লোম শিহরে উঠেছিল ও নয়ন থেকে অশ্রু পড়ে ছিল।
লিখেছেন: ' fazlulkader' @ রবিবার, মার্চ ২০, ২০১১ (৭:০৭ অপরাহ্ণ)
সে একজন নব মুসলিম তার নাম “আব্দুর রহমান” পূর্বে নামছিল নারায়ন তার বাসস্থান উত্তর প্রদেশ, ইন্ডিয়া। সে একজন ঠাকুর বংশের ছেলে। কীভাবে ও কি কারণে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে তা জানতে চাওয়ায় সে বললঃ- আমার গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল। সেখানেই আমি লেখাপড়া করতাম। একই গ্রামের আব্দুল্লাহ্ নামে আমার এক বাল্য বন্ধু ছিল। এক সাথে একই ক্লাসে লেখা পড়া করতাম। সে সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। আমি তার বাড়িতে যেতাম। সেও আমার বাড়িতে আসতো। সুখে দুঃখে আমরা একজন আরেকজনের সব সময় খোঁজ খবর নিতাম । ক্লাস রুমে একই সাথে বসতাম। একজন অপরজনের পাশেই ছিলাম। এমনিভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হচ্ছিল। আমরা যখন ৭ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলাম। একদিন তার মা হঠাৎ মারা গেল। তাই আমি তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য তার বাড়িতে গেলাম। তার মা অত্যন্ত পর্দা মেনে চলত। জীবদ্দশায় তার বাড়িতে কতবার গিয়ে ছিলাম কিন্তু একটি বারও আমার নজরে পড়েনি। যদিও আমি ছোট ছিলাম, মনে মনে ভেবে ছিলাম, মৃত্যুর পর এবার একনজর তাকে দেখব । কিন্তু………।
মুর্দার খাটে করে তাকে কাফন পরায়ে এমন ভাবে তার উপর আর একটি পর্দার ব্যবস্থা করে কয়েক জনের কাঁধে করে বাড়ি থেকে বের করল। অন্য কারো অনুমান করা সম্ভব নয় যে আব্দুল্লাহর মা কত বড় ছিল? লম্বা ছিল, না খাটো ছিল? মোটা ছিল, না পাতলা ছিল?
সবাই তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়তে পড়তে কবরস্থানের দিকে যাচ্ছে। তাই আমি তাদের সাথে কবরস্থানের দিকে রওয়ানা হলাম। আর মনে ইচ্ছা ছিল যে, কবরে নামানোর সময় একটু দেখব। কিন্তু আমার মনের আকাংক্ষা আর পূরণ হলো না। কারণ তার মাকে কবরের নামানোর পূর্বেই কবরের চতুর পার্শ্বে পর্দা দিয়ে ঘিরে তার পর তাকে সসম্মানে নামানোর ব্যবস্থা করল। যখন আমার আশা আকাংক্ষা পূরণ হলো না তখন ভাবলাম এটা হয়তো তাদের ধর্মের বিধান।
যাক পরিশেষে আমার মাতাহারা বন্ধুকে কিছু সান্ত্বনা দিয়ে আমার বাড়িতে ফিরে আসলাম। আল্লাহর কি ইচ্ছা কয়েকদিন পরেই আমার মাও ইহজগৎ পরিত্যাগ করলেন। আমার মুসলিম বন্ধুটিও এমন দুঃখের দিনে পাশে এসে আমাকে সান্ত্বনা দিতে ত্রুটি করেনি। আমার মা ও উচ্চ পরিবারের মহিলা ছিলেন বিধায় তিনি তার জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের চোখে দেখা দিত না।
