লগইন রেজিস্ট্রেশন
আপনার প্রশ্নটি লেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন করুন
নাম *
ই-মেইল *
  আমার নাম প্রদর্শন করুন।
শ্রেণীবিভাগ *
প্রশ্ন *
   লেখাটি পড়তে পারছি না, দয়া করে রিসেট করুন.
    * প্রয়োজনীয়


সাম্প্রতিক প্রশ্ন ও উত্তরসমূহ দেখুন



আস-সালামু আলাইকুম,

প্রশ্নঃ আল্লাহতায়া’লা তো অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সকল কিছুই জানেন। তাঁর কাছে কোন কিছুই অজ্ঞাত নহে। আর আমরা এও জানি যে আমাদের ভাগ্য পুর্ব হতেই র্নিধারিত করা আছে, তাকদীরে যা লেখা আছে তাই হবে । তাছাড়া তাকদীরে বিশ্বাস ঈমান এর অন্যতম । তাহলে যেহেতু তাকদীর পুর্ব হতে র্নিধারন করা থাকে , তাহলে আমার কোন কাজে যদি বিফলতা ভাগ্যে লেখা থাকে , আমি যতই পরিশ্রম করিনা কেন ·· তাতে কি আমার উক্ত কাজ সফলকাম হবে ? যদি না হয় তা হলে আমার চেষ্টা পরিশ্রম করে কি লাভ হল·!!
অগাস্ট. ২৩, ২০১০ by মো: শামসুল আরেফীন
উত্তরঃ
তাকদীর দুই প্রকার ,

একঃ তাকদীরে মাবরুর , অর্থাৎ যেটা কোন সময় পরিবর্তন হয়না। যেমনঃ মৃত্য যখন তাকদীরে লেখা আছে তখন হবে ।
দুইঃ তাকদীরে মুয়াল্লাহ যেটা মানুষের কর্ম তথা তাদবীরের কারণে পরিবর্তন হয় ,যেমন মানষের জীবনে সুখ শান্তি এবং দুঃখ কষ্ট ইত্যাদী মানুষের কর্মের উপর নির্ভর করে ।

যেমন আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরায়ে শুরার ৩০ নং আয়তে ইরশাদ করেন, আয়াত

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ

"তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন।
এবং আল্লাহ তায়’লা সূরায়ে রুমের ৪১ নং আয়াতে এরশাদ করেন,

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

"স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।"

এবং আল্লামা নাসাফী (রঃ) শারহুল আকাঈদ নামক গ্রন্থে লেখেনঃ আল্লাহ তায়া’লা কিছু কাজ মানুষের উপর ছেড়ে দিয়েছেন , যদি কেহ ভাল কাজ করে তাহলে সে সুওয়াব পাবে, আর ,যদি খারাপ কাজ করে তাহলে আযাব ভুগ করতে হবে। সুতরাং যদি কাহারো ভাগ্যে বিফলতা লেখা থাকে তাহলে সে পরিশ্রম তথা ভাল কাজের মাধ্যমে সফলকাম হতে পারে।

উত্তর দিয়েছেন:
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।

আপনাদের উপর শান্তি বর্শিত হউক আল্ললাহর পক্ষ থেকে।

দাড়ি রাখা ইসলামে কতটা গুরুত্বপুর্ন? কেউ যদি দাড়ি না রাখে, তাহলে ইসলামে তার শাস্তি কি?
আল-কুরান এবং সহিহ হাদিসের আলোকে উত্তর দেবেন বলে আশা রাখি। ধন্যবাদ।
অগাস্ট. ২৩, ২০১০ by fahad
উত্তর: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সকল ইমাম গণের সর্বসম্মতি ক্রমে দাড়ি লম্বা রাখা ওয়াজিব এবং তা কমপক্ষে এক মুষ্টি পরিমান হতে হবে । এ ব্যাপারে চার মাযহাবের সকল ইমাম গণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ইসলামে দাড়ির প্রমান

কোরআনের আলোকেঃ-


কোরআন শরীফে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি তবে হারুন আঃ এর ঘটনায় দাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে । যথাঃ আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেনঃ- (হারূন আঃ তাঁর ভাই মূসা আঃ কে বললেন ) আপনি আমার দাড়ি ও মাথা ধরবেন না।

হাদীসের আলোকেঃ-
১/ ইবনে উমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল ( সাঃ ) ইরশাদ করেনঃ- তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর, আর দাড়ি লম্বা রাখো এবং গোঁফ খাটো কর।
(সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৬০২ , সহীহুল বুখারী হাঃ নং ৫৮৯২ )

ইবনে উমর ( রাঃ) সূত্রে অন্য হাদীসে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ-তোমরা গোঁফ ছোট কর এবং দাড়ি লম্বা রাখো। (সহীহুল বুখারীঃ হাঃ নং ৫৮৯৩ , সহীহ মুসলিমঃ হাঃ নং ৬০০)

এছাড়া বিভিন্ন শব্দে হাদীসে দাড়ি লম্বা রাখার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দাড়ি লম্বা করা সম্পর্কে হাদীস সমূহে ছয়টি শব্দ বর্ণিত হয়েছে । সে গুলো হল- আরবী শব্দ [ আমাদের আপাতত আরবী লেখার সুবিধা না থাকার কারণে পরবর্তিতে আরবী শব্দ সংযোজন করা হবে ] উপরোক্ত সব কয়টি বাক্যের মর্মাথ্য একই , অর্থাৎ তোমরা দাড়ি লম্বা কর।

এ বিষয়টি লক্ষ্যণীয় যে, কোন হাদীসেই সরাসরি দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখার কথা উল্লেখ নেই , শুধুমাত্র লম্বা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা প্রামাণিত আছে । দাড়ি সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবু হুরাইরা ইবনে উমর (রাঃ) প্রমুখ গণ দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখতেন । তাই এ ব্যাপারে তাঁদের আমল আমাদের জন্য দলীল । এর কারণ হল - যে বিষয়ে হাদীসে সরাসরি পাওয়া যায় না সে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। কেননা তারা হলেন হাদীসে রাসূলের (সাঃ) আমলী নমুনা।
সুতরাং দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ হওয়া প্রত্যক্ষভাবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত হলেও পরোক্ষভাবে তা রাসূল (সাঃ) থেকেই প্রমাণিত ।

বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে-···ইবনে উমর (রাঃ) যখন হজ্ব অথবা উমরা করতেন,তখন তিনি দাড়ি মুঠ করে ধরে মুঠের বেশী অংশটুকু কেটে ফেলতেন। ( সহীহুল বুখারী হাঃ ৫৮৯২)

এখানে যদিও হজ্ব ও উমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে ,কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন । এ ছাড়াও আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের (রাঃ) হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে।
(ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)

হযরত উমর (রাঃ) তো নিজেই এক ব্যক্তির দাড়ি ধরে এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজেই কেটে দিয়েছিলেন । (প্রাগুক্ত) ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন রাসূলের (সাঃ) আদর্শের পুঙ্খনুভাবে এবং পূর্ণ অনুসারী । তাই তিনি যা করেছেন তা রাসূল (সাঃ) থেকেই জেনে-শুনে করেছেন ।

উপরোক্ত দু’জন মহান সাহাবী ব্যতীত আবু হুরাইরা ,জাবির (রাঃ) পমুখ সাহাবী থেকে ও দাড়ির এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু কেটে ফেলার কথা পাওয়া যায় । এ থেকে দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

দাড়ি না রাখা , মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়েও ছোট করে ফেলে তার আমল নামায় পুনরায় দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গুনাহ লিখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল-দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লিখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাড়ি ছোট করা বা মুন্ডানোর গুনাহ দীর্ঘস্থায়ী ,যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে (এক মুঠের চেয়ে ) সে ফাসিক।

উত্তর দিয়েছেন:
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।

প্রশ্নঃ আস-সালামু আলাইকুম,
তারাবীহ নামাজ কয় রাকাত ? অনেকে বলে থাকে তারাবীহ নামাজ যে ৮ রাকাআত এটা বখারী শরীফের দলীল এবং ২০ রাকআতের কোনো দলীল নেই । এই বক্তব্য সঠিক কিনা ?
অগাস্ট. ১১, ২০১০ by যুলকারনাইন
উত্তর: তারাবীহ নামাজ ২০ রাকআত। যারা বলে ৮ রাকাআত তাদের বক্তব্য সঠিক নয় । মুলত ধর্মপ্রান সাধারন মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির লক্ষে আহলে হাদীস বা লামাজহাবী সম্প্রদায় ৮ রাকাআত তারাবীহ এই মতামতের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে ।

* সংশয় নিরসনের জন্য ৮ রাকআত বা এসংক্রান্ত বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্নিত হাদীস ও তার সঠিক মর্ম নিম্নে তুলে ধরা হল।

প্রথম হাদীসঃ-
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন , রমজানে রাসুল (সাঃ) এর নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন , রাসুল (সাঃ) রমজানে ও অন্যান্য মাসে বিতির সহ এগার রাকআতের বশী পড়তেন না।
(বুখরী শরীফ হাঃ নং ১১৪৭)

দ্বিতীয় হাদীসঃ-
ইয়াহইয়া ইবনে আবু সালামা (রঃ) বলেন আমি রাসুল (সঃ) এর রাত্রী কালীন নামাজ সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম । উত্তরে তিনি বললেন, রাসুল(সঃ) রাত্রে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন । প্রথমে আট রাকাত পড়তেন , এর পর বিতির পড়তেন, তার পর দুই রাকত নামাজ বসে আদায় করতেন ।
( মুসলিম শরীফ- হাঃ নং ১৭২৪)

এজাতীয় হাদীস দ্বারা লা মাজহাবী সম্প্রদায়- তারাবীহ ৮ রাকাত এর উপর দলীল পেশ করে থাকে।

উপরোক্ত হাদীস সমূহের উত্তরঃ-

প্রথম উত্তর: আয়েশা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীস দুটি যেমনি ভাবে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে ঠিক তেমনি মুসলিম শরীফেই আয়েশা (রাঃ) থেকে দশ রাকাতের হাদীস ও বর্ণিত আছে। যেমন:

হাদীসঃ-
কাসেম ইবনে মুহাম্মদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , আমি আয়েশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুল (সাঃ) রাত্রিতে দশ রাকাত নামাজ, এক রাকাত বিতির ,ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সহ মোট ১৩ রাকাত পড়তেন।
( মুসলিম শরীফ- হাঃ নং ১৭২৭)

এমন কি আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হদীস গুলোর প্রতি লক্ষ করলে বোঝা যায় রাসুল (সাঃ) রাত্রীকালীন নামাজ- কোন রাত্রীতে ১১ রাকাত ,কখনো ১৩ রাকাত কখনো ৯ রাকাত, আবার কখনো ৭ রাকাত ও, আদায় করতেন । সুতরাং আয়েশা (রাঃ) এর হাদীস দ্বারা কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা সম্পুর্ন অযৌক্তিক।

দ্বিতীয় উত্তরঃ-
প্রকৃত পক্ষে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস গুলো তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত , তারাবীহ সম্পর্কিত নয় । একারনেই হাদীস গ্রন্থাকারগন এজাতীয় হাদীসকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন , তারাবীর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি।

তৃতীয় উত্তরঃ-
আহলে হাদীসগন তারাবী ৮ রাকাত হওয়ার স্বপক্ষে যে হাদীসগুলো পেশ করে থাকেন, সে অনুযায়ী তারা নিজেরাই আমল করেন না। কেননা হাদীসে রমজান ও অন্যান্য মাসের কথাও উল্লেখ রয়েছে , অথচ তারা তাদের হাদীস অনুযায়ী অন্যান্য মাসে তারাবীহ পড়ে না।

বিশ রাকাত তারাবীর দলীল সমুহ:

১ নং হাদীসঃ-
সায়ের ইবনে ইয়াজিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন সাহাবা গন উমর (রাঃ) এর খেলাফত কালে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন ।
(বাইহাকী শরীফ-খঃ ২/৪৯৬ হাঃ নং ৪৬১৭)

২ নং হাদীসঃ-
ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ- হযরত উমর (রাঃ) এর যুগে সাহাবারা বিতির সহ তেইশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন । (মুয়াত্তা মালেক খঃ ১পৃঃ ১১৫)

৩ নং হাদীসঃ-
আতা ইবনে আবী রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি সাহাবাদেরকে বিতির সহ তেইশ রাকাত তারাবী পড়তে দেখেছি ( মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা - ৫/২২৪)
(উল্লেখিত সবগুলো হাদীস সহীহ)

এছাড়াও অসংখ্য হাদীস দ্বারা একথা সুস্পষ্ট রুপে প্রমানিত হয় যে, তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত যার উপর খোলাফয়ে রাশেদীন ,সমস্ত সাহাবা , তাবেই, তাবে তাবেই, সালফে সালেহীন গন, ঐক্যমতে আমল করেছেন। এবং চার মাজহাবের ইমাম গনও এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করেছেন ।

সুতরাং যারা ৮ রাকাত তারাবীর কথা বলেন ,তারা মুলত সরলমনা মুসলমানদের অন্তরে বিভ্রান্তির বিষ ঢেলে ইসলামকে বিতর্কিত করতে চান।

