হাদিস শিক্ষা – ৩।
লিখেছেন: ' দেশী৪৩২' @ শুক্রবার, এপ্রিল ২, ২০১০ (৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
১।খাঁটি মুনাফেকের স্বভাব
.আব্দুল্লাহ্ বিন আমর বিন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনমা বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যার মধ্যে চারটি অভ্যাস বিদ্যমান সে খাঁটি মোনাফেক। আর যার মধ্যে এগুলোর একটি অভ্যাস থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মোনাফেকীর একটি স্বভাব থাকে। (১) তার কাছে আমানত রাখা হলে সে তার খেয়ানত করে (২) কথা বললে মিথ্যা বলে (৩) চুক্তি করলে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং (৪) ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে।” [বুখারী: ৩৪, মুসলিম: ৫৮]
২।চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না
.হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” [মুত্তাফাকুন 'আলাইহি, বুখারী: ৬০৫৬, মুসলিম: ১০৫] নোট- গোলযোগ সৃষ্টি বা মানুষের মধ্যের পারস্পরিক কলহ-দ্বন্ধ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একের কথা অন্যকে বলা বা লাগানি-ভাঙ্গানী করাকে চোগলী বলা হয় আর যে ব্যক্তি এমন নিকৃষ্ট কাজ করে থাকে তাকে চোগলখোর বলা হয়।
৩।দু’মুখো ব্যক্তি সর্বনিকৃষ্ট
.আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা মানব জাতিকে খনির মত পাবে। তাদের মধ্যে (ইসলাম গ্রহণের পূর্বে) জাহেলী যামানায় যারা সর্বোত্তম, ইসলামেও তারা সর্বোত্তম। তবে শর্ত হলো যদি তারা (ইসলামী) জ্ঞান অর্জন করে। আর তোমরা তাদের মধ্যে (ইসলামের) এ নেতৃত্বের যে আসনে সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসেবে তাকেই পাবে, যে (পূর্বে) ইসলামের ঘোর দুশমন ছিল। আর মানুষের মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই দ্বিমুখী ব্যক্তিকেই পাবে, যে এক বেশে এদের কাছে আসে এবং আরেক বেশে অন্যদের কাছে যায়।” [মুত্তাফাকুন 'আলাইহি, বুখারী: ৩৪৯৩, মুসলিম: ২৫২৬] ৪. মৃতের জন্য মর্সিয়া-ক্রন্দন, গাল-বুক চাপড়ানো, কাপড় ছেঁড়া হারাম
.আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়, বুকের কাপড় ছেঁড়ে এবং জাহেলী যুগের রীতি অনুযায়ী চিৎকার করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” [মুত্তাফাকুন 'আলাইহি, বুখারী: ১২৯৪, মুসলিম: ১০৩]
৫.শ্রমার্জিত আয় সর্বোত্তম
.মিকদাদ বিন মা’দীকারিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কখনো কেউ তার হাতের কামাইয়ের চেয়ে উত্তম খাদ্য খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ ‘আলাইহিস্ সালাম স্বহস্তে রোজগার করে খেতেন।” [বুখারী: ২০৭২]
৬.প্রচেষ্টা, সংগ্রাম, সাধনা
.আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রব্ব-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ বলেন: বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে এক বাহু পরিমাণ অগ্রসর হই। সে যখন আমার দিকে এক বাহু পরিমাণ এগিয়ে আসে, আমি তখন তার দিক দু’বাহু পরিমাণ অগ্রসর হই। বান্দা যখন আমার কাছে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।” [বুখারী: ৭৫৩৬]
৭.উচুমনা ব্যক্তিঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কেয়ামতের দিন মহান ও পরাক্রমশালী প্রতিপালক বলবেন, “আজ শীঘ্রই হাশরের ময়দানে সমবেতগণ জানতে পারবে কে উচুমনা।” বলা হল, “হে আল্লাহ্র রাসূল! কে সে উচুমনা ব্যক্তি?” তিনি বললেন, “মসজিদ সমূহে আল্লাহর যিকিরের মজলিসে অংশগ্রহণকারীগণ।”এ হাদীসটি আহমদ ও আবূ ইয়ালা আবূ সাঈদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮।বিশ্বাসঘাতক আল্লাহর প্রতিপক্ষ
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ্ বলেন: কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব। যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা ও চুক্তি করে তা ভঙ্গ করেছে, যে ব্যক্তি মুক্ত-স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করেছে এবং যে ব্যক্তি কাউকে মজুর নিয়োগ করে পুরোপুরি কাজ আদায় করে নিয়েছে কিন্তু তাকে মজুরী প্রদান করেনি।” [বুখারী: ২২২৭]
.আব্দুল্লাহ্ বিন আমর বিন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনমা বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যার মধ্যে চারটি অভ্যাস বিদ্যমান সে খাঁটি মোনাফেক। আর যার মধ্যে এগুলোর একটি অভ্যাস থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মোনাফেকীর একটি স্বভাব থাকে। (১) তার কাছে আমানত রাখা হলে সে তার খেয়ানত করে (২) কথা বললে মিথ্যা বলে (৩) চুক্তি করলে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং (৪) ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে।” [বুখারী: ৩৪, মুসলিম: ৫৮]
আল্লাহ পাক আমাদের এ সকল খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন। আমিন।
@দ্য মুসলিম, আমিন