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী মাকে শ্মশানে নিয়ে চিতায় পুড়তে হবে। তাই বাড়ি থেকে বের করা হলো আর আমার মার উপরে এমন এটি পাতলা কাপড় ছিল যে, ভিতর থেকে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখা যাচ্ছিল। আমার বন্ধু আমার পাশে ছিল তাই কিছুটা সংকোচ বোধ করছিলাম। তার পর আমার আম্মাকে নিয়ে যাওয়া হলো শ্মশানে, রাখা হলো চিতায়। আগুন দেয়ার সাথে সাথে তার উপরে পাতলা আবরণটি পুড়ে গিয়ে আমার মা প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় আগুনে জ্বলছে। আমার লজ্জায় মাথানত হয়ে আসছে। আমার বন্ধুর দিকে তাকাতে পারছি না। কিন্তু উপায় নেই, এতো আমাদের ধর্মের বিধান।
আগুন যখন ভালভাবে ধরেছে তখন দেখি আমার মা তখন বাঁকা হতে চাচ্ছে। আবার কখনো সোজা আবার কখনো দাঁড়াতে চাচ্ছে। এদিকে আসে পাশে অনেক লোক কারো হতে লাঠি ও বল্লম। তারা সবাই তাকে আঘাত করে সেই আগুনেই যথাযথ ভাবে পুড়তে বাধ্য করছে। কি করুন দৃশ্য! এ বেদনা দায়ক দৃশ্য আমাকে যেন হতবাক, অচেতন করে ফেলেছে।হঠাৎ আমার সামনে ভেসে উঠল বন্ধু আব্দুল্লাহর মায়ের কাফন দাফনের সুন্দর দৃশ্য। কত সম্মান জনক ভাবে তাকে মাটি দেয়ার পর তার চির শান্তির জন্য সবাই দোয়া করে বিদায় নিল। তিনি যখন বেঁচে ছিলেন তখন ও তার সম্মানের কিছু কমতি ছিল না। মৃত্যুর পরও তাকে যথাযথ সম্মানে কবর দেয়া হলো। মনে হয় পরগজতেরও তাদের সম্মান অক্ষুণ্য থাকবে।
আমার জ্ঞান আবার ফিরে আসল। দেখছি আমার মা আগুনে জ্বলছে। কত কষ্ট, কত যাতনা ও কত বেদনা আমি পেয়েছি যা আজ বর্ণনার ভাষা নেই। আমার মা আমাকে অত্যন্ত স্নেহ ও আদর করতেন।
আমার মা অভিজাত পরিবারে সসম্মানে জীবন যাপন করেছিলেন। হিন্দু ধর্মে হলেও আমার মা সাধারণ মানুষের সাথে দেখা দিতেন না। বাড়ির বাহিরে যেতেন না। অন্যান্য মেয়েদের মত ঘোরাফেরা করতেন না। আস্তে আস্তে কথা বলতেন। শান্ত মেজাজের ছিলেন তিনি। ঝগড়া ফাসাদকে তিনি কখনো পছন্দ করতে না। এমন সুন্দর স্বভাবের মা ছিলেন আমার। সুখ ও শান্তিতে ইজ্জতসহ বসবাস করতেন তিনি, অথচ মৃত্যুর সাথে সাথে তাকে এমন করে বেইজ্জত করা হলো। তার চেহারা অপর কেহ দেখেনি কিন্তু জীবনটা চলে যাওয়ার সাথে সাথে একী অবস্থা? তিনি কোন দিন কাউকে আঘাত করেননি, এমন কি কারো সাথে ঝগড়া করেননি, গালিও দেননি। কিন্তু তার আত্মা বিদায় নেয়ার সাথে সাথে এ ভাবে মানুষ তাকে আঘাত করছে কেন? চোখের সামনে এই যদি হয় তার অবস্থা তবে পরজগতে ? এ কঠিন অবস্থায় নানা ধরনের প্রশ্ন জাগছিল আমার হৃদয়ে। তন্মধ্যে সব চেয়ে বড় যে প্রশ্নটি আমার হৃদয়ে উদ্ভব হয়েছিল তা হলোঃ- সত্যই কি এটি বিধাতার হুকুম?
