হাদিস শক্ষা (আবু দাউদ হতে চয়িত “হাদীস সংকলন”) -৬ ।
লিখেছেন: ' দেশী৪৩২' @ বৃহস্পতিবার, জুলাই ২২, ২০১০ (৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
সুনান আবু দাউদ হতে চয়িত “হাদীস সংকলন”
بسم الله الرحمن الرحيم
সি হা হ্ সি ত্তা’ র অ ন্ত র্ভু ক্ত
সুনান আবু দাউদ
হা দী স গ্র ন্থ হ তে চ য়ি ত
কিতাবুত তাহারাত
২৬। আবুদ-দারদা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যখন কোন গ্রামে বা বনজঙ্গলে তিনজন লোক একত্রিত হয় এবং জামায়াতে নামায আদায় না করে- তখন শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করে। অতএব (তোমরা) অবশ্যই জামায়াতের সাথে নামায আদায় কর। কেননা দলচ্যুত বকরীকে নেকড়ে বাঘে ভক্ষণ করে থাকে। (হাদীস নং-৫৪৭)
২৭। ইবন আব্বাস (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুআযযিনের আযান শুনে বিনা কারণে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাআতে নামায আদায় করবে না তার অন্যত্র আদায়কৃত নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না (অর্থাৎ তার নামাযকে পরিপূর্ণ নামায হিসেবে গণ্য করা হবে না)। সাহাবীরা ওজর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ (সা•) বলেনঃ যদি কেউ ভয়ভীতি ও অসুস্থতার কারণে জামায়াতে হাজির হতে অক্ষম হয় তবে তার জন্য বাড়ীতে নামায পড়া দুষনীয় নয়। (হাদীস নং-৫৫১)
২৮। উছমান ইবন আফফান (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি এশার নামায জামায়াতের সাথে আদায় করল সে যেন অর্ধরাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করল। আর যে ব্যক্তি ফজর ও এশার নামায জামায়াতে আদায় করল সে যেন সারা রাতব্যাপী ইবাদতে মশগুল থাকল। (হাদীস নং-৫৫৫)
২৯। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মসজিদ হতে যার অবস্থান (বাসস্থান) যতদূরে, সে তত অধিক ছওয়াবের অধিকারী। (হাদীস নং-৫৫৬) (ইবনে মাজা)।
৩০। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামায়াতের সাথে এক ওয়াক্তের নামায- একাকী পঁচিশ ওয়াক্ত নামায (আদায়ের) সমতুল্য। যখন কোন ব্যক্তি মাঠে বা বনভূমিতে সঠিকভাবে রুকু-সিজদা সহকারে নামায আদায় করবে, তখন সে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের সমান ছওয়াব পাবে। (হাদীস নং-৫৬০)
৩১। বুরায়দা (রা•) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যারা অন্ধকার রজনীতে মসজিদে হাযির হয়ে জামায়াতে নামায আদায় করে- তাদেরকে কিয়ামতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। (হাদীস নং-৫৬১)
৩২। আবু ছুমামা আল-হান্নাত হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মসজিদে গমনকালে কাব ইবন উজরা (রা•)-র সাথে পথিমধ্যে তাঁর সাক্ষাত হয়। রাবী বলেন, তখন আমি আমার হাতের অংগুলি মটকাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে ঐরূপ করতে নিষেধ করে বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ উত্তমরূপে উযু করার পর মসজিদে গমনের ইচ্ছা করে, সে যেন তার হাতের অংগুলী না মটকায়। কেননা ঐ ব্যক্তিকে তখন নামাযী হিসেবে গণ্য করা হয়। (হাদীস নং-৫৬২)
৩৩। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে (জামায়াতের পর) একাকী নামায আদায় করতে দেখে বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নাই কি- যে এই ব্যক্তিকে সদকা দিয়ে তার সাথে একত্রে নামায পড়তে পারে? (হাদীস নং-৫৭৪)