আল্লাহ তা’লা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুক।

উত্তর দিয়েছেন:
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।



প্রশ্নঃ আস-সালামু আলাইকুম,
অনেকে বলে থাকে শবে বরাতের কথা এবং শবে বরাত রাত্রে ইবাদত করার পদ্ধতি বা ফজিলত নিয়ে কোরআন ,হাদিসের কোন দলীল নেই।এবং এটা বিদআত। এ বিষয়ে সঠিক ফয়সালা জানালে খুশী হবো।
অগাস্ট. ৪, ২০১০ by হাফিজ
উত্তর: হাদিসের আলোকে শবে বরাতঃ
শবে বরাত সম্পর্কে বর্তমানের কিছু স্হুল দৃষ্টিসম্পন্ন লোকের দৃষ্টিভংগি হচ্ছে যে, শবে বরাত সম্পর্কীয় যে সব হাদিস পাওয়া যায় সেগুলো মওজু তথা মনগড়া ও জাল হাদিস । এ ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তারা শবে বরাতের ফজীলতকে সম্পুর্ন অস্বীকার করে বসে, এমন কি এরাতে জাগরন থেকে ইবাদত-বন্দেগী,যিকির তেলাওয়াতসহ সকল নফল ইবাদত করাকে বিদআত মনে করে।
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিসের কিতাব সমুহ গভীর ভাবে অধ্যয়ন করলে কিংবা হাদিস শাস্ত্রে সম্যক ধারনা থাকলে একথা দিবা লোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, তাদের এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি অমুলক ও ভ্রান্ত এবং হাদিস শাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞতাপ্রসূত, এমন কি তাদের এ ভ্রান্ত ধারনা শরীয়তের বিধানাবলী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাহাবা তাবেয়ীন আইম্মায়ে মুজতাহেদীনসহ সকল সলফে সালেহীন এবং তাদের থেকে পরস্পরা সূত্রে প্রাপ্ত আমলের সাথে অসঙ্গতি ও বিরোধ পূর্ন।

মূলতঃ সাহাবায়ে কেরামের এক জলীলুল ক্বদর দল থেকে বিভিন্ন সুত্রে শবে বরাতের ফজীলত সম্পর্কীয় বহু বর্ণনা হাদিস গন্থ সমূহে বিদ্যমান যে সব বর্ণনার সূত্রগুলো কিছু ছহীহ আর কিছু হাসান তথা সহীহের অন্তরভুক্ত আর কিছু জঈফ (যা পরস্পর পরস্পরকে শক্তিশালী করে আমলের যোগ্য করে তুলে) । যদিও স্বতন্ত্রভাবে প্রত্যেকটি বর্ণনা কে সহীহ বলে আখ্যায়িত করা যায় না, কিন্তু বেশ কিছু বর্ণনা ছিক্বাহ রাবী তথা নির্ভর যোগ্য বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিত এবং তার অনুকূলে আরো রেওয়ায়েত বা হাদিস বিদ্যমান থাকায় নিঃসন্দেহে তা সহীহ এর মানে উন্নীত হয়। এই কারনেই শরীয়তে শবে বরাতের ফজীলত ভিত্তিহীন বলার কোন অবকাশ নেই।
(কোরআন হাদিসের আলোকে শবে বরাত পৃঃ ৫৩, মুফতী মীযানুর রহমান)

উপরোল্লেখিত ভাষ্য অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস গুলো সংক্ষেপে নিম্নে তুলে ধরা হলো এবং তার মান ও নির্নয় করা হলো।

প্রথম হাদিসঃ হযরত মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’য়ালা শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টিদান করে সকল কে ক্ষমা করে দেন, কিন্তু মুশরিক এবং হিংসুক ছাড়া
আলোচ্য হাদিসটির মান হলো হাসান লিজাতিহী

দ্বিতীয় হাদিসঃ হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হুজুর পাক (সাঃ) ইরশাদ করেন শাবান মাসের পঞ্চদশ রজনীর আগমন হলে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে তাশরীফ আনেন (কিভাবে তাশরীফ আনেন সেটা আমাদের জ্ঞান বহির্ভুত ) এবং স্বীয় বান্দাদিগকে মাফ করে দেন। কিন্তু মুশরিক ও হিংসুক ব্যতিত ।
আলোচ্চ হাদিসটির মান হাসান তথা সহীহর অন্তর্ভুক্ত।

তৃতীয় হাদিস: শবে বরাতে কি ঘটে এ সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত রাসুল (সাঃ) থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন এই রাতের কার্যক্রম হলো এই বছর যত ( সন্তান ) জন্মগ্রহন করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ বছর যত লোক ইন্তিকাল করবে তা লেখা হয় আর এ রাতেই বান্দাদের সারা বছরের কার্যাবলী আসমানে উঠানো হয় আর এ রাতেই নির্ধারিত রিযিক অবতীর্ন হয়, তার পর আয়েশা (রাঃ) জানতে চাইলেন যে হুজুর , আল্লাহর রহমত ও করুনা ছাড়া কেউ কি বেহেস্তে যেতে পারবে ? রাসূল (সাঃ) তিনবার বললেন কখনো পারবেনা , আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর আপনি ও না ? জবাবে বললেন আমি ও একমাত্র তার দয়া ও রহমত ছাড়া জান্নাতে যেতে পারবো না। (মিশকাত শরীফ পৃঃ ১১৫)

চতুর্থ হাদিস :হযরত আলী ইবনে আবু তালীব (রা:) থেকে বর্নিত , তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেন, "শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাত আসলে তখন রাতের অংশে ইবাদত করো এবং দিনের অংশে রোজা রাখো । কারন ঐই রাতে সুর্যাস্হ যাওয়ার পর মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, আছো কি কোনো মাগফিরাতের প্রত্যাশী ? তাকে আমি মাগফিরাত দান করব । আছো কি কোনো রিজিকের যাচনাকারী ? আমি তাকে রিযিক দান করবো । আছো কি অমুক আছো কি অমুক --- এভাবে প্রভাতের সূচনা পর্যন্ত ডাকতে থাকেন ।

উপরের হাদিসটি একজন রাবীর কারনে দুর্বল হলেও আরো অন্যান্য হাদিসের সমর্থন থাকার কারণে তার উপর আমল করা যাবে । কিভাবে যাবে সেটা বিস্তারিত জানতে গেলে দেখুন মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদের লিখিত "কোরআন হাদিসের আলোকে শবে বরাত" ।

উপরোল্লেখিত আলোচনার দ্বারা এ কথা স্পষ্ট প্রমানিত হোলো যে , শবে বরাতের ইবাদত করার পদ্ধতি ও ফজীলত হাদিস দ্বারা প্রমানিত রয়েছে । ( উপরোল্লেখিত আলোচনাটি বিস্তারিত ভাবে রয়েছে কোরআন হাদিসের আলোকে শবে বরাত -১৮-১৪৪)

এ ব্যাপারে আরো অনেক হাদিস রয়েছে বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরাম থেকে যথাঃ

* হযরত আবদুল্যাহ ইবনে আমর এর বর্ণিত হাদিস (মুসনাদে আহমদ খঃ ২ পৃঃ ১৭৬ হাঃ ৬৬৫০ ও অন্যান্য গ্রন্থে) হাদিসটির মান (হাসান )
* হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিস ,(তিরমিজী খঃ ১ পৃঃ ১৫৬ ইবনে মাযা পৃঃ ৯১ ইবনে আবি শাইবা খঃ ১০ পৃঃ ৪৩৮ ও অন্যান্য গ্রন্থে) হাদিসটির মান হাসান সহীহ লিগাইরিহী।
* হযরত আবু মুসা আল আশআরীর বর্ণিত হাদিস (ইবনে মাযা পৃঃ ৯৯ শেয়াবুল ঈমান খঃ ৩ পৃঃ ৩৮২ ও অন্যান্য গ্রন্থে )
* হযরত আবু ছালাবা আল খুশানী (রাঃ) এর বর্নিত হাদিস ( মুজামুল কাবীর খঃ ২২ পৃঃ ২২৩ হাঃ ৫৯০ ও অন্যান্য গ্রন্থে ) হাদিসটির মান যয়ীফ, সহীহ শাওযাহেদের দ্বারা।
* হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদিস ( মুসনাদে বাজ্জার হাঃ ২০৪৬ মাজমাউজ্জাওয়ায়েদ খঃ ৮ পৃঃ ৬৫ হাঃ ১২৫৮ ) হাদিসটির মান সহীহ শাওয়াহেদ দ্বারা ।
* হযরত আউফ ইবনে মালেকের বর্ণিত হাদিস ( মুসনাদে বাজ্জার হাঃ ২০৪৭ ও অন্যান্য গ্রন্থে ) হাদিসটির মান সহীহ শাওযাহেদ দ্বারা ।


শবে বরাতের হাদিসগুলোর ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কিরামের উল্লেখযোগ্য অভিমত:

প্রথম অভিমত: আল্লামা মুবারকপুরী

"জেনে রাখো যে, শবে বরাতের ফজীলত সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের হাদিস এসেছে । যার ফলে শরীয়তে তার ভিত্তি আছে বলে বুঝা যায়" ।

দ্বিতীয় অভিমত : আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ:)

"রাতটির (শবে বরাত ) ফজীলত সম্পর্কে সহীহ হাদিসসমূহে এসেছে ।

তৃতীয় অভিমত : আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী

নাসিরুদ্দিন আলবানী শবে বরাত সম্পর্কীয় সকল হাদিসের সনদ নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছেন এবং পর্যালোচনার শেষে তার নির্যাস পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেছেন এভাবে "সারকথা হোলো এসকল সুত্রের সমষ্টির কারনে (শবে বরাত সম্পর্কীয়) হাদিস নি:সন্দেহে সহীহ। কোনো হাদিস অত্যধিক দুর্বলতা থেকে নিরাপদ হলে এর চেয়ে কম সূত্রের মাধ্যমে সহীহ প্রমাণিত হয় । যেমনটি আয়শা (রা:) এর বর্নিত হাদিসটি যা অত্যধিক দুর্বলতা থেকে নিরাপদ । "

(সিলসিলাতুল আহাদিস ওয়া জঈফ , কিতাব দ্রষ্টব্য )


এ ছাড়াও আরো অন্যান্য সাহাবা থেকে হাদিস বর্ণিত আছে । উপরোল্লেখিত হাদিসগুলির মুল বক্তব্য এবং সেগুলোর সুত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন মুফতী মীযানুর রহমান লিখিত কোরআন ও হাদিসের আলোকে শবে বরাত ।

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।

প্রশ্নঃ মহিলা ও পুরুষদের নামাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কিনা ? সহীহ হাদিসের আলোকে জানতে চাই ।
প্রশ্নকারী আমাদের কাছে বিস্তারিত প্রশ্ন করেছেন, যেটা সংক্ষেপে নিম্নে দেয়া হলো:

এক আহলে হাদীস, লা মাজহাবীর কিতাব থেকে নীচে উল্লেখ করা হলোঃ
সিজদাহঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ সিজদা করবে তখন এমনভাবে বসবে না যেভাবে উট বসে, বরং দু’হাতকে হাঁটুর পূর্বে রাখবে। (আবু দাউদ ১ম খন্ড,হাদীস নং-৮৪০)
একদা এক বেদুঈন মহিলা উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) সাক্ষাত করতে এসে তাঁকে না পেয়ে ফেরার পথে উম্মুল মু’মিনীন হাফসা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে মহীলাদের নামায সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেনঃ নামায আদায়ের নিয়ম পদ্ধতির ব্যাপারে মহিলীদের পৃথক কোন নিয়মের কথা আমাদিগকে বলা হতো না তবে রুকুতে, রুকু বাদ দাঁড়িয়ে দু’সিজদার মাঝে বসে একটু সময় অবস্থান করতে বলা হতো। নামাযে তাড়াহুড়া না করে ধীরে স্থীর শান্‌তভাবে আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) , হাফসা বিনতে উমার (রাঃ),মায়মুনা (রাঃ) ও দ্বীন সম্পর্কে বিশেষ উম্মু দারদা (রাঃ) (বুখারী ভাষ্যানুয়ায়ী) এরা পুরুষদের মত নামায আদায় করতেন সুন্নাতী নির্দেশ মোতাবেক । অতএব এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই য়ে,মহিলাদের নামাযও পুরুষদে মতই আদায় করতে হবে।

মক্কা মদীনায় মসজিদুল হারাম ও মসজিদুন্নবীতেও বহুবার বিশেষ খেয়াল করে দেখেছি। আরফাতের সয়দানেও লক্ষ্য করেছি আরবী মহিলরা পুরুষের মতই স্বাভাবিকভাবে নামায আদায় করে থাকেন, আমাদের দেশের মহিলাদের মত অদ্ভুত ভংগিতে নামায পড়েন না। মহিলাদেরকে অবমূল্যায়ন করা আমার উদ্দেশ্য নয়, যদিও আমাদের অনেক দাদী, নানী, মা, খালাগণ অদ্ভুত নামায পড়েন যা সহীস সুন্নাত না জেনে শিক্ষা দিয়েছেন।
২/৪ খানা নিত্যান্ত নিম্ন মানের বই পড়ে ও ডজন খানেক ফার্সী বয়ান কণ্ঠস্থ করে সমাজের কোন কোন লোক জবরদস্‌ত আলেম সেজেছে, মৌলভী সাহেব বলে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন তাদের সুন্নাত পরিপন্থী নামায শিক্ষা দেয়ার ধারণাটাই ত্রুটিযুক্ত।

