লগইন রেজিস্ট্রেশন

মায়াজের রজম : অনুতাপের এক অসামান্য ঘটনা

লিখেছেন: ' সাদাত' @ সোমবার, মে ৯, ২০১১ (১২:২৩ অপরাহ্ণ)

[হাদিসে মায়াজ বিন মালিক(রা.) এর রজমের ঘটনাটি এসেছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এই ঘটনাটি বিভিন্ন হাদিসে খণ্ড খণ্ড ভাবে এসেছে। এই লেখায় বিভিন্ন হাদিস থেকে পুরো ঘটনাটির মোটামুটি একটি নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা পাবার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। অনেকের ধারণা ইসলাম যেন যিনাকারিদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে উন্মুখ হয়ে আছে।পুরো ঘটনাটি পড়লে সেই ধারণার ভুল অনেকাংশেই কেটে যাবে। ইসলামে বিবাহিত যিনাকারির জন্য রজমের শাস্তি আছে ঠিক, কিন্তু সেটা যতটা না বাস্তবায়ণের জন্য তার চেয়ে বেশি মানুষের ওপর একটা মনস্তাত্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য। যিনাকারি যদি তার যিনার কথা নিজের থেকে স্বীকার না করে রজমের শাস্তির প্রয়োগ প্রায় ৯৯.৯৯৯% অসম্ভব। তবে কি ধর্ষকরাও পার পেয়ে যাবে? না, মোটেও নয়। এটা নিয়ে ইনশাআল্লাহ আরেকটি লেখা দেব।]

মায়াজ বিন মালিক আসলাম গোত্রের লোক ছিলেন। [1]
তিনি হুজ্জাল এর আশ্রিত একজন এতীম ছিলেন। তিনি কোন এক গোত্রের একজন দাসীর সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। [2]

মায়াজ আবু বকর সিদ্দিকের(রা.) কাছে এলেন।

মায়াজ: আমি জিনা করেছি
আবু বকর: তুমি কি একথা অন্য কারো কাছে প্রকাশ করেছ?
মায়াজ: না
আবু বকর: তাহলে এটাকে আল্লাহর পর্দা দিয়ে ঢেকে দাও। আল্লাহ তার বান্দার তওবা কবুল করেন। [নোট: জিনার পাপ মোচনের জন্যই নিজেকে বিচারকের সামনে পেশ করা কোন জরুরী বিষয় নয়, বরং আন্তরিক তওবাই যথেষ্ট। পাপ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা অবশ্যই করা উচিত, কিন্তু কারো দ্বারা কোন পাপ যদি হয়েই যায়, ইসলাম চায় না সে নিজের থেকেই সেই পাপের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করুক।]

কিন্তু তার চিত্ত শান্ত হলো না, তিনি উমর বিন খাত্তাবের (রা.) কাছে গেলেন।

মায়াজ: আমি জিনা করেছি
উমর: তুমি কি একথা আমি ছাড়া কারো কাছে প্রকাশ করেছ?
মায়াজ: না
উমর: তাহলে এটাকে আল্লাহর পর্দা দিয়ে ঢেকে দাও। আল্লাহ তার বান্দার তওবা কবুল করেন।

তার চিত্ত এতেও শান্ত হলো না। [3]

[মায়াজ হুজ্জাল এর সাথে আলাপ করল]
হুজ্জাল: আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে যাও এবং তুমি যা করেছ তা তাকে জানাও, হয়ত তিনি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন। [4]

রাসূলুল্রাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে অবস্থানকালে মায়াজ তাঁর কাছে এলেন।
মায়াজ: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি জিনা করেছি।
নবীজী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে নিলেন। মায়াজ আবার সেই দিকে এলেন যেদিকে নবীজী মুখ করে ছিলেন।
মায়াজ: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি জিনা করেছি।
নবীজী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে নিলেন। মায়াজ আবার সেই দিকে এলেন যেদিকে নবীজী মুখ করে ছিলেন।
মায়াজ: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি জিনা করেছি।
নবীজী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে নিলেন। মায়াজ আবার সেই দিকে এলেন যেদিকে নবীজী মুখ করে ছিলেন।
মায়াজ: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি জিনা করেছি।
নবীজী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে নিলেন। মায়াজ আবার সেই দিকে এলেন যেদিকে নবীজী মুখ করে ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ(সা.): তুমি কি পাগল?
মায়াজ: না। [5]
রাসূলুল্লাহ(সা.): তুমি হয়ত চুমা দিয়েছে বা চেপে ধরেছ বা তাকিয়েছ।
মায়াজ: না।
রাসূলুল্লাহ(সা.): তুমি কি তার সাথে সঙ্গম করেছে?
মায়াজ: জ্বি। [6]
রাসূলুল্লাহ(সা.): তুমি কি সেটা এভাবে করেছ যে তোমার যৌনাঙ্গ তারটাতে প্রবেশ করেছে?
মায়াজ: জ্বি।
রাসূলুল্লাহ(সা.): তুমি কি এটা এভাবে করেছ যেভাবে সুরমাদানিতে সুরমার কাঠি ঢুকানো থাকে অথবা যেভাবে একটা দড়ি কূপে [ফেলে] রাখা হয়?
মায়াজ: জ্বি।
রাসূলুল্লাহ(সা.): তুমি কি জানো জিনা কী?
মায়াজ: জ্বি। আমি তার সাথে অবৈধভাবে তাই করেছি যা একজন পুরুষ বৈধভাবে তার স্ত্রীর সাথে করে থাকে। [ নোট: ইসলামি বিচারক জিনার দায় স্বীকারকারি ব্যক্তিকে রজমের শাস্তির দিকে ঠেলে না দেবার জন্য সচেষ্ট হবেন।]
রাসূলুল্লাহ(সা.): তুমি যা বলছ তার ভিত্তিতে তুমি কী চাও?
মায়াজ: আমি চাই যে আপনি আমাকে পবিত্র করুন। [7]
রাসূলুল্লাহ(সা.): এই লোকের কি এমন কোন ব্যধি আছে যা তার মনকে প্রভাবিত করে বা সে কি পাগল?
মায়াজের পরিবারের লোকজন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর কসম! সে সুস্থ।
রাসূলুল্লাহ(সা.): [সে কি] অবিবাহিত নাকি বিবাহিত?
মায়াজের পরিবারের লোকজন: বিবাহিত, ইয়া রাসূলুল্লাহ! [8]
রাসূলুল্লাহ(সা.): সে কি মদ খেয়েছে?
একজন লোক দাঁড়াল এবং তার শ্বাস শুঁকে দেখল, কিন্তু মদের কোন গন্ধ পেল না। [9]
রাসূলুল্লাহ(সা.): তাকে নিয়ে যাও এবং প্রস্তরাঘাতে হত্যা কর। [10]
রাসূলুল্লাহ(সা.): [হুজ্জালকে] তুমি যদি তাকে তোমার কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে, তবে সেটা তোমার জন্য ভালো হত।[11]

তাকে হাররাহ-তে নিয়ে যাওয়া হলো এবং যখন তাকে প্রস্তরাঘাত করা হচ্ছিল সে পাথরের আঘাত অনুভব করল এবং সহ্য করতে না পেরে পালাতে লাগল। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন উনাইস তাকে ধরে ফেললেন যদিও প্রস্তর নিক্ষেপকারিগণ তাকে ধরতে পারছিলেন না। তিনি তার প্রতি উটের সামনের পায়ের একটা হাড় নিক্ষেপ করলেন, যা তাকে আঘাত করল এবং তার মৃত্যু ঘটাল। তারা নবীজীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এসে এসব বর্ণনা করলেন।
রাসূলুল্লাহ(সা.): তোমরা তাকে একাকী ছেড়ে দিলে না কেন? হয়ত সে তওবা করত এবং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতেন। [12]

[নোট: আত্মস্বীকৃত জিনাকারি যেকোন মুহূর্তে তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করতে পারে, সেজন্য রজম স্থগিত হয়ে যাবে। এমন কি সে যদি মৌখিকভাবে স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার নাও করে, কিন্তু পালাবার চেষ্টা করে তবে সেটাকেও স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার হিসেবে গণ্য করতে হবে।]

