তথ্যসূত্র আবশ্যক
লিখেছেন: ' সাদাত' @ বুধবার, এপ্রিল ১৪, ২০১০ (১১:৫২ অপরাহ্ণ)
নিচের ঘটনাটা অনেকেরই জানা, আমি একটু সাজিয়ে লিখেছি। ঘটনাটার রেফারেন্স কারো জানা থাকলে বললে বড়ই উপকৃত হই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর লাশ চুরির অপচেষ্টা
সুলতান নুরুদ্দিন একজন ন্যায়পরায়ণ এবং মুত্তাকী বাদশাহ ছিলেন। রাতের অধিকাংশ সময় তাহাজ্জুদ এবং আজিফায় কাটিয়ে দিতেন। তার উজুর জামালুদ্দিন ও খুব নেককার লোক ছিলেন।
৫৫৭ হিজরির কথা। এক রাতে সুলতান নুরুদ্দিন একই স্বপ্ন তিনবার দেখেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুইজন নীল চক্ষুবিশিষ্ট লোকের দিকে ইশারা করে তাদের অনিষ্ট হতে তাকে হেফাযত করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
নুরুদ্দিনের ঘুম উবে গেল, তিনি খুব ঘাবড়ে গেলেন। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার ধৈর্য হলো না। তক্ষুনি জামালুদ্দিনকে ডেকে পাঠালেন, খুলে বললেন স্বপ্নের ঘটনা।
জামালউদ্দিন: হুজুর! এই স্বপ্ন আর কারো কাছে বর্ণনা করবেন না। চলুন এখনি মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই।
নুরুদ্দিন ২০ জন খাদেম এবং অনেক মালপত্রসহ জামালউদ্দিনকে নিয়ে দ্রুতগামী উটে করে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। ১৬ দিন পর মিশর হতে মদীনায় পৌছলেন।
জামালউদ্দিন ঘোষণা করে দিলেন: বাদশাহ নুরুদ্দিন রওজা যিয়ারত করতে এসেছেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলে তিনি দান খয়রাত করবেন।
দলে দলে মদীনাবাসী দান গ্রহণ করে গেল, কিন্তু বাদশাহ স্বপ্নের সেই দুই ব্যক্তির কোন সন্ধান পেলেন না। অবশেষে বাদশাহ খুজঁতে লাগলেন কারা কারা দান গ্রহণ করে নাই। অনেক অনুসন্ধানের পর দুইজন বিদেশি দরবেশের সন্ধান পেলেন।
নুরুদ্দিন : এই বিদেশি দরবেশ কি দুইজন আমার দান গ্রহণ করে নাই?
জনৈক মদীনাবাসী: উনারা কারো দান গ্রহণ করেন না, বরং উনারাই মদীনাবাসীকে অকাতরে দান করে থাকেন।
নুরুদ্দিন : তারা আর কী করেন?
জনৈক মদীনাবাসী: উনারা দরবেশ মানুষ, সারাদিন রোজা রাখেন, সারারাত এবাদত করেন। গরিব-দু:খীদের সাহায্য করেন। প্রতিদিন ‘জান্নাতুল বাকি’তে যান, প্রতি শনিবার মসজিদে কোবায় যান।
নুরুদ্দিন দরবেশ দু’জনকে ডেকে পাঠালেন। তাদের দেখেই নুরুদ্দিন চমকে উঠলেন। এতো সেই দুইজন যাদেরকে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন।
নুরুদ্দিন : আপনারা এখানে কেন এসেছেন, আর এখানে কী করেন?
প্রথম দরবেশ: আমরা হজ্জ্ব করতে এসেছি। এখন বাকি জীবন নবীজি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর প্রতিবেশি হয়ে কাটাবার নিয়্যত করেছি।
নুরুদ্দিন : সত্য কথা বলুন।
দ্বিতীয় দরবেশ: আমরা যা বলেছি, সত্যই বলেছি।
নুরুদ্দিন : আপনারা থাকেন কোথায়।
প্রথম দরবেশ: রওজা শরীফের পাশের এক রেবাতে।
নুরুদ্দিন: আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এখান থেকে কেউ যেন না নড়ে।
নুরুদ্দিন দরবেশদের বাসস্থানে গিয়ে খুব অনুসন্ধান চালালেন, কিন্তু কিছুই পেলেন না।
জনৈক মদীনাবাসী: আপনি কি দরবেশদেরকে কোন কারণে সন্দেহ করছেন? ইনারা খুবই নেককার লোক। সারাদিন রোজা রাখেন, সারারাত এবাদত করেন। গরিব-দু:খীদের সাহায্য করেন।
নুরুদ্দিনের সেদিকে খেয়াল নাই। তিনি খুঁজেই চলেছেন। হঠাৎ কী মনে করে তাদের চাটাইয়ের ওপর বিছানো জায়নামাযটা উঠালেন। দেখেন সেখানে একটা পাথর বিছানো। পাথরটা উঠাতেই দেখতে পেলেন একেবারে অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য! একটা সুরঙ্গ পথ। পথটা চলতে চলতে একবারে রওজার কাছাকাছি পর্যন্ত চলে গেছে। নুরুদ্দিন রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলেন। ফিরে এসে দরবেশ দুটোকে ইচ্ছামত পিটাই করলেন।
নুরুদ্দিন: সত্য করে বল, তোরা কারা? এখানে কী করিস?
দরবেশ দুটো এবার ভয়ে কাঁপতে লাগল। অপারগ হয়ে স্বীকার করল: আমরা আসলে খ্রিস্টান। খ্রিস্টান বাদশাহ আমাদের অনেক ধনসম্পদ দেবার ওয়াদা করে এখানে পাঠিয়েছেন, আমরা যেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর লাশ এখান খেকে উঠিয়ে নিয়ে যাই। রাতের বেলা আমরা সুরঙ্গ খনন করি, আর মাটিগুলো মশকে করে নিয়ে ‘জান্নাতুল বাকি’তে ফেলে আসি।
পুরো ঘটনায় মদীনাবাসী হতভম্ব হয়ে গেল। দরবেশরূপী ভন্ড দুটোকে শেষ করে দেওয়া হলো।
বাদশাহ নুরুদ্দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রওজা শরীফের দুই দিকে গভীর পরিখা খনন করে তা রাঙ সীসা গলিয়ে ভর্তি করে দিলেন, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ রওজা শরীফ পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে।
ছোট থাকতে আমিও শুনেছিলাম। কিন্তু সোর্স জানা নেই।
আমি যে বইয়ে পড়েছি সেটার নামঃ রওজা শরীফের ইতিকথা–মুহিউদ্দিন খান(সম্পাদক, মাসিক মদীনা)। এই বইটিতে ঘটনাটির রেফারেন্স যে বই থেকে দেওয়া হয়েছে সেটা হলঃ ওয়াফা আল-ওয়াফা (১ম খন্ড), মা’আলেমে দারুল হিজরা, পৃঃ১৪৬, জযবুল কুলুব।
“রওজা শরীফের ইতিকথা” বইটিতে আরও কিছু ঘটনা রেফারেন্সসহ বর্ণনা করা হয়েছে।
@মালেক_০০১, আরো একটি বইতে আছে “বিশ্বনবীর লাশ চুরি ও ইহুদী চক্রান্ত” লেখক: জিল্লুর রহমান নাদভী । আল এছহাক প্রকাশনী ।