লগইন রেজিস্ট্রেশন

এক কঠিন আত্মোপলব্ধিঃ আমি কি আসলেই মুসলিম

লিখেছেন: ' fazlulkader' @ সোমবার, মার্চ ১৪, ২০১১ (৯:১৭ অপরাহ্ণ)

আমরা আসলে সবাই এক সেলুকাসের দুনিয়ায় বাস করি । কেন কথাটা বললাম কারণ আমরা সারাদিন যা বলি বা বিশ্বাস করি বাস্তবে তা করার জন্য তেমন আগ্রহী না । আমরা সবাই জানি একদিন মরতে হবে , কিয়ামত আছে, হাশর আছে, জান্নাত আছে , জাহান্নাম আছে, আখিরাতের জীবন অনন্ত কালের সেখানে কোন মৃত্যু নাই । কিন্ত আমাদের কাজ বা আচরণে তা প্রকাশ পায় না । কেউ যদি ব্যবসায়ী বা খেলোয়াড় হয় তাহলে সে সারাদিন তার কাজ নিয়ে কথা বলে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে । ব্যবসায়ী কখনো এমন কাজে সময় নষ্ট করে না যার ফলে ব্যবসার ক্ষতি হয় তেমনি খেলোয়াড় সারাদিন খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং তার সমস্ত চিন্তা ঐ কাজে ব্যইয় করে । সুতরাং মানুষ যা বিশ্বাস করে তার কাজ কর্মে তার প্রতিফলন ঘটে । আমরা মুসলিম আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে একদিন মারা যেতে হবে আর আখিরাতের জীবনের যাত্রার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই । কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে তার প্রতিফলন খুব একটা দেখা যায় না । কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ভাই আপনি তো মুসলিম আপনি নামায পড়ার ফযিলত জানেন ? সে বলবে জানি । নামায না পড়ার শাস্তি কি ? সে বলবে এক ওয়াক্ত নামায না পড়লে ১ কোটি ৮৮ লক্ষ বছর জাহান্নামে জ্বলা লাগবে ।(কথাটি মিথ্যা, জাল) কিন্তু নামায পড়েন না কেন? সে তখন নানা অজুহাত দেখাবে বা বলবে পড়ব পরে । কিন্তু আসল কারণ নামায পড়ার প্রতি তার একীন এখনো তৈরী হয় নাই । আসলেই যদি নামাযের প্রতি তার ঈমান থাকত আর নামাযের ফযীলত আর শাস্তির বিধানের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে সে কখনো নামায ত্যাগ করতে পারতো না । আমরা সবাই জানি আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যায় এই বিশ্বাস আমাদের মধ্যে এত শক্ত যে আগুন দেখলেই লাফ দেই । কোন অন্ধ কে বলা হয় যদি ভাই সামনে সাপ , পা দিলে কামড় খাবেন তাহলে সে কি বলবে এই ভাই পরে সরতেছি নাকী পরি কি মরি বলে দৌঁড় দেবে ।

আর আমরা নামাযের সময় অন্য কাজ করি কিন্তু নামায পরতে পারি না তার মানে আমাদের ভেতরে নামাযের প্রতি বিশ্বাস ভাল ভাবে তৈরী হয় নাই । আমাদের ক্বলবে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা বদ্ধমূল আর তাই সেখানে এখনো আখিরাতের বুঝ আসে নাই । আসলে আমরা মৃত্যুর জন্য এখন প্রস্তত না । আরে ভাই আপনি কি জানেন মালাকুল মউত কখন আসবে ? আর যদি এখন আসে তখন বলবেন একটু পরে আসেন নেক আমল গুলো করে নেই । মনে করেন কোন লোকের খবর আসলো ২ দিনের মধ্যে সে দুবাই/আমেরিকা যেতে পারবে তাহলে সে কি চুপ করে বসে থাকবে বরং সে পাগলের মত তার জিনিস পত্র গোছতে শুরু করবে আর দেখা যাবে ফ্লাইট ছাড়ার অনেক আগে সে রেডী । অথচ সে ঐখানে মাত্র কয়েকদিনের জন্য যাচ্ছে আর তার জন্য গোছগাছের শেষ নাই । আর আমাকে বা আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যদি আপনি মারা গেলে কতদিন পর আসবেন তখন বলা হবে আপনি তো ভাই, মহা ঊল্লুক । মরার পর আর কেউ কি ফিরে আসে । এখন ঐ উল্লুক যদি বলে তাহলে সেই মহাযাত্রার জন্য কি মাল-পত্র গোছাইলেন । এর উত্তর মনে হয় দেয়া হবে না । আরে ভাই দুনিয়ার অল্প কয়দিন যাত্রার জন্য আমাদের এত প্রস্তুতি আর যে খানে অনন্ত কালের জন্য যাব তার কোন খবর ই নাই । তাহলে বলেন কে উল্লুক ? আমাদের কাজ দ্বরা আমাদের নিয়ত আর বিশ্বাস প্রকাশ পায় না । আমরা বলি খারাপ কাজ করলে জাহান্নামে যাওয়া লাগবে আগূনে পোড়া লাগবে যেটা দুনিয়ার থেকে ৭০ গুণ শক্তিশালী । আমরা সেই দুইয়ার আগুনে ১ সেকেন্ড হাত রাখতে পারি না আর অবলীলায় খারাপ কাজ করছি । এখন তাহলে আসলে কি আমাদের মনে জাহান্মামের ভয় আছে ।