৩৪। ইবন আব্বাস (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ তোমাদের মধ্যেকার উত্তম ব্যক্তি যেন আযান দেয় এবং বিশুদ্ধরূপে কুরআন পাঠকারী যেন তোমাদের ইমামতি করে। (হাদীস নং-৫৯০)
৩৫। আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা•) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’য়ালা তিন ব্যক্তির নামায কবুল করেন না। যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করে, অথচ মুকতাদীরা তার উপর অসন্তুষ্ট। যে ব্যক্তি নামাযের সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নামায আদায় করে এবং যে ব্যক্তি স্বাধীন মহিলা অথবা পুরুষ লোককে ক্রীতদাসী বা দাস বানায়। (হাদীস নং-৫৯৩)
৩৬। আবু হুরায়রা (রা•) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলমান ইমামের পেছনে (জামায়াতের) ফরয নামাযসমূহ আদায় করা বাধ্যতামূলক- চাই সে (ইমাম) সৎ হোক অথবা অসৎ- এমনকি সে কবীরা গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে থাকলেও। (হাদীস নং-৫৯৪)
৩৭। হযরত জাবের ইবন আব্দুল্লাহ (রা•) হতে বর্ণিত। হযরত মুআয ইবন জাবাল (রা•) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এশার নামায আদায়ের পর স্বীয় সম্প্রদায়ে ফিরে গিয়ে পুনরায় তাদের ঐ এশার নামাযে ইমামতি করতেন। (হাদীস নং-৫৯৯)
৩৮। আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যখন ইমাম নামাযের শেষ পর্যায়ে তাশাহুদের পরিমাণ সময় বসার পর তার উযু নষ্ট হবে তিনি কোন কথা (সালাম) বলার পূর্বে- এমতাবস্থায় নামায আদায় হয়ে যাবে এবং মোক্তাদীদের নামাযও পূর্ণ হয়ে যাবে- যারা ইমামের সাথে পুরা নামায পেয়েছে। (হাদীস নং-৬১৭)
৩৯। ইবন মাসউদ (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নামাযের মধ্যে অহংকার করে স্বীয় পরিধেয় বস্ত্র (লুংগি, জামা, পাজামা বা প্যান্ট গোছার নীচে পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখে, ঐ ব্যক্তির ভাল বা মন্দের ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালার কোন দায়িত্ব নেই । (হাদীস নং-৬৩৫)
৪০। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোন এক ব্যক্তি তার পাজামা (টাখনু গিরার নীচ পর্যন্ত) ঝুলিয়ে নামায পড়ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ তুমি যাও উযু করে আস! সে গিয়ে উযু করে ফিরে আসে। তিনি তাকে পুনরায় গিয়ে উযু করে আসার নির্দেশ দেন। সে পুনরায় উযু করে আসলে উপস্থিত এক ব্যক্তি তাঁকে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তাকে (উযু থাকাবস্থায়) কেন পুনরায় উযু করার নির্দেশ দেন? তিনি বলেনঃ এই ব্যক্তি কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়ছিল এবং আল্লাহ তা’য়ালা এরূপ ব্যক্তিদের নামায আদৌ কবুল করেন না। (হাদীস নং-৬৩৬)
৪১। আয়েশা (রা•) থেকে বর্ণিত। নবীর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলারা ওড়না ছাড়া নামায আদায় করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। (হাদীস নং-৬৪১)
৪২। নুমান ইবন বশীর (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত ব্যক্তিদের নিকট উপস্থিত হয়ে তিনবার বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর। আল্লাহর শপথ! তোমরা কাতার সোজা করে দন্ডায়মান হবে, অন্যথায় আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করবেন। রাবী বলেন, অতঃপর আমি মুসল্লীদেরকে পরস্পর কাঁধে কাঁধ, পায়ে পা এবং গোড়ালির সাথে গোড়ালি মিলিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। (হাদীস নং-৬৬২)
