আবু দাউদ শরীফ থেকে চয়িত হাদিস সংকলন -৬
লিখেছেন: ' দেশী৪৩২' @ মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১০ (১:১৯ পূর্বাহ্ণ)
১২৬। আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রাত্রিতে নিয়মিত নামায আদায় করে থাকে সে যদি কোন রাত্রিতে নিদ্রাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে নামায আদায়ে ব্যর্থ হয় তবুও আল্লাহ তা’য়ালা তার আমলনামায় উক্ত নামায আদায়ের অনুরূপ ছওয়াব প্রদান করবেন এবং তার ঐ নিদ্রা সদকাস্বরূপ হবে। (হাদীস নং-১৩১৪)
১২৭। আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হয়ে বলতে থাকেনঃ তোমাদের যে কেউ আমার নিকট কোন কিছুর জন্য প্রার্থনা করবে, আমি তার ঐ দু’আ কবুল করব, যে কেউ আমার নিকট কিছু যাঞ্চা করবে, আমি তা তাকে প্রদান করব এবং যে আমার নিকট গুনাহ মাফের জন্য কামনা করবে, আমি তার গুনাহ মাফ করব। (হাদীস নং-১৩১৫)
১২৮। হুযায়ফা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাযে মশগুল হয়ে যেতেন। (হাদীস নং-১৩১৯)
১২৯। রবীআ ইবন কাব আল-আসলামী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি প্রায়ই সফরকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অবস্থান করে তাঁর উযুর পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করতাম। একদা তিনি (স) আমাকে বলেনঃ তুমি আমার নিকট কিছু চাও? তখন আমি বলিঃ আমি বেহেশতের মধ্যে আপনার সংগী হিসেবে থাকতে চাই। তিনি (সা) বলেনঃ এ ছাড়াও অন্য কিছু চাওঃ আমি বলিঃ এটাই আমার একমাত্র কামনা। তিনি (স) বলেনঃ তুমি অধিক সিজদা আদায়ের দ্বারা তোমার দাবী পূরণে আমাকে সাহায্য কর। (হাদীস নং-১৩২০)
১৩০। আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ রাত্রিতে (তাহাজ্জুদ) নামাযের জন্য উঠে তখন সে যেন প্রথমে হালকাভাবে দুই রাকাত (নফল) নামায আদায় করে। (হাদীস নং-১৩২৩) (মুসলিম)। অন্য হাদীসে এসেছে- অতঃপর তুমি তোমার ইচ্ছানুযায়ী দীর্ঘ কিরাআত দ্বারা নামায আদায় করতে পার। (হাদীস নং-১৩২৪)
১৩১। আব্দুল্লাহ ইবন হাবশী আর খাছআমী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উত্তম আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি (সা) বলেনঃ উত্তম আমল হল দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নামায আদায় করা। (হাদীস নং-১৩২৫)
১৩২। উকবা ইবন আমের আল-জুহানী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কুরআন উচ্চস্বরে পাঠকারী প্রকাশ্যে দান-খয়রাতকারীর অনুরূপ এবং গোপনে কুরআন পাঠকারী গোপনে দানকারীর মত। (হাদীস নং-১৩৩৩)
১৩৩। আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা সাধ্যানুযায়ী আমল কর। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের কোন আমলকে বন্ধ করেন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরাই তা বন্ধ কর। কেননা আল্লাহ তাআলার নিকট ঐ আমলই অধিক পছন্দনীয় যা নিয়মিত আদায় করা হয়ে থাকে, যদিও পরিমাণে তা কম হয়। তিনি (সা) যখন কোন আমল শুরু করতেন, তখন তা নিয়মিতভাবে আদায় করতেন। (হাদীস নং-১৩৬৮)
১৩৪। আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রমযানের রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় গৃহ হতে বের হয়ে দেখতে পান যে, মসজিদের এক পাশে কিছু লোক নামায আদায় করছে। তিনি (সা) জিজ্ঞাসা করেনঃ এরা কি করছে? তাঁকে বলা হয়ঃ এদের কুরআন মুখস্ত না থাকায় তাঁরা উবাই ইবন কাবের (রা) পিছনে (মুক্তাদী হিসেবে) তারাবীর নামায় আদায় করছে। নবী করীম (সা) বলেনঃ তারা ঠিকই করছে। (হাদীস নং-১৩৭৭)
১৩৫। আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি তিন দিনের কম সময়ে কুরআন শরীফ খতম করে, সে তার কিছুই অনুধাবন করতে সক্ষম হয় না। (হাদীস নং-১৩৯৪)
১৩৬। আব্দুর রহমান ইবন ইয়াযীদ (র) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হযরত আবু মাসউদ (রা)- কে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফকালে কুরআন পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ আয়াত দু’টি তিলাওয়াত করবে, এটা তার জন্য যথেষ্ট হবে। (হাদীস নং-১৩৯৭)
১৩৭। আবু হুরায়রা (রা) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেনঃ কুরআনের ত্রিশটি আয়াত বিশিষ্ট সূরা তাবারাকাল্লাযী (অর্থাৎ সূরা আল-মূলক) তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। এমনকি তাকে মাফ করে দেয়া হবে (অর্থাৎ যে ব্যক্তি সূরা তাবারাকাল্লাযী তিলাওয়াত করবে, এটা তার জন্য সুপারিশকারী হবে)। (হাদীস নং-১৪০০)
১৩৮। আলী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ হে কুরআনের অনুসারীগণ! তোমরা বিতিরের নামায আদায় কর। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা বেজোড় (একক), কাজেই তিনি বেজোড় (বিতির)- কে ভালবাসেন। (হাদীস নং-১৪১৬)
১৩৯। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন বুরায়দা (রা) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ বিতিরের নামায হক (সত্য)। যে ব্যক্তি এটা আদায় করবে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। এই উক্তিটি তিনি (সা) তিনবার করেন। (হাদীস নং-১৪১৯)