আমরা বলি আল্লাহ সব কিছু দেখেন ,শোনেন । আমাদের মনে আসলেই কি এর ঈমান আছে । মনে করেন ভাই একটা চোর যদি পুলিশ দেখে সে কি খারাপ কাজ করার সাহস পায় ? পায় না । শিক্ষক সামনে দাঁড়ালে ছাত্র কি নকল করার সাহস পায় ? পায় না । আর আমি আপনি বলি যে আল্লাহ সব দেখেন ,সব কিছুর খবর রাখেন, আর দেদারসে খারাপ কাজ করতে থাকি । চোরের মন চুরি করতে চাইলে ও সে পুলিশের ভয়ে তার করে না , ছাত্রের মন নকল করতে চাইলে ও সে নকল করতে পারে না। আর আমাদের মনে যদি আল্লাহর ভয় আসলেই থাকত তাহলে খুন হয়ে গেলে ও আমরা সেই কাজ করতাম না যেটা আল্লাহ পছন্দ করেন না । আমাদের আসলে অন্তরে ঈমান আসলে আসে নাই । আমাদের সব দাবী আসলে মৌখিক ।

পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে ,

‘হে রসূল, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলেঃ আমরা মুসলিম, অথচ তাদের অন্তর মুসলিম নয়।(সূরা মায়দা; আয়াত ৪১)

“ মরুবাসীরা বলেঃ আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। বলুনঃ তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করনি; বরং বল, আমরা বশ্যতা স্বীকার করেছি। এখনও তোমাদের অন্তরে বিশ্বাস জন্মেনি। যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর, তবে তোমাদের কর্ম বিন্দুমাত্রও নিস্ফল করা হবে না। নিশ্চয়, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।“ (৪৯;১৪)

সুতরাং মুখে বললেই ঈমানদার হওয়া যায় না । প্রকৃত মুসলিম হলো সেই সেই ব্যক্তি সে যা বিশ্বাস করে সে অনুযায়ী কাজ করে।আরে ভাই কেউ যদি নিজেকে খেলোয়াড় দাবী করে আর সারাদিন ঘুমায় তাহলে তাকে কি খেলোয়াড় বলবে কেউ ? কেউ দাবী করে সে ভালো ছাত্র আর সে সারাদিন ঘোরাফেরা করে সে কি ভালো ছাত্র ? আমরা দাবী করি আমরা ঈমানদার আর করি উলটা কাজ তাহলে আমরা কি ধরণের ঈমানদার ? প্রশ্ন রইল………….

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৫২৬ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

১০ টি মন্তব্য

  1. (Y) zajakallah

    fazlulkader

    @hafes_alamin, হে আল্লাহ তুমি আমাদের ভাল কাজগুলো কবুল কর। যারা ঈমান আনার পর সত কাজ করে তাদেরকে ক্ষমা কর আমীন।

  2. কোন অন্ধ কে বলা হয় যদি ভাই সামনে সাপ , পা দিলে কামড় খাবেন তাহলে সে কি বলবে এই ভাই পরে সরতেছি নাকী পরি কি মরি বলে দৌঁড় দেবে । (Y) (Y) (Y) ধন্যবাদ আপনাকে ।

    fazlulkader

    @মুসাফির, হে আল্লাহ সবার মঙ্গল করুন।

  3. আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তার আশেক বানিয়ে দিন (আমীন)

    rasel ahmed

    @rasel ahmed, আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর লেখা দেয়ার জন্য।

    fazlulkader

    @rasel ahmed, আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) অনুসারি বানিয়ে দিক। ভাই রাসেল আপনি যে আশেক শব্দটা ব্যবহার করেছেন তার মানে জানেন। আশেক-মাশুক আরবী শব্দ যার অর্থ হল প্রেমিক-প্রেমিকা। তাহলে মানে দাড়াচ্ছে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তার আশেক(প্রেমিক) বানিয়ে দিন। আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে আশেকে রাসুল,(রাসুলের প্রেমিক) আশেকে নাবী,(নাবীর প্রেমিক) আশেকে ইলাহী(আল্লাহর প্রেমিক) এ ধরনের সবগুলো শব্দ ব্যবহার করা বেয়াদবি। কেউ কি বলতে পারবে তার মাকে যে মা আমি প্রেমিক, বোনকে বলতে পারবে বোন আমি তোর প্রেমিক। তাহলে বুঝতে পারছেন যে তার মা তার বোন তাকে কি উপহার দিতে পারে। তাছাড়া আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেনঃ (হে নবী)বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।(সুরা ইমরান, আয়াত-৩১)এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ভালবাসার কথা বলেছেন যার আরবী হল (হুব্বু) আল্লাহ প্রতি ভালবাসার প্রমান তখন মিলবে যখন কেউ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের)-কে অনুসরন করবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝার তাউফিক দান করুন।

  4. শুকরিয়া , জাযাকাল্লাহ ।

    fazlulkader

    @এম এম নুর হোসেন, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।

  5. আরে ভাই দুনিয়ার অল্প কয়দিন যাত্রার জন্য আমাদের এত প্রস্তুতি আর যে খানে অনন্ত কালের জন্য যাব তার কোন খবর ই নাই । তাহলে বলেন কে উল্লুক ? :(