নামাযের জন্য ‘সুতরাহ’ জরুরি। কিন্তু ‘সুতরাহ’ সম্পর্কে কি আপনি জানেন?
লিখেছেন: ' faridsworld07' @ শনিবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১১ (১২:০২ অপরাহ্ণ)
নামাযের জন্য সুতরাহ জরুরি। যখন আপনি নামাযের জন্য দাড়াবেন তখন আপনার সামনে একটা বস্তু (দেওয়াল, টুপি, পিলার, মোবাইল বা কলম ইত্যাদি) রাখা জরুরি। যার ফলে নামায অবস্থায় আপনার সামনে দিয়ে লোকেরা চলা ফেরা করতে পারে এবং শয়তান আপনার নামাযের কোন ক্ষতি করতে না পারে। এবং আপনিও পুরোপুরি ভাবে নামাযে মনোসংযোগ দিতে পারবেন কে আপনার সামনে এলো-গেলো তার পরোয়া না করে। আব্দুল হামীদ মাদানী লিখেছেন, ‘সুতরাহ বলে কোন কিছুর আড়ালকে। নামাযী যখন নামায পড়ে তখন্তার হৃদয় জোড়া থাকে সৃষ্টিকর্তা মাবুদ আল্লাহর সাথে। বিচ্ছিন্ন থাকে সকল প্রকার পার্থিব সকল প্রকার কর্ম ও চিন্তা থেকে। ইবাদত করা অবস্থায় সে যেন মা’বুদ আল্লাহকে দেখতে পায়। কিন্তু তার সন্মুকে যখন এমন ব্যক্তি বা পশু এসে উপস্থিত হয়, যে তার একাগ্রতা ও ধ্যান ভঙ্গ করে দেয়, মনোযোগ কেড়ে নেয়, দৃষ্টি চুরি করে ফেলে এবং কোন ভয় বা কামনা তার মনে জায়গা নিয়ে তাকে আল্লাহর দরবার হতে সরিয়ে পার্থিব জগতে ফিরিয়ে দেয়, তখন তার জন্য জরুরি এমন এক আড়াল বা অন্তরালের, যার ফলে সে নিজের দৃষ্টি ও মনকে তার ফিতরে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে। আর তার পশ্চাতে কোন কিছু অতিক্রম করলেও সে তার ভ্রুক্ষেপ না করতে পারে’(স্বালাতে মুবাশশির, ৭১ পৃষ্ঠা)।
সুতরা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ(সা) এর নির্দেশ
মহানবী(সা) বলেছেন, ‘সুতরাহ ছাড়া নামায পড়ো না’ (ইবনে খুজায়মা; হা/৮০০)। তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সক্ষম হয় যে, তার ও ক্বিবলার মাঝে কেউ যেন না আসে, তাহলে সেও যেন তা (সুতরাহ) করে’ (আবু দাউদ, দারাকুতনি, ত্বাবারানি)। ‘যখন তোমাদের কেউ নামায পড়বে, তখন সে যেন সামনে সুতরাহ রেখে নামায পড়ে’ (সহীহুল জামে’ হা/৬৫০,৬৫১; আবু দাউদ, নাসাঈ)।
সুতরা কিসের হবে এবং কোথায় রাখতে হবে?
সুতরাহ হতে হবে মাটি থেকে অল্প উচু কোন বস্তু। রাসুল(সা) থেকে অনেক ধরনের সুওরাহ প্রমানিত। যেমন কখনো তিনি মসজিদের থামকে সুতরাহ করে নামায পড়েছেন, আবার ফাঁকা ময়দানে কখনো বর্শা গেড়ে (বুখারি/৪৯৪,৪৯৮) কখনো বা নিজের সওয়ারি উটকে আড়াআড়ি ভাবে দাঁড় করিয়ে তাকে সুতরাহ বানাতেন (বুখারি/৫০৭), উটের পিঠে বসার জিনপোশকে সামনে রেখেও তিনি নামায পড়েছেন (বুখারি, মুসলিম)। এছাড়া গাছকে, আয়েষা(রা) এর খাটকে সামনে রেখেও তিনি নামায পড়েছেন।
রাসুল(সা) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামায পড়বে, তখন সে যেন সামনে সুতরাহ রেখে নামায পড়ে এবং তার নিকটবর্তী হয়। যাতে শয়তান যেন তার নামাযকে নষ্ট করে দিতে না পারে’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, সহী জামে’ হা/৬৫০)। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে সুতরাহ কাছেই রাখতে হবে। সিজদার জায়গার অল্প উপরে। একদা তিনি(সা) কা’বা শরীফের ভেতরে নামায পড়লে তাঁর ও দেওয়ালের মাঝে ৩ হাত ব্যবধান ছিল’ (বুখারি/৫০৬)।
সুতরাহ নিয়ে আরও কিছু জরুরি কথা
১. ইমামের সামনে সুতরাহ থাকলে মুক্তাদীদের জন্য পৃথক সুতরার দরকার হয়না। যেমন ইদের দিন রাসুল(সা) বর্শাকে সুতরাহ বানিয়ে নামায পড়তেন অথচ মুক্তাদীরা বিনা সুতরাই থাকত। তবে কোন ইমাম যদি সুতরা না নেয় তাহলে মুক্তাদিকে সুতরা দিতে হবে।
২. সুতরাহকে মাটি থেকে বা মুসাল্লা থেকে অল্প উচুঁ হতে হবে। কিছু না পেলে দাগ কেটে দেওয়ার হাদিস সহিহ নয় (যইফ আবু দাউদ/১৩৪; যইফ ইবনে মাজাহ/১৯৬,৯৪৩)।
৩. মুসাল্লা, চাটাই বা কার্পেটের শেষ প্রান্তকে সুতরাহ বলে গণ্য করা যাবে না। (ফাতওয়ায়ে ইসল্যামিয়াহ, সৌদি ওলেমা পরিষদ, ১/৩১৭)
৪. সুতরার সোজাসুজি না দাঁড়িয়ে একটু ডানে বা বামে দাড়ানোর হাদিস শুদ্ধ নয় (যইফ আবু দাউদ; হা/১৩৬)।
৫. বিনা সুতরায় নামায পড়লে কেউ সামনে দিয়ে গেলে নামায নষ্ট হয়না। কিন্তু নামাযের ক্ষতি হয়।‘সুতরাহ না রেখে নামায পড়া গোনাহর কাজ। পরন্তু ঐ অবস্থায় কেউ নামাযীর সামনে দিয়ে পার হয়ে গেলে নামাযের সওয়াব কবে যায়’ (ফাতহুল বারী, ১/৫৮৪)
৬. বিনা সুতরাই নামাযীর সামনে দিয়ে সাবালিকা নারী, গাধা ও কালো কুকুর গেলে নামায বাতিল হয়ে যাবে (মুসলিম/৫১০)। প্রকাশ যে, কোন মহিলা নামাযীর সামনে দিয়ে সাবালিকা নারী চলে গেলে নামায নষ্ট হয় না(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হা/ ২৩৫৬)।
৭. যদি কেউ খাটকে সুতরা করে নামায পড়ে আর তার সামনে কোন সাবালিকা মহিলা চাদর দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে শুয়ে থাকে তাহলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না(বুখারি/৫১১)।
শুকরিয়া, সুন্দর হয়েছে।