১৪০। আবু আইয়ূব আনসারী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ বিতিরের নামায প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হক। যে ব্যক্তি তাকে পাঁচ রাকাত আদায় করতে চায়, সে পাঁচ রাকাত আদায় করবে; যে ব্যক্তি তিন রাকাত আদায়ের ইচ্ছা করে, সে ঐরূপ করবে এবং যে ব্যক্তি এক রাকাত আদায় করতে চায়, সে এক রাকাত আদায় করবে। (হাদীস নং-১৪২২)
১৪১। আবু সাঈদ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি নিদ্রা বা ভুলের কারণে বিতিরের নামায আদায় করে নাই, সে যেন তা স্মরণ হওয়ার পরপরই আদায় করে নেয়। (হাদীস নং-১৪২৩)
১৪২। আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার প্রিয় হাবীব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি কাজের জন্য ওসিয়াত করেছেন, যা আমি স্থায়ীভাবে কোথাও অবস্থানকালে এবং সফরের সময়েও ত্যাগ করি না। ১। চাশতের সময় দুই রাকাত নামায, ২। প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা (১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা) এবং ৩। নিদ্রার পূর্বে বিতিরের নামায আদায় করা। (হাদীস নং-১৪৩২)
১৪৩। আবদুল্লাহ ইবন হাবশী আল- খাছআমী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, উত্তম আমল কোনটি ? তিনি (সা) বলেনঃ নামাযের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ দণ্ডায়মান থাকা। অতঃপর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, কোন সদকা উত্তম? তিনি (সা) বলেনঃ সামর্থ না থাকা সত্ত্বেও দান করা। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, উত্তম হিজরত কোনটি? তিনি (সা) বলেনঃ আল্লাহ তা’য়ালার হারাম বস্তুসমূহ হতে ফিরে থাকাই উত্তম হিজরত। অতঃপর তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কোন জিহাদ উৎকৃষ্ট ? তিনি (সা) বলেনঃ যে ব্যক্তি তার জান-মাল দিযে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে। অতঃপর তাকে বলা হয়ঃ কোন ধরনের নিহত হওয়া উত্তমঃ তিনি (সা) বলেনঃ যে ব্যক্তি তার ঘোড়াসহ যুদ্ধের ময়দানে নিহত। (হাদীস নং-১৪৪৯)
১৪৪। আয়েশা (রা) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সা) বলেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং কুরআনে অভিজ্ঞও- সে ব্যক্তি অতি সম্মানিত ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন পাঠের সময় আটকে যায় এবং কষ্ট করে পড়ে, তার জন্য দু’টি বিনিময় অবধারিত। (হাদীস নং-১৪৫৪)
১৪৫। উবাই ইবন কাব (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার নিকট কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা সম্মানিত? আমি বলি, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল এ বিষয়ে অধিক অবগত। তিনি (সা) তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আবুল মুনযির! তোমার নিকট কুরআনের কোন আয়াতটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ? রাবী বলেন, তখন আমি বলি, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইউল কাইয়ূম। এতদশ্রবণে তিনি (সা) আমার বক্ষে হাত চাপড়িয়ে (মহব্বতের সাথে) বলেনঃ হে আবুল মুনযির! তোমার জন্য কুরআনের ইলম বরকতময় হোক। (হাদীস নং-১৪৬০)
১৪৬। উকবা ইবন আমের (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুহফা ও আবওয়া নামক স্থানদ্বয়ের মধ্যে সফরে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ আমাদেরকে ঘোর কৃষ্ণ অন্ধকার ও প্রবল বাতাস আচ্ছন্ন করে ফেলে। তখন তিনি (স) আল্লাহর নিকট “সূরা নাস” ও “সূরা ফালাক” পাঠ করে আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং আমাকে বলেনঃ হে উকবা! তুমিও এদের দ্বারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর। এর চাইতে অধিক উত্তম তাবিজ আর কিছুই নাই। আমি নবী করীম (সা)- কে এই দু’টি সূরার দ্বারা নামাযের ইমামতি করতেও শ্রবণ করেছি। (হাদীস নং-১৪৬৩)
১৪৭। আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের দিন কুরআনের পাঠককে বলা হবে, তুমি তা পাঠ করতে থাক এবং উপরে চড়তে (উঠতে) থাক। তুমি তাকে ধীরে সুস্থে পাঠ করতে থাক, যেরূপ তুমি দুনিয়াতে পাঠ করতে। কেননা তোমার সর্বশেষ বসবাসের স্থান (জান্নাত) ঐটিই যেখানে তোমার কুরআনের আয়াত শেষ হবে। (হাদীস নং-১৪৬৪)
১৪৮। আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন আল্লাহ তা’য়ালাঃ কোন কিছুই এতটা নিবিষ্টভাবে শুনেন না যেভাবে তিনি কুরআনের পাঠ শুনেন- যখন তাঁর নবী সুমধুর কন্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে তা পাঠ করেন। (হাদীস নং-১৪৭৩)
১৪৯। সাদ ইবন উবাদা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পাঠের পর তা ভুলে যায়, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে খালি হাতে সাক্ষাত করবে। (হাদীস নং-১৪৭৪)
১৫০। নুমান ইবন বাশীর (রা) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সা) বলেনঃ দু’আও একটি ইবাদাত। তোমাদের রব বলেনঃ তোমরা আমার নিকট দু‘আ কর। আমি তা কবুল করব। (হাদীস নং-১৪৭৯)