মদ খাওয়া কি হারাম?
লিখেছেন: ' dfd' @ সোমবার, এপ্রিল ১৮, ২০১১ (২:৪৬ অপরাহ্ণ)
আমার বক্তব্যই যে নির্ভুল সে দাবী আমি করি না। আমার পোষ্ট পড়ে মানুষকে চিন্তা করতে হবে ও নিজের স্বীদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। মোল্লাদের উপরে দোষ দিয়ে পরকালে পার পাওয়া যাবে না , কারন আল্লাহ আমাদের ব্রেণ দিয়েছেন সেটা ব্যবহারের জন্য এবং যার যার ব্রেণের জিম্মাদার সে নিজে।
কোরানে হারাম জিনিষকে ‘হারাম’-ই বলা হয়েছে। এখানে ‘হারাম’ (حرم) শব্দ ব্যাবহার হয়েছে। যে সকল জিনিষকে হারাম বলা হয়েছে , তার জন্য কোন কারন আল্লাহ দেন নি। এটা আল্লাহর নির্দেশ এবং অনেক জায়গায় কোন কিছুকে হারাম করার জন্য দোজখের ভয় ও দেখানো হয়েছে।
কোরানে দেখুন মৃত , রক্ত ও শুকরের মাংসকে কিভাবে হারাম করা হয়েছে -
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالْدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ
৫:৩ তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস…..।
কোরানে দেখুন মানুষ খুনকে কিভাবে শাস্তির ভয় দেখিয়ে হারাম করা হয়েছে–
৪:৯৩ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে বিশ্বাসীকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।
কোরানে ৫টা আয়াত পাওয়া যায় , যেখানে মদ/নেশা নিয়ে বলা হয়েছে।
১)
৪:৪৩ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ,……।
এই আয়াতে হারাম বা নিষিদ্ধ শব্দটি নেই বা দোজখের ভয়ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও দেখানো হয় নি। কেন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের কাছে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে? কারন নামাজে কি বলছি সেটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ , না বুঝলে সে নামাজ পড়ার কোন মানে নেই।( চিন্তা করুন , আমরা কয়জন বাঙালী নামাজে কি পড়ি , সেটা বুঝেই পড়ি)। যেহেতু নেশাগ্রস্থ অবস্থায় মানুষের বোধ বুদ্ধি এমনি লোপ পায় যে সে কি বলছে তা বোঝেনা , সেকারনেই নামাজের কাছে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। নেশাগ্রস্থ হতে কিন্তু নিষেধ করা হয় নি। এখন কেউ যদি অল্প নেশা করে এবং তার বোধ বুদ্ধিও লোপ না পায় , তাহলে কি তাকে কোরানের এই আয়াত অনুযায়ী দোষ দেয়া যাবে?
২)আপনার দেয়া আয়াত-
৫:৯০-৯১ “হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর ঘৃণ্যবস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা(কে) বর্জন কর তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ, জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না।”
এই আয়াতে ও হারাম বা নিষিদ্ধ শব্দটি নেই বা দোজখের ভয়ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও দেখানো হয় নি। সুতরাং মদকে হারাম বলা যায় না। পরন্তু আয়াতটিতে দেখুন فَاجْتَنِبُوهُ /ফাআজতানেবুহু অর্থাৎ তাকে(শয়তানকে) বর্জন করতে বলা হয়েছে। শব্দের শেষে যে ‘হু’ আছে , তা একবচন। যদি মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর সবগুলোকেই বর্জন করতে বলা হতো তাহলে ‘হুম’ বহুবচন থাকতো। আয়াতটি ভালো করে পড়লে যা বোঝা যায় , এগুলো শয়তানের হাতিয়ার , যা দিয়ে মানুষকে বিপথে নেয়। একারনেই শয়তানকে বর্জন করতে বলা হয়েছে , যাতে আমরা সফলকাম হতে পারি।
৩)
৫:৯৩ যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা যা ভক্ষণ করেছে, সে জন্য তাদের কোন গোনাহ(جُنَاحٌ) নেই….
Muhammad Asad 5:93 Those who have attained to faith and do righteous deeds incur no sin by partaking of whatever they may, so long as they are conscious of God and [truly] believe and do righteous deeds, and continue to be conscious of God and to believe, and grow ever more conscious of God, and persevere in doing good: for God loves the doers of good.
Rashad Khalifa 5:93 Those who believe and lead a righteous life bear no guilt by eating any food, so long as they observe the commandments, believe and lead a righteous life, then maintain their piety and faith, and continue to observe piety and righteousness. GOD loves the righteous.
এই আয়াতটিতে ইংরেজি অনুবাদ দিলাম এই কারনে যে বাংলা অনুবাদে এমন কিছু শব্দ ঢোকানো হয়েছে যা আরবি কোরানে নেই। এই আয়াতটিতে দেখুন , হারাম ব্যতীত সকল খাবার খাওয়া যায়। খাবার নয় , সৎ কাজের উপরেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সৎ ভাল কাজের কথা বারে বারেই বলা হয়েছে।
৪)
১৬:৬৭ এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা নেশা (سَكَرًا) ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।
এখানেও নেশা বা মদকে হারাম বলা হয় নি। বরং নেশা ও উত্তম খাদ্য একি কাতারে ফেলা হয়েছে।
৫)
২:২১৯ তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ।(إِثْمٌ كَبِيرٌ) আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।
মদের ভাল মন্দ দুটো দিক আছে , যা আগের আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট। এআয়াতেও দেখুন মদের উপকরিতা ও অপকারিতা নিয়ে বলা হয়েছে। উপকারিতার বিপরীত অপকারিতা বা অপব্যাবহার হয় , পাপ হয় না। কিন্তু কেন জানি আমাদের আলেমরা إِثْمٌ كَبِيرٌ এর মানে মহা পাপ বলছেন , যা বোধগম্য নয়। আরবিতে পাপ হলো যুনাহুন/جُنَاحٌ। তাহলে আপনারাই চিন্তা করুন إِثْمٌ كَبِيرٌ এর সঠিক মানে মহা পাপ নাকি মহা অপকারিতা বা অপব্যাবহার?