এমন নিম্নমানের একখানা কিতাব হলো মারাকী । বহু লোক এ অসমর্থিত বই ‘মারাকীর’ উদ্বৃত বেশ কিছু অনাচার বা সুন্নাত পরিপন্থী ইবাদত, আমল সংক্রান্ত বিদা’য়াত সমাজে প্রচলন ঘটিয়েছে । বেহেশতী জেওর নবম মুদ্রণ ২য় খন্ড ১৫৪ পৃষ্ঠায় উক্ত মারাকী বইয়ের উদ্বৃতি দিয়ে অনুবাদক লিখেছেন- (নামাযের সময় মহিলারা) [রুকুর অবস্থায় স্ত্রীলোক কনুই পাঁজরের সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে- সিজদায় স্ত্রীলোক পেট রানের সঙ্গে এবং বাজু বগলের সঙ্গে মিলিয়ে রাখিবে,কনুই মাটির সঙ্গে মিলাইয়া রাখিবে, উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির করিয়া মাটিতে বিছাইয়া রাখিবে। বসার সময় স্ত্রীলোক -উভয় পায়ের পাতা ডান দিকে বাহির করিয়া দিবে এবং ডান রান বাম রানের উপর এবং ডান নলা বাম নলার উপর রাখিবে।]
বেহেশতী জেওরে বর্ণিত নিয়মে মহিলাদের নামায় পড়া বিষয়ে বেহেশতী জেওর এর লেখকের এবং তা সমর্থনকারী মোল্লাদের চ্যালেঞ্জ করে বলছি- যদি তারা মহিলাদের এ অদ্ভুত নামায পড়ার সহীহ হাদীস দেখাতে পারেন তা হলে যে কোন শাস্তি নির্বিবাদে মেনে নিব।

এমন কোন সহীহ হাদিস কোন সাহাবী বর্ণনা করেন নাই যে নিজে হাদীস অনুযায়ী আমল বা কাজ করেন নাই। যেরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন তদ্রুপই আমল করেছেন। উম্মুল ম’মিনীন মায়মুনা (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) বর্নিত সহীহ হাদীস কয়টি একটু নিগুঢ়ভাবে চিন্তা করলে এ সত্য প্রতিভাত হবে যে-মহিলাদের নামাযের সিজদার সময় অঙ্গ-পত্যঙ্গের অবস্থান পুরুষের সিজদাহর মতই- মহিলা-পুরুষদের সিজদায় কোন পার্থক্য করা হয় নাই। উক্ত হাদীস পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য সমভাবে অনুসরণীয়।
মহিলাদের নিতম্বের উপর বসার কথা কোন সহীহ হাদীসে নাই, বরং এ সম্পর্কিত একটি
হাদীস আছে যাহা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
হযরত আবু হুমাইদ সাহেদী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর একদল সাহাবীর মধ্যে বলিলেন, আমি আপনাদের অপেক্ষা রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নামায অধিক স্নরণ রাখিয়াছি । আমি তাঁহাকে দেখিয়াছি- তিনি যখন তাকবীরে তাহ্‌রীমা বলিতেন, দুইহাত দুই কাঁধের বরাবর উঠাইতেন এবং যখন রুকু করিতেন দুই হাত দ্বারা দুই হাঁটুতে শক্ত করিয়া ধরিতেন এবং পিঠকে নত করিয়া (নিতম্ব ও ঘাড় বরাবর সোজা) রাখিতেন, আর যখন মাথা উঠাইতেন ঠিক সোজা হইয়া দাঁড়াতেন- যাহাতে (পিঠের) প্রত্যেক গিঁট আপন স্থানে পৌছাইয়া যাইত। অতঃপর যখন সাজদা করিতেন, রাখিতেন দুই হাত জমিনে না বিছাইয়া ও পেটের সাথে না মিশাইয়া এবং দুই পায়ের আঙ্গুলীসমূহের মাথাকে রাখিতেন কেবলামূখী করিয়া। অতঃপর যথন দুই রাকাতের পরে বসিতেন-নিজরে বাম পায়ের উপর এবং খাড়া রাখিতেন ডান পা। তৎপর যখন শেষ রাকআতে বসিতেন বাড়াইয়া দিতেন বাম পা (ডানদিকে) এবং খাড়া রাখিতেন অপর পা, আর বসিতেন নিতম্বের উপরে। (বুখারী)
সুতরাং এই হাদীস বলছে, শেষ বৈঠকে নিতম্বর উপর বসার কথা । এখানে পুরুষ মহিলা উল্লেখ করা নাই সুতরাং সকলেরই আমল যোগ্য।

এখন আমার প্রশ্ন

১। উপরের হাদীস কি সঠিক? আসলে কি পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের পার্থক্য নেই ? যেটা আয়েশা (রাঃ) উল্লেখ করেছেন ?
২। লেখক বেহেশতি জেওর সম্বন্ধে যে অভিযোগ করেছেন সেটা কি সঠিক ?
৩। লেখক আরো যে সকল অভিযোগ করেছেন মহিলাদের নামাযা সম্বন্ধে সেটা কি সঠিক ?
জুলাই. ২৩, ২০১০ by যুলকারনাইন
উত্তর: মেয়েরা পুরুষদের মত সালাত আদায় করবে আহলে হাদীসের অনুসারীগন এই মতের পতিনিধিত্ব করেন। এখান থেকে একটি প্রশ্নের জন্ম নেয়
তাহলে কি এমতের অনুসারীগন ছাড়া বাকী সবাই যুগ যুগ ধরে ভূল করেছেন ?
সাহাবায়ে কেরাম তাবেঈ, তাবে তাবেঈ,আইম্মায়ে কিরাম সহ কেউ কি এবিষয়টি অনুধাবন করেন নি ?


প্রকৃত কথা হচ্ছে হক্ব বাতিলের সংঘাত চিরন্তন -অন্যথায় রাসুল (সঃ) এর স্বর্ণ যুগে তারকারাজীর ন্যায় উজ্জ্বল আদর্শবান সাহাবায়ে-কিরাম, তাবেঈ,তাবে তাবেঈ থেকে শত শত বছরের গবেষক, বিচক্ষণ ইমামদের সর্ব স্বীকৃত কোরআন ও হাদীসের আলোকে নারীদের সালাত পদ্ধতিকে ইদানিং জন্ম নেয়া একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দল কিভাবে পশ্ন বিদ্ধ করতে পারে ? নিম্নে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হলো :

* -----মেয়েদের সালাত পদ্ধতি সম্পর্কে আহলে হক্ব উলামাদে মতামত ------*

সালাত পদ্ধতিতে মহিলাদের ক্ষেত্রে মৌলিক ভাবে দুটি পার্থক্য রয়েছে:

১। সতর কেন্দ্রিক, অর্থাৎ যতটুকু সম্ভব গোপনীয়তার মাধ্যমে মহিলারা সালাত আদায় করবে।

আল্লাহ তা’লা বলেন

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

"তোমরা গৃহাভন্তরে অবস্থান করবে-মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।" (সুরা আল আহযাব- আঃ নং ৩৩)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন "মহিলাদের নিজকক্ষে নামায পড়া বাড়িতে নামায পড়ার তুলনায় উত্তম, আর নির্জন ও অভ্যান্তরিন স্থানে নামায পড়া ঘরে নামায পড়া থেকে উত্তম। ‘‘ [হাদীসটি সহীহ, আবু দাউদ ১/৩৮৩- , মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮]

হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ- "ওরনা বা চাদর ব্যতিত মহিলাদের নামায কবুল হবেনা।" [আবু দাউদ ১/৪২১ তিরমিজী ২/২১৫-মুসতাদরাকে হাকিম ১/২৫১]

হাকেম আবু আব্দিল্লাহ নিসাপুরী (রঃ) স্বীয় কিতাব মুসতাদরাক লিল হাকেমে (৯/২৫১) বলেন মুসলিম (রঃ) এর হাদীস গ্রহন করার শর্ত অনুযায়ী হাদীসটি সহীহ । হাকেম (রঃ) এর উক্ত মতকে ইমাম যাহাবী (রঃ) সমর্থন করেছেন।

উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস এ কথার উপর সুস্পষ্ট প্রমান বহন করে মহিলাদের সব সময় পর্দার আড়ালেই থাকা প্রয়োজন । আর নামায ইসলামের অন্যতম একটি বিধান সুতরাং তাহা অধিক পর্দায় হবে ইহাই বিবেকের দাবী।

উপরে আমরা দেখলাম পর্দার ক্ষেত্রে নামাজ পড়ার সময় পুরুষ ও মহিলাদের কি পার্থক্য আছে , এখন আমরা দেখব নামাজ-এর রুকন বা পড়ার পদ্ধতির ক্ষেত্রে পুরুষ মহিলাদের কি পার্থক্য আছে :

২। নামাজ-এর রুকন বা পড়ার পদ্ধতিতে মহিলার পুরুষদের পার্থক্য

চার ধরনের দলীলের আলোকে সংক্ষিপ্ত ভাবে পদ্ধতিগত এই পার্থক্য তুলে ধরা হলো
১। হাদীস শরীফের আলোকে।
২। সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য ও কর্মের আলোকে।
৩। তাবেয়ী ইমাম গনের ঐক্যমত্যের আলোকে।
৪। চার ইমামের ঐক্যমত্যের আলোকে।

১। হাদীস শরীফের আলোকেঃ

নামাজী মহিলার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বাধা দিবার লক্ষে করণীয় কি ? রসুল (সা:) এ প্রসংগে বলেন: পুরুষদের জন্য হলো তাসবীহ বলা আর মহিলাদের জন্য হাতে আওয়াজ করা। (সহীহ বুখারী ১/৪০৩)

ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব (রঃ) বলেন, একবার রাসুল (সঃ) নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে ( সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন যখন সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে, কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়।
(কিতাবুল মারাসিল-ইমাম আবু দাউদ - পৃঃ১১৭)

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস শায়েখ শুয়াইব আরনাউত (রঃ) হাদীসটির সুত্র সম্পর্কে বলেন, বণর্না কারী প্রত্যেক রাবী সর্ব্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য রাবীদের অন্তর্ভুক্ত সুতরাং হাদীসটি "সহীহ"।
( তালীক আলা মারাসিলে আবী দাউদ পৃঃ ১১৭ )

আহলে হাদীসে স্বীকৃত শীর্ষস্থানীয় আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ‘‘আওনুল বারী" (১/৫২০) তে লিখেছেন উল্লেখিত হাদীস সকল ইমামের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসাবে পেশ করার যোগ্য।
আর এ হাদীসটির উপরই আহলে সুন্নত ও চার মাযহাবসহ অন্যন্যদের আমল চলে আসছে।

উল্লেখ্যঃ- এই সব হাদীসর সমর্থনে মহিলা ও পুরুষদের নামায আদায়ের পদ্ধতিগত পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে । এমন আরো অনেক হাদীস রয়েছে । পক্ষান্তরে এগুলোর সাথে বিরোধ পুর্ন একটি হাদীস ও কোথাও পাওয়া যাবে না, যাতে বলা রয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই।

সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের আলোকেঃ-

হযরত নাফেয় (রহঃ) ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন ওনাকে রাসুল (সঃ) এর যামানায় মহিলদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন : "প্রথমত তারা চার পা হয়ে বসত অত পর এক পক্ষ হয়ে বসার জন্য বলা হল।" আসারাট সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহীহ।
(জামেউল মাসানীদ-ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) খঃ ১/৪০০)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ওনাকে মহিলাদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন "মহিলারা বৈঠকে আংগুল সমুহ মিলিয়ে ও সমবেত ভাবে বসবে। (এই হাদীসের সমস্‌ত রাবী সিকাহ- সুতারাং হাদীস সহীহ)
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-খঃ১/২৪২)

তাবেয়ী ইমাম গনের ঐক্যমতের আলোকেঃ-

হযরত হাসান বসরী ও হযরত কাতাদা (রহঃ) বলেন, মহিলারা যখন সিজদা করবে তখন তারা যথাস্ভব জরসড় হয়ে থাকবে। অঙ্গঁ প্রত্যঙ্গঁ ফাঁকা রেখে সিজদা দিবে না, যাতে কোমর উচু হয়ে না থাকে। (সহীহ) (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক খঃ৩/১৩৭-ইবনে আবী শাইবা ১/২৪২)

* কুফাবসীদের ইমামঃ- ইবরাহীম নাখয়ী (রহঃ) বলেন মহিলারা বসা অবস্থায় এক পক্ষ হয়ে বসবে । (সহীহ) (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা খঃ১/২৪৩)

* মক্কা বাসীদের ইমাম আতা ইবনে আবী রাবাহ (রহঃ) বর্ণনা করেন মহিলা যখন রুকুতে যাবে অত্যান্ত সংকোচিত ভাবে যাবে এবং হাতদ্বয় পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে। (সহীহ)
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৩/১৩৭)

খালেদ ইবনে লাজলাজ সিরিয়া বাসীদের ইমাম , তিনি বলেন মহিলাদের আদেশ করা হত, তারা যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে । আবরনযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়। (হাসান)
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০৫)

মোট কথা তাবেয়ী-যুগে যারা ইমাম এবং ইসলামি বিধি বিধানের ক্ষেত্রে অনুসরনীয় তাদের মতামত থেকে প্রমানিত হল যে, মহিলা ও পুরুষদের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন মনে করা সম্পুর্ন ভুল । সাহাবী ও তাবেয়ীদের মতামতের সাথে এই ধারনার কোনই মিল নেই।

চার ইমামের ফিক্বহের আলোকেঃ-

ফিক্বহে হানাফীঃ- ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর অন্যতম শাগরেদ ইমাম মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হল উভয় পা এক পাশে মিলিয়ে রাখবে, পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রখবে না। (কিতাবুরল আসার ১/৬০৯)
(আরো দ্রষ্টব্যঃ- হিদায়াঃ ১/১০০-১১০-১১১- ফাতওয়ায়ে শামী ১/৫০৪- ফাতওয়ায়ে আলমগীরি-১/৭৩-)।

