কিয়ামতের পূর্বের কয়েকটি আলামতঃ
লিখেছেন: ' dfd' @ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৮, ২০১১ (৩:১২ অপরাহ্ণ)
“বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম”
এই পোষ্টটি শুধু মাত্র বিশ্বাসী মু’মিন মুসলমানদের জন্যঃ
কিয়ামতের পূর্বে যে সকল আলামত দেখা যাবে, সহীহ হাদীস অনুসারে তার কয়েকটির বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
(০১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন গানীমাতের মালকে ব্যক্তিগত সম্পদরূপে ব্যবহার করা হবে, আমানাতকে গানীমাতের মাল মনে করা হবে, যাকাতকে জরিমানা ধারণা করা হবে, দ্বীন ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে ইলম হাসিল করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের নাফারমানী করবে এবং বন্ধুকে খুব নিকটে স্থান দিবে, এবং আপন পিতাকে দূরে সরিয়ে রাখবে, মাসজিদসমূহে শোরগোল করা হবে, ক্ষতির ভয়ে মানুষের সম্মান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রাদি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাবে, মদ্যপান বেড়ে যাবে এবং এই উম্মাতের পরবর্তীকালের লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি অভিসম্পাত করতে থাকবে। সেই সময় তোমরা অপেক্ষা কর, রক্তিম বর্ণের ঝড়ের, ভুকম্পনের, ভূমি ধ্বসের, রূপ বিকৃতির, পাথর বৃষ্টির সূতা ছিঁড়া দানারন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনসমূহের। (তিরমিযী)
(০২) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেন, কিয়ামাতের পূর্বে ছয়টি নিদর্শন পরিলক্ষিত হবে। জনগণ বাজারে থাকবে এমতাবস্থায় হঠাৎ সূর্যের আলো হারিয়ে যাবে। তারপর নক্ষত্ররাজি খসে পড়তে থাকবে। এরপর আকস্মাৎ পর্বতরাজি মাটিতে ঢলে পড়বে এবং যমীন ভীষণভাবে কাঁপতে শুরু করবে। মানব, দানব এবং বন্য জন্তুসমূহ সবাই পরস্পর মিলিত হয়ে যাবে। যেসব পশু মানুষকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যেতো তারা মানুষেরই কাছে নিরাপত্তার জন্য ছুটে আসবে। মানুষ এমন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে যে, তারা তাদের প্রিয় মূল্যবান গর্ভবতী উটের খবর পর্যন্তও নেবে না। জ্বিনেরা বলবে- আমরা যাই, খবর নিয়ে আসি, দেখি কি হচ্ছে? কিন্তু তারা দেখবে যেম সমুদ্রেও আগুন লেগে গেছে। ঐ অবস্থাতেই যমীন ফেটে যাবে এবং আকাশ ফাটতে শুরু করবে। সপ্ত যমীন ও সপ্ত আকাশের একই অবস্থা হবে। একদিক থেকে গরম বাতাস প্রবাহিত হবে, যে বাতাসে সব প্রাণী মারা যাবে। (ইবনু জারীর, ইবনু আবী হাতিম)
(০৩) হুযাইফা ইবনু আসীদ গিফারী (রাঃ) বলেন, একদা আমরা পরস্পরে কথা-বার্তা বলছিলাম, এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেসা করলেন, তোমরা কি সম্পর্কে আলোচনা করছ? তারা বললেন, আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা দশটি নিদর্শন না দেখা পর্যন্ত কিয়ামাত হবে না। আর তা হলঃ
(০১) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়া
(০২) ধোঁয়া নির্গত হওয়া, (যা একনাগাড়ে চল্লিশ দিন পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকবে।)
(০৩) অদ্ভূত একটি জীবের আবির্ভাব হওয়া (দাব্বাতুল আরয)
(০৪) দাজ্জালের আবির্ভাব
(০৫) ইয়াজূজ-মাজূজের আবির্ভাব
(০৬) ঈসা (আঃ) এর অবতরণ
(০৭, ০৮ এবং ০৯) তিনটি ভূমি ধ্বস (এক) পশ্চিমাঞ্চল (দুই) পূর্বাঞ্চল এবং (তিন) আরব উপদ্বীপে
(১০) সর্বশেষে ইয়ামান হতে এমন এক আগুন বের হবে, যা মানুষদেরকে সমবেত হওয়ার স্থানের দিকে তাড়িয়ে নেবে এবং অন্য এক রিওয়ায়াতে দশম লক্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে; এমন এক বায়ু প্রবাহিত হবে যা মানুষদেরকে (কাফিরদেরকে) সাগরে নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম)
(০৪) হুযাইফা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেসা করলাম, হে রাসূলুল্লাহ (সঃ)! পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার নিদর্শন কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ “সেই দিন রাত্রি এতো দীর্ঘ হবে যে, দু’টি রাত্রির সমান অনুভূত হবে। রাত্রে যারা নামায পড়ে তারা জেগে উঠবে এবং যেভবে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে থাকে সেভাবেই পড়বে। তারকাগুলোকে স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত দেখা যাবে, অস্ত যাবে না। এ লোকগুলো নামায শেষ করে ঘুমিয়ে পড়বে। পুনরায় জেগে উঠবে এবং নামায পড়বে। আবার শুয়ে যাবে এবং পুনরায় জেগে উঠবে ও নামায পড়বে। শুয়ে শুয়ে তাদের পার্শ্বদেশ অনড় হয়ে যাবে। রাত্রি এতো দীর্ঘ হয়ে যাবে যে, মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়বে, সকাল হবে না। তারা অপেক্ষমান থাকবে, সূর্য পূর্ব দিক থেকেই উদিত হবে। অকস্মাৎ ওটাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত হতে দেখা যাবে। তখন ঈমান আনয়নে কোনই উপকার হবে না। তাওবাহ ও ঈমানের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। (ইবনু মিরদাওয়াই)
(০৫) উরওয়া ইবনু মাসউদ সাকাফী (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তাঁর নিকট একটি লোক এসে তাঁকে বলেঃ “আপনি এটা কি কথা বলেন যে, এরূপ এরূপ সময় পর্যন্ত কিয়ামাত সংঘটিত হবে?’ উত্তরে তিনি সুবহানাল্লাহ বা রা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অথবা এই ধরনের কোন কালিমা উচ্চারণ করে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেনঃ “আমার ইচ্ছা তো হচ্ছে যে, আমি কারো কাছে কোন হাদীসই বর্ণনা করবো না। আমি এ কথা বলেছিলাম যে, সত্তরই তোমরা বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সংঘটিত হতে দেখবে। বাইতুল্লাহ খারাপ হয়ে যাবে এবং এই হবে, ঐ হবে ইত্যাদি।” রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জাল আসবে, অতঃপর চল্লিশ (চল্লিশ দিন, মাস বা বছর) অবস্থান করবে। চল্লিশ দিন, কি চল্লিশ মাস, কি চল্লিশ বছর তা আমার জানা নাই। তারপর আল্লাহ তা’আলা ঈসা (আঃ) কে নাযিল করবেন। তিনি দাজ্জালকে খুঁজতে থাকবেন এবং তাকে ধ্বংস করে ফেলবেন। এরপর সাতটি বছর এমনভাবে অতিবাহিত হবে যে, সারা দুনিয়ায় দু’জন লোক এমন থাকবে না যাদের পরস্পরির মধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষ থাকবে।” অতঃপর আল্লাহ তা’আলা সিরিয়ার দিক হতে ঠান্ডা বায়ূ প্রবাহিত করবেন, এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠে যারই অন্তরে অণু পরিমাণও ঈমান রয়েছে সেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে যাবে। এমনকি কেউ যদি কোন পাহাড়ের গর্তেও ঢুকে পড়ে তবে সেই গর্তেও বায়ু প্রবেশ করে তার মৃত্যু ঘটিয়ে দেবে। তখন ভূ-পৃষ্ঠে শুধু দুষ্ট লোকেরাই অবস্থান করবে। তারা পাখীর মত হালকা ও চতুষ্পদ জন্তুর মত জ্ঞা-বুদ্ধিহীন হবে। তাদের মধ্যে ভাল এবং মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা উঠে যাবে। তাদের কাছে শয়তান এসে বলবেঃ “তোমরা এই মূর্তিগুলোর উপসনা পরিত্যাগ করেছো এতে কি তোমাদের লজ্জা হয় না?” তখন তারা মূর্তিপূজা শুরু করে দেবে। আল্লাহ তা’আলা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করতেই থাকবেন এবং তাদেরকে সুখে-স্বাচ্ছন্দে রাখবেন। সুতরাং তারা আনন্দ বিহ্বল থাকবে। এমতাবস্থায় ইসরাফীল (আঃ)-কি শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। সর্ব প্রথম এই শব্দ ঐ লোকটি শুনতে পাবে- যে তার উটগুলোর জন্য হাউয ঠিকঠাক করার কাজে লিপ্ত থাকবে। এই শব্দ শোনা মাত্রই সে অজ্ঞান হয়ে পড়বে এবং সব লোকই অজ্ঞান হতে শুরু করবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা শিশিরের মত বারিবর্ষণ করবেন। ফলে দেহ অঙ্কুরিত বা উত্থিত হতে থাকবে। এরপর দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। এর ফলে সবাই কবর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে। সেখানে শব্দ উচ্চারিত হবেঃ “হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সমীপে চলো এবং তথায় অবস্থান করতে থাকো। তোমাদের সাওয়াল-জাওয়াব হবে।” তারপর ফিরিশতাদেরকে বলা হবেঃ “আগুন বা জাহান্নামের অংশকে পৃথক কর।” তাঁরা প্রশ্ন করবেনঃ “কত জনের মধ্য হতে কত জনকে?” উত্তরে বলা হবেঃ “প্রতি হাজারের মধ্য হতে নয় শত নিরানব্বই জনকে।” এটা হবে ঐ দিন যেই দিন বালককে বুড়ো করে দেবে এবং হাঁটু পর্যন্ত পা উম্মোচিত হয়ে যাবে অর্থাৎ চরম সংকটময় দিন হবে।
প্রথম ফুৎকার হবে ভীত-বিহ্বলতার, দ্বিতীয় ফুৎকার হবে অজ্ঞানতার ও মৃত্যুর, তৃতীয় ফুৎকারের সময় মানুষ পুনরুজ্জীবিত হয়ে জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে হাজির হয়ে যাবে। (সবাই তাঁর নিকট আসবে বিনীত অবস্থায়) (ইবনু কাসীর)
দাজ্জালের আবির্ভাব ও ধ্বংস
নাওয়াস ইবনু-সামআন (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদিন ভোর বেলা দাজ্জালের আলোচনা করলেন। আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি তার সম্পর্কে এমন কিছু কথা বললেন, যার দ্বারা মনে হচ্ছিল যে, সে নেহায়াতই তুচ্ছ ও নগণ্য (উদাহরণতঃ সে কানা হবে)। পক্ষান্তরে কিছু কথা এমন বললেন, যার দ্বারা মনে হচ্ছিল, তার ফিৎনা অত্যন্ত ভয়াবহ ও কঠোর হবে। (উদাহরণতঃ জান্নাত ও দোযখ তার সাথে থাকবে এবং অন্যান্য আরও অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমধর্মী ঘনটা ঘটবে)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বর্ণনার ফলে (আমরা এমন ভীত হয়ে পড়লাম), যেন দাজ্জাল খেজুর গাছের ঝাড়ের মধ্যেই রয়েছে। (অর্থাৎ অদূরেই বিরাজমান রয়েছে)। বিকালে যখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হলাম, তখন তিনি আমাদের মনের অবস্থা আঁচ করে নিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি বুঝেছ? আমরা আরয করলামঃ আপনি দাজ্জালের আলোচনা প্রসঙ্গে এমন কিছু কথা বলেছেন, যাতে বোঝা যায়, ব্যাপারটি