রোজার উদ্দেশ্য
লিখেছেন: ' bnislaam' @ মঙ্গলবার, অগাষ্ট ১৭, ২০১০ (২:৩১ অপরাহ্ণ)
মুসলিমদের প্রত্যেক ইবাদতের কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতা’আলা আশা করেন তার বান্দারা সে সমস্ত ইবাদত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুক, তা উপলব্ধি করুক এবং তা সফলভাবে পালন করুক। বিভিন্ন ইবাদাতের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোজা রাখা অর্থাৎ আল্লাহর জন্য অভুক্ত থাকা যা পালন করা হয় আরবী মাস রমজানে। এই মাসের অনেক গুলো উদ্দেশ্য আছে যা পালন করার জন্য অবশ্যই মুসলিমদের তাদের হৃদয় দিয়ে এবং ব্যবহারিকভাবে কার্যকর সংগ্রাম করতে হবে। উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো:
১। তাকওয়া অর্জন করা যা মানুষের মনে আল্লাহ ভীতি সৃষ্টি করে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া (পরহেযগারী) অর্জন করতে পার । [সুরা বাকারা (২): ১৮৩]
রোযা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। মূলত সকল ইবাদাহ এবং তাওহীদ তাকওয়া অর্জনের অবলম্বন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা তাকওয়া (পরহেযগারী) অর্জন করতে পারবে। [সুরা বাকারা (২): ২১]
২। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পুরস্কারের আশায়। বুখারী এবং মুসলিম উল্লেখ করেছেন, রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ
আল্লাহ সুবাহানাহু তা্যালা বলেছেনঃ আদম সন্তানের সকল ইবাদত তার নিজের জন্য, শুধুমাত্র রোযা ব্যতিত। রোযা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব।
রাসুল (সঃ) আরও বলেছেনঃ
রোযার কারনে মানুষ দুটি খুশীর মুহুর্ত পায়, যখন সে রোযা শেষে ইফতার করে তখন, এবং যখন সে তার প্রভুর সাথে মিলিত হয় শুধু মাত্র তার রোযার কারনে। [বুখারি এবং মুসলিম]
এই হাদীসের প্রেক্ষিতে বোঝা যায় — যখন রোযাদার রোযা শেষে ইফতার করে তখন সে অনেক খুশী হয় । ইমাম মুসলিম সংযোজন করেন “রোজা শেষ হওয়ার কারনে”। ইমাম করতুবির মতে খুশীর কারন হচ্ছে তখন তার ক্ষুধা এবং তৃষ্ণার অবসান ঘটে এবং তখন তার ইফতারের জন্য কোন বাধা থাকে না; এই খুশী হচ্ছে প্রাকৃতিক। পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে — রোযাদার খুশী হয় এজন্য যে, সে তার রোযা পরিপূর্ন করতে পেরেছে এবং সে সর্বোচ্চ সীমায় দ্বীনের বিধান পালন করতে পেরেছে। যখন সে তার প্রভুর সাথে মিলিত হবে তখন সে খুশী হবে কারণ তার প্রভু থাকে তার রোযার কারনে উত্তমভাবে পুরুষ্কৃত করবেন।
৩। রোযা আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে, আল্লাহতায়ালার বাধ্য থাকার অভ্যাস অর্জনে করতে সাহায্য করে এবং আমাদের হৃদয়ের অনাকাংখিত (পাপপূর্ণ) ইচ্ছাকে চূর্ণ করে দেয়। রোযা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় কিভাবে নফসের অবাঞ্চিত ইচ্ছাকে সংযত করা যায়, এবং সাহায্য করে আল্লাহ তায়ালার বাধ্য থাকার প্রচেষ্টায়। শয়তান খুব শক্ত ভাবে আমাদের অন্তরকে আঁকড়ে ধরে রাখে তার ইচ্ছাকে পরিপুর্ণ করার চেষ্টায় এবং তার বাধ্য থাকার জন্য।
৪। জাহান্নামের আগুণ থেকে বেঁচে থাকা । রাসুল (সা:) বলেছেনঃ
আল্লাহ অনেক পাপীষ্টকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন এবং প্রতিরাতে এটি সম্পাদিত হয় (অর্থাৎ রমযানের প্রতিরাতে) [আত-তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ ]
রাসুল (সা:) বলেছেনঃ
রোযা এবং কুরআন বান্দাদের পক্ষে সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে আমার প্রভু আমি তাকে দিনের খাবার থেকে বিরত রেখেছি এবং তোমার বাধ্য থাকার জন্য সাহায্য করেছি। তুমি আমার মতামত কে তার জন্য গ্রহন কর, এবং কুরআন বলবে আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তুমি আমার মতামত কে তার জন্য গ্রহন কর, এবং তারা উভয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহনযোগ্য হবে। (আহমাদ, হাকীম এবং বায়হাকি)
৫। কৃত পাপের ক্ষমালাভঃ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে, রোযার মাধ্যমে পাপের ক্ষমা পাওয়া যায় এবং রোযা আমাদের পাপকে মুছে দেয়। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা থেকে আর এক জুমা এবং এক রমযান থেকে আর এক রমযান, এইগুলি দুইয়ের মাঝখানে যে পাপ হয় [অর্থাৎ দুই ইবাদতের মধ্যবর্তী পাপসমূহ] তা মুছে দেয়, যদি বড় পাপগুলো (কবীরা গুণাহ) এড়িয়ে চলে”। (মুসলিম)
তিনি (সাঃ) আরো বলেছেনঃ
যে কেউ রমযানের রোযা রাখে বিশ্বাসের সাথে, তার পুর্ববতী গুণাহসমূহ আল্লাহতায়ালা মাফ করে দেন। (আল বুখারী ও মুসলিম)
ইমাম আহমদ এবং নাসাঈর সংগৃহিত হাদিসে অতিরিক্ত এও বলা হয়েছে : “[রমযানের] পরের কোন পাপও ক্ষমা করে দেয়া হবে । বিশ্বাসের সাথে রোযা রাখা ও আল্লাহ তায়ালার অনুগত থাকা এবং রমযানের রোযা রাখা অনিবার্য। রোযা রাখতে হবে পুরষ্কারের আশায়। অতএব শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রোযা রাখতে হবে। কখনো অন্য মানুষকে অনুসরণ করে এবং অন্যদের দেখানোর জন্য রোযা রাখা সঙ্গত নয়।
ধন্যবাদ , পোস্টের জন্য ।
@হাফিজঃ জাযাকাল্লাহ খাইর।