ফিক্বহে শাফেয়ীঃ
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন ’’ আল্লাহ পাক মহিলাদের কে পুরো পুরি পর্দায় থাকার শিক্ষা দিয়েছেন । এবং রাসুল (সঃ) ও অনুরুপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হল, সিজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গেঁর সাথে অপর অঙ্গঁকে মিলিয়ে রাখবে, পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সিজদা এমন ভাবে করবে যাতে সতরের অধিক হেফাযত হয়।
(যাখীরা, ইমাম কারাফী ২/১৯৩)

ফিক্বহে হাম্বলীঃ- তাকবীরে মহিলাদের হাত উঠানোর সম্পর্কে ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন হাত তুলনামুলক কম উঠাবে। ( আল মুগনী -২/১৩৯)

এ পর্যন্ত হাদীস আসারে সাহাবা, আসারে তাবেয়ীন ও চার ইমামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট হল যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলা আল্লাহ তা’লার মনোনীত ধর্ম ইসলামের মাঝে নিজেকে সংস্কার পন্থী রুপে আবিস্কার করার অপচেষ্টা ছাড়া অন্য কিছুই নয়।

প্রশ্ন পত্রে উল্লেখিত দলীল সমুহের উত্তরঃ-

আপনার প্রথম প্রশ্ন:
১। আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসুল (সঃ) বলেছেন যখন তোমাদের কেউ সিজদা করবে তখন এমন ভাবে বসবে না যেভাবে উট বসে, বরং দু’হাতকে হাঁটুর পুর্বে রাখবে। (আবু দাউদ-১/৮৪০)

উত্তরঃ- বোন, মা, ফুপি- মাহরাম মহিলাদের ক্ষেত্রে শরীয়তের নিষেধাজ্ঞা থাকায় যেমনি ভাবে সুন্দরী হলেই বিবাহ করা যায় না, ঠিক তেমনি - কোরআন ও হাদীসের ব্যাপারে নাসেখ- মানসুখের চিরন্তন বিধান থাকায় হাদীস সহীহ হলেই আমল যোগ্য হয় না। উপরের ভুমিকার দ্বারা আমার বলার উদ্দেশ্য , আপনার প্রথম হাদীস জমহুর উলামাদের দৃস্টিতে মানসুখ (রহিত) এর তালিকায় ।
(বজলুল মাজহুদ -৫/৮৯)

যেই হাদিস দ্বারা উপরের হাদিস মনসুখ হয়েছে, সেটা হলো:
সাদ ইবনে আবী ওককাস (রা:) ওনার পিতা হতে বর্ননা করেন , তিনি বলেন: "আমরা সিজদার সময় হাটুর পূর্বে হাত রাখতাম, পরবর্তিতে আমাদেরকে হাত রাখার পূর্বে হাটু রাখার নির্দেশ দেয়া হয় (সহীহ ইবনে খুজাইমা - ১/৩১৮)

আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন:
২। একদা এক বেদুঈন মহিলা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা(রা:) এর সাথে সাক্ষাত করতে এসে তাকে না পেয়ে ফেরার পথে উম্মুল মু'মিনীন হাফসা(রা:) এর কাছে গিয়ে মহিলাদের নামায সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন "নামায আদায়ের নিয়ম পদ্ধতির ব্যাপারে মহিলাদের পৃথক কোনো নিয়মের কথা আমাদেরকে বলা হতো না, তবে রুকুতে , রুকু বাদ দাড়িয়ে, দু সিজদার মাঝে একটু সময় অবস্হান করতে বলা হতো ।

উত্তর: উল্লেখিত কথাগুলোকে যেহেতু আপনি হাদিস নামে উল্লেখ করেছেন, সুতরাং অস্বীকারের দু:সাহস না করে অনুসন্ধানের ত্রুটির উপর দোষ চাপিয়ে অনুরোধের সুরে বলছি , অনুগ্রহ করে কিতাবের নাম, পৃষ্ঠা ও হাদিস নাম্বার উল্লেখ করে দিলে ইনশাল্লাহ প্রমান ভিত্তিক সমুচিৎ জবাব দেয়া হবে ।

আপনার ৩য় প্রশ্ন:
৩। উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা (রা:), হাফসা বিনতে উমার (রা:), মায়মুনা (রা:) দ্বীন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ উম্মু দারদা (রা:) বুখারী ভাষ্যনুযায়ী এরা পুরুষদের মতো নামায আদায় করতেন ।

উত্তরঃ- উল্লেখিত আপনাদের এই দাবী সম্পূর্ন মিথ্যা,এমন কথা ইমাম বুখারী (রহঃ) স্বীয় কিতাব বুখারী শরীফে বা অন্য কোন কিতাবে কখনই বলেননি বা উল্লেখ করেন নাই। ইহা ইতিহাস সীকৃত শ্রেষ্ট মুহাদ্দীস-ইমাম বুখারীকে মিথ্যার কলংকে কলংকিত করে ওনার লেখনিকে প্রশ্ন বিদ্ধ করার অপপ্রয়াশ মাত্র।

উম্মু দারদা (রাঃ) একজন তাবেয়ী, তিনি নামাযে পুরুষদের ন্যায় বসতেন । নামাযের পদ্ধতিতে একজন তাবেয়ীর আমল যদি দলীল হয়ে থাকে তাহলে ইতিপূর্বে আমরা চার শ্রেনীর দলীলের ভিত্তিতে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি , যার মাধ্যমে একথা প্রমান হয়েছে যে আয়িম্মায়ে তাবেয়ীন যথাঃ- হাসান বসরি , হযরত কাতাদাহ, ইব্রাহীম নাখয়ী, খালেদ ইবনে লাজলাজ ওনাদের তালীল ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু সিজদা সহ একাধিক আমলের মধ্যে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিল। এছাড়া হতে পারে উম্মু দারদা (রাঃ) এবিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। অন্যান্য ক্ষেত্রে তিনি মহিলাদের মত ভিন্ন ভাবেই আমল করতেন । সুতরাং শুধু একজন তাবেয়ী মহিলার ব্যক্তিগত আমলকে অগ্রাধিকার দেয়ার ব্যাপারটি যুক্তি যুক্ত ও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।

৩। আপনাদের বক্তব্যের দারাই নামাযে পুরুষ ও মহিলার পদ্ধতি ভিন্ন হওয়া প্রমানিত হয়। কেননা উভয়ের নামাযের পদ্ধতি এক হলে ‘‘পুরুষদের মত নামায, কথাটির কোন অর্থ থাকেনা। সুতরাং একথা স্পষ্ট হয়ে গেল সেই যামানায় পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি এক ছিল না।

৪। হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর একদল সাহাবীর মধ্যে বলিলেন আমি আপনাদের অপেক্ষা রাসুল (সাঃ) এর নামায অধিক স্বরন রাখিয়াছি। আমি তাহাকে দিখিয়াছি-তিনি যখন•••••••আর বসতেন নিতম্বের উপরে।
আপনাদের দাবীঃ এই হাদীস বলছে শেষ বৈঠকে নিতম্বের উপর বসার কথা। এখানে পুরুষ মহিলা উল্লেখ করা নাই সুতরাং ইহা সকলেরই আমল যোগ্য।

উত্তরঃ- উল্লেখিত হাদীসের মাঝে সাহাবী আবু হুমাইদ সায়েদী (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর নামাযের পদ্ধতি আলোচনা করেছেন। আর রাসুল (সাঃ) পুরুষ ছিলেন । অতপর এখানে পুরুষ মহিলা উল্লেখ করা নাই সুতরাং ইহা সকলেরই আমল যোগ্য এমন হাস্যকর দাবী করা অযোক্তিক নয় কি?

২য় ও ৩য় প্রশ্নের উত্তরঃ
উপরের উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা একথা সূর্যের আলোর মত সুস্পষ্ট, হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) এর বেহেশতী জেওর এবং যুগের শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ হাসান বিন আম্মার হানাফী (রহঃ) কতৃক লিখিত মারাকীর মত ফেক্বহ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রহনযোগ্য কিতাবের ব্যপারে এমন অভিযোগ বা মন্তব্য, পরক্ষভাবে স্বয়ং আল্লাহ তাআলার প্রজ্বলিত দ্বীনের প্রদীপকে মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে দেয়ার জন্য ব্যার্থ চেষ্টা মাত্র ।

তথ্যসূত্র:
১। আবু দাউদ ১/৩৮৩- ,
২। মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮
৩। তিরমিজী ২/২১৫
৪। বুখারী শরীফ ।
৫। তালীক আলা মারাসিলে আবী দাউদ পৃঃ ১১৭
৬। আওনুল বারী (১/৫২০)
৭। জামেউল মাসানীদ-ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) খঃ ১/৪০০
৮। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-খঃ১/২৪২
৯। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক
১০। হিদায়াঃ ১/১০০-১১০-১১১-
১১। ফাতওয়ায়ে শামী ১/৫০৪-
১২। ফাতওয়ায়ে আলমগীরি-১/৭৩
১৩। যাখীরা
১৪। ইমাম কারাফী ২/১৯৩
১৫। আল মুগনী -২/১৩৯
১৬। বজলুল মাজহুদ -৫/৮৯
১৭। সহীহ ইবনে খুজাইমা - ১/৩১৮

উত্তর দাতা
মোঃ ফরিদুল ইসলাম
উচ্চতর হাদীস গবেষনা বিবাগ
বসুন্ধরা ঢাকা-

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।


আস-সালামু আলাইকুম,
এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করা হলোঃ
‘‘ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পশ্ন করলেন মহিলাদের মধ্যে সর্বোত্তম গুণ কনটি ? উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ ······· ······ ··· ··
তারা পুরুষদের দেখবে না, পুরুষরাও তাদের দেখতে পাবে না। ’’

‘‘রাসুলের (সাঃ) যুগে নারী স্বাধীনতা ’’বইটিতে স্পষ্টভাবে এই হাদীসকে ‘‘মনগড়া এবং স্বীকৃত ও র্নিভরযোগ্য কোন হাদীস গ্রন্থেই লিপিবদ্ধ নয়’’ বলে উল্লেখ করা আছে।
উপরে উল্লিখিত হাদীসটি র্নিভরয়োগ্য কিনা তা জানালে উপকৃত হবো।

জুলাই. ২২, ২০১০ by হাফিজ
উত্তর: উপরোল্লেখিত হাদীসটির ব্যপারে "রাসূল (সাঃ) এর যুগে নারী স্বাধীনতা" বইটিতে স্পষ্টভাবে এই হাদীসকে মনগড়া এবং স্বীকৃত ও নির্ভর যোগ্য কোন হাদীস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এই কথাটি সম্পূর্ণ ভূল এবং ভিত্তিহীন । নিম্নে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হল:

উল্লেখিত হাদীসটি হাদীসের র্নিভরযোগ্য গ্রন্থ (মুসনাদে বাজ্জারে) উল্লেখ রয়েছে।

১। মুসনাদে বাজ্জার খঃ ২ পৃঃ ১৫৯ হাঃ ৫২৬
২। হিলয়াতুল আউলিয়াঃ খঃ ২ পৃঃ ১৭৫

মুহাদ্দিসগন আলোচ্য হাদীসটিকে যঈফ (তথা দুর্বল) বলে আখ্যায়িত করেছন (কিন্তু মনগড়া নয়, জঈফ এবং মনগড়া ভিন্ন জিনিস) , কেননা হাদীসটির সনদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে ইমরান নামক রাবীকে বিশিষ্ট মহাদ্দিস হাফেজ ইবনে হাজ্বর (রঃ) মাকবুল বলেছেন, যার ফলে হাদীসটির মান যঈফ (তথা দুর্বল) হয়েছে। (এর অর্থ এই নয় এটা মনগড়া বা বাতিল , শর্তসাপেক্ষে যঈফ হাদিস গ্রহনযোগ্য )

অতএব মোট কথা হলো "রাসূল (সাঃ) এর যুগে নারী স্বাধীনতা" বইটিতে স্পষ্টভাবে এই হাদীসকে মনগড়া এবং স্বীকৃত ও র্নিভরযাগ্য কোন হাদীস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নয় বলে উল্লেখ করা আছে । তাদের এ সকল কথা সম্পুর্ণ ভৃল এবং ভিত্তিহীন, যা উপরে আলোচনার দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে।

তথ্যসূত্র :

১। মুসনাদে বাজ্জার খঃ ২ পৃঃ ১৫৯ হাঃ ৫২৬
২। হিলয়াতুল আউলিয়াঃ খঃ ২ পৃঃ ১৭৫

উত্তর দাতা
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
হাদীস ২য় বর্ষ
ইসলমিক রির্সাচ সেন্টার বসুন্ধারা ঢাকা

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।

নাসিরুদ্দীন আলবানী-সম্বন্ধে আমার কয়েকটি প্রশ্ন ছিল।
১/ সে যে পদ্ধতিতে হাদিস যাচাই বাছাই করেছে সেটা সঠিক কিনা ?
২/ সে অনেক সহীহ হদীসকে যঈফ এবং যঈফ হাদীসকে সহীহ বলেছে একথা সত্য কিনা?
৩/ সে একই রাবীকে কোন সময় সিকাহ বা গ্রহনযোগ্য এবং অন্য কোন সময় ‘‘বাতিল’ ’ বা অগ্রহনযোগ্য বলেছে একথা সত্য কিনা?
জুলাই. ১৯, ২০১০ by জুলকারনাইন
১ নং প্রশ্নের উত্তরঃ-

