দ্বীন প্রতিষ্ঠার সঠিক পথ ও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
লিখেছেন: ' সাদাত' @ সোমবার, এপ্রিল ১২, ২০১০ (৭:১৭ অপরাহ্ণ)
[এ নিবন্ধটি ১৯৩৯ সালের অক্টোবর মাসে তরজুমানুর কুরআনে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনি আন্দোলন’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। আর এখানে যে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে সেটা আল-ফুরকান পত্রিকার পক্ষ হতে দেওয়া]
গত রজব মাসের শেষ দিকে দিল্লীর নিকটবর্তী একটি এলাকায় আমার যাওয়ার সুযোগ হয়, যে এলাকাটি মেওয়াত নামে প্রসিদ্ধ। দীর্ঘদিন যাবত শুনে আসছিলাম সেখানে মাওলানা ইলিয়াস কান্দালভীর(রহ.) নেতৃত্বে নীরবে একটি আন্দোলন চলে আসছে। যা দশ/বার বৎসরের ব্যবধানে ঐ এলাকার অবস্থার আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কৌতুহল আর আমার সন্ধানী মন আমাকে বাধ্য করল স্বয়ং গিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আসতে। সে ভ্রমণে আমি যা কিছু স্বচক্ষে দেখেছি এবং যেটুকু ফলাফল আহরণ করেছি, তা তরজুমানুল কুরআনের পাঠক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের খেদমতে পৌঁছে দিচ্ছি। ফলে আল্লাহতা’আলার যে বান্দা বাস্তবিকই দ্বীনের জন্য কিছু কাজ করতে চায়, সে যেন কাজ করার এক সঠিক ও সুন্দর তরিকা সম্পর্কে আবগতি লাভ করতে সক্ষম হয়।
মেওজাতির বসবাস দিল্লীর পাশেই আলোর, ভরতপুর, গোড়াগানূহ এবং অন্যান্য পার্শ্ববর্তী এলাকায়। অত্র এলাকায় মোট জনসংখ্যা আনুমানিক ৩২ লক্ষের কম হবে না। এখন থেকে বহু শতাব্দি সম্ভবত: হযরত নিজামুদ্দিন মাহবুবে এলাহি (রহ.) এবং তাঁর খলিফা ও অনুসারিদের প্রচেষ্টায় এ জাতির মাঝে ইসলাম পৌঁছেছিল। কিন্তু আফসোস! পরবর্তীকালে মুসলিম শাসক ও জায়গীরদারদের গাফলতির কারণে সেখানে ইসলামী শিক্ষাদীক্ষার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই ফলাফল এই দাঁড়াল যে, যারা হুকুমতের একান্ত নিকটবর্তী অবস্থান করছিল, তাদের মধ্যে প্রাচীনকালের সকল বর্বরতা ফিরে আসল এবং ধীরে ধীরে তারা ইসলাম হতে এই পরিমাণ দূরে সরে পড়ল যে, তাদের মধ্যে ‘আমরা মুসলমান’ শুধু এই ধারণাটুকু ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। অবশিষ্ট ছিল না তাদের মুসলমান নাম পর্যন্ত। নাহার সিংহ, ভিপি সিংহ ইত্যাদি নামে তাদেরকে ডাকা হত। তাদের মাথায় শোভা পেত চুলের খোপা। রীতিমত মূর্তি পূজায় লেগে গিয়েছিল তারা। নিজের চাওয়া পাওয়া আল্লাহর কাছে রা চেয়ে চাইত হাতে গড়া ঐ সকল দেবদেবীর কাছে। তাদের পূর্বপুরুষরা পুরাতন যামানায় যে প্রতিমার পূজারি ছিল সে পূজার দিকেই ফিরে গেল তারাও।
ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা তাদের মাঝে এমনভাবে ছেয়ে গিয়েছিল যে, সাধারণ গ্রাম্য লোকদের কালেমা পর্যন্ত জানা ছিল না। এমনকি নামাযের বাহ্যিক সুরতের সাথেও তারা অপরিচিত হয়ে পড়েছিল। ঘটনাক্রমে কোন মুসলমান সে এলাকায় পৌঁছে নামায পড়তে শুরু করলে গ্রামের পুরুষ মহিলা ও বাচ্চারা কৌতুহলবশত: তার আশেপাশে একত্রিত হয়ে যেত। নামাযের রুকু সিজদাকে এক ধরণের অদ্ভূত কাজ মনে করত। ভাবত যে,হয়ত লোকটার পেটে ব্যথা আরম্ভ হয়েছে কিংবা পাগল হয়ে গেছে। অন্যথায় এভাবে উঠা-বসা করছে কেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, রবং জাহিলী যুগের সকল বর্বরতা আর পশুত্ব তাদের মাঝে ছেয়ে গিয়েছিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা তো পাওয়াই যেত না। এমনকি পবিত্রতা অর্জনের প্রাথমিব নিয়ম-কানুন সম্পর্কেও তারা ছিল অজ্ঞ। নারী পুরুষ সব উলঙ্গ অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত। হায়া শরমের জলাঞ্জলি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি সহ সকল অপকর্মের ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল । কোন মুসাফিরের জন্য একাকী ঐ এলাকা দিয়ে অতিক্রম করা ছিল মুশকিল। তাদের কবিলা এবং গোত্রগুলোর মাঝে জাহিলী প্রথা-প্রচলন নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সর্বদা এমনভাবে লেগেই থাকত, যেমনভাবে লেগে থাকত আরব্য জাহিলী যুগের লোকদের মাঝে। তাদের আবাদীগুলো বিভিন্নখন্ডে বিবক্ত ছিল। প্রায় সময়ই এক এলাকার লোকদের সাথে অন্য এলাকার লোকদের নারী, জন্তু বা অন্য কিছুর সূত্র ধরে শুরু হত জিঘাংসা। যার ধারা চলত যুগ যুগ ধরে। তাদের উদ্যম, বাহাদুরি, বাহুবল, গোত্রীয় শক্তি-সামর্থ এভাবেই নি:শেষ হতে চলছিল। খুঁজে পাচ্ছিল না তারা এর থেকে উত্তরণ ও উন্নতি-অগ্রগতির কোন পথ। এমনকি নিজ প্রতিবেশীদের জন্যও ছিল একে অন্যের ত্রাস। সুতরাং ঐ সকল এলাকায় যাদের সরকারিভাবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের অভিযোগ হল- ইংরেজ হুকুমত, আলোর, ভরতপুরের জমিদারি শাসনও সেখানে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং তামদ্দুনিক পরিস্থিতি সৃষ্টির ব্যাপারে অকৃতকার্য হয়েছে।
ঠিক এমনি মুহূর্তে হযরত মাওলানা(রহ.) সেখানে কাজ শুরু করেছিলেন এবং দশ/বারো বছরের এ সংক্ষিপ্ত সময়েই এ বর্বর জাতির অধিকাংশের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। বর্তমানে সেখানে প্রায় আড়াইশত মাদ্রসা রয়েছে। সব মাদ্রাসায় এসে গ্রামের ছেলেরা দ্বীনের প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করে। এদের মধ্যে যারা দ্বীনের উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে চায, তাদের জন্য রয়েছে-দিল্লীর নিকটবর্তী নিজামউদ্দিন মাহবুবে এলাহি এলাকায় অবস্থিত বড় মাদ্রাসা। যার বদৌলতে এ পথ বিপন্ন মানব সমাজ ইসলামের সুমহান মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। মাদ্রাসাগুলোতে শুধু দ্বীনি ইলমই শিক্ষা দেওয়া হয় না। বরং ছাত্রদেরকে খালেস দ্বীনের তরবিয়াত দেয়া হয় এবং তাবলীগ ও আমলের ইসলাহি মশক করানোর জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে নিয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ মাদ্রাসাগুলোর বরকতে মেওয়াতে লোকদের মধ্য থেকে উলামা মুবাল্লিগীনের একটি দল তৈরি হয়ে গেছে। যারার এই পথভ্রষ্ট জাতিকে দ্বীনের পথে সর্বদা কায়েম রাখার যিম্মাদার ব’নে গেছেন। আল্লাহর ফযলে মাওলানা স্বয়ং এ জাতির মুবাল্লিগের কাছ থেকে ইসলাহের(আত্মশুদ্ধির) কাজ নিয়েছেন এবং তাঁরই লাগাতার প্রচেষ্টার যে সুফল আমার স্বচোখে দেখে এসেছি তা নিম্নে প্রদত্ত হল-
কোন এলাকায় গ্রামের পর গ্রাম এমনও রয়েছে যে, সেখানে একজন বে-নামাযী পাওয়া যাবে না। গ্রামের যে সকল মসজিদগুলোতে তারা তাদের পালিত পশু বেঁধে রাখত, আজ সেকানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও আযান জামাতের সাতে আদায় হচ্ছে। কোন পথিককে আপনি দাঁড় করিযেকজন তার পরীক্ষা নিন- সে আপনাকে বিশুদ্ধভাবে কালেমা শুনিয়ে দিবে।
ইসলামি শিক্ষার সোজাসুজি মৌলিক বিষয়াদি যা একজন গ্রাম্য বৃদ্ধ লোকের জানার কথা। জিজ্ঞেস করুন আপনি- পরিষ্কার বলে দেবে এবং আপনাকে এও বলে দিবে যে, ইসলামের আরকান কি কি। এখন আপনি সেখানে কোন মহিলা বা বাচ্চাকে হিন্দুয়ানি পোষাকে দেখবেন না এবং দেখবেন না কাউকে সতর খোলা অবস্থায়। তাদের বাড়ী ফর কিংবা পোষাকে-আশাকে দেখবেন না নাপাকি বা অপবিত্রতার ছোঁয়া। তাদের অভ্যাস, স্বভাব ও চরিত্রের মাঝে এক মহা পরিবর্তনের দোলা লেগেছে তাবলিগি তা’লিমের মহান পরশে। তাদের জীবন এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ধর্মীয় তাহযীব, তমুদ্দন ও সভ্যতার দিকে। সকল অন্যায় অপকর্ম যেন আশ্চর্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। ঝগড়া, ফাসাদ, মামলা-মুকাদ্দমা একেবারেই কমে গেছে। এলাকাটি যেন সম্পূর্ণ একটি নিরাপদে অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এর স্বীকারোক্তি সেখানকার সরকারি বিচারকদের মুখেই বের হচ্ছে। তাদের সমাজ চিত্রে, লেন-দেন, আচার-আচরণে লেগেছে এক বিরাট পরিবর্তনের ছোঁয়া। ফলে আশেপাশের এলাকাগুলোতেও এর ভিন্ন রকম প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। এখন আর তাদেরকে অপমান আর অবিশ্বস্ততার দৃষ্টতে দেখা হয় না, বরং ক্রমশ: তাদের ইযযত সম্মান প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। মাওলানা গ্রামের সাধারণ গ্রাম্য লোকদের মাঝে তাবলিগ, ইসলাহ(আত্মশুদ্ধি), সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ প্রভৃতির এমন জযবা তৈরি করে দিয়েচেন যে, যে ব্যক্তিটি গতকাল নাগাদ পথভ্রষ্ট ছিল, আজ সে অন্য ভাইকে সত্য-সুন্দর পথের আহ্ববানের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক্ষেত খামারের কাজ থেকে অবসর হওয়ার পর বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছোট ছোট দল তাবলিগে বেড়িয়ে পড়ছে। গ্রামে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে লোকদেরকে কল্যাণ, সফলতা চিরন্তর মুক্তির দাওয়াত দিচ্ছে। তাঁদের বোঝা অন্যের উপর তারা ফেলেন না। চান না তারা কারো কাছে নিজের জন্য কিছু। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টিই তাদের মূল লক্ষ্যবস্তু। ফলে যেখানেই তাদের পদচারণা হয়, সেখানেই মহল্লা ও গ্রামের বস্তিগুলোতে এক সীমাহীন প্রভাব পড়ে। আমি জানতে পারলাম অধিকাংশ সময়ই তারা পায়দর সফর করে দুইশত মাইল পর্যন্ত অতিক্রম করে থাকেন। যে বস্তির উপর দিয়েই তাদের পদভ্রমন হয, সে বস্তিতেই দ্বীনের জাগরণ সৃষ্টি হয় এবং কালেমা ও নামাযের নূরে নূরান্বিত হয়ে যায়। গ্রাম্য বৃদ্ধ মুবাল্লিগদের সাথে আলোচনার সুযোগও আমার হযেছে। তাদের সরলসোজা মুখ দিয়ে যখন তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য শুনলাম, তখন আমার মনে হচ্ছিল- ইসলামের সূচনালগ্নে আরবের গ্রাম্য বৃদ্ধরা যে স্পন্দন ও উদ্দীপনা নিয়ে সিরাতে মুস্তাকিমের জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল, প্রাণের সেই ও উদ্দীপনা তাদের মাঝেও সৃষ্টি হয়েছে। এক মূর্খ কৃষককে আমি জিজ্ঞাসা করলাম- তোমরা এভাবে ঘুরে বেড়াও কেন? সে জবাব দিল- আমরা বর্বরতার গভীর আঁধারে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম, আল্লাহ সম্পর্কে আমাদের কোন খবর ছিল না। ছিল না রাসূল সম্পর্কে কোন জ্ঞান। এই মৌলভী সাহেবের [মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)] আল্লাহ মঙ্গল করুন। তিনি আমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। এখন আমরা চাই – যে অমূল্য সম্পদের সন্ধান আমরা পেয়েছি, তা আমাদের অন্যান্য ভাইদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে। কৃষকের কথাগুলো শুনে আমার চোখদুটো অশ্রুতে ভরে উঠল। এই জযবাই তো সাহাবী(রা.)দের ছিল। যাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা শিসাঢালা প্রাচীরসম দাঁড়িয়েছিলেন এবং এমনভাবে উঠে পড়ে লেগেছিলেন য, তাদের জান-মালের কোন খবরও ছিল না।
এই ধর্মীয় ইসলাহ(শুদ্ধি) মেওয়াতের গোত্রীয় বিক্ষপ্ততাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে, যা যুগযুগ দরে তাদের শক্তি সামর্থ ও সমাজকে কলুষিত করে রেখেছিল। গ্রামের এলাকাগুলোতে ধীরে ধীরে দ্বীনি জলসা শুরু হয়েছে। যাতে লোকেরা জমা হচ্ছে বিশ মাইল পঁচিশ মাইল দূর থেকে। সে মসজিদগুলোতে আট হাজার দশ হাজার লোকের সম্মিলন ঘটে। এক জায়গায় এক সাথে বসে তাঁরা দ্বীনের তা’লিম অর্জন করেন এবং সাথে সাথে ভুরে যান সকল প্রকার পারস্পরিক দ্বন্দ্ব। অত:পর গ্রাম্য এরাকা থেকে যে জামাত বের হয় তারা শুধু দ্বীনের তা’লিমই অর্জন করে না, সাথে সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক, ভ্রাতৃত্ব ও মহব্বতের বন্ধনও কায়েম করেন। এমনিভাবে গোত্রীয় বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে ধীরে ধীরে মজবুত হচ্ছে উম্মতের ঐক্য এবং এমন একটি ঐক্যের ভিত সেকানে রচিত হচ্ছে, যার দ্বারা পরবর্তীতে অনেক কিছুই করা সম্ভব। সংঘবদ্ধতার সারকথা এছাড়া আর কী হতে পারে যে, অসংখ্য মানুষ একই আওয়াজে একত্রিত হচ্ছে এবং একই আন্দোলন করে যাচ্ছে। এই কাজটাই সেখানে হচ্ছে এবং খুবই ব্যাপক আকারে হচ্ছে।
উক্ত উল্লেখযোগ্য ফলাফল হাতেগণা মাত্র ক’বছরে বেরিয়ে এসেছে। শুধুমাত্র একজন মুখলিস ব্যক্তির নিররস প্রচেষ্টা ও মেহনতের বদৌলতে। সেখানে নেই কোন কমিটি, নেই কোন চাঁদার ব্যবস্থা, নেই এ আন্দোলনের ভিন্ন কোন নাম, নেই কোন আমির, নেই- এর প্রচারণার জন্য কোন পত্র-পত্রিকা। না চলে তাদের মাঝে নিয়মিত প্যারেড, না দেখা যায় ইউনিফরম ও পতাকা প্রদর্শনীর কোন দৃশ্য। দেয়া হয় না এ কাজের জন্য কোন বিবৃতি। সরল সোজা সাধাসিধে এক মৌলভী সাহেব মসজিদে বসে শুধু কাজ করে যাচ্ছেন। পাশ্চাত্যের নিত্য-নতুন প্রচারণা, প্রদর্শনী পদ্ধতি তিনি মোটেও অনুসরণ করেন না। না এ কাজের জন্য পৃথিবীতে কোন ঢোল পিটানোর প্রয়োজন অনুভূত হয়েছে। এক খালেস দ্বীনি জযবার মাধ্যমে তারা কাজ করে যাচ্ছেন সার্বক্ষণিক ধ্যানের সাথে। এ কারণেই এ সকল মৌলভী নীরবতার সাথে যে কাজ করে যাচ্ছেন, তা আমাদের বড় বড় সংগঠন ও শক্তিশালি আন্দোলন দ্বারাও সম্ভব হচ্ছে না- যে সকল সংগঠনের নাম পত্র-পত্রিকায় প্রধান শিরোনামে দেখতে পাচ্ছেন।
বাস্তবিকপক্ষে এ ধরণের আন্দোলন হিন্দুস্তানের ইসলামি ইতিহাসে হযরত শাইখ আহমদ সেরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফে সানি(রহ.) শুরু করেছিলেন। আর হযরত মাওলানা ইলিয়াস(রহ.)কে দিয়ে আল্লাহ তা’আলা পুনরায় নতুন করে তার রূপ দেয়ার জন্য তৌফিক দিয়েছেন।
[পাঠক জেনে খুবই আশ্চর্য হবেন যে এই প্রবন্ধের রচয়িতা মওদুদি সাহেব। এই প্রবন্ধ সেই সময়ে লেখা যখন তিনি জামাতে ইসলামি প্রতিষ্ঠা করেননি।]
আলহামদুলিল্লাহ।
আশরাফ আলী থানভী এবং মুফতী শফী (রহঃ) , এনারাও তাবলীগ সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করেছেন কিন্তু তারা হযরত ইলিয়াস সাহেবের তরিকা অবলম্বন করেননি।
@মালেক_০০১,
লেখাটা দেবার উদ্দেশ্য তাবলিগ কাজ সম্পর্কে শুধু একটা ধারণা দেওয়া।
যা হোক কষ্ট করে এত বড় একটা লেখা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।(F)
@মালেক_০০১, আসল কাজটি হল, তাবলিগ (সত্যের পথে অন্যকে ডাকা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ) করা। সেটা যে ইলিয়াস (রহ.)-এর পদ্ধতিতে করতে হবে এমন কোন কথা আছে বলে আমার জানা নেই। যুগোপযোগী যে কোন পদ্ধতিতে করা যায়। আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর দাওয়াতুল হক ও এটি কাযর্কর পদ্ধতি।
হযরত মোজাদ্দেদ আল ফেসানী (রহ:) এর ইসলাহ পদ্ধতি এবং ইলিয়াস (রহ:) এর ইসলাহ পদ্ধতির মধ্যে অনেক ব্যবধান ।
তবে এটা ঠিক , মুটে , মজুর , অশিক্ষিত মানুষের মাঝে তারা যেমন কষ্ট করে ইসলামকে বুঝিয়ে থাকে সেটা প্রশংসার দাবীদার ।
@হাফিজ,
এখানে লেখক ইসলাহ বলতে সম্ভবত প্রচলিত ‘ইসলাহ’ বা ‘তাযকিরাহ’ বুঝাননি।
যাহোক তাবলিগ তরিকতের কোন পন্থা নয়।
আমার কাছে,
দাওয়াতের পদ্ধতি হিসেবে তাবলিগ পছন্দনীয়।
তালিমের পদ্ধতি হিসেবে দাওয়াতুল হক পছন্দনীয়।
তাযকিরার পদ্ধতি হিসেবে থানভী(রহ) এর সিলসিলাহ পছন্দনীয়।
@সাদাত,
দাওয়াতের পদ্ধতি হিসেবে তাবলিগ পছন্দনীয়।
তালিমের পদ্ধতি হিসেবে দাওয়াতুল হক পছন্দনীয়।
তাযকিরার পদ্ধতি হিসেবে থানভী(রহ) এর সিলসিলাহ পছন্দনীয়।
সুন্দর বলেছেন । তবে দাওয়াতুল হক কি বুঝলাম না ?
@হাফিজ,
এটাও এক ধরণের মেহনত।
আবরারুল হক(রহ) এই মেহনত চালু করেন। আমাদের দেশে খুব বেশি পরিচিত নয়।
এই মেহনতে মসজিদে মসজিদে ‘এক মিনিটের মাদ্রাস’ নামক কিতাব থেকে পড়া হয়।
মাসে একবার করে বিভিন্ন জায়গায় জোড় হয়। সেখানে অযু, নামায, আযান, ইকামাত এসবের প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং দেওয়া হয়।
@সাদাত,
ও ভালো কথা বিভিন্ন বাসায় বাসায় দ্বীনি আলোচনারও আয়োজন করা হয়।
বুযেটের হামিদুর রহমান স্যারও এ মেহনতের সাথে জড়িত। এই সাইটটা দেখেন।
http://annoor-bd.com/
RELIGIOUS PROGRAM এ যান, উনার সময়সূচী দেখতে পাবেন।
@হাফিজ,
দাওয়াতুল হক্ব নামক একটি জামাত গত কয়েকদিন আগে আমাদের এদিকে একটি মসজিদে মাহফিলের আয়োজন করেছিলো।
তাদের লিফলেটে দেখলাম বক্তাদের বেশীর ভাগই পীর ছিলেন। চরমোনাইয়ের পীরও এসেছিলেন সেখানে।
@দ্য মুসলিম,
চরমোনাইয়ের পীর যতদূর জানি দাওয়াতুল হকের সাথে যুক্ত নন।
দাওয়াতুল হকের সাথে আলেম উলামা বেশি যুক্ত থাকেন যাদের ভেতর অনেকেই আবরারুল হক(রহ.) এর খলিফা।
@হাফিজ,
সুফী তরিকা গুলি সম্পর্কে আপনার কি মতামত? যেমন চীশতীয়া কাদরিয়া? কারন আপনি কিছু তরিকা সম্পর্কে লেখেছেন? তরিকা গুলো কি বিদাত?
