আমলে সালেহ’ ।
লিখেছেন: ' দেশী৪৩২' @ সোমবার, জুলাই ২৬, ২০১০ (৭:০৫ অপরাহ্ণ)
وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا ۙ قَالُوا هَـٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا ۖ وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ
অর্থ: যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তাদের সুসংবাদ দাও যে : তাদের জন্যে রয়েছে উদ্যান আর বাগবাগিচা, সেগুলোর নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ-নদী ঝর্ণাধারা। আর তাদের জন্যে সেখানে থাকবে অনাবিল পবিত্র জুড়ি। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ২৫)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُم بِإِيمَانِهِمْ ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ
অর্থ: যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদের প্রভু তাদের ঈমানের ভিত্তিতে তাদের পরিচালিত করেন জান্নাতুন নায়ীম-এর দিকে, যেগুলোর নিচে দিয়ে থাকবে বহমান নদ-নদী ঝর্ণাধারা। (সূরা ১০ ইউনুস : আয়াত ৯)
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ۙ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ
অর্থ: যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন ক্ষমার এবং মহা পুরস্কারের। (সূরা ৫ আল মায়িদা : আয়াত ৯)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا
অর্থ: যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদের আপ্যায়ন করার জন্যে রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে থাকবে তারা চিরদিন। সেখান থেকে তারা স্থানান্তর হতে চাইবেনা কখনো। (সূরা ১৮কাহ্ফ : আয়াত ১০৭-১০৮)
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا
অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন, তিনি অবশ্যি তাদের পৃথিবীতে খিলাফত (রাষ্ট্র ক্ষমতা) দান করবেন, যেমনিভাবে খিলাফত দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তী লোকদের; তিনি প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন তাদের মনোনীত পছন্দের দীনকে, তাদের ভয়ভীতি ও আতংকের পরিবেশকে বদল করে তাদের প্রদান করবেন নিরাপত্তার পরিবেশ। (সূরা ২৪ আন নূর : আয়াত ৫৫)
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَحْسَنَ الَّذِي كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থ: যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, আমি অবশ্যি মিটিয়ে (মুছে) দেবো তাদের সমস্ত মন্দকর্ম এবং তাদের প্রতিফল দেবো তাদের উত্তম কর্মের ভিত্তিতে। (সূরা ২৯ আনকাবুত : আয়াত ৭)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَـٰئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
অর্থ: যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। (৯৮:৭)
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
অর্থ: আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে (We created man in the best stature)। তারপর তাকে নামিয়ে দিই নিচুদের চেয়েও নিচে; তবে তাদেরকে নয়, যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে। তাদের জন্যে তো রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। (সূরা ৯৫ আত তীন : আয়াত ৪-৬)
إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
অর্থ: নিশ্চয়ই মানুষ নিশ্চিত ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, তবে তারা নয়, যারা ঈমান আনে, আমলে সালেহ্ করে আর যারা পরস্পরকে সত্য ও ন্যায়ের উপদেশ দেয় এবং (এর উপর) দৃঢ়তা অবলম্বনের জন্যে অসিয়ত করে। (১০৩ : ২-৩)
অনুরূপ আয়াত আরো অনেক রয়েছে আল কুরআনে। এখানে কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করলাম।
০৪. আমলে সালেহ্ মানে কি?
মহান আল্লাহর বাণী থেকে একথা পরিষ্কার হয়ে গেলো, চিরক্ষতি ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া, ক্ষমা লাভ, চিরন্তন সাফল্য ও জান্নাতের সৌভাগ্য অর্জন করা, পৃথিবীর প্রতিনিধিত্বের কর্তৃত্ব লাভ করা, দীন প্রতিষ্ঠিত করা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করার পূর্বশর্ত হলো ‘ঈমান ও আমলে সালেহ্’। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমলে সালেহ্ মানে কি? কী এর মর্ম ও তাৎপর্য?