এর পর হতে আমি ধর্ম নিয়ে গভীর ভাবে গবেষণা শুরু করলাম। এক এক করে হৃদয়ের সকল প্রশ্নের জবাব খুঁজতে শুরু করলাম। পরিশেষে আমি অন্ধকার থেকে আলোর সন্ধান পেলাম। ভ্রান্ত পথ ছেড়ে মহান সৃষ্টিকর্তার সঠিক পথে চলে আসলাম। বুঝতে আর দেরি হলো না যে, ইসলাম একমাত্র আল্লাহ মনোনীত ধর্ম, যাতে রয়েছে দুনিয়াতে সম্মান মৃত্যুর পর সুখ ও পরকালেও শান্তি রয়েছে তাতে। তাই পড়ে নিলাম লাই-লা-হা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্। এ ঘোষণা ছিল সম্পূর্ণ নিরালায়, একমাত্র সৃষ্টিকর্তার সামনে। তাই আমার ইসলাম গ্রহণ আমার বাবা, ভাই,বোন কেউই জানতো না। এর পর থেকে বেশী সময় কাটতো একা একা, লোকের অগোচরে আমার রুমেই পড়ে নিতাম নামাজ সমূহ। আমার ঈমান অটল রাখার জন্য প্রার্থনা করতাম সেই মহান করুণাময় আল্লাহ তা’য়ালার কাছে। আমি গোপনে বিভিন্ন ইসলামী বই পড়তাম। যত জ্ঞান অর্জন করি ততই আমার আল্লাহর প্রতি ঈমান ও ইয়াকীন বৃদ্ধি হয়েছিল। এমনভাবে অনেক দিন কেটে গেল। এদিকে আমার পরিবারের অনেকেই আমার প্রতি নজর রাখছে। একে অপরকে জিজ্ঞাসাও করছে যে, সে এমন একা একা থাকতে প্রিয় মনে করে কেন? কেউ বিভিন্ন সন্দেহও করছে আমার ব্যাপারে। আবার কেউ কল্পনা করছে মা মারা যাওয়ার কারণেই হয়তো সে মানসিক ভাবে আঘাত পেয়েছে। তবে আমার ব্যাপারটা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে দুর্গা পূজার সময়। তারা ইচ্ছা করেছিল আমাকে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে সম্পূর্ণ অস্বীকার করলাম। সবাই জিজ্ঞাসা করছে কেন তুমি মণ্ডপে যাবে না? কি হয়েছে? সেই মূর্তে আমার এ অনুভূতি হয়েছিল যে আমি এখন এক মহা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। এই পরীক্ষায় আমাকে অবশ্য উত্তীর্ণ হতে হবে। তাই শাস্তির ভয় না করে মৃত্যুকে বাজি রেখে ঘোষণা দিলাম যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।
এ খবর মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে গেল সবার কানে। এদিকে বাবা রেগে আগুন হয়ে আসল আমার রুমে। তার এক হাতে ছিল একটি লাঠি আর অপর হাতে ছিল একটি ছুড়ি। এবার বাবা উচ্চ স্বরে চিৎকার করে বলছে যে, তুমি নাকি ইসলাম গ্রহণ করেছ? আমি নির্ভয়ে বললাম, হ্যাঁ, আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পড়েছি “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবার বাবা নির্দয় হয়ে আমার উপর বেদম মার শুরু করলেন। আর মুখে বলতে ছিল ইসলাম গ্রহণের স্বাদ তোমার মিটিয়ে দিব। তার লাঠির আঘাতের বেগ কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছিল, আর আমার মুখে ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। আঘাতের প্রচণ্ডতায় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আমি জানি না কতক্ষণ জ্ঞানহারা অবস্থায় ছিলাম, আর এ সময়ের মধ্যে আমার প্রতি কি নির্মম নির্যাতন চালান হয়েছে তা এক মাত্র আল্লাহ ভাল জানেন। তবে আমার চেতনা ফিরে আসার পর দেখি আমার শরীর ফেটে গিয়ে তা থেকে রক্ত ঝরছে। আশে পাশে চেয়ে দেখি আমার ভাই-ভাবীরা দাঁড়ান অবস্থায়। তারা সবাই বলছে, বাবা এবার এসে তোমাকে না কি বলি দেবে। অতএব তুমি এখন বলবে আমি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করব। এ ছাড়া তোমার পরিত্রাণ পাওয়ার আর কোন উপায় নেই। আমি নির্ভয়ে স্ব-জোরে তাদেরকে বলে দিলাম, আমি প্রকৃত স্রষ্টার সন্ধান পেয়েছি, সত্য ও সঠিক ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছি। যদি আমার দেহ থেকে শিরোচ্ছেদ হয়ে যায় তার পরও আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করব না। আমি বিশ্বাস করেছি সেই মহান করুণাময় আল্লাহকে, যার হাতে আমার জীবন ও মরণ, যিনি পারেন বিপদ থেকে রক্ষা করতে। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ইজ্জত দিতে পারেন। যাকে ইচ্ছা তাকে অপমান করতে পারেন। তিনি ফকিরকে বাদশাহ করতে পারেন এবং বাদশাহকে ফকির বানাতে পারেন। তিনিই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে পথভ্রষ্ট করেন। তিনিই একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার মালিক।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই বাবা আবার লাঠি হাতে নিয়ে ছুটে আসল এবং নিষ্ঠুর ভাবে প্রহার শুরু করল। প্রতিটা আঘাতে আমি আল্লাহকে স্মরণ করছি আর মুখে উচ্চারিত হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। ব্যথার উপর আঘাত কত যে কষ্ট তা হয়তো আজ মুখে বর্ণনা করার মত নয়। এখানেই শেষ নয় বরং আমার শরীরে লবণ লাগিয়েছে তারা। ব্যথা, যন্ত্রণা ও জ্বালায় আবার অজ্ঞান হয়ে গেলাম। সচেতন হয়ে দেখি, গভীর অন্ধকারে আমি মাটিতে পড়ে আছি, তারা আমার অদূরেই সবাই মিলে পরামর্শ করছে। আমি শুনতে পাচ্ছি, বাবা বলছে, না, তা হবে না। তাকে জবাই করতেই হবে। ধর্ম ত্যাগের কি অপরাধ তা যেন অন্যেরা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারে। সময় ঠিক করল আগামী কাল প্রকাশ্যে দিবালোকে তাকে হত্যা করা হবে। তবে সমস্যা হলো বাকি রাত টুকু কীভাবে কাটবে? কেউ বলছে সে তো অজ্ঞান অসুবিধা কোথায়। অন্যজন বলছে, যদি রাত্রের মধ্যে জ্ঞান ফেরে, তারপর সে পালিয়ে যায়? কেউ প্রস্তাব দিচ্ছে যে তাকে ঘরে তালা দিয়ে রাখা হোক। বাবা বললেন না, সে মুসলমান হয়েছে ধর্মত্যাগী, অপবিত্র কোন মানুষকে আমাদের কোন ঘরে রাখা যাবে না। পরিশেষে সিদ্ধান্ত হলো যে তুলসী গাছের পাশে একটি পরিত্যক্ত কূপে তাকে বাকি রাতটা রাখা হবে । জ্ঞান ফিরলেতো আর কোন অসুবিধা নেই।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে সেই কূপে ফেলে দেয়া হলো। আল্লাহর কি কুদরত আমি যেন সেই কূপে আস্তে করে বসে পড়লাম। সেখানে কোন পানি নেই, গভীরতা তেমন না। আমার শরীরের ব্যথা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করল।
অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছি না। একা একা উঠতে চেষ্টা করছি কিন্তু ব্যর্থ হলাম। কারণ কূপের মুখ একটি কড়াই দিয়ে ঢাকা, শুধু তাই নয় বরং সেই কড়াইয়ের উপর রয়েছে একটা ভারী পাথর। তাই নিরাশ হয়ে বসে আছি। বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছি, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর মোমিন হিসাবে আমার মৃত্যু হবে এটাই আমার আনন্দ।
হঠাৎ করে উপরে দিকে একটা শব্দ পেলাম। নজর করলাম কে যেন কড়াইটি পাথর সরিয়ে দিল। তারপর আওয়াজ ছোট করে বলছে, দাদা ! দাদা!
আমি বললাম কে?
সে বলল আমি তোমার ছোট ভাই উত্তম। তোমার হাতটি একটু উঁচু করে আমার হাত ধর। আমি তাই করলাম সে আমাকে কূপ থেকে টেনে উপরে উঠিয়ে বলল দাদা! এখন রাত তিনটা ত্রিশ মিনিট। সিদ্ধান্ত হয়েছে সকালবেলা তোমাকে বাবা প্রকাশ্যে বলী দিবে। আর এ সিদ্ধান্তের কারণে আমার ঘুম আসেনি। সবাই ঘুমিয়েছে এই সুযোগে আমি এসেছি দাদা। আমাকে ক্ষমা কর দাদা। আর কালবিলম্ব না করে তুমি এক্ষুনি চলে যাও। অনেক দূরে চলে যাবে, যাতে কেউ তোমার খোঁজ না জানে। আমি তার চেহারার দিকে লক্ষ করলাম। তার দু নয়ন থেকে অশ্রু ঝরছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। সে আমারে অত্যন্ত ভালোবাসত। সেও আমার একমাত্র প্রিয়, এবার সে আমার হাত ধরে অনুরোধ করেছে দাদা আর বিলম্ব করা কিছুতেই ঠিক হবে না। যদি কেউ টের পেয়ে বসে তবে………।
আমি আমার চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না। ছোট ভাইটির মুখে একটি চুমু দিয়ে তার থেকে বিদায় নিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে সরে পড়লাম। রাতের অন্ধকারের এ ঘটনায় আমার ঈমান আরও কয়েক গুন বৃদ্ধি পেলো যে, রাখে আল্লাহ মারে কে? তাই কিছুদূর গিয়ে আল্লাহর কাছে সিজদায় পড়ে গেলাম। সেই প্রভুর দরবারে জানিয়ে দিলাম। হে মহান স্রষ্টা সকল প্রশংসা একমাত্র তোমারই, সকল ক্ষমতার মালিকও এক মাত্র তুমিই, তাতে কোনই সন্দেহ নেই।
তারপর আমি আমার বাল্যবন্ধু আব্দুল্লাহর বাড়ি সরাসরি চলে গেলাম আল্লাহর কুদরতে আমি বেঁচে আছি এ খবর দিয়ে তাদের পরামর্শে অনেক দুরে এক মাদ্রাসায় গিয়ে উঠলাম। সকল চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ইসলাম সম্পর্কে ভাল ভাবে জানার জন্য মনোনিবেশ করলাম। আমার বন্ধু আব্দুল্লাহ মাঝে মাঝে বিভিন্ন খবরা খবর জানিয়ে পত্র লিখত। এমন ভাবে দীর্ঘ দিন কেটে গেল। হঠাৎ একটি পত্র পেলাম, তাতে সে লিখেছে আমার বাবা ভীষণ অসুস্থ। অনেক দিন অসুস্থতার কারণে তিনি বিছানাতেই প্রস্রাব-পায়খানা করছে। বেহুঁশ অবস্থায় ঘরের মধ্যে অবস্থান করছেন। দুর্গন্ধের কারণে কোন ছেলেও তার কাছে যায় না।
এসে দেখলাম অবস্থা করুণ। ভাই ভাবীরা টেলিভিশন সহ আনন্দ উল্ল্যাসে ব্যস্ত। কেউ তার খবর রাখে না। আমি নিজ হাতেই বিছান পত্র সহ সবকিছু পরিষ্কার করলাম। তার শরীর ভিজা গামছা দিয়ে মুছে দিয়ে আতর ব্যবহার করলাম। তারপর ডাক্তারকে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলাম। ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ সহ কিছু ফল ক্রয় করে নিয়ে আসলাম।
আল্লাহর কি অশেষ মেহেরবানি মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বাবার জ্ঞান ফিরে আসল। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানালাম। তিনি মাঝে মাঝে চক্ষু মেলে দেখেন। কিছু বলতে চাচ্ছেন কিন্তু বলতে পারছেন না। আমাকে চিনতে পারছেন কি না আল্লাহই ভাল জানেন। কারণ আমার মুখে আছে দাড়ি, মাথায় আছে টুপি, পরনে পায়জামা ও পাঞ্জাবি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ঔষধ সহ পথ্য সেবন যথানিয়মে চলছে। আর তাকে মাঝে মাঝে বসানোর ব্যবস্থা করতাম, হাত- পা নড়াচড়ার ব্যবস্থা করতাম। তাতে তিনি দ্রুত সুস্থ হতে লাগলেন। একদিন হঠাৎ চোখ খুলে তিনি আমাকে বলছেন,
তুমি কে?
আমি আপনার মেজ ছেলে।
তুমি? তুমি না ইসলাম গ্রহণ করেছ?
হাঁ!
কি জন্য এখানে এসেছ?
আপনার খেদমত করার জন্য।
কে তোমাকে পাঠিয়েছে?
আমার সৃষ্টিকর্তা সেই মহান করুণাময় সমস্ত জগতের প্রতিপালক আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন।
তোমার সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছেন?
তুমি তো মুসলিম আর আমি তো হিন্দু?
বাবা আমাদের ধর্ম ইসলাম। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। আমাদের ইসলাম এতো সুন্দর ধর্ম যে, যদি পিতা অন্য ধর্মাবলম্বী হয় তারপরও জীবদ্দশায় এ পৃথিবীতে তার খেদমত, তার সাথে ভাল ব্যবহার করতে সেই সৃষ্টিকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সৃষ্টিকর্তা এরশাদ করছেন:
‘‘وإن جاهداك علي أن نشرك بي ماليس لك به علم فلا تطعهما وصاحبهما في الدنيا معروفا (سورة لقمان ১৫)
তোমার মাতা পিতা যদি তোমাকে আমার সাথে শরীক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে। (সূরা লোকমান ১৫)
(লম্বা হয়ে গেল দুঃখিত)
কাঁদালেনরে ভাই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তার দ্বীনের জন্য কবুল করুন। (আমীন)
@মুসাফির, হে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের ভাল কর্ম কবুল কর।
মহান আল্লাহ আঃ রহমান এর ত্যাগ কে কবুল করুন এবং তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। (আমীন) আপনাকে ধন্যবাদ ।
@rasel ahmed, আমীন ইয়া রাব্বুল আলামীন।
কান্না থামাতে পারিনি। নামাজেও কেদঁছি। ভাইকে কত কষ্ট করতে হয়েছে ধর্ম রক্ষার জন্য । আলহামদোলিল্লাহ , আমরা বংশগতভাবে ইসলাকে পেয়েছি কত সহজে। কিন্তু একটু কঠিন হলে বা লোভে পড়লে ঈমান ঠিক রাখতে পারি না। একেবারে সামান্য ব্যাপার যে, প্যান্ট বা পাজামা টাকনু বা গিরার উপরে পড়তে পারি না- কে না কি মনে করে- -নাকি মোলবাদিই বলে ফেলে। নামাজের সময় অধিকাংশ নামাজী প্যান্ট বা পাজামা ভাজ করে নেই- বাকী সময় শয়তানের পূজা করি। দাঁড়ি রাখলে শয়তান মেয়েরা পছন্দ করবে না বা বাড়ীর বউ(স্ত্রী) বিরোধীতা করবে। কি ঈমানের জোড় আমাদের!!! মহান আল্লাহতালা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন- আমীন।
@Mujibur Rahman, হে আল্লাহ আমাদের ঈমানকে আরো মজবুত করে দিন।
@Mujibur Rahman,
অসাধারন ভাই, সুন্দর হয়েছে, একটু রেফারেন্স দিলে ভাল হয়।
@ফুয়াদ দীনহীন, আল্লাহর কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান বই থেকে নেওয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।
একবার তাবলীগে চিল্লায় এক কিশোরকে আমাদের সাথে পেয়েছি, সে এক মুসলিমের ওয়ার্কশপে কাজ করতো, সেখানে তাবলিগীরা গিয়ে দাওয়াত দিত, এই ছেলে ঐ দাওয়াত শুনে মুগ্ধ হয়ে অনেকদিন পরে মালিককে ইসলাম গ্রহনের কথা জানালো, তারপর চলতে শেখা, আর আমার সাথে একচিল্লা সময় কেটেছিল। তারপরিবারে তখনো জানেনা যে তাদের ছেলে এখন দিব্যি হুজুর হয়ে যাচ্ছে।!! খুব ভাল লাগে এমন মানুষগুলোকে দেখলে।
@আল মুরতাহিল,ধন্যবাদ আপনাকে, ভাল লাগল একটি কিশোরের কথা শুনে যে কিনা তাবলিগ শুনে মুগদ্ধ হয়েছিল। আল্লাহ যেন আমাদেরকে কোরআন ও সহীহ হাদিস মোতাবেক তাবলিগ করার তাউফিক দান করে।
খুব চমৎকার ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনাকে। জাযাকাল্লাহ……
খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা। তবে নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র দিলে ভাল হতো। আমি বলছি না যে এটি বানোয়াট কাহিনী, যেহেতু ইউটিউবেই শত শত ভিডিও আছে এবং আমি নিজেই কাছাকাছি একটি কাহিনী শুনেছি। নীচে দেখুন। তথাপি ইন্টারনেটের যুগে কিছু বানোয়াট কাহিনীও ছাড়া হয়। ইসলামে বিশ্বাসী হিসেবে এই সকল ব্যাপারে আমাদেরকে আরো সাবধান হতে হবে।
http://www.youtube.com/watch?v=jLH74ZEOFGE