মানুষের প্রতি দু’টি অমূল্য নেয়ামত (সংকলীত)
লিখেছেন: ' দেশী৪৩২' @ মঙ্গলবার, নভেম্বর ৩০, ২০১০ (৭:৪৭ অপরাহ্ণ)
”হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে আর্ণিত, রাসুল (সা:) ইরশাদ করেন,আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে দেয়া এমন দুটি নেয়ামত রয়েছে,যার প্রতি অধিকাংশ মানুষই উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে থাকে । তার একটি হল; সুস্থতা আর অপরটি অবসরতা বা, কর্ম শূণ্যতা ।”
আল্লাহ প্রদত্ত এ দু’টি নেয়ামত এমন যে, যখনই এর কোনটি বা, উভয়টি কারো হাতের নাগালে আসে তখনই সে শয়তান বা কু প্রবৃত্তির গ্রাসী থাবার শিকার হয়ে ভাবতে থাকে যে, এ নেয়ামতটি তার কাছে আজীবন থাকবে । যেমন: যখন কেউ শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকে, তখন সে একটি বারের জন্যও এ কথা ভাবে না বা, ভাবার চেষ্টাও করে না যে, হয়তো এক মুহূর্ত পরেই সে অসুস্থ্য হয়ে পড়তে পারে । এমনি ভাবে যখন কারো কোন অবসর সময় আসে,তখন সে ভাবতেও পারে না যে, হয়তো ক্ষনিক পরই তাকে ব্যস্ততা এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরবে যে,সে ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে পড়বে অথচ পানাহারেরও ফুরসত পাবে না ।
অবসরের ব্যাপারে মানুষের সিকি ভাগের চেয়েকম হলেও চেতনা আছে । কিন্তু সুস্হতার মূল্যায়নের প্রতি উদাসীনতার হার একেবারে এক শ’ ভাগের এক’শ ভাগই বললেও মনে হয় অত্যুক্তি হবে না। অথচ কারো কি এটা জানা আছে যে, সে কতদিন সুস্থ খাকবে ? কখন অসুস্থ হয়ে পড়বে ? এবং কি ধরনের বিপদের সন্মুখীন হবে? কত সুস্থ সবল যুবক হঠাৎ এমন জটিল অসুস্থতার জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে যে, আর চলাফেরা করার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না ।
তাই যখনই আল্লাহ তা’য়ালা সুস্থতা বা, অবসরতা দান করেন তখনই প্রতারিত না হয়ে টাল-বাহানা নীতি পরিহার করে মূল্যবান সময় কাজে লাগানো উচিৎ । ভাল কাজ, নেক আমল, আত্নশুদ্ধি, আল্লাহর জিকির (http://www.somewhereinblog.net/blog/deshi432/29273851), আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ এবং আখেরাতের চিন্তা ভাবনা করার এটাই মোক্ষম সুযোগ । কারন, এসুযোগ পুনরায় আসবে কিনা এটা কারো জানা নেই । কেউ যদি এ কথা মনে করে যে, এখনো বহু সময় আছে । এখন চিত্ত বিনোদন, মনোরন্জন ও আমোদ-প্রমোদ করে নেই । পরে সময় এলে নেক আমল করবো, নামাজ- রোজা করবো, দাড়ি রাখবো, তাব্লীগ বা কোন পীরের কাছে গিয়ে আল্লাহ্ ওয়ালা হয়ে যাব; তাহলে তার কাছে আমার জিঙ্গাসা তার সাথে কি হযরত আয্রাঈলের (আ:) কোন গোপন চুক্তি হয়েছে ? এ ধরনের মনোভাব পোষণকারীদের অনেকেই পরে শুধুই আফসোস, পরিতাপ ও অনুতাপ করেই জীবন শেষ করে । সুস্থতাও ফিরে পায় না । আর ইবাদত করার সামর্থ্যও হয় না । আর যারা সুস্থ্যতার পোষাক নিয়েই হঠাৎ করে পরপারে যাত্রা শুরু করে তাদের তো এ অনুতাপটুকুও করার অবকাশ থাকে না । যেন পৃথিবীর ইতিহাসে সে-ই বড় হতভাগা । তাই নবীজীর (সা:) সেই বাণী জাতির জন্য কতটুকু হিতোপদেশ তা বিবেচনা করার এখনো সময় আছে । তিনি বলেছেন- ”বিপদ সন্কুল পাঁচটি অবস্থার সন্মূখীন হওয়ার পূর্বেই তার যথার্থ মূল্যায়ন কর -(১) বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পূর্বে যৌবন (২)অসুস্থতার পূর্বে সূস্থতা (৩) দারিদ্রতার পূর্বে স্বচ্ছলতা (৪) ব্যস্তার পূর্বে অবসরতা এবং (৫) মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে মূল্যায়ন কর । (তিরমিযী)