ভিন্ন চিন্তা চেতনার অধিকারী আলবানী সাহেব কোন প্রতিষ্ঠানে বা কোন উস্তাদের নিকট পড়া লেখা করেন নাই, নিজস্ব গবেষনার মাধ্যমে সুন্দর বিন্নস্ত আকারে অনেক গবেষনা মূলক বই পুস্‌তক পাঠকবর্গকে উপহার দিয়েছেন।
তাই এতে তিনি হাদীস যাচাই বাছাইয়ে হাদীস শাস্ত্রের বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ ও তাদের প্রনীত মূলনীতির পরোয়া না করে নিজ মতাদর্শকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করেছেন। একারণে বিচক্ষন উলামায়ে কেরামের নিকট হাদীসের মান নির্ধারনে আলবানী সাহেবের গবেষনায় অনেক ক্ষেত্রে মতবিরোধ হয়েছে, এমন কি হাদীস গবেষনার জগতের বিজ্ঞ উলামাগন আলবানী সাহেবের ভূলত্রুটি একত্র করে ৫০ টির অধিক পুস্‌তক রচনা করেছেন।
তাম্মধ্যে
১। তানাফুজাতে আলবানী- গ্রন্থকারঃ- হাসান ইবনে আলী আস সাক্কাফ,
প্রকাশনায়ঃ-দারুল ইমাম বিন নবুবী- (উমাম- উর্দুন) এবং
২। তানবীহুল মুসলিম ইলা তাযাদ্দী আলবানী-গ্রন্থকারঃ- মাহমুদ সাইদ মামদুহ-
প্রকাশনায়ঃ মাকতাবা-আল ইমাম শাফী-(রিয়াজ-সৌদী)
বিষেশ ভাবে উল্লেখ যোগ্য।


২নং প্রশ্নের উত্তরঃ-

তিনি অনেক সহীহ হাদীসকে যঈফ এবং যঈফ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। প্রথমে আমরা দেখব নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেব কিভাবে সহীহ হাদিসকে যঈফ বলেছেন , তার উদাহরন :

আবু হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে বর্নিত রাসুল (সাঃ) বলেনঃ- যখন তোমাদের কেহ রাত্রিতে নামাযের জন্য দাড়ায়, তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই রাকাতের মাধ্যেমে আপন নামাযকে শুরু করে।
হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম (রহঃ) স্বীয়গ্রন্থ সহীহ মুসলিম (১/৫৩২) পৃষ্টায় উল্লেখ করেন । এ ছাড়াও আল ইহসান ফি তাকরিবে সহীহ ইবনে হিববান-(৬/৩৪০) আল মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল-(৯/১২৯) শরহুস সুন্নাহ লিল ইমাম বগবীতে (৪/১৭) উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদীসটিকে যুগ শ্রেষ্ট হাদীস গবেষকগন গবেষনার মাধ্যমে বিশুদ্ধ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তম্মেধ্যে উল্লেখ যোগ্য ,

আল্লামা শুয়াইব আরনাউত (রহঃ) মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ(১৫/৯৮)-
ইমাম বগবী (রহঃ) স্বীয় কিতাব শরহুস সুন্নাতে (৪/১৭)
হামজা আহমাদ যাইন (রহঃ) মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদে (৯/১২৯) বিশুদ্ধ হাদীস বলে ঘোষনা করেছেন।

উল্লেখিত হাদীসটিকে আলবানী সাহেব স্বীয় কিতাব ‘‘যইফুজ জামে ও যিয়াদাহ’’ নামক গ্রন্থে (১/২১৩-) উল্লেখ করে বলেন, হাদীসটিকে ইমাম মুসলিম (রহঃ) এবং ইমাম আহমাদ (রহঃ) আবু হুরাইরা (রাঃ) এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি (যঈফ) মর্জাদার দীক দিয়ে দুর্বল।

এবার আমরা দেখব নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেব কিভাবে যঈফ হাদিসকে সহীহ বলেছেন , তার উদাহরন :

হযরত উমায়ের ইবনে সাইদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস তিনি বলেন তোমরা মোয়াবিয়া (রাঃ) কে ভাল ভাবেই স্বরণ কর, কেন না আমি রাসুল (সাঃ) থেকে শুনেছি রাসুল (সাঃ) বলেছেন হে আল্লাহ তুমি মোয়াবিয়াকে হেদায়েত দাও। (সুনানে তিরমিজি-৫/৬৪৫)


হাদীসটিকে আলবানী সাহেব সহীহ সাব্যস্হ করে স্বীয় কিতাব সহীহ সুনানে তিরমিজি (৩/২৩২) তে উল্লেখ করেছেন। অথচ হাদীসটির সূত্রের উপর গবেষনার দ্বারা দেখা যায় হাদীসটি মানগত ভাবে অত্যন্ত দুর্বল।
সূত্রের একজন রাবী-আমর ইবনে ওকেদ ইনার ব্যাপারে উলামাদের বক্তব্য,
১। হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন (মাতরুক) ইনি পরিত্যাজ্য।
(তাকরিব-আত তাহজীব-৪২৮পৃঃ)
২। ইমাম বুখারি ও তিরমিজি (রহঃ) বলেন (মুনকারুল হাদীস) ইনি এমন রাবী যাদের হাদীস গ্রহন করা হয় না।
৩। আল্লামা মারওয়ান (রহঃ) বলেন (কাজ্জাব) মিথ্যাবাদী।
৪। ইমাম নাসায়ী,দারাকুতনী, এবং ইমাম বুবকানী (রহঃ) এনারা এই রাবীর ব্যাপারে একমত হয়ে বলেন (মাতরুকুল হাদীস) ইনি এমন রাবী যাদের হাদীস পরিত্যাজ্য। (তাহজীবত তাহজীব (৮/৯৮)

সূত্রের রাবী আমর ইবনে ওকেদ সম্পর্কে উল্লেখিত ইমামদের বক্তব্যের দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হল হাদীসটি কোন অর্থেই সহীহ হতে পারে না।
এমন কি আলবানী সাহেব এই রাবীকে দুর্বল সাব্যস্‌ত করে ওনার কিতাব ‘‘জয়ীফা’’ তে (২/৩৪১) উল্লেখ করেছেন। স্বয়ং তিরমিজি (রহঃ) উল্লেখিত হাদীসটি (যঈফ) দুর্বল হিসেবে ইংগীত করে স্বীয় কিতাব সুনানে তিরমিজিতে (৫/৬৪৫) বর্ণনার শেষে বলেন, আমর ইবনে ওকেদ দুর্বল রাবীদের অন্‌তর ভুক্ত।

৩ নং প্রশ্নের উত্তরঃ-

আলবানী সাহেব একই রাবীকে কখনও সিকাহ বা গ্রহনযোগ্য এবং অন্যসময় যঈফ বা অগ্রহনযোগ্য বলেছেন। এ বিষয়টি ওনার গবেষনার জগতের ভূল ত্রুটির অন্যতম একটি অংশ । উদাহরন স্বরুপ একটি ঘটনা নিম্নে তুলে ধরা হল।

আবু উমামা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন তোমরা মুমিন ব্যক্তির অন্তদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাক, কেননা সে আল্লহ তা’লার নূরের দ্বারা দৃষ্টি করে থাকেন। (মুজামুল আওসাত-৩/৪৪৫)
উল্লেখিত হাদীসটির সূত্রের এক জন রাবী হলেন আবু সালেহ আব্দুল্লহ ইবনে- সালেহ । হাদীসটি আলবানী সাহেবের মতাদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারনে তিনি আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহকে দুর্বল আখ্যায়িত করে হাদীসটি অগ্রহনযোগ্য হিসাবে স্বীয় কিতাব ‘‘সিলসিলাতুল আহাদীস আজ যইফাতু মওযুয়া,, (৪/২৯৯) তে উল্লেখ করেছেন।

অথচ আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহ-এই একই রাবীর মাধ্যমে ইমাম তিরমিজি (রহঃ) স্বীয় কিতাব সুনানে তিরমিজিতে ইবনে মুররা (রাঃ)এর সূত্রে হাদীস উল্লেখ করেছেন রাসুল (সাঃ) বলেন হুসাইন আমার থেকে আর আমি হুসাইনের থেকে-, যে ব্যক্তি হুসাইনকে ভালবাসে সে আল্লাহ তা’লাকে ভালবাসে। হুসাইন আমার পরবর্তি-বংশধর।
সূনানে তিরমিজি-(৫/৬১৮)
হাদীসটিকে আলবানী সাহেব সহীহ হিসাবে স্বীয় কিতাব সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহীহা (৩/২২৯) তে উল্লেখ করেন। এবং বলেন হাদীসটির সনদ উৎকৃষ্ট মানের আবু আব্দুল্লা ইবনে সালেহ এর ব্যপারে দৃর্বলতার যেই কথা রয়েছে তাহা কোন ক্ষতিকারক নয়।

উপরের উদাহরন দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম , একই রাবী আবু সালেহ আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহকে আলবানী সাহেব কখনও দুর্বল আবার কখনও গ্রহনযোগ্য সাব্যস্হ করেছেন ।

উত্তর দাতা
মোঃ ফরিদুল ইসলাম
উচ্চতর হাদীস গবেষনা বিভাগ
বসুন্ধরা ঢাকা।

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।



অনেকে বলে থাকেন মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করা বিদআত, কেননা রাসূলের যুগে এটা ছিল না, এ সম্বন্ধে সঠিক ফয়সালা কি? আসলে কি এটা বিদাআত।
জুলাই. ১৫, ২০১০ by নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক
উত্তরঃ নিয়্যত অর্থ হলো, আল্লাহ্‌ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ ও তার আদেশ পালনার্থে কোন কাজের দিকে মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ও অভিপ্রায় প্রয়োগ করা। এ হিসেবে বলা যায়, নিয়্যত হলো হৃদয়ের অনুভূতি যা দ্বারা অমুক কাজ বা নামাজের ক্ষেত্রে নামাজ পড়ছি বলে ইচ্ছা করলেই যথেষ্ট হয়ে যাবে। মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নেই। তবে মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করাকে অনেক ফুকাহায়ে কেরাম উত্তম বলে মত ব্যক্ত করেছেন। এতে হৃদয়ের আকর্ষণ বেড়ে যায় এবং কাজের প্রতি মনোয়োগ সৃষ্টি হয়। তবে কেউ যদি অন্তরে নিয়্যত করার পর মুখে উচ্চারণ করাকে জরুরী মনে করে তবে তা বেদআত বলে গণ্য হবে, এ ব্যাপারে সকল ফুকাহায়ে কেরাম একমত পোষণ করেছেন। কেননা রাসূল (সাঃ) যুগে সাহাবায়ে কেরাম গণ নামাজে অন্তরে নিয়্যত করার পর মুখে উচ্চারণ করেছেন বলে কোথাও পাওয়া যায়নি। এতে বুঝা যায়, আসল নিয়্যত হলো অন্তরের নিয়্যত। মুখের উচ্চারণ জরুরী নয়। তবে হজ্ব ও উমরার ক্ষেত্রে নিয়্যত রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম মুখে উচ্চারণ করেছেন। তাই মুখে উচ্চারণ মানেই বেদআত তা বলা ঠিক নয়।

তথ্যসুত্রঃ

১। হেদায়া ১-৮৩
২। শরহে ফাতহুল কাদীর ১-২৭৩
৩। ফতোয়ায়ে শামী ১-৪১৫
৪। আহসানুল ফাতওয়াহ ৩-১৪
৫। খাইরুল ফাতুয়াহ ২-২৬৩


উত্তর দিয়েছেন :
মো: মাহমুদুল হাসান
হাদিস গবেষনা বিভাগ - ২য় বর্ষ

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।




অনেকে বলে থাকেন দেওবন্দের আলেমগণ নীচের আকীদা পোষণ করেন। নীচের আকীদা সঠিক কিনা এটা জানালে খুশি হবো।
পীরে কামেলকে ডাকলে আল্লাহ্‌কে ডাকা হয়?
জুলাই. ১৪, ২০১০ by মালেক_০০১
উত্তরঃ প্রথমে মনে রাখতে হবে, যে সব বিষয়ে আক্বীদা পোষন করা ইসলাম সমর্থন করেনা এবং যেগুলো কুরআন ও হাদীস বিরোধী এবং যে সব বিষয়ে আক্বীদা পোষন করা কুফরীর পর্যায়ে নিয়ে যায় - এ রকম কোন আক্বীদা দেওবন্দের আলিমগণ পোষণ করেনা।

প্রশ্নে উল্লেখিত আক্বীদা ’ পীরে কামেলকে ডাকলে আল্লাহ্‌কে ডাকা হয়’ সঠিক নয়। কারণ কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্‌ তায়ালা ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকা জায়েয নেই এবং এর জন্য একমাত্র আল্লাহ্‌ তায়ালা ছাড়া অন্য কেউ উপযুক্ত নয়। কুরআনুল কারীমের সূরা জ্বীনে আল্লাহ্‌ তায়ালা ইরশাদ করেন-
وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا

‘নিশ্চয়ই মসজিদ সমুহ আল্লাহ্‌র। তোমরা আল্লাহ্‌ তায়ালার সাথে অন্য কাউকে ডেকোনা’। [সূরা জ্বীনঃ ১৮]