যেহেতু তুচ্ছ এবং আরও কিছু কথা বলেছেন, যাতে মনে হয় সে খুব শক্তিসম্পন্ন হবে এবং তার ফিৎনা হবে খুব গুরুতর। এখন আমাদের মনে হয়েছে যে, যেন সে আমাদের নিকটেই খেজুর গাছের ঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ তোমাদের সম্পর্কে আমি যেসব ফিৎনার আশঙ্কা করি, তন্মধ্যে দাজ্জালের তুলনায় অন্যান্য ফিৎনা অধিক ভয়ের যোগ্য। যদি আমার জীবদ্দশায় সে আবির্ভূত হয়, তবে আমি নিজে তার মুকাবিলা করব। পক্ষান্তরে সে যদি আমার পরে আসে, তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে পরাভূত করার চেষ্টা করবে। আমার অনুপস্থিতিতে আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক মুসলমানের সাহায্যকারী। (তার লক্ষণ এই যে) সে যুবক, ঘন কোঁকড়ানো চুলওয়ালা হবে। তার একটি চক্ষু উপরের দিকে উত্থিত হবে। (এবং অপর চক্ষুটি হবে কানা) যদি আমি (কুৎসিত চেহারার) কোন ব্যক্তিকে তার সাথে তুলনা করি, তবে সে হচ্ছে আবদুল উযযা ইবনু কুতনা। (জাহিলিয়াত যুগে কুৎসিত চেহারার ‘বনু-খুযাআ’ গোত্রের এ লোকটির তুলনা ছিল না)। যদি কোন মুসলমান দাজ্জালের সম্মুখীন হয়ে যায়, তবে সূরা কাহাফের প্রথম আয়াতগুলো পড়ে নেয়া উচিত। (এতে সে দাজ্জালের ফিৎনা থেকে নিরাপদ হয়ে যাবে) দাজ্জাল সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থান থেকে বের হয়ে চতুর্দিকে হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা তার মুকাবিলায় সুদৃঢ় থাক।
আমরা আরয করলামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সে কতদিন থাকবে। তিনি বললেনঃ সে চল্লিশ দিন থাকবে, কিন্তু প্রথমদিন এক বছরের সমান হবে। দ্বিতীয় দিন এক মাসের এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনের মতই হবে। আমরা আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ), যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, আমরা কি তাতে শুধু এক দিনের (পাঁচ ওয়াক্ত) নামাযই পড়ব? তিনি বললেনঃ না; বরং সময়ের অনুমান করে পূর্ণ এক বছরের নামায পড়তে হবে। আমরা আবার আরয করলামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সে কেমন দ্রুত গতিতে সফর করবে? তিনি বললেনঃ সে মেঘ খন্ডের মত দ্রুত চলবে, যার পিছনে অনুকূল বাতাস থাকে। দাজ্জাল কোন সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে তাকে মিথ্যা ধর্মবিশ্বাসের প্রতি দাওয়াত দেবে। তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে সে মেঘমালাকে বর্ষণের আদেশ দেবে। ফলে বৃষ্টি হবে এবং মাটিকে আদেশ দেবে; ফলে সে শস্য-শ্যামলা হয়ে যাবে। (তাদের চতুষ্পদ জন্তু তাতে চরবে)। সন্ধ্যায় যখন জন্তুগুলো ফিরে আসবে, তখন তাদের কুঁজ পূর্বের তুলনায় উঁচু হবে এবং স্তন দুধে পরিপূর্ণ থাকবে। এরপর দাজ্জাল অন্য সম্প্রদায়ের কাছে যাবে এবং তাদেরকেও কুফরের দাওয়াত দেবে। কিন্তু তারা তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করবে। সে নিরাশ হয়ে ফিরে গেলে সেখানকার মুসলমানরা গুর্ভিক্ষে পতিত হবে। তাদের কাছে কোন অর্থ-কড়ি থাকবে না। সে শস্যবিহীন অনুর্বর ভূমিকে সম্বোধন করে বলবে। তোর গুপ্তধন বাইরে নিয়ে আয়। সেমতে ভূমির গুপ্তধন তার পেছনে পেছনে চলবে- যেমন মৌমাছিরা তাদের সরদারের পেছনে চলে। অতঃপর দাজ্জাল একজন ভরপুর যুবক ব্যক্তিকে ডাকবে এবং তাকে তরবারির আঘাতে দিখন্ডিত করে দেবে। তার উভয় খন্ড এতটুকু দূরত্বে রাখা হবে; যেমন তীর নিক্ষেপকারী ও তার লক্ষ্যবস্তুর মাঝখানে থাকে। অতঃপর সে তাকে ডাক দিবে। সে (জীবিত হয়ে) দাজ্জালের কাছে আনন্দ চিত্তে চলে আসবে।