আল্লাহ কোরানে কোন কিছুকে নিজ থেকে হালাল বা হারাম বলতে শাস্তির ভয় দেখিয়ে নিষেধ করেছেন। কোরানের কোথাও মদ/নেশাকে সরাসরি হারাম বলা হয় নি। মদের ভাল বা মন্দের উল্লেখি কোরানে করা হয়েছে। মদকে আমাদের বিবেচনার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখন আপনারাই বিবেচনা করুন।
ইতিহাস থেকে যতদুর জানা যায় তুর্কি সেলজুক খলিফারাই তাদের সৈন্যদের মদ খাওয়া থেকে নিবৃত্ত করার জন্য হাদীসের মাধ্যমে মদকে হারাম করে। এদের আগের উমাইয়া ও আব্বাসী খলিফারা যে মদ খেত তার ভুরি ভুরি প্রমান আছে।
আর যদি হাদিসে নিষেধ থাকে তাহলে কি সেটা “হারাম” হবে ?
কোরানে দেখুন মানুষ খুনকে কিভাবে শাস্তির ভয় দেখিয়ে হারাম করা হয়েছে– কোন জিনিসের ব্যাপারে ভয় দেখালেই হারাম সেটা এ কথা আপনি কোথায় পেলেন দলীল দিলে খুশি হব।
এবার আসা যাক মদ হারাম কি হারাম না সে ব্যাপারে আলোচনা করি।
মদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে চারটি আয়াত পাওয়া যায়। যে গুলির শানে নুযুল তালাশ করলে মদের হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়, যদি না হয় সে ইসলাম বিদ্ধেষি। ইসলামে মদ নিষেধ হওয়ার পূর্বে মদ খাওয়ার প্রচলন খুব প্রচলন ছিল। প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তায়ালা মদের ব্যাপারে সর্ব প্রথম নাযিল করলেন।
১৬:৬৭ এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা নেশা (سَكَرًا) ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর অনেক সাহাবায়ে কেরাম মদ খাওয়া ছেড়ে দিলেন তারা ভাবলেন যে খেজুর বৃক্ষ এবং আঙ্গুর ফল থেকে নেশা (মদ) ও তৈরী করি আর উত্তম খাদ্যও তৈরী করি। সুতরাং মদ নিশ্চয় উত্তম খাদ্য নয়। এই অবস্থায় অনেক সাহাবায়ে কেরাম মদ খাওয়া ছেড়ে দিলেন। এ সময় কিছু সাহাবায়ে কিরাম (যারা তখনও মদ ছাড়েননি) তাদের মনেও মদের ব্যাপারে দুলছাল সৃষ্টি হল। তখন এ ব্যাপারে তারা রাসূল (সা:) এর কাছে প্রশ্ন করার চিন্তা করলেন।
তখন মদের ব্যাপারে দ্বিতীয় আয়াত নাযিল হল।
২:২১৯ তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ।(إِثْمٌ كَبِيرٌ) আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। তখন একটি বৃহৎ অংশের সাহাবায়ে কেরাম মদ খাওয়া ছেড়ে দিলেন। তখনও যেহেতু সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আসেনি, তাই কিছু সাহাবায়ে কেরাম মদ খাচ্ছিলেন। আবার অনেকে বাদ দিলেন যাহা খাইলে মহাপাপ হয়। কিছু উপকার (শারিরীক) এর আশায় তাহা খাওয়া উচিৎ নয়।
অত:পর তৃতীয় ধাপে নিষেধাজ্ঞা আসল।
৪:৪৩ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, তখনও একটি বিরাট অংশের সাহাবায়ে কেরাম (রা:) মদ ছেড়ে দিলেন। এই যুক্তিতে যে যা খেলে নামায পড়া যায়না তা কেন খাব?
অত:পর যখন অবস্থা স্বাভাবিক হল তখন মহান আল্লাহ তায়ালা চুড়ান্ত আয়াত নিষেধাজ্ঞা নাযিল করলেন।
৫:৯০-৯১ “হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয়ক শর নাপাক, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ, জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না।”
এখানে উল্লেখ্য নাপাক জিনিস খাওয়া অবশ্যই হারাম। কেননা তা না হলে পেসাব পায়খানা খাওয়া বৈধ হবে। যা সম্ভবত আপনিও বলবেন না।
যদি মদ হারাম না হয় (বৈধ হয়) তাহলে মুর্তি পুজাও বৈধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কি বলবেন?
তাছাড়া হাদীসে মদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যদি চান তাহলে পরে উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
@মুসাফির, সহমত।
তিরমিযী শরীফে এক হাদীসে রাসূল (সা:) বলেন। যারা যারা মদ খাবে এবং তা তার জীবনে নিয়মিত করবে। সে জান্নাতে যাবেনা এবং জান্নাতের ঘ্রাণ ও পাবেনা। এটা কি শাস্তির ভয় নয়?
@সত্যের সন্ধানী, হুমমম..।
@dfd, কি ভাই কোন আলোচনা না করে হুমমম….. বলেই …….