মসজিদ একমাত্র আল্লাহ্‌ তায়ালার ইবাদতের জন্য নির্মিত হয়েছে। তোমরা মসজিদে গিয়ে একমাত্র আল্লাহ্‌ তায়ালা ব্যতীত অন্য কাউকে ডেকোনা। যেমন নাকি ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা তাদের উপাসনালয়ে এ ধরনের শিরকী করে থাকে। [মাআরিফুল কুরআন]

অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন-
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

‘তোমরা পালনকর্তা আদেশ করছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করোনা। [সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩]

আল্লাহ্‌কে ডাকা ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং অন্য কাউকে ডাকলে তা কখনোই আল্লাহ্‌কে ডাকা হতে পারে না। চাই সে পীরে কামেল হোক অথবা অন্য কেউ।

ফতোয়ার অন্যতম গ্রন্থ ‘ফতোয়ায়ে রশীদিয়্যা’ তে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি কারো নামকে আল্লাহ্‌ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ওযীফা বানায় কিংবা ইবাদত মনে করে অন্য কারো নাম জপে, তাহলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। [ফতোয়ায়ে রশীদিয়্যাহঃ পৃষ্ঠা ৩৮]

সুতারাং বুঝা গেল, কাউকে ডাকলে এর জন্য একমাত্র আল্লাহ্‌ তায়ালাই উপযুক্ত। অন্য কেউ নয়। অন্য কাউকে যদি ডাকা হয় উহা যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন তা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

আর আল্লাহ্‌ তায়ালার সাথে কারো কোন তুলনাই হতে পারেনা। তাই পীরে কামেলকে ডাকার দ্বারা আল্লাহ্‌কে ডাকা হয় - এক কথা বিশ্বাস করা নির্ঘাত কুফরী।

উক্ত আক্বীদা যেহেতু সঠিক নয়, তাই দেওবন্দের আলিমগণ উক্ত আক্বীদা কখনোই পোষণ করতে পারেন না।

উত্তর দিয়েছেন :
আব্দুল্লাহ আল মাসুম।
উলুমুল হাদিস - ২য় বর্ষ

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।


মেয়েদের কি স্বপ্নদোষ হয় ? যদি হয় সেটা কিভাবে তারা বুঝবে এবং এই ক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কি ?
জুন. ২৯, ২০১০ by সালেহা খাতুন
উত্তর: হ্যা পুরুষের ন্যায় মহিলাদেরও স্বপ্নদোষ হয় । যাহা উম্মে সালমা (রা:) কর্তৃক বর্নিত সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত । ইমাম বুখারী (রহ:) সহ অনেক মুহাদ্দিসিনে কিরামগন তাদের কিতাবে ইহা উল্লেখ করেছেন । তন্মধ্যে বুখারী শরীফের হাদিসটি নিম্নে প্রদত্ত হোলো:

হযরত উম্মে সালমা (রা:) থেকে বর্নিত , তিনি বলেন " একবার হযরত উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান (রা:) নবী করিম (সা:) এর দরবারে উপস্হিত হলেন ।

অত:পর বললেন হে আল্লাহর রসুল (সা:) সত্যের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সংকোচ বোধ করেন না । মহিলাদের যখন পুরুষদের মতো স্বপ্নে স্বপ্নদোষ হতে দেখে , তবে কি তাদের ওপর গোসল ফরজ ?

প্রতিউত্তরে রসুল (সা:) বললেন হ্যা যখন সে তরল পদার্থ বা পানি দেখে , তখন যেন সে গোসল করে নেয় ।

হযরত উম্মে সালমা (রা:) বলেন , আমি তাকে বললাম "উম্মে সুলাইম আপনি তো নারী জাতিকে অপমান করলেন । "

সুতরাং উক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা গেলো পুরুষের ন্যায় মহিলাদেরও স্বপ্নদোষ হয় । মহিলাদের স্বপ্নদোষ জানার উপায় হোলো দুটি যেটা ইমাম নববী (রহ:) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন :

১) যখন মহিলার বীর্যের গন্ধ পুরুষের বীর্যের গন্ধের ন্যায় হবে ।

২) বীর্যপাতের সময় আনন্দ উপভোগ করা । এবং বীর্যপাতের পর যৌন চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়া ।
এদুটি উপায় থেকে কোনো একটি উপায় পাওয়া গেলে সকল ফুকাহায়ে কিরাম একমত যে তার ওপর গোসল ফরজ।

তথ্যসূত্র :

১। বুখারী শরীফ ( ১ম খন্ড - ৯৩ পৃষ্ঠা , ২৮২ নং হাদিস )
২। তিরমিজী শরীফ ( ১ম খন্ড - ২০৯ পৃষ্ঠা , ১২২ নং হাদিস )
৩। মুসনাদে আহমদ ( ৬ম খন্ড - ৩৭৬ পৃষ্ঠা , ২৭১১৪ নং হাদিস )
৪। মুসান্নাফে ইবনে আব্দুর রাজ্জাক ( ১ম খন্ড - ২৮৪ পৃষ্ঠা , ১০৯৬ নং হাদিস )
৫। মুসলিম শরীফ ( ১ম খন্ড - ২৫০ পৃষ্ঠা , ৩১০ নং হাদিস )
৬। বাদাউসসানায়ে ( ১ম খন্ড - ২৭৬ পৃষ্ঠা )
৭। ফতোয়ায়ে শামী ( ১ম খন্ড - ৫৯ পৃষ্ঠা )
৮। শরহে মুসলিম ( ৮ম খন্ড - ২১৪ পৃষ্ঠা )

উত্তর দিয়েছেন :

মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।

দুনিয়াতে থাকা অবস্হায় মেয়েরা/নারীরা কি "জান্নাতের কোনো নিয়ামত" ভোগ করতে পারে ? এর দ্বারা এমন নিয়ামত বুঝানো হয়েছে যেটা পুরুষরা পারে না কিন্তু মেয়েরা পারে ?
জুন. ২৯, ২০১০ by সালেহা খাতুন
উত্তর: দুনিয়াতে থাকা অবস্হায় মেয়েরা এমন কিছু জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করে থাকে , যেই নিয়ামত গুলো পুরুষেরা দুনিয়াতে ভোগ করতে পারে না । আপনার প্রশ্ন যথার্থ কারন নবী করীম (সা:) স্বর্ণ এবং রেশমী কাপড়কে তার উম্মতের পুরুষের জন্য হারাম করে দিয়েছেন এবং মেয়েদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন ।

জান্নাতের অনেক নিয়ামতের মধ্য হতে স্বর্ণ এবং রেশমী কাপড়ও একটি নিয়ামত যে নিয়ামত দুনিয়াতে পুরুষেরা ভোগ করতে পারে না , কিন্তু নারীরা ভোগ করতে পারে ।

তথ্যসূত্র :

১। বাহরুর রায়েক (খন্ড ৮ পৃ ১৯০)
২। ফাতওয়াহে হিন্দিয়া (খন্ড ৫ পৃ ৩৩৫)
৩। হেদায়া (খন্ড ৪ পৃ: ৪৫৭)
৪। দুররুল মুখতার (টিকা সম্বলিত) ৬/৩৫৯
৫। কান্জুজদাকায়েক পৃ ৪২২


উত্তর দিয়েছেন :

মাওলানা শাহেদুল ইসলাম

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।


"হাদীস কোরআন শরীফের ব্যাখ্যা" অথবা "কোরআন শরীফের তফসীর করতে গেলে হাদীস অনুসরন করতে হবে" এসম্বন্ধে কোনো দলীল আছে কিনা ?

জুন. ২৯, ২০১০ by আবদুস সালাম
উত্তর: কোরআনের তফসীর বোঝার জন্য প্রথমত যে বিষয়টির প্রয়োজন তার নাম হাদীস । যুক্তি হিসেবে আমরা সাহাবাদের (রা:) দিকে তাকাতে পারি । সেখানে দেখা যায় তারা কোরআনের কোনো আয়াত না বুঝলে রসুল (সা:) এর স্নরনাপন্ন হতেন এবং রসুল (সা:) সেটাকে বর্ননা করে দিতেন । দ্বিতীয় প্রমান হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, মোফাসিরগন এ কথার উপর একমত হয়েছেন , কোরআনের তাফসীর ৩ টি পদ্ধতিতে করা যায় বা করতে হবে :

প্রথমত : কোরআনের তফসীর কোরআনের আয়াত দ্বারা ।
দ্বিতীয়ত: কোরআনের তফসীর হাদিস দ্বারা করা ।
এখানেও আমরা বুঝতে পারলাম কোরআনের তফসীরের জন্য হাদিসের প্রয়োজন । কোরআনের এই আয়াতকে আমরা প্রমান স্বরূপ বলতে পারি ।

بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ


প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে নির্দেশাবলী ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তোদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।

(সুরাহ নাহল : ৪৪ )

এই আয়াতে জিকির এর অর্থ সর্বসম্মতিক্রমে কোরআন পাক । আয়াতে রসুল (সা:) কে আদেশ করা হয়েছে যে , আপনি লোকদের কাছে কোরআনের আয়াত বর্ননা ও ব্যাখ্যা করে দিন । এতে সুস্পস্টরূপে প্রমান হয় যে, কোরআনের তত্ব ও তথ্য ও বিধানাবলী নির্ভুলভাবে বোঝা রসুল (সা:) এর বর্ননার ওপর নির্ভরশীল । যদি প্রত্যেক ব্যক্তি শুধু আরবী ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞান লাভ করেই কোরআনের বিধানাবলী বুঝতে সক্ষম হত , তবে রসুলুল্লাহ (সা:) কে বর্ননা ও ব্যাখ্যার দায়িত্ব অর্পন করার কোনো অর্থ থাকতো না ।

আল্লামা শাতেবী (রহ:) "মুয়াফাকাত" গ্রন্হে বিস্তারিত ভাবে প্রমান করেছেন যে , হাদিস সম্পূর্নভাবে কোরআনের ব্যাখ্যা । কেননা কোরআনে রসুলুল্লাহ (সা:) সম্পর্কে বলা হয়েছে "ও ইন্নাকা লাআলা খুলুকীন আজিম" এর সারমর্ম এই যে, রসুল (সা:) থেকে যেকোনো উক্তি ও কার্য বর্নিত হয়েছে তা সব কোরআনেরই তাফসীর ।
কোনোটি বাহ্যত: কোন আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যা , আর কোনটি বাহ্যত কোরআনে নেই কিন্তু রসুলুল্লাহ (সা:) এর অন্তরে ওহী হিসেবের প্রক্ষিপ্ত করা হয় ।
(মাআরেফুল কোরআন , ৫ম খন্ড , পৃ : ৭২ )

তৃতীয় প্রমান: - কোরআন যেহেতু সংক্ষিপ্ত সেহেতু তাহার ব্যাখ্যার অবশ্যই প্রয়োজন আর ব্যাখ্যার জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি হোলো হাদিস শরীফ।
(ফতহুল বয়ান , খন্ড ৪ , পৃ : ৩৩ )

আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী (রহ:) তার কিতাব "আল এতকানে" লিখেছেন যে , কোরআনের তাফসীর করার জন্য অবশ্যই হাদিসের প্রয়োজন, দলীল হিসেবে তিনি হাদিস বর্ননা করেছেন ।
(আল এতকান , খন্ড ২ , পৃ: ৩৮৭ )

উদাহরন স্বরূপ একটি আয়াত এখানে দেওয়া হোলো , সুরাহ ফাতেহার ৭ম আয়াত

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ


সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
( সুরাহ ফাতিহা : ৭ )

এখানে রসুলুল্লাহ (সা:) বলেন المَغضُوبِ হোলো ইহুদীরা আর الضَّالِّينَ হোলো নাসারারা ।

রসুলুল্লাহ (সা:) থেকে এই ব্যাখ্যা না হলে আমরা বুঝতাম না , এখানে المَغضُوبِ ও الضَّالِّينَ বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে ।

পূর্বে উল্লেখিত গ্রন্হাদির আলোচনা দ্বারা এ কথাই সুস্পস্ট বুঝা যায় যে , হাদিস কোরআনেরই ব্যাখ্যা ও কোরআনের তাফসীরের জন্য হাদিসের অনুসরন করা অবশ্যই প্রয়োজন ।

তথ্যসূত্র :

১। মুয়াফাকাত - আল্লামা শাতেবী (রহ:)
২। মাআরেফুল কোরআন - মুফতী শফী (রহ:) ৫ম খন্ড , পৃ : ৭২
৩। ফতহুল বয়ান - খন্ড ৪ , পৃ : ৩৩
৪। আল এতকান - আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী (রহ:)

উত্তর দিয়েছেন :

মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।








আস-সালামু আলাইকুম,
আল্লাহপাক আরশের ওপর ইসতাওয়া হলেন , একথার অর্থ কি ? আল্লাহ পাকের এই বিষয় সম্বন্ধে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকীদা কি ?
জুন. ১২, ২০১০ by julkarnaine
উত্তর : উল্লেখিত স্পর্শকাতর আয়াতটির অর্থ বা ব্যাখ্যার ব্যাপারে উলামায়ে কিরাম থেকে বিভিন্ন ধরনের মতামত রয়েছে । তবে অধিকাংশ মতই কোরআন ও হাদিসের কাঠগড়ায় ভ্রান্ত ও পরিত্যাজ্য ।
সত্য অন্বেষনকারী আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত থেকে এক্ষেত্রে দুটি মত প্রসিদ্ধ :

১। আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর ইসতাওয়া হলেন , এর অর্থ হচ্ছে স্বীয় শান অনুসারে আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন ।
কথাটির উপর বিশ্বাস রাখা ঈমানী কর্তব্য , সালফে সালেহীনগন বিষয়টিকে কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষন ব্যতীতই মেনে নিতেন , এবং কিভাবে অধিষ্ঠিত হয়েছেন সে পদ্ধতি নিয়ে অনুসন্ধানকে অবৈধ মনে করতেন ।
এ ব্যাপারে জাফর ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্নিত আছে যে , এক ব্যক্তি ইমাম মালেক (রহ:) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন - "আল্লাহপাক আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন" এ কথাটির স্বরূপ বা তাৎপর্য কি ? ঐ ব্যক্তির এই প্রশ্ন শ্রবন মাত্র ইমাম মালেক (রহ:) ঘর্মাক্ত হলেন , ভীত সন্ত্রস্হ হলেন , এবং প্রায় সংজ্ঞাহারা হওয়ার অবস্হা হোলো , যখন হুশ ফিরে আসলো তখন তিনি বললেন "আল্লাহপাকের আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়ার স্বরূপ মানুষের বোধ শক্তির উর্ধে । আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়ার তাৎপর্য মানুষের অজানা , তবে তার উপর ঈমান আনা ওয়াজিব । আর এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বেদআত । "

২। পরবর্তীতে অনেক উলামায়ে কিরাম সাধারন মানুষকে বুঝানোর জন্য আল্লাহপাকের এসব গুনাবলীর বিভিন্ন ব্যাখ্যা পেশ করেছেন । যথা : আরশের উপর ইসতাওয়া হওয়ার অর্থ হচ্ছে (রূপক অর্থে ) আল্লাহ তায়ালা সাত তবক আসমান জমীনের কর্তৃত্ব হাতে নিলেন ( আল্লাহ পাকের হাত বলতে শক্তি ইত্যাদি উদ্দেশ্য )
এমতটি অনেক আহলে হক উলামায়ে কিরামের , তবে প্রথম মতটিই অধিক গ্রহনযোগ্য এবং জমহুর উলামায়ে কিরামের মত ।

মুলত বিষয়টি অনেক ব্যাখ্যা সাপেক্ষ , তাই এ বিষয়ে বই পুস্তকের স্নরনাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন ।

তথ্যসূত্র :

১। তফসীরে রুহুল মাআনী - খন্ড ৫ , পৃষ্ঠা : ৬২
২। তফসীরে আবি সাউদ - খন্ড ৩ , পৃষ্ঠা : ২১০
৩। তফসীরে আত তাবারী - খন্ড ১ , পৃষ্ঠা : ২২৯
৪। তফসীরে নুরুল কোরআন - খন্ড ১১ , পৃষ্ঠা : ১৩৮

উত্তর দিয়েছেন :

মাওলানা ফরীদুল ইসলাম
উলুমুল হাদীস - ২য় বর্ষ ।

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।


মেয়েদের মুখ ঢাকতে হবে কিনা ? এটার শরীয়তের দলীল আছে কিনা ? মুখ কি পর্দার মধ্যে পড়বে ?
মে. ৩১, ২০১০ by হাফিজ
উত্তর: কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে গোটা বিশ্বের সকল আলেমদের ঐক্যমতে বালেগা মেয়েদের মুখ পর্দার হুকুমে সুতরাং এটা ঢাকতে হবে ।
কিছু সংখ্যক আলেমদের থেকে এব্যাপারে বিকল্প মত পাওয়া যায় , যারা বলে থাকেন মেয়েদের মুখ পর্দার মধ্যে পড়বে না । এসকল আলেমদের অন্যতম প্রতিনিধিত্বকারী হলেন আল্লামা আলবানী সাহেব ।
তাহাদের এমন বিতর্কিত মতের প্রবক্তা হওয়ার কারনে সারা বিশ্বের হক্কানী আলেমগন মুসলিম জাতির সামনে প্রকৃত সত্য কোরআন ও হাদিসের আলোকে তুলে ধরার জন্য কলম হাতে গর্জে ওঠেন ।
এরই ধারাবাহিকতায় স্বয়ং আলবানী সাহেবের বাসস্হান সৌদি আরবের বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদদের থেকে এই সংক্রান্ত ১৫টিরও অধিক কিতাব রচিত হয় ।

তন্মধ্যে আরবের ফিকাহ বোর্ডের গ্রান্ড মুফতি "শায়খ মুহম্মদ বিন সালেহ বিন উসমান" সংকলিত "রিসালাতুল হিজাব" বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।

নিম্নে (মহিলাদের মুখ পর্দার মধ্যে ) এই ব্যাপারে প্রমান স্বরূপ কয়েকটি আয়াত তুলে ধরা হল।

( ১ম আয়াত ) :-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا


হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরাহ আহযাব : ৫৯ )

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) এই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন "আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে চাদর দ্বারা মস্তক ও চেহারা আবৃত করার নির্দেশ দিয়েছেন " । (তফসীরে ইবনে কাসীর ৩/২৭৪)

(২নং আয়াত )

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরাহ আন নুর : ৩১ )

ব্যাখ্যা : আয়াতে মেয়েদের জোরে পদচাড়না করতে নিষেধ করা হয়েছে । অথচ হাটার আওয়াজের মাধ্যমে একজন মেয়ের সৌন্দর্য বা সে বৃদ্ধ না যুবতী কিছুই অনুধাবন করা সম্ভব নয় । সুতরাং চেহারা যাহা ফিৎনার মুল ও সব চেয়ে বেশী আকর্ষনীয় তাহা খোলা রেখে পরপুরুষের সামনে আসা যাওয়া করা কিভাবে জায়েজ হতে পারে ?

(৩নং আয়াত )

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

(সুরাহ আন নুর : ৩০ )

দৃষ্টির প্রধান লক্ষবস্তু থাকে চেহারা - সুতরাং মেয়েদের চেহারা পর্দার হুকুম না হলে পুরুষ মুমিনদের ব্যাপারে কালামে পাকের মাঝে এত শক্ত আদেশের কোনো যুক্তিকতাই থাকে না ।

উত্তর দিয়েছেন :

মাওলানা মো: এনামুল হক
উলুমুল হাদীস - ২য় বর্ষ ।

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।

হাদিস শব্দের অর্থ কি ? কোরআন শরীফে এই শব্দটি কতবার এসেছে ? এবং প্রতিবারই কি একই অর্থে ব্যবহ্রত হয়েছে ?

মে. ২৫, ২০১০ by আরিফ মোস্তফা
উত্তর :
হাদিস শব্দের আভিধানিক অর্থ :

প্রসিদ্ধ আরবী অভিধান লিসানুল আরব , সিহাহ , কামুস এর মধ্যে হাদিস শব্দটি : পুরাতন এর বিপরীত অর্থ্যাৎ "নতুন" অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে ।

পারিভাষিক সংজ্ঞা : হুজুর (সা:) এর বানী কর্ম , মৌন অনুমোদন এবং তার চারিত্রিক ও শারিরীক গুনাবলীর নাম হাদিস , চাই ইহা নুবওয়ত প্রাপ্তির পূর্বে হউক বা পরে । তদ্রুপ - সাহাবায়ে কিরাম , তাবেয়ীনদের বানী কর্ম ও মৌন অনুমোদনকেও হাদিস বলে ।

পবিত্র কোরআনে হাদিস শব্দটি ২৬ বার এসেছে , এবং বিভিন্ন অর্থে ব্যবহ্রত হয়েছে :
যেমন :
১। হাদিস শব্দ "কোরআন" এর অর্থ হিসেবে:
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ
আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। ( সুরাহ যুমার : ২৩ )

২। কোরআন করীমে হাদিস শব্দটির আরও একটি দৃষ্টান্ত:

فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا
যদি তারা এই বিষয়বস্তুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তাদের পশ্চাতে সম্ভবতঃ আপনি পরিতাপ করতে করতে নিজের প্রাণ নিপাত করবেন।
( সুরাহ কাহফ : ৬ )

৩। হাদিস শব্দটি "ঘটনা" বুঝানোর জন্য :

وَهَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ مُوسَى

আপনার কাছে মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি।
( সুরাহ ত্বয়া-হা : ৯ )

৪। হাদিস শব্দটি "দৃষ্টান্ত" বুঝানোর জন্য :

فَقَالُوا رَبَّنَا بَاعِدْ بَيْنَ أَسْفَارِنَا وَظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ فَجَعَلْنَاهُمْ أَحَادِيثَ وَمَزَّقْنَاهُمْ كُلَّ مُمَزَّقٍ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
অতঃপর তারা বলল, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের ভ্রমণের পরিসর বাড়িয়ে দাও। তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল। ফলে আমি তাদেরকে উপাখ্যানে পরিণত করলাম এবং সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিলাম। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
(সুরাহ সাবা ১৯ )

৫। হাদিস শব্দটি "স্বপ্ন" বুঝানোর জন্য :

وَكَذَلِكَ يَجْتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِن تَأْوِيلِ الأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَعَلَى آلِ يَعْقُوبَ كَمَا أَتَمَّهَا عَلَى أَبَوَيْكَ مِن قَبْلُ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَقَ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

এমনিভাবে তোমার পালনকর্তা তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে বাণীসমূহের নিগুঢ় তত্ত্ব শিক্ষা দেবেন এবং পূর্ণ করবেন স্বীয় অনুগ্রহ তোমার প্রতি ও ইয়াকুব পরিবার-পরিজনের প্রতি; যেমন ইতিপূর্বে তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি পূর্ণ করেছেন। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা অত্যন্ত জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।

(সুরাহ ইউসুফ : ৬ )

৬। হাদিস শব্দটি "কথা" বুঝানোর জন্য :

وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلَى بَعْضِ أَزْوَاجِهِ حَدِيثًا فَلَمَّا نَبَّأَتْ
যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন,
( সুরাহ তাহরীম : ৩ )

৭। হাদিস শব্দটি "বর্ননা" বুঝানোর অর্থে :

وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ

এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।
(সুরাহ আদ দ্বোহা : ১১ )

উপরে উল্লেখিত আয়াতসমূহে "হাদিস" শব্দটি কথা এবং বর্ননা করার অর্থে এসেছে । সুতরাং ইহা থেকে রসুলুল্লাহ (সা:) এর কথা , বর্ননা ইত্যাদিকেও হাদিস বলা হয় ।

উত্তর দিয়েছেন :

মাওলানা মো: এনামুল হক
উলুমুল হাদীস - ২য় বর্ষ ।

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।



অনেকে বলে থাকেন দেওবন্দের আলেমগন "ওহদাতুল ওজুদ" আকীদা পোষন করে থাকেন যেটা সর্বেশ্বরবাদ বা এক কথায় শরীয়তে যার কোনো দলীল নেই, কথাটা কতটুকু সত্য ?

মে. ২১, ২০১০ by আবদুস সালাম
উত্তর: ওয়াহদাতুল উজুদ একটি ব্যাপক বিষয় । অনেকে এটি নিয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ে যান । উলামায়ে কিরাম বিস্তারিতভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন ।
এর মূল অর্থ হোলো - একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য সবকিছুর অস্তিত্বকে অন্তর থেকে বের করে দেয়া ।
মাওলানা আশরাফ আলি থানভী (রহ:) বলেছেন - যখন মানুষ আল্লাহ তায়ালাকে পাওয়ার জন্য মেহনত মুজাহাদা শুরু করে, সর্বদা এর জন্য চিন্তা-ফিকির করে এবং এর পিছনে লেগে যায় তখন কেউ কেউ এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে , তার কাছে আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছু অস্তিত্বহীন মনে হয় । এটা মানুষের একটি অবস্হা, এরই নাম হোলো ওয়াহদাতুল উজুদ ।
এটি সবার জন্য জরুরী নয়, তবে কারো কারো এ অবস্হা হতে পারে ।

তিনি আরো বলেন -
ওয়াহদাতুল উজুদ তাসাউফের মূল উদ্দেশ্য নয় এবং এটা সুলুকের কোনো বিশেষ মাকামও নয় । এটা সবার হতে হবে - এরকম কোনো কিছু নয় । অবশ্য কারো হলে হতে পারে ।
দেওবন্দের আলেমগন উপরোক্ত অর্থে এই আক্বীদা পোষন করেন । এ অর্থ যদি করা হয় , তাহলে সেটা সঠিক । কিন্তু সালাফীরা দেওবন্দের আলেমদের মূল উদ্দেশ্য ভালোভাবে না বুঝে এর ভূল ব্যাখ্যা করে তাদের প্রতি অপবাদ দিয়ে থাকে । ইহা সম্পূর্ন ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন ।


উত্তর দিয়েছেন :

মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মা'সুম
উলুমুল হাদীস - ২য় বর্ষ ।

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।

কর্তৃপক্ষ আমারও একটি বিষয় জানার ছিল । যদি আমাকে জানান তো ভালো হয় । কথাটি হোলো - কোনো এক দম্পত্তি তাদের যে কোনো কারনে সন্তান হচ্ছেনা । এমতো অবস্হায় তারা যদি স্ত্রীর ডিম্বানু ও স্বামীর শুক্রানু ২য় এক মহিলার গর্ভে প্রতিস্হাপন করেন তাহলে এই প্রক্রিয়া ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ না অবৈধ হবে ? ধন্যবাদ ।

মে. ১৭, ২০১০ by মুনিম
উত্তর: আপনি স্ত্রীর ডিম্বানু ও স্বামীর শুক্রানু ২য় এক মহিলার গর্ভে প্রতিস্হাপনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়ার যেই পদ্ধতি তুলে ধরেছেন তাহা সম্পূর্নরূপে নাজায়েজ । কেননা ইহা পরনারীর সাথে জেনারই একটি বিকল্প রূপ । যাহা সন্তানের বংশ পরিচয় মিশ্রিত করে ফেলে ।

এই ক্ষেত্রে শরীয়তের সুস্পষ্ট ঘোষনা হচ্ছে । রসুলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন :
"আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তির পক্ষে নিজের পানি দ্বারা অন্যের জমি সিক্ত করা বৈধ নয় ।" সহীহ আবু দাউদ ( ২য় খন্ড , পৃষ্ঠা ৬১৬ , হাদিস নং ২১৫৮ )

সুতরাং শরীয়ত বিরোধী এধরনের ঘৃনিত কাজ থেকে বেচে থাকা আবশ্যক ।

এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে তুলে ধরা হোলো :

টেস্টটিউব সন্তান ধারন :
বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতি ও আবিস্কার প্রজননের বেশ কিছু নতুন পন্হা উদ্ভাবন করেছে । তন্মধ্যে টেস্টটিউবের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানও একটি । প্রধানত এই ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানের দুটি পদ্ধতি হতে পারে ।
প্রথম পদ্ধতি :

স্বামী স্ত্রী নয় এমন দুজন নারী ও পুরুষের বীর্য ও শুক্র যদি মিশ্রিত করে সন্তান জন্মদানের ব্যবস্হা করা হয় । এই ব্যবস্হা করন কয়েক ভাবে হতে পারে ।
১। টেস্টটিউবের ভিতরে ।
২। সে নারীরই গর্ভাশয়ে
৩। তৃতীয় নারীর গর্ভাশয়ে
৪। এই পুরুষের শরীয়ত সম্মত স্ত্রীর গর্ভাশয়ে ।

উল্লেখিত সবগুলো পন্হাই নাজায়েজ । কেননা এসকল প্রকারও সন্তানের বংশ পরিচয়কে মিশ্রিত করে ফেলে। যে বংশ পরিচয়কে যথার্থ সংরক্ষনের জন্যই শরীয়ত ব্যাভিচার নিষিদ্ধ করেছে ।

দ্বিতীয় পদ্ধতি :

স্বামী স্ত্রীর শুক্রকে মিশ্রিত করে যদি সন্তান প্রজননের ব্যবস্হা করা হয় তারও কয়েকটি পদ্ধতি হতে পারে ।
১। ফতোয়ার মাঝে উল্লেখিত টেস্টটিউবের মাধ্যমে ।
২। স্বামীর শুক্র ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহন করত স্ত্রীর গর্ভাশয়ে পৌছে দেয়া হবে ।
৩। স্বামী স্ত্রী উভয়ের শুক্রকে গ্রহন করত টেস্টটিউবের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে অতপর তা সেই স্ত্রীর গর্ভাশয়ে ফিরিয়ে দেয়া হবে ।
৪। স্বামী ও তার স্ত্রীর শুক্র সংগ্রহ করে তা অন্য স্ত্রীর ( তার নিজের স্ত্রীর ) গর্ভাশয়ে স্হাপন করা হবে ।

প্রথম পদ্ধতির আলোচনা বিস্তারিত হয়েছে যে , এতে পুরুষের শুক্র অপর নারীর গর্ভাশয়ে পৌছানোর কারনে তা হারাম । অপর ২য় পদ্ধতির সবগুলোই বৈধ হবে । তবে উল্লেখিত ক্ষেত্রেগুলোতে স্বামীকে হস্তমৈথুন এবং স্ত্রীকে নার্সের সামনে সতর ভংগ করা , তাছাড়া সন্তান ধারনের ক্ষেত্রে কিছুটা অস্বাভাবিক পন্হারও আশ্রয় নিতে হয় । তবুও স্ত্রী যদি স্বাস্হ্যগত কারনে সন্তান ধারন করতে অক্ষম হয় , আর তাদের মাঝে সন্তান লাভের প্রতি পরম আগ্রহ থাকে তাহলে এই পদ্ধতিতে সন্তান নেয়ার অনুমতি দেয়া যায় , কারন এটাও এক ধরনের চিকিৎসা । আর শরীয়তও চিকিৎসার ক্ষেত্রে শীথিলতা প্রদর্শন করে থাকে । তবে এজাতিয় পন্হা এরিয়ে চলতে পারলে ভালো ।
এই দ্বিতীয় পন্হায় জন্ম নেয়া শিশু যার শুক্র থেকে সেই তার পিতা হবে । কারন , পিতৃপরিচয় প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য স্বামীর শুক্র দ্বারা স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়াটাই যথেষ্ঠ । স্বাভাবিক পদ্ধতিতে শারিরীক যৌনমিলন জরুরী নয় ।
হ্যা যদি স্বামী ও এক স্ত্রীর ডিম্বানু নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভাশয়ে রাখা হয়, আর দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তান ধারনের কষ্ট স্বীকার করে তাহলে এই দ্বিতীয় স্ত্রী এই সন্তানের মা বলে বিবেচিত হবে । কারন কুরআন করীম যে নারী সন্তান জন্ম দেয় তাকেই মা বলে অভিহিত করেছে । তবে যেহেতু প্রথম স্ত্রীর ডিম্বানু সন্তান জন্মের মূল ভিত্তি তাই তাকেও এখানে মা বলার অবকাশ আছে ।

সূত্র:

১। ফতুয়ায়ে মাহমুদিয়া ( ১৮তম খন্ড , পৃষ্ঠা ৩২৪ )
২। নেজামুল ফতোয়া ( ১ম খন্ড , পৃষ্ঠা ৩৩৭ )
৩। ফতোয়ায়ে রাহিমিয়া ( ৬ষ্ঠ খন্ড , পৃষ্ঠা ৩৮০ )
৪। আহসানুল ফতোয়া ( ৮ম খন্ড , পৃষ্ঠা ২১৫)
৫। জাদীদ ফিকহী মাসায়িল ( ২য় খন্ড , ৩৭৫-৩৭৮ )


উত্তর দিয়েছেন:
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।

সিহাহ সিত্তাহ ছাড়া আর কোনো সহীহ হাদিসের গ্রন্হ আছে কিনা ? এরকম কয়েকটি গ্রন্হের নাম এবং সেখানে কতগুলো হাদিস শরীফ আছে সেটা জানালে ভালো হতো ।

মে. ১৩, ২০১০ by নাজমুল হক
উত্তর: সিহাহ সিত্তা ছাড়া আরো অনেক সহীহ হাদিসের গ্রন্হ রয়েছে । সিহাহ সিত্তাহর লিখকগন ব্যতীত অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কিরাম হাদিসের গ্রন্হ লিপিবদ্ধ করেছেন এবং এগুলোকে সহীহ হাদিসের গ্রন্হ বলে উল্লেখ করেছেন ।
পরবর্তী অন্যান্য হাদিসের ইমামগন ও এসব গ্রন্হকে সহীহ হাদিসের গ্রন্হের তালিকায় যোগ করেছেন । তবে একটি বিষয় লক্ষনীয় যে, এসব গ্রন্হে এমন কিছু হাদিসও রয়েছে , যেগুলো যাচাই বাছাই করে গ্রহন করা প্রয়োজন । এরকম কয়েকটি গ্রন্হের নাম নীচে উল্লেখ করা হোলো :

১। আল মুয়াত্তা :
গ্রন্হকার: ইমাম মালেক (রহ:)
হাদিসের সংখ্যা : ১৯৪১

২। সহীহ ইবনে খুযায়মা :
গ্রন্হকার: আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে খুযাইমা (রহ:)
হাদিসের সংখ্যা : ৩০৭৯

৩। সহীহ ইবনে হিব্বান :
গ্রন্হকার: ইমাম আবু হাতেম মুহাম্মদ ইবনে হিব্বান (রহ:)
হাদিসের সংখ্যা : ৭৪৯১

৪। আল আহাদীসুল মুখতারাহ :
গ্রন্হকার: হাফেয জিয়াউদ্দিন আবু আব্দুল্লাহ মাকদাসী (রহ:)
হাদিসের সংখ্যা : ৫৪০০

৫। আল মুসতাদরাক:
গ্রন্হকার: হাফেয আবু আব্দুল্লাহ আল হাকেম (রহ:)
হাদিসের সংখ্যা : ৮৮০৩
ইত্যাদি

সূত্র:
১। ফাতহুল মুলহিম : খন্ড ১ : পৃ: ২৮১ , ২৮২
২। তাওদীহুল আফকার: খন্ড ১: পৃ: ৬২-৬৪
৩। লামহাত ফী উসুলিল হাদিস : পৃ: ১৩৫ - ১৫৬



উত্তর দিয়েছেন :
মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসুম
উলুমুল হাদিস , ২য় বর্ষ

পরীক্ষিত এবং অনুমোদিত
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।





মাহরম না হলে একজন পুরুষ একজন মহিলার সাথে কথা বলতে পারবে কিনা ?
মে. ১২, ২০১০ by hafiz
উত্তর: মাহরাম না হলে একজন পুরুষের একজন মহিলার সাথে কথা বলা শরীয়তে জায়েজ নেই । এর কোনো অনুমতি নেই ।

তবে বিশেষ কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে কথা বলা যাবে । কিন্তু সেক্ষেত্রে শরীয়ত নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারন করে দিয়েছে । তা হচ্ছে -

১) যদি নারীদের কাছ থেকে পুরুষের কোনো কিছু নেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় , তাহলে সরাসরি সামনে আসবেনা বরং পর্দার অন্তরাল থেকে চাবে । কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে -

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاء حِجَابٍ

তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে।
(সুরাহ আহযাব : ৫৩ )

উপরের হুকুমটি বিশেষভাবে নবী পত্নীগন কে লক্ষ্য করে বলা হলেও তা সমগ্র উম্মতের জন্য প্রযোজ্য । ( মাআরেফুল কোরআন ৭ম খন্ড )

২ ) এবং এছাড়াও যদি গায়রে মাহরাম নারীর সাথে কোনো পুরুষের কথা বলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তবে বাক্যালাপের সময় নারীগন কৃত্রিমভাবে কন্ঠের স্বভাবসুলভ কোমলতা এবং লাজুকতা পরিহার করবে । অর্থ্যাৎ এমন কোমলতা যা শ্রোতার মনে অনাকাংখিত কামনা/আগ্রহ সৃষ্টি করে ।
কুরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :

يَا نِسَاء النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاء إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا


হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।

(সুরাহ আহযাব : ৩২ )

সূত্র:
১। তাফসীরে মাজহারী ( ৬ষ্ঠ খন্ড/৩৩৭ পাতা)
২। তাফসীরে ইবনে কাসীর ( ৩য় খন্ড/৮৯১ পাতা)
৩। তাফসীরে মাআরিফুল কোরআন ( ৭ম খন্ড/১০ পাতা)
৪। আহকামুল কোরআন ( ৩য় খন্ড/৩১৬ পাতা)
৫। আহসানুল ফতোয়া ( ৮ম খন্ড/৪০ পাতা)
৬। ফতোয়ায়ে শামী ( ১ম খন্ড/২৭২ পাতা )

উত্তর দিয়েছেন:
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।


প্রশ্ন: একজন মানুষ ফোনের মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া শুরু হলে এক সময় সে তোমাকে তালাক দিলাম বলে ফেলে। এখানে সে এক তালাক অথবা দুই তালাক বা তিন তালাক বলে নাই, শুধু তালাক দিলাম বলেছে, উক্ত সময় তার স্ত্রী পাচঁ মাসের গর্ভবতী ছিল এবং মেয়েটি তাহার বাবার বাড়িতেই ছিলো, এই ঘটনার প্রায় এক বছরের কাছাকাছি আজ পর্যন্ত স্বামী এবং স্ত্রীর উভয়েরই যোগাযোগ নেই। এখন আমার প্রথম প্রশ্ন হলো তালাকের বিষয় নিয়ে, এই ( তালাক দিলাম) শব্দটি কতটুকু কার্যকর হতে পারে। তাছাড়া স্বামী-স্ত্রী বছর পার হয়ে যাচ্ছে বিছিন্ন অবস্তায়, এবিষয় কি বলেন। বিশেষ করে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, সেই সাথে অভিজ্ঞ ভাইদের লিখেছেন: ‘ Azahrul islam’ @ বুধবার, নভেম্বর ১১, ২০০৯ (৮:০৬ পূর্বাহ্ণ)
মার্চ. ১১, ২০১০ by Azharul Islam
উত্তর:
প্রশ্নে বর্নিত শব্দ “তোমাকে তালাক দিলাম” এর দ্বারা স্ত্রীর উপর শুধু এক তালাক রেজয়ী পতিত হয়েছে । ইদ্দতের মধ্যে “রাজায়াত” “তথা ফিরিয়ে আনার” সুযোগ থাকা সত্বেও স্বামী যেহেতু রাজায়াত (ফিরিয়ে আনেন নাই ) করেন নাই , বিধায় ইদ্দত অতিবাহিত হবার পর তা বায়েনা হয়ে গেছে । বর্তমানে যদি ঐ স্ত্রীকে নিয়ে পুনরায় ঘর সংসার করতে চায় তাহলে নতুন ভাবে মহর নির্ধারন করে বিবাহ নবায়ন করে নিলে যথেষ্ঠ হবে । আল্লাহতাআলা সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী ।


সম্পূর্ন উত্তরের আরবী এবারতসহ দেখতে হলে লিংকে ক্লিক করুন :


উত্তর দিয়েছেন:
মুফতী রফিকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা - ১২১২
বাংলাদেশ ।