নবীজী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে ভালো কিছু বললেন এবং জানাযার নামায পড়লেন। [13]
[রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপস্থিতিকে কিছু সাহাবী(রা.) মায়াজ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন]

জনৈক সাহাবী : এই লোককে দেখ যার দোষকে আল্লাহ গোপন করেছিলেন অথচ সে বিষয়টিকে সেভাবেই ছেড়ে দিল না, যার ফলশ্রুতিতে তাকে কুকুরের মত প্রস্তরাঘাত করা হল।

রাসূলুল্লাহ(সা.) কিছু বললেন না বরং কিছু সময় ধরে হাঁটতে থাকলেন যতক্ষণ না তিনি পাগুলো ঊর্ধ্বমুখ করা একটা মরা গাধার সামনে আসলেন।

রাসূলুল্লাহ(সা.): অমুক অমুক কোথায়?
জনৈক সাহাবী: আমরা এখানে, ইয়া রাসূলুল্লাহ(সা.)!
রাসূলুল্লাহ(সা.): নেমে যাও এবং এই মরা গাধার লাশ ভক্ষণ করো।
জনৈক সাহাবী: ইয়া রাসূলুল্লাহ(সা.)! কে এটা ভক্ষণ করতে পারে?
রাসূলুল্লাহ(সা.): এইমাত্র তোমরা তোমাদের ভাইয়ের প্রতি যে অসম্মান প্রদর্শন করেছ তা এর কিছু অংশ ভক্ষণ করা হতেও গুরুতর। সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সে এখন জান্নাতের নদীসমূহে সাঁতার কাটছে। [14]

লোকেরা মায়াজের ব্যাপারে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ল। [অনুমান করা যায়, অনেকেই তখনও মায়াজ(রা.) এর সম্পর্কে নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেসব ভালো কথা বলেছিলেন সেগুলো সকলেই জানতে পারেন নাই]
জনৈক সাহাবী: সে অকৃতকার্য হয়েছে কারণ তার পাপ তাকে ঘিরে রেখেছে।
অন্য একজন সাহাবী: মায়াজের তওবার চেয়ে উত্তম কোন তওবা হতে পারে না, কারণ সে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে তাঁর হাতে হাত রেখেছে বলেছে: আমাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করুন।

[দুই বা তিন দিন কেটে গেল..]
রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের(রা.) কাছে এলেন।
রাসূলুল্লাহ(সা.): মায়াজ বিন মালিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো।
সাহাবা(রা.): আল্লাহ মায়াজকে ক্ষমা করুন।
রাসূলুল্লাহ(সা.): সে (মায়াজ) এমন তওবা করেছে যে যদি তা কোন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত, তবে সেটা তাদের সকলের জন্য যথেষ্ট হয়ে যেত।[15]

Ref:
[1]Muslim Sharif : Book: 17, Chapter: 5, Number: 4202
[2]Abu Daud Book 38, Number 4405
[3] Malik’s Muatta Book 41, Number 41.1.2
[4]Abu Daud Book 38, Number 4405
[5] Bukhari Vol.7, Book 63, No.: 196
[6] Bukhari Vol.8, Book 82, No.: 813
[7] Abu Daud Book 38, Number 4414
[8] Malik’s Muatta Book 41, Number 41.1.2
[9] Muslim Sharif : Book: 17, Chapter: 5, Number: 4205
[10]Bukhari Vol.9, Book 89, No.: 280
[11] Abu Daud Book 38, Number 4364:
[12] Abu Daud Book 38, Number 4405
[13]Bukhari Vol.8, Book 82, No.: 810
[14] Abu Daud Book 38, Number 4414
[15] Muslim Sharif : Book: 17, Chapter: 5, Number: 4205

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৭৯৬ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৪.৭৫)

৫ টি মন্তব্য

  1. সাহাবায়ে কেরামের তাওবার নমুনা দেখে চোখে পানি এসে যায়। (আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট তারাও আল্লাহর উপর সন্তষ্ট)

  2. রজম বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক আরো লেখা আশা করি

  3. jena somporkea akti valo dharona holo abong ar panishment somporkea bestareto janlam .ja amar jbonkea provabetio korobe unnoto chintadharai.ai hades somporkey jane khub valo laglo….. (*) (Y) (F)