তাফসীরে মাযহারী থেকে সুরা বাক্বারার ২৬৫ আয়াতের তাফসির ।
লিখেছেন: ' দেশী৪৩২' @ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৭, ২০১০ (৩:২৬ পূর্বাহ্ণ)
وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاء مَرْضَاتِ اللّهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ وَاللّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ 265
”যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।”
তাফসিরঃ-
ঐ সম্পদই আপন সম্পদ যা আখেরাতে কাজে আসে।এ ছারা সব সপ্দদই ধ্বংসশীল।হজরত ইবনে মাসউদ(রাঃ) বর্ননা করেন ,রাসুল পাক (সাঃ) বলেছেন,কোন সম্পদ তোমাদের বেশী প্রিয় ? আপন সম্পদ না উত্তরাধীকারীদের সম্পদ । সাহাবী (রাঃ) গন আরজ করলেন আপন সম্পদ।রাসুল পাক (সাঃ) বললেন, তোমাদের আপন সম্পদ ঐগুলিই ,যে গুলি তোমরা আখেরাতের জন্য জমা করেছো।আর যা পিছনে ফেলে যাবে তাতো উত্তরাধীকারীদের।(বোখারী)।
হজরত আয়েশা রাঃ বর্ননা করেন,লোকেরা একটি বকরি জবেহ করলো।(খাওয়ার পর) রাসুল পাক (সাঃ) বলেলেন,কতটুকু বাকি রইল ? সাহাবা রাঃ গন আরজ করলেন ,কেবল সীনা। অন্য কিছু নেই।রাসুল পাক (সাঃ) বললেন,বরং বলো সীনা বাদে সবই বাকী রয়েছে।অর্থাৎ সীনার সওয়াবই কেবল জমা হয়নি,বাকী গোশতের সওয়াব জমা হয়ে গিয়েছে। (তিরমিজি)
সম্পদ জীবনের পাথেয়।যে ব্যাক্তি আল্লাহতাআলার সন্তোস লাভের জন্য সম্পদ ব্যয় করে, তার ইমান আত্নিকশক্তি সম্পন্ন।আর যে ,জীবন ও সম্পদ দুটিই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে ষে তার অস্তিত্বের সমস্ত শক্তি ইমানের উপরে প্রতিষ্টিত করে।
বয়হাকি লিখেছেন।এই আয়াতে এই নির্দেশনা রয়েছে যে,আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়, কৃপনতা ও সম্পদপৃতি থেকে নফসকে পবিত্র করে।আমি বলি ইমাম আবু হানিফা রাঃ বলেছেন,অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সম্পদের উপর জাকাত ওয়াজিব নয়।অভিবাবকগন তাদের পক্ষ থেকে জাকাত আদায় করবেন।কারন,আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার মাধ্যমে সম্পদশালীর পরীক্ষা নেয়া হয়।পরীক্ষা নেয়া হয়- অন্তরে আল্লাহর নির্দেশপ্রীতি না সম্পদ প্রীতি, কোনটা প্রবল।শিশুদের পক্ষে অভিবাবকগনের ব্যয় করা এই উদ্দেশ্যকে পুর্ন করে।
”উচ্চ ভুমি” অর্থ উচু সমতল স্হান।যেখানে নহর প্রবাহিত হয়।যার দুই তীর নহর থেকে উচুও নয় নীচুও নয়।জমি উচু কিন্তু পানি নীচু এমন বাগান সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে।এমন বাগানে বৃষ্টি না হলে যতোটুকু ফল জন্মে বৃষ্টি হলে জন্মে তার দ্বিগুন।বৃষ্টিপাত কমবেশী হলেও এ রকম বাগানে ফসলের ফলন ব্যাহত হয় না।আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারীর অবস্হা এ রকম বাগানের মত।অল্প বৃষ্টিতেও ফসল জন্মে,আর বেশী বৃষ্টিতে জন্মে আরো বেশী।ইমানদারগনের আমলও তেমনি।আমলের বিনিময়তো থাকবেই।কখনো কখনো আল্লার ইচ্ছায় দ্বিগুনও হয়ে যাবে।
আল্লাহতাআলা ‘সম্যক দ্রষ্টা’,তিনি দুদলেরই অবস্হাই দেখেন।দেখেন ,ঐ দলকে যারা লোক দেখানো ব্যয় করে।ঐ দলকেও যাদের মূলে থাকে আ্ল্লাহর সন্তোষ অর্জনের ঐকান্তিকতা।
—————————————————————————————————
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاء وَاللّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلاً وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ 268
”শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।” সুরা বাক্বারা-২৬৮।