@ফুয়াদ, আমার যতদুর মনে পড়ে তরীকা নিয়ে আমি কিছু লেখি নাই । তবে এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ হয়ত লিখতেও পারি ।
@ফুয়াদ,
সুন্নাতপন্থী এবং বিদআতপন্থী উভয়টাই আছে। ঢালাওভাবে কমেন্ট করা সম্ভব না। যে তরিকতে বিদআত নেই, সুন্নাতের পাবন্দিই আসল উদ্দেশ্য সেটাই আসল তরিকত।
@সাদাত, সহমত।
মুসলানের বাহ্যিক আমলগুলোর যেগুলো চোখে দেখা যায় সেগুলোর নিয়ম-কানুন মাসআলা মাসায়িল যেটাতে শিক্ষা দেয়া হয় সেটা হোলো “ইলমে ফীকাহ” ।
আর আভ্যন্তরীন আমলগুলো যেগুলো চোখে দেখা যায় না যেমন ইখলাস , বিনয় , ধৈর্য অহংকার দূরীকরন সেগুলো যেটাতে শিক্ষা দেয়া হয় সেটা “ইলমে তাসাওফ” ।
এটা হোলো “ইলমে ফীকাহ” এবং “ইলমে তাসাওফ” এর সংজ্ঞা । সংজ্ঞা সবসময় থিওরীর পর্যায় পড়ে ।
আর ইলমে ফীকাহের প্রসিদ্ধ ৪টি পদ্ধতি বা Implementation হোলো “হানাফী” , “শাফেয়ী” , “মালেকী” , “হাম্বলী” ।
আর ইলমে তাসাওফের প্রসিদ্ধ ৪টি পদ্ধতি বা Implementation হোলো “কাদেরীয়া” , “চিশতিয়া” , “নকশবন্দীয়া” , “মোজাদ্দেদীয়া” ।
যেকোনোটার সাথে বিদআত , শিরক মিশ্রিত হলে সেটা নিষেধ হয়ে যাবে । মুল তাদের মধ্যে নাহক কিছু নেই ।
@হাফিজ,
প্রথমেতো বিদআতের সংজ্ঞা ঠিক করা দরকার।
আমি অনেক পীরকে দেখেছি যারা ক্বিয়াম করে থাকেন। অথচ তাদের অন্যান্য সকল আক্বীদা ভালো ছিলো।
আবার অনেকে ক্বিয়াম করেন না, কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নাবী সাঃ পালন করে থাকেন।
এভাবে বেশীর ভাগেরই একটা না একটা দিকে একটু সমস্যা আছে।
@দ্য মুসলিম,
বিদআতের সংজ্ঞা অনেকের কাছে পরিস্কার না । অনেকে মনে করে নতুন কিছু হলেই সেটা বিদআত । এটা ঠিক না । বুঝতে না পারার ভুল । বিদআতের সংজ্ঞা নিয়ে সাদাত ভাই এর পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে । তাই এখানে বিস্তারিত কিছু বললাম না ।
শুধু এটা জেনে রাখুন যেসকল আলেম বলেছেন “কোরআন হাদিস ইজমা কিয়াসে যেটার সমর্থন নেই সেটাই বিদআত” , আমি তাদের মত সমর্থন করি ।
@হাফিজ,
সেক্ষেত্রে ঈদ ই মিলাদুন্নাবী, মিলাদ, ক্বিয়াম করা এগুলো সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
এসবের পক্ষে কি আলেমগণের মত রয়েছে?
@দ্য মুসলিম,
আমি যেসব পীরকে ‘হক’ বলে জানি তারা এসব থেকে মুক্ত থাকেন এবং ঈদ ই মিলাদুন্নাবী, (প্রচলিত) মিলাদ, ক্বিয়াম-কে বিদআত হিসেবে বিবেচনা করেন।
@সাদাত,
তারমানে বিষয়টাকে এভাবে বলা যায়, যারা এসব করে থাকেন তাদের থেকে আমাদের বেঁচে থাকা দরকার?
বিশেষ করে ক্বিয়াম, মিলাদ, ঈদ-ই মিলাদুন্নাবী।
আপনি ঈদ-ই মিলাদুন্নাবী এর পাশে প্রচলিত শব্দটি উল্লেখ করলেন। এটা পালন করার স্বীকৃত কোন পদ্ধতি আছে কি?
@সাদাত,
সহমত।
পড়লাম। ভাল লাগল।
@তামীম,
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগল।
দেখুন, এই নিবন্ধটি তরজুমানুর কুরআনে যা ছাপা হয়েছিল, আল-ফুরকানে তার পুরোটা নেই। যতদুর জানি নিবন্ধের পরেরটুকু এবং শিরোনাম নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।