কোরআনে করীমেও এ ব্যপারে মনুষকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে । বিবৃত হয়েছে যে, ” পার্থিব জীবনকে যারা হেলায়, বিনোদন, আনন্দ-বিলাস ও আমোদ-প্রমোদে কাটিয়ে রিক্ত হস্তে আল্লাহ্র দরবারে উপস্থিত হবে তারাই হিসাব-নিকাশের সেই ভয়াবহ মূহুর্তে আর্তচিৎকার করে বলবে- প্রভু হে! আমাদেরকে আর মাত্র একটি বারের জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়ে দাও । আমরা সৎ কাজ ও নেক আমল করে আসবো । পূর্বে যা করেছি তা আর কখনো করবো না । তখন আল্লাহ তা’য়ালা বলবেন, আমি কি তোমাদেরকে এতটা সময় দেইনি ; যাতে তোমরা যা চিন্তা করার করতে পারতে? অধিকন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারি ( নবী-রসুল, আলেম-ওলামা, ধর্মীয় বই-পুস্তক ও দ্বীন প্রচারকারীগণ ) ও আগমন করেছে ।” (৩৫:৩৭) তাই সুধী মহলের নিকট আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ এখনো সময় আছে । সময়কে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হোন ।
আমাদের পার্থিব জীবন যে খুবই ক্ষনস্হায়ী এবং বরফ খন্ডের ন্যায় দ্রাবমান।এ কথা চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই অনুধাবন করতে পারে।এর জন্য কোন বার্তা বাহক বা কোন ভীতি প্রদর্শনকারীর আদৌ প্রয়জন হয় না।তবুও পরম দয়ালু মহান আল্লাহ পাক যুগে যুগে অসংখ্য অগনিত নবী-রাসুল প্রেরন করেছেন।তারা মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।তাদের সে সতর্কতার পাশাপাশি আমরা যদি আমাদের জীবন নিয়ে একটু চিন্তা করি তাহলে আমরা আরো অনেক বিদায়ীবার্তা এবং সতর্ক সংকেত খুজে পাবো।নিচে তার কয়েকটি উদাহরন দেয়া হলো-
১।আজরাইল (আঃ) এর কথোপোকথনঃ-
হযরত আজরাইল (আঃ) এর সাথে জনৈক সাক্ষাৎ হল। সে আজরাইল আঃ কে অভিযোগের সুরে বলল,আপনার ব্যবহারটা কেমন আশ্চর্যজনক!দুনিয়াতে কাউকে যদি গ্রেফতার করা হয়,তাহলে গ্রেফতারের পুর্বে তাকে নোটিশ দেয়া হয়।কিন্তু আপনার যখন ইচ্ছে বিনা নোটিশে গ্রেফতার করে নিয়ে যান।এটা কেমন কথা ?উত্তরে আজরাইল আঃ বললেন,ওহে দুনিয়ার আদালততো মাত্র একটি নোটিশ দিয়ে থাকে।আর সে একটাই তোমার দৃষ্টি আকর্ষন করলো।অথচ আমি যে একাধিক নোটিশ দিয়ে থাকি সেটাকি তোমার দৃষ্টিগোচর হয়না ? দুঃখের বিষয় হলো এ ব্যাপারে সর্বদাই তোমরা চরম উদাসীনতা প্রদর্শন করে থাক।কি হে তোমার দেহে জ্বর হওয়া কি আমার পক্ষ থেকে নোটিশ নয় ?তোমার ব্যধিগ্রস্হতা হওয়া কি আমার পক্ষ থেকে নোটিশ নয় ? তোমার চুল সাদা হওয়া কি আমার পক্ষ থেকে নোটিশ নয় ? তোমার ছেলে মেয়ের ঘরে নাতি নাতনি হওয়া কি আমার পক্ষ থেকে নোটিশ নয় ?
২।আখেরাতে যদি আল্লাহতাআলা বলেন,আচ্ছা জাহান্নামে যেতে তো তামার ভয় হচ্ছে।তবে ঠিক আছে এ শর্তে তোমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে পারি যে তোমার পুরো জীবনের ভিডিও তোমার মাতা পিতা ,ছেলে সন্তান,বন্ধু বান্ধব,ছাত্র-ওস্তাত সকলের সামনে চালু করা হবে এবং এতে তোমার সমস্ত জীবনের চিত্র তুলে ধরা হবে।তুমি এতে রাজী ? মানুষ আগুনের শাস্তিকে মাথা পেতে নিবে ,তবুও এতে রাজী হবে না।
( জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ / মূল: মুফতি মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী )