাঠক, খুব ভালো করে লক্ষ করুন:
১০ নম্বর আয়াতে কোন ‘এর পর’ /’আরো’/'অত:পর’/'তারপর’ এ জাতীয় কোন শব্দ(আরবীতে ‘সুম্মা’ বা ‘ফা’) নেই।
১১ এবং ১২ নম্বর আয়াতে ‘অতঃপর’ শব্দ আছে (আরবীতে ‘সুম্মা’ বা ‘ফা’)।
কাজেই,
৯ নম্বর আয়াতের কাজের জন্য লেগেছে ২ দিন ।
১০ নম্বর আয়াতের কাজের জন্য সময় লেগেছে ৪ দিন। কিন্তু এই কাজ কখন শুরু হয়েছে, সে তথ্য অনুপস্থিত।
১১ এবং ১২ নম্বর আয়াতের কাজের জন্য লেগেছে ২ দিন। এই কাজ শুরু হয়েছে ১০ নম্বর আয়াতের কাজ শেষ হবার পরপরই।
এক নজরে আয়াত ৪টি হতে প্রাপ্ত তথ্য:
সুতরাং শুধুমাত্র ৪১:৯-১২ আয়াতগুলো হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে পৃথিবী ও আকাশ তৈরি করতে মোট কত দিন সময় লেগেছে তা বলা কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ ১০ নম্বর আয়াতের কাজ কখন শুরু হয়েছে তার উল্লেখ এখানে নেই।
কাজেই পরস্পরবিরোধিতার অভিযোগ একেবারেই অযৌক্তিক।
অভিযোগের উত্তর শেষ।
অতিরিক্ত অংশ:[কৌতূহলী পাঠকের জন্য]
[নিচের অংশ অভিযোগের উত্তর নয়, এটাকে অভিযোগের উত্তর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।]
সুপ্রিয় পাঠক,
যেহেতু আমরা ৭:৫৪, ১০:৩, ১১:৭, ৫০:৩৮, ৫৭:৪ আয়াত হতে জানি পৃথিবী, আকাশ এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন ৬ দিনে।
কাজেই এই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে আমরা ৪১:৯-১২ নম্বর আয়াতসমূহ হতে নিচের ধারণা পেতে পারি:
প্রথম ২ দিন | মাঝের ২ দিন | শেষের ২ দিন | |
---|---|---|---|
৯ নম্বর আয়াতের কাজ-> | পৃথিবী সৃষ্টি | ||
১০ নম্বর আয়াতের কাজ-> | খাদ্যের ব্যবস্থা+অন্যান্য কাজ | ||
১১,১২ নম্বর আয়াতের কাজ-> | আকাশ সৃষ্টি |
অর্থাৎ ৯ এবং ১০ নম্বর আয়াতের কাজ সমান্তরালে সম্পাদিত হয়েছে, ক্রমান্বয়ে নয়ে।
কাজেই,
(২।।৪)+২=৪+২=৬
নাই যার (মাথা) ঠিক = ন্যাষ্ঠিক (অপভ্রংশ) = নাস্তিক (চলতি বাংলা) ।
সাদাত ভাই,
আমি যতদুর জানতাম “কোরআনে” বিশ্ব সৃষ্টির বিষয়ে যে “দিন” এর কথা বলা হয়েছে , সেটা আসলে ২৪ ঘন্টার দিন বুঝানো হয়নি , সেটাকে “পর্যায়” বা Step বুঝানো হয়েছে ???
@হাফিজ,
এখানে দিন মানে ২৪ ঘন্টা অবশ্যই না। তবে এই দিনের দৈর্ঘ্য যাই হোক, প্রশ্ন হল আল-কুরআনে কোথাও ৬ দিন কোথাও ৮ দিন বলা আছে কিনা? উত্তর না।