ইতিমধ্যে আল্লাহ তা’আলা ঈসা (আঃ) কে নামিয়ে দিবেন। তিনি দু’টি রঙিন চাদর পরে দামিস্ক মাসজিদের পূর্ব দিককার সাদা মিনারে ফেরেশতাদের পাখার উপর পা রেখে অবতরণ করবেন। তিনি যখন মস্তক অবনত করবেন, তখন তা থেকে পানির ফোঁটা পড়বে। (মনে হবে যেন এখনই গোসল করে এসেছেন)। তিনি যখন মস্তক উঁচু করবেন, তখনও মোমবাতির মত স্বচ্ছ পানির ফোঁটা পড়বে। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস যে কাফিরের গায়ে লাগবে, সে সেখানেই মরে যাবে। তাঁর শ্বস-প্রশ্বাস তাঁর দৃষ্টির সমান দূরত্বে পৌঁছবে। ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে খুঁজতে বাবুল্লুদ্দে গিয়ে তাকে ধরে ফেলবেন। (এই জনপদটি এখনও বাইতুল মুকাদ্দাসের অদূরে এ নামেই বিদ্যমান) সেখানে তাকে হত্যা করা হবে। এরপর তিনি জনসমক্ষে আসবেন, স্নেহভরে মানুষের চেহারায় হাত বুলাবেন এবং তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদার সুসংবাদ শোনাবেন।
এমাতবস্থায় আল্লাহ তা’আলা ঘোষনা করবেনঃ আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এমন লোক বের করব, যাদের মুকাবিলা করার শক্তি কারও নেই। কাজেই আপনি মুসলমানদেরকে সমবেত করে তূর পর্বতে চলে যান।
সে মতে তিনি তাই করবেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ইয়াজূজ-মাজূজের রাস্তা খুলে দেবেন। তাদের দ্রুত চলার কারণে মনে হবে যেন উপর থেকে পিছলে নীচে এসে পড়ছে। তাদের প্রথম দলটি তাবরিয়া উপসাগরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা পানি পান করে এমন অবস্থা করে দেবে যে, দ্বিতীয় দলটি এসে সেখানে কোন দিন পানি ছিল, একথা বিশ্বাস করতে পারবে না।
ঈসা (আঃ) ও তাঁর সাথীর তূর পর্বতে আশ্রয় নেবেন। অন্য মুসলমানরা নিজ নিজ দুর্গে ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেবে। পানাহারের বস্তুসামগ্রী সাথে থাকবে, কিন্তু তাতে ঘাটতি দেখা দেবে। ফলে একটি গরুর মাথাকে একশ’ দীনারের চাইতে উত্তম মনে করা হবে। ঈসা (আঃ) ও অন্যান্য মুসলমানরা কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবেন। (আল্লাহ তা’আলা দু’আ কবুল করবেন) তিনি মাহামরী আকারে রোগ-ব্যাধি পাঠাবেন। ফলে, অল্প সময়ের মধ্যেই ইয়াজূজ-মাজূজের গোষ্ঠী সবাই মরে যাবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) সঙ্গীদেরকে নিয়ে তুর পর্বত থেকে নীচে নেমে এসে দেখবেন পৃথিবীতে তাদের মৃতদেহ থেকে অর্ধ হাত পরিমিত স্থানও খালি নেই এবং (মৃতদেহ পঁচে) অসহ্য দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। (এ অবস্থা দেখে পুনরায়) ঈসা (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর দরবারে দু’আ করবেন (যেন এই বিপদও দূর করে দেয়া হয়। আল্লাহ তা’আলা এ দু’আও ক্ববুল করবেন) এবং বিরাট আকৃতির পাখী প্রেরণ করবেন, যাদের ঘাড় উটের ঘাড়ের মত। তারা (মৃতদেহগুলো উঠিয়ে যেখানে আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, সেখানে ফেলে দেবে)। কোন কোন রিওয়ায়াতে রয়েছে মৃতদেহগুলো সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে। এরপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। কোন নগর ও বন্দর এ বৃষ্টি থেকে বাদ থাকবে না। ফলে সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ ধৌথ হয়ে কাঁচের মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ভূ-পৃষ্ঠকে আদেশ করবেনঃ তোমরা পেটের সমূদয় ফল-ফুল উদগীরণ করে দাও এবং নতুনভাবে তোমার বারকাতসমূহ প্রকাশ কর। (ফলে তাই হবে এবং এমন বারকাত প্রকাশিত হবে যে,) এতটি ডালিম একদল লোকের আহারের জন্য যথেষ্ট হবে এবং মানুষ তার ছাল দ্বারা ছাতা তৈরী করে ছায়অ লাভ করবে। দূধে এতো বারাকাত হবে যে, একটি উষ্টিীর দুধ একদল লোকের জন্য, একটি গাভীর দুধ এক গোত্রের জন্য এবং একটি ছাগলের দুধ একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে। (চল্লিশ বছর যাবত এই অসাধারণ বারকাত ও শান্তি-শৃঙ্খলা অব্যাহত থাকার পর যখন কিয়ামাতের সময় সমাগত হবে; তখন) আল্লাহ তা’আলা একটি মনোরম বায়ু প্রবাহিত করবেন। এর পরশে সব মুসলমানের বগলের নীচে বিশেষ এক প্রকার রোগ দেখা দেবে এবং সবাই মৃত্যুমুখে পতিত হবে; শুধু কাফির ও দুষ্ট লোকেরাই অবশিষ্ট থেকে যাবে। তারা ভূ-পৃষ্ঠে জন্তু-জানোয়ারের মত খোলাখুলি অপকর্ম করবে। তাদের উপরই কিয়ামাত আসবে। (মুসলিম)
দাব্বাতুল আরযের পরিচয়ঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, তার মাথা হবে বলদের মাথার মত, চোখ হবে শুকরের চোখের মত, কান হবে হাতীর কানের মত এবং শিং-এর জায়গাটি উটের মত হবে। তার ঘাড় হবে উটপাখীর মত, বক্ষ হবে সিংহের মত, রং হবে চিতা বাঘের মত, ক্ষুর হবে বিড়ালের মত, লেজ হবে ভেড়ার মত, এবং পা হবে উটের মত। প্রত্যেক দুই জোড়ের মাঝে বার গজের ব্যবধান থাকবে। তার সাথে মূসা (আঃ) এর লাঠি ও সুলাইমান (আঃ) এর আংটি থাকবে। সে মূসা (আঃ) এর ঐ লাঠি দ্বারা প্রত্যেক মু’মিনের কপালে চিহ্ন দিয়ে দেবে, যা ছড়িয়ে পড়বে এবং তার চেহারা জ্যোতির্ময় হয়ে যাবে। আর প্রত্যেক কাফিরের চেহারার উপর সুলাইমান (আঃ) এর আংটি দ্বারা চিহ্ন দিয়ে দেবে যা ছড়িয়ে পড়বে এবং তার চেহারা কালো হয়ে যাবে। এই ভাবে মু’মিন ও কাফিরকে পৃথক করা যাবে। ক্রয়-বিক্রয়ের সময় এবং খাদ্য খাওয়ার সময় মানুষ একে অপরকে “হে মু’মিন!’ এবং ‘হে কাফির!’ এই বলে সম্বোধন করবে। দাব্বাতুল আরয এক এক করে নাম ধরে ডেকে ডেকে তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ অথবা জাহান্নামের দুঃসংবাদ শুনিয়ে দেবে। এই আয়াতের ভাবার্থ এটাই। (ইবনু কাসীর)
আসুন আমরা দাজ্জালের ফিৎনা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই।
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আযাবিল কাবরি, ওয়ামিন আযাবি জাহান্নামা ওয়া মিন ফিৎনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়ামিন শাররী ফিৎনাতিল মাসীহিদ্দাজ্জাল”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কাবরের আযাব থেকে রক্ষা করো, জাহান্নামের আযাব এবং দুনিয়ার ফিৎনা এবং দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রক্ষা করো।”
আমীন…………………
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাজত করুন (আমীন)
মহান আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।