আমরা জানি ‘আমল’ (عمل) মানে- কর্ম ও আচরণ। তাহলে ‘আমলে সালেহ’র মানে কী দাড়ায়? মূলত আমলে সালেহ্ মানে সেই সব কর্ম ও আচরণ যা صَلَحَ শব্দ মূলের অর্থের মধ্যে এবং صَلَحَ থেকে গঠিত শব্দ সমূহের মর্মের মধ্যে নিহিত রয়েছে। উপরে বর্ণিত আভিধানিক অর্থের আলোকে আমরা বলতে পারি, ‘আমলে সালেহ্’ মানে- সেইসব কর্ম ও আচরণ, যা ভালো, উত্তম, উৎকৃষ্ট, সৎ, সঠিক, যথার্থ, গ্রহণযোগ্য, আল্লাহ নির্দেশিত, সর্বজন স্বীকৃত ন্যায্য ও বাস্তব।
আমলে সালেহ্ মানে- শান্তি, শান্তি স্থাপন, সমঝোতা স্থাপন, মিলে মিশে চলা, নিষ্পত্তি করে নেয়া। মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। সমঝোতা করে চলা, সন্ধি স্থাপন করা। মীমাংসা করে নেয়া। সংযমশীল হওয়া।
আমলে সালেহ্ মানে- যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও উপযুক্ততা অর্জন করা, যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের কাজ করা, নিজেকে যোগ্য, প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত বানানোর কাজ করা। ধারণ ক্ষমতা ও সক্ষমতা অর্জন করা।
আমলে সালেহ্ মানে সেইসব কাজ- যা উপকারী, সাহায্যকারী, কল্যাণকর, উন্নতিদানকারী; যা সুবিধাদানকারী, ফলদায়ক, লাভজনক।
আমলে সালেহ্ অর্থ- সংস্কার, সংশোধন, পরিমার্জন, পুননির্মাণ, পুণর্বহাল, পুনর্মিলন, নিরাময়, খাদ পরিশোধন ও পরিশুদ্ধির কাজ করা।
আমলে সালেহ্ মানে- পরামর্শ করে কাজ করা, উপদেশ গ্রহণ করা, স্বীকৃত পন্থায় কাজ করা।
আমলে সালেহ্ মানে- ভদ্র, সৌজন্য মূলক এবং সুন্দর ও চমৎকার আচরণ করা।
০৭. আমলে সালেহ’র বিবরণ
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদে আমলে সালেহ্র তালিকা প্রদান করেননি। আল্লাহ্র রসূল সা. মানুষকে কুরআন বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সামগ্রিক কর্ম ও বাণীতে আমলে সালেহ্র পরিচয় পেশ করেছেন। নিজেকে আমলে সালেহ’র মডেল (নমুনা) হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সাহাবায়ে কিরামকে গড়ে তুলেছেন সেই মডেলের আদলে। তিনি আমলে সালেহ’র ধারাবাহিক কোনো তালিকা আমাদের দিয়ে যাননি। তবে তাঁর বাণীতে ব্যাপকভাবে আমলে সালেহ’র কথা উল্লেখ আছে।
উপরে আমরা ঈমানের শাখা প্রশাখা সংক্রান্ত যে হাদিসটি উল্লেখ করেছি, তাতে ঈমানের শাখার সংখ্যা ষাটের বা সত্তরের অধিক বলা হলেও এর অর্থ ‘অনেক’। অর্থাৎ ঈমানের শাখা প্রশাখা অনেক।
বিভিন্ন হাদিসে দেখা যায়, রসূলুল্লাহ সা. বিভিন্ন কাজকে ঈমানের অঙ্গ এবং শাখা প্রশাখা বলে উল্লেখ করেছেন।
এজন্যে আমরা দেখতে পাই, অতীতের হাদিস বিশেষজ্ঞগণ কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে ঈমানের শাখা প্রশাখা তথা আমলে সালেহ’র তালিকাও প্রণয়ন করেছেন। ইমাম বায়হাকি এবং সহীহ বুখারির খ্যাতনামা ব্যাখ্যাতা আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি তাদের গ্রন্থে এ তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন।
ইমাম ইবনে হাজর আসকালানি’র মতে ঈমানের শাখা সমূহ সম্প্রসারিত হয়েছে:
১. মানুষের অন্তরের আমলের মধ্যে (২২টি);
২. মানুষের যবানি (মৌখিক) আমলের মধ্যে (৭টি);
৩. মানুষের শারিরিক আমল বা বাস্তব কর্মের মধ্যে (৩৮টি)। মোট ৬৭টি।
তিনি মানুষের শারিরিক আমল বা বাস্তব কর্ম সমূহকে পুনরায় তিনভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলো হলো:
১. মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে জড়িত আমল,
২.পারিবারিক ও বংশীয় জীবনের সাথে সম্পর্কিত আমল,
৩. দলীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সাথে জড়িত আমল।
তবে হাদিসে উল্লেখিত সংখ্যা মূলত আধিক্য বুঝানোর জন্যেই ব্যবহৃত হয়েছে। তাই বাস্তবে ঈমানের শাখা সমূহ আরো অনেক বেশি। যেমন- হাদিসে আল্লাহ তায়ালার সুন্দর নামসমূহের সংখ্যা উল্লেখ হয়েছে এক কম একশত বা নিরানব্বই। বর্ণনাকারীগণ নিরানব্বইটি নামের তালিকাও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু বাস্তবে আল্লাহর সুন্দর নাম সমূহের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এমনকি বিভিন্ন বর্ণনাকারীর বর্ণিত তালিকা সমন্বিত করলে সেগুলোর সংখ্যাও দেড় শতের কাছাকাছি দাঁড়ায়।
আমরা এখানে আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানির শ্রেণী বিভাগ অনুযায়ী আমলে সালেহ্ বা ঈমানের শাখা প্রশাখা সমূহের একটি তালিকা পেশ করছি। তবে তাঁর উল্লেখিত সংখ্যাগুলোর তুলনায় আমাদের উদ্ধৃত সংখ্যা বেশি হলে তাতে দোষের কিছু নেই। কারণ, আমরা কুরআন হাদিসের ভিত্তিতেই এ তালিকা উল্লেখ করছি। তবে এ তালিকাকে বা কোনো তালিকাকেই চূড়ান্ত তালিকা মনে করা যাবেনা। কারণ, কুরআন হাদিসের গবেষণার ভিত্তিতে তালিকা অবশ্যি দীর্ঘায়িত হতে পারে।
০৮. অন্তরের ঈমানি আমল বা আমলে সালেহ্ সমূহ:
০১. আল্লাহর প্রতি ঈমান। এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর অস্তিত্ব, এককত্ব, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারের প্রতি ঈমান।
০২. আখিরাতের প্রতি ঈমান। এর মধ্যে রয়েছে : পুনরুত্থান, হাশর, হিসাব, বিচার, সিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম।
০৩. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান।
০৪. কুরআনের প্রতি ঈমান। পূর্বে অবতীর্ণ আল্লাহর কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান। হিদায়াত গ্রহণ করতে হবে শুধুমাত্র কুরআন থেকে -এ কথার প্রতি ঈমান।
০৫. মুহাম্মদ সা.-এর নবুয়্যত ও রিসালাতের প্রতি ঈমান। এর মধ্যে রয়েছে : মুহাম্মদ সা. সর্বশেষ নবী ও রসূল -এ কথার প্রতি ঈমান। অনুসরণ করতে হবে শুধুমাত্র মুহাম্মদ সা.-কে,- এ কথার প্রতি ঈমান।
০৬. মুহাম্মদ সা.-এর পূর্বে প্রেরিত নবী ও রসূলগণের প্রতি ঈমান।
০৭. তকদির-এর প্রতি ঈমান। আল্লাহর ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।
০৮. আল্লাহ্র প্রতি সর্বাধিক ভালোবাসা পোষণ। আল্লাহ্র উপর তাওয়াক্কুল করা।
০৯. আল্লাহকে ভয় করা। আল্লাহ্র প্রতি সুধারণা পোষণ করা।
১০. সকল কাজ আল্লাহ’র জন্যে করা, আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা।
১১. আল্লাহ’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাউকেও ভালোবাসা।
১২. আল্লাহ’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কারো সাথে শত্রু তা করা।
১৩. আখিরাতের সাফল্য অর্জনের সংকল্প নিয়ে কাজ করা।
১৪. আল্লাহর অনুগ্রহ এবং রহমতের আশা পোষণ করা।
১৫. ঈমান ও আমলের ইখলাস অর্থাৎ আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠাতা ।
১৬. মুহাম্মদ সা- কে সর্বোত্তম আদর্শ বা নমুনা (মডেল) হিসাবে গ্রহণ করা।
১৭. মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.- এর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা।
১৮. আল্লাহর প্রতি এবং রসূল সা.-এর প্রতি আনুগত্য। এছাড়াও আল্লাহ্র নির্দেশিতদের প্রতি আনুগত্য।
১৯. সবর, ধৈর্য, কৃতজ্ঞতাবোধ (সবর ও শোকর)।
২০. দয়া, করুণা. সহানুভূতি।
২১. বিনয়। যেমন- অহংকার বর্জন, হিংসা না করা, ক্ষতি সাধনের সংকল্প না করা, নিজ মতকে অগ্রাধিকার না দেয়া।
২২. আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহর কাছে কামনা ও প্রার্থনা করা।
২৩. দীনের উপর অটল থাকা।
২৪. কুরআনের প্রতি সম্মান, মর্যাদা ও ভালোবাসা পোষণ করা।
২৫. ভালো কাজে আনন্দ ও মন্দ কাজে মর্মপীড়া অনুভব করা।
২৬. তওবা করা (অন্যায়, অপরাধ ও পাপকাজের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া)।
২৭. আত্মসম্মানবোধ।
২৮. লজ্জাশীলতা।
২৯. দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা।
৩০. নিজের জন্যে যা পছন্দ অপরের জন্যে তাই পছন্দ করা।
৩১. মুসলিমদের কল্যাণ কামনা করা।
৩২. শয়তানকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ।
৩৩. মুমিনদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা।
০৯. যবানের (মৌখিক) ঈমানি আমল বা আমলে সালেহ্ সমূহ:
০১. আল্লাহর একত্ব ও মুহাম্মদ সা.-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান (শাহাদাহ্)।
০২. ইলম অর্জন করা।
০৩. কুরআন পাঠ ও অধ্যয়ন করা।
০৪. আল্লাহর যিকর করা। তাঁর তসবীহ ও প্রশংসা প্রকাশ করা।
০৫. আল্লাহর কাছে চাওয়া, আল্লাহকে ডাকা।
০৬. আল্লাহর দিকে ডাকা। দাওয়াত দান করা।
০৭. শিক্ষা দান করা।
০৮. ক্ষমা প্রার্থনা করা (ইস্তিগফার)।
০৯. নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়া।
১০. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
১১. উত্তম ও সুন্দর কথা বলা।
১২. সত্য কথা বলা।
১৩. ন্যায় কথা বলা।
১৪. বেহুদা কথা থেকে বিরত থাকা।
১৫. অশ্লীল কথা থেকে বিরত থাকা।
১০. শারিরিক বা বাস্তব আমলে সালেহ্ সমূহ : ব্যক্তিগত জীবনে
০১. মানসিক ও শারিরিক পবিত্রতা অর্জন করা।
০২. গোপন অংগ সমূহ ঢেকে রাখা (সতর করা)।
০৩. সালাত আদায় করা (ফরয, নফল)।
০৪. যাকাত পরিশোধ করা।
০৫. রোযা রাখা (ফরয, নফল)।
০৬. হজ্জ করা।
০৭. উমরা করা।
০৮. কা’বা ঘর তাওয়াফ করা।
০৯. দান সদকা করা।
১০. হাসি মুখে কথা বলা।
১১. মান্নত পূর্ণ করা।
১২. কাফফারা আদায় করা।
১৩. ই’তেকাফ করা।
১৪. দাস মুক্ত করা।
১৫. লাইলাতুল কদর-এর সন্ধানে রাত জাগা।
১৬. নিজ দীনের হিফাযত করা (প্রয়োজনে হিজরত করা)।
১৭. নিখাঁদ ঈমান প্রমাণ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
১৮. প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা।
১৯. আমানত রক্ষা করা।
২০. হালাল পানাহার করা।
২১. হারাম বর্জন করা।
২২. লজ্জাস্থানের হিফাযত করা। অশ্লীলতা বর্জন করা।
২৩. হিজাব করা।
২৪. উত্তম চরিত্র অর্জন করা।
২৫. সকল ভালো কাজ আল্লাহর নাম নিয়ে আরম্ভ করা।
১১. বাস্তব আমলে সালেহ্ সমূহ : পারিবারিক জীবনে
০১. বিয়ে শাদী করে পবিত্র জীবন যাপন করা।
০২. স্ত্রীর মোহরানা আদায় করা।
০৩. স্বামীর হক আদায় করা।
০৪. স্ত্রীর হক আদায় করা।
০৫. পিতা মাতার প্রতি ইহসান করা (সর্বোত্তম আচরণ করা)। তাদের সম্মান করা। তাদের কষ্ট না দেয়া। তাদের আনুগত্য করা। তাদের যাবতীয় অধিকার প্রদান করা।
০৬. সন্তান লালন পালন করা। শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পান করানো।
০৭. সন্তানদের সুশিক্ষা দান করা। তাদের অধিকার প্রদান করা।
০৮. রক্ত সম্পর্ক অক্ষুন্ন ও অটুট রাখা।
০৯. আত্মীয় স্বজনের হক আদায় করা।
১০. উত্তরাধিকার বন্টন করা।
১১. অসিয়ত করা এবং অসিয়ত পূর্ণ করা।
১২. মেহমানদারি করা।
১৩. স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে চলা। স্ত্রীর প্রতি উত্তম আচরণ করা।
১৪. চাকর চাকরানি বা গৃহকর্মীদের প্রতি সদয় ও কোমল আচরণ করা।
১৫. স্ত্রী ও পরিবার থেকে আলাদা হয়ে বৈরাগী জীবন যাপন না করা।
১২. বাস্তব আমলে সালেহ্ সমূহ : সামাজিক জীবনে
০১. সালাম দেয়া। সালামের জবাব দেয়া।
০২. রোগীর সেবা যত্ন করা, চিকিৎসা করা।
০৩. অভাবী ও দরিদ্রদের সাহায্য সহযোগিতা করা।
০৪. প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা। তাদের সুখে দু:খে শরিক হওয়া।
০৫. পরোপকার করা। আশ্রয়হীনকে আশ্রয় দেয়া।
০৬. মৃতের দাফন কাফন ও জানাযার ব্যবস্থা করা।
০৭. মসজিদ নির্মান করা। সালাতের জামাত কায়েম করা।
০৮. মানুষের সাথে সদাচরণ করা। মন্দ আচরণ বর্জন করা।
০৯. মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দান করা।
১০. হকের উপদেশ দেয়া। হকের উপর অটল থাকার (সবরের) উপদেশ দেয়া।
১১. বিরোধ মীমাংসা করে দেয়া।
১২. বিয়ে শাদীর প্রস্তাব দেয়া, মধ্যস্থতা করা এবং সহযোগিতা করা।
১৩. আমানত ফেরত দেয়া। খেয়ানত না করা।
১৪. অংগিকার, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা।
১৫. সাময়িক ও স্থায়ী জনকল্যাণের কাজ করা।
১৬. শিক্ষা সম্প্রসারণ করা।
১৭. পরস্পরের সংশোধন করা। দীনি ভাইদের সহযোগিতা করা।
১৮. অপর ভাইয়ের দোষ গোপন করা।
১৯. কাফির মুশরিকদের সাথে বন্ধুতা না করা। (তবে সদাচরণ করতে হবে)।
২০. হাঁচি দাতার ‘আলহামদুলিল্লাহ’র জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা।
২১. সৎ ও কল্যাণের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা।
২২. অসৎ ও অকল্যাণের কাজে সহযোগিতা না করা।
২৩. সৎ কাজের আদেশ দেয়া। অসৎ কাজে নিষেধ করা, বাধা দেয়া।
২৪. সুবিচার করা।
২৫. অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়া।
২৬. কাউকেও অপবাদ না দেয়া, গীবত না করা।
২৭. অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা না করা।
২৮. হারাম উপার্জন না করা। সুদ ও সুদী কারবার পরিহার করা।
২৯. ঘুষ, জবরদখল ও অন্যায় পন্থায় কারো অর্থ সম্পদ হরণ না করা।
৩০. ধোকা প্রতারণা না করা।
৩১. কৃপণতা না করা, আবার সব কিছু উজাড় করে খরচ না করে ফেলা।
৩২. নিজের জন্যে, পোষ্যদের জন্যে সামর্থ মতো ব্যয় করা।
৩৩. অপচয় ও অপব্যয় না করা।
৩৪. ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়া ও মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।
৩৫. করয দেয়া / সময়মতো করয ফেরত দেয়া।
৩৬. মানুষকে দু:খ কষ্ট না দেয়া।
৩৭. জনপথ থেকে কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর জিনিস অপসারণ করা।
৩৮. জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত থাকা।
৩৯. ইসলামী নেতৃত্বের আনুগত্য করা।
৪০. ন্যায়ের প্রসার ও অন্যায়ের প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
১৩. বাস্তব আমলে সালেহ্ সমূহ : রাষ্ট্রীয় জীবনে
০১. সুশাসন পরিচালনা করা। ন্যায়পরায়ণ শাসকের আনুগত্য করা।
০২. ন্যায় বিচার করা।
০৩. জনগণের আমানত রক্ষা করা ও পাহারা দেয়া।
০৪. রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা।
০৫. সালাত কায়েম করা এবং যাকাত ব্যবস্থা চালু করা।
০৬. আমর বিল মা’রুফ (ভালো কাজের আদেশ ও প্রসার)-এর কাজ করা।
০৭. নাহি আনিল মুনকার (মন্দ ও দুষ্কৃতি প্রতিরোধ)-এর কাজ করা।
০৮. জনগণের পারস্পারিক বিরোধ মীমাংসা করা, বিচার ফায়সালা করা।
০৯. জাতীয় সংস্কার সংশোধনের কাজ করা। শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
১০. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ করা (ইসলামের প্রচার ও প্রতিরক্ষা)।
১১. রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষায় সৈনিকের দায়িত্ব পালন করা।
১২. চুক্তি ও সমঝোতা করা।
১৩. চুক্তি ও অংগিকার বাস্তবায়ন করা।
১৪. ইসলামী আইন ও দন্ড কার্যকর করা।
১৫. নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
১৬. অশ্লীলতার প্রসার রোধ করা।
১৭. যার কোনো অভিভাবক নেই, তার অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করা।
আসুন, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সৌভাগ্যের আকাংখী নারী পুরুষ, যুবক যুবতী, কিশোর কিশোরী, সবাই মিলে চলি ঈমানের পথে। আসুন, আমলে সালেহর গুণাবলীতে শোভামন্ডিত করি নিজের জীবনকে। আল্লাহর সাহায্য মুমিনদের জন্যে প্রতিশ্রুত। (গ্রন্হ সহায়তা -ইমান ও আমলে সালেহ/আব্দুস শহীদ নাসিম)
খুব সুন্দর একটি পোষ্ট। লেখক-কে বলছি, জাযাকুমুল্লাহু খাইরান। সংগ্রহে রাখলাম।