৪৩। আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ কাতারের ডানদিকের মুসল্লীদের উপর রহমত বর্ষণ করে থাকেন। (হাদীস নং-৬৭৬)
৪৪। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে প্রথম কাতারে গিয়ে দাঁড়াতে দেরী করতে দেখে বলেনঃ তোমরা প্রথম কাতারে এসো এবং আমার অনুসরণ কর। অতঃপর পরবর্তী লোকেরাও তোমাদের অনুসরণ করবে। এক শ্রেণীর লোক সবসময় সামনের কাতার থেকে পেছনে থাকবে। মহান আল্লাহও তাদেরকে পেছনে ফেলে রাখবেন। (হাদীস নং-৬৮০)
৪৫। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ (কোন খোলা স্থানে) নামায আদায় করবে, তখন সে যেন সুতরা হিসাবে তার সামনে কিছু স্থাপন করে। যদি কিছু না পায় তবে সে যেন একটি লাঠি তার সামনে স্থাপন করে। যদি তার সাথে লাঠি না থাকে, তবে সে যেন তার সামনের মাটিতে দাগ টেনে নেয়। অতঃপর কেউ তার সম্মুখভাগ দিয়ে যাতায়াত করলে তার কোন ক্ষতি হবে না। (হাদীস নং-৬৮৯)
৪৬। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নামাযে রত অবস্থায় তার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে যথাসাধ্য বাধা দিবে। যদি সে বাধা উপেক্ষা করে তবে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। কারণ সে একটা শয়তান। (হাদীস নং-৬৯৭)
৪৭। সাঈদ ইবন গাযওয়ান থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি হজ্জব্রত পালনের উদ্দেশ্যে গমনকালে তাবূকে অবতরণ করেন। সেখানে তিনি এক খোঁড়া ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে তার কারণ জিজ্ঞেস করেন। ঐ ব্যক্তি বলে, আমি তোমার নিকট এমন একটি বিষয়ের অবতারণা করব যা অন্যের নিকট প্রকাশের যোগ্য নয়। অতঃপর সে বলে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূকে একটি খেজুর গাছের নিকট অবতরণের পর বলেনঃ এটা আমাদের জন্য কিবলা বা সুতরা স্বরূপ। অতঃপর তিনি সেদিকে মুখ করে নামায আদায় করেন। তখন আমার বয়স কম থাকায় আমি তাঁর ও খেজুর গাছের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে দৌড়িয়ে যাই। তখন নবী করীম (সা•) বলেনঃ সে আমাদের নামায নষ্ট করেছে, কাজেই আল্লাহ তার চলার শক্তি রহিত করুন। অতঃপর আমি আজ পর্যন্ত আর দাঁড়াতে সক্ষম হইনি। (হাদীস নং-৭০৭)
৪৮। ইবন আব্বাস (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায়কালে একটি বকরীর বাচ্চা তাঁর সম্মুখ দিয়ে যেতে চাইলে তিনি তাকে বাধা দেন। (হাদীস নং-৭০৯)
৪৯। আবু সাঈদ (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কোন কিছু নামাযীর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার কারণে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না, তবে তোমরা সাধ্যানুযায়ী এরূপ করতে বাধা দেবে। কেননা (নামাযীর সামনে দিয়ে) গমনকারী একটা শয়তান। (হাদীস নং-৭১৯)
৫০। মালিক ইবনুল হুয়ায়রিছ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাত উঠাতে দেখেছি। আমি তাঁকে রুকূতে গমনকালে এবং তা হতে উঠার সময় স্বীয় হস্তদ্বয় কানের উপরিভাগ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। ( রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে হাদীস) (হাদীস নং-৭৪৫
আর যে ব্যক্তি ফজর ও এরশাদ নামায জামায়াতে আদায় করল সে যেন সারা রাতব্যাপী ইবাদতে মশগুল থাকল। (হাদীস নং-৫৫৫)
এরশাদ পরিবর্তে এশা হবে ।
@হাফিজ,ধন্যবাদ।
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করার তাওফীক দান করুন।
আল্লাহ আমাদের হাদিস শিক্ষার পাশাপাশি আমলে আনার তৌফিক